মঙ্গলবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০০৯

প্রথম দশকের কবিতা

চঞ্চল আশরাফ

আশির দশকের শেষদিকে বাঙলা কবিতায় যে-চিন্তা ও শিল্পমনস্কতা ফিরে এসেছিল, নব্বইয়ে তার বিকাশ ঘটেছে নানাভাবে; তারই পথ ধরে চলছে বর্তমান শতাব্দির প্রথম দশকের কবিতা। ফলে, এখনকার কবিতা বুঝতে হলে নব্বইয়ের কবিতার প্রবণতা চিনে নেওয়া বিশেষ জরুরি।

সংক্ষেপে তা এই :
১. তাৎণিক অভিজ্ঞতা ও উপলব্ধির প্রকাশ;
২. বিমূর্তায়ন;
৩. গদ্যভঙ্গি;
৪. নৃতাত্ত্বিক অনুষঙ্গের ব্যবহার;
৫. কোলাজরীতি;
৬. লোকজ উপাদানের প্রয়োগ;
৭. স্যাটায়ার;
৮. আবেগের চেয়ে বুদ্ধির সরল প্রাধান্য;
৯. বিবৃতিধর্মিতা বর্জনের চেষ্টা;
১০. চিত্রাত্মকতা;
১১. আখ্যানরূপকের ব্যবহার;
১২. ছন্দমনস্কতা ইত্যাদি।

এই বৈশিষ্ট্যগুলোর প্রতিটিই যে এখনকার নবীনরা গ্রহণ করেছেন, তা নয়। ছন্দে তাঁরা তেমন লিখছেন না; এমন অনেক কবিকে পাওয়া যায়, যাঁরা একটা কবিতাও লেখেন নি ছন্দে; বেশ ক’জন কবির পুরো বই গদ্যে লিখিত এবং তাতে একটি স্তবকেও নেই প্রবহমান গদ্যরীতির জন্যে সবচেয়ে মানানসই অক্ষরবৃত্তের প্রয়োগ। একে আপাতত দুঃসাহসই বলা যায়, কেননা, কোনও কবির অজ্ঞতা সম্পর্কে চটজলদি সিদ্ধান্তে আসা ঠিক নয়; যদিও প্রথম বই বুঝিয়ে দেয় কবির প্রস্তুতিটি কেমন, তার সামর্থ্যরে সীমা, ভবিষ্যতের জন্য তার যে রসদ, সেটি তাকে কতদূর নিয়ে যেতে পারে। শখের বশে লিখে থাকলে সেটা ভিন্ন কথা। আমরা জানি, ছন্দ কবিতার খুব প্রাথমিক একটা শর্ত। আর ছন্দে লিখতে না-চাওয়া কোনও শর্তই নয়; কিন্তু ছন্দের ঊর্ধ্বে ওঠার মালিকানা একজন কবি তখনই দাবি করতে পারেন, যখন তার অন্তত তিনটি কবিতা তিন রকম (আরও একটা আছে, সেটা কোনও এক সময় লিখলেই চলবে) ) ছন্দে পড়ার অভিজ্ঞতা পাঠকের হয়েছে।

প্রথম দশকের কোনও কবি ছন্দনিষ্ঠ নন, এমনটি বলা যায় না। শুভাশিস সিনহা ছাড়া, (আরও দু-তিনজন থাকতে পারেন) আর কারও মধ্যে ছন্দনিষ্ঠা দেখা যায় না। তবে অনেকের মধ্যেই ছন্দবোধটি আছে; তাদের কবিতায় সৃষ্ট সাঙ্গীতিক বহির্স্বর থেকে এটা বোঝা যায়। অতনু তিয়াস, অনন্ত সুজন, ঈশান সামী, নওশাদ জামিল, আমজাদ সুজন, জাকির জাফরান, ফেরদৌস মাহমুদ, রাশেদুজ্জামান, রাজীব আর্জুনি, নির্লিপ্ত নয়ন, সুমন সাজ্জাদ, জাহিদ সোহাগ, আফরোজা সোমা, মাদল হাসান, মামুন খান, মাহমুদ সীমান্ত, মানস সান্যাল, তারিক টুকু, সফেদ ফরাজী, সজল সমুদ্র, জুন্নু রাইন, আসমা বীথি সহ অনেকের নাম এ-প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যেতে পারে। এঁরা অরবৃত্তের কম-বেশি চর্চা করেছেন।

এটা শোচনীয় যে, বাঙলা কবিতার আলোচনা করতে গিয়ে ছন্দ নিয়ে আজও কিছু বলতে হয়, কবিতার এই প্রাথমিক শর্ত কে কতটা পূরণ করতে পেরেছেন, তা নিয়ে আলোচককে মাথা ঘামাতে হয়। অর্থাৎ বাঙলা কবিতায় আজও ছন্দ একটা টেনশনের স্তরে রয়েছে। সবার কবিতায় যদি ছন্দনিষ্ঠা থাকত, ছন্দ নিয়ে আলোচনার দরকারই পড়ত না। কিন্তু আমাদের আলোচনায় এটি অবধারিত; যেন বাঙলা কবিতায় ডজন-ডজন ছন্দ আছে! আর এই তিন-চারটা নিয়েই কবিদের কী-যে অবস্থা!

নব্বই দশকের যে-প্রবণতা প্রথম দশকের কবিরা গ্রহণ করেছেন সবচেয়ে বেশি, তা হলÑ তাৎণিক অভিজ্ঞতা ও উপলব্ধি; এর পর গদ্যভঙ্গি, বিমূর্তায়ন, চিত্রাত্মকতা। অর্থাৎ তাঁদের মধ্যেও এক ধরনের সিলেকশন বা গ্রহণ-বর্জনের ব্যাপার ঘটেছে। বলে রাখা দরকার, নব্বইয়ের কবিতার যে-প্রবণতাগুলোর কথা উল্লেখ করা হয়েছে, সেগুলোর জন্যে দশকটির বাহাদুরির কিছু নেই; কেননা, এসব নিয়ে এই সময়পর্বের কবিদের মধ্যেও আছে চোরাগলি, ফাঁকি, চালাকিসহ নানা ধরনের গোলমাল। যদিও এর আগের চল্লিশ বছরের যে-কোনও সময়ের তুলনায় এই দশকে ভালো কবিতার সংখ্যা নেহাৎ কম নয়। প্রথম দশকেও কিছু ভালো কবিতা লেখা হয়েছে। হলেও, পূর্ববর্তী কবিতায় জীবনদৃষ্টির যে-দারিদ্র্য ছিল, তা এখনকার কবিতায় আরও প্রকট হয়েছে। তীব্র হয়েছে জীবনবোধ ও শিল্পচেতনার সমন্বয়ের শূন্যতাও। এমনটি হলে তাৎণিক অনুভব প্রকাশই হয়ে পড়ে কবিতার নিয়তি; বিমূর্তায়ন (রহস্যীকরণ নয়) অবধারিত হয়ে যায়, খণ্ড-খণ্ড চিত্র উপহার দেয়া ছাড়া কবির কোনও উপায় থাকে না। তা না-থাকুক, তাৎণিক অনুভবের প্রকাশও হয়ে উঠতে পারে কবিতা; অনেক ভালো কবিতা এই জায়গা থেকে শুরু হয়েছে, কিন্তু শেষ হয়েছে অন্যতর তাৎপর্যে পাঠককে পৌঁছে দিয়ে। অর্থাৎ যে-অনুভব নিয়ে কবি লিখতে বসেছেন, তা অন্যতর অভিব্যক্তিতে উত্তরণ চাইছে, উৎসবিন্দুতে থেমে থাকতে চাইছে না; অন্তত একটা ভাববলয়ের দাবিতে বিন্দুটিকে প্রদণি করতে-করতে পরিধি নির্মাণ করছে। সমগ্রতার অভিপ্রায় এই সংগ্রামের মূলে। চেষ্টাহীনভাবে এটি ঘটে, যদি কবির অভিজ্ঞতা ও অনুভবের রসদের সঙ্গে জীবন ও শিল্পবোধের যৌথ সমর্থন থাকে। নইলে, তাৎণিকতা একটা আকস্মিকতার চেহারায় পাঠককে চমকে দিয়েই বুদবুদের মতো মিলিয়ে যায়, অন্যতর অর্থ ও সৌন্দর্য বা নৈঃশব্দ্য সৃষ্টি তাতে হয়ে ওঠে না; হলেই তো বলা যেত, সমগ্রতার অভিপ্রায় এতে আছে; এর রচয়িতা অন্তত খণ্ডিত অনুভব প্রকাশে সন্তুষ্ট নন।

প্রথম দশকের কবিতা এই সন্তুষ্টিকেই যেন বেশি প্রশ্রয় দিচ্ছে। দেখতে পাই, চমকে-দেয়া একটা প্রসঙ্গ নিয়ে কবিতা শুরু হয়েছে এবং একে প্রসারতা দিতে দিতে, প্রসঙ্গটি যে-আবেদন নিয়ে শুরু হয়েছে তা-ও ফুরিয়ে গেছে। অথবা, পাঠক ভাবতে বাধ্য হচ্ছেন যে, চমক সৃষ্টি ছাড়া এ-রচনার কোনও দাবি নেই। অধিকাংশ েেত্র এই ভাবনারও সুযোগ মিলছে না। কেননা, প্রসারতা দিতে গিয়ে উত্থাপিত প্রসঙ্গটি শেষ পর্যন্ত চমকের বাহাদুরি হারিয়ে পাঠকের জন্যে (যিনি কবিতার মননশীল পাঠক) একটা মামুলি বা নিরীহ অভিজ্ঞতায় এসে ঠেকেছে। দুটি দৃষ্টান্ত :

রাতের নিজস্ব গান আছে, শিল্পিগোষ্ঠী আছে
তোমার শরীরে বাজে উদগ্র ঝুমুর
তোমার স্তনে বাজে অপরূপ দুধের সরোদ :
প্রেমিকের রাত্রিকালীন আচরণ অনেকটাই
অসামাজিক। মধ্যরাতে তুমিও এক বিড়ালিনী
কপট কান্নায় পাড়া ভাসাও ; রাতের রূপ
আর কদর্যতা দু-ই দেখি তোমার দেহে ফুটে।
(সুজাউদ্দৌলা : রাতকাব্য-৩৬)

ইঁদুরে ছেয়েছে আকাশ
নাকি ইঁদুরের মতো মেঘে!
এখন বেলা শুয়ে আছে মাঠে, শূন্যের বিছানায়
তাঁর শীত পেতে আছে
ইঁদুর মেঘেরা তাই লেপ হয়ে থাকে;
নত্র নামের নিকটসম্পর্কের বোনেরা
উষ্ণতা রেখে যায় তার পদানুক’লে

আমি ভাবি পৃথিবীটা কোথাও
এভাবে মরে পড়ে আছে না তো!
(বিল্লাল মেহদী : অশেষ ভাবনা)

এই দুই কবিতার শুরু চমক দিয়ে, যা কোনও অন্যতর অর্থের দিকে না-গিয়ে পাঠের মাঝখানেই দম হারিয়ে ফেলেছে। গোলমালটি দু’কবিতায় ঘটেছে দু’ভাবে : প্রথমটি কোনও রকম যোগসূত্র ছাড়াই অন্য একটি প্রসঙ্গ হাজির করেছে এবং জবরদস্তি করে ‘রাতের নিজস্ব গান’কে প্রেমিকের আচরণ, ‘কপট কান্না’ আর নারীদেহের সঙ্গে মিলিয়ে দেখানো হয়েছে। অধিকন্তু, কবিতাটির শেষে ‘ফোটে’-র জায়গায় অশুদ্ধ ‘ফুটে’ ব্যবহৃত হয়েছে, যা কোনও কবির জন্যে প্রীতিকর হতে পারে না। দ্বিতীয় কবিতা এলিয়টীয় চমক দিয়ে শুরু হয়েছে; কিন্তু এর মৃত্যু ঘটেছে ‘পৃথিবীটা কোথাও’ ‘মরে পড়ে’ থাকার ভাবনা দিয়ে, যার সঙ্গে ইঁদুরকে মেঘ মনে করার কোনও সম্পর্ক নেই। যিনি লিখেছেন, তিনি অবশ্য একটা চালাকি করেছেন। রচনাটির নাম দিয়েছেন ‘অশেষ ভাবনা’। ভাবনা ‘অশেষ’ হলে কবিতায় এমনটি ঘটতে পারে, সেই ইঙ্গিত তিনি দিতে চেয়েছেন। কিন্তু কবিতা হিসেবে এভাবে একটা রচনাকে বৈধতা দেয়ার চেষ্টা শেষ পর্যন্ত কবির অসহায়তাকেই প্রকাশ্য করে।

কবিতায় চমক অন্য জিনিস; সরকার আমিনের চার পাঁচ হাজার পিঁপড়ার দুঃখ কবিতাগ্রন্থের সমালোচনা করতে গিয়ে সম্ভবত লিখেছিলাম যে, চমক কবিতার জন্যে জরুরি নয়; জরুরি তখন, শুরুতেই পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ কবির যখন কাম্য হয়ে ওঠে। কিন্তু সব কবিতায় এমনটি কাম্য হওয়া ঠিক নয়; নিরাপদও নয়; এটি নির্ভর করে প্রতিপাদ্যের ওপর, একে ব্যাখ্যা বা বিবৃত করার েেত্র কী দৃষ্টিভঙ্গি বা মনোভাব কাজ করছে, তার ওপর। চমকের আদর্শ উদাহরণ টিএস এলিয়ট; তিনিও কিন্তু সব কবিতায় চমকের ব্যবহার করেন নি। করেছেন তখন, প্রতিপাদ্য যখন তা দাবি করছে এবং সেই দাবির সঙ্গে দৃষ্টিভঙ্গির সমর্থনটিও মিলছে। একটা নাটকীয়তার চেহারায় তিনি হাজির করেছেন একে; কবিতা পড়তে পড়তে সেই চেহারা সরে গিয়ে মূল ভাব বা অর্থটি প্রকাশ্য হয়ে উঠেছে। কৌশলটি বেশ কাজের, কিন্তু চমক সম্পর্কে মধ্য-আশি থেকে যে ভুল ধারণার চর্চা হয়ে আসছে কবিতায়, তা এখনকার কবিদের বিপজ্জনকভাবে পেয়ে বসেছে। ফলে, চমকের খোলস ভেদ করে কিছুই পাওয়া যায় না; কবিতা হয়ে পড়ে কখনও কোলাহল, কখনও মর্মবস্তুহীন কিছু বাক্য মাত্র!

এরপর গদ্যভঙ্গির প্রসঙ্গ। বাঙলা ভাষায় অরবৃত্তে এর চর্চার বয়স প্রায় সত্তর বছর হয়ে গেছে। তারও অনেক আগে, ঊনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধ্বে, ইউরোপে এর শুরু। এটি এতই পরিচিত যে, নতুন করে চিনিয়ে দেবার দরকার পড়ে না। নবিশিদের বেলায় এর চেয়ে সহজ আর সুবিধাজনক আঙ্গিক আর নেই। কেননা, এতে প্রচলিত ছন্দ জরুরি নয়, বাঁধা-ধরা কোনও ছক এতে না-মানলেও চলে। এই স্বাধীনতাকে প্রথম দশকের কবিরা পুঁজি করেছেন আগের যে-কোনও সময়ের চেয়ে বেশি। অঞ্জন সরকার জিমি, অপূর্ব সোহাগ, অবনি অনার্য, অশোক দাশগুপ্ত, আপন মাহমুদ,আবু তাহের সরফরাজ, আহমেদ ফিরোজ, ইকতিজা আহসান, ইমরান মাঝি, এমরান কবির, গৌতম কৈরী, চন্দন চৌধুরী, চ্যবন দাশ, জাহানারা পারভীন, জাহেদ আহমদ, জুয়েল মোস্তাফিজ, তারিক টুকু, তুষার কবির, নিতুপূর্ণা, নির্লিপ্ত নয়ন, পান্থজন জাহাঙ্গীর, পিয়াস মজিদ, বিল্লাল মেহদী, মনিরুল মনির, মাজুল হাসান, মামুন রশীদ, মাসুদ হাসান, মাহমুদ শাওন, মাসুদ পথিক, মিঠুন রাকসাম, মুয়ীয মাহফুজ, মৃদুল মাহবুব, যিশু মুহাম্মদ, রাকিবুল হক ইবন, রাশেদুজ্জামান, রুদ্র অনির্বাণ, রুদ্র আরিফ, শাবিহ মাহমুদ, শিশির আজম, শুভাশিস সিনহা, সরফরাজ স্বয়ম, সিদ্ধার্থ শংকর ধর, সুজাউদ্দৌলা, সুমন সুপান্থ, সেজুল হোসেন, সৈয়দ আফসার, সোহেল হাসান গালিব, স্বরূপ সুপান্থ সহ অনেক কবি এই আঙ্গিক গ্রহণ করেছেন। এঁদের মধ্যে কেউ কেউ এই আঙ্গিকে এত বেশি লিখেছেন যে, তাঁদের নামোল্লেখের সঙ্গে সঙ্গে রীতিটির চেহারা এসে যায়। সিদ্ধার্থ শংকর ধর, ইমরান মাঝি, গৌতম কৈরী এক্ষেত্রে আপাতত অগ্রগণ্য।

খুব বেশি বিমূর্তায়ন ঘটেছে প্রথম দশকের কবিতায়। ফলে, কবিতা শেষ পর্যন্ত কী বার্তা হাজির করল, বা, এর সম্ভাব্য প্রতিপাদ্যটি কী, কিংবা কী মর্মবস্তু এর কেন্দ্রে, বুঝে ওঠা মুশকিল। কখনও-কখনও মনে হয় মর্মবস্তু আদৌ কবিতাটিতে নেই; আবার এ-ও মনে হয়, সেটি আড়ালের সমস্ত চেষ্টা এতে করা হয়েছে এবং কবি সফল হয়েছেন। এই বিমূর্তায়ন এক ধরনের বিপজ্জনক চালাকি; পথটি প্রথম দেখিয়েছিলেন ফরাসি প্রতীকবাদীরা। তাঁরা অবশ্য কবিতায় মর্মবস্তুর তিন-চতুর্থাংশ আড়াল করতেন; বাকি একভাগ থেকে পাঠককে বুঝে নিতে হতো কবিতাটি আসলে কী বলতে চাইছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে তা সম্ভব হতো না। না-হলেও, প্রতীকবাদী কবিরা সৃষ্টি করেছিলেন সৌন্দর্য। এর উৎস ছিল রহস্যময়তা। কবিতার অনেকান্ত ব্যাখ্যার সুযোগ তাঁরাই প্রথম সৃষ্টি করেছিলেন। তাঁদের হেঁয়ালিটা যদি শুধু থাকত এখনকার কবিতায়, তা হলেও বুঝতে পারা যেত কবির অভিপ্রায়টি কী, কেমন করে তা ব্যাখ্যার দাবি নিয়ে আমাদের সামনে আসতে চাইছে। কিন্তু প্রথম দশকের অধিকাংশ কবি তো বোধগম্যতার সমস্ত দরজা-জানালা বন্ধ করে দিয়েছেন! ফলে, বিমূর্তায়ন গেছে অপচয়ের দিকে; এক রকম চালাকি ও ফাঁকির নামান্তর হয়ে এসেছে। চার-পাঁচজন বাদে সবার মধ্যে এই বিপজ্জনক প্রবণতা দেখা যায়।

বিমূর্তায়নের একটি প্রধান আশ্রয় চিত্রাত্মকতা। আর একেই চিত্রকল্প ভেবে দশকের পর দশক আলোচনা হয়ে চলেছে। কিন্তু চিত্রকল্প কবিতার জন্যে জরুরি কিছু নয়, চিত্রাত্মকতাও নয়। আধুনিক হতে গেলে চিত্রকল্প খুব দরকার; কেননা, এটি শুরু থেকেই, আধুনিকতার একটা অংশ হয়ে আছে। যে ক্যাটাস্ট্রফি আধুনিকতার সমার্থক, তার প্রসারিত অর্থ বিপর্যয়কারী বহুমুখি চিন্তার জটিল প্রকাশ; অন্যদিকে, ইমেজিস্ট মুভমেন্টের ইশতেহারে ইমেজ বা চিত্রকল্প হলো__বুদ্ধি ও আবেগগত জটিলতার আনকোরা প্রকাশ। রবীন্দ্রনাথের কবিতায় চিত্রকল্প নেই, নজরুলেরও নেই। কারণ, আবেগ ও বুদ্ধিগত জটিলতা এঁদের কবিতায় নেই। যত আধুনিক হোক বাঙলা কবিতা, এই জটিলতা সৃষ্টি করা খুব কম কবির পে সম্ভব হয়েছে। বিষ্ণু দে-ও এই দিক থেকে আধুনিক নন। সব মিলিয়ে আধুনিকতা কী জিনিস, তা না-বুঝে আধুনিক হতে চেয়েছেন বাঙলা ভাষার অধিকাংশ কবি; ফলে, আধুনিকতার অবিকশিত ও নিরীহ একটা চেহারাকে পুরনো ভেবে তা বাতিল করার জন্যে একদল ‘উত্তর আধুনিকের’ আবির্ভাব ঘটেছে। নব্বইয়ের শুরুতে এদের সক্রিয়তা দেখা গেছে; এখন নেই। কিন্তু উত্তর-আধুনিকতার উচ্ছিষ্ট হিসেবে রয়ে গেছে লোকজ অনুষঙ্গ নিয়ে কবিতা রচনার মৃদু প্রবণতা। প্রথম দশকে কবিদের কেউ কেউ এর অনুগামী হয়েছেন। তবে প্রথম দশকে যে-কবি এসবের বাইরে থাকতে চাইছেন, তিনি পলাশ দত্ত। সাধু ও মৌখিক ক্রিয়াপদের ব্যবহার তিনি করেন, কবিতার সংবৃত সমাপ্তি তাঁর পছন্দ; শ্লেষ-বিদ্রƒপের প্রতিও ঝোঁক তাঁর আছে। মনে হতে পারে, তিনি ব্রাত্য রাইসুর ধারাটি গ্রহণ করেছেন; কিন্তু রাইসুর কবিতা বেশ লিরিক্যাল, আক্রমণাত্মক ও পরিহাসপ্রবণ।

উল্লেখ প্রয়োজন, প্রথম দশকের কবিরা সাহিত্যের ইতিহসের এমন এক পর্যায়ে লিখছেন, যখন আঙ্গিকগত প্রায় সব পরীক্ষা-নিরীক্ষার অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ তৈরি হয়ে আছে। এটি তাদের জন্যে প্রীতিকর ও ঝুঁকিপূর্ণ। প্রীতিকর এইজন্য যে, কেউ কবিতা লিখতে চাইলে ভাষা কিংবা আঙ্গিক সন্ধানের জন্যে তাকে মরিয়া হতে হবে না। কেননা, আয়োজনটি পূর্ববর্তী, বিশেষত তাঁদের নিকট-পূর্বসূরি নব্বইয়ের কবিরা নানাভাবে করে রেখেছেন। ফলে, সা¤প্রতিক ও সমকালীন কবিতা-পাঠের মধ্যে যিনি আছেন, তার পে আট-দশটা প্রকাশযোগ্য কবিতা লিখে ফেলা কঠিন কোনও কাজ নয়। এই সময়ে এত কবির আবির্ভাবের কারণ সম্ভবত এটাই। অন্যদিকে, ঝুঁকিপূর্ণ এজন্যেই যে, এই পাঠ-অভিজ্ঞতা কবিতা সম্পর্কে দেয় বিচিত্র ও গোলমেলে ধারণা, তাতে যে-কোনও নবীন ধাঁধায় পড়ে যেতে পারেন; পড়ে গেলে, সিলেকশনেও সমস্যা দেখা দিতে পারে। কঠিন হয়ে উঠতে পারে পূর্ববর্তী ও সমকালীন কবিতার পরাগায়ন রোধ করা।

শুরুতে প্রথম দশকের কবিতায় এই সমস্যা ছিল ব্যাপক। এখন অনেকেই তা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছেন। কেউ কেউ সফল হচ্ছেন বলে মনে হয়। বোধ করি সাহিত্যের জন্যে এটা বেশ প্রীতিকর ও স্বাভাবিক যে এঁরা লিখছেন একটা ধারাবাহিকতার মধ্য থেকে।

বড় কথাটি হল, কবিতা সম্পর্কে অভিজ্ঞানের দিক থেকে এঁরা পিছিয়ে নেই। প্রয়োগরুচিতে তো নয়ই।

২১. ০৩. ০৯

সোমবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০০৯

সরি, গল্পটি একটু বড় হয়ে গেল অমি রহমান পিয়াল


স্বপ্নের মধ্যে শুধু বৃষ্টি আসে। আর আসে সেই পুকুরটা। কেন বাবা হেমামালিনী আর জুহু বীচ আসতে পারে না?

কিছুক্ষণ আগে বৃষ্টি হয়ে গেছে। পাতা থেকে এখনো টুপাটাপ জল ঝরছে। কিন্তু গরম। জলে নামতে পারলে বেশ হয়।
একটি লোক হাতছানি দিলেন। খোঁচা খোঁচা দাড়ি। চোখ দুটো উজ্জ্বল। বললেন, এত ছোট ছেলে তুমি। পূর্ব বাংলা থেকে এসেছ? বাবা-মায়ের কথা মনে পড়ছে না?
-লেবুবাই কৈলেন। তাই যুদ্ধ করতে আইসি।
-কার পক্ষে যুদ্ধ করবে?
-বাঙালীদের পক্ষে।
-কোন্ বাঙালী? ধনী বাঙালী? না, সর্বহারা বাঙালী?

কঠিন প্রশ্ন করেছেন এই দাদা লোকটি। তিনি বুঝিয়ে বললেন, তোমরা যে যুদ্ধ করছ, এটা কোনো জনযুদ্ধ নয়। একটি বিদেশী শোষক শ্রেণীর বদলে আরেকটি দেশী শোষক ধনীক শ্রেণীকে ক্ষমতায় আনার জন্য তোমাদের এই যুদ্ধ ? সর্বহারা শ্রেণীর কি হবে এই যুদ্ধে?
-তাইলে কী করতে হবে?
-শ্রেণী সংগ্রাম। একমাত্র শ্রেণী সংগ্রামই হল এ সময়ের কর্তব্য। আওয়ামী লীগ হল ধনীক শ্রেণীর প্রতিনিধি। শোষক শ্রেণীর দল।
-আমি তো আওয়ামী লীগের লগে নাই। কম্যুনিস্টগো লগে আছি!
-কোন কম্যুনিষ্ট? মনি সিংহের? মনি সিংহ তো রাজার ছেলে! সে কি করে বিপ্লবী কম্যুনিষ্ট হবে? হু, এরা হল সংশোধনবাদি। এরা বিপ্লবের জন্য খুব ক্ষতিকর। সর্বহারাদের মধ্যে থেকে শ্রেণী সংগ্রামের বিপ্লবী নেতৃত্ব গড়ে উঠবে। বিপ্লব দীর্ঘজীবি হোক।
বিপ্লব তাইলে শিশু! তার দীর্ঘজীবি হওয়া দরকার।

পুকুরের জল দুলে দুলে উঠল। পশ্চিম বঙ্গের পুকুরে জল কম। বাংলাদেশের জল শীতল – ছায়াময়।


বাড়ি ফিরেই দেখা গেল- লোকজন নেই। সব ফাঁকা। দরোজায় তালা। অনেক ডাকাডাকির পরে আম্মার গলা পাওয়া গেল। পেছনের দরোজা দিয়ে বেরিয়ে এসে জড়িয়ে ধরলেন। বললেন, তোর আব্বা- ভাইদের বাঁচা, মান্নান।
-কেন, তারা কী করছে?
-রাজাকারি করছে। এখুন পালাইছে।

অনেক জিনিস পত্রে ঠাসা ঘর। এগুলো আগে ছিল না। ঘরের খুঁটিতে সিদুঁরের দাগ। দরোজায় হালকা করে স্বস্তিকা চিহ্ণ আঁকা। ঘরের মাঝখানে একটি সেগুনকাঠের পালঙ্ক। মাথার কাছে লেখা- সুখে থাক। হাজী আবদুল গফুর ভূঁইয়া। এটা বিখ্যাত ভূঁইয়াদের বড় ছেলে ঘুমাত। সুখে থাক লেখার কাছে রক্তের দাগ। তাকে কি মেরে ফেলা হয়েছে? আম্মা রান্না ঘরে চলে গেলেন। মান্নান বাইরে নতুন তোলা ঘরের বারান্দায় গুম হয়ে বসে রইলেন।

পরদিন অসাধারণ একটি ঘটনা ঘটল। ভারত থেকে প্রত্যাগত শরণার্থীরা কলেজ মাঠে তাবুর মধ্যে থাকত। মান্নান বামহাতে একটা মাছকাটা বটি ডানহাতে তার আব্বাকে টেনে নিয়ে এলেন কলেজ মাঠটিতে। ভয়াবহ দৃশ্য। লোক জমে গেল। তিনি বটি উঁচু করে অলৌকিক এক বক্তৃতা দিলেন। বললেন, তার আব্বা বিশিষ্ট রাজাকার। লুটপাট করেছেন। কিছু মানুষকে হত্যার সঙ্গেও জড়িত। আরও কি সব। তার আব্বা এখন ধনীক শ্রেণীর মধ্যে পড়েছে। ধনীক শ্রেণী হল শোষক শ্রেণী। এই শোষক শ্রেণীকে তিনি সকলের সামনে কতল করবেন। শ্রেনী সংগ্রামের সূত্রপাত করবেন। শ্রেণী শত্রুকে রেহাই দেয়া যায় না।

তিনি বটি উচু করে ধরলেন। তার আব্বা হুজুর জোরে জোরে সুরা ইয়াসিন পড়ছেন। আম্মা মান্নানের শার্ট চেপে ধরেছেন। তারস্বরে চিৎকার করছেন- কী করিস মান্নান। কী করিস মান্নান। তার তিন ভাইও চিৎকারে গলা মেলাচ্ছে। এরা তিনভাই কুখ্যাত রাজাকার হিসাবে একাত্তরে এলাকা দাপিয়ে বেড়িয়েছে।

ভয়ংকর হয়ে উঠছে ঘটনাটি। শ্বাস রোধ হয়ে গেল অনেকের। অনেকে চোখ বন্ধ করে ফেলল। কজন দুর্বল মনের মহিলা ওয়াক ওয়াক করতে লাগল। তাদের মাথা ঘুরতে শুরু করেছে। আর শিশুরা মায়ের আঁচলের তলায় মুখ লুকাল। বটিটা অনেক উপরে উঠল। মান্নানের চোখমুখ শক্ত হয়ে উঠেছে। বটিটা ধা করে নিচে নেমে আসবে। তার গলা বরাবর নেমে আসছে। এক, দুই, তিন…

একজন মুরুব্বি চিৎকার করে উঠল। বাবা, পিতৃহত্যা নাজায়েজ।




সেদিন কোন রক্ত ফিনকি দিয়ে উঠল না। কারো মাথা দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে মাটিয়ে ছিটকে পড়ল না। কারো স্ত্রী বিধবা হলেন না। কারো পুত্র পিতৃহীন হল না। ধর্ম রক্ষিত হল। কলেজ মাঠে যে সমস্ত শরণার্থীর শ্বাস বন্ধ হয়ে গিয়েছিল- তাদের নতুন করে শ্বাস বইতে শুরু করল। এরা অনেকেই পিতৃহীন, মাতৃহীন, ভ্রাতৃহীন, সদ্য বিধবা, সর্বস্বহীন এবং কোনো কোনো নারী ধর্ষিতা।

মান্নান হিরো হয়ে গেলেন। পুচকি মান্নান হয়ে গেলেন বিপ্লবী মান্নান ভাই। তার আব্বা হুজুরও ডাকতে লাগলেন- মান্নান ভাই। ভাইগুলো হাতের রক্তটক্ত মুছে একটা সাইন বোর্ড ঝুলিয়ে দিল বাড়ির গেটের সামনে খেজুর গাছে। লেখা- বিশিষ্ট বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ আব্দুল মান্নান ভাই-এর বাড়ি। মান্নান ভাইয়ের জন্য নতুন তোলা ঘরটি বরাদ্দ হল। ঘরটি নিচু পাড়া থেকে লুট করে আনা। পুরনো শালকাঠের একটি আলমারী। পালংকে ঘুমানোর সময় চোখে পড়ে লেখাটি- ‘সুখে থাক।‘ হাজী আবদুল গফুর ভূঁইয়া অংশটি চুন দিয়ে বুজিয়ে ফেলা হয়েছে। ভুঁইয়া সাহেব সপুত্র নিহত হয়েছেন মুক্তিযুদ্ধে। এই পরিবারটি শ্যাখের দল করত। মান্নান ভাই এই ঘরটিতে থাকেন। আর ঘুমান। মুরগী-মুসাল্লাম খান। আলমারীতে লাল লাল সব বই সাজান। মাঝে মাঝে তিনি চিৎকার ওঠেন, বিপ্লব দীর্ঘজীবি হোক। সে চিৎকার রাত্রি ভেদ করে দিনে গভীরেও পৌছেঁ যায়।

মান্নান ভাইয়ের আব্বা হুজুর এবং ভাইগণ ব্যবসাপাতি শুরু করলেন জোরে শোরে। কলেজ মাঠের শরণার্থীরা অনেকে বাড়ি ফিরে গেল। কোন উপায় না দেখে কেউ কেউ ওপারে চলে গেল। তাদের মন ভেঙে গেছে। তাদের ঘরদোর পুড়ে গেছে। সব কিছু লুটপাট হয়ে গেছে। কেউ পোড়া ভিটেতেই তাবু খাটিয়ে বসবাস শুরু করতে লাগল। কলেজ মাঠে লাল বাহিনী, নীল বাহিনী খায় দায়- ঘোরে ফেরে- আর মাঝে মাঝে মার্চপার্ট করে। হাক দিয়ে ওঠে- জয় বাংলা। রাতে মাহফিল। লাল দোপাট্টা মল মল।

লেবু ভাই বললেন, মান্নান চলো- লোকজনের কাছে যাই। ঘরবাড়ি তুলতে সাহায্য করি।

মান্নান ভাই দিল খোলা মেজাজে বলে দিলেন, এইটা আমার কাজ না। আমার কাজ বিপ্লব।
- আমরা তো বিপ্লবের জন্য কাজ করছি!
- -আপনে বিপ্লবী হতে পারেন না। আপনের বাপ জোদ্দার। তিনি শ্রেণী শত্রু।

লেবু ভাই মন খারাপ করে ফিরে গেলেন। মান্নান ভাই পড়তে লাগলেন লাল লাল অই বইগুলো। আর খেতে লাগলেন মুরগী মুসাল্লাম। তার স্বাস্থ্য টগবগ করতে লাগল। বিপ্লবের দীর্ঘজীবি হওয়ার জন্য সুস্বাস্থ্যের বিকল্প নেই। দুটো ফ্যান ওনার জন্য ঘর থেকে বের করা হল। এই ফ্যান দুটি গীর্জাঘরে হাওয়া দিত। গীর্জায় হাওয়ার দরকার। এ বড় কঠিন তত্ব। তত্ব না বুঝলে বিপ্লব করা যাবে না।

কিছুদিন পরে লেবুভাই নিহত হলেন। দিনের বেলায় তাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। মান্নান ভাই আমাদের বাসায় এলেন। একটা গানের খোঁজে। যিনি গানটি করতেন সেই ঠাকুরদা নেই। আমার বোনের খাতা থেকে গানের পাতাটি ছিঁড়ে নিলেন। আর নিয়ে গেলেন দিদির হারমোনিয়ামটি। অসাধারণ অধ্যবসায় তার। স্কুলে যেতে আসতে শুনতাম, মান্নান ভাই হারমোনিয়াম টিপে টিপে গাইছেন কানা কেষ্ঠর গান-

মুক্তির মন্দির সোপান তলে
কত প্রাণ হলো বলিদান, লেখা আছে অশ্রুজলে৷
কত বিপ্লবি বন্ধুর রক্তে রাঙা, বন্দীশালার ওই শিকল ভাঙা
তাঁরা কি ফিরিবে আজ সুপ্রভাতে
যত তরুণ অরুণ গেছে অস্তাচলে৷
মুক্তির মন্দির সোপান তলে...লেখা আছে অশ্রুজলে ৷
যারা স্বর্গগত তারা এখনো জানে, স্বর্গের চেয়ে প্রিয় জন্মভূমি
এসো স্বদেশ ব্রতের মহা দীক্ষা লভি
সেই মৃত্যুঞ্জয়ীদের চরণ চুমি
যারা জীর্ণ জাতির বুকে জাগালো আশা
মৌন মলিনমুখে জাগালো ভাষা
আজ রক্তকমলে গাঁথা মাল্যখানি,
বিজয়লক্ষী দেবে তাঁদেরি গলে
মুক্তির মন্দির সোপান তলে...
লেখা আছে অশ্রুজলে ৷


একদিন তার আলমারীটা ঝাড় দিতে ডাকলেন। বললাম, পূজায় যাব।
বললেন, ছি কমরেড, ধর্ম হল আফিং। তার চেয়ে বিপ্লব জরুরী। দেরী করলে বিপ্লবের ট্রেন ছেড়ে দেবে। তখন?

ঝেড়ে পুছে আলমারীতে বইগুলো সাজিয়ে রাখতে হল। মাও সেতুং, মার্কস, এংগেলস, লেনিন, স্টালিন-এর রচনাবলী মাওলানা আব্দুর রহিমের ইসলাম ও সমাজতন্ত্র, লু সুনের গল্প এবং সিরাজ সিকদারের কিছু লেখা। তার পশে বেহেশতের কুঞ্জি, সচিত্র কোকশাস্ত, কী করিলে কী হয় এবং সচিত্র রোমাঞ্চ। প্রচ্ছদে অপূর্ব সুন্দরী একটি মেয়ের ছবি। নায়িকা টায়িকা হবে। উর্ধাঙ্গ ফাঁকা। হেসে বললেন, বিপ্লব হলে এরকম নায়িকাদের পাওয়া যাবে। বিপ্লব দীর্ঘজীবি হোক।

পড়তে পড়তে সুন্দর লিখতেও শুরু করলেন মান্নান ভাই। কী সব কঠিন কঠিন প্রবন্ধ। বোঝার ক্ষমতা নেই। শিক্ষামন্ত্রী কাজী জাফর আহমদ এলেন ফরিদপুর। জসিমুদ্দিন হলে মান্নান ভাই তার সম্মানে বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা শীর্ষক একটা প্রবন্ধও পড়ে এলেন। সেটা পরে ছাপাও হল পুস্তিকা আকারে। ডিসি সাহেব সব স্কুলের টিচারদের কাছে প্রবন্ধটি পাঠিয়ে দিলেন। তাদের বেতন খেকে পুস্তিকাটির দাম কেটে নেওয়া হল।

এ সময় তার অত্যন্ত প্রিয় গান হয়ে উঠল এসডি বর্মনের-
শোনোগো দক্ষিণ হাওয়া
প্রেম করেছি আমি…

সমস্যা হয়ে গেল আমাদের এই শহরের সব লোকই মান্নান ভাইকে মান্নান ভাই বলেই ডাকে। সমীহ করে চলে। মেয়েরা তাকে দেখলেই কাতর হয়ে পড়ত। তারা ঘেমে উঠত। তাদের শ্বাস ঘণ হয়ে যেত। তাদের চোখের সামনে বটি হাতে মান্নানের চেহারাটি ফুটে ওঠত। কোনো গোলাপ নয়। মান্নান ভাই দমলেন না। পাড়ি দিলেন ঢাকায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে গেলেন। কিভাবে ভর্তি হলেন- সে এক রহস্য। একদিন বললেন, নতুন গান শিখছি- নব প্রাণ আন্দোলনের গান। গেয়েও শোনালেন দুএক কলি।

‘বৃষ্টি বাদল দুই ভাই বোন শহর দেখতে আসে
বড়লোকদের গাড়িগুলো সব কাছিমের মতো ভাসে
ভাই বলে বোন বোন বলে ভাই আজ স্কুল থাক
বড়লোকদের গাড়িগুলো সব বন্যায় ভেসে যাক...’

কানে মধ্যে ঢুকল না। মাথার উপর দিয়ে সুর আর বানী চলে গেল। গানটা গুতা খেল টিএসসির ছাদে। অইখানে দুটো পাখি বসে কিচির করছিল। দুটো পাখিই ধপ করে পড়ে মারা গেল। তিনি একটি কবিতাও শোনালেন। নিজেই লিখেছেন। তিনি ঠিক করেছেন কবিতাই লিখবেন। বিপ্লবীরা সবাই কবিতা লিখতেন। এ সময় একটি মেয়ে বাতাসে ভাসতে ভাসতে এসে পড়ল। একদম শ্রী দেবী। বলল, হাই। তার চোখে তেপান্তরের ঝিলিক। কে উপেক্ষা করে তাকে। তার দিকে দৌড়ে গেলেন। যেতে যেতে বললেন, বিপ্লব দীর্ঘজীবি হোক। তিনি বিপ্লবের পিছনে পিছনে দৌড়ে গেলেন।

আমাদের বয়স থেমে নেই। আরও জোরে দৌড়ুতে শুরু করেছে। শিশুটি থেকে বড়োটি হয়ে গেছি। বড়োটি থেকে বুড়োটি হয়ে যাচ্ছি। বিপ্লব কিন্তু সেই কচি খোকাটি। বিপ্লবের বয়স বাড়ে না। তার জন্য এখনো বলতে হয়- বিপ্লব দীর্ঘজীবি হোক। আর আমরা মরিতে পারিলে বাঁচি।

একটি চাকরীর ইন্টারভিউ ছিল ঢাকায়। ভোর ভোর বাসে উঠেছি। গোয়ালন্দে দেরী হয়ে গেল। নির্ধারিত সময়ে ফেরী আর ছাড়ে না। লোকজন উসখুস করছে। ফেরীর লোকজন বললেন, স্যার নামাজ পড়ছেন। শেষ হলেই ছাড়া হবে।

ফিরে এলেন স্যার। চমৎকার স্যুটেড বুটেড। স্যারের কপালে দাগ পড়েছে। মাথার টুপিটা ঠিক করলেন। জিন্নাহ টুপি। পকেটে উকি দিচ্ছে মওদুদীর বই। সরকারী গাড়ি। আমার দিকে একবার তাকালেন। একটা কার্ড দিলেন। সচিবালয়ে পোস্টিং। পাশে ভাবি। বোরকা পরা। মুখ ঢাকা।

হাত মেলালেন না। হালকা করে উঁচু করলেন। বাতাসে আতরের সুবাস। মুখে তোরাবোরা পাহাড়ের হাসি। একটু জেগেই উবে গেল। মনে হল মৃদু স্বরে বললেন, বিপ্লব দীর্ঘজীবি হোক।
তিনি কী সত্যি সত্যি বলেছিলেন- বিপ্লব দীর্ঘজীবি হোক। না কি ভুল শুনেছি? ধাঁধা লেগে গেল।

কোনো বটি নয়- তার হাতে তখন একটি বই। খুব আদব লেহাজের সঙ্গে পড়ছেন একটি লোকের আত্মজীবনী- একাত্তরে আমরা ভুল করিনি। ছবিতে লেখক খুব সহি সালামতে রাও ফরমান আলী আর টিক্কা খানের সঙ্গে বসে আছেন।

বিপ্লবীরা কখনো ভুল করেন না।

গণ সঙ্গীত

৯. আমার প্রতিবাদের ভাষা (Amar protibaader bhasha) - Salil Chowdhury

সলীল চৌধুরী

আমার প্রতিবাদের ভাষা
আমার প্রতিরোধের আগুন
দ্বিগুণ জ্বলে যেন
দ্বিগুন দারুণ প্রতিশোধে

করে চূর্ণ ছিন্ন-ভিন্ন
শত ষড়যন্ত্রের জাল যেন
আনে মুক্তি আলো আনে
আনে লক্ষ শত প্রাণে।

আমার প্রতি নিঃশ্বাসের বিষে
বিশ্বের বঞ্চনার ভাষা
দারুণ বিস্ফোরণ যেন
ধ্বংসের গর্জনে আসে

যত বিপ্লব বিদ্রোহের আমি সাথী
আমি মাতি যুদ্ধে হেথায় সেথায়
মানুষের মুক্তির বিপন্নতায়

আমারই রক্ত ঝরে
দেশে দেশে বন্দরে
শত মরু কন্দরে
গৌরী শিখায়
মিলনের তীর্থের সন্ধানে।

১০. বাংলার হিন্দু বাংলার বৌদ্ধ (Banglar Hindu Banglar Boudhdho) - Lyrics by Gauriprsanna Majumdar, melody by Shyamal Gupta

১১. রুখে দাও ঘাতক দালালের ওই কালো হাত (Rukhe daao, rukhe daao) - Lyrics by S. M. Abu Bakar, melody by Rabiul Hussein

কথা: এস, এম, আবু বকর
সুর: রবিউল হুসেইন

রুখে দাও, রুখে দাও,
রুখে দাও, রুখে দাও
ঘাতক দালালের ঐ কালো হাত
ভেঙ্গে দাও, রুখে দাও।।

ঘাতক পাতক সব নরপিশাচী
রক্ত লিপ্সায় ওরা উঠেছে মাতি
ওদেও রুখতে সব সাথীকে
ডেকে নাও, রুখে দাও।।

হাতে সবুজের মাঝে লাল সূর্য
ওরে তরুণ বাজা রণতূর্য
আবার ফিরে যাও, মুক্তিযুদ্ধে
ফিরে যাও, রুখে দাও।।

১২. জনতার সংগ্রাম চলবে (Jawnotar shongraam cholbe) - Lyrics by Sikandar Abu Zafar, melody by Sheikh Lutfar Rahman

জনতার সংগ্রাম চলবেই
আমাদের সংগ্রাম চলবেই
জনতার সংগ্রাম চলবেই।।

হত মানে অপমানে নয়, সুখ-সম্মানে
বাঁচবার অধিকার কাড়তে
দাস্যের নির্মোক ছাড়তে
অগিণিত মানুষের প্রাণপণ যুদ্ধ
চলবেই চলবেই,
জনতার সংগ্রাম চলবেই।।

প্রতারণা প্রলোভন প্রলেপে
হোক না আঁধার নিশ্চিদ্র
আমরা তো সময়ের সারথী
নিশিদিন কাটাবো বিনিদ্র।

দিয়েছি তো শান্তি আরও দেবো স্বস্তি
দিয়েছি তো সম্ভ্রম আরো দেবো অস্থি
প্রয়োজন হলে দেবো এক নদী রক্ত।

হোক না পথের বাধা প্রস্তর শক্ত
অবিরাম যাত্রার চির সংঘর্ষে
একদিন সে পাহাড় টলবেই
চলবেই চলবেই
জনতার সংগ্রাম চলবেই
আমাদের সংগ্রাম চলবেই।।

হতে পারি পথভ্রম আরও বিধ্বস্ত
ধিকৃত নয় তবু চিত্ত
আমরা তো সুস্থির লক্ষ্যের যাত্রী
চলবার আবেগেই তৃপ্ত।

আমাদের পথরেখা দুস্তর দুর্গম
সাথে তবু অগণিত সঙ্গী
বেদনার কোটি কোটি অংশী
আমাদের চোখে চোখে লেলিহান অগ্নি
সকল বিরোধ বিধ্বংসী।

এই কালো রাত্রির সুকঠিন অর্গল
কোনদিন আমরা যে ভাঙবই
মুক্ত প্রাণের সাড়া আনবই।
আমাদের শপথের প্রদীপ্ত স্বাক্ষরে
নুতন সূর্যশিখা জ্বলবেই।

জনতার সংগ্রাম চলবেই
আমাদের সংগ্রাম চলবেই।

[গানটি লিখেছেন সিকান্‌দার আবু জাফর]

১৩. লাখো লাখো হাত খুলেছে আজিকে ভীরুতা খিল (Laakho laakho haat) - Pintu Bhattacharya

কথা ও সুর: পিন্টু ভট্টাচার্য্য

লাখো লাখো হাত
ভেঙ্গেছে আজিকে ভীরুতা খিল
রাজপথে-পথে উত্তাল
তাই জনমিছিল।।

হাজার কন্ঠ দাবী করে আজ
`শাস্তি চাই, শাস্তি চাই’
বজ্রকন্ঠে উঠেছে আওয়াজ
`বিচার চাই, বিচার চাই’
`শাস্তি চাই, বিচার চাই
হত্যাকারীর বিচার চাই ’।।

শহীদের ডাকে এতগুলো প্রাণ দিয়েছে সাড়া
ভূমিকম্পে দৈত্যপুরী দিয়েছে নাড়া,
একটি ডাকে এতগুলো প্রাণ দিয়েছে সাড়া
ভূমিকম্পে দৈত্যপুরী দিয়েছে নাড়া।

হাজার হাতে মশাল জ্বলে
দীপ্ত ক্রোধ
ঘৃণার আড়ালে হারিয়ে গিয়েছে
আজকে শোক
দৃপ্ত শপথে ঘোষণা তাই
`হত্যাকারীর বিচার চাই ’।।

১৪. চলো চলো হে মুক্তি-সেনানী (Chawlo chawlo he mukti shenani) - Salil Chowdhury

১৫. ক্লান্তি নামে গো (Klanti naamey go)

কথা ও সুর: সলিল চৌধুরী
কন্ঠ: দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়

ক্লান্তি নামে গো, রাত্রি নামে গো
বাইতে পারিনা যে তরণী আর কতদূর
হায় কোথায় শ্যামল মাটির মায়া
হায় কোথায় সবুজ বনের ছায়া
কোথা সে নীড় গভীর প্রেমের মোহনা
আহা কোথায় রে সে দিন।

এ শুধু নিঠুর ভেঙ্গে ফেলা
দিবা নিশি ভাসাই আশার ভেলা
মনোবীণার তারে শুধুই বাজে
আয় আলোক।

তবু তুমি আশার দীপ জ্বেলে রেখো
বাতায়নে আমার পথ চেয়ে থেকো
আবার আমি তোমারই দ্বারে
বিজয়ীর মত আসিব
মর্মর মুখরিত সন্ধ্যায়।

এই জীবনে যদি কিছু হারায়ে থাকি
এই ভূবনে জানি জানি যাবেনা ফাঁকি
এই বিরহ বিধুর রাতে
মিলনের গান গাহিও
আবার আমি এই
ধরণীর ধূলির পরে আসিব
মর্মর মুখরিত সন্ধ্যায়।


১৬. ব্যারিকেড বেয়নেট বেড়াজাল (Barricade bayonet bera jaal) - Abu Bakar Siddique

আবু বকর সিদ্দিকি

ব্যারিকেড বেয়নেট বেড়াজাল
পাকে পাকে তড়পায় সমকাল
মারী ভয়-সংশয় ত্রাসে
অতিকায় অজগর গ্রাসে
মানুষের কলিজা
ছিঁড়ে খুঁড়ে খাবলায়
খাবলায় নরপাল।

ঘুম নয় এই খাঁটি ক্রান্তি
ভাঙো ভাই খোঁয়াড়ির ক্লান্তি
হালখাতা বোশেখে
শিস্‌ দেয় সৈনিক হরিয়াল।।

দুর্বার বন্যার তোড়জোড়
মুখরিত করে এই রাঙা ভোর
নায়ে ঠেলা মারো হেই এইবার
তোলো পাল তোলো পাল ধরো হাল।।

কড়া হাতে ধরে আছি কবিতার
হাতিয়ার কলমের তলোয়ার
সংগ্রামী ব্যালাডে
ডাক দয়ে কমরেড কবিয়াল।।

১৭. হে মহা জীবন আর এ কাব্য নয় (Hey moha jeebon) - Lyrics by Sukanta Bhattacharya, melody by Imtiaz Ahmed

কথা: সুকান্ত ভট্টাচার্য্য
সুর: ইমতিয়াজ আহ্‌মেদ

হে মহাজীবন, আর এ কাব্য নয়
এবার কঠিন, কঠোর গদ্যে আনো।।
পদ-লালিত্য-ঝঙ্কার মুছে যাক
গদ্যের কড়া হাতুড়িকে আজ হানো
হে মহাজীবন।।

প্রয়োজন নেই, কবিতার স্নিগ্ধতা
কবিতা তোমায় দিলাম আজকে ছুটি,
ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী-গদ্যময়
পূর্ণিমা চাঁদ যেন ঝল্‌সানো রুটি
হে মহাজীবন।।

১৮. সাবাশ বাং‌লাদেশ এ পৃথিবী অবাক তাকিয়ে রয় (Shabash Bangladesh) - Lyrics by Sukanta Bhattacharya, melody by Imtiaz Ahmed

কথা: সুকান্ত ভট্টাচার্য্য
সুর: ইমতিয়াজ আহ্‌মেদ

সাবাশ বাংলাদেশ,
এ পৃথিবী অবাক তাকিয়ে রয়
জ্বলে পুড়ে মরে ছারখার
তবু মাথা নোয়াবার নয়।।


১৯. গ্রাম-নগর-মাঠ-পাথার-বন্দরে তৈরী হও (Graam nawgor maaTh pathar- Salil Chowdhury)

কথা,সুর: সলিল চৌধুরী

গ্রাম নগর- মাঠ পাথার বন্দরে তৈরী হও
কার ঘরে জ্বলেনি দীপ, চির আঁধার তৈরী হও।।

কার বাছার জোটেনি দুধ শুকনো মুখ, তৈরী হও,
ঘরে ঘরে ডাক পাঠাও, তৈরী হও, জোট বাঁধ,
মাঠে কিষাণ, কলে মজুর, নওজোয়ান জোট বাঁধ
এই মিছিল সব হারার, সব পাওয়ার এই মিছিল।।

২০. আমি যে দেখেছি সেই দেশ (Ami je dekhechhi shei desh) - Hemanga Biswas

আমি যে দেখেছি সেই দেশ
দেশ উজ্জ্বল সূর্য রঙীন।

আমি যে দেখেছি তাকে
শত ফুল বাগিচায়
পূবের বাতাসে কি
সুবাস বয়ে যায়।
ভ্রমরের গুঞ্জনে শুনেছি প্রকাশ
বিষাক্ত আগাছা হবে বিলীন।।

[আমি যে দেখেছি সেই দেশ
দেশ উজ্জ্বল সূর্য রঙীন।

দেখেছি তাকে যে শত ফুল বাগিচায়
পুবালি বাতাসে কি সুবাস ছড়ায়।
ভ্রমরের গুঞ্জনে শুনেছি প্রকাশ
বিষাক্ত আগাছা হয়েছে বিলীন]।।

২১. অন্ধকারের পথ এড়িয়ে তো নয় (Awndhokarer pawth eriye to noy) - ?

অন্ধকারের পথ এড়িয়েতো নয়
পেরিয়েই যেতে হবে বেরিয়ে
বাধা-বন্ধের থেকে চোখ ফিরিয়ে তো নয়
সরিয়েই যাব বাধা সরিয়ে।।

পথ যদি নাই থাকে সুযোগে ছাওয়া
তা বলে কি থেমে যাবে এগিয়ে যাওয়া
স্থির ঠিকানায় থির লক্ষ্য রেখে
বাড়িয়েই যাব গতি বাড়িয়ে।।

সমুখে চেয়ে থাকা আর নয়
জীবন কে জানবার এই তো সময়
উজ্জ্বল ভবিষ্যত্ ভোর যেখানে
অতীতের রঙে-রূপ রেখায়
বর্তমানের শুভ স্বপ্ন আনি
মনগড়া ভয় যাব মাড়িয়ে।।

২২. ছেলে ঘুমালো পাড়া জুড়ালো (Chhele ghoomolo para joorolo) - ?

ছেলে ঘুমালো, পাড়া জুড়ালো
বর্গী এল দেশে
বুলবুলিতে ধান খেয়েছে
খাজনা দেব কিসে।।

ধান ফুরল, পান ফুরল
খাজনার উপায় কি?
আর ক’টা দিন সবুর কর
রসুন বুনেছি।।

ছেলে ঘুমিও না, পাড়া জুড়াবেনা
বর্গী আছে দেশে
ধানের গোলা শেষ হয়ে যাবে
খড় কুড়াবে শেষে
ওরা আজও ফন্দি আঁটে
সূর্য নেবে লুটেপুটে
আমরা সবাই ঘুমিয়ে গেলে
সূর্য নাববে কি সে।।

২৩. পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে (Purbo digawnte shurjo uthechhe) - Lyrics by Gobinda Haldar, melody by Samar Das

কথা: গোবিন্দ হালদার
সুর: সমর দাস

পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে
রক্ত লাল, রক্ত লাল, রক্ত লাল
জোয়ার এসেছে জন-সমুদ্রে
রক্ত লাল, রক্ত লাল, রক্ত লাল।।
বাঁধন ছেঁড়ার হয়েছে কাল,
হয়েছে কাল, হয়েছে কাল, হয়েছে কাল।।

শোষণের দিন শেষ হয়ে আসে
অত্যাচারীরা কাঁপে আজ ত্রাসে
রক্তে আগুন প্রতিরোধ গড়ে
নয়া বাংলার নয়া শ্মশান, নয়া শ্মশান।

আর দেরী নয় উড়াও নিশান
রক্তে বাজুক প্রলয়ের বিষাণ
বিদ্যুত্-গতি হোক অভিযান
ছিঁড়ে ফেলো সব শত্রু জাল।

২৪. তীরহারা এই ঢেউ-এর সাগর পাড়ি দিবো রে (Teerhara ei dheuer shaagor) - Apel Mahmud

তীরহারা এই ঢেউয়ের সাগর
পাড়ি দিব রে
আমরা ক’জন নবীন মাঝি
হাল ধরেছি
শক্ত করে রে ।

জীবন কাটে যুদ্ধ করে
প্রাণের মায়া সাঙ্গ করে
জীবনের স্বাদ নাহি পাই।

ঘর-বাড়ির ঠিকানা নাই
দিন-রাত্রি জানা নাই
চলার ঠিকানা সঠিক নাই
জানি শুধু চলতে হবে
এ তরী বাইতে হবে
আমি যে সাগর-মাঝি রে।

জীবনের রঙে মনকে টানে না
ফুলের ঐ গন্ধ কেমন জানি না
জ্যোছনার দৃশ্য চোখে পড়ে না
তারাও তো ভুলে কভু ডাকে না।

বৈশাখের ওই রুদ্র ঝড়ে
আকাশ যখন ভেঙে পড়ে
ছেঁড়া পাল আরও ছিঁড়ে যায়
হাতছানি দেয় বিদ্যুত্‌ আমায়
হঠাত্ কে যে শঙ্খ শোনায়
দেখি ঐ ভোরের পাখি গায়
তবু তরী বাইতে হবে
খেয়া পারে নিতে হবে
যতই ঝড় উঠুক সাগরে

তীরহারা এই ঢেউয়ের
সাগর পাড়ি দিব রে।।

[গানটি গেয়েছেন আপেল মাহমুদ]

২৫. নওজোয়ান,নওজোয়ান, বিশ্বে জেগেছে নওজোয়ান (Nawjowaan nawjowaan) - Salil Chowdhury


কথা,সুর: সলিল চৌধুরী

নওজোয়ান নওজোয়ান বিশ্বে জেগেছে নওজোয়ান
কোটি প্রাণ একই প্রাণ একই স্বপ্নে মহীয়ান
তুচ্ছ ভয় সন্ত্রাসের রক্ত পিপাসু দানবের
একতার হিম্মতের শান্তি শপথে বলীয়ান।।

আমাদের মুক্তি স্বপ্নে সূর্যে রং লাগে
যৌবনেরই অভ্যূদয়ে হিমালয় জাগে
আমাদের শান্তি মিছিলে সিন্ধু চলমান
যুদ্ধ খোর সভ্যতার শত্রুরা সাবধান।।

আমরা মিলেছি মানবতার মহত্বে গরিমায়
মজুরে কিষাণে মধ্যবিত্তে সারা দুনিয়ায়
সাধ্য কোন দুশমনের যুদ্ধ ফের বাধায়
রক্তের তান্ডবে বিশ্ব ফের মাতায়
সারা দুনিয়ায়।।

আমরা মরূর ধূলিতে স্বর্গ উদ্যান গড়ি
শ্মশানে-মশানে মরণ বিজয়ী সভ্যতা গড়ি
ধরনীর আর্তনাদ হাসিতে ভরি
সখ্যেরও সঙ্গীতে বিশ্ব মুখরি
সভ্যতা গড়ি।।

২৬. শেষ হয়ে গেছে শোষকের দিন (Shesh hoye gachhe shoshoker din) - ?

শেষ হয়ে গেছে শোষকের দিন
বিদ্রোহ শুরু হোক
অধিকার নিতে চলে এস যত
নিচের তলার লোক
আবার লড়াই হোক।।

আবার না হয় তিরিশ লক্ষ প্রাণ
দেব মোরা বলিদান
মানুষের মত বাঁচার দাবীতে
মেনে নেব সেই শোক।।

ভুল করে আর বারে বারে মোরা
ভুলের মাশুল দেবনা
যত ভুল সব নির্মূল করে
তাতিয়ে এনেছি চেতনা।

কৃষক শ্রমিক সবার ঐক্য পণ
প্রয়োজনে দেবে রণ
মানুষের মত বাঁচার দাবীতে
মেনে নেবে সেই শোক।।

২৭. ভয় কি মরণে (Bhoy ki mawroney) - Mukunda Das


ভয় কি মরণে, রাখিতে সন্তানে
মাতঙ্গী মেতেছে আজ সমর রঙ্গে৷
তাথৈ তাথৈ থৈ, দ্রিমি, দ্রিমি দ্রম্ দ্রম্
ভূত পিশাচ নাচে যোগিনী সঙ্গে৷
ভয় কি মরণে, রাখিতে সন্তানে, মাতঙ্গী মেতেছে আজ সমর রঙ্গে৷
দানব দলনী, হয়ে উন্মাদিনী
আর কি দানব থাকিবে বঙ্গে৷
ভয় কি মরণে, রাখিতে সন্তানে, মাতঙ্গী মেতেছে আজ সমর রঙ্গে৷
সাজ রে সন্তান, হিন্দু মুসলমান
থাকে থাকিবে প্রাণ, না হয় যাইবে প্রাণ৷
লইয়ে কৃপাণ, হও রে আগুয়ান
নিতে হয় মুকুন্দেরে, নিও রে সঙ্গে৷
ভয় কি মরণে, রাখিতে সন্তানে, মাতঙ্গী মেতেছে আজ সমর রঙ্গে৷

২৮. বান এসেছে মরা গাঙে (Baan eshechhe mawra gaange) - Mukunda Das

বান এসেছে মরা গাঙে খুলতে হবে নাও
তোমরা এখোনো ঘুমাও, তোমরা এখোনো ঘুমাও৷
বান এসেছে মরা গাঙে খুলতে হবে নাও
তোমরা এখোনো ঘুমাও, তোমরা এখোনো ঘুমাও৷
কত যুগ গেছে কেটে, দেখেছ কত স্বপন
এবার বদর বলে ধরো বৈঠা জীবন মরণ পণ৷
দমকা হাওয়ার কাল গিয়েছে, ফাগুন বইছে পাল খাটাও
বান এসেছে মরা গাঙে খুলতে হবে নাও
তোমরা এখোনো ঘুমাও, তোমরা এখোনো ঘুমাও৷
অবহেলে থাকলে বসে, কাঁদতে হবে সারা জীবন
যুগ যুগান্তের তপস্যাতে এসেছে এই লগন,
পারের মাঝি হাল ধরেছে, মিছেই পরের মুখ তাকাও৷
পারের মাঝি হাল ধরেছে, মিছেই পরের মুখ তাকাও৷
বান এসেছে মরা গাঙে খুলতে হবে নাও
তোমরা এখোনো ঘুমাও, তোমরা এখোনো ঘুমাও৷

২৯.বজ্রকঠিন শপথ এবার লহো সবাই (Bawjrokothin shawpoth abar lawho shobai shaanti chaai) - Lyrics by Nazim Mahmud, melody by Sadhan Sarkar

কথা: নাজিম মাহ্‌মুদ
সুর: সাধন সরকার

বজ্র কঠিন শপথ আবার লহ সবাই
শান্তি চাই
সবার উপরে মানুষ সত্য কহ সবাই
শান্তি চাই।।

মানবতার নিধনযোগ্য বিভত্সতা
বিভেদ বুদ্ধি বিদ্বেষ বিষ হিংস্রতা
হিংসা দ্বন্দ জ্বালিয়ে পুড়িয়ে করব ছাই
শান্তি চাই।।

পলাতক আজ শুভ্র কপোত আকাশ নীল
আগামী সূর্যে করবে আবার সে ঝিলমিল।

তা যদি না হয় বুঝব আমরা মানুষ নই
শিরায় শিরায় এখনও পশুর রক্ত বই
তা যদি না হয় গর্ব বড়াই দিও না ঠাঁই
শান্তি চাই।।

৩০. দিন এসেছে এইবার (Din eshechhe eibar) - ?

দিন এসেছে এইবার
কিষাণ তোমার ভয় কি আর
শ্রমিক তোমার ভয় কি আর
শক্ত হাতের বজ্র মুঠোয়
ধর হাতুড়ি কাস্তে আর
মার শাবল--হেঁইয়া হো।।

অন্ন তোমার যে লুটেছে
বস্ত্র তোমার যে কেড়েছে
তার দিন শেষ হয়েছে
জেল জুলুম শেষ এবার।।

অন্ধকারের চার দেয়ালে বন্দী কেন আর
শাবল চালা শাবল চালা
জোরসে শাবল মার
শাবল মারো---হেঁইয়ো
জোরসে মারো---হেঁইয়ো
আরও জোরে---হেঁইয়ো
ভেঙ্গে করো চুরমার।।

৩১. আমাদের নানা মত নানা দল (Amader nana mawt nana dawl) - Lyrics by Nazim Mahmud, melody by Sadhan Sarkar

কথা: নাজিম মাহ্‌মুদ
সুর: সাধন সরকার

আমাদের নানা মত নানা দল
আমাদের নানা পথ নানা ছল
মহাপাপ অন্যায় স্বার্থের বন্যায়
আমাদের দেশ গেল রসাতল।।

আমাদের এ দেশের ইতিহাস
নিয়তির নিষ্ঠুর পরিহাস
জান- মান দি’ কবুল
তবু শুধু দিক ভুল
অমৃতের পেয়ালায় হলাহল।।

আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম
শহীদের মৃত্যু সে উদ্দাম
বিক্ষত জীবনের বিস্ময়
আজ বুঝি তার কোন নাই দাম।

সত্যের নাই কোন অধিকার
অবিচারে নাই কোন প্রতিকার
এ কি ঘোর অভিশাপ
নাই কোন পরিতাপ
মুক্তির এই নাকি ফলাফল।।

৩২. বাংলার ছাত্র-জনতা (Banglar chhatro jawnota ek michhile dnaara) - ?

বাংলার ছাত্র জনতা
এক মিছিলে দাঁড়া
নতুন দিনের ডাক এসেছে
এক সাথে দে সাড়া।।

ঐ কারখানাতে কলে, ঐ পথে মাঠে জলে
(সবাই) খেটে মরে, না পায় খেতে
না পায় থাকার ঘর
তাই ঋন মুক্তির ঝান্ডা উঁচায়ে ধর।।

ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ে সবাই মরে ভয়ে
(সেথায়) না হয় পড়া, জীবন গড়া
শুধুই গুলির ডর
তাই সন্ত্রাসের মুন্ডু নিপাত কর।।

৩৩. কমরেড, এই রাত আধিয়ার (Comrade, ei raat aadhiyaar) - Lyrics by Nazim Mahmud, melody by Sadhan Sarkar


কথা: নাজিম মাহ্‌মুদ
সুর: সাধন সরকার

কমরেড এই রাত আঁধিয়ার
অজগর নিঃশ্বাস চারিধার
পিশাচের মোকাবেলা এই ক্ষণ
কাঁধে নাও দূর্বার হাতিয়ার।।

চোখে জ্বালো শপথের ইস্পাত
ভেঙ্গে ফেল শত্রুর বিষ দাঁত
মনে আনো দুরন্ত বিশ্বাস
জয় কর জনতার স্বাধীকার।।

কমরেড এই রাত ঘুম নেই
জেগে আছি অতন্দ্র পাহারায়
নিষ্ফল স্বপ্নের ধুম নেই
শান্তির মরীচিকা সাহারায়।

পাপ অন্যায় করো প্রতিরোধ
প্রতি রক্তের নাও প্রতিশোধ
কেন আর বৃথা কাল অপচয়
কেন ভয় সংশয়বাদী আর।।


৩৪. তূর্য-নিনাদ বাজাও গর্বে (Toorjo ninaad baajaao gawrbe) - Lyrics by Nazim Mahmud, melody by Sadhan Sarkar

কথা: নাজিম মাহ্‌মুদ
সুর: সাধন সরকার

তূর্য নিনাদ বাজাও গর্বে
হে বীর হে সৈনিক
গর্জে উঠুক তোমার কন্ঠে
দৃপ্ত প্রাণের মন্ত্র হে নির্ভীক।

অন্তবিহীন অন্ধকার শেষে
নতুন সূর্য আলোর উন্মেষে
ভাঙ্গো শৃঙ্খল মোহ বন্ধন
শাসন শোষণ যন্ত্র বৈদেশিক।

উত্‌পীড়িত নির্যাতিত অনন্য দেশ
দুঃখ অশ্রু গ্লানির তোমার নাইকো শেষ।

স্বৈরাচারীর শক্তি বাণ কেড়ে
অবসাদ ভয় ক্লান্তি ঘুম ঝেড়ে
মহাজনতার অগ্রপথিক ।।

৩৫. মানবো না এই বন্ধনে (Maanbo na ei bawndhone) - Salil Chowdhury

৩৬. জাগো সর্বহারা অনশন বন্দী ক্রীতদাস (Jago jago shorbohara awnoshono bondee kritodaash) - ?

জাগো জাগো জাগো সর্বহারা
অনশন বন্দী ক্রিতদাস
শ্রমিক দিয়াছে আজি সাড়া
উঠিয়াছে মুক্তির আশ্বাস।।

সনাতন জীর্ণ কু-আচার
চূর্ণ করি জাগো জনগণ
ঘুচাও এ দৈন্য হাহাকার
জীবন-মরণ করি পণ।।

শেষ যুদ্ধ শুরু আজ কমরেড
এসো মোরা মিলি একসাথ
গাও ইন্টারন্যাশনাল
মিলাবে মানবজাত।।

৩৭. এই সূর্যদয়ের ভোরে এসো আজ (Ei shurjodoyer bhore esho aaj) - ?

৩৮. সোনায় মোড়ানো বাংলা মোদের (Shonay morano Bangla moder shoshan korechhe ke)

কথা ও সুর: মকসুদ আলী খান সাঁই

সোনায় মোড়ানো বাংলা মোদের
শ্মশান করেছে কে,
এহিয়া তোমায় আসামীর মত
জবাব দিতেই হবে।।

শ্যামল বরণ সোনালী ফসলে
ছিল যে সেদিন ভরা
নদী নির্ঝরে সদা বয়ে যেত
পূত অমৃত ধারা
অগ্নিদহনে সে সুখ স্বপ্ন
দগ্ধ করেছে কে।।

আমরা চেয়েছি ক্ষুধার অন্ন
একটি স্নেহের নীড়
নগদ পাওনা হিসেব কষিয়া
ছিলনা লোভের ভিড়।

দেশের মাটিতে আমরা ফলাব
ফসলের কাঁচা সোনা
চিরদিন তুমি নিয়ে যাবে কেড়ে
হায় রে উন্মাদনা
এই বাঙালীর বুকের রক্তে
বন্যা বহালো কে।।

৩৯. বাংলা মার দুর্নিবার আমরা তরুণ দল (Bangla Mar doornibaar amra torun dawl) - ?

৪০. জনতার ডাক শুনি (Jawnotar daak shooni) - ?

৪১. এই বাংলায় এসেছিল দুর্জয় শপথের দিন (Ei Banglay eshechhilo doorjoy shawpother din) - Rabiul Hossein

৪২. মুক্তির মন্দির সোপান তলে (Muktiro mondiro shopaano tawle) - Lyrics by Mohini Chowdhury, melody by Krishna Chandra Dey

মুক্তির মন্দির সোপান তলে
কত প্রাণ হলো বলিদান, লেখা আছে অশ্রুজলে৷
কত বিপ্লবি বন্ধুর রক্তে রাঙা, বন্দীশালার ওই শিকল ভাঙা
তাঁরা কি ফিরিবে আজ সুপ্রভাতে
যত তরুণ অরুণ গেছে অস্তাচলে৷
মুক্তির মন্দির সোপান তলে...লেখা আছে অশ্রুজলে ৷
যারা স্বর্গগত তারা এখনো জানে, স্বর্গের চেয়ে প্রিয় জন্মভূমি
এসো স্বদেশ ব্রতের মহা দীক্ষা লভি
সেই মৃত্যুঞ্জয়ীদের চরণ চুমি
যারা জীর্ণ জাতির বুকে জাগালো আশা
মৌন মলিনমুখে জাগালো ভাষা
আজ রক্তকমলে গাঁথা মাল্যখানি,
বিজয়লক্ষী দেবে তাঁদেরি গলে
মুক্তির মন্দির সোপান তলে...লেখা আছে অশ্রুজলে ৷

৪৩. হেই সামালো ধান হো - সলীল চৌধুরী (Hei samalo dhaan ho - Salil Chowdhury)

হো..ও ও হো...হা...
হেই সামালো ধাণ হো, কাস্তেটা দাও শান হো
জান কবুল আর মান কবুল
আর দেব না, আর দেব না রক্তে বোনা ধান মোদের প্রাণ হো

চিনি তোমায় চিনি গো, জানি তোমায় জানি গো
সাদা হাতির কালা মাহুত তুমি না
জান কবুল আর মান কবুল, আর দেব না ...মোদের প্রাণ হো

পঞ্চাশে লাখ প্রাণ দিছি, মা-বোনেদের মান দিছি
কালো বাজার আলা করো তুমি না
জান কবুল আর মান কবুল, আর দেব না ...মোদের প্রাণ হো

মোরা তুলবো না ধান পরের গোলায়,
মরবো না আর ক্ষুধার জ্বালায়, মরবো না
ধার জমিতে লাঙল চালায়, ঢের সয়েছি, আর তো মোরা সইবো না

এই লাঙল ধরা কড়া হাতের শপথ ভুলব না
জান কবুল আর মান কবুল, আর দেব না ..মোদের প্রাণ হো


-সলীল চৌধুরী

৪৪. নোঙ্গর তোলো তোলো (Nongor tolo tolo) - ?

৪৫. মনে মনে ওরা সবাই ঘাতক দালাল (Mone mone ora shobai ghaatok dalal) - S. M. Abu Bakar

৪৬. কারা মোর ঘর ভেঙেছে স্মরণ আছে (Kara mor ghawr bhengechhe shawron achhe) - ?

৪৭. ১৬ই ডিসেম্বর (Sholoi December) - Lyrics by S. M. Abu Bakar, melody by Rabiul Hussein

কথা: এস, এম, আবু বকর
সুর: রবিউল হুসেইন

ষোলই ডিসেম্বর
তুমি গর্ব আমার, আমার অহঙ্কার
সালাম তোমায়, তোমায় নমস্কার।।

সেদিন যখন জ্বলে ওঠে বাঙালী
নিয়ে আপন পরিচয়
মানব দানব তোমার কাছে
প্রাণ ভিক্ষা চায়
তখন আমার মায়ের আঁচল উড়ে আকাশে
এমন ক্ষণ আমি পাই নাগো আর।।

ইতিহাসের যত রুদ্ধ পাতা
পেরিয়ে তোমায় পেলাম
প্রতি পাতায় রক্তে লেখা
শত শহীদের নাম
এলে তুমি আলো হয়ে মোছাতে অন্ধকার
এমন আলো বাধা মানে নাগো আর।।

৪৮. আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো (Amar bhaiyer rawkte rangano) - Lyrics by Abdul Gaffar Chowdhury, melody by Altaf Mahmud

৪৯. সাড়ে সাত কোটি বাঙালীর মনে(Shaare shaat koti Bangalir mone) - Rabiul Hussein

সাড়ে সাত কোটি বাঙ্গালীর মনে একুশ এসেছে ফিরে
অমর শহীদ ভাইয়েরা আমার তোমাদের স্মৃতি ঘিরে।।

ওরা চেয়েছিল রুদ্ধ করতে মোদের কন্ঠস্বর
উত্তাল পথে নেমেছিল তাই দুর্জয় দুর্বার
তোমাদের প্রতিবাদে
হেরে গিয়ে ওরা মৃত্যু হেনেছে, রেখেছে অমর করে।।

বাহান্ন সাল, একুশে ফেব্রুয়ারী
মৃত্যুঞ্জয়ী ভাইয়েরা আমার
মাতৃভাষার দিলে অধিকার
কি করে ভুলিতে পারি।

চেয়ে দেখ আজ রক্ত পলাশে এদেশের প্রান্তর
শ্রদ্ধায় কত রাঙা হয়ে আছে উজ্জ্বল ভাস্বর
তোমাদের স্মৃতি জ্বেলে
শত কোটি ফুল সাজিয়ে দিয়েছি শহীদ মিনার ভরে।।

৫০. আমাদের চেতনার সৈকতে একুশের ঢেউ (Amader chetonar shoikote Ekhusher dheu) - Lyrics by Nazim Mahmud, melody by Sadhan Sarkar

কথা: নাজিম মাহ্‌মুদ
সুর: সাধন সরকার

আমাদের চেতনার সৈকতে
একুশের ঢেউ মাথা কুটল
শহীদের রক্তের বিনিময়ে
চোখে জল কয় ফোঁটা জুটল।।

বছরের একদিন পুণ্য
সঞ্চয়ে হয় ঋণ পরিশোধ
হৃদয়ের পাত্রটি শুন্য
অন্যের পায়ে পায়ে লুটল।।

কতকাল আর এই প্রহসন
মুখে মুখে শুধু বাঙালীত্ব
কতকাল আর মোহবন্ধন
জীবনের পদে পদে নিত্য।

একুশের ঢেউ তবু লাগবেই
উর্বর বাংলার প্রান্তর
ফসলের মরশুম জাগবে
রক্ত গোলাপ যদি ফুটল।।

৫১. রক্ত দিয়ে নাম লিখেছি বাংলাদেশের নাম (Rawkto diye naam likhechhi) - ?

৫২. ওরা জীবনের গান গাইতে দেয়না পল রোবসন (Ora jeeboner gaan gaaite dey na Paul Robeson) - Salil Chowdhury

ওরা জীবনের গান গাইতে দেয়না
শিল্পী সংগ্রামী পল রোবসন
আমরা তোমারই গান গাই ওরা চায়না।।

তুমি চেয়ে দেখ রোবসন
আমাদের ঐকতানে ঘুম ভেঙ্গেছে
বিপ্লবের বহ্নি দেখে বুক কেঁপেছে
তোমার ঐ সংগীতে ভয় পেয়েছে রোবসন
ওরা প্রতিরোধ প্রস্তুতিতে ভয় পেয়েছে রোবসন।।

মোরা জয় করেছি একতা
মোরা দূর করেছি হীনতা
ওরা ভয় পায় তাই আমাদের
ওরা ভয় পেয়েছে আজ একতায়।

তুমি মৃত্যুহীন যে রোবসন
পৃথিবীর প্রতি ভোরে পথে প্রান্তরে
মেহনতী জনতার প্রতি অন্তরে
তোমারই একতার গান শোনা যায় রোবসন
সারা দুনিয়ার শোষিতেরা এক হয় রোবসন।।

৫৩. আমি বাংলায় গান গাই (Aami Banglay gaan gaai) - Pratul Mukhopadhyay

৫৪. বিচারপতি, তোমার বিচার করবে যারা (Bicharpoti tomar bichar korbe jara) - Salil Chowdhury

কথা ও সুর: সলীল চৌধুরী

বিচারপতি তোমার বিচার করবে যারা
আজ জেগেছে এই জনতা।
তোমার গুলির, তোমার ফাঁসীর,
তোমার কারাগারের পেষণ
শুধবে তারা ওজনে তার এই জনতা।।

তোমার সভায় আমির যারা
ফাঁসির কাঠে ঝুলবে তারা,
তোমার রাজা-মহারাজা
কড়জোরে মাগবে বিচার;
ঠিক জেনো তা, এই জনতা।।

তারা নতুন প্রাতে প্রাণ পেয়েছে,
তারা ক্ষুদিরামের রক্তে বীজে প্রাণ পেয়েছে,
তারা জালিয়ানের রক্তস্নানে প্রাণ পেয়েছে,
তারা ফাঁসি কাঠে জীবন দিয়ে
প্রাণ পেয়েছে, প্রাণ পেয়েছে,
গুলির ঘায়ে কলজে ছিঁড়ে প্রাণ পেয়েছে,
প্রাণ পেয়েছে এই জনতা।।

নিঃস্ব যারা সর্বহারা তোমার বিচারে,
সেই নিপীড়িত জনগণের পায়ের ধারে
ক্ষমা তোমায় চাইতে হবে
নামিয়ে মাথা, হে বিধাতা।
রক্ত দিয়ে শুধতে হবে
নামিয়ে মাথা, হে বিধাতা।
ঠিক জেনো তা, এই জনতা।।

৫৫. যশোর খুলনা বগুড়া পাবনা (Jawshor Khulna Bogura Pabna Dhaka Borishal Nowakhali) - ?

৫৬. শোনো একটি মুজিবরের থেকে (Shono ekti Mujibarer theke) - Lyrics by Gauriprasanna Majumdar, Melody by Anshuman Roy

শোনো, একটি মুজিবরের থেকে
লক্ষ মুজিবরের কন্ঠস্বরের ধ্বনি, প্রতিধ্বনি
আকাশে বাতাসে ওঠে রণি:
বাংলাদেশ আমার বাংলাদেশ।

সেই সবুজের বুক চেরা মেঠো পথে,
আবার এসে ফিরে যাবো আমার
হারানো বাংলাকে আবার তো ফিরে পাবো।
শিল্পে কাব্যে কোথায় আছে হায় রে
এমন সোনার দেশ।

বিশ্বকবির সোনার বাংলা, নজরুলের বাংলাদেশ,
জীবনানন্দের রূপসী বাংলা
রূপের যে তার নেইকো শেষ, বাংলাদেশ।

‘জয় বাংলা’ বলতে মনরে আমার এখন কেন ভাবো,
আমার হারানো বাংলাকে আবার তো ফিরে পাবো,
অন্ধকারে পুবাকাশে উঠবে আবার দিনমণি।।

[গানটির কথা লিখেছেন গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার এবং গেয়েছেন আংশুমান রায়]

৫৭. সাড়ে সাত কোটি মানুষের আরেকটি নাম (Shaare shaat manusher arekti naam) - ?

৫৮. ও আলোর পথ-যাত্রী - সলীল চৌধুরী (O aalor pawtho jatree - Salil Chowdhury)

ও আলোর পথযাত্রী, এ যে রাত্রি, এখানে থেম না
এ বালুরচরে আশার তরণী তোমার যেন বেঁধ না,
আমি ক্লান্ত যে, তবু হাল ধরো, আমি রিক্ত যে, সেই স্বান্ত্বনা
তব ছিন্ন পালে জয়পতাকা তুলে, তূর্য তোরণ দাও হানা
ও আলোর পথযাত্রী, এ যে রাত্রি, এখানে থেম না
আহা বুক ভেঙে ভেঙে, পথে থেমে, শোণিত কণা
কত যুগ ধরে ধরে, করেছে তারা সূর্য রচনা
আর কত দূর, ওই মোহনা, এ যে কুয়াশা, এ যে ছলনা
এই বঞ্চনাকে পার হলেই পাবে, জনসমুদ্রের ঠিকানা
আ আ আ আ আ আ ...
আহ্বান, শোন আহ্বান, আসে মাঠ ঘাট বন পেরিযে
দুস্তর, বাঁধা প্রস্তর, ঠেলে বন্যার মত বেরিয়ে
যুগ সঞ্চিত সুপ্তি দিয়েছে সাড়া, হিমগিরি শুনলো কি সূর্যের ঈশারা
যাত্রা শুরু উচ্ছল, চলে দূর্বার বেগে তটিনী
উত্তাল তালে উদ্দাম নাচে মুক্ত স্রোতনটিনী
এই শুধু সত্য যে নবপ্রাণে জেগেছে, রণ সাজে সেজেছে অধিকার অর্জনে
আহ্বান, শোন আহ্বান...বন্যার মত বেরিয়ে...আসে আহ্বান, শোন আহ্বান


৫৯. জয় জয় নবজাত বাংলাদেশ (Joy joy nawbojaato Bangladesh) - ?

৬০. মোদের বাংলা সোনার বাংলা (Moder Bangla shonar Bangla) - ?

৬১. সে দিন আর কতো দূরে (Shey din ar kawto doorey) - Salil Chowdhury

কথা ও সুর: সলীল চৌধুরী

সেদিন আর কতদুরে,
যখন প্রাণের সৌরভে
সবার গৌরবে ভরে
রবে এ দেশ ধন ধান্যে
শিক্ষায় জ্ঞানে-মান্যে
আনন্দের গানে গানে সুরে।।

(গামা পাধাপা, পা, সা, পা, ধা,
গামাপাধাপা, পা.......নি...........
নির্সার্রের্গার্রে. র্রে.........র্সানিধানি
পাধানির্সা র্সা..র্সা......নিধা.....)

কত না দিন কত রঙীন
কত না যে স্বপন করে বপন
ফিরে চলে গেছে কত না জন,হায়
সেই স্বপন ফুলে ফলে দাও ভরে।।

(পা. পা. পা. পাধাপা. পার্সাপা.
পা. ধা. নি. র্সা. নি. র্রে........
ধা. ধা. ধা. ধানিধা. ধার্রেধা.
ধা. নি. র্সা. র্গা. র্রে. র্সা.....)

এ দেশ আমার, এ দেশ তোমার
বুকের ধন, করো যতন
যেন না কেউ কাড়ে সেই রতন, হায়
বিভেদ বিচ্ছেদ শেষ দাও করে।।


৬২. আয়রে ও আয়রে ও ভাইরে ও ভাইরে (Aay ray o aay ray bhaai ray o bhaai ray) - Salil Chowdhury

কথা ও সুর: সলীল চৌধুরী

আয়রে ও আয়রে,
ও ভাই রে, ও ভাই রে,
ভাই বন্ধু, চল্‌ যাই রে,
ও রাম-রহিমের বাছা‌,
ও বাঁচা আপন বাঁচা
চল্‌ ধান কাটি আর কাকে ডরি,
নিজ খামার নিজে ভরি,
কাস্তেটা শানাই রে।।

এই মাটিতে কলিজার আশা,
স্বপ্নের বীজ বুনি,
আর চোখেরই জল সেচ দিয়ে
ফসলের কাল গুনি
ক্ষেতের আলে আলে
আজ সোনারই ঢেউ খেলে
আহা মাটি মাতা
দুই হাতে অন্ন ঢালে
এই ঘরে ঘরে নবান্নেরই হবে কি রোশনাই।।

আহা কার ঘরে জ্বলেনি দীপ
কে আছ আঁধারে,
আহা কার বাছার জোটেনি দুধ
আছ অনাহারে,
আয় আয় মাটির টানে
কন্ঠ ভরি গানে
মাটি মোদের মাতা
আমরাই তো বিধাতা
এই মাটিতে নবজীবনের, রংমহল বানাই রে।।

৬৩. চল রে চল সবে - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর (Chol re chol shobe- Jyotirindronath Thakur)

চল্ রে চল্ সবে ভারত সন্তান, মাতৃভূমি করে আহ্বান৷
বীর দর্পে পৌরুষ গর্বে, সাধ্ রে সাধ্ সবে দেশের কল্যাণ৷
চল্ রে চল্ সবে ভারত সন্তান, মাতৃভূমি করে আহ্বান৷
পুত্র ভিন্ন, মাতৃ দৈন্য, কে করে মোচন X2
উঠ, জাগো, সবে বলো, ‘মাতঃ, তব পদে সপিনু পরাণ’ ৷
এক তন্ত্রে করো তপ্, এক মন্ত্রে জপ্
শিক্ষা-দীক্ষা, লক্ষ্য-মোক্ষ এক, এক সুরে গাও সবে গান
দেশ-দেশান্তে যাও রে আনতে নব নব জ্ঞান
নব ভাবে নবোত্‌সাহে মাতো, উঠাও রে নবতর তান
সবে ভারত সন্তান, মাতৃভূমি করে আহ্বান৷
লোক রঞ্জন, লোক গঞ্জন, না করি দৃকপাত
যাহা শুভ, যাহা ধ্রুব ন্যায়, তাহাতে জীবন কর দান
দলাদলি সব ভুলি, হিন্দু-মুসলমান
এক পথে, এক সাথে চলো, উড়াইয়ে একতা নিশান
সবে ভারত সন্তান, মাতৃভূমি করে আহ্বান৷

৬৪. শান্তি না সংগ্রাম (Shaanti na shongraam) - Lyrics by Nazim Mahmud, melody by Sadhan Sarkar

৬৫. রক্ততিলক ললাটে সূর্য (Rokto-tilok lolate shurjo) - Lyrics by Nazim Mahmud, melody by Sadhan Sarkar

৬৬. জীবনের ছককাটা চত্বর (Jeeboner chhawk kata chawttor) - Lyrics by Nazim Mahmud, melody by Sadhan Sarkar

৬৭. ডিঙ্গা ভাসাও সাগরে (Dinga bhashao shaagore shathire) - Pratul Mukhopadhyay

৬৮. আমার মাগো, তোর চোখে কেন জলের ধারা (Amar maa go tor chokhe keno jawler dhara) - Pratul Mukhopadhyay

৬৯. নাও গান ভরে, নাও প্রাণ ভরে (Naao gaan bhore naao praan bhore) - Salil Chowdhury

নাও গান ভরে (Naao Gaan Bhorey)

কথা ও সুর: সলীল চৌধুরী

নাও গান ভরে, নাও প্রাণ ভরে
চলো যাই যেখানে প্রান্তর
সোনার ধানের শীষে ডাকে যেখানে
সোনা ভরা অন্তর।।

সেই ঝিম ঝিম ঝিম ধরা দিন দিন দিন,
যেথা ঝির ঝির ঝির ঝির বাতাসে
সেই ঝিন ঝিন ঝিন সুরে ঝিঁঝি ডাকা দুপুরে,
শান্তির আহবান যে আসে
স্বপ্নের তুলি দেয় সোনা রঙ আকাশে।।

ডাক দেয় শোন শোন, তূর্য বেজেছে যে,
রাত্রির অবসানে সূর্য জেগেছে যে
রঙে রঙে ধরণী, হল নানা বরণী
ঝর ঝর ঝরণার সুরে।।

আর নয় দেরী আর নয়, বন্ধ ঘরে আর নয়,
সুপ্তি ভেঙ্গেছে যে, মুক্তি ডেকেছে যে
কুলু কুলু তটিনী, তরী যেন নটিনী
নেচে নেচে চলে যায় দূরে।।

৭০. মোরা যাত্রী একই তরণীর (Mora jatree eki toroneer) - ?

ভূপেন হাজারিকা

মোরা যাত্রী একই তরণীর,
সহযাত্রী একই তরণীর
যদি সংঘাত হয় তবে ধ্বংস হবে
গর্ব মোদের প্রগতির।।

প্রভু চোখ মেলে চাও
দেখ স্বর্গ হতে,
ও মহা প্রভু, কী শুন্য সাগর,
এই তরী পৃথিবীর সারা মানবজাতির,
তাই ঈশ্বর গড়ে দিন মিলনের নৌকো
চোখ কারও কালো কারও নীল কারও পিঙ্গল,
তাই তো দেখি তোমার আমার
একই আকাশ একই ধরণী।

৭১. যুদ্ধ যুদ্ধ যুদ্ধ, ডাক দিয়ে যাই (Judhdho judhdho judhdho daak diye jaai) - S. M. Abu Bakar, melody by Rabiul Hussain

কথা: এস, এম, আবু বকর
সুর: রবিউল হোসেইন

যুদ্ধ যুদ্ধ যুদ্ধ, ডাক দিয়ে যায়
জীবন যুদ্ধ নতুন যুদ্ধ, যুদ্ধের শেষ নাই।।

বড়তে ছোটতে যুদ্ধ, নতুনে পুরাতনে যুদ্ধ
মানুষে অমানুষে যুদ্ধ, সময়ে অসময়ে যুদ্ধ
তুমি চাও বা না চাও যুদ্ধ থেমে নাই।।

হয় আমি মরব না হয় তুমি মরবে
কেউ তো বেঁচে রবে, তারা সবাই লড়বে
তোমার আমার মৃত্যু হলেও মানুষের মৃত্যু নাই
যুদ্ধের শেষ নাই।।

৭২. জয় বাংলা, বাংলার জয় (Joy Bangla Banglar joy) - Lyrics by Gazi Mazharul Anwar, melody by Anwar Parvez

জয় বাংলা বাংলার জয়।

হবে হবে হবে, হবে নিশ্চয়
কোটি প্রাণ এক সাথে জেগেছে অন্ধরাতে
নতুন সূর্য ওঠার এই তো সময়।

বাংলার প্রতি ঘর ভরে দিতে
চাই মোরা অন্নে
আমাদের রক্ত টগবগ দুলছে
মুক্তির দৃপ্ত তারুণ্যে।

নেই ― ভয়
হয় হোক রক্তের প্রচ্ছদপট ।
আমি করি না করি না করি না ভয়।

অশোকের ছায়ে যেন রাখালের বাঁশরী
হয়ে গেছে একেবারে স্তব্ধ
চারিদিকে শুনি আজ নিদারুণ হাহাকার
আর ঐ কান্নার শব্দ।

শাসনের নামে চলে শোষণের
সুকঠিন যন্ত্র
বজ্রের হুঙ্কারে শৃঙ্খল ভাঙতে
সংগ্রামী জনতা অতন্দ্র।

আর ― নয়।
তিলেতিলে মানুষের এই পরাজয়
আমি করি না করি না করি না ভয়।

জয় বাংলা বাংলার জয়।।

[গানটি গাজী মযহারুল আনোয়ারের রচনা এবং স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সূচনা পর্যায়ে সকল অধিবেশনের প্রারম্ভ ও সমাপ্তি সূচক ধ্বনি হিসেবে প্রচারিত হয়েছে।]

৭৩. কারার ওই লৌহকপাট (Karar oi louho kopat - Kazi Nazrul Islam)

কারার ওই লৌহ-কপাট
ভেঙে ফেল্, কর্ রে লোপাট
রক্ত-জমাট শিকল-পূজার পাষাণ-বেদী
ওরে ও তরুণ ঈশান, বাজা তোর প্রলয়-বিষাণ
ধ্বংস-নিশান উড়ুক প্রাচী’র প্রাচীর ভেদি

গাজনের বাজনা বাজা, কে মালিক কে সে রাজা
কে দেয় সাজা মুক্ত-স্বাধীন সত্যকে রে
হা হা হা পায় যে হাসি, ভগবান পরবে ফাঁসি
সর্বনাশী শিখায় এ হীন তথ্য কে রে
ওরে ও পাগলা ভোলা, দেরে দে প্রলয়-দোলা
গারদগুলা জোর্ সে ধরে হ্যাঁচকা টানে
মার হাঁক্ হায়দরী হাঁক্ ,
কাঁধে নে দুন্দুভী ঢাক্, ডাক্ ওরে ডাক্ মৃত্যুকে ডাক জীবন-পানে

৭৪. এই শিকল পরা ছল (Ei shikol pora chhawl - Kazi Nazrul Islam)

এই শিকল-পরা ছল মোদের এই শিকল-পরা ছল
এই শিকল পরেই শিকল তোদের করবো রে বিকল

তোদের বন্ধ কারায় আসা মোদের বন্দী হতে নয়
ওরে ক্ষয় করতে আসা মোদের সবার বাঁধন-ভয়
এই বাঁধন পরেই বাঁধন-ভয়কে করবো মোরা জয়
এই শিকল-বাঁধা পা নয় এ শিকল-ভাঙা কল

৭৫. এক সাগর রক্তের বিনিময়ে (Ek shagor rokter binimoye) - Lyrics by Gobinda Haldar, melody by Apel Mahmud

এক সাগর রক্তের বিনিময়ে
বাংলার স্বাধীনতা আনলে যারা
আমরা তোমাদের ভুলব না।
দুঃসহ এ বেদনার কণ্টক পথ বেয়ে
শোষণের নাগপাশ ছিঁড়লে যারা
আমরা তোমাদের ভুলব না।
যুগের নিষ্ঠুর বন্ধন হতে
মুক্তির এ বারতা আনলে যারা
আমরা তোমাদের ভুলব না।
কৃষাণ-কৃষাণীর গানে গানে
পদ্মা-মেঘনার কলতানে
বাউলের একতারাতে
আনন্দ ঝংকারে
তোমাদের নাম ঝংকৃত হবে।
নতুন স্বদেশ গড়ার পথে
তোমরা চিরদিন দিশারী রবে।
আমরা তোমাদের ভুলব না।।

[গানটি লিখেছেন গোবিন্দ হালদার এবং গেয়েছেন স্বপ্না রায়]


৭৬. জন্ম আমার ধন্য হল (Jonmo amar dhonno holo) - Lyrics by Nayeem Gahor, melody by Azad Rahman

৭৭. ও ভাই, খাঁটি সোনার চেয়ে খাঁটি (O bhaai khaanti shonar cheye khaanti amar desher maati) - Kazi Nazrul Islam

৭৮. মোরা ঝঞ্ঝার মত উদ্দাম (Mora jhonjhaar moto uddaam) - Kazi Nazrul Islam

৭৯. দুর্গম গিরি কান্তার মরু (Durgom giri kantar moru - Kazi Nazrul Islam)

দুর্গম গিরি কান্তার-মরু দুস্তর পারাবার হে
লঙ্ঘিতে হবে রাত্রি নিশীথে যাত্রীরা হুঁশিয়ার

দুলিতেছে তরী, ফুলিতেছে জল, ভুলিতেছে মাঝি পথ
ছিঁড়িয়াছে পাল, কে ধরিবে হাল, আছে কার হিম্মত

কে আছ জোয়ান হও আগুয়ান, হাঁকিছে ভবিষ্যত্
এ তুফান ভারী, দিতে হবে পাড়ি, নিতে হবে তরী পার

দুর্গমগিরি কান্তার মরু দুস্তর পারাবার হে
লঙ্ঘিতে হবে রাত্রি নিশীথে যাত্রীরা হুঁশিয়ার ।।

রবিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০০৯

একাত্তরের গণহত্যার দলিল




Bangladesh Genocide Archive
An online archive of chronology of events, documentations, audio, video, images, media reports and eyewitness accounts of the 1971 Genocide in Bangladesh in the hands of Pakistan army.
Genocide

“…… we were told to kill the hindus and Kafirs (non-believer in God). One day in June, we cordoned a village and were ordered to kill the Kafirs in that area. We found all the village women reciting from the Holy Quran, and the men holding special congregational prayers seeking God’s mercy. But they were unlucky. Our commanding officer ordered us not to waste any time.”

Confession of a Pakistani Soldier



It all started with Operation Searchlight, a planned military pacification carried out by the Pakistan Army started on 25 March, 1971 to curb the Bengali nationalist movement by taking control of the major cities on March 26, and then eliminating all opposition, political or military, within one month. Before the beginning of the operation, all foreign journalists were systematically deported from Bangladesh. The main phase of Operation Searchlight ended with the fall of the last major town in Bengali hands in mid May.

According to New York Times (3/28/71) 10,000 people were killed; New York Times (3/29/71) 5,000-7,000 people were killed in Dhaka; The Sydney Morning Herald (3/29/71) 10,000 – 100,000 were killed; New York Times (4/1/71) 35,000 were killed in Dhaka during operation searchlight.

The operation also began the 1971 Bangladesh atrocities. These systematic killings served only to enrage the Bengalis, which ultimately resulted in the secession of East Pakistan later in December, 1971. The international media and reference books in English have published casualty figures which vary greatly; 200,000–3,000,000 for Bangladesh as a whole.

There is only one word for this: Genocide.
Genocide in Bangladesh, 1971

pakistani-army-shooting.jpgThe mass killings in Bangladesh (then East Pakistan) in 1971 vie with the annihilation of the Soviet POWs, the holocaust against the Jews, and the genocide in Rwanda as the most concentrated act of genocide in the twentieth century. In an attempt to crush forces seeking independence for East Pakistan, the West Pakistani military regime unleashed a systematic campaign of mass murder which aimed at killing millions of Bengalis, and likely succeeded in doing so.

In national elections held in December 1970, the Awami League won an overwhelming victory across Bengali territory. On February 22, 1971 the generals in West Pakistan took a decision to crush the Awami League and its supporters. It was recognized from the first that a campaign of genocide would be necessary to eradicate the threat: “Kill three million of them,” said President Yahya Khan at the February conference, “and the rest will eat out of our hands.” (Robert Payne, Massacre [1972], p. 50.) On March 25 the genocide was launched. The university in Dacca (Dhaka) was attacked and students exterminated in their hundreds. Death squads roamed the streets of Dacca, killing some 7,000 people in a single night. It was only the beginning. “Within a week, half the population of Dacca had fled, and at least 30,000 people had been killed. Chittagong, too, had lost half its population. All over East Pakistan people were taking flight, and it was estimated that in April some thirty million people [!] were wandering helplessly across East Pakistan to escape the grasp of the military.” (Payne, Massacre, p. 48.) Ten million refugees fled to India, overwhelming that country’s resources and spurring the eventual Indian military intervention. (The population of Bangladesh/East Pakistan at the outbreak of the genocide was about 75 million.)

The Guinness Book of Records lists the Bangladesh Genocide as one of the top 5 genocides in the 20th century.
The gendercide against Bengali men

The war against the Bengali population proceeded in classic gendercidal fashion. According to Anthony Mascarenhas:

There is no doubt whatsoever about the targets of the genocide. They were: (1) The Bengali militarymen of the East Bengal Regiment, the East Pakistan Rifles, police and para-military Ansars and Mujahids. (2) The Hindus — “We are only killing the men; the women and children go free. We are soldiers not cowards to kill them …” I was to hear in Comilla [site of a major military base] [Comments R.J. Rummel: "One would think that murdering an unarmed man was a heroic act" (Death By Government, p. 323)] (3) The Awami Leaguers — all office bearers and volunteers down to the lowest link in the chain of command. (4) The students — college and university boys and some of the more militant girls. (5) Bengali intellectuals such as professors and teachers whenever damned by the army as “militant.” (Anthony Mascarenhas, The Rape of Bangla Desh [Delhi: Vikas Publications, 1972(?)], pp. 116-17.)

Mascarenhas’s summary makes clear the linkages between gender and social class (the “intellectuals,” “professors,” “teachers,” “office bearers,” and — obviously — “militarymen” can all be expected to be overwhelmingly if not exclusively male, although in many cases their families died or fell victim to other atrocities alongside them). In this respect, the Bangladesh events can be classed as a combined gendercide and elitocide, with both strategies overwhelmingly targeting males for the most annihilatory excesses.

London, 6/13/71). The Sunday Times…..”The Government’s policy for East Bengal was spelled out to me in the Eastern Command headquarters at Dacca. It has three elements:

1. The Bengalis have proved themselves unreliable and must be ruled by West Pakistanis;
2. The Bengalis will have to be re-educated along proper Islamic lines. The – Islamization of the masses – this is the official jargon – is intended to eliminate secessionist tendencies and provide a strong religious bond with West Pakistan;
3. When the Hindus have been eliminated by death and fight, their property will be used as a golden carrot to win over the under privileged Muslim middle-class. This will provide the base for erecting administrative and political structures in the future.”

Bengali man and boys massacred by the West Pakistani regime.

Bengali man and boys massacred by the West Pakistani regime. Younger men and adolescent boys, of whatever social class, were equally targets. According to Rounaq Jahan, “All through the liberation war, able-bodied young men were suspected of being actual or potential freedom fighters. Thousands were arrested, tortured, and killed. Eventually cities and towns became bereft of young males who either took refuge in India or joined the liberation war.” Especially “during the first phase” of the genocide, he writes, “young able-bodied males were the victims of indiscriminate killings.” (”Genocide in Bangladesh,” in Totten et al., Century of Genocide, p. 298.) R.J. Rummel likewise writes that “the Pakistan army [sought] out those especially likely to join the resistance — young boys. Sweeps were conducted of young men who were never seen again. Bodies of youths would be found in fields, floating down rivers, or near army camps. As can be imagined, this terrorized all young men and their families within reach of the army. Most between the ages of fifteen and twenty-five began to flee from one village to another and toward India. Many of those reluctant to leave their homes were forced to flee by mothers and sisters concerned for their safety.” (Death By Government, p. 329.) Rummel describes (p. 323) a chilling gendercidal ritual, reminiscent of Nazi procedure towards Jewish males: “In what became province-wide acts of genocide, Hindus were sought out and killed on the spot. As a matter of course, soldiers would check males for the obligated circumcision among Moslems. If circumcised, they might live; if not, sure death.”

Robert Payne describes scenes of systematic mass slaughter around Dacca (Dhaka) that, while not explicitly “gendered” in his account, bear every hallmark of classic gender-selective roundups and gendercidal slaughters of non-combatant men:


Bengali intellectuals murdered and dumped at dockside in Dacca.In the dead region surrounding Dacca, the military authorities conducted experiments in mass extermination in places unlikely to be seen by journalists. At Hariharpara, a once thriving village on the banks of the Buriganga River near Dacca, they found the three elements necessary for killing people in large numbers: a prison in which to hold the victims, a place for executing the prisoners, and a method for disposing of the bodies. The prison was a large riverside warehouse, or godown, belonging to the Pakistan National Oil Company, the place of execution was the river edge, or the shallows near the shore, and the bodies were disposed of by the simple means of permitting them to float downstream. The killing took place night after night. Usually the prisoners were roped together and made to wade out into the river. They were in batches of six or eight, and in the light of a powerful electric arc lamp, they were easy targets, black against the silvery water. The executioners stood on the pier, shooting down at the compact bunches of prisoners wading in the water. There were screams in the hot night air, and then silence. The prisoners fell on their sides and their bodies lapped against the shore. Then a new bunch of prisoners was brought out, and the process was repeated. In the morning the village boatmen hauled the bodies into midstream and the ropes binding the bodies were cut so that each body drifted separately downstream. (Payne, Massacre [Macmillan, 1973], p. 55.)

Strikingly similar and equally hellish scenes are described in the case-studies of genocide in Armenia and the Nanjing Massacre of 1937.
How many died?

Bangladeshi authorities claim that 3 million people were killed, while the Hamoodur Rahman Commission, an official Pakistan Government investigation, put the figure as low as 26,000 civilian casualties. The fact is that the number of dead in Bangladesh in 1971 was almost certainly well into seven figures. It was one of the worst genocides of the World War II era, outstripping Rwanda (800,000 killed) and probably surpassing even Indonesia (1 million to 1.5 million killed in 1965-66).

As R.J. Rummel writes:

The human death toll over only 267 days was incredible. Just to give for five out of the eighteen districts some incomplete statistics published in Bangladesh newspapers or by an Inquiry Committee, the Pakistani army killed 100,000 Bengalis in Dacca, 150,000 in Khulna, 75,000 in Jessore, 95,000 in Comilla, and 100,000 in Chittagong. For eighteen districts the total is 1,247,000 killed. This was an incomplete toll, and to this day no one really knows the final toll. Some estimates of the democide [Rummel's "death by government"] are much lower — one is of 300,000 dead — but most range from 1 million to 3 million. … The Pakistani army and allied paramilitary groups killed about one out of every sixty-one people in Pakistan overall; one out of every twenty-five Bengalis, Hindus, and others in East Pakistan. If the rate of killing for all of Pakistan is annualized over the years the Yahya martial law regime was in power (March 1969 to December 1971), then this one regime was more lethal than that of the Soviet Union, China under the communists, or Japan under the military (even through World War II). (Rummel, Death By Government, p. 331.)

People regard that the best option is to regard “3 million” as not an absolute but an arbitrary number. The proportion of men versus women murdered is impossible to ascertain, but a speculation might be attempted. If we take the highest estimates for both women raped and Bengalis killed (400,000 and 3 million, respectively); if we accept that half as many women were killed as were raped; and if we double that number for murdered children of both sexes (total: 600,000), we are still left with a death-toll that is 80 percent adult male (2.4 million out of 3 million). Any such disproportion, which is almost certainly on the low side, would qualify Bangladesh as one of the worst gendercides against men in the last half-millennium.
Who was responsible?

“For month after month in all the regions of East Pakistan the massacres went on,” writes Robert Payne. “They were not the small casual killings of young officers who wanted to demonstrate their efficiency, but organized massacres conducted by sophisticated staff officers, who knew exactly what they were doing. Muslim soldiers, sent out to kill Muslim peasants, went about their work mechanically and efficiently, until killing defenseless people became a habit like smoking cigarettes or drinking wine. … Not since Hitler invaded Russia had there been so vast a massacre.” (Payne, Massacre, p. 29.)

There is no doubt that the mass killing in Bangladesh was among the most carefully and centrally planned of modern genocides. A cabal of five Pakistani generals orchestrated the events: President Yahya Khan, General Tikka Khan, chief of staff General Pirzada, security chief General Umar Khan, and intelligence chief General Akbar Khan. The U.S. government, long supportive of military rule in Pakistan, supplied some $3.8 million in military equipment to the dictatorship after the onset of the genocide, “and after a government spokesman told Congress that all shipments to Yahya Khan’s regime had ceased.” (Payne, Massacre, p. 102.)

hindu-racism.jpgThe genocide and gendercidal atrocities were also perpetrated by lower-ranking officers and ordinary soldiers. These “willing executioners” were fuelled by an abiding anti-Bengali racism, especially against the Hindu minority. “Bengalis were often compared with monkeys and chickens. Said Pakistan General Niazi, ‘It was a low lying land of low lying people.’ The Hindus among the Bengalis were as Jews to the Nazis: scum and vermin that [should] best be exterminated. As to the Moslem Bengalis, they were to live only on the sufferance of the soldiers: any infraction, any suspicion cast on them, any need for reprisal, could mean their death. And the soldiers were free to kill at will. The journalist Dan Coggin quoted one Punjabi captain as telling him, ‘We can kill anyone for anything. We are accountable to no one.’ This is the arrogance of Power.” (Rummel, Death By Government, p. 335.)

* Pakistani Army Desecrated Churches in 1971

Eyewitness accounts

The atrocities of the razakars in killing the Bengalis equaled those of their Pakistani masters. An excerpt from an article written in the Azad, dated January 15, 1972, underscores the inhuman atrocities of the Pakistani troops and their associates, the razakar and al-Badr forces:

‘….The people of Narail can bear witness to the reign of terror, the inhuman atrocities, inflicted on them after (General) Yahya let loose his troops to do what they would. After March 25, many people fled Jessore in fear of their lives, and took refuge in Narail and its neighboring localities. Many of them were severely bashed by the soldiers of Yahya and lost their lives. Very few people ever returned. Bhayna is a flourishing village near Narail. Ali Akbar is a well-known figure there. On April 8, the Pakistani troops surrounded the village on the pretext that it was a sanctuary for freedom fighters. Just as fish are caught in a net so too were the people of this village all assembled, in an open field. Then everyone- men, women, and children–were all forced to line up. Young men between the ages of 25 and 30 were lined up separately. 45 people were shot to death on the spot. Three of Ali Akbar’s brothers were killed there. Ali Akbar was able to save himself by lying on the ground. But no one else of that group was as fortunate. Nadanor was the Killing field. Every day 20 to 30 people were taken there with their hands tied behind their backs, and killed. The dead bodies would be flung into the river. Apart from this, a slaughter house was also readied for Bengalis. Manik, Omar, and Ashraf were sent to Jessore Cantonment for training and then brought to this slaughter house. Every day they would slaughter 9 to 12 persons here. The rate per person was Taka ten. On one particular day, 45 persons were slaughtered here. From April 15 to December 10, the butchery continued. It is gathered that 2,723 people lost their lives here. People were brought here and bashed, then their ears were cut off, and their eyes gouged out. Finally they were slaughtered… : The Chairman of the Peace Committee was Moulana Solaiman. With Dr. Abul Hussain and Abdul Rashid Mukhtar, he assisted in the genocide. Omar would proudly say, “During the day I am Omar, at night I am Shimar( legendary executioner famous for extreme cruelty). Don’t you see my dagger? There are countless Kafirs (heretics) on it.”
Chuknagar: The largest genocide during the Bangladesh Liberation War in 1971




লিংক-
http://www.genocidebangladesh.org/

দুখী গণ্ডারনামা ০৪-ক

হাঁটুপানির জলদস্যু


দাঁতাল বাঁশখোর একদিন দুপুরে পাটশাক দিয়ে ভাত খেয়ে তার প্রকাণ্ড ময়লা দু'টি দাঁত খোঁচাচ্ছিলো একটি ইমপোর্ট করা খিলাল দিয়ে, এমন সময় ফোনটা ঝনঝন করে বেজে উঠলো।

দাঁতাল ফোনের বোতামে টিবি দিয়ে বললো, "হেলু হেলু! দাঁতাল কইতেছি!"

ওপাশে বন ও পশুসম্পদ মন্ত্রী উদ্বিগ্ন গলায় বললেন, "কে, বাঁশখোর ভাইয়া?"

দাঁতাল দাঁত বের করে বললো, "হ। আপনে ক্যাঠা?"

মন্ত্রী সালাম দিলেন, তারপর নিজের পরিচয় দিলেন। তারপর বললেন, "আপনি খবরের কাগজ পড়েন ভাইয়া?"

দাঁতাল উদাস গলায় বললো, "নাহ। আমি খবরটবর ভালু পাই না। খবরের ধারণাটাই ভুল। কতগুলি লোক মিল্লা একটা ঘটনারে নিজেগো মনমতো, নিজেগো মননমতো মাইনষের চোক্ষের সামনে তুইলা ধরন ঘটাইতে চায়, সেইটারে মাইনষের মনে বীজ হিসাবে বপন করন হওয়াইতে চায়, মাইনষের মনে যে বিচ্ছিন্ন ভাবনা, যে পরস্পর সংলগ্নতাহীন ধারণাগুলি আছে, সেগুলিরে মোচন করাইয়া নিজেগো ফ্যাসিবাদী সাম্রাজ্যবাদী চিন্তাগুলিরে রোপন করন ঘটন হওয়াইতে চাওন করে। ফরহাদ মগবাজার ভাই কইছেন, খবর বইলা আসলে কিছু নাই। আছে কেবল খাবরিকতা।"

মন্ত্রী ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বলেন, "কিন্তু ভাইয়া, আপনি কি জানেন, আমাদের চিড়িয়াখানার একমাত্র গণ্ডারটা যে ইন্তেকাল করেছে?"

বাঁশখোর মনে মনে একটু খুশিই হয়। যাক, কম্পিটিশন কমলো। সে বলে, "গণ্ডারের মৃত্যুর খবর লৈয়া বৈসা থাকলে তো আমার চলবে না। আমার আরো জরুরি কাজ কাম আছে। আপনি কী কৈতে চান এই বেলা কৈয়া জল্দি জল্দি ফুনখানা রাখন করন ঘটান না কেন?"

মন্ত্রী বলেন, "দ্যাখেন, গণ্ডার আমাদের চিড়িয়াখানার গর্ব।"

বাঁশখোর শুনে যায়।

মন্ত্রী বলেন, "একমাত্র গণ্ডারটা মারা যাবার পর চিড়িয়াখানা এখন এতিম। দর্শক কমে গেছে।"

বাঁশখোর বলে, "আরেকটা আনায়া লন। তাহইলেই তো হয়া যায়। নেপালে এখন মাওবাদী সরকার। উনাদের কাছে গিয়া শুধু আমার নামটা কৈবেন। বলবেন জাহাঙ্গীরজঙ্গল বিশ্ববিদ্যালয়ের দাঁতাল বাঁশখোর আপনাকে পাঠাইছে। গণ্ডার পাইয়া যাবেন এক প্লাটুন।"

মন্ত্রী বলেন, "না ভাইয়া। ভুল করছেন। গণ্ডারের জন্য কেনিয়া সরকারের সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে। উনাদের গণ্ডারগুলি বিশ্বসেরা গণ্ডার।"

বাঁশখোর একটু ক্ষেপে ওঠে। "হৈছে হৈছে, গণ্ডারের খোসামুদি আর কত করবেন? কী কৈতে চান তাহইলে? গণ্ডার তো পাইয়াই গেছেন!"

মন্ত্রী বিনীত সুরে বলেন, "ভাইয়া, মাত্র তো অর্ডার দেয়া হয়েছে। উনারা গণ্ডার ধরবেন, প্যাক করবেন, জাহাজে করে পাঠাবেন, সব মিলিয়ে মাস তিনেক লাগবে আসতে আসতে। আপনি এই সময়টা আমাদের একটু উপকার করেন।"

বাঁশখোর বলে, "কীরম উপকার?"

মন্ত্রী বলেন, "এই একটু গণ্ডারের খাঁচায় মাঝে মাঝে গিয়ে একটু বসবেন।"

বাঁশখোর রাজি হয়ে যায়।

এরপর চিড়িয়াখানায় অবসরে গিয়ে গণ্ডারের খাঁচায় বসতে শুরু করে বাঁশখোর। সন্ধ্যার দিকে খাঁচা ছেড়ে বেরিয়ে আজিজের আড্ডায় যায়। আবার দুপুরের দিকে খাঁচায় একটু বসে। জ্যাক লাকা, ফুকো, দেরিদার কিছু বই সাথে নিয়ে যায়। পাতা উল্টায়। বিড়ি খায়। এদিকে লোকজনের ভিড় ভেঙে পড়ে গণ্ডারের খাঁচার সামনে। কেউ কেউ ফুলকপি কিনে ছুঁড়ে দেয় খাঁচার ভেতরে। চিড়িয়াখানার স্টাফরা রা রা করে তেড়ে আসে, কারণ পশুকে খাবার খাওয়ানো নিষেধ। বাঁশখোর গলা খাঁকারি দিয়ে বলে, এক্টু ডাইলপুরি দেন না কেউ? কাচা ফুলকপি ক্যাম্নে খামু?

চিড়িয়াখানা মোটামুটি সরগরম হবার পর একদিন গণ্ডারের রক্ষণাবেক্ষণকারী খাবার নিয়ে আসে ঝুড়িতে করে। বাঁশখোর সরেস দেখে একটা বাঁশ নিয়ে চিবিয়ে খায়, আর বলে, "গণ্ডারটার হৈসিলো কী? মরলো ক্যান?"

রক্ষণাবেক্ষণকারী অশ্রুসজল চোখে বলে, "স্যার, দর্শকগুলির দোষ স্যার! সারাটাক্ষণ ত্যক্ত করতো বেচারা জীবটারে।"

বাঁশখোর বলে, "ক্যাম্নে ত্যক্ত করতো?"

রক্ষণাবেক্ষণকারী বলে, "স্যার, আজেবাজে কথা বলতো খালি?"

বাঁশখোর বলে, "কী কথা?"

রক্ষণাবেক্ষণকারী মাথা নিচু করে বলে, "বলতো ... বলতো ... বলতো ঐ ব্যাটা গণ্ডার, তোর গায়ে নাকি দাঁতাল বাঁশখোরের চামড়া?"

বাঁশখোর বলে, "তারপর?"

রক্ষণাবেক্ষণকারী বলে, "তারপর আর কী? গণ্ডারটা লজ্জায় মইরা গেলো!"

দুখী গণ্ডারনামা ০১

হাঁটুপানির জলদস্যু

১.
নোয়া খবর পেলেন, মহাপ্লাবন আসছে সামনে। প্রবল বন্যায় ভেসে ডুবে ছারখার হবে সব কিছু। এক পেল্লায় নৌকা বানাতে হবে তাকে। সেই নৌকায় সকল জীবজন্তু পশুপাখি জোড়ায় জোড়ায় নিয়ে তাকে ভেসে থাকতে হবে অনির্দিষ্টকাল। বাকি পাপীর দল ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে যাবে।

নোয়া নৌকা বানানোর কাজে হাত দিলেন। সবাই খুব খ্যাপাতে লাগলো তাকে। কিন্তু নোয়া পাত্তা দিলেন না আবালগুলিকে।

নৌকা বানানোর কাজ শেষ হবার পর নোয়া সব পশুপাখি জোড়ায় জোড়ায় ভর্তি করার কাজ শুরু করলেন। একজোড়া গরু, একজোড়া ছাগল, একজোড়া ভেড়া ...।

দিন যায়। নানা পশুপাখি লক্ষ্মী ছেলেমেয়ের মতো গুটগুট করে হেঁটে এসে নোয়ার নায়ে ওঠে। নোয়া আকাশের দিকে তাকান। মেঘলা আকাশ। গুড়গুড় শব্দ হচ্ছে। সামনে তুমুল বৃষ্টি আর বান আছে। বুড়িগঙ্গা ফুঁসে উঠে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে সমস্ত পৃথিবী।

নোয়া নৌকার নোঙর তুলে নেয়ার হুকুম দিলেন বড় ছেলেকে। সিঁড়ি বেয়ে নৌকায় ওঠার সময় দেখলেন, অদ্ভুত এক লোক দাঁড়িয়ে সিঁড়ির গোড়ায়।

"কে তুমি?" নোয়া শুধান।

অদ্ভুত দেখতে লোকটা দুইটা প্রকাণ্ড ময়লা হলুদ দাঁত বার করে হাসে। বলে, "আমি দাঁতাল বাঁশখোর। কবি ও চলচ্চিত্রনির্মাতা। ধর্মে উত্তরাধুনিক।"

নোয়া কিছু বলার আগেই ভীষণ বান ধেয়ে আসে। তিনি আর দাঁতাল দুজনেই পড়িমড়ি করে নৌকায় ওঠেন।


২.
দিন যায়।

চারদিকে পানি থই থই করছে। ডাঙার চিহ্নমাত্র নেই। নৌকার ভেতরে নিরিবিলিতে পাশাপাশি বসে বাঘ আর মোষ, সিংহ আর হরিণ, বেড়াল আর ইঁদুর।

নোয়ার ছেলে এসে বললো, "আব্বু আব্বু, ঐ নতুন লোকটা না প্রত্যেক রাতেই কী যেন করে! জীবজন্তুগুলি শুধু ছটফট করতে থাকে!"

নোয়ার মুখটা গম্ভীর হয়ে যায়।

তিনি গিয়ে দাঁতাল বাঁশখোরকে বলেন, "তারপর? কেমন কাটছে সবকিছু?"

দাঁতাল তার হলুদ দুই দাঁত বার করে হাসে। বলে, "প্রশ্নটা আমারে ভাবন করাইলো! আসলেই কেমন কাটে কোনো কিছু? আদৌ কি কাটে? কেমনই বা কাটা উচিত?"

নোয়া থতমত খেয়ে চলে আসেন।

একদিন রাত্তিরে হঠাৎ ঝুপ্পুস করে আওয়াজ হয়। নোয়া বিছানা ছেড়ে উঠে বেরিয়ে নৌকার খোলে ঢোকেন। ঢুকে দেখেন, দাঁতাল বাঁশখোরের পাশের জায়গাটা খালি। ওখানে কুমড়োপটাশ আর কুমড়োপটাশিনী বসে ছিলো ঘন্টাদুয়েক আগেও।

তিনি কঠিন স্বরে প্রশ্ন করেন, "দাঁতাল, কুমড়োপটাশ কোথায়?"

দাঁতাল একটা কাঠি দিয়ে তার ময়লা দাঁত খোঁচাতে খোঁচাতে বলে, "কী জানি!"

নোয়া বলেন, "জানো না মানে? তোমার পাশেই তো তারা ছিলো?"

দাঁতাল উদাস গলায় বলে, "ছিলো, কিন্তু এখন নাই! এমন তো হরহামেশাই হচ্ছে। ছিলো একটা রুমাল, হয়ে গেলো বেড়াল!"

এমন সময় একটা কাঠবেড়ালি উঠে এসে বললো, "মহামতি নোয়া! অনুমতি দিলে কিছু কথা বলতে চাই!"

নোয়া বললেন, "অনুমতি দিলাম!"

কাঠবেড়ালি গলা খাঁকরে বললো, "মহামতি নোয়া, এই দাঁতাল বাঁশখোর প্রতি রাতে, রাতের আঁধারে গা ঢাকা দিয়ে নিদ্রিত আমাদের উপর হামলা চালায়। সে আমাদের সবার পোঁদে আঙুল দেয়। এই কাজ করে সে কী মজা পায়, তা আমরা জানি না, কিন্তু চেয়ে দেখুন, সবাই কীভাবে তার পেছন ঢেকে ঘুমিয়েছে!"

নোয়া চেয়ে দেখেন, কথা সত্য। গরু ছাগল বাঘ ভালুক সবাই নিজের পেছন আবৃত করে রেখেছে যে যেভাবে পারে।

কাঠবেড়ালি বলে, ছোট্ট ইন্দুর থেকে শুরু করে মস্ত হাতি, কেউ রেহাই পায়নি এই উংলিবাজি থেকে! কিন্তু অভিমানী কুমড়োপটাশ আর সহ্য করতে পারেনি, সস্ত্রীক আত্মহত্যা করেছে!"

নোয়া চেয়ে দেখেন, দাঁতাল তার মধ্যমা শুঁকছে আনমনে।

তিনি বজ্রকণ্ঠে বললেন, "দাঁতাল বাঁশখোর, এই অভিযোগ কি সত্য?"

দাঁতাল হাই তুলে বললো, "কীসের অভিযোগ? কে করে কার বিরুদ্ধে অভিযোগ? সবার আগে যে প্রশ্নটা জিজ্ঞাসা করতে হয় তা হচ্ছে, অভিযোগ কারে বলে?"

নোয়া আর সহ্য করতে পারেন না, বলেন, "ওহে রাসকেল! এই নৌকার একটা নিয়মকানুন আছে! সেটা মেনে চলতে হবে!"

দাঁতাল হাসে দাঁত বার করে। বলে, "নিয়ম? কীসের নিয়ম? কে নিয়ম তৈয়ার করন ঘটন হওয়াইলো? এই নিয়মানুবর্তিতার জোয়াল কে কার কান্ধে চাপা করাইতে চায়? সমাজে নিয়মের মস্তানি চালু করতে চাওন ঘটায় কারা?"

নোয়া বড় ছেলেকে ডাকেন, "বাপধন! ডিঙ্গাটা নামা!"


৩.
দাঁতাল বাঁশখোরকে একরকম ঘাড়ে ধরে ডিঙ্গায় নামিয়ে ছেড়ে দেয়া হয় অথৈ সাগরে। সাথে দেয়া হয় একটা দাঁতখিলাল।

দাঁতাল চেঁচাতে থাকে, "এই ফ্যাসিবাদি আচরণের জন্য নোয়াকে জবাবদিহি করতে হবে! স্বৈরাচারী মনোভাব নিয়ে নৌকা চালানো যায় না! আমাকে অন্যায়ভাবে নৌকা থিকা বাইর কইরা দেওয়া হৈসে! এই ফ্যাসিবাদী নোয়া নিয়মকানুন বানানোর ক্যাঠা?"

নোয়া বলেন, "খুদাপেজ!"

পশুপাখি সকলে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। ছাগল সন্তর্পণে একটা ছিপি বার করে আনে পেছন থেকে।


৪.
দিন যায়, মাছ যায়, বছর যায়। দাঁতাল বাঁশখোরের ডিঙা জলে ভাসে। দাঁতাল জলের মাছ আর আকাশের পাখি ধরে ধরে খায় আর বিড়বিড় করে নোয়াকে বকে।

এইভাবে কেটে যায় হাজার বছর। একদিন দাঁতালের ডিঙা ভেড়ে এক দ্বীপে। দাঁতাল ডিঙা টেনে তোলে সৈকতে। তারপর একটা নারকেল গাছে চড়ে। কয়েকটা ডাব পেড়ে খায়। তারপর লতাপাতা দিয়ে একটা কুটির বাঁধে। এক নিরীহ বুনো ছাগলিকে ধরে আনে এক রাতে।

এভাবেই চলে তার সংসার।

একদিন দাঁতাল কচুর মুখী দিয়ে মাছ রান্না করছে, সেই ধোঁয়া দেখে দূর থেকে এক সওদাগরী জাহাজের কাপ্তান দূরবীণ লাগিয়ে দেখেন, নারকেল গাছের নিচে এক দেড়েল প্রায় উলঙ্গ লোক আগুনের সামনে বসে। তিনি জলিবোট নামিয়ে লোকটাকে উদ্ধার করতে লোক পাঠান।

নাবিকেরা দাঁতালকে নৌকোয় করে নিয়ে আসে জাহাজে।

কাপ্তান বলেন, "হে দ্বীপবন্দী! তোমাকে আমি উদ্ধার করলাম। এখন তুমি আবার ফিরে যাবে মানবসভ্যতায়। তোমার নারকেলপাড়া জীবন, তোমার ছাগলচোদা জীবন, তোমার কচুর মুখী দিয়ে গেঁড়িগুগলি রান্নার জীবনের আজ ইতি ঘটলো!"

দাঁতাল বললো, "হুমম?"

কাপ্তান বললেন, "তা তুমি কোন দেশের লোক? কেনই বা এই দ্বীপে আটকা পড়ে আছো?"

দাঁতাল বললো, "শোনেন তাইলে! ফ্যাসিবাদি নোয়া আমারে তার জাহাজ থিকা অন্যায়ভাবে বাইর কৈরা দিসে!"

দাঁতাল বলে যায়। মিনিট পেরোয়। ঘন্টা পেরোয়। তিন ঘন্টা পর কাপ্তান কপালের ঘাম মুছে এক নাবিককে বলেন, "ঐ মোখলেছ! ডিঙ্গা নামা!"


৫.
দাঁতাল বাঁশখোরকে একরকম ঘাড়ে ধরে ডিঙ্গায় নামিয়ে ছেড়ে দেয়া হয় অথৈ সাগরে। সাথে দেয়া হয় একটা দাঁতখিলাল।

দাঁতাল চেঁচাতে থাকে, "এই আচরণ নোয়ার মতোই ফ্যাসিবাদি! স্বৈরাচারী মনোভাব নিয়ে নৌকা চালানো যায় না! আমাকে অন্যায়ভাবে যেমন নোয়ার নৌকা থিকা বাইর কইরা দেওয়া হৈসে, তেমনই তোমাগো নৌকা থিকাও বাইর কইরা দেওয়া হৈসে! তোমরা ফ্যাসিবাদীরা নিয়মকানুন বানানোর ক্যাঠা?"

কাপ্তান বলেন, "খুদাপেজ!"

নাবিকরা সকলে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। কাপ্তান সন্তর্পণে একটা ছিপি বার করে আনেন কান থেকে।


৬.
দিন যায়, মাছ যায়, বছর যায়। দাঁতাল বাঁশখোরের ডিঙা জলে ভাসে। দাঁতাল জলের মাছ আর আকাশের পাখি ধরে ধরে খায় আর বিড়বিড় করে নোয়াকে বকে।

এইভাবে কেটে যায় হাজার বছর। একদিন দাঁতালের ডিঙা ভেড়ে আরেক দ্বীপে। দাঁতাল ডিঙা টেনে তোলে সৈকতে। তারপর একটা নারকেল গাছে চড়ে। কয়েকটা ডাব পেড়ে খায়। তারপর লতাপাতা দিয়ে একটা কুটির বাঁধে। এক নিরীহ বুনো ছাগলিকে ধরে আনে এক রাতে।

এভাবেই চলে তার সংসার।

একদিন দাঁতাল কচুর মুখী দিয়ে মাছ রান্না করছে, সেই ধোঁয়া দেখে দূর থেকে আরেক সওদাগরী জাহাজের কাপ্তান দূরবীণ লাগিয়ে দেখেন, নারকেল গাছের নিচে এক দেড়েল প্রায় উলঙ্গ লোক আগুনের সামনে বসে। তিনি জলিবোট নামিয়ে লোকটাকে উদ্ধার করতে লোক পাঠান।

নাবিকেরা দাঁতালকে নৌকোয় করে নিয়ে আসে জাহাজে।

কাপ্তান বলেন, "হে দ্বীপবন্দী! তোমাকে আমি উদ্ধার করলাম। এখন তুমি আবার ফিরে যাবে মানবসভ্যতায়। তোমার নারকেলপাড়া জীবন, তোমার ছাগলচোদা জীবন, তোমার কচুর মুখী দিয়ে গেঁড়িগুগলি রান্নার জীবনের আজ ইতি ঘটলো!"

দাঁতাল বললো, "হুমম?"

কাপ্তান বললেন, "তা তুমি কোন দেশের লোক? কেনই বা এই দ্বীপে আটকা পড়ে আছো?"

দাঁতাল বললো, "শোনেন তাইলে শুরু থিকা! ফ্যাসিবাদি নোয়া আমারে তার জাহাজ থিকা অন্যায়ভাবে বাইর কৈরা দিসে!"

দাঁতাল বলে যায়। মিনিট পেরোয়। ঘন্টা পেরোয়। তিন ঘন্টা পর কাপ্তান কপালের ঘাম মুছে এক নাবিককে বলেন, "ঐ মোখলেছ! ডিঙ্গা নামা!"

...

এই গল্প তার পর থেকে এভাবেই চলছে।

দুখী গণ্ডারনামা ০৩

হাঁটুপানির জলদস্যু
.............
ক্যাম্নেকী বুঝতে হলে পড়ুন দুখী গণ্ডারনামা ০১


পারমাণবিক বিস্ফোরণ ঘটলো। বিশাল মাশরুম চারদিক অন্ধকার করে বেড়ে উঠলো। চতুর্দিকে ছুটলো তাপের হল্কা, বিটা রশ্মি, গামা রশ্মি, ডেল্টা রশ্মি।

পৃথিবীর মানুষ ধ্বংসের আগে কয়েক সেকেণ্ড পার করলো মহত্ত্বের সাথে। প্রেমিক প্রেমিকাকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেলো, তারপর পুড়ে ছাই হয়ে ছড়িয়ে পড়লো চারদিকে। বাঘ চুমু খেলো হরিণকে, বেড়াল ইঁদুরকে, গরু গোয়ালাকে।

ভয় পেলো না কেবল দাঁতাল বাঁশখোর। কারণ সে জানে, তার গায়ের ছাল্চামড়াকে হার মানানোর শক্তি কোনো বিটা-গামা-ডেল্টা রশ্মির নাই। এ চামড়া তো হার মানায় ব্রন্টোসরাসকেও।

কিন্তু যদি গায়ের রং কালা হয়া যায়? দাঁতাল ঘুরে ফিরে আয়নায় নিজের দুধে আলতা গায়ের রং দেখে। নাহ, রিস্ক নেয়া যায় না। ত্বকের রং বাঁচানোর জন্য সে চট করে একটা ফ্রিজে ঢুকে পড়ে ইন্ডিয়ানা জোন্সের মতো। তার কিছুক্ষণের মধ্যেই তাপের হল্কা আর বিটা-গামা-ডেল্টা রশ্মির ঢেউ গ্রাস করে নেয় চারপাশ।

পৃথিবীর মৃত্যু ঘটে।

কিন্তু ওদিকে বাঁধে এক গেরো। ফ্রিজের দরজা আটকে যায়। ভেতরে আটকা পড়ে দাঁতাল বাঁশখোর। ঝুকঝুক করে চলতে থাকে ফ্রিজ, ভেতরে আটকা পড়ে জমে বরফ হয়ে যায় দাঁতাল বাঁশখোর।

এরপর কেটে যায় হাজার ব্ছর।

একদিন ল্যামডা সেন্টরাই নক্ষত্রমালার এক গ্রহ থেকে এসে হাজির হয় একদল পরোপকারী এলিয়েন। পৃথিবীর দশা দেখে দু:খে তাদের কানে জল চলে আসে। মূর্খ মানুষ হানাহানিতে মত্ত হয়ে কী দশাটাই করেছে গ্রহটার! তারা চটজলদি খবর দেয় তাদের ইনজিনিয়ারদের।

এলিয়েন মিস্ত্রিরা এসেই ঝাড়পোঁছ শুরু করে। নানা টেকনোলজি খাটিয়ে তারা যাবতীয় তেজস্ক্রিয়তা ঝেঁটিয়ে বিদায় করে। তারপর তাদের বীজ যাদুঘর থেকে খুঁজে খুঁজে সব গাছের বীজ ছড়ানো শুরু করে। একে একে ঘাস জন্মায়, বাঁশ জন্মায়, জন্মায় মহীরূহ। ফুল ফোটে, ফল ধরে, ওড়ে প্রজাপতি, বাদুড়, ডাকে পাখি, ব্যাং। মেঘ ডাকে, বৃষ্টি হয়, বাতাসে দোলে কৃষ্ণচূড়া ফুল।

এলিয়েনরা এক সংসদীয় উপদল পাঠায় পরিদর্শনে। তাদের নেতা এসে সব ঘুরে দেখে বলেন, বাহ বেশ! দারুণ! অহো!

হঠাৎ তাঁরা শোনেন, পাখির ডাক, ব্যাঙের ডাক, মেঘের ডাকের পাশাপাশি এক ক্ষীণ বদখদ ঝুকঝুক শব্দ।

তাঁরা এগিয়ে দেখেন, মাঠের মাঝে এক পোড়ো বাড়ি, তাতে এক ফ্রিজ। চলছে ঝুকঝুক করে।

তাঁরা এগিয়ে গিয়ে ফ্রিজের দরজা খুলে দেখেন, সেটার ভেতরে একটা ফ্রোজেন মুরগি, এক লিটার আইসক্রিম, আর বরফ জমাট এক অদ্ভুত জীব।

তৎক্ষণাৎ ডাক পড়ে বিজ্ঞানীদের। তারা এসে প্রথমে মুরগিটাকে চিমটা দিয়ে বা করে। তারপর সেটাকে গলায়। তারপর তার জিন পরীক্ষা করে তারা জানায়, এটা একটা মুরগি।

তারপর তারা আইসক্রিমটাকে চিমটা দিয়ে বা করে। তারপর সেটাকে গলায়। তারপর তার জিন পরীক্ষা করে তারা জানায়, এটা একটা আইসক্রিম।

এরপর তারা বরফজমা জীবটাকে চিমটা দিয়ে বা করে। তারপর সেটাকে গলায়। তারপর তার জিন পরীক্ষা করে বিজ্ঞানীদের মধ্যে ঝগড়া লেগে যায়। একদল বলে, এটা একটা গণ্ডার। একদল বলে, এটা ব্রন্টোসরাস। আরেকদল বলে, এটা বাঁশখোর।

সংসদীয় পরিদর্শক দল কড়া হুকুম দেয়, একে পুরোটা গলাও!

পুরোটা গলানোর পর পরিদর্শক দলের দলনেতা এসে জীবটাকে দেখে নাক সিঁটকান। এহ, এটা দেখতে এমন কেনু? কপাল নাই, ভুরু নাই, নাক নাই, ঠোঁট নাই, কেবল মুখে একটা বাঁশ গোঁজা! বাঁশ খেতে খেতেই ব্যাটা জমে গিয়েছিলো নাকি।

এক বিজ্ঞানী কানে কানে বলে, স্যার ভুল কর্ছেন স্যার! এটা ওর চেহারা নয়। আপনি উল্টোদিকটা দেখ্ছেন স্যার!

পরিদর্শক লজ্জা পেয়ে সোজা দিকটা দেখে নাক সিঁটকান। এহ, এর উল্টোদিকটাই তো চেহারার দিকটার চেয়ে ভালো ছিলো! যাই হোক, একে গরম করে কথা বলাও। জিজ্ঞেস করো ক্যাম্নেকী।

বিজ্ঞানীরা দাঁতালকে পুরোটা গলায়। তারপর তাকে জ্যান্ত করে।

দাঁতালের ঠোঁট কেঁপে ওঠে। সে চোখ মেলে, তারপর কাঁপা কাঁপা গলায় বলে, আমি কোথায়?

বিজ্ঞানীরা বলেন, তুমি দাঁতাল বাঁশখোর। তোমাকে আমরা একটা ফ্রিজের মধ্যে পেয়েছি। তোমার এই অবস্থা হোলো কেমন করে?

দাঁতাল ছলোছলো চোখে বলে, শুনবেন? শুনবেন আমার কাহিনী?

বিজ্ঞানী আর সংসদীয় পরিদর্শক দল বলেন, অবশ্যই শুনবো।

দাঁতালের চোখ জ্বলে ওঠে, সে উঠে বসে তর্জনী উঁচিয়ে দৃপ্ত গলায় বলে, "তাইলে শুনেন! ফ্যাসিবাদী নোয়া আমারে অন্যায়ভাবে তার নৌকা থিকা বাইর কইরা দিসে ...!"

দুখী গণ্ডারনামা ০২

হাঁটুপানির জলদস্যু
................
ক্যাম্নেকী বুঝতে হলে পড়ুন দুখী গণ্ডারনামা ০১



১.
এক এলিয়েনবাহিনী আক্রমণ করেছে পৃথিবীকে। সারা পৃথিবী তাদের তাণ্ডবে অস্থির।

অদ্ভুত এই এলিয়েনদের অস্ত্র। লেজারের সাথে জীবাণু ঘুঁটে বানানো তাদের উইপনস অব ম্যাস ডেস্ট্রাকশন! লেজারে চড়ে শত্রুর চামড়া ভেদ করে ঢুকে পড়ে জীবাণুগুলি, তারপর ভেতরটা একেবারে চেটেপুটে খেয়ে সাফ করে ফেলে কিছুক্ষণের মধ্যেই। শত্রু মাটিতে পড়ে তড়পাতে থাকে, তারপর পটল তোলে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওবামা তার মেরিন কোরকে পাঠান এই বদখদ এলিয়েনদের শায়েস্তা করতে। মেরিন বাহিনী একটা ফ্রিগেটে চড়ে নামে ফরাসী উপকূলে। আইফেল টাওয়ার দখল করে বসে আছে এলিয়েনগুলি।

এলিয়েন সম্রাট মেরিন কোরকে দূর থেকে দেখে হেসেই খুন। সে হুকুম দ্যায়, চালাও গোলিয়াঁ। মস্ত এক জীবাণু লেজারের কামান গর্জে ওঠে, মেরিন সেনাদের মুখের চামড়া পোঁদের চামড়া ভেদ করে ভেতরে ঢুকে পড়ে সেই জীবাণু, তারপর একদম ফর্দাফাই করে দেয় পুরো বাহিনীকে!

এভাবে একে একে খতম হয় রুশ সেনারা, চৈনিক সেনারা, ইসরায়েলি সেনারা, হিজবুল্লাহ গেরিলারা।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ভয়ের চোটে মাটির নিচের এক গর্তে বসে জরুরি মিটিং ডাকেন।

"আমি প্রস্তাব করছি, ড়্যাম্বোকে পাঠানো হৌক এদের খতম করার জন্য!" ওবামা বলেন।

এক জেনারেল তাঁর কানে কানে বলেন, মিস্টার প্রেসিডেন্ট, ওটা এক্টা সিনেমা। ড়্যাম্বো বলতে কেউ নেই!

ওবামা বলেন, "তাহলে টার্মিনেটর?"

জেনারেল মাথা নাড়েন। ওটাও সিনেমা।

ওবামা এক এক করে চাক নরিস, স্টিভেন সিগাল ইত্যাদি আরো সব মারদাঙ্গা লুকজনের নাম বলেন। কিন্তু তারা অভিনেতা মাত্র।

কনফারেন্স টেবিলের এক কোণায় বসা এক বুড়ো অ্যাডমিরাল আচমকা মাথা তুলে চাপা গলায় বলেন, "আছে, উপায় আছে!"

ওবামা বলেন, "কী?"

অ্যাডমিরাল বলেন, "বাংলাদেশে এক লুক আছে, যে এই এলিয়েনদের মেরে বিনাশ করতে পারবে!"

ওবামা বলেন, "কে সে? কী তার নাম?"

অ্যাডমিরাল বলেন, "দাঁতাল! দাঁতাল বাঁশখোর!"



২.
বাংলাদেশ সেনাপ্রধান জেনারেল গুলজার উ গুলজার ফোনে সব কথা মন দিয়ে শোনেন। তারপর বলেন, "ঠিকাছে মিস্টার প্রেসিডেন্ট। তাকে আমরা প্যাকেট করে পাঠিয়ে দিচ্ছি। তবে ...।"

ওবামা বলেন, "তুমার তো সাহস কম না জেনারেল! ইউনাইটেড ফাকিং স্টেইটস অব অ্যামেরিকার প্রেসিডেন্টকে তুমি "তবে" বলো? আর কোনো কথা শুনতে চাই না! পত্রপাঠ তাকে প্যাক করে পাঠাও, নাহলে ...!

জেনারেল গুলজার বিরক্ত হয়ে বলেন, "ইয়েস স্যার!"

তার এডিসি কর্ণেল সরফরাজ এ সরফরাজ বলেন, "স্যার! কী করবো স্যার?"

জেনারেল গুলজার বলেন, "কী আর করবা? উপকার করতে চাইছিলাম হালার ভাইয়ের, শুনতেই চায় না! দাও এমনেই পাঠায়া!"

কর্ণেল সরফরাজ বলে, "মুখে টেপ লাগাবো না স্যার?"

জেনারেল গুলজার বলেন, "দরকার নাই! ওদের ঝামেলা ওরা বুঝুকগা!"


৩.
দাঁতাল বাঁশখোর আজিজ সুপারমার্কেটের একটা গেঞ্জির দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে রাজাউজির মারছিলো, কবে সে জাহাঙ্গীরজঙ্গল বিশ্ববিদ্যালয়ের বাঁশঝাড়ে একটা বাঁশ কেটে একটি রয়েল বেঙ্গল টাইগার নিধন করেছিলো, এবং সেটির পায়া দিয়ে নেহারি আর পরোটা খেয়েছিলো রাতে, এমন সময় জলপাই রঙের এক ট্রাক এসে থামে। মুখে কালি মাখা কয়েকজন মিশমিশে কমাণ্ডো এসে চোখের পলকে তাকে এক্টা বস্তায় ভরে উল্কাবেগে ছুটে চলে এয়ারপোর্টের দিকে।


৪.
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওবামা বিরক্তি আর বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে থাকেন দাঁতাল বাঁশখোরের দিকে। এ-ই সেই সুপারম্যান, যার ওপর নির্ভর করছে বিশ্বের ভবিষ্যত? এ তো মনুষ্য পদবাচ্যই নয়!

দাঁতার বাঁশখোর ঘাড় ঘুরিয়ে হোয়াইট হাউসের অফিস দেখতে থাকে।

"মিস্টার বাঁশখোর! আপনার ওপরই নির্ভর করছে পৃথিবীর ভবিষ্যত!" ওবামা গমগম করে বলেন। "এই পরিস্থিতি চলতে পারে না! চেইঞ্জ উই নিড!"

দাঁতাল বলে, "কোন পৃথিবী? প্রথম বিশ্ব না তৃতীয় বিশ্ব? কোন ভবিষ্যত? নিকট না দূর? পরিস্থিতি কারে বলে? চলা কারে কয়? কীসের চেইঞ্জ, কার নিড, উই কারা?"

প্রেসিডেন্টের মাথাটা চক্কর দিয়ে ওঠে। তিনি বলেন, "আপনাকে তো পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করা হয়েছে! এক ভীষণ এলিয়েন ...!"

দাঁতাল বলে, "হ শুঞ্ছি বটে!"

প্রেসিডেন্ট বলেন, "তা আপনি কী করে এমন একজন সুপারম্যানে পরিণত হলেন?"

দাঁতাল বলে, "সে এক লম্বা কাহিনী! আমারে নোয়ার নৌকা থিকা অন্যায়ভাবে বাইর কইরা দেয়া হইসে!"

এরপর সে বকে যায়। পাঁচমিনিট শোনার পর ওবামা দু'হাতে কান চেপে ধরেন। বলেন, "প্লিজ! চুপ করুন! যা চান দেয়া হবে!"

দাঁতাল বলে, "আরে বাকিটা আগে শোনেন না! তারপর নোয়া আমারে কইলো, খাড়া গর্দভ, তোরে যদি আজকে পোন্দাইয়া শ্যাষ না কর্ছি ...!"

ওবামা আবার দু'হাতে কান চেপে ধরে বলেন, "না প্লিজ না! থামেন! চুপ!"

দাঁতাল একটু থামে।

প্রেসিডেন্ট কান চেপে ধরে রেখেই বলেন, "তা বলেন আপনার কী অস্ত্র কয়টা করে চাই? মেশিনগান? অ্যান্টিট্যাঙ্ক রকেটলঞ্চার? স্টেলথ চপার? ড্রোন স্কোয়াড্রন?"

দাঁতাল মৃদু হাসে। তারপর বলে, "আগে শোনেনই না নোয়ারে তারপর কী কইলাম ...!"

প্রেসিডেন্ট আবার দু'হাতে কান চেপে ধরে বলেন, "না না না না! কিচ্ছু শুনবো না এসব! গ্নাগ্নাগ্নাগ্নাগ্নাগ্নাগ্নাগ্নাগ্নাগ্নাগ্নাগ্না ...।"

দাঁতাল তার ময়লা বিশাল দাঁত দুইটা বার করে হেসে বলে, "এইসব অস্ত্র কিচ্ছু লাগবে না আমার! আপনার টেবিল থেকে কয়েকটা দাঁতখিলাল দ্যান আমারে!"

প্রেসিডেন্ট কান থেকে হাত নামিয়ে দাঁতখিলালের কৌটার দিকে হাত বাড়ান।

অমনি দাঁতাল সোৎসাহে বলা শুরু করে, "আমি কইলাম, ওরে ফ্যাসিবাদী নোয়া, আমার জরায়ু দিয়া ফ্যাসিবাদ রপ্তানি করবি? তা হবে না, তা হবে না ...!"

ওবামা আবার কান চেপে ধরে মাটিতে গড়াতে থাকেন। "না না না না না! শুনবো না এসব! দাঁতখিলাল নিয়ে বিদায় হও!"

দাঁতাল হাসতে হাসতে দাঁতখিলালের কৌটাটা পকেটে নিয়ে দরজার দিকে এগিয়ে যায়। ওবামা ছুটে গিয়ে দরজার খিল আটকে কপাটে ঠেস দিয়ে হাঁপাতে থাকেন।

দরজায় আবার টোকা পড়ে। নক নক।

ওবামা বলেন, কে ওখানে?

দাঁতাল বলে, আমি, বাঁশখোর।

ওবামা বলেন, কী চাও?

দাঁতাল বলে, একটা কথা বলতে ভুলে গেছিলাম।

ওবামা দরজা খুলে সন্তর্পণে উঁকি দিয়ে বলেন, "কী?"

দাঁতাল বলে, "তারপর নোয়া কইলো, তোর মতো গর্দভরে লাত্থি দিয়া নৌকা থিকা খেদানির কাম, ব্যাটা উল্লুক! আমি কইলাম ...।"

ওবামা অজ্ঞান হয়ে যান।



৫.
একটা হেলিকপ্টার চুপি চুপি গোপনে আইফেল টাওয়ারের কাছে নামিয়ে দেয় দাঁতালকে।

দাঁতাল পাইলটকে বলে, "এক্টা কথা ছিলো।"

পাইলট গম্ভীরমুখে বলে, "আমার উপর পরিষ্কার নির্দেশ আছে, তোমার কোনো কথা আমার শোনা চলবে না।"

দাঁতাল বলে, "আরে না। জরুরি কথা।"

পাইলট বলে, "তোমার কথা আমি শুনবো কীভাবে? হেলিকপ্টারের পাখার আওয়াজে কোনো কিচ্ছু শোনার উপায় নাই। তোমার যা বলার তুমি এলিয়েনগুলিরে গিয়া বলো!"

দাঁতাল বলে, "আহ শোনোই না! পাখাটা বন্ধ করো এক্টু।"

পাইলট পাখা বন্ধ করে।

দাঁতাল বলে, "এইবার কান থেকে ছিপি দুইটা বের করো।"

পাইলট অনিচ্ছাসত্ত্বেও ছিপি দুইটা খোলে।

দাঁতাল বলে, "তারপর হইছে কি, আমারে তো নোয়া অন্যায়ভাবে নৌকা থিকা বাইর কইরা দিলো ...।"

পাইলট চোখের পলকে কানে ছিপি এঁটে হেলিকপ্টার চালু করে আকাশে উড়াল দেয়। কিন্তু বেশিদূর যেতে পারে না, এক ভীষণ লেজার এসে গ্রাস করে হেলিকপ্টারটাকে। কিছুক্ষণ পর সেটা আছড়ে পড়ে মাটিতে।

দাঁতাল বাঁশখোর তার চে গেভারার ছবি আঁকা গেঞ্জিটা ঠিকঠাক করে এগিয়ে যায় গটগটিয়ে।

এলিয়েনরা তাকে দেখেই লেজার মারে। কিন্তু কোনো লাভ হয় না। কারণ দাঁতালের গায়ে ব্রন্টোসরাসের মতো মোটা চামড়া। আগুনে তা পোড়ে না। জলে তা ভেজে না। ণৈণং ছিন্দান্তি শস্ত্রাণি। জীবাণুগুলি তার চামড়ায় বাড়ি খেয়ে পটল তোলে।

এলিয়েন সম্রাটের বুকটা দুরুদুরু করে ওঠে। কে এই সুপারম্যান?

দাঁতাল এগিয়ে গিয়ে একটা ঢিপির ওপর বসে। এলিয়েন সম্রাট এক্টা লেজার পিস্তল নিয়ে কম্পিত পায়ে এগিয়ে যায় তার দিকে।

"কে তুমি?" পিস্তল উঁচিয়ে কাঁপা গলায় শুধায় সে।

দাঁতাল তাচ্ছিল্যের ভঙ্গিতে তাকে দেখে, তারপর বলে। "খোর। বাঁশখোর।"

এলিয়েন সম্রাট কিছু বুঝতে না পেরে জুলজুলিয়ে তাকিয়ে থাকে।

দাঁতাল তার হোলস্টার থেকে ঝট করে বার করে একটা দাঁতখিলাল।

সম্রাট চমকে উঠে এলোপাতাড়ি লেজার মারে, কিন্তু দাঁতালের কিছুই হয় না।

খিলাল দিয়ে ময়লা হলুদ দাঁত দুইটা খোঁচাতে খোঁচাতে দাঁতাল বলে, "এক্টা গল্প শুনবা?"

এলিয়েন সম্রাট কাঁপতে কাঁপতে বলে, "কী গল্প?"

এইবার এক্টা হ্যাণ্ডমাইক নিয়ে দাঁতাল বলতে থাকে, "ফ্যাসিবাদী নোয়া আমারে অন্যায়ভাবে নৌকা থিকা বাইর কইরা দিসে ...!"

গল্প চলতে থাকে। পাঁচ মিনিট পর এলিয়েন সম্রাট নিজের কপালে পিস্তল ঠেকিয়ে আত্মহত্যা করে।

দশ মিনিট পর কানে আঙুল ঢোকাতে গিয়ে শর্টসার্কিট হয়ে মৃত্যুবরণ করে বেশিরভাগ এলিয়েন। কয়েকটা এলিয়েন মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে নরম্যান্ডি উপকূলে ডুবে মরে। হারাকিরি করে এলিয়েনদের বউগুলি। একটা বাচ্চা এলিয়েনকে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল দত্তক নেয়।

এলিয়েনদের উপসেনাপ্রধান, তাদের সবচেয়ে দুর্ধর্ষ যোদ্ধা, কোনোমতে হামাগুড়ি দিয়ে এসে দাঁতালের হাঁটু চেপে ধরে। কাশতে কাশতে তার মুখ দিয়ে রক্ত ছলকে পড়ে। "প্লিজ! থামো! ... আমি সারেন্ডার করছি! আর না!"

দাঁতালের মনটা ভিজে যায়। চোখে জল আসে তার। তারপর পকেট থেকে দুর্গন্ধী রুমাল বার করে এলিয়েন পালোয়ানের কষ থেকে রক্ত মুছে দেয়। তার কাঁধে হাত রেখে বলে, "ঠিক তোমার মতোই অবস্থা হৈছিলো ফ্যাসিবাদী নোয়ার, যখন তারে জিগাইছিলাম, এই ফ্যাসিবাদী মনোভাব লৈয়া তুমি আমার জরায়ু ব্যবহার করতে পারবা, এই আশা তুমি অবচেতনে লালন করন ঘটন হওয়ায় ক্যাম্নে ...!"

এলিয়েন পালোয়ান কাঁপতে কাঁপতে পড়ে যায়। তারপর মরে যায়।


৬.
দূর থেকে বাইনোকুলার দিয়ে এই দৃশ্য দেখে এক মার্কিন সেনাকর্তা ওয়্যারলেস তুলে বলে, "মিশন অ্যাকমপ্লিশড! এখন কী করবো স্যার?"

ওবামা বলেন, "ক্লোরোফরম করে আজিজ মার্কেটে ছেড়ে দিয়ে আসো বলদাটাকে।"