শনিবার, ৭ নভেম্বর, ২০০৯

কবি তাপস গায়েন-এর অপ্রকাশিত পদ্য

(এক)

প্রগাঢ় ভালোবাসায় বেঁধে রাখি তাকে
তবু কেন মিছে এতো ধূলো ওড়াওড়ি
আমি তো জন্মান্ধ কবি, বালিয়াড়ি জুড়ে
মগ্ন আমি, কেন খুঁজি সেতু পারাপার

বুয়েট, ঢাকা ; জুলাই ৮, ১৯৮৯


(দুই)

বীর্যহীন রাত নামে হীম কুয়াশায়
চাঁদ শিশুর হাড়ের লাবণ্য ছড়ায়
জেনেছি আমার চুল ঈশ্বর-বিহীন
তবে কেন এতো রাতে নিয়ন-প্রণয়

বুয়েট, ঢাকা ; জুলাই ২৮, ১৯৮৯


(তিন)

রঙ ও রেখায় আঁকি সমুদ্র তুমুল
তবু হাতে রয়ে যায় বিষণ্ন লেগুন
নীল রঙে আঁকি যদি নম্র জল, তবে
শঙ্খের গভীরে ঝরে জলের অনল

বুয়েট, ঢাকা ; জুলাই ৩০, ১৯৮৯


(চার)

অন্ধ আত্নমগ্নতায় খুঁজে ফিরি নারীর শরীর
সুবাতাস ফিরে যায় ; ব্যর্থ হয়ে ফিরে ফিরে যায়
থির গাঙের শুশুক ব্যাকুল ভাদ্রের ভরা জলে
এ কী অস্থির কৌতুক নিরন্তর আমাকে ভাবায়

বুয়েট, ঢাকা ; জানুয়ারি, ১৯৮৯


(পাঁচ)

শুধু ব্যর্থ দগ্ধ সিগারেট । এ কী দাহ না উৎসব
না কী রঙধনু ছুঁয়ে ক্রমাগত স্মৃতি পারাপার
তোমার নিশ্চুপ হাতে ঝরেছিল আলোর সরণী
দেহ আর দ্রোহ নিয়ে নিঃশব্দ আমার করতালি

বুয়েট, ঢাকা ; জুন- ১৯৮৯


(ছয়)

কোথাও ঠিকানা নেই, নম্র নীল নিরাবেগ জল
তবে কিসের সংসার গড়ে তুলে মানুষে মানুষ
ফিরে আসি স্মৃতির উৎসবে, কোন মানুষের ভ্রমে
দর্পণে চিত্রিত নই, স্বপ্নে শুধু নিরাবেগ জল

বুয়েট, ঢাকা ; আগস্ট ৩- ১৯৮৯


(সাত)

জলের প্রবাহে আছি । এই নগ্ন-রূপে বহুদিন
শূণ্যে ভেসে গেছে ঘুড়ি । এইভাবে কে কী নিয়ে যায়
যৌবন মেধাবী জানি । জলে শুধু নিরন্তর ঢেউ
দেহের পূরাণ আছে । কেন আমি নিশ্চল পাথর

বুয়েট, ঢাকা ; আগস্ট ১০, ১৯৮৯


(আট)

বরফ হয়েছ তুমি ? কেন, তরল দেখোনি বলে
এসো, ভাসি অবেলায় । এইভাবে হাত রাখো হাতে
জলে ঠোঁট রেখে বুঝি আমি নই সহজ সরল
খুব বৃষ্টি শেষে বলে ওঠো তুমি - হয়েছি তরল

বুয়েট, ঢাকা ; আগস্ট ১৫, ১৯৮৯


(নয়)

শব্দের কিনারে আছি । দূর সমুদ্রে জাহাজের ভোঁ
ফাৎনায় মুহূর্ত কাঁপে । ঝরে পড়ে অস্থির সময়
ব্যর্থ বায়ু ফিরে যায় । খুঁজে যায় ব্যথিত বলয়
প্রবল বাতাসে ঈশ্বর কী কাঁপে ফাৎনার ডগায়

বুয়েট, ঢাকা ; সেÌটম্বর, ১৯৮৯


(দশ)

ইতিহাসের মূঢ়তা শিখেছে কি একাকী মানুষ
তবে জটিল জল্পনা কেন বুনো জলের সারল্যে
বুর্জোয়া স্বভাবে নেই কোন জলজ বৃত্তের ভঙ্গী
মুক্তির আনন্দ লিখে রেখো দেহের গোপন ভাঁজে

বুয়েট, ঢাকা ; জুলাই ২৭, ১৯৮৯


(এগারো)
দেহ নিয়ে খেলা; আছি এইভাবে লুপ্ত বহুদিন
স্তন যোনি জানু ছুঁয়ে আজ এই উন্মুল জীবনে
অনতি অতীত থেকে উঠে আসে সাহসী মানুষ
আর আমি পোড়াকাঠ; ভেসেছি দূরতর অতীতে

বুয়েট, ঢাকা ; আগষ্ট, ১৯৮৯


(বারো)

লিখো নাম অবিরাম সহজ জলের কলস্বরে
দাও উড়িয়ে বুদ্বুদে জরা, দাহ, দেহের সন্তাপ
ছোট বড় ঢেউ সব মুছে দেয় নাম অবিরাম
খুব বেশী নগ্ন হয়ে ভাবি - শৈশব কী শুধু স্মৃতি

বুয়েট, ঢাকা ; সেপ্টেম্বর ৮, ১৯৮৯


(তেরো)

তছ্নছ করেছো ছায়া; নিগুঢ়-ও তার প্রতিশ্রুতি
ঈশ্বর-বিহীন তুমি দাঁড়াবে কোথায়, ভেবেছ কী
প্রবল মাধ্যাকর্ষণ টানে আছো আজ মানুষের
ভীড়ে । তবু জেনেছ কী তুমি নিজে কতোটা ঈশ্বর

বুয়েট, ঢাকা ; সেপ্টেম্বর ৯, ১৯৮৯


(চৌদ্দ)

কোথায় দাঁড়াব আমি, অনাসক্ত এক মুঠো জল
সমস্ত পৃথিবী জুড়ে একই বিদায় সম্ভাষণ
মানুষের পায়ে পায়ে খুব বেশী মগ্ন আমি ; তবু
রঙধনু ছুঁয়ে বুঝি - এই নয় আমার জীবন

বুয়েট, ঢাকা ; সেপ্টেম্বর ১৪, ১৯৮৯


(পনের)

বৃষ্টি হয়েছিল । তাই সারাদিন আনমনে খুব
স্মৃতির শিকড় ছুঁয়েছিল বুঝি সরব প্রপাত
উঠোনের জলে মৃদু দুলেছিল শীর্ণকায় চাঁদ
বস্তু কেন ভেঙ্গে যায় ঘন নীল মনের ছোঁয়ায়

বুয়েট, ঢাকা ; সেপ্টেম্বর ২৭, ১৯৮৯


(ষোল)

শব্দের সীমানা ভেঙে চলে যাব দূর কোন দেশে
ত্রস্ত বিকালের রোদ মেখে নিও শাড়ির আঁচলে
খুব ধূলো যদি ওড়ে, কান রেখো জলের আভাষে
বুঝে নিও এ জীবন শুধু মিছে ধূলো ওড়াওড়ি

বুয়েট, ঢাকা ; সেপ্টেম্বর ২৮, ১৯৮৯


(সতের)

নৌকা ছেড়ে গেলে বুঝি - একদিন আমিও ছিলাম
কার আঁচল ছায়ায়, কবে কার দ্রাবিত যৌবনে
পড়ে আছে ভাঙ্গা সাঁকো, বহু অর্থহীন প্রতিশ্রুতি
আজ চারিদিকে জল । সাঁকোহীন, শুধু এলোমেলো

বুয়েট, ঢাকা ; অক্টোবর ৫, ১৯৮৯


(আঠারো)

শব্দের আদলে নারী; ভাঙ্গি তার জটিল যৌবন
অজস্র শব্দের মুখোমুখি ফেরারী আসামী আমি
মেঘ-বৃষ্টি-জল আনে অবিরল শব্দ কোলাহল
শব্দ ভেঙ্গে দেখি শুয়ে আছে নারী, বিমুগ্ধ নয়ন

বুয়েট, ঢাকা ; অক্টোবর ১০, ১৯৮৯


(উনিশ)

ঘাসে ঘাসে বেজেছিল বিচূর্ণ সূর্যের গান, আর
লুদ্ধক নক্ষত্র ঘিরে মানুষের নিঃসঙ্গ জীবন
গভীর রাতের শেষে মন্থর শরীর ঘিরে থাকে
নিহিত কুয়াশা আর বাদুড়ের ঘরে ফেরা তান

বুয়েট, ঢাকা ; অক্টোবর ২০, ১৯৮৯


(কুড়ি)

রাতের জরায়ু ছিড়ে পৌঁছে যাই পৃথিবীর পথে
ভাঙ্গে বার্লিন প্রাচীর । ফেরারী যৌবন কিছু জানে
দেহের পরিধি জুড়ে জাগে আজ অলীক প্রণয়
নগরী নিয়ন ছেড়ে অকারণ কে আর হারায়

বুয়েট, ঢাকা ; নভেম্বর ৪, ১৯৮৯


(একুশ)

পড়ে আছি শব্দহীন, চৌরাস্তায় মোড়ে ক্রুশবিদ্ধ
সারারাত খুব আলো কুড়ালেন নগ্নপ্রায় যীশু
দেহের প্রতিভা নিয়ে আমি এক ঈশ্বর সাধক
নগ্ন হতে গিয়ে ভাবি- যীশু আজ কতোটা উন্মুল

বুয়েট, ঢাকা ; নভেম্বর ৪, ১৯৮৯


(বাইশ)

অসম্পূর্ণ বৃত্ত । কেন খুঁজি আমি একান্ত ঈশ্বর
রঙ ও রেখায় আঁকি নদী, তার লীলায়িত ভঙ্গী
মুছে গেলে রঙধনু হারায় নদীর সব বাঁক
ধূলোয় দেখেছি আমি নগ্নপ্রায় আদিম ঈশ্বর

বুয়েট, ঢাকা ; নভেম্বর ২৫, ১৯৮৯


(তেইশ)

ঠোঁট ও পালক, ইভা- ঠোঁট ও পালক, ছায়া কই
আগুন দিয়েছ খড়ে । নগ্ন হয়ে দেখেছ আগুন
পথে পথে ধূলো বালি । কেন আমি শুধু মিছে ঘুরি
ডাল কেঁটে ছায়া খুঁজি । বোধি-বৃক্ষে পাখি, কই তুমি

বুয়েট, ঢাকা ; নভেম্বর ২৫, ১৯৮৯


(চব্বিশ)

ছিল ভাঙ্গা গড়া, নিজ অবয়বে জলের উত্থান
তোমার আঙ্গুল ছুঁয়ে প্রতারক দেখেছি ঈশ্বর
নিগুঢ় বিন্যাসে জল তদুপরি নিজের ভাস্কর
আজ রাতে শূণ্য করতলে জেগেছে গোপন ত্রাস

বুয়েট, ঢাকা ; ডিসেম্বর ৩, ১৯৮৯


(পচিশ)

কতো হাত জল মাপি ? মাছ কতো জলের গভীরে
বেলা জুড়ে ছায়া খুঁজি । মেলা ভেঙ্গে গেলে তবু থাকি
অদৃশ্য সঙ্গীত রেখা । ফিরে যাব কার কাছে, ইভা
তোমার চিবুকে সাঁকো । স্তদ্ধ আমি সেতু পারাপার

বুয়েট, ঢাকা ; দিসেম্বর ৯, ১৯৮৯


(ছাব্বিশ)

অসম সঙ্গম আর নিজ বৃত্তে স্বপ্ন ব্যভিচার
বড় পথে গুঢ় টান, ভেঙ্গে ফেলি স্মৃতির ভূগোল
শব্দের মন্থন আনে অবিরল স্মৃতি পারাপার
হঠাৎ তুমুল তালি । চেয়ে দেখি বৃষ্টি অনাচার

বুয়েট, ঢাকা ; ডিসেম্বর ১২, ১৯৮৯


(সাতাশ)
পাথরে প্রহৃত জল । প্রজাপতি জলের বিক্ষোভে
নগ্ন হয়ে উন্মাতাল, আমি কোন উর্ব্বশী যৌবনে
আছি অদৃশ্য প্রবাহে । তবু জন্মান্তর জেনে যাই
এই জলে ও পাথরে, প্রতারিত স্মৃতির ভূগোলে

বুয়েট, ঢাকা ; ডিসেম্বর ১২, ১৯৮৯


(আটাশ)

পালকে আনন্দ জাগে । কেঁপে ওঠে স্মৃতির ভূগোল
ছায়াবৃত্তে ভেঙ্গে যাই; ভেসে যাই বিপ্রতীপ জলে
যুথবদ্ধ শব্দ আনে অবিরল শব্দ ব্যভিচার
রাতের আঁধার জানি ভেঙ্গে যায় শুশুক মায়ায়

বুয়েট, ঢাকা ; জানুয়ারি ৫, ১৯৮৯


(উনত্রিশ)

লুদ্ধক আনন্দে রোদ ঘিরে রাখে বরফ শরীর
করতলে উথ্লে ওঠে বেহুলার পায়ে ভাঙ্গা জল
শরীর কী ছুঁয়েছিল কুমারীর নগ্ন স্তন, তবে
বেহালার ছড় ভেঙ্গে কেন আমি নম্র চুলে থির

বুয়েট, ঢাকা ; জানুয়ারি, ১৯৯০


(ত্রিশ)

উঠোন পেরিয়ে চাঁদ । ঋতুবতী জলের প্রবাহ
বায়ু এসে ভেঙ্গে দেয় জল, শুধু জল অবিরল
হৃদে তবে কেন জাগে অর্থহীন স্মৃতির ভূগোল
রমণীর নাভিমূলে শান্ত হয়ে আসে ঘূর্ণিজল

বুয়েট, ঢাকা ; ফেব্রুয়ারি ১৯৯০


(একত্রিশ)

মৌলের স্বভাবে আছো । আজ তার রূপান্তর জেনো
অজস্র ভাঙ্গনে অণু । উথ্লে ওঠো কিসে, নম্র তুমি
জলের কাঁপনে, নতুন বিন্যাসে, যদি তুমি ভাঙ্গো
অণুর স্বভাবে তবে জানি, মৌলিক মানুষ আমি

বুয়েট, ঢাকা ; ফেব্রুয়ারি ১৯৯০


(বত্রিশ)

হেঁটে যাই আনমনে, নিজের ছায়াকে জানি সঙ্গী
শেষ বিকালের আলো নিভে; ঝরে পাতা অবেলায়
নিয়ন পেরিয়ে ভাঙ্গি বৃত্ত, ক্রমাগত হেঁটে চলি
কাকে যেন খুঁজে ফিরি । নিজেই নিজের প্রতিদ্বন্দ্বী

বুয়েট, ঢাকা ; মার্চ ১৯৯০


(তেত্রিশ)

ভাঙ্গনের আনন্দে ভেঙ্গেছ । বিপুল ভেঙ্গেছ তুমি
হাত-পা ছুড়ে শুধু কী বাতাসের মগ্নতা কেড়েছ
উৎসব আনন্দে তুমি থৈ থৈ রমণী ভেঙ্গেছ, তবে
আজ চোরা-বালি জুড়ে শুধু কেন নিজেকেই খুঁজছো

বুয়েট, ঢাকা ; মার্চ ১১, ১৯৯০


(চৌত্রিশ)

বেভুল মানুষ তুমি । তবে কেন এমন মেতেছ
উস্কো খুস্কো চুলে তুমি কতোটুকু আকাশ ধরেছ
বাদুড়ের সাথে তুমি এলোমেলো অনেক ঘুরেছো
উন্মুল হয়ে কী আজ রাজধানী নিয়নে মজেছো

বুয়েট, ঢাকা ; মার্চ ১৫, ১৯৯০


(পয়ত্রিশ)

থাকা না থাকার দ্বন্দ্বে ভেসে যায় ছইহীন নৌকা
লেগে থাকে নারীর শরীরে তার বেগ ও বিস্তার
রঙধনু ছুঁয়ে নগ্ন আমি ক্রন্দনহীন, উন্মাতাল
আকাঙ্খায় বীজপত্র দেখি ছায়াপথ হতে চায়

বুয়েট, ঢাকা ; ফেব্রুয়ারী ১৯৯০


(ছত্রিশ)

মেঘ, মাটি, ও শূণ্যতা । হয়েছে বৃষ্টিতে একাকার
ভিজেছি আমূল আমি; আছি তবু বৃক্ষের স্বভাবে
থিতিয়ে এসেছে তাপ যদি মাটির গভীরে, তবে
দেহের পরিধি জুড়ে জল কেন বাষ্প হয়ে ভাসে

বুয়েট, ঢাকা ; মার্চ ১৯৯০


(সাইত্রিশ)

ঘুম- দেহের আবেগ । লগি মেরে আর কতোদূর
স্বপ্ন- পাল তোলা নৌকা । ভেসে যায় অনিকেত জলে
জাগরণ- শব্দের আদলে জাগে রাতের নিয়ন
ঘুম-স্বপ্ন-জাগরণ : বাতাসে হিল্লোল তুলে থির

বুয়েট, ঢাকা ; মার্চ ২০, ১৯৯০


(আটত্রিশ)

পলি- নারীর শরীর । গুঢ় অভিমানে খুব গাঢ়
শিলা- শরীরের ভার । নগ্ন শরীরের রূপান্তর
পালক- দেহের ছায়া । পলি ও পাথরে কোন ভেদ
পলি-শিলা-পালক : জেনে যাই প্রকৃতি অভেদ

বুয়েট, ঢাকা ; মার্চ ৩০, ১৯৯০


(উনচল্লিশ)

এই মেয়ে রোজ তুমি জল নিয়ে ফিরে গেছো বাড়ি
তবু কখনো বুঝোনি, কলসের কাঁধ ছুঁয়ে ঢের
হয়েছো বয়সী । আজ কলস ভরে না । খুব ব্যর্থ
তুমি । বিংশ-শতাব্দীর মেয়ে, কেন ছেনালি শিখোনি

বুয়েট, ঢাকা ; এপ্রিল ৮, ১৯৯০


(চল্লিশ)

দর্পণ তো নই আমি; নই কোন এলেমী পাথর
আলো তবু খেলে যায় দেহের ভিতরে অবিরল
পৃথিবীর অক্ষ ঘুরে যদি আসে কালো রাত, তবে
নারীর শরীরে খুঁজি দর্পণের বিচূর্ণ উৎসব

বুয়েট, ঢাকা ; মে ৬, ১৯৯০


(একচল্লিশ)

ইভা, আজ তুমি শুশুক আনন্দে ডুবে আছো খুব
দেহের গভীরে লুফে নাও জলে ভরা মেঘ, কিন্তু
নিয়নের রেণু মেখে যেই আমি নদীর কিনারে
দেখি, আকাঙ্খায় ভেঙ্গে ভেঙ্গে তুমি অজস্র অনেক

বুয়েট, ঢাকা ; এপ্রিল ২২, ১৯৯০


(বিয়াল্লিশ)

সত্তার গভীরে ঘুম । তবু ঝিলে ছুঁড়ে দেই ঢিল
জলে জেগে ওঠে বৃত্ত । বৃত্তে শুধু ভাঙ্গনের ধুম
স্বপ্নের নেশায় নেমে পড়ি শান্ত ঝিলের গভীরে
জলের বিভঙ্গে- ইভা, তুমি আজ কামুকী শুশুক

বুয়েট, ঢাকা ; মে ১৯৯০


(তেতাল্লিশ)

খুব নুয়ে আসে জলে ভরা মেঘ, আরও কাছে এলে
আল্তো ঠোঁট রেখে বলি - মেঘ তুমি, অবোধ কিশোরী
সবুজের কাছে এসে ভাবি- আমিও পেয়েছি নারী
অলীক ঈথারে দেখি- মেঘ ও সবুজে জড়াজড়ি

বুয়েট, ঢাকা ; মে ১৫, ১৯৯০


(চুয়াল্লিশ)

জরায়ু ছিঁড়েই জানি- পৃথিবীতে আমি একা, তবু
পালকের খোঁজে কেটে গেছে আমার সময়, আজ
আমার এ দেহ ঝরে পড়ে তুলসী পাতায়, শুধু
পূজা আয়োজনে নারী একবার আমাকে ধোয়ায়

বুয়েট, ঢাকা ; জুন ১, ১৯৯০


(পয়তাল্লিশ)

ভেসে যাবে মেঘ, তার মেদুর ছায়ার প্রতিশ্রুতি
মেঘের মণ্ডনে তবু আছি । লতা, গুল্মে কিছু স্মৃতি
নীরব প্রশ্রয়ে তাকে রাখি । ইভা, তুমি যদি ভাসো
নগ্ন হয়ে ভাসমান শুধু তোমাকেই আমি দেখি

বুয়েট, ঢাকা ; জুন ১৬, ১৯৯০


(ছিচ্ল্লিশ)

কোলাহল শূণ্য জল । তাতে ধরা পড়িয়াছে ছায়া
তবু ছায়া কেন কাঁপা কাঁপা ? নগ্ন দেহে শুধু মায়া
রাত বুঝি অন্ধ কায়া ? দর্পণে বিম্বিত হয়ে দেখি
জলমগ্ন স্মৃতির মুকুরে সেতুহীন আসা-যাওয়া

বুয়েট, ঢাকা ; জুন ২৭, ১৯৯০


(সাতচ্ল্লিশ)

চাঁদে মুখ ঘষে মেঘ চলে যায় দূর অজানায়
ভূগোলে বাহিত মেঘ কোন টানে ফিরে ফিরে যায়
আমার এ দেহ ভাঙ্গে, ভাসে; ব্যাপ্ত মেঘের ছায়ায়
দেহের সীমানা ছুঁয়ে মেঘ আর কতোদূরে যায়

বুয়েট, ঢাকা ; জুলাই ২৩, ১৯৯০


(আটচ্ল্লিশ)

পথিক ছিলাম । গভীর পরিখা ছিল পথে । শত্রু
ফিরে গেছে কবে । ধ্বংসস্তুপে আজ প্রেতাত্মারা ঘুরে
নির্জন একাকী চাঁদ । তার পাশে এসে অনুক্ষণ
ভাবি, পরিখার কাছে মানুষ কতোটা আর ঋণী

বুয়েট, ঢাকা ; জুলাই ২৭, ১৯৯০


(উনপঞ্চাশ)

ফিরে গেছে নদী । পদমূলে রয়ে গেছে তার চুমু । ঢের
ঝরেছে শেফালি । ফেরারী যৌবন আজো খুঁজে নদী
স্রোতে স্রোতে বয়ে গেছে বেলা । দেখি শুধু তার ক্ষয়
সময় হারিয়ে বুঝি, জলস্রোত সেও আজ বাঁকা

বুয়েট, ঢাকা ; আগষ্ট ২৯, ১৯৯০


(পঞ্চাশ)

বর্ষায় প্লাবিত গ্রাম । দশদিক ঘন অন্ধকার
গরুর গাড়ীতে মরা । তাকে দূরে নিয়ে যায় চাষা
ঘিরে থাকে অন্ধ ভয় শরীরের মগ্ন চারিধার
রাতের গভীরে আজো বেজে যায় গান বেহুলার

বুয়েট, ঢাকা ; সেপ্টেম্বর ২৭, ১৯৯০


(একান্ন)

কেউ এসে ফিরে গেছে । কেউ কেন ফিরে ফিরে আসে
জোয়ার ভাটায় সেই গান আজো বারে বারে বাজে
রঙ ও তুলির টানে গোল-গাল রমনীরা সাজে
রাত শেষে শরীর কী আর শরীরকে ধরে রাখে

বুয়েট, ঢাকা ; অক্টোবর ৩০, ১৯৯০


(বায়ান্ন)

বৃক্ষকে ভেবেছি ছায়া । আজীবন স্মৃতি স্বপ্নে ভুল
চলো সাঁচীস্তুপে ডেকে যান বুদ্ধ- ভীষণ বেভুল
কিশোরী তুমি তো কেটে যাওয়া ঘুড়ি দূর অজানায়
ছায়াপথ জুড়ে অশান্ত স্বপ্নের নদী বয়ে যায়

বুয়েট, ঢাকা ; নভেম্বর ৭, ১৯৯০


(তেপ্পান্ন)

জলের অতলে জল পতনের শব্দ । খুব ঘুম
জরায়ু গভীরে । জাগে পরী-নাচ জলের ভঙ্গীতে
শুশুক শরীর ছুঁয়ে ছুঁয়ে মগ্ন জল উতরোল
রাত জুড়ে দেহ কোষে মন্দ্রিত সঙ্গীত অবিরল

বুয়েট, ঢাকা ; ডিসেম্বর ১৮, ১৯৯০


(চুয়ান্ন)

শূণ্য দশদিক । দিগন্ত ব্যথিয়ে ডাকে ঘন ছায়া
রোদের গভীরে স্বপ্ন হয়ে কালো দেহে খুঁজি মায়া
সীমানা ডিঙ্গিয়ে ডাগর কিশোরী আজ ভরা নদী
অনিকেত জলে লিখি নাম- যাযাবর খেয়া তরী

বুয়েট, ঢাকা ; ডিসেম্বর ২৯, ১৯৯০


(পঞ্চান্ন)

ছিল কোন পরিচিত গাছ, চক-খড়ি দিয়ে আঁকা
কোন নারী ? তুমুল বৃষ্টিতে আজো রয়ে গেলে
ভ্রমন বিলাসী । বৃত্তের পরিধি চক্রমণ শেষে
দেহ জুড়ে বেজে ওঠে নাম গান সংকীর্তন ধ্বনি

বুয়েট, ঢাকা ; জানুয়ারি ১২, ১৯৯১


(ছাপান্ন)

আমার অশান্ত ভগিনীরা কী আমারই ছিল, তবে
শৈশব হারিয়ে কেন আজ ছায়াপথ খুঁজি
উজ্জ্বল রোদের মাঝে ওরা দেহ নিয়ে চলে গেলে
অনাদরে নিজেকেই ক্রমাগত ভেসে যেতে দেখি

হবোকেন, নিউজার্সি; জানুয়ারি ২১, ১৯৯২

(সাতান্ন)
শূন্য হতে চাই যতোক্ষন পর্যন্ত না আছি
অবয়ব খুঁজে দেখেছি সময় অশ্বগামী
ছিল যারা কাছে তারাও উধাও ছায়াপথে
বোধি-বৃক্ষ তলে দোতারাটি ভগ্ন পড়ে আছে

হবোকেন, নিউজার্সি; এপ্রিল ২৬, ১৯৯২


(আটান্ন)

প্রকৃতির মূলে হাত রাখি, নিজেকে গুটাই আর
ভাবি- পাখি কি বৃক্ষের মতো আলো অভিসারী
গোধূলির সীমারেখা ধরে পিতা-পুত্রী চলে গেলে
জলের জরায়ু জুড়ে মানুষের যাওয়া-আসা দেখি

পাথ-ট্রেন, নিউজার্সি; জুন ২০, ১৯৯২


(উনষাট)

প্রবাহের দিকে গিয়ে স্তদ্ধ, অখণ্ড পাথর যেন
শূন্য সময়ের দেহ জুড়ে নগ্ন-প্রায় যীশু আমি
আমার স্বপ্নের অবয়বে কোন এক বৃক্ষ আজ
পাতা ধরে, যদিও এখন সাদা বরফের দিন

মার্লবোরো, নিউজার্সি; মার্চ ১৯, ১৯৯৩


(ষাট)
কোন অভিষেক নেই, দিনগুলো শুধু পুড়ে যায়
প্রজাপতি মৃত, বল্গাহীন সময়ের এই শুরু
রঙধনু বিভ্রম নিয়ে কোন দেহ নেই, আছে দ্রুতি
এই স্বাভাবিক, গাধার কানের মতো ঝুলে আছি

মার্লবোরো, নিউজার্সি; মে ২০, ১৯৯৩


(একষট্টি)
নিরালম্ব পাতা, আঁকো বনভূমি শূন্য এই দেহে
লালা, শুক্ররস ধরে রাখে সময়ের বীজকণা
উঠে গেছি টাওয়ারের শীর্ষে, পারদ প্রবাহ যেন
জলের প্রবাহে সময়ের সিড়িগুলো দেখি লুপ্ত

নিউজার্সি-নিউইয়র্ক ট্রানসিট; মে ২৫, ১৯৯৩


(বাষট্টি)
দূরত্বে উধাও এ পৃথিবী । স্বভাবের পিপীলিকা
মৃত । দ্রুতযানে ছায়ার আতঙ্ক নামে এই দেহে
নির্বাক ছবির মতো মানুষেরা থম্কে আছে, তবু
শিশ্নের আনন্দে আত্মহারা শিশু আজ ফিরছে ঘরে

অপ্টিক্যাল ওয়েভ-গাইড ল্যাব, এন-জে-আই-টি; মে ২৭, ১৯৯৩


(তেষট্টি)

নিবিড় জলের তলে আর কতোকাল
রোদের পিপাসা নিয়ে পাড়ে উঠে দেখি
গভীর আঁধার । নিবিড় বৃষ্টির মাঝে
সৃষ্টির বেদনা, হাতে হাত অনুপম

কলাবাগান, ঢাকা; জুন ১৫, ১৯৮৯


(চৌষট্টি)

প্রতিটি সকাল পৃথিবীর ভরকেন্দ্র ধরে
রাতের আঁধার তাকে করে নিরালম্ব পাতা
নির্বাক ছবির দৃশ্যে এইভাবে বহুদিন
যদিও পাথর ভেঙ্গে আজ জলের প্রবাহ

মার্লবোরো, নিউজার্সি; মে ২৮, ১৯৯৩



(রচনাকালঃ ১৯৮৯-১৯৯৩)

1 টি মন্তব্য:

  1. ভালো লাগলো আপনার ব্লগস্পটটি। ফেসবুকে জুয়েইরিয়াহ আমাকে এটার লিংক দিয়েছে।

    আমি আবার এই হৃৎকলমের লিংক লটকে দিয়েছি এখানে : http://chorakobita.blogspot.com/

    ঘুরে আসতে পারেন।
    ধন্যবাদ দাদাবাবু
    রণদীপম বসু

    উত্তরমুছুন