শনিবার, ২ জানুয়ারী, ২০১০

কবিতাগুচ্ছ

কবিতাগুচ্ছ
সৈয়দ আফসার

কুড়ি বছর পর
.............
কিসে যেন রেগে গেলে... তার মানে
হারানো কান্নাও হতে পারে গোপনে
আরো তিন-তিনটি বছর পর...
সবই বুঝি মৃদু ত্রুটি কাঁচা মাংশের ঘ্রাণে
ওই মুখ! ‘বর্ণিত হবার লোভে’ লাজুক বাগানে
মনে ও বনে

এসব ঘটনাপ্রবাহ কুড়ি বছর পর কবিকে চেনে
শেষ দিবসে আমি যখন কিছু কথা জমিয়ে রাখি
কাঁধেপিঠে ধূলির নগরে
কাঁপা হাতের আড়াল থেকে সর্বস্ব দাও
অতি-গোপনে



বাসমতি ঘ্রাণ
...........
কপাল বলে কথা! যা ভোলা যায় না
কখনো স্থির অথবা অভিশপ্ত অস্থির
ভাগ্য সেও পথিপার্শ্বে একার-
পথভোলা... অভিযুক্ত যাযাবর
যদি তিরস্কার করো, তাতেও অহংকার
ইর্ষা যথারীতি সদয়, হৃদয় পুড়বার
কারণ-
তোমার অঙ্গুরীর স্পর্শ তাজ্জব ব্যাপার!
ভেজা হাতে চাল ধোঁয়ার তরতাজা ঘ্রাণ
পাচ্ছি-
ধোঁয়া ওঠা বাসমতি ভাতের উপর


ফেরারি পর্ব ৪
............
আর ক’টা দিন পর পূর্ণতা পাবে, পূর্ণ হবে ষোলকলা; সেদিন তোমার হাসির উপর দাঁড়িয়ে রবে আমার কান্না... কথা বলার আগে গাথা-গল্পকথা শুনে শুকিয়ে যাচ্ছে গলা। যদি বলি পুরোটাই ভুল টার্মের হাত ধরে ঘুরে আসা লতানো কথা-টথা। অন্য ধারাবাহিকতা। আর ক’টা দিন পর আমিও হারাবো পাঁচ-দশ-বিশ পয়সার মত অঙ্গের সচলতা। তুমি তাকালেই দেখবে জল থেকে উড়ে আসা হিমেল বাতাস, তিন টুকরো সিগারেটের ছাই, অঙ্গে চেপে ধরা অসুখ-বিসুখ কিংবা ঘুমের রেনেসাঁ... ভিনদেশে মায়ের কথা আজ বেশি মনে পড়ছে। কারণ নিরানন্দে সময় কাটে প্যান্ট পকেটে চাবিশব্দের গান শুনে, হবো অধিকার বিনয়! মূল্যবান নিঃসঙ্গতায়... তাই মনগড়া শরীর ঘেঁসে বসা প্রগল্ভ সমঝোতা। আর ক’টা দিন পর আসা-যাওয়া পশ্চাত ব্যাকুলতা।

আয়না
.....
আয়না নিজের সৌন্দর্য যাচাই করতে শিখায়
আয়না নিজেকে জানতে, জানাতে শুদ্ধির পথ দেখায়
এ-বিশ্বাসে সংকোচ ছাড়াই আলোড়িত! বিলোড়িত কল্পনা
মর্মগ্রহণতা তোমার চোখে... চোখ রেখে যদি বলি-
চোখ মনের আয়না

লুকোচুরিতে হারাতে চাই না বলে এতটা নৈর্কট্য
এতটা সৌহার্দ্য ছুঁতে পারা গেল; কিন্তু প্রতিসত্য
প্রতিদিন আয়নার মুখ দেখার কথা মনেই থাকে না
এরূপ কথা বা রচনা অন্য একটি হাওয়ায় উড়ে গেল
তুমি কারো এসেন্সটুকু ভুলে খুলে নিলে

সারাদিনের পাপগুলো যখন মনের আয়নায় খুলে খুলে দেখি
পাপে-তাপে আয়না আর নিজের ছবির কাছে দূর্বল হতে থাকি


একশ্বাসে দীর্ঘশ্বাস
............
স্মৃতির করাঘাতে অসংখ্য মুখ দেখে
চাপা ক্রোধে নিজেই পুড়ি, কিছুই জানলে না
পাঁজরের নিধি
শেষ অংশে পরাজিত করে বললে- এভাবে
চলতে পারে না; তারচে’ বসো একশ্বাসে
দীর্ঘশ্বাস শুনি

আমাকে ব্যবহার করো চঁওকি; দিবস রজনী


অশ্রুকথা
........
নিজের ভেতর হরদম ওঠা-নামা ফ্রকের ছায়া
তাকে চিনতে পারিনি, তুমি রক্ত নিয়ে এসো খামাখা
দেখো আমি ক্রমাগত গুটিয়ে নিচ্ছি নিজেকে
সারারাত জেগে থাকল ঘুম... দেখে যাও
সঙ্গ দাও
ওহো তিরিশের সুপ্তকাঙ্খা শোকার্ত!
বলছি মমতাবশত
দৃষ্টি মেললেই দেখি বুকপকেটে কম্পন কুড়াচ্ছো
কথা বলার আগে অধীর বুকে জমিয়ে রাখছো
কী কথা! কার কথা
গোপনে যত আনন্দ-ব্যর্থতা
আসক্তি একই রকম প্রায়; দেহসুদ্ধ অশ্রুকথা


স্বস্থি
...
শীত রাতে তোমার খোটা খেতে খেতে
স্বস্থি এমন সর্বভূক হলো
যত ভাবছি ততই ভাল লাগছে, কলঙ্ক!

ভাবছি নামমাত্র চোখ বন্ধ করে, পার্কে

প্রকাশ্যে আমার জিজ্ঞাসা শ্বাসরূদ্ধ হলে
বলার অপেক্ষা, কিছুই থাকে না...
কথকতা তাও অকার্যকারিতা

শীতরাতে তোমার খোটা খেতে খেতে
শীতের তীব্রতা সেও চায় দেওয়ালে শোতে



পাপড়ি
.....
মিশে যাচ্ছো অনেক দূরে, স্তব্ধতায়-গোপনে
স্পর্শ-লোভে-প্রাপ্তি কিছুই পাইনি কুশলচক্রে
তিনটি পাপড়ি সাবলীল ভঙিমায় নাড়ালে একাকি
স্থির হয়ে দাঁড়াতে পারে না অনুভূতি... এতোদিনে
তারাও জেনে গেছে-
একই বৃন্তে ঘুরে নিজগৃহকোণে মৃত প্রায় আমি

বলছি পরাগ রেণু, কোথায় পাবে এতো এতো
মৌমাছি?
সে কথা শুনলে তুমি হাসো
হাসতে হাসতে কিছু একটা বলো
কাঁধে রেখে হাত, বাকিটুকু থামাও

নিজের তাগিদে বীথি ছড়ালে আশে-পাশে চিরদিন
আমাকে কোন দোষে জড়াতে চাও? ফেলে আসা দিন



বিষদাঁত
......
সে দিনের পর বলছি লঘু-শোকে
অনেক দূরে দাঁড়ালেও নেই নিষ্কৃতি
সব নিষেধ ভেঙে সঙ্গ দাও
দিনশেষে বিষদাঁত নাড়াও
আজ তবে পাঠ হউক, অন্য কিছু
অন্যান্য কথা
উত্তরে খুলছো অসহায়,দক্ষিণের
বাতাসে আমি তত ভাল নয়

আজ তবে কিছু রোদ ঝড়ু–ক ছদ্মবেসে
জড়িয়ে থাক্ সদাসর্তক সূর্য ওঠার আগে



অভিযোগ পত্র
.........
একত্রে হেঁটে ‘যত পারো চুমো খেয়ো’
এই শীতের দেশে ভিন্নরূপ আদ্রঠোঁটে
পুর্নবার অর্ধেক দ্বিমত তোমার লোকচক্ষু সম্মানে
বিগত দিনের মতো অশ্রুপতন চকিতভ্রমে
অবশ্য নাও হতে পারে সঘন সঙ্গমে

স্পর্শে কোন অভিযোগ নেই, সেও বলছে
কাঙ্খা যত তাও বুঝো; খুঁজো পুরো দশ আঙুলে
নিজ দেহে চেপে ধরি শোক আশ্রয় দেওয়ালে
সন্দেহ সাড়া পেতে পেতে শেষরাত্রি নিকটে রাখছি
শুন্যডিগ্রি উত্তাপে ঘুম-বড়ি খেয়ে

চকিতভ্রমে একাগ্রতা আমাদের সঙ্গমতৃপ্তি
জোড়া চোখে ইচ্ছে মরে গেলে চাই না সম্মতি


ছায়াস্বপ্ন
.......
পুনরায় ফেরার আগে কি এমন
ছোট্ট-ছোট্ট কথা বলার থাকে যে
তোমাকে বারবার বলতে ইচ্ছে করে
অর্ধেক হৃদয়!
হিয়ার ভেতর আমাকেও জাগাও কান্নায়
হারানো দিনে পুরনো কথাও সন্দেহ জাগায়

পথে ঘুরিফিরি সহস্র মুখ ভালো লাগে ছায়ায়
পুনরায় ফেরার আগে তুমি বলো
সব ছায়া কি আর একসাথে ভালোবাসা যায়?


আর্তনাদ
.....
বন্ধু যারা দুঃখ পেয়েছো রূপাদের কথায়
দুঃখকে করুণা করো না, হাড়ে-র ভাষায়
মিশে যাচ্ছো সম্পর্কে তৎক্ষণাত...
অল্পই তফাৎ
এই যা পান করা তামাকপাতা; শুশ্রুষা আহা!
সুখের ভেতর দুঃখকে শেখানো হচ্ছে চোখের প্রণয়

ওভাবে আমরা ভাবলে দেখতো কেমন হয়?
গাছের ছায়াগুলো হাসে পাখির ডানায়
রূপাদের ছায়া মিশে যাচ্ছে ঘাসের পাতায়

বন্ধু যারা দুঃখ পেয়েছো সম-বেদনা তোমাদের
পোড়াবাড়ির, রূপাদের, চক্ষুর... তারপর

আর্তনাদ কেঁদো না আর!



মন
....
মন কেটে কেটে মুখস্থ করছি লঘুশোক
তাকে মনে রেখে উড়তে দিয়েছি
আকাশের ওপারে
কতটা ওজন ওই আর্ত-বাতাসের!
জানা হলো না হিমালয় পাড়ে
বলছি সম্ভাবনা-দ্বিধা-ক্ষুধা আঁকার ভেতর
নিজের জন্য গোপন রাখছি কিছু
ঘূর্ণন, ঘর্ষণ
কাঁটা মনে কল্পনা, ঠিক সন্ধ্যায়
আমার জন্য ঝুলিয়ে রাখুন ভাবনায়


নির্বাসন লিপি
........
পাতাঝরা দিনে জল থেকে উঠে প্রথম প্রণাম
মৃদু বাতাসে লাফিয়ে ওঠা কিছু মাটির ঘ্রাণ
ঢলা হাতের শ্বাস নাকে-মুখে টেনে
মায়ের কোলে প্রতিদিন ঘুমপাড়ানি গান
ও-মা তোমার আঁচলে বাইন্ধা রাখছি
প্রাণ, জন্মের ঋণ

২.
কি আশ্চর্য! স্মৃতিকথা; বিগত বছরের
আশা ও ব্যর্থতা
রূপছদ্মবেশ তার কাছে আছে
বিগত দিনের মতো জমা
আমারও আছে; থাকবে নিজের সন্দেহ
সে সব দু’বারের বেশি কখনো ভাবিনি
বিব্রত-শ্বাসরোধি
তাকে চিনিনি... কিছু বলতে গিয়েও পারিনি
সেদিন তোমার বারণ শুনে হারালাম ভয়!
কিছুই জিজ্ঞেস করিনি

৩.
তোমার শাড়ির আঁচলে আমার কিছু দেনা বাকি
পেয়েও যেতে পারো নিদিষ্ট দিনে অনির্দেশে
মর্ম ও রীতি
কিন্তু পার্থক্য যা দেখি বির্তকের হাতছানি
স্পর্শমাত্র আকর্ষনহীন, আততায়ী; অস্থায়ী
সঙ্গমক্লান্তি
স্কুল জীবনের স্মৃতি মানে, রাফ-খাতায় আঁকা
একটি ফুলে; দুটি পাতা কেবল তুমি আর আমি
আমাকে যদি প্রশ্ন করো রূপ বৈচিত্রের সৌন্দর্য কী?
কিছু না ভেবেই বলবো ভোরের আলো-
যা চোখ খুলে দেখি, যা লক্ষ্য করি...
কারণ, স্পর্শের আগে দেখার আনন্দ-ই বেশি

৪.
যদি প্রশ্ন করো এমন ঠান্ডার দেশে দেহের উত্তাপ
কেমন; বলছি শোন তবে এক্স-ওয়াই-জেড
তীব্রতার ভেতর নড়ছি-চড়ছি কখনও নিরুদ্দেশ
আর কী কহিব তুমি প্রাজ্ঞনারী; দেহের বিপ্লব
নিজেও জানি না কেন প্রত্যেকবার তোমায়
দ্বিতীয়দর্পনে রাখছি, লিপষ্টিক, আইলিনার
মাশকারা...
আর কত কি?
পারফিউম কোন ব্যান্ডের তাও জানিনি

৫.
মাকে দূরে রেখে ক্ষুদ্র মনে জমছে কথকতা
বাল্যসখা আশা-র মতো আনন্দ দেয়
যেমন আনন্দ মায়ের বুকে মাথা রাখলে
দোয়া-মায়া-মমতা লুকানো মায়ের আঁচলে
ও-মা তুমি দোয়া করো, ভালো থাকা সারাক্ষণ
আর ক’টা দিন যাক, তারপর সবঠিকটাক
শীতে-প্রীতে পুড়ছি আমি ওহো কার্তিক-বর্ষা-শ্রাবণ
ব্যর্থতাই কি জীবন? জিজ্ঞাসা না-করাই ভালো
সে যে স্বেচ্ছায় হয়েছে নির্বাসন!

_____________♣_____________
কবিতাগুচ্ছ প্রকাশিত হলো :
নি স র্গ
শিল্প সাহিত্য বিষয়ক খুদে পত্রিকা
বর্ষ ২৪ সংখ্যা ১ নভেম্বর ২০০৯

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন