কুলদা রায়ের কাকমানুষের চকখড়ির প্রথম পর্বের ধারাবাহিক
যে কথা রক্তের, হাহাকারের
নোটন কবিতা লিখে পাঠিয়ে দিল খুলনার একটা পত্রিকায়। সঙ্গে একটা চিঠি সম্পাদককে- আপনার পত্রিকা বাংলা সাহিত্যের মর্যাদা বৃদ্ধি করিতেছে। কাগজের নীচে রুল টানা আরেকটি কাগজ রেখে গোটা গোটা অক্ষরে লেখা। কবিতা ছাপা হল না। কষ্ট পাওয়ার আগেই একজন ছোট খাটো লোক এলেন ওদের বাসায়। হালকা পাতলা। গৌরবর্ণ। হাসি হাসি মুখ। বললেন- আমি তোমাদের চিন্ময়দা। চিন্ময় গোলদার।
মৃদু বকা দিলেন- কেনো নোটন এ ধরনের তেলমার্কা চিঠি লিখল। বললেন, আমাদের পত্রিকা বাংলা সাহিত্যের মর্যাদা রক্ষার জন্য ছাপা হয় না।
-কেন ছাপা হয়?
-ছাপা হয়- শ্রমিক শ্রেণীর এক নায়কতন্ত্র কায়েমের জন্য।
চিন্ময়দার এ কথাটা বেশ খটোমটো মনে হল। তখনতো কাঁচা মাথা। লেবার চিনি। শ্রমিকও অল্পস্বপ্ল চিনি। শ্রেণীটা বুঝি না। এক নায়কতন্ত্র তো আরও কঠিন। তখন নায়ক বলতে নায়করাজ রাজ্জাককে চিনি। উত্তম কুমারের নাম শুনিনি। ইন্ডিয়ার সিনেমা দেখা হয়নি। তন্ত্রমন্ত্র বিষয়গুলো উচ্চারণ করতেই মনে হল, কামরূপ কামাখ্যার ব্যাপার। মন্ত্র পড়ে ফুঁ দিলে লাঠি সর্প হয়ে ফোঁস করে উঠবে। ছোবল দেবে। গা শিউরে ওঠার মত বিষয়।
চিন্ময়দা পোড় খাওয়া লোক। বুঝতেন আমাদের মুর্খতা। অতীব ধৈর্য্যের সঙ্গে কদিন খুব করে বোঝালেন- শ্রমিক, শ্রেণী, এক নায়কতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, সর্বহারা, বিপ্লব। লাল লাল কতগুলো বই দিলেন পড়তে।
নোটন কদিন বইগুলো নিয়ে আমবাগানে ঘোরাঘুরি করল। একদিন বলল, কবিতা লিখতে গেলে কি এইসব বই পড়তে হবে?
ঠা ঠা করে হাসলেন চিন্ময়দা। বললেন, অবশ্যই। অইসব ফুল পাখি চান তারা নিয়ে কবিতা হয় নাকি?
নোটন বলে উঠল, না, না, আমি বটগাছ নিয়ে কবিতা লিখেছি - গরীব বটগাছ খুব দুঃখী একটি বটগাছ - লোকজন বটগাছের ছায়ায় বসে বিশ্রাম নেয়। আর যাওয়ার সময় একটা ডাল ভেঙ্গে নেয়। বটগাছ কিছু বলতে পারে না.. এর মুখ নেই। খুব অসহায় নির্যাতিত।
চিন্ময়দা এসব কিছুই শুনলেন না। তিনি বুর্জোয়াদের সাহিত্যকর্ম নিয়ে দীর্ঘ এক আলাপ জুড়ে দিলেন। আমাদের মাথা ঝা ঝা করতে লাগল। নোটন এরপর কবিতা লেখাই ছেড়ে দিল। বাপের সঙ্গে খাতাপত্র লেখা শুরু করল। ও এখন আতদালতের মুহুরী।
চিন্ময়দা একদিন নিয়ে গেলেন ঘোষের চরে। রাত্রিবেলা। অঘ্রাণ মাস। হালকা কুয়াশা পড়েছে। চাঁদ উঠেছে। ফুল ফুটেছে। কদমতলায় কে? পিন্টু ভাই। শসা ক্ষেতের পাশে পিন্টু বসেছিলেন। আরও দুচারজন। সবাই অচেনা। ওরা আলাপ করলেন- শ্রেণী শত্রুদের নিয়ে। বিপ্লবের জন্য শ্রেণী শত্রু খতমের প্রয়োজনীয়তার কথা। বললেন, এদের রেখে দিলে সর্বহারাদের বিপ্লব সফল হবে না।
ঘোষের চরের একপাশে যাত্রাপালার প্যান্ডেল। এটা বন্ধ করার জন্য মাদ্রাসার হুজুরেরা মিছিল মিটিং করেছে কদিন। আমরা শুনতে পাচ্ছিলাম সম্মিলিত যন্ত্র সঙ্গীতের বাদন। কানে আসছিল- বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজদ্দৌলার হাহাকার। পিন্টু ভাই বললেন, এটা বুর্জোয়াদের পোষা সংস্কৃতি- বিপ্লবের জন্য বাঁধা। একজন লোক যাত্রা প্যান্ডেল থেকে হালকা হতে বাইরে এলো। অন্ধকার দেখে এগিয়ে গেল। আরাম করে বসল। আর পিন্টু ভাই অবাক করে বলে বললেন, এখনই সময় একটা বুর্জোয়া খতম করার।
তিনি একজনকে হুকুম দিলেন- যা, ওকে ধরে নিয়ে আয়। লোকটা একটু ভড়কে গেলেন। বললেন, আজ এরকম তো কোনো প্লান ছিল না কমরেড। তাছাড়া এই পোলাপানগো সামনে?
হুংকার দিয়ে উঠলেন কমরেড পিন্টু ভাই, প্লান ছিল না তো কী হয়েছে? এখন করলাম। আর ওদেরতো তৈরি করতে হবে।
তিনি নিজেই এগিয়ে গেলেন।
আমাদেরকে চিন্ময়দা সেরাতে নদী পার করে দিয়েছিলেন।
পরদিন যাত্রাপালা বন্ধ হয়ে গেল। যাত্রা প্যান্ডেলের পাশে একটা লাশ পাওয়া গেল। মাথা নেই। নুনু কাটা। একজন প্রৌঢ় লোক অবাক হয়ে বললেন, নুনুটা দোষ করল কী?
নুনু হল উৎপাদনের উপায়। উৎপাদনের উপায়সমুহের মালিক হল বুর্জোয়া। নুনু কাটা বুর্জোয়াদের কাটার প্রতীক। চিন্ময়দা এরকম ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন।
আমাদের শহরে পৌরসভার নির্বাচন হল। প্রার্থী পনু মিয়া। আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবু মিয়া তার কাছে হেরে গেলেন। নিচু পাড়ার ভোট সাবু মিয়া পাননি। নিচু পাড়া হল নমু পাড়া। দুএকজন ফিসফাস করলেন, ভোটের রাতে পিন্টু ভাই নিচু পাড়ায় এসেছিলেন । ঘরে ঘরে তার পদধূলি পড়েছে।
কালা মিয়া একাত্তরে শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন। তার আঠারো সন্তান। পনু মিয়া চতুর্থতম। একদিন পিন্টু ভাই আমাকে ডেকে নিয়ে গেলেন কালা মিয়ার লাল বাড়িতে। কালা মিয়া বসেছিলেন নিচে। বললেন, পিন্টু ফিরিছিস?
পিন্টু ভাই সিড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে বললেন, হ্যা আব্বা।
এই বাড়িটার চিলে কোঠার ঘরটি অদ্ভুত। টিভি, ক্যাসেট প্লেয়ার, ক্যামেরা...। একটি বায়োনোকুলার আছে জানালায় কাছে। খেতে দিলেন- আপেল। এবং এক বোতল পেপসি। জীবনে সেই প্রথম পেপসি। ঢেকুর উঠতেই চোখে পড়ল, টেবিলের উপরে পিস্তল। পিন্টু ভাই ধরালেন একটা সিগারেট। তীব্র গন্ধ। আমার কাছে এগিয়ে এলেন কমরেড পিন্টু। ঠাস করে একটা চড় কষালেন। মাথাটা চক্কর দিয়ে উঠল।
কদিন পরে একটি মেয়ে এলো আমার কাছে। চিন্ময়দার বোন। বলল, দাদা থাকতে পারল না। চলে গেছে। একটা কাগজ দিল হাতে। চিন্ময়দার লেখা, অনেক প্রতিক্রিয়াশীল বিপ্লবীদলে ঢুকে পড়েছে। এটা কোনো সমস্যা না। বিপ্লবীরা একদিন জয়ী হবে। বিপ্লব কখনো পরাস্ত হয় না। প্রস্তুত থেকো।
চিন্ময়দার বোন ডুকরে কেঁদে উঠল। বলল, বাবা-মার খুব দুঃখ। দাদা কতো ভাল ছাত্র ছিল। পড়াশুনা ছেড়ে দিয়ে বিপ্লবের পথে গেল। ওর ইচ্ছে-বিপ্লব করবে। সর্বহারাদের বিপ্লব।
এর মাস খানেক পর চিন্ময়দার বোন, বাবা-মা উধাও হয়ে গেল অন্য এক পৃথিবীর পথে । ওদের বাড়িতে পনু মিয়া মস্ত একটা তালা ঝুলিয়ে দিলেন। দেখালেন একটা স্ট্যাম্প। চিন্ময়দার বাবার স্বাক্ষর সেখানে। টাকা ধার করেছিলেন। শোধ করতে পারেননি। বিনিময়ে এই জমি।
চিন্ময়দারা সত্যিকারের সর্বহারা হয়ে গেলেন।
সেদিন থেকে বুঝতে পেরেছি, সর্বহারাদের হারাবার কিছু নেই। জয় করবার জন্য আছে অন্য দুনিয়া।
নারাণকাকুর মেটিরিয়া মেডিকা
মডেল স্কুলের পাশে লম্বা চালাঘরটা। দুটো ঘর। একটা ধোপাখানা। অন্যটা নারানকাকুর হোমাপ্যাথী। মালিক রত্তন মোল্লা। লম্বা দোহারা চেহারা। রুটির দোকান ছিল। বন্ধ করে দিয়েছেন। পান খেতে খেতে বলেন- তোমাগো দাদী হলেন গে মোগোলগো মাইয়া। তার একটা উজ্জত আছে না!
একটা খটো মটো টেবিল, ঠ্যাং বান্ধা চেয়ার,একটা নড়বড়ে বেঞ্চি আর পাতা ছেড়া মেটিরিয়া মেডিকা... এই নিয়ে নারান কাকুর হোমাপ্যাথী। রোগী পত্তর নাই। চলে না।
একদিন আরেকটা টেবিল পড়ল অই ঘরে। নারান কাকু বললেন, ভাড়া দিতে অসুবিদা। সাবলেট আর কি। সাবেলেটে ওটা একটা রাজনীতির অফিস। ইউপিপি। ইউনাইটেড পিপলস পার্টি। বেড়ার গায়ে কাজী জাফরের ছবি। আর নয়াযুগ পত্রিকা। রাজনীতির লোকটি মুনসুর মোল্লা। কালো। মুখ গম্ভীর। হাফ শার্ট। মাথায় লেনিন টুপি। পায়ে সাদা কেডস। একদিন বিকেলে আমাদের ঝালমুড়ি খাওয়ালেন। বললেন, কাল ভোর ভোর আসপি।
ভোরেই এসেছিলাম। কিন্তু দেরী হয়ে গেল-খোল খুঁজতে খুঁজতে। খোল পাইতো করতাল পাই না। ততক্ষণে ইউপিপির অফিসের সামনে মুনসুর মোল্লা দ্রুত পায়চারী করছেন। হাতের মুঠো একবার খুলছেন আর বন্ধ করছেন। মাথা ঝাকাতে ঝাকাতে বিরক্তির সুরে বললেন-দেরী করলা ক্যান কমরেড। বিপ্লবের টেরেন কি তোমাগো জন্যি বইসা থাকপি?
ট্রেন বসে থেমেছিল কিনা জানি না। কিন্তু সেদিন আমাদের পাছায় বেতের দাগ বসে গিয়েছিল। প্রভাতফেরীতে আমরা কজন তারস্বরে গাইছি.. মুক্তির মন্দির সোপান তলে... কত প্রাণ হল বলিদান। মুছে যাবে অশ্রুজলে...। কানা কেষ্টোর মতো কি আর গাইতে পারি। আমাদের প্রভাত ফেরীটা লঞ্চঘাটে মোড় নিতেই পল্টা বলল, অই তর ছোটো মামা আইছে। হাতে ঝোলা গুড়। পেছন থেকে লাল ঝান্ডা নিয়ে একটা মিছিল বেরিয়ে গেলো।
আমি কি তখন ঝোলা গুড়ে আছি। মুনসুর মোল্লা বললেন, জোরে জোরে গাও। বিপ্লব আইতাছে। গানের জোরে মুনি সিংয়ের শোদনবাদীগো চাপা দ্যাও। হালাগো জইন্য বিপ্লবের দেরী হইতাছে।
বাড়ী ফিরে দেখি বাবা রেগে মেগে আছেন। পাশে ছোটোমামা। বাবা ঝপাঝপ বেতের বাড়ি মারতে থাকলেন। বললেন- হারামজাদা, তুই রাজাকারদের মিছিলে গিছিলি। রাজাকারের লগে মিছিল করছিস! বললাম- বিপ্লবের মিছিল...। বাবা আরও রেগে গেলেন। বললেন, তর বিপ্লবের পোঙা মারি।
বিজিতেন ডাক্তারের তিন টাকার দাওয়াই আমার পাছার দাগ মুছতে পারনি। আমার বিয়ের বাসররাতে মহা সমস্যা হয়ে গিয়েছিল। বারবার লুকোনোর চেষ্টা করলেও ঠিকই বউয়ের কাছে ধরা পড়ে গেলাম। নতুন বউ মুখ ফাটিয়ে বুক ফাটিয়ে বলে বসল- এইডা কি? সে রাতে আমার কোনো ব্যাখ্যাই কাজে দিল না। বিড়ালও মারা হল না। অনেকগুলো রাত কালরাত্রি হয়ে গেল।
বাবা বেত মারতে মারতে হাপিয়ে উঠলেন। নারিকেল গাছের গোড়ায় উবু হয়ে বসে ফোপাতে লাগলেন। ছোটো মামা আমার ছিড়ে যাওয়া প্যান্ট পাল্টে দিতে দিতে বলল- ও হল খুনী। মালেঙ্গার খুনী মুনসুর। একাত্তরে যারা পলাইছিল মালেঙ্গার বিলে তাদের নিজির হাত ব্রাশ ফায়ার করে মারিছে। মালেঙ্গা গ্রামের কোনো হিন্দু ফ্যামিলি এর হাত থিকা রেহাই প্য়া নাই। আওয়ামী লীগের কোনো মুসলমানরেও বাচায়া রাখে নাই। ঘরবাড়ি লুট করছে। জ্বালায়া পুড়ায়ে দিছে। এতদিন পলায়া ছিল।
কি আর করা। স্কুলে পড়তে পড়তে শুনি কমরেড কাজী জাফর আহমদ জিয়াউর রহমানের সরকারে শিক্ষা মন্ত্রী হিসাবে যোগ দিয়েছেন। আর মুনসুর মোল্লাও নারানকাকুকে দোকান থেকে বের করে দিয়েছেন। কাকুর সংগতি নেই। এরপর বটতলায় মেটিরিয়া মেডিকা নিয়ে বসলেন। কাজী জাফর তখন জিয়ার দলে যোগ না দিলেও মুনসুর মোল্লা কিন্তু ইউপিপিতে ফিরে এলেন না। তার ট্রেন কিন্তু বসে রইল না। ট্রেনের নাম হয়ে গেল জাতীয়তাবাদী। তখন তিনি আর খুনী মুনসুর না, বিপ্লবী মুনসুর না, কালা মুনসুর। এরপর জিয়া মারা গেলে এরশাদের সংগে। এরশাদের পরে জিয়ার স্ত্রীর দলে। তিনি এখন এই বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদী দলের একটি জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক।
একটু থেমে ঘোরের মাঝে টিপকলে চাপ
দিতেই জল, গলগলিয়ে উঠে এলো
জল সে নয়, রক্তঢল! আঁতকে উঠে
তফাৎ যাই, রক্তে ভাসা শাদা শাঁখা
ভাঙা চুড়ি দেখতে পাই ... 'কার এ শাঁখা
ভাঙা চুড়ি? - কেঁদে ওঠেন কাজলদিদি
(তুষার গায়েন, একাত্তরের খনি, বৃষ্টির অন্তরত্রাস)
কাকমানুষের চকখড়ি
মা বলল, এই তোর সুখী দিদি।
সুখী দিদির লম্বা চুল। ঘন হয়ে নেমে গেছে পিঠ বেয়ে। গলায় আচঁল পেচানো। চোখ দুটো ম্লান। অন্ধকার জ্যোৎস্নার মত। মিট মিট করে জ্বলছে। বললাম, ও সুখী দিদি। তুমি কি আমাগো সুখী দিদি? চুপি দিদি? না, দুখী দিদি?
তার মুখে কথা নেই। ঝড়ের আগের বাতাসের মত নিঃশব্দ। বহুদিন পরে গোহাট ছেড়ে বেরিয়েছে। আমাদের উঠোনে এসেছে।
মা তখন ভাতের থালায় জল ঢেলে দিয়েছে। ধীরে ধীরে কাঁচিয়ে নিচ্ছে এঁটো। পিঁড়িটা একপাশে সরিয়ে রেখেছে। পুকুর ঘাটে চলে গেছে ।
সুখী দিদি উঠানোর মাঝখানে বসেছিল। ঘাসের উপরে। সেখানে এখন দাগ লেগে আছে। সুখী দিদি এইখানে বসেছিল। ঘর থেকেও বসার জায়গাটিকে দেখা যায়। এবং রাতেও।
মা তখন হাত জোড় করে বলে- ঠাকুর ঠাকুর। আর আমাদের ঘুমের ভিতরে একটি বাগান উঠে আসে।
গোহাটার কাছাকাছি ছবির বাগান। বাগানে ছবি নেই। লিচু গাছ আছে। এই লিচু খুব টক। কেউ খায় না। কিন্তু ছবির বাগানে আমাদের যেতে হয়। গেলে দেখা যায়- এই বাগানে ঘাসের উপরে সুখী দিদি বসে আছে। টিপ নেই। চুরি নেই। ফুলতোলা আঁচল নেই। পা দুখানি মুড়ে। নত মুখ। আর কেউ নেই। মাথার উপরে একটি দাড় কাক উড়ছে। খুব কালো। কুচকুচে। সুখী দিদির চুলের মত দাড় কাকটি। বাড়ি ভুষুণ্ডির মাঠ।
পাশের বাড়িটি সাধু পরমানন্দের। পাড়ার ইনজেকশন ডাক্তার। টুং টাং করে করে তার সাইকেল বেজে ওঠে। বহুদূর থেকে শোনা যায়। তার সম্বল অনেক পুরনো একটি সিরিঞ্জ। দাগ টাগ উঠে গেছে।
সাধু পরমানন্দ ডাক্তার সারাক্ষণ বারান্দায় বসে আদিপুস্তক পাঠ করে। আর তার বুড়ি বউ কমলা দিদিমনি উঠোনের একধারে খোলা চুলোয় রান্না করে। রসুন দিয়ে বেলে মাছ। আর নটে শাক।
আমরা যেদিন ছবির বাগানে চলে গেছি চুপি চুপি টকা স্বাদ কয়েকটি লিচুর ঘোরে। সুখী দিদির ছায়াটি শান্ত হাওয়ায় কাপছে। সাধু পরমানন্দের বাড়িটির নিমতলার নিচে কে একজন খুব ফর্শা লিকলিকে লোক উঁকি দিয়েছে। লম্বাটে মুখ। খোঁচা খোঁচা দাড়ি। হাপ প্যান্ট পরা। ফিস ফিস করে বলছে- অ সুখী? সুখী?
সুখী দিদি ততক্ষণে ঘাসের উপর থেকে উঠে পড়েছে। পুকুরঘাটে নেমে গেছে। জলের কলসি নিয়ে আবার উঠে গেছে। শ্লথ পায়ে। নতমুখে।
লোকটি চেঁচিয়ে ডাকছে, অ সুখী? সুখী?
সুখী দিদি ঘাসের উপর দিয়ে ঝরা পাতার উপর দিয়ে ছায়ার উপর দিয়ে খণ্ড খণ্ড নৈশব্দের মধ্যে দিয়ে ছবির বাগানের মধ্যে দিয়ে হেঁটে চলে গেছে। সাধু পরমানন্দের বাড়ির পিছনের বাড়িটিতে। ওই বাড়িটিতে সুখী দিদির ছোট একটি ঘর। জং ধরা চালে নীলমিণ লতা। দুখীরাম সেই কবে এনেছিল। তাদের পুকুরটিতে গোহাটের গরুগুলি মুখ দেখে আর জল খায়। হাম্বা করে ডাক দেয়। সুখী দিদি এই ছবির বাগান থেকে এই বাড়িটিতে যেতে যেতে তার পায়ের ছাপটি ফেলে যাচ্ছে ঘাসের উপরে। সেখান থেকে জোনাকীর পোকার মত মৃদু মৃদু আলো বেরুচ্ছে।
আর এই দেখে লিকলিকে লোকটির দুইচোখ বেরিয়ে এসেছে। গলা থেকে বেরুচ্ছে গর গর শব্দ।
সাধু পরমানন্দের বৌ কমলা দিদিমনি রান্না বান্না ফেলে দৌড়ে এসেছে । লোকটিকে পেছন থেকে টেনে ধরল। লোকটির গলার রগ ফুলে উঠেছে। কপালে ঘাম। ছুটে যাওয়ার ইচ্ছে। কিন্তু সত্যি সত্যি যাওয়ার ইচ্ছে নেই। সুখী দিদির নাম ধরে ডেকে যাওয়াই তার জন্য ভয়াবহ এবং একমাত্র নিয়তি। কমলা দিদিমনি বলছে, মথি উদয়। মথি উদয়। ঘরে আয়। ঘরে আয় বাবা।
যেতে যেতে ফিরে ফিরে ছবির বাগানটিকে দেখতে লাগল মথি উদয় নামের এই মানুষটি । বাগানের মধ্যেকার নতমুখী মানুষটিকে। তার চলে যাওয়াটিকে। উড়তে থাকা কালো কাকটিকে। সাধু পরমানন্দ তখনো সুর করে বলছে-
‘ঈশ্বর কহিলেন, রাত্রি হইতে দিবসকে বিভিন্ন করণার্থে আকাশমণ্ডলের বিতানে জ্যোতির্গণ হউক; সে সমস্ত চিহ্ণের জন্য, ঋতুর জন্য এবং দিবসের ও বৎসরের জন্য হউক; এবং পৃথিবীতে দীপ্তি দিবার জন্য দীপ বলিয়া আকাশমণ্ডলের বিতানে থাকুক; তাহাতে সেইরূপ হইল।‘
আমাদের এ পাড়ায় ছবির বাগান ছাড়াও একটি রাস্তা আছে- শহীদ মাহবুব রোড। আছে একটি ক্লাব । একটি টিনের চালের নিচে কিছু ছেলেরা কেরাম বোর্ড খেলে। আর বছরে দুইবার শিশুদের পিটি প্যারেড টিম নিয়ে সারা শহর ঘুরে বেড়ায়। গান করে-
এক সাগর রক্তের বিনিময়ে
বাংলার স্বাধীনতা আনলে যারা,
আমরা তোমাদের ভুলব না।
বছরে দুইদিন এই গানটি শুনতে আমাদের ভাল লাগে। এই দিনে ডাল খিচুড়ি। এইদিন লাল দোপাট্টা মল মল। এই দিন রাতের বেলা হাওয়াই বাজি। এই ডাল খিছুড়ির অন্যরকম স্বাদ। শহীদ মাহবুবের আম্মা নিজ হাতে রান্না করেন। তিনি আমাদের বড়ো চাচী। চুল পেকে এসেছে।
বড় চাচী একদিন আমাদের বাড়ি ছুটতে ছুটতে এসেছেন। হাতে তেল হলুদ মাখানো। মাকে বলছেন, ও বিনা, বিনা- শুনছ, সুখীকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
-কোন সুখী?
-দুখীরামের বউ। গোহাটার দুখীরাম। আমার মাহবুবের বন্ধু।
ততক্ষণে মা তুলসীতলাটি নিকিয়ে ঘরে ফিরে এসেছে। লক্ষ্মী ঠাকুরুনের সামনে গড় হয়ে বলছে, ঠাকুর ঠাকুর।
বড়চাচী ছুটছেন শহীদ মাহবুব ক্লাব ঘরে। ঘরের মধ্যে ছেলেরা টিভি দেখছে। নতুন। সাদা কালিতে টিভির গায়ে লেখা : দানবীর পনুমিয়া কর্তৃক উপহৃত। কে একজন তারস্বরে গান গাইছে কোমর দুলিয়ে দুলিয়ে- ওরে সালেকা , ওরে মালেকা। শহীদ মাহবুবের মা কিছু না বলে ঘরে ফিরে গেছেন । তার ছেলের ছবিটার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে কেঁদে ফেলছেন। ছেলেরা গাইছ- ওরে সালেকা/ ওরে মালেকা/ ফুলবানু পারলি না বাঁচাতে।
দুদিন পরেই শহরের মানুষ মধুমতির দিকে ছুটছেন। মধুমতি ছোট নদী। মরে আসছে। ওপারে চরে ক্ষিরার ক্ষেত। ক্ষীরার ক্ষেতের মধ্যে দিয়েও মানুষ আসছে। ফাঁকে ফাঁকে ক্ষিরা মুড়ি খাচ্ছে।
এই মধুমতির পাড়েই মড়াখোলা। এই নদীর জলে হাওয়া খোলা। এর মধ্যে সুখীদিদি বসে আছে। হাটু মুড়ে। অর্ধেক জলে- অর্ধেক স্থলে। পিঠ বেয়ে নেমেছে চুল। নত মুখ। আঁচলটা গলায় পেচানো। চোখের মধ্যে অন্ধকার জ্যোৎস্না। মাথার উপরে চুলের মত কালো এক দাড় কাক বসে আছে। নির্ঘুম। স্থির দুচোখ। দুজনে নড়ে না। চড়ে না। পাথরপ্রতিম।
এ দেখে কমরেড শওকত চৌধুরী খুব দৌঁড় ঝাপ করেছেন । ফর্শা মানুষ। হাটুর নিচে মাংসপেশীতে এখনো গেঁথে আছে একটি তরতাজা বুলেট। চলতে ফিরতে তিনি বেশ বুঝতে পারেন। গোলগাল মুখ। কয়েকজন মানুষকে নিয়ে তারস্বরে শহরময় চেচিয়েছেন, শহীদ দুখীরামের বাড়ি শত্রু সম্পত্তি করা চলবে না। বন্ধ কর। শহীদ দুখীরামের বাড়ি দখলবাজি চলবে না- বন্ধ কর।
কমরেড শওকত চৌধুরী তখন বেশি ফেড হয়ে ভাবছেন, মহাত্মা মার্কস সাহেব এর কি ব্যাখ্যা দিয়েছেন? অথবা লেনিন?
সবাই তখন নদীর পাড়ে। কাকমানুষ দেখতে ব্যস্ত। কেউ কেউ সিন্নি এনেছে। বলছে- সবই তার খেলা। কেউ কেউ প্রদীপ জ্বেলে গড় হচ্ছে। বলছে, ঠাকুর ঠাকুর।
এ সময়ে সাধু পরমানন্দের বাড়ির পাশের বাড়িটিতে দিনরাত ঘর তুলছে পনু মিয়া আর হাবিল মিয়া। তারা দুভাই নদীর পাড়ে যায়নি। যাওয়ার সময় নেই। মিস্ত্রীদের ঠং ঠাং শব্দ আর ক্লাবের ছেলেদের হল্লাবল্লার মাঝখানে লিকলিকে মথি উদয় চেঁচিয়ে মাঝে মাঝে বলছে- সুখী। অ সুখী। তোমাদের ঘর গেল কই?
এই রকম কোলাহলে পনু মিয়ার ভাই হাবিল মিয়ার কিঞ্চিৎ নেশা আসে। ঢক ঢক করে গিলেছে ধেনো মদ। মথি উদয়ের কাঁধে হাত রেখে হাবিল মিয়াও বলতে শুরু করেছে, সুখী। অ সুখী। তোমার ঘর গেল কই? তোমার নীলমণি লতাটি গেল কই?
মথি উদয় বলে কান্না কান্না গলায়। ব্যাকুল হয়ে। আর হাবিল মিয়া বলে শ্লেষ জড়ানো গলায়। গলা ধরে দুজনে দুরকমভাবে বলে। আর ধেনো মদ গেলে। মথি উদয়ের গলা দিয়ে নামে না। মাথার উপরে ঢেলে দেয়। আর বলে, অ সুখী। তুমি কোথায়? অ সুখী তোমার ঘর গেল কোথায়?
-পনু মিয়ার কাছে।
-পনু মিয়া কে?
- রাজাকারের চেয়ারম্যান।
-পনু মিয়া এখন কি?
-পৌরসভার চেয়ারম্যান।
- পনু মিয়া কেমন মানুষ?
-পোস্টারে লেখছে- তিনি সৎ মানুষ।
-এখন কি দরকার?
- দেয়ালে লেখছে, সৎ মানুষের সরকার।
রাত্রি বাড়ে। আকাশ থেকে জ্যোৎস্না নেমে যায়। দুইজন ধেনো লোক তারস্বরে এইরূপ মদমত্ত হয়ে নাচে। সাধু পরমানন্দ ডাক্তার আরও জোরে আদিপুস্তক কানের উপর চেপে ধরে।
‘তখন প্রভু কহিলেন, তুমি কি করেছ? তোমার ভাইকে তুমি হত্যা করেছে? তার রক্ত মাটির নিচ থেকে আমার উদ্দেশ্যে চিৎকার করছে। তুমি তোমার ভাইকে হত্যা করেছ এবং তোমার হাত থেকে তার রক্ত নেয়ার জন্যে পৃথিবী বিদীর্ণ হচ্ছে। তাই এখন আমি এই ভূমিকে অভিশাপ দেব। অতীতে তুমি গাছপালা লাগিয়েছ এবং গাছপালার ভালই বাড় বৃদ্ধি হয়েছে। কিন্তু এখন তুমি গাছপালা লাগাবে এবং মাটি তোমার গাছপালা বাড়াতে আর সাহায্য করবে না। এই পৃথিবীতে তোমার কোনও বাড়ি থাকবে না, তুমি এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় ঘুরে ঘুরে বেড়াবে।‘
ঠিক এ সময় ভাতসমেত হাড়ি কুড়ি বুড়ি কমলা দিদিমনি পুকুরের জলে ভাসিয়ে দিচ্ছে। জলের ভিতর ভাতগুলো শিউলী ফুলের মত ডূবতে ডুবতে ডুবে যাচ্ছে। ডুবতে ডবতে বুড়বুড়ি ছাড়ে। আর ঢোল ডগর বাজে।
তাই দেখে আকাশে মেঘ জমে। ঝম ঝম করে বৃষ্টি নামে। বৃষ্টিতে সুখী দিদির চুল ভিজছে । চোখ ভিজছে । নাক ভিজছে । মুখ ভিজছে । গা ভিজছে । গলে জল হচ্ছে । জল হয়ে নদীর জলে মিশে যাচ্ছে । সুখী দিদির চুল নাই। নাক নাই। চোখ নাই। মুখ নাই। গা নাই। হাড় নাই। আমাদের সুখী দিদিও নাই। জলে ধুয়ে গেছে। কিন্তু শহীদ দুখীরামের বউ সুখী দিদি আছে। অর্ধেক জলে। অর্ধেক স্থলে। অন্তর্ঞ্জলি যাত্রায়। নিরাকার। অন্ধকার জ্যোৎস্নার তরঙ্গের মত। ফসফরাসের আলেয়ার মত। চকখড়ির দাগের মত। তার মাথার উপর দাড় কাকটি বসে আছে। পলকহীন। বাড়ি ভূষুণ্ডির মাঠ।
একটি বুড়ো আম গাছ অথবা অমৃত ফল বিষয়ক যাদুবাস্তব গল্পের খসড়া
অনেকগুলো উঠোন। আর ঘর। তার পেছনে বেতঝাড়। উঁচু উঁচু শিরিষ গাছ। এ বাড়ির পুকুর পাড়ে বরই, আমড়া আর জাম গাছ। এর মাঝে একঘর বাউল। একতারা বাজায়। আর নেচে নেচে গান গায়-
এক কালা দতের কালি যা দ্যা কলম লেখি,
আর এক কালা চক্ষের মণি, যা দ্যা দৈনা দেখি,
-ও কালা, ঘরে বইতে দিলি না আমার।
বাউলের ঘরের পাশেই বেতবন। দুটো বেতফল দিয়ে বলল, খাও। কষা আর মিষ্টি। বাউল একটি শিরিষ গাছের নিচে ঘুমিয়ে পড়েছে। কয়েকটি মশা তার নাকে ও গালে বসেছে। কয়েকটি ভন ভন করে উড়ছে। একটি শিয়াল উঁকি দিল। আর কী একটা সাপ বেতবনের ভেতরে ধীরে ধীরে চলে গেল।
হীরাবাড়ির এই ঝোপঝাড়, দীর্ঘ গাছের নম্র ছায়া থেকে একটু হাঁটলেই কালিঘর। তার পেছনে আরেকটি বাড়ি। বাড়িটির পরেই একটি পোড়ো বাড়ি। কোনো ঘরদোর নেই। একটি ভিটি মাত্র। খুটিঁগুলো পোড়া। আর মজা পুকুর। পানাভর্তি। আর আছে একটি বুড়ো আমগাছ। কোনো কোনো ডালে পরগাছা। দুএকটা ফুল ফুটে আছে। অনেক পাখির বাস। এখানে কেউ থাকে না। কোনোদিন কেউ কি ছিল?
চোখ মেলে দেখি, বাউল আমার পাশে বসে আছে। এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে বুড়ো আমগাছটির দিকে। দুহাকে বুকের কাছে ধরা একতারাটি। বিড় বিড় করে বলছে, হে মহাবৃক্ষ। তোমার ফল অমৃত। তোমার ছায়ার আশ্রয়ে থেকে এখানে জন্ম হয়েছে একজন অমৃতের পুত্রের। তার কারণেই আমরা গাইতে পারছি অমৃতের গান-
জয় বাংলার জয়
হবে হবে হবে, হবে নিশ্চয়
কোটি প্রাণ একসাথে
জেগেছে অন্ধরাতে
নতুন সূর্য ওঠার এইতো সময়।
এই আমগাছটিই আমার বন্ধু। মাঝে মাঝে এর নিচে একা বসে থাকি। গরু ঘাস খায়। ঘুমিয়ে পড়ি। কখনো কখনো বুঝতে পারি, কয়েকজন লোক কথা বলছেন। ভারী ভারী কথা। সমাজতন্ত্র। শোষণহীনতা। অসাম্প্রদায়িকতা। আবহমান বাংলা ও বাঙালীর ইতিহাস। সকলের মঙ্গলের কথা। শুনতে পাই, একজন লোক ঘোড়া ছুটিয়ে আসছেন। একটু থেমে যাচ্ছেন। উচ্চস্বরে ঠাট্টা করছেন, কি হে সিঙ্গি বিপ্লবী শওকত চৌধুরী। সমাজতন্ত্র তোমাগো কাম না। আমরাই আনুম।
তারপর হো হো করে হাসতে হাসতে ফিরে যাচ্ছেন। তার নাম ঘোড়া জামাল। রাস্তা ছোটো। নইলে গাড়িই কিনতেন। গাড়ি ছাড়া তাকে মানায় না।
অদূরে একটি দেওয়ালে লেখা-
তিন বলদের এক শিং-
মুজিব মোজাফ্ফর মণি সিং।
- আমাদের লক্ষ্য বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র। আর কি সব।
একদিন ঠাকুরদা রওনা হলেন ঢাকায়। অনেক বয়েস হয়েছে। এটাই তার শেষ তীর্থ যাত্রা। ধূতি পাঞ্জাবী ধোপা বাড়ি থেকে ধুইয়ে আনা হল। সঙ্গে গেল বাউল। তার বাউলা ড্রেস। বলে, আমি আউলা মানুষ। নামাজও পড়ি। আবার গানও গাই। আমারতো কোনো জাত ফাত নেই। বিনোদ সাহ যেতে পারলেন না। দিন দুনিয়ায় তাঁর কেউ নেই। যাঁরা ছিল তাঁরা একাত্তুরে শহীদ। এখন কেবল একটি রামছাগল তার সঙ্গী। তিনি ঢাকায় গেলে রামছাগলকে কে দেখবে? ছোখের জল ফেলতে ফেলতে বিনোদ সাহ বললেন, শেখরে কৈয়েন ছোটোবাবু, তোমার জন্য বুকটান কৈরা হাঁটতে পারছি। তোমার মুখের দিকেই চাইয়া বাঁইচা আছি। তোমারে সালাম।
আর গেলেন কাশেম কবিরাজ। কবিতা লেখেন। আর তশবী টেপেন। এক সময় নাটকও করতেন। জলিরপাড় থেকে উঠবেন টমাস তিমথি সরকার।
বাবার মন খুব খুশি। এবার আমাদের কপাল ফিরতে পারে। মা দুদিন পায়েস রান্না করে ঠাকুরের ভোগ দিলেন।
ঠাকুরদা ফিরলেন দিন চারেক পরে। খুব সুখি। বাবাকে বললেন, কিছু কি চাইতে গেছি নিকিরে! তিনিতো মানুষ নন। তিনি আমাগো চোখের জল মুছায় দিছেন। নিজের মাটিকে নিজের করে দিয়েছেন। নিজের ঘরকে নিজের করে দিয়েছেন। তার কাছে কি আর কিছু চাওয়ার থাকেরে পাগলা! তিনি বুকে টেনে নিয়েছেন। বলেছেন, কোনো ভয় নেই। আমি আছি। আমার প্রাণ ভরে গেছে।
এর কিছুদিন পরে ঠাকুরদা মারা গেলেন। তাঁর কোনো দুঃখ ছিল না। তিনি গেলেন পূর্ণতার লাবণ্য নিয়ে।
একদির ভোরবেলায় বাবা কাজে গেলেন না। বাবা পুরনো রেডিওটাকে চড় থাপ্পড় দিচ্ছেন। কড় কড় শব্দ করে একদম থেমে গেল।
বাবা ধাই ধাই করে ছুটে গেলেন হারুন চাচার বাড়িতে। হারুনচাচা রেডিও শুনছিলেন। চোখে জল। রেডিও বন্ধ করে দিলেন। বললেন, বাড়ি ফিরে যাও। দ্যাখো বাঁচতে পারো কিনা। বাংলাদেশে আবার দোজখ নেমে আসছে।
বাড়ি ফিরতে ফিরতে দেখলাম, আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবুমিয়া আর ছোটকা দাস ধানি মাঠের মধ্যে নেমে যাচ্ছেন। কমরেড শওকত চৌধুরী তাদের পথ আগলে দাঁড়ালেন। বললেন, পালিয়ে যাচ্ছেন কেন? আসেন রুখে দাঁড়াই।
সাবুমিয়া ফ্যাস ফ্যাস করে জবাব দিলেন, সম্ভব নয়। অস্ত্রপাতি নাই। জমা দিয়া ফেলাইছি।
-জনগণকে নিয়ে নেমে পড়ি। অস্ত্রের কি দরকার?
-ওদের হাতে অনেক অস্ত্র, অনেক টাকা পয়সা আর।
এরপর কি বললেন বোঝা গেল না। ঘোড়া জামাল কমরেড শওকত চৌধুরীকে ধাক্কা মেরে ছুটে বেরিয়ে গেলেন অনেক দূরে। তার ঘোড়াটি হা করে তাকিয়ে রইল। তার পিঠে কোনো সওয়ার নেই। যে কেউই উঠে পড়তে পারে এখন।
অনেকদিন পরে এদিন পনু মিয়াকে দেখলাম। সঙ্গে জি রহমান। আগের চেয়ে গায়ের রং আরও উজ্জ্বল হয়েছে। স্বাস্থ্যে ভরপুর। সম্প্রতি আরেকটি বিয়েও করেছেন। আমাদের বাসায় এলেন। যে ঘরটিতে ঠাকুর্দা থাকতেন তার দরোজা লাথি মেরে খুলে ফেললেন। বাবাকে ঠাণ্ডা গলায় বললেন, এটা খালি করে দাও।
এ ঘরটি সাড়ে তিন বছর আগে তার দখলে ছিল। অফিস ছিল রাজাকার কমিটির। আজ আবার ঘরটি তাদের দখলে চলে গেল।
সুরুদ্দিন মাস্টার অনেকদির পক্ষাঘাতগ্রস্থ হয়ে বিছানায় পড়েছিলেন। তার চোখে আজ সুরমা টানা। পরনে আচকান। পায়ে মোকাসিন। মাথায় জিন্নাহ টুপি। জি রহমানের সঙ্গে বুক মেলালেন। তার অসুখ সেরে গেছে। তার বড়ো মেয়েটি শেখা আপা দীর্ঘদিন পরে অন্দরে ঢুকলেন নিরিবিলি ঘুমাতে। আর সে ঘর থেকে শুকনো মুখে কিছু খোঁচা খোঁচা দাড়ি, বাবরি চুলের যুবক বাইরে এসে দাঁড়াল। তারা এখন কি করবে বুঝতে পারছে না। পনু মিয়াকে দেখে বড়ো করে সালাম ঠুকল। পনু মিয়া তাদের মাথা থেকে লাল ফেট্টি খুলে দিলেন। পিঠ চাপড়ে বললেন, গুড জব। তোমরা অনেক করেছো।
ওরা সবাই ছিল ক্ষুধার্ত। বিনোদ সা’র রাম ছাগলটিকে প্রকাশ্য রাস্তায় জবেহ করল। বিনোদ সা নদীর দিকে ছুটে গেলেন। তারপর শুরু হল রান্না। অনেকগুলো লোক সেদিনই অন্ধকার থেকে বাইরে বেরিয়ে এসেছে। আকাশের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে, মাঝে মাঝে হেলিকপ্টার চক্কর দিচ্ছে। উড়ে যাচ্ছে দক্ষিণে। অই গ্রামটির নাম টুঙ্গিপাড়া।
অনেকদিন পরে এইসব লোকজনের চমৎকার একটি ভোজ হল। চারিদিকে পাকিস্তানী মশলা আর বাংলার ঝলসানো গোস্তের গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে- একটি রাস্তা থেকে অনেকগুলো রাস্তায়। বাড়িঘরে। অফিস আর স্কুলে। পুলিশ ব্যারাকে। ধর্মশালায়। আদালতে। নদীতে। ধানক্ষেতে। গাছে গাছে। আকাশে। কবরে। মগজে।
সমস্যা হয়ে গেল বুড়ো অমৃত মুচির। একজোড়া পুরনো জুতো মেরামত করছিলেন। অসাবধানে ধারালো ছেনিতে তার বুড়ো আঙ্গুলটা খসে গেল। ষাট বছরের জীবনে এ ধরনের ঘটনা এই প্রথম। ফিনকি দিয়ে রক্ত বেরুলো। ধুলোর মধ্যে কাটা মানুষের মতো তার আঙুলটা ছটফট করছে। লাফিয়ে লাফিয়ে উঠছে। এ রকম রক্ত কি আবার দেশটার ভেতরে বের হবে? অমৃত মুচি থর থর করে কাঁপতে লাগল।
আর ভোজে তৃপ্ত পনু মিয়া, জি রহমান, সুরুদ্দিন মাস্টার, হঠাৎ অন্ধকার থেকে বের হওয়া স্বাস্থ্যবান যুবকেরা হীরাবাড়ি থেকে ধরে আনল বাউল হীরামনকে। বয়েসী আমগাছটার নিচে দাঁড় করাল। বলল, গতকাল ছিল পাক পাকিস্তানের আজাদি দিবস। আজ ১৫ আগস্ট। এই আমগাছটো যে লোকটিকে ছায়া দিয়ে মানুষ করেছিল- সেই লোকটাই পাকিস্তান ভেঙেছে। তাকে আমরা শেষ করেছি। তুই আজ এই নাজাতের দিনে গান ধর-
পাক সার জামিন সাদ বাদ-
হীরামন বাউল ওদের দিকে ফিরে তাকাল। চোখে আগুন। একতারাটি বুকের ভেতর থেকে বের করল। আঙুল ছোঁয়াল। গুণগুণাগুণ সুর তুলল। খুব মৃদু স্বরে। কি গাইছে বোঝা গেল না। এগিয়ে গেল সামনের দিকে। অমৃত ফলদানকারী বুড়ো আমগাছটির দিকে। গাছটির বাকলের কাছে। বাকল ফুড়ে একটি দরোজা বের হলো। বাউল সে দরোজার মধ্যে দিয়ে গাছটির ভেতরে ঢুকে পড়ল। আবার দরোজাটি বন্ধ হয়ে গেল।
পরদিন দেখা গেল, আমগাছটির চারটি ডাল ভাঙা। ঝড়ে ভেঙেছে, না কে বা কাহারা কুঁপিয়ে ভেঙেছে জানা গেল না।
বাতাসে যখন আমগাছটির পাতাগুলো নড়ে, কচি কচি ডালগুলো দোলে, নতুন ফুল ফোঁটে, ফল ধরে, খোলস পাল্টায়, নতুন হয়ে হয়ে ওঠে- তখন শোনা যায় কেউ গান গাইছে। উদ্দাত্ত সে সুর। মাটি, আকাশ, বাতাস ছাপিয়ে যায়। মগজের মধ্যে ধাক্কা মারে। হীরামন বাউলের গান-
জয় বাংলার জয়
হবে হবে হবে, হবে নিশ্চয়
কোটি প্রাণ একসাথে
জেগেছে অন্ধরাতে
নতুন সূর্য ওঠার এইতো সময়।
ওগো মেয়ে! তুমি বোসো এইখানে চুপে
তোমার আঙুল রাখো তবে এই আমার করাংগুলে
ওগো জল! তুমি বসো এইখানে চুপে
আমার কথার ধারাগুলো সব ধীরে ধীরে খুলে নিতে
-(বোতলে বন্দী জল, তুষার গায়েন)
ইঁদুর অথবা নক্ষত্রের রোদ
সর্প দেখিলে দর্প হয়। গর্বে বুক ভরিয়া যায়। কী আর কহিব। ইহাতে তিনজন রমণীর অকালে গর্ভ হৈল। ঘর আছে তার দুয়ার নাই। লোক আছে তার বাক্য নাই। কেবা তাহার আহার জোগায় । কে দেয় সন্ধ্যাবাতি। ভাই লোগ তালিয়া বাজাও।
হাডসন নদীর তীরে যাহারা যাহারা সমবেত হৈছিল, তাহাদের কান অকস্মাৎ গরম হৈয়া ওঠে। কয়েকজন চিনা বাজীগর ফালাইতে ফালাইতে কয়েকটি সমুদ্র পাখি ধরিবার কোসেস করিতেছিল। ইহাতে যতনা তাহাদের মুখের পেশি ফুলিয়া উঠিল, তাহার চাইয়া বেশি উহাদের নিতম্বগুলি স্ফিত হৈতে থাকিল। স্ফিত হৈতে হৈতে ইহাদের প্যান্টুলুন ফাটিয়া গেল। ভাইলোগ ভারী তাজ্জব বেপার। সমুদ্রপাখির চাইয়া উন্মুক্ত নিতম্বদেশ অতি মনোহর। চিনারা বোকার মত খাড়াইয়া পড়িল। কিন্তু ভাইলোগ কাহিল- মেরে লাল। বহুৎ খুব। বহুৎ খুব। ইহা লতুন। এবং সৃজনশীল। ইহার তুল্য আর কিছুই নাই। এই বিষয়ে ফুকো সাব কিছু কৈছিলেন। আমার মনে পড়িতেছে না। পড়িলে কহিব। ভাইলোগ তালিয়া বাজাও।
এক্ষুণে ছখিনা বিবির কিঞ্চিৎ শরম হৈল। ইহাতে তাহার ধবল গণ্ডদ্বয় আরক্ত হৈল। নাসিকাদ্বয়ে ঘর্ম দেখা দিল। তাহার জানি দোস্ত লরেনা ভ্রু কুঁচকাইয়া কহিয়া উঠিল, য়ু আর নট স্মার্ট বিবি। তুমহারা সেক্স পড়ো পড়ো- অস্তাচলে। রিটায়ার্ডমেন্ট দরকার।
দামিলোলা ঝিম ধৈরা বসিয়াছিল। হেচকি দিয়া উঠল, তরা কি পাইছস। তগো কাহারো আক্কেল নাইকা। হ্যাগো পোদ দেখিয়া কী লাভ। কুনো ট্যাট্টু আছে? দ্যাখতো কুনো ট্যাট্টু ফাট্টু আছেনি অগো পোদে?
-হুউম। বেড়ে কৈছিস। ট্যাট্টু নাইক্যা। ফাট্টু আছে।
ইহা শুনিয়ে ছখিনা বিবি লবেজান। তাহার সিন্ধুনদের কথা মনে হৈল। সিন্ধুনদের তীরে মনোরম ঘাস। সুচিক্কন বাঁশ। জলদময়। আর ঝোপ জঙ্গল। ইহার মৈধ্যে ইন্দরকুমার সযতেœ তাহার নিতম্বদেশে তাকাইয়া কৈল- মারহাবা!
-কী?
হা হা। তোমার ট্যাট্টুদ্বয়। ইহা অতি ফাইন। এবং জটিল। ভয়ানক কষ্ট পাইয়াছে । তবু দাঁত চাইপা চাইপা ইন্দর কুমারের খায়েস মিটাইয়াছে। মিছা কহিয়াছে- আরাম লাগতাছে। এমুন আরাম জেবনে কুনোদিন পাই নাই হে প্রাণনাথ।
ইন্দরকুমার ব্যবহার করিয়াছে কাল বর্ণ। এত সর্পিল রেখা যে তাহা দেখিলে উন্মুক্ত নিতম্বকেও আবরিত আবরিত লাগে। মনে হয়- কিছু পরা আছে। এই মাইয়া ডাকে না। অপরাপর ইন্দরকুমার ইহাতে দগ্ধ হৈবে না। ১০০% গ্যারান্টি। বিফলে মূল্য ফেরত। ভাইলোগ তালিয়া লাগান।
ইন্দর কুমার চক্ষুষ্মান। এবং কপালে সূর্যবিম্বিত। বক্ষদেশ রোম শূন্য। কৈল, অয়ি, ছখিনা বিবি, তুমি আয়ুষ্মতি হৈবে। এবং আপৎকালেও কুমারী থাকিবে।
-কুমারী, হেইডা কি জিনিস?
-বুঝিতে পারিবে না। অতিশয় গুহ্যতত্ত্ব। বুঝিয়া লাভ নাই। এই বলিয়া একটি দ্রুত ধাবমান জন্তুর পিঠে উঠিয়া পড়িল। কিছুদূর অগ্রসর হৈয়া আবার ফিরিয়া আসিল। কহিল, শোনো, তুমাদিগের কামে কাম নাই। তুমাদিগকের উচিৎ নিরন্তর কুমারী থাকা।
-ওকে, ওকে। তাই হৈবে। ছখিনা বিবি চিৎ হৈয়া ঘুরিল। তাহা বক্ষদেশ কালিমালিপ্ত এবং নিম্নপ্রদেশ অচিহ্ণিত। ইন্দরকুমার নিশ্চিন্ত হৈল। তাহার পুলকিত গণ্ডদেশে তাকাইয়া ছখিনা বিবি জিজ্ঞাসিল, এই জন্তুর নাম কি পরভু?
- অশ্ব।
-অশ্ব?
-ইহাকে হয়-ও বলা হয়। অশ্ব হৈল অশ্ (ব্যাপ্তকরণ শক্তি) বহন করে যে।/ যে পথ ব্যাপ্ত করে। অশ্ হৈল ‘অস্তিত্বের শক্তিবিচ্ছুরণ বা ব্যাপ্তকরণশক্তি’। কারণ অশ্ হৈল ধংয বা ছাই, জগতের ছাই, যে ছাই মাখেন শিব। এই ছাই হৈল সর্বজ্ঞানকর্মফলের সার। অশ্বেরা ইহা মাখে না, বহন করে, তাই তাহাদের ‘অশ্ব’ বলা হয়। সর্ব প্রকারের ‘ঘট’ বা ঘটনা ঘটাইতে পারে বৈলাই ইহারাই ‘ঘোটক’ পদবাচ্য। ইহার মুখাকৃতি অশ্ববদন। শশকের চাইয়া দ্রতগামী। এবং নির্মম যৌনকাতর। ইহার তুলনা নাই। স্মতর্ব্য যে, অচিরে একটি যজ্ঞ হৈবে। ইহার নাম অশ্বমেধ যজ্ঞ। রাজ্য জয় এবং অপত্যকাম হেতু রাজাগণ ইহা করিবেন। রাজ্যজয় হেতু যুদ্ধ অবশ্যসম্ভাবী। যুদ্ধজয় হেতু রাজ্যলাভ এবং জয়ী অশ্বের সহিত মহারাণীর সঙ্গম অনিবার্য। ইহা শাস্ত্রসম্মত। ইহাতে কোন অপাপহীনতা নাই। ভাইলোগ তালিয়া বাজাও।
সিন্ধু নদ অতি ভয়ঙ্কর। বিশাল ইহার ঢেউ। ওপার দেখা যাইতেছে না। কি করিয়া পার হৈবে ইন্দর কুমার? চিন্তায় ছখিনা বিবি ব্যাকুল হৈলেও ইন্দরকুমার অশ্বের পিঠেই বসিয়া থাকিল। কোমরের গেঠ খুলিয়া ফেলিল। তাহার মুখটি গম্ভীর। জিনিসটি বড় নহে। কিন্তু অতি কার্যকর। অন্যের কার্যভাবনা করিয়া কি লাভ? কোমর বন্ধনীটি খুলিয়া বার কয়েক হাওয়ায় ভাসাইল। তাহার পর নদের উপরে ছুড়িয়া মারিল। আকাশে বাতাসে একটি প্রবল গর্জন উঠিল। জলের মধ্যে একটি আলোড়ন হৈল। কোমর বন্ধনীটি একটি সর্পে রূপান্তরিত হৈয়া জলের উপর সাকোর ন্যায় ব্যাপ্ত হৈল। আর ইন্দরকুমার অশ্বের পেটে আস্তে কৈরা পদাঘাত করিল। হাওয়ার বেগে অশ্ব সিন্ধু পার হৈয়া গেল। অনন্তর সর্পটি দর্প ভরিয়া একবার নড়িয়া চড়িয় উঠিল। গর্ভ সহকারে পুনরায় কোমর বন্ধনীতে ফিরিয়া আসিল। ইহার সাক্ষ্য ইতহাসে আছে। অবিশ্বাসীগণের ইহাতে অবিশ্বাস থাকিতে পারে। তবে সত্য। ভাইলোগ জোরসে তালিয়া বাজান। বলেন- মারহাবা।
ছখিনা বিবি নদীতীরে ঘুরিয়া বেড়ায়। আর গান গায়। সেই গান বনের লতাপাতার। গাছগাছালির। আর নিরপরাধ পাখির। বেতমিজ হাওয়ার। পশুদের চক্ষু হৈতে জল পড়িয়া নতুন নতুন সরোবর তৈরি হয়। ইহার নাম মানস সরোবর। ইহার জল অতি সুপেয়। নির্মল। হে সূর্য তুমি আমাদিগকে নির্মল জল দাও। আহাতে আমাদিগের স্বজন এবং পূর্বপুরুষগণ স্নাত হউন।
ছখিনা বিবির গান-
সোনার ময়না পাখি
কোন দ্যাশেতে উইড়া গেলারে
দিয়া মোরে ফাঁকি রে, আমার সোনার ময়না পাখি
সর্প আকুল হৈয়া ছুটিয়া আসিল। কৈন্যার পদতলে বিনতি কৈরা কহিল, আর সহিতে পারিতেছি না। এমুন কৈরা কেউ কি আকুলি বিকুলি করে?
-তাইলে কি করুম?
- কি-ও না করবা না তুমি।
-কিন্তু কিবা না কৈরা চলে কিবা আমার। বন্ধুবিহনে আমার সোনার অঙ্গ যায় গো জ্বৈলা রে সোনার ময়ণা পাখি রে। তুমি কোন দ্যাশেতে চৈলা গেলা রে। বুঝবার পারতিছি না।
- বুঝবার পারতিছি কৈন্যা। কিন্তু ইহা মুখে বলিও না। তোমার বুক ফাটে তো মুখ ফাটে না। বুঝবার পারতিছি তোর কুচযুগ কহিতেছে- দেহি পদ বল্লভ মুদারাম। আমি তো অইখানে পদ রাখিবার জন্যই তিনপায়ে খাড়া।
-কেন সর্প? তুমি কেডা? সত্য কৈরা কওতো তুমি কেডা? সর্পকুমার?
- আমি সর্পকুমার। একং সদ্বিপ্রাঃ বহুধা বদন্তি। আমি এক। কিন্তু আসল জ্ঞানীগণ আমাকে অনেক বলিয়া মানে- গোণে। আমার কাজ হৈল বর্ষণ করা। বর্ষণ কৈরা আমি ভাসাইয়া দেই। প্রকৃতি গর্বিত হয়।
-গর্বিত না গর্ভিনী, কুমার?
- হৈইডা কৈবার পারুম না। ইহা তত্ত্ব জ্ঞান। ইহা জানা নারীদের অধিকার নাই। তুমি গর্বিত না গর্ভিনী হৈতে চাও কৈন্যাগো? আর না দেরী সয় গো কৈন্যা/ সময় চৈলা যায়- যায় যায় গো।
-কঠিন প্রশ্ন হে সর্পকুমার। তুমি জান না- ছখিনা বিবি আসলে কি চায়? যদি গর্বিত হৈবারই চায় তাইলে কৈবা- এই মাইয়া বাজা। ইহার শাস্তি নির্বাসন দণ্ড। আর যদি গর্ভিনী হৈবারই চায় , তাইলে কৈবা এই মাইয়া অতি বেশরম। কিন্তু এইডা ভাইবা আমার চলে কিবা। আমার অঙ্গ জ্বৈলা যায়- যায় গো আমার সোনার ময়না পাখি, কোন দ্যাশে তে চৈলা গেলা- দিয়া মোরে ফাঁকি রে
- চুপ চুপ চুপ। আর কুনো প্রশ্ন নয়। উত্তরে পাহাড়। তুমার বসন তোলো গো কৈন্যা।
- না, সর্পকুমার। ইহা সম্ভব নয় গো। ইন্দরকুমার মাইন্ড খাইবেন। তার লগে বেঈমানী করি কি কৈরা! তার বজ্র আছে। বজ্রপাতে নির্ঘাত মরন। অকুমারী হৈ কি কৈরা?
- না, না, না। তুমি তো কুমারী কৈন্যা। আমিও ইন্দরকুমার। চক্ষু তুলিয়া দ্যাখো গো কৈন্যা। আর না দেরী সয় গো কৈন্যা/ সময় চৈলা যায়- যায় গো/ আমার অঙ্গ শেতল হৈবার চায় চায় গোৃ। এইবার চিনবার পারিতেছ?
- চিনবার পারবে কি কৈরা। কৈন্যা শরমে মৈরা যায়। একে তো বসন্ত দিন। তায় গাছে আবার কুকিল ডাকে। উপ্রে সূর্য ডগডগাইয়া চায়। বারবার বসন খুলিবার চেষ্টা কৈরা ইন্দর কুমারের মেজাজ অষ্টরম্ভা। কৈল, ধ্যাত। তুমরা বসন পরো ক্যানো? কী ঝামেলা।
এমুন শুইন্যা কৈন্যা হাসে দুইবার।
ছখিনা আমার নাম- বুঝহ এইবার।।
বসন পামু কৈ- দিয়াছ কি বসন।
যা কিছু বসন দ্যাহো- কালির লেহন।।
কালি দিয়া ঢাইক্যা দিছ অঙ্গেরো শোভা।
না করিবে উদ্রেক কারো দণ্ডেরও লোভা।।
আমি সতী সত্য নারী সতীরও কৈন্যা।
সতী হৈয়া মৈরব জান্নো পতিরও ধন্যা।।
-হা হা হা। গুড । ভেরি গুড ছখিনা বিবি। তুমার তুল্য কেহ নাই এ ভবে। তোমার জন্য স্বর্গ নিশ্চিত। একশ হুরপরি খাড়ায়া। ১০০% নিশ্চিত।
-কিন্তু পরী দিয়া কি করুম। আমি কি লেসবিয়ান হমু নাকি?
সর্পকুমার তখন আর সর্পকুমার নাই। দর্পকুমার এক। চেহারায় ইন্দরকুমার। আদি এবং অকৃত্রিম। আসমানে চাইয়া কৈল- ম্যাঘ। ম্যাঘ। আর তক্ষুণি আসমান ভাইঙা বর্ষণ নামিয়া আসিল। কৈন্যার চুলে, কপালে, চোখে, নাকে, মুখে, বুকে, নাভিকুণ্ডলে বর্ষণ মুখরিত হৈল। সরোবরে, নিতম্বদেশে এই বর্ষা এমন অঝোরে ঝরিল যে, উহা ক্রমশ আলোকপ্রাপ্ত হৈল। আলোকের এই ঝর্নধারায় কৈন্যা লুকাইয়া গেল। কৈন্যা শুধু ত্রিভঙ্গ হৈয়া নাচিতে লাগিল। নন্দি-ভৃঙ্গি গালে হাত তুইল্যা গানে গানে শেতল শেতল বলিয়া হাচিয়া উঠিল। বাচ্চা লোগ, তালিয়া বাজাও।
কি হৈয়াছে বুঝিতে না পারিয়া ছখিনা বিবি চক্ষু খুইল্যা দেখিল, তাহার অঙ্গে ভঙ্গে ভঙ্গে সর্পকুমার বিন ইন্দরকুমার ট্যাটু আঁকিতেছে। আঁকিতে আঁকিতে কৈল-
কৈন্যা, সতীরূপ বিনা তোমার অন্যরূপ নাহি।
আমা বিনা অন্য কারো তোমার না চাহি।।
এইরূপে ঝিঁয়ের পেটে মায়ের জন্ম। ছয় মাসের এক কন্যা ছিল। নয় মাসে তার গর্ভ হৈল। আবার এগার মাসে তিনটি সন্তান। ওহে ছখিনা বিবি- কোনটা হবে ফকিরি? কৈন্যার নাম ছখিনা বিবি। তাহার রূপ অতি মনোহর। আসমান জমিন ভ্রমি পাইবে না এমন নাম।
কৈন্যা গান গায়। আর হাসে। সরোবর হৈতে যে হাওয়া উড়িয়া আসে , কি কহিব ভাইলোগ- তাহা কিন্তু সরোবরের নহে- সরোবরে ত্যাজ। কৈন্যার বসনভূষণ আউলা ঝাউলা করো গো হরি- কেমন করিয়া সেই কথা কহি। সে যে ত্যাজেরও ত্যাজ।
মরি হায় রে হায়-
আমার চক্ষে পরাণ যায়।
কাঁচা ঝালে জিব্যা পোড়ে কী করি উপায়।
আমার অঙ্গ জ্বৈলা যায়।
পায়ের নিচে সুরড়সুড়ি লাগিল। ছকিনা বিবি চক্ষু তুলিয়া দেখিল ব্যাটারি পার্কে পর্যটক ওরফে টুরিস্ট আসিতেছে। উহারা গুলি করিতেছে। আর ঘুরিয়া ঘুরিয়া দেখিতেছে। সাজানো গোছানো গাছ। অতি উচ্চ উচ্চ আকাশ সমান ইমারত। পাশে যমজ ভ্রাতা ছিল। আজ তাহারা নাই। ইহা বলিয়া তাহারা বলে- যাই। যাই। সমুদ্র পাখিরা বলে- বাই। বাই।
পায়ের বুড়া আঙুলে এইবার কুটুস করিয়া কামড় লাগিল। ছখিনা বিবি একটু নড়িয়া চড়িয়া বসিল। তাহার ঘুম পাইতেছে। কিন্তু চক্ষে ঘুম নাই। হাডসন নদীর জল থৈ থৈ করিয়া বহে।
এইবার কুটুস কাটুস শুড় শুড়ি কামুড় বাবাজী স্বমূর্তি ধারণ করিল। কহিল, ওহে, ছখিনা বিবি, কি হৈয়াছে। তোমার মুখে রা নাই ক্যান?
ছখিনা বিবি হাসিল্। মরার হাসি। ছখিনা বিবি মরিয়াছে। না মরিয়া লাভ কী! কহিল, তুমি কেডা সাঙ্গাৎ?
-চোনো নাই? আমি ইন্দরকুমার?
-ইন্দরকুমার? কোন ইন্দুরকুমার- হোৎকা পেটুক কর্পোরেট দেওতা গণশার ইন্দুর, ভ্রাতা?
-ইন্দুর হৈতে পারি। নাম কিন্তু ইন্দুরকুমার। অতি ত্যাজি যুবা। ইহা ল্যাজ নহে। বংশের নিদান নিশানা। তবে ল্যাজের লাহান। রামায়ণে বর্ণিত আছে- লাঙ্গুল। ইহার তুল্য আর কেহ নাহি।
- বাকোয়াজী মাৎ করো। কি কৈর্তে হৈবে হেইডা কইতো বাপো?
- হিছুই কৈর্তে হৈবে না। শুধু তোমার বসন খোলো।
-আমি সতী নারী। স্বভাবে কুমারী। ঝামেলা কৈরো না। বিদায় হও। ইন্দরকুমার আসিলে তোমার ল্যাজ কাটিয়া দেবে। ত্যাজ বাহির করিয়া দেবে। ভাগো।
-ওয়েল ডান, ডার্লিং। এইতো চাহিয়াছিলাম। তুমি আমার একমাত্র। অন্য কাহারো নহে। আর আমি বহুমাত্র। এই দ্যাহো- আমি তোমার আদি এবং অকৃত্রিম ইন্দরকুমার। হাতে বজ্র। ট্রেড মার্ক। পেটেন্ট আছে।
বজ্র মানে কি?-
-কড়াৎ কড়াৎ।
-কি করে?
- কড়াৎ কড়াৎ করে।
-কড়াৎ কড়াৎ কি করে?
-বাল ছেড়ে। আর তাল গাছে বান্ধে।
-কি তাল?
- বেতাল।
কৈন্যা কি আর করে। স্বভাবে কাতর। অভাবে আতর। শরমে চক্ষু মুইঞ্জা রহে। কিন্তু ইন্দরকুমার বেতাল বা বেচাইন হৈয়া নাদান হৈয়া গেল। তাহার অতি অভ্যস্ত হাতও বসন ভূষণের কোনো কুল কিনারা খুঁজিয়া না পায়। ঘামিয়া চামিয়া জিজ্ঞাসিল, ছখিনা বিবি, ঘটোনা কি?
-বসন ভূষণ পাইমু কোতায়? বসন ভূষণ ছিলনি কোনো কালে। যাহা কিছু দেখিতেছ- ইহা তোমার রঙের আঁচড়মাত্র। ট্যাটু। অঙ্গ ঢাকিয়া গেছে রঙ্গেরও জটিল ভঙ্গে। আমার কি দোষ। দোষ তোমার চক্ষুর। তখন ইন্দরকুমার হাসিতে হাসিতে আসমানে চাহিয়া কহিল- ওহে, ম্যাঘরাজ, তুমি কুনহানে? আইসা পড়ো। পেরেশানি মাৎ করো। সময় বৈয়া যায় হে। শ্যাষে কি এই বয়সে ফেইল মারমু?
অনুগত ম্যাঘরাজ কৈন্যার দেহের উপরে ঝাপাইয়া পড়িল। দলিয়া মথিয়া মুছিয়া দিল নকশার ঘোর। কৈন্যা তখন আর কৈন্যা নাইকা। সে তখন সরোবর এক। জল থৈ থৈ করে। আর মাছ লাফায়। ভাইলোগ, তালিয়া বাজাও।
কৈন্যার যখন চেতন ফিরিল, তখন তাহার মাথা খালি, কপাল খালি, ঠোঁট খালি, বক্ষ খালি, নাভি খালি, নদী খালি আর খালি বালিশও দুখান। বিড় বিড়াইয়া কহে-
বান্দা দিলাম ঝোপ জঙ্গল দুনিয়া তোমার।
বান্দা দিলাম লোভ মঙ্গল শুনিয়া তোমার।
বান্ধা দিলাম সাপ দঙ্গল গুনিয়া তোমার।
ও কন্যা, সতী বিনা নাহিক উপায়
কহিতে কহিতে ইন্দরকুমার পুনর্মূষিক হৈল- ধাড়ি ইন্দুর কৈলেও কৈতে পারেন। কুতকুতে চক্ষু। গোফের নিম্নে দুইখানা ছেদন দন্ত বাড়িতেই আছে। থামাথামি নাই। তাই কাটুস কুটুস কৈরা কাটে দুনিয়ার মাঝার।
যুগল ভ্রাতা দুইজন ছিল বটে। আকাশ সমান। এখন তাহারা নাই। বলে, বাই। বাই। ইন্দরকুমার তাহার লাঙ্গুল অথবা যা কহেন- ল্যাজখানা হাডসনের জলে ছুইড়া মারিল। উহার উপর দিয়া তর তর বেগে হাইটা গেল। ওপারে ছোট এক দ্বীপ। উর্ধ্ব করে দাড়াইয়া ধরে পুরনো প্রদীপ। উহার নাম কহিব না। চিন্তা কৈরা লন।
সাউথ ফেরি ফিরিয়া গেলে ছখিনা বিবি নড়িয়া চড়িয়া ওঠে। লরেনা কহিল, ধীরে ধীরে ওঠ। হুটহাট কৈরা ওঠা ঠিক নয়। সময় খারাপ।
লরেনাকে উঠতে দেখিয়া দামিলোলা হাফাতে হাফাতে কহিল, হেইডা তো বোজলাম। ফেরীতো গেল গিয়া। এহন অই ব্যাডারে কাছে যাবা ক্যামনে?
চিনারা তখন প্যান্টুলুন ছাড়াই ফালাইয়া ঝাপাইয়া খেলা দেখাইতেছে ব্যাটারি পার্কে। উহাদের পোদগুলোর কোনো চিহ্ণ নাই। কোনকালেও তাহা ছিল না।
তাহাদের পাশে তিনজন গর্ভীনী নারী উর্ধ্ব করে খাড়াইয়া আছে। মাথায় কাটার মুকট। হাতে অন্ধকারের প্রদীপ। লগে ফটোক তুলিলে পাঁচ ডলার বিল। ক্রেডিট কার্ড নয় হে মনু। নগত। একডা তুলিলে আরেকডা ফ্রি।
ইহারা অতিশয় সতী। ইতিহাস এই সাক্ষ্য দেয়। ইহার অধিক কিছু নাহি। বাচ্চালোগ, তালিয়া বাজাও।
ৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃ..................
বি:দ্র: এইখানে লালন শাহের গান সংযোজিত হৈল।
এই গানটি আমাগো ফুকো অথবা দেরিদা জানিত না। কিন্তু মৌসুমী জানে। মৌসুমী কাদের। গান গায়। টরেন্টো থিকা সে কহিল, দোস্ত- তুমি কি জানো- এই গানটা কারে নিয়া ল্যাকসেন লালন? ল্যাকসেন কলা গাছরে নিয়া।
মহা মুশকিল। শ্যাষকালে কলাগাছরে নিয়া গান হৈল! আর হেই গানডা এই গপ্পে সংযোজন করিলাম। কপালে চাপড় মারি আর কহি- ব্যাডায়, লেখক হৈতে চাও। জানোডা কোন কচু।
মৌসুমী কয়- বিয়া করছ?
-করছি। ১৯৯২ সালে।
-তুমি হিন্দু মতে বিয়া করছিলা, না পলাইয়া?
-বাওন আছিল একজন। কৈল- যদিদং হৃদয়ে মম..আমার হৃদয়ে তোমার হৃদয় স্থাপিত হৈল...
-দামড়া। বিয়ের একটু আগে তুমার আরেকজনের লগে বিয়া হৈছিল। হেইডা কেডায়?
-কলাবৌ।
- পথে আসো চান। তো এই কলাবৌটারে ক্যান বিয়া করলা?
-হিন্দুগো নিয়ম।
-বাল জানো। এই কলাগাছের ব্যবহারের শ্যাষ আছে! এ্যার সবকিছু কোনো না কামে লাগে। কিন্তু হ্যার মুখে কোনো কথা নাই। সর্বদাই ঘোমটা মাথায় থাকে। সবাই বলে লক্ষী বউ। আর সামান্য বাতাসে ভাইঙ্গা পড়ে। বাৎস্যায়নের কামসূত্রে কলাবৌ মানে যে স্ত্রী চৌষট্টি কলা জানে। শালা- বোজছো ক্যান কলাবৌরে বিয়ে করাইল তোমার বাপে। ওর স্বামীর নাম কি জানো?
-কোন ভোদাই?
- গণেশ। গণেশ বাবাজি। মাথা হাতির। হাতি খায় কলা গাছ। দুমড়াইয়া মুচড়াইয়া সব খায়। শুড় দিয়া মূল শুদ্ধু তুইল্যা ফালায়। দাঁত দিয়া ফাইড়া ফালায়। চিবাইয়া চিবাইয়া খায়। আর হাগে। আরেকডা কলাগাছের দিকে আগাইয়া যায়। কলাগাছ- ঝিনুক নিরবে সহো। গণশা হৈল প্যাটমোটা কর্পোরেট ব্যবসায়ী। আগে ছিল দেবরাজ ইন্দ্র। ইন্দ্র গেছে। তোমাদের সেই ইন্দ্র পাডা এখন হৈল ইন্দরকুমার। গণশার বাহনই হল এই ইন্দর কুমার। বাড়ি নিউ ইয়র্ক।
টাইম স্কয়ারে যাও আর গান শোনো- নাইচা গাইয়া হাইচা : বোম বোম বোম।
-বাই। ঘুমাই। বালছাল নিয়া ভাবনার দরকার নাই।
ঘুমানোর আগে গানডা শুনি-
..............................
চাঁদের গায়ে চাঁদ লেগেছে
আমরা ভেবে করব কি?
ওরে ঝিয়ের পেটে মায়ের জন্ম-
তোমরা তাদের বলবে কি?
ছয় মাসের এক কন্যা ছিল,
নয় মাসে তার গর্ভ হল,
আবার এগারো মাসে তিনটি সন্তান
কোনটা হবে ফকিরি।।
ঘর আছে তার দুয়ার নাই,
লোক আছে তার বাক্য নাই।
কেবা তাহার আহার জোগায়,
কে দেয় সন্ধ্যাবাতি।।
লালন ফকির ভেবে বলে-
মায়ে ছুঁইলে পুত্র মরে।
আর এ কথার মান না জানিলে
হবে না তার ফকিরি।।
মল্লদের শালবন
এরশাদ এক মহাহারামজাদা। ওর গালে কষে দুটো চড় লাগাতে পারলে ভাল লাগত।
বালির উপরে বাতেন বাম হাত দিয়ে কী একটা ছবি আঁকছে। আর বিড় বিড় করে বলছে। মাসুদ আমাকে টেনে নিয়ে গেল। ফিসফিস করে বলল, বুঝলি, বাতেনের মাথাটা গেছে। সাবধানে থাকিস। কামড়ে দিতে পারে।
এরপর মাসুদ বাতেনের কানে কানেও কী সব বলল। আর আমার দিকে একবার তাকাল। বাতেনের মোটা গোঁফটা নড়েচড়ে উঠল। বলল, বুঝলাম। তুই যা। তিলের তেল জোগাড় কর।
আঁকা শেষ। বাতেন গম্ভীর হয়ে তাকিয়ে রয়েছে ছবিটার দিকে। বলল, এদিকে আয়।
গুরু গম্ভীর গলা। মাসুদ যেতে যেতে হাত নেড়ে বোঝাল, ওরে যাসনি। যাসনি। দূরে থাক।
বাতেন জানতে চাইল, এটা কী?
-কাকের ঠ্যাং আর বকের ঠ্যাং।
-গুড। পারফেক্ট হয়েছে। এরশাদ হারামজাদা কাকের ঠ্যাং আর বকের ঠ্যাং ছাড়া আর কি হবে!
পকেট থেকে একটা বরইয়ের ডাল বের করল। পুরনো। এবং কালো। বলল, মন্ত্র টন্ত্র জানিস কিছু? বলতো একটা।
-যদা যদা হি ধর্মস্য গ্লানির ভবতি ভারত
-এর মানে কি?
-যখন ধর্মের বারো বেজে যায়- তখন শ্রী ভগবান উতলা হয়ে পড়েন। তার একজন খয়েরখাকে পাঠিয়ে দেন। বলেন- যা ব্যাটা সব ছাপা কর।
- হবে না।
-তা হলে কী বলব?
-বল, ধাই কিড়িং কিড়িং খট, হ্যাক থু।
-ধাই কিড়িং কিড়িং খট, হ্যাক থু।
বাতেন বরই কাঁটাটি বাম হাতের দুআঙুলে ধরেছে। চোখের মাঝখানে নিয়ে নিশানা করছে। তারপর ধাই কিড়িং কিড়িং খট, হ্যাক থু বলতে বলতে কাঁটাটি ছুড়ে মারল কাকের ঠ্যাং বকের ঠ্যাং ছবিরটা গায়ে। কাঁটাটি ভেঙ্গে গেছে। বাতেন একটু চিন্তিত হল। তবু সামান্য হেসে বলল, শ্যাষ।
-কে শ্যাষ বস?
-হারামজাদা এরশাদ। এরশাদকে ধাই কিড়িং কিড়িং বান মারলাম। ওর আলু পটল ঠাণ্ডা।
মাথার উপরে সূর্যটা হেলে পড়েছে। ব্রহ্মপুত্রের ওপারে বোটানিকেল। জোড়ায় জোড়ায় ছেলেমেয়ে ওখানে বসে থাকে। আজ কেউ নেই। একটা শিয়াল দাঁড়িয়ে পেচ্ছাব করছে। ঠ্যাং তুলে।
বাতেন বলল, ভয় খাসনে। ওটা শিয়াল না। কুত্তা।
-কুত্তা হৈলেও তো কাজ হৈত রে। যা খুশি খাইতে পারতাম। খিদায় তো প্রাণ যায় যায় অবস্থা।
এ সময় বাতেন প্রাণায়াম করে থাকে। প্রাণবায়ুর সঙ্গে দেহবায়ুর সংযোগ করে। ওর ধারণা, এতে করে তার টাক বাড়বে না। কিন্তু বাতেনের টাক বেড়েই চলছে। কোন শোধন পদ্ধতি দরকার। কাপালিক পেলে ভাল হত। কিন্তু বাংলাদেশে কাপালিক পাবে কোথায়? সব তো দেশবিভাগের সময় চলে গেছে বঙ্কিম বাবুর আদেশে ইন্ডিয়ায়। কারণ কপাল কুণ্ডলা ইন্ডিয়াবাসীনী। নাম পাল্টে হয়েছে- সুচিত্রা সেন। সঙ্গী শ্রী উত্তমকুমার। বারান্দায় দাঁড়িয়ে সুচিত্রা গান গাইছে- নিশি রাত বাঁকা চাঁদ/ আকাশে আকাশে/ চুপি চুপি কথা বলে বাতাসে বাতাসে। আর উত্তমকুমারের মেজাজ খারাপ। বিছানায় শুয়ে থাকতে হচ্ছে পরিচালকের নির্দেশে। মুখে দাড়ি-গোঁফ গজিয়ে গেছে। ছ্যাকা মাইসিন স্টাইল। এ কারণে বাতেন বৃটিশদের উপর খ্যাপা। সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী আন্দোলন-সংগ্রাম ছাড়া কাপালিকদের পাওয়া যাবে না। সাম্রাজ্যবাদ নিপাত যাক।
সরিষা ক্ষেতেরর পাশে পটল ক্ষেত। একট দূরে মাচায় করলা ধরেছে। বাতেন পটলের বদলে করলা বেছে নিল। ছিড়ে মুখে দিয়েছে। মুখটা কুচকে গেছে। আমাকে বলল, তোর জন্য পটলই সই। তুলে খা।
তুলতে যাব এ সময় মূর্তিমান বিষন্ন উত্তমকুমার এসে গেল। ক্ষেতে আগাছা তুলছিল। আমাদের দেখে ঝা ঝা গলায় বলল, আপনেরা এইহানে ক্যাঙ্কে আইছুইন?
-এরশাদে দৌড়াইছে।
-অ, আপনেরা ছাত্তর। হগল ছাত্তররা বাড়িৎ গেল। আপনেরা গেলাইন না ক্যান?
-আমার ট্যাহা নাই।
-আর আপনে?
-বাতেন করলাটা লুকোতে পারেনি। মুখের মধ্যে আধখানা। গিলতেও পারে না। ফেলতেও পারে না। অতি কষ্টে বলল, আমার যাওয়ার উপায় নাই।
-তাইলে আর কি করবাইন। থাকুইন এইহানে। ফকফকা আকাশ। বৈসা বৈসা শিয়াল তাড়াইন। আর ক্ষেত পায়রা দেউনযে।
উত্তমকুমার নীলক্ষা দিয়ে সুতিয়াখালি যাবে। সেখানে নতুন একটা ভিডো শো আছে। মধ্যরাতের পরী। মধ্যরাত ছাড়া পরীটাকে দেখা যায় না। তার আগে- নতুন বাংলাদেশ/ গড়বো মোরা/ নতুন করে আজ/ শপথ নিলাম। বড় মজাক।
বাতেন ক্ষেতের মধ্যে বসে পড়েছে। মাথা নাড়ছে আর ওয়াক ওয়াক করছে। হাতটা ফুলে গেছে। এরশাদের লাঠিকা বাড়ি। সোজা কথা নয়। ভোররাতে যারা রুম থেকে বেরুতে দেরী করেছে- তাদের সবার কপালের লিখন কেউ করতে পারেনি খণ্ডণ। আমার নিতম্ব জ্বলছিল। এখন খিদে ছাড়া অন্য কোন বোধ নেই। ক্যান্টিনের খাবারগুলোর কি হবে?
বাতেন বিড় বিড় করে বলছে, এরশাদ হারামজাদাকে কষে দুটো চড় মারতে পারলে ভাল হত। কিন্তু পারা যাবে না। হাতে ব্যাথা। বাম হাত দিয়ে বান মারাটাও জোরের হয়নি। মাসুদ আসুক। তিলের তেল ঘসলে সব ঠিক। হাতে জোর আসবে। তখন যাবি কই ব্যাটা স্বৈরাচার?
বাতেনের মাথাটা সত্যি সত্যি আউট। যতটুকু বাকি ছিল- খিদা পেটে করলা খেয়ে কম্মো ফতে। বেলা পাটে আসছে।
বেলাটার নিচে একজন বুড়ো লোক আমাদের দিকে বন্দুক তাক করছেন। মাথায় চুল কম। গোলগাল মুখ। লম্বা চওড়া। ঢোলা প্যান্ট। বললাম, বাতেন, দোস্ত- এবার কি করবি? গেছি। সুরা ইয়াসিন জানি না। তুই জানিস?
বাতেন কিছুই জানে না। বিড় বিড় করে বলছে- মাসুদ দেরী করিস না। চলে আয়। চলে আয়। আমি তোকে ডাকছি। তোকে সর্বান্তকরণে ডাকছি। এ চরাচরে তোকে আমি সুষুন্মামণ্ডলী থেকে আহ্বান করছি। তোর আত্মা আমার আত্মায় প্রযুক্ত হোক। চলে আয়। চলে আয় তিলের তেল নিয়ে। আয়। তেল দিয়ে আমার ভাঙা হাত মালিশ করব। আবার জোর ফিরে পাব। তারপর অই এরশাদ হারামজাদাকে সাড়ে হারামজাদা মার্কা বানটা মারব। আমাগো জান কয়লা করে দিছে। ধাই হিড়িং কিড়িং খট, হ্যাক থু ..
এ সময় একটা গুলির শব্দ হল। মাটিতে শুয়ে পড়া দরকার। বাতেনকে ঠেলে ফেলতে গেলাম। ও তখন পাথর। ব্যাটা প্রাণবায়ু ও দেহবায়ুর সংযোগে ব্যস্ত। প্রাণায়ামে যাওয়ার আর সময় পেল না।
মাসুদ দৌঁড়ে আসছিল। কিছুটা ভয়ে আর কিছুটা ভাবনায় দৌঁড় সামলাতে না পেরে ব্রহ্মপুত্রের পাড় থেকে সোজা জলের মধ্যে চলে গেল। একটু একটু করে জলের মধ্যে চলে যাচ্ছে। বাতেন তখনও গভীর প্রাণায়ামে। ওর বাপ আসলেও উঠবে না। মাসুদের কাছে দৌঁড়ে গেলাম। বালির উপর দিয়ে জলের মধ্যে ঝাপ দিলাম। মাসুদ জলের মধ্যে ডুবে যেতে যেতে বলল, দোস্ত আসিস না, আসিস না, চোরা বালি।
কিন্ত না এসে উপায় নেই। দৌঁড় আমাকে দৌড়ে নিয়ে গেল জলের মধ্যে। চোরাবালিতে। ডুবে যেতে যেতে দেখলাম, বাতেন উঠে পড়েছে। ঘোরের মধ্যে পা তুলছে। জলের উপর পা রেখেছে। পা ডুবছে না। দিব্যি জলের উপর দিয়ে হাঁটছে। নিচে নদী। আমাদের পাশ দিয়ে চলে গেল। আমাদের দিকে ফিরেও তাকাল না। যেতে যেতে বলছে, ধাই হিড়িং কিড়িং খট, হ্যাক থু। বাতেন বাতেনি কায়দায় নদীর মাঝখানে চলে গেল। তিনটে বালিহাঁস জলের উপর বসেছিল। ঝুঁকে একটি তুলে নিল। আমাদের দিকে ফিরে আদেশ করল, আয়।
মাসুদ আর আমি হুড়মুড় করে চোরা বালি থেকে উঠে পড়লাম। কে আগে পাখি ধরবে এই তরাসে দৌঁড়ে ছুটে গেলাম জলের উপর দিয়ে। আমাদের পা-ও ভিজল না। পাখিদুটো দুজনে ধরেছি। এরা সত্যি পাখি। মিটমিট করে চায়। আর পিক পিক করে হাসে। মাসুদ খুব খুশি। পাখির পালকে ফুঁ দিতে দিতে বলল, পাখি উড়ে গেলে পাখি পড়ে থাকে।
-পাখি নয়। পালক পড়ে থাকে।
-পাখি উড়ে গেলে পাখি পড়ে থাকে। ধাই হিড়িং কিড়িং খট, হ্যাক থু।
বাতেন জিজ্ঞেস করল, তিলের তেল এনেছিস।
-না, পাইনি। কাঁচা তিল এনেছি।
বাতেন দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। এরশাদ হারামজাদাকে একটা মন মতো কুয়ো বান মারতে পারলে মনে আনন্দ আসত। এখন পারা যাচ্ছে না। হাত ব্যাথা। অনড়। কাঁচা তিল মাসুদ মুখে পুরে চিবুচ্ছে।
বুড়ো লোকটি বন্দুক তাক করেই আছেন। বললেন, তোমরা যেভাবে আসছ সেভাবে হেঁটে আস। ছবিটা তুলে নেই।
আমরা তিনজন জলের উপর দিয়ে হেঁটে আসছি। থ্রি এঞ্জেলস। বুকের কাছে বালিহাঁস। সূর্য লাল হয়ে ডুবে যাচ্ছে। বুড়ো লোকটি বন্দুকটি নামালেন। পাড়ে গিয়ে দেখি- ওটা বন্দুক নয়। ক্যামেরা। তিনি আবার সূর্য ডোবার ছবি তুলতে তুলতে চলে গেলেন।
পরদিন মাসুদের পরীক্ষা হবে না। কবে হবে ঠিক নেই। মাসুদ মুশড়ে পড়েছিল। এখন মাথা নিচু করে বসে আছে বোটানিকেলের টাওয়ারের নিচে। মাঝে মাঝে তিলের বীজ দাঁতে কুটছে। আমাকেও দিয়েছিল। কিছুটা খাওয়ার পর বমি আসে। তিলের নাড়ু খেতে মজা। কাঁচা তিল নয়। বাতেনের হাতের অবস্থা খারাপ। আরও ফুলে উঠেছে। ব্যথা বেড়েছে। চোখ বন্ধ করে আছে।
আর যে এরশাদ আমাদের পাহারা দিচ্ছিল- তার ঠোঁটের উপরে প্রজাপতির মতো গোঁফ। মিটি মিটি হাসছে। আর গাইছে-
তেরে ভিজে বদন কি খুশবু সি
লেহোরে বি হুই মস্তানী
হু হু হু ।
একদম মেহেদী হাসানের গলা। রীতিমত সাধা। এরশাদ দশপাক ঘুরে সামনে এসে বলল, ভাল্লাগছে না?
ভাল কি মন্দ লাগছে বোঝা কঠিন। যে কোন ফ্রি জিনিসই ভাল লাগে। এখন বলা যাচ্ছে না। মাসুদ ফিসফিস করে বলল, তুই বল, আমাদের ভাল লাগছে।
ক্যাপটেন এরশাদ বলল, গুড। আরও ভাল লাগবে।
এরশাদ কায়দা করে আরও জোরে গান ধরল। এবার নারীর কণ্ঠ। আবিদা পারভিন। বাতাস ঘুরিয়ে দেওয়ার মত গলা।
মাসুদ বলল, খিদা লাগছে।
-ডোন্ট ওরি। খাবার আসছে। পোলাও মাংস। এরশাদের পাকশালে রান্না হচ্ছে। সেরা এরশাদ রাঁধছে। এর-স্বাদ কেরমে করমে পাইবেন ট্যার। হা হা হা এর-শাদ। শিয়ালকোটে ট্রেনিংয়ের সময় মেহেদীর হাসানের কাছে গান শিখেছিলাম। তার তুল্য গায়ক এ জমানায় আর কেউ নাই।
তেরি জুলফু কো ছুকার আজ হুয়ে
খামোশ হাওয়া দিয়ানী সি
এ সময় গেটের কাছে একটা গাড়ি থামল। ছোট বেটে একজন লোক নেমে এলেন। কালো স্যুট। পাট করা প্যান্ট। একটু গোড়ালির উপর ওঠানো। কপালে কালো দাগ। কালো মোকাসিন। মচর মচর শব্দ হয়। ইটালী থেকে আমদানীকৃত। একটি শালগাছের কাছে এসে থেমে গেলেন। কান খাড়া হয়ে গেছে। কী একটা শব্দ তাঁর কানে এসেছে। এগিয়ে গেলেন গাছের নিচে ঘন ঘাসের কাছে। তুলে আনলেন একাট শালিক ছানাকে। উড়তে পারে না। গাছ থেকে পড়ে গেছে। এদিক ওদিক তাকাচ্ছেন। পাখিটিকে গাছের উপরে তাদের বাসায় ফিরিয়ে দিতে হবে। কিন্তু তিনি গাছে উঠতে পারেন না। বয়স হয়ে হয়েছে।
ক্যাপটেন এরশাদ বাতেনের কাঁধে হাত রেখে বলল, ওঠ। বসে আছিস ক্যান।
বাতেনের মাথা আরও নিচু। বিড়বিড় করে কথা বলছে। চোখ দুটো লাল। হাতটা ফুলে ঢোল। ফোলা হাতটিতে পা দিয়ে চেপে ধরল এরশাদ। মাসুদ আঁতকে উঠল। উঠে দাড়াল। মিনতি করে বলল- না, না, না। ওকে ছেড়ে দিন। আমি যাচ্ছি।
ঠাস করে একটা শব্দ হল। মাথা টলে গেল মাসুদের। ঘাসের উপর পড়ে গেল। একটা দাঁত ঝরে গেছে। রক্তে ভরা মুখ। বাতেন বিড়বিড় করে বলছে, শালা মাসুদ, তিলের তেলটা আন। দেরী করিস না। হাতে মাখি। হারামজাদা এরশাদকে হুকো বান মারব।
ক্যাপটেন এরশাদ বাতেনের চুল ধরে টেনে তুলল। পাছায় লাথি মেরে বলল, যা- পাখিটা গাছে তুলে দে।
লোকটা বেটে খাটো এবার খুশি হল। বাতেনের হাতে পাখির বাসাটা তুলে দিল। বলল, ওঠতো বাপজান। গাছে ওঠ। বাবুটাকে মায়ের কাছে ফিরিয়ে দাও। বন্যেরা বনে সুন্দর- শিশুরা মাতৃক্রোড়ে। বাংলাপ্রবাদ। পরে পাল্টাতে হবে। উর্দু জবানী ফিরে আসবে।
বাতেন গাছে উঠল। খুব ধীরে ধীরে উঠল। হাত থেকে এবার রক্ত ঝরছে। এই হাত দিয়েই পাখিশিশুকে মাতৃক্রোড়ে রেখে এল।
লোকটা বেটো খাটো বলল, গুড জব। তোমার নামটি কি ভাই?
-নাম নাই।
-ভেরি গুড। নামের কোন দরকার নাই। কামের দরকার। শোনো- প্রাণীদের ভালবাসতে হবে। ওদের কষ্ট দেওয়া ঠিক নয়। আমি মৎস্যদের নিয়ে চারটি বই লিখেছি। এবার উর্দুতে অনুবাদ হবে। সহি ভাষা। বুঝেছ বাপজান।
ক্যাপটেন এরশাদের দিকে হাত বাড়িয়ে বললেন, আমি ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর আকাম আমিনুল ..
এরশাদ থামিয়ে দিল তাকে। তার তখন গান গাওয়ার বেলা বয়ে যায়। লোকটিকে বাতেনের পাশে বসতে ইঙ্গিত করলদিল। তারপর গান ধরল-
এ রূপকা কুন্দন দেখা হুয়া
হু হু হু
এ জিসমেকা চঞ্চল ম্যায় কা হুয়া
হু হু হু
এলযাম না দেনা ফির মুজকো
হো যায়ে আগার নাদানে সি
বিখরা হুয়া কাজল আখুমে
তুফান কি হালচাল শাসুমে
এ নর্ম লাব কি খামোসি
পলকো চুপে হয়রানে সি
গান চলছে। আর লোকটা বেটে খাটো মনোযোগ দিয়ে আকাশের তারা দেখছেন। একটি নোট বুকে টুকে রাখছেন- বৃশ্চিক রাশির গতিবিধি। পাশে কালপুরুষ। খ্যাপা কুকুর নিয়ে ছুটে চলেছে। জিহ্বা বেরিয়ে এসেছে। লালা পড়ছে। ঘড় ঘড় শব্দ হচ্ছে।
জিমনেসিয়ামের দিক থেকে কজন ছাত্র হেঁটে এল। সামনে পিছনে কয়েকজন এরশাদ। ঘাড়ে মেশিন গান। গাম চিবুচ্ছে। ক্যাপটেন এরশাদ গান থামিয়ে সোজা হয়ে দাড়াল। হেঁকে বলল, লোক- সোজা হও।
পিছনে জাফরান বন। সেখান থেকে সত্যিকারের কর্নেল এরশাদ বেরিয়ে এল। মুখে সিগার। ঘুরে ঘুরে সবার আগা পাছতলা দেখল। তারপর হাত মেলাল। । বলল, ভাইস-চ্যান্সেলর সাহাব?
-জ্বী স্যার।
-বলেন।
লোকটি বেটে খাটো পকেট থেকে একটা টাইপ করা কাগজ বের করলেন। লেজে হোমো এরশাদের অফিসের সিল মারা। অত্যন্ত দরদ ও আদব লেহাজের সঙ্গে শুদ্ধ উচ্চারণে পড়লেন, ‘দেশে দূর্নীতির বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষিত হয়েছে। এর জন্য দরকার সুসংগঠিত ছাত্র সমাজ। তারা এই জেহাদকে একটি যৌক্তিক পর্যায়ে পৌঁছে দেবে। এর জন্য যে কোনো উপযুক্ত মূল্য দিতে হুজুরে আলা মহামান্য প্রস্তুত। মনে রাখতে হবে- গণতন্ত্রকে একটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়া হবে। তারপর ব্যাক টু দি ব্যারাক। তবে এরশাদদের ক্ষমতার বাইরে রাখা ঠিক নয়। ভাগ দিতে হবে।’
মাসুদ বিড় বিড় করে আবার পরীক্ষার পড়া পড়ছিল। আগামীকাল তার পরীক্ষার তারিখ। বাতিল হয়েছে। কবে হবে ঠিক নাই। চাকরীর বয়স শেষ। ভবিষ্যত ফর্শা। তবু স্বভাববশে পরীক্ষার পড়া মনে আসছে। বাতেনের মাথাটা পুরোপুরি ঝুলে পড়েছে। গলায় ঘড় ঘড় শব্দ। জিহ্বা বেরিয়ে এসেছে। লালা পড়ছে।
‘এবং যা দরকার তা করার অঙ্গীকার সুদৃঢ়ভাবে লেজে হোমো অঙ্গীকার করছেন। এ কথা জানা দরকার- তিনি কবি এবং প্রেমিক। প্রেমিক এবং কবি। নিয়মিত গীত লেখেন। তা টিভিতে প্রচার হচ্ছে। ৃ’
তখন অঙ্গীকার অনুসারে ঝটপট পোলাও মাংস এসে গেল। লোকটি বেটে খাটো সবার আগে একটি প্লেট তুলে নিলেন। খেতে শুরু করলেন। বললেন, খেতে হবে তৃপ্তির সঙ্গে। চেখে চেখে।
মাসুদ একটি মুরগির হাড় চিবুতে গিয়ে থেমে গেল। বাতেনের ডান হাত পুরোপুরি অচল। ঘাড় পর্যন্ত ফুলে গেছে। চোখ বন্ধ করে অস্পষ্ট করে বলছে, হারামজাদা এরশাদ। তোরে কষে দুটো চড় দিতে পারলে আরাম হত। তিলের তেলটা আসুক। তারপর যাবি কই।
মনোয়ার ভাই বোতলে অভ্যস্থ নয়। দেশীর ভক্ত। এরশাদের ইশারায় রিকশা থেকে এক বালতি দেশী হাজির হল। ছলকে ছলকে উপচে পড়েছে। আকাশে বাতাসে গন্ধ। এনায়েত ভাই দীর্ঘ দিন পরে বিদেশী টানতে টানতে গেয়ে উঠল,
তেরে ভিজে বদন কি খুশবু সি
লেহোরে বি হুই মস্তানী
হু হু হু ।
সত্যি সত্যি একজন ভিজে মেয়ে এসে গেল। পরনে নকশীদার উর্ধাঙ্গবাস। বাতাসে ফুলে ফুলে উঠেছে ঘাঘরা। কর্নেল এরশাদ গেয়ে উঠল-
এই জোছনা ভেজা রাতে চলে যেও না
ভোর হওয়ার আগেই এই দলটি প্রথমে ভেঙ্গে ফেলল, ছাত্রলীগের অফিস। তারপর জ্বালিয়ে দিল ছাত্র ইউনিয়ন। শিবিরের অফিসের যাওয়ার আগে এরশাদবৃন্দ ডাইনে ঘুরিয়ে দিল। ট্রেনলাইন ধরে এগিয়ে চলল দলটি। হাতে হালকা অস্ত্র। চকচক করছে। কয়েকজন লোক ট্রেনলাইনে অবরোধ বসানোর চেষ্টা করছিল।
এনায়েত ভাই পরেছে একটি হ্যাট। পুরো কাউ বয়। কাউবয়দের নিশানা বরাবর ঠিক। তাদের হাত কখনো কাঁপে না।
পরদিন নির্বিেেট্রন চলল।
মাসুদ বাতেনকে ওঠানোর চেষ্টা করছিল। বাতেনের হাতটা ফুলে কলাগাছ। কোত্থেকে কয়েকটি ছাগল এসে কলাগাছের কচি পাতা চিবুতে লাগল। আর মাসুদ বিড়বিড় করে বলতে লাগল, হারামজাদা এরশাদ। তোরে একটা কষে চড় দিতে পারলে শান্তি হত।
আমি বাতেনের মত একটি মানুষের ছবি আঁকতে চেষ্টা করছি। হাত থরথর করে কাঁপছে। কাকের ঠ্যাং বকের ঠ্যাংও হচ্ছে না। হলে বলা যেত- ধাই হিড়িং কিড়িং খট, ওয়াক থু
পাতা ঝরার গান : পতিত শ্রমণ
গারবেজ ক্যানের উপর বসে থাকি। পা ঝুলিয়ে। শির শির করে বাতাস আসে। চুলের মধ্যে ঢুকে পড়ে।
হাঁটুর উপরে কাগজ রেখে আঁকিবুকি করি।একটা লম্বা আঁকাবাঁকা রেখা আঁকি। কী একটা পাতা। গোল গোল সুতোর মতো মেঘ আঁকি। আর ফুট ফুট তারা। ঝিকমিক করে ওঠে। কী হাওয়ায় দোলে।
দুএকজন লোক একটু দাঁড়িয়ে যায়। ভ্রু কুচকে দেখে। আবার চলে যায়।
এ সময় চেলসি নামের একটি মেয়ে এসে দাড়িয়েছে। হাসি হাসি মুখ। ছবির মতো। কিন্তু হাসি নেই। নিঃশব্দ।
অনেক ক্ষণ পরে গাল ফুলিয়ে বলে, আমাকে এঁকেছ? এঁকেছ আমাকে? আমার ছবিটা?
আমি আঁকছি এলানো ঢেউয়ের রেখা। তার উপরে অনেক উপর দিয়ে উড়ে যাচ্ছে পাখি। পাখিটার একটা লেজ দেই। এতো বড়ো লেজ- আকাশ আর জল ভাইবোন গলাগলি করে হাঁটে। একটা মাছও লাফিয়ে উঠেছে।
চেলসি চলে যায়। পিছনে ফিরে দেখেনি- মাছটির চোখে একটি চাঁদের চাদের পাহাড়। আর কখনো চেলসিকে দেখিনি। পাহাড়ের গায়ে বুনো ফুল। চেলসি চলে গেছে অন্য কোথাও। অন্য কোন কারো কাছে। কোনো গাছের কাছে। অথবা নদীর কাছে। সত্যিকারের পাহাড়ের ধারে।
কে একজন ডাকাবুকো মেয়ে কি মহিলা কোমরে হাত দিয়ে দাড়াল। সোজা করে বলল, তুমি চেলসির ছবিটা আঁকনি? আঁকনি?
-কে চেলসি?
-আমার মেয়ে। তুমি আঁকনি ওর ছবি? লাল হয়ে উঠেছে মুখটি। রাতজাগা চোখ। চুলে ধুলোর কাগজ।
আমি আঁকছি- পাহাড় থেকে একটি পাথর ছিটকে পড়ছে নিচে। আলোর রোশনাই উছলে উঠেছে চারিদিকে। আর কে যেন গান গাইছে, আমি এমনি এসে ভেসে যাই..
আমার কাগজটি থাবা দিয়ে নিয়ে চলে গেল। যে যায় - সে আর ফেরে না।
অনেকদিন পরে এক বুড়ি এসে বসল আমার গারবেজ ক্যানটির পাশে। আমি লিখছি-
ইকড়ি মিকড়ি চাম চিকড়ি
চাম কাটে জমিদার
ধেয়ে এলো দামোদর-
বুড়িটা বসে রইল অনেক দুরে তাকিয়ে। চুলগুলো সাদা। চামড়া কুঁচকে গেছে।
বলল, ওগো ভালমানুষের ছেলে। চেলসি খুব হেসেছিল তোমার ছবিটা পেয়ে। খুব হেসেছিল।
-হেসেছিল কেন?
-ওর ছবিটা তুমি একেঁছ ঠিক ঠিক। কিভাবে জানলে ওকে?
-হেসেছিল কেন?
- হেসেছিল একদিন। সেই একবারই হেসেছিল। চাঁদের আলোর মতো। হাওয়ার গানের মতো। নদীর স্রোতের মতো। প্রাণের স্রোতের মতো হেসেছিল। তুমি ঠিকই চিনতে পেরেছ ওকে, হে ভালমানুষের ছেলে।
বুড়ি কথা বলে পাতা ঝরার মতো করে। কথার মধ্যে বেদনা লুকিয়ে বোনে। ফিসফিস দীর্ঘশ্বাস। বলে, এলসাকে দেখতে চেয়েছিল হাসি শেষ করে। এলসাকে পাবে কোথায়। ও দিনমানে ঘোরে পার্কে পার্কে। রাতে শেকড় ছড়িয়ে দাড়িয়ে থাকে দীর্ঘ ওক গাছের মত। শিশির ঝরে টুপটাপ। পাতা থেকে ডালে। ডাল থেকে হাওয়ায়। হাওয়া থেকে ঘাসে। ঘাস থেকে মাটিতে। ঠিক সকালে গাছটি তো আর গাছ থাকে। পাতা। ঝরা পাতা হে।
বুড়ি বলে, ওর বাবাতো মাতাল। ওটা আসল বাবা কিনা কে জানে। হা হা করে হাসে। হু হু করে কাঁদে । ফোস ফোস করে ঘুমায়। একটি পোকার মতো। খোলস পাল্টানো শুয়োপোকার মতো। চেলসি হাসতে হাসতে এলসাকে দেখতে চেয়েছিল। বলতে চেয়েছিল, মা। বাবা। নাকি বলতে চেয়েছিল, ভালবাসি। বলতে চেয়েছিল, আহ্? তুমি জান ও কাঁদতে কাঁদকে কী বলতে চেয়েছিল? কী বলার ছিল ওর?
আমি পার্কের পুরনো জুবুথুবু গার্বেজ ক্যানের উপরের বসে থাকি। একা একা। মাথা নিচু করে লিখি। লিখি-
ইকড়ি মিকড়ি চাম চিকড়ি
চাম কাটে জমিদার
ধেয়ে এলো দামোদর
বুড়িটা নেই। চলে গেছে। অথবা বুড়িটা ছিল না। একটা হুসহুসে হাওয়া ছিল। অথবা পাতা ঝরার শব্দ। মাটির শব্দ। জলের শব্দ। নৈঃশব্দের শব্দ।
হাওয়া পুলিশের পেরজাপতি : আধখানা নভেলেট
গোঁফটা সাইজ করতে গিয়ে ছোট বড় হয়ে গেল। কি আর করা। দিলাম ফেলে। আমার ছোট মেয়ে প্রজ্ঞা পারমিতা বলল, এ মা, তোমাকে দেখি জেঠার মতো লাগে। বড় মেয়ে পূর্বা অতন্দ্রিলা মুখ ভেংচি কেটে ঘরে দোর দিয়ে হাসতে লাগল। আর একমাত্র বউ মেরী রাগে গজ গজ করতে করতে বলল, বাপের বাড়ি চলে যাব। মনে করছে এখনো পিরোজপুরে আছি। হুলারহাটে সন্ধ্যা নদীতে নৌকায় উঠে পড়লেই সোজা চাঁদকাঠি। হা হা হা। এটা হাডসন নদী। ভুলে গেছে।
জেনির কাজ ছিল না। এসেছিল চেক নিতে। আমাকে বলল, তুমি রায়কে দেখেছ?
আমি হা করে আছি।
জেনি বলে উঠল, নতুন নাকি! রায়কে চেনো না? সেই শয়তান আধ বুড়োটা? দেখতো গেল কোথায়?
ক্রিস্টাল কাছেই ছিল। ওর মেজাজটা বেশ খারাপ। ওর ছেলেটা কাল অসুস্থ ছিল। বন্ধু সঙ্গ হয়নি। জেনির আটত্রিশ বছর বয়স। এখনো নিঃসন্তান। জেনির হাত ধরে বলল, তুই কী বললি?
-তোকে বলতে হবে! তুই কেডা?
-তর মা লাগে।
-আমার মা পাগল না।
-তর চৌদ্দগুষ্টি পাগল। আঠাশগুষ্টি ছাগল। নাইলে রায়রে কৈস শয়তান! আধবুইড়া! হু-হ-
বুড়ি জাজমিন খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাঁটে। কাফেটেরিয়ায় দাড়িয়ে আয়না দেখছিল। হাতে একমগ কালো কফি। ছুটতে ছুটতে এলো। চোখে মুখে খুশি খুশি ভাব। লাল টপস আর মিনি স্কার্ট পরনে। ফিসফিস করে এবং চেচিয়ে বলল, কোন আধুবুড়োটা এসেছে রে? কোন আধবুড়ো?
ততক্ষণে জেনি আর ক্রিস্টাল হাতাহাতি শুরু করছে। জেনির পরচুলা খসে গেছে। ক্রিস্টালের লিপিস্টিক সারা মুখে মাখামাখি। লোকজন মজা দেখছে। কে জবাব দেবে বুড়িটাকে।
মিঃ ফ্রাই এক কোণে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কেরল গাইছিল। চোখ টুপিতে ঢাকা। বয়স বিরাশি। জাজমিনকে দেখে আরও কাঁপা কাঁপা গলায় আভে মারিয়াকে বাদ দিয়ে শাকিরাকে ধরল, হিপ ডোন্ট লাই...
...Oh baby when you talk like that
You make a woman go mad
So be wise and keep on
Reading the signs of my body
And I'm on tonight
You know my hips don't lie
And I am starting to feel you boy
Come on let's go, real slow
Don't you see baby asi es perfecto
Oh I know I am on tonight my hips don't lie
And I'm starting to feel it's right
All the attraction, the tension
Don't you see baby, this is perfection
Shakira, Shakira
Oh boy, I can see your body moving
Half animal, half man
I don't, don't really know what I'm doing
But you seem to have a plan
My will and self restraint
Have come to fail now, fail now
See, I am doing what I can, but I can't so
you know
That's a bit too hard to explain ...
এ সময় পুলিশ এসে গেল ভয়ংকরভাবে বাঁশি বাজাতে বাজাতে। আমাদের আপিসের চারিদিকে গোটা দশেক গাড়ি। সুর সুর করে শাদা শাদা মোটাসোঁটা পুলিশগুলো নানা এ্যাকশনে পজিশন নিল। একটা এ্যাম্বুলেন্স আলো জ্বালিয়ে দরোজা খুলে দিল। বাইরে স্ট্রেচার হাতে টহল ডাক্তার রেডি। কাগজে কি সব লিখছে। আর গোটা তিনেক ফায়ার গাড়ি পরীক্ষা করতে লেগে গেছে হাইড্রেন্টগুলি। সড় সড় করে জল পড়ছে।
ধেড়ে পুলিশটা টর্স উঁচিয়ে বলে উঠল, কী সমস্যা?
জেনি ততক্ষণে মুখের লিপিস্টিক লাগিয়ে ফেলেছে। আর ক্রিস্টাল জেনির খয়েরী পরচুলাটা। একটু ঢ্যালঢ্যালে হল বটে- তবে দুজনে হেসে উঠে হাত ধরাধরি করে বলল, নাথিং। এভরি থিং অল রাইট। আমাদের কোনো দোষ নেই। যত দোষ অই নন্দঘোষ- রায় ব্যাটার।
হুম। রায় ব্যাটা কই? মুখটা গম্ভীর করে চিন্তিত হয়ে পড়ল ধেড়েটা। রেডিওতে কার সঙ্গে কি সব হড়বড় করে বলল। ভয়ে কেঁপে উঠলেও জেনি আর ক্রিস্টাল কিন্তু হো হো হা হা হি হি করে হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়ল। এদের মতো প্রাণের বন্ধু কোথাও তুমি পাবে নাকো খুঁজে।
বুড়ো ফ্রাই আবার তখনো ধরেছে আভে মারিয়া-
তুমি মা মমতাময়ী,
জগতের ত্রাতার জননী...
ত্রাণ করো পাপতাপীর কঠিন হৃদয়...
বুড়ি জ্যাজমিন ধেয়ে এল পুলিশটার দিকে। বলল, ওরে খেংরা তুই আবার আধ বয়েসী হলি কবে? বুড়ো কবরের ভুত- বাসি চুলের লাদি।
পুলিশটা একটু সরে গিয়ে আমার হাতটা ধরতে গেল। ধরলও খপ করে। আর অমনি একটা খোলস আমার শরীর থেকে খসে বেরিয়ে এল ওর হাতে। খোলসের ঠোঁটের উপরে পেরজাপতির মত কোন গোঁফ নেই। ধেড় ধেড়ে ছুপা রুস্তম। ফর্শা। আকাশে উড়ছে পেরজাপতির মতো দুটো হেলিকপ্টার।
পরী পার্কের পরীটা দিনের বেলা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ঘুমায়। আর রাতে অনেক দুরে উড়ে যায়। এই মধ্য দুপুরে পরীটা জেগে উঠেছে। ঘাড় কাত করে কিছু কিছু দেখতে পেয়েছে। তার পায়ের কাছে যে লোকটি ফোঁস ফোঁস করে নাক ডাকছিল তাকে ডেকে বলল, মেরে লাল, ওখানে কি হচ্ছে?
মেরে লাল ঘুমে অচেতন। তার বয়েই গেছে চোখ খুলতে। পাশ ফিরতে ফিরতে বলল, সিনেমা হচ্ছে- সিনেমা। সিটি এন্ড দি সেক্স। বক্স অফিস হিট।
-তাই নাকি! নড়ে চড়ে উঠল পাথরের পরী। হাসি হাসি মুখ। বেশ কিউট। অনেকদিন সাজনকাজন নেই। কুচ পরোয়া নেই। বুড়ো ফ্রাই গাইছে আভে মারিয়া-
আকাশের চাঁদ থেকে
এসেছে নেমে স্নেহসুধা,
জগৎ ধন্য হল তার তরে
তুমি মা মমতাময়ী
পুলিশটার মোবাইল বেজে উঠল। একহাতে আমার খোলস। অন্য হাতে মোবাইল। ওদিকে কাংস্যকণ্ঠে সহেলী ঝাড়ি ঝাড়ছে- ব্যাটা উকুনের পো, তোর গোঁফের একপাশ ফেলছিস। আরেক পাশ তর বাপে ফেলবে?
পুলিশ বাবাজীর ঘোর বিপদ। মুখটা লাল হয়ে উঠেছে। ভয়ংকরীর দূর সম্পর্কের মাসি হলেন মেরেলিন মনেরো। যে সে ঘাটে নৌকা বাধেঁ না। মোবাইলটা আমার হাতে দিয়ে বলল, ধর। তারপর আধখানা গোঁফটা চেপে ধরে সুর সুর করে বেরিয়ে গেল। হাতে আমার গোঁফহীন খোলস। একটু আটোসাঁটো হবে। কিন্তু কী করা। পুলিশ বাবাজীর কষ্টে সৃষ্টে পরে নিতে হবে। এ ছাড়া উপায় নেই।
তুমি যা ক্ষমতাময়ী,
ত্রাণ করো এ অধমেরে।
আকাশের তারা থেকে
ঝরে যে গরলধারা...
কাংস্যময়ী ততক্ষণে নরোম সুরে বলছে, মেরে দিল, তাড়াতাড়ি সাফা করো। গোঁফ ফালাও। দেরী করো না,প্লিজ। আমার সুড়সুড়ি ভাল লাগে না।
ভাসান চর- হাসান চর
ভাসান চরে একবার লটকন গাছ লাগানোর ধান্ধা করেছিলাম।
অতি প্রত্যূষে লঞ্চে উঠেছি। কীর্তনখোলার বাঁক পার হতেই চক্ষু চড়কগাছ। নদীর কূল নাই- কিনারা নাই। প্রাণ উড়িয়া যায়। সারেং দ্যাখে আর হাসে। বলে, স্যারের বাড়ি কই?
- ফরিদপুর।
-চোর ছ্যাছোড় আর খেজুর গুড়।
হ্যায়রে কয় ফরিদপুর।।
চোখ মুখ লাল হয়ে গেল। বলে কি লোকটা! ডাকাত বললেও মান-ইজ্জত থাকত। এক্কেবারে চোর! আবার চ্যাছোড়!! বললাম, তর বাপে চোর। চৌদ্দগুষ্টি ছ্যাছোড়।
সারেং শুনে লাফ দিয়ে উঠল। লঞ্চের ঘুল্লি হালটা ছেড়ে দিয়ে আমার টুঁটি চেপে ধরল। লঞ্চ এদিক যায়। ওদিক যায়। থর থর করে কাঁপে। ঢেউয়ের দোলায় নাচে। নদীটা ছোট্ট হলেই খেল খতম হত। কত যে এক্সিডেন্ট হত- বলা মুশকিল। এদিকে সুকানি, কেরানি আর হেল্পাররা কাজ ফেলে এসে গেছে। আমাদের লড়াই দেখছে। আর কষে হাততালি দিচ্ছে। মোরগ লড়াই। মাঝে মাঝে গালাগালি। আর হাতাহাতি। চুলোচুলি।
তিন ঘণ্টা পরে সারেং বাবাজি আমার ধূলো ঝেড়ে দিল। পিঠ চাপড়ে দিয়ে বলল, সাব্বাস। দ্যাহেন- ভাসান চর আইসা গ্যাছে। নামেন।
নামতে নামতে শুনলাম, ভয় খাইয়েন না। লড়াই কৈরেন। ভয় যাব গিয়া।
এত খাঁটি কথা জীবনে শুনিনি। সারেংকে সেলাম।
এই ভাসান চরেই আখুঞ্জী সাবের সঙ্গে দেখা। সুপারি গাছের নিচে বসে ছিলেন। বললেন- লটকন লাগাইবেন ক্যান, হেইডা কন তো মিয়া?
-নতুন ফল।
- সোয়াদ কেমুন?
-মিঠে আর টকা।
- হুম। চলবে না। চৈলা যান। খামোখা ভেজাল কৈরেন না।
-ক্যানো চাচা?
-এক লগে মিডা আর টক? খুব সন্দোহজনক। হয় মিডা- নাইলে টক। মিশাল জিনিস মানেই ভ্যাজাল। ভ্যাজাল মাল চালাইবা ক্যান বাবাজী?
কঠিন প্রশ্ন। এর উত্তর দেওয়া আমার বাপের সাধ্যি নাই। বললাম, চাচা, আপনি কি করেন?
-কাজ থাকলে বিশ্বাস করি। আর অবসরে থাকলে সন্দোহ করি।
-সেতো বুঝলাম। এখন কি করছেন?
- ব্যাডায়, এই বুড়া বয়সে আবার কাজ কি? আছি অবসরে।
আখুঞ্জীনামা/১
অতি আদুনিক নোবেল : গৈয়া বাগানের পিয়ারা বিগম
গৈয়া গাছ নিয়া বড়ো বালা-মুছিবত। একবার বাজান বোলায় কৈলো- বাগানে যাইয়া পায়রা দ্যাও। বাগানে গৈয়া দরতে শুরু হরছে। রঙ ঢং আইতাছে। এই সুমায় কাউয়ায় গৈয়া টুকরায়। মহা জামেলা।
গেইসি বাগানে একদিন। একখান বারমাস্যা চটি মাতায় দিয়া গুমায় পড়সি।
ও খোদা, কোত্থিকা য্যান জটপট শব্দ। কু কু করে রে। দেহি কাউয়া উইড়্যা যায়। বোজেন ব্যপারডা।
মুনে করলাম, দুইডা গৈয়া পাইড়া খাই। যেইনা উডসি, বাবসি কুন গৈয়াডা পাড়ুম, অমনি হুনি কে য্যান খিল খিল্যাইয়া হাসে। কেউরি দেহি না। দেহি গৈয়া ডালে একজোড়া রাঙা পা। কী বেপদ, বোজেন?
হেই দিন থেইক্যা কানে দরসি, আর কুনোদিন গৈয়া খামু না। আর কুনোদিন খিলখিলানো হুনমু না। তাতে জেবন থাউক আর যাউক।
কিছুদিন যাইতে না যাইতে মামুজান আইসা কইলেন, এই পোলাডার তো মাথাডাই গেসে।
তিনি নিয়া গেইলেন এক কাচারী গরে। সেইহানে বাজান তামুক খাইতাছে গুড়ুক গুড়ুক কইরা। আর আছেন কয়জুন মামাতো ফুফাতো বাইবোন। এন্ডিগেণ্ডি। ময়মুরুব্বি। আর এক কাজী সাব। আমি কী আর করি। চক্ষু বুইজ্যা ঝিমাই।
হাসু খালা হাত দইরা নিয়া গেইলেন বাড়ির বিত্রে। একখান গর। বালই সাজসইজ্জা। বাবতাছি এইহানে ক্যান আইসি। কী দরকার মোর এই রহম গরে?
চক্ষু তুইল্যা দেহি- টেবিলের উপ্রে একখান প্লেডে দুইডা গৈয়া। টসটসে। আর কেউ নাই। মোর ডর কইরা উডল। কৈলাম, কেউ আছেননি এইহানে?
কেউ নাই। পদ্দার বাইরে দেহা যায় শুদু একজুড়া রাঙা পা। কাইপা উডলাম। অবস্থা বয়ংকর। কৈলাম, কেডা আপনে? কুন পরী?
কানে আইলো হেই খিলখিলানি হাসি। কে য্যান কৈল, মোর নাম পিয়ারা বিগম।
মুই চক্ষু মুঞ্জে দেলাম। আর কুনোদিন চক্ষু খুলি নাই। হেই থেইক্যা চক্ষু মুঞ্জা রাকসি এই বুইড়া কাল পরযন্ত। কুনোদিন দেহি নাই পরীডার মুক।
আইচ্চা, মুই কি বুল করসি?
আখুঞ্জীনামা/২
নয়া ছিঃনেমা : দি বেড বাগ- যহন ছারপুকা আইল
একবার টহি (টকি) দ্যাকপার গেইসি। পাতারহাডে তহনো গানদী বাবুর লঞ্চ আহে নাই। গয়না নৌকায় আইয়া পড়ছি। সদোর রোডে টহি হাউস। নয়া বই- কানেচোন মালা। বিলাক এন্ড হোআইড।
কানচোনরে সাপে কাডছে। মহা হৈ চে গটোনা। মালার অবোস্তা টাইট। কড়ি চালান হৈচি। কড়ি ফালাইয়া ফালাইয়া যাইতাছে। সাপরে দৈরা আনছে। কয়, বিষ তোল।
সাপ পায়ে মুক ডুবাইয়া চুইষা চুইষা বিষ তুলতাছে। বয়ংকর দিরিশ্য। হাতে কেলাপ। গাম দিয়া জ্বর ছাড়ল।।
দেহি, পাশের ছিডে মোর উনি চউক মুছতাছে আর কানতাছে। ডেকসি উঠ্যা পড়ছে। মাইয়া মাইনসের মন। খুব নরোম।
কইলাম, কানতাছো ক্যান?
উনি কথা কয় না। খালি কান্দে। মহা জামেলা।
কই, কান্দো ক্যান। কানচোন বাইচা উডছে। হাসো। এহুন সবাইতো হাসতাছে। আর এইডা হাচা না, টহি, ইসটোরী।
মোর উনি উইডা পড়লেন। কইলেন, টহি ফহি না। ছারপুকা। ছারপুকায় কামড়ায়।
বোজেন ঠ্যালা। ইজ্জত কা সওয়াল। মুই কানে দরছি। জেবনে আর টহি না।
টহি বদলাইয়া হুনছি এহুন ছিঃনেমা হৈচে । বিডিও হৈচে।
হেইদিন গরমে বিমরি খাইতাছি। ছোডো নাতনি আনজুম বিডিও দ্যাখতাছে। নয়া ছবি- এক টাহার খালা।
হডাৎ আনজুম চিক্কুর পাইড়া উডলো, বাগ। বাগ।
মুইতো বয়ে মরি। এই ডাহা শহুরে আবার বাগ আইলো কুনহান থেইক্যা। তাও আবার ৬ তালার উপ্রে! সব্বোনাশ। কামড়াইলে বেপদ।
আনজুম হাইসা কৈল, ভয় খাইসো, দাদায়?
-বয় খামু না? বাগ বৈল্যা কথা। বাগ না, ব্যা..ব্যা..গৃ..ব্যাগ..রো।
না, না। ব্যাগরো হৈব ক্যান। টাইগার হৈব ক্যান। এই দ্যাহো- আনজুম কী এটটা হাতের তালুতে আইনা চউকের সামনে মেইলা দরলো। দীরে দীরে দেহি, ও খুদা, এ যে দেহি মোগো পুরানো ছারপুকা। রক্ত খাইয়া ডোল।
আনজুম গোস্বা কইরা কয়, উহুম। দাদায় ইসমার্ট হও। এইটা ছারপুকা নয়। বেড বাগ। বেড বাগ।
কততো দিনইতো বদলাইয়া গেইলো।
ব্যাডা, ছারপুকার কুনো বদল নাইক্যা!
আখুঞ্জীনামা/৩
আয়ুব খানের ঘোড়া : কে তাহারে চিনতে পারে
আমার মামু গওহর আলী মসতো বড়ো কবিয়াল। জাকড়া চুল। বাউলা ডেরেস।
একদিন গঞ্জ থিক্যা ফিরা মামুরে আর খুইজা পাওয়া গেল না। মূলাদি আর আমতলীর বায়নাওয়ালারা চইলা গেল। তাগো মুক ভার। কেডা আর তাগো আসর জমাইবো। এই চিন্তায় তাগো মাতা আউলা।
মামীর কিন্তু কুনো চিন্তা নাই। খুপ কুশি। আগে গান পসনদো করতো না। কৈতো গানই হ্যার সতীন। আর এহুন রান্না করে আর নিজি নিজি গুনগুনাই গান গায়- নিশিতে যাইও পুল বনে। চউক্ষে কাজল। বুজলাম, বেপার সুবিদার না। কৈলাম, মামু কৈ?
মামী হাইস্যা কুডি কুডি। কয়, দ্যাহো খাডের তলায়।
খাডের তলায়ই মামুরে পাওয়া গেল। মাতার হেই লোম্বা চুল আর নাই। টাক। নয়া চুল গজাইতেছে। কদম পুলির লাহান। আর বোজা যায়- কিছুডা আলকাতরার দাগ চান্দিতে এহনো আচে।
-কী হৈচে মামু?
- আয়ুব খানের আম্রি চুল কাইডা দিচ্ছে। কৈছে নয়া জামানায় এইসব চলবে না।
মামু মাতায় গামছা বাইনদা গঞ্জে গেল। ফিরা আইল দুইদিন পর। মাতায় কিস্তি টুপি। লগে দুইডা ছাগোল। ব্যা ব্যা কৈরা ডাকতেআছে।
-ছাগোল দিয়া কি হরবা মামু?
- ঘোড়া দৌড়ানিতে নামামু।
- ঘোড়া দৌড়ে ছাগোল? বুজবার পারতাছি না।
-সুইজা কাম নাই। এইডা তুমার বাপের ছাগোল না- আয়ুব খানের ছাগোল। মুন্সী সাব দিছেন।
হেইদিন হৈতে মামুর লগে লগে ছাগোল দুইডা। ছাগোল দুইডার লগে লগে মামু। হারাদিন গেরামের ব্যাবাক কাডোল পাতা খাইয়া শ্যাষ। হ্যারপর অন্য গেরামের পাতাও শ্যাষ। আয়ুব খানের ছাগোলের তাগোদই আলেদা। পরের কাডোল পাতা খাইয়া পাঞ্জাবী ঘোড়ার মতো নাদুস নুদুস হৈয়া উডল। হডাৎ কৈরা দেকলে হ্যাগো ছাগোল না- হাছা ঘোড়ার লাহানই লাগে। আর দ্যাশ গেরামের ছাগোল গুলান খাইদ্য না পাইয়া শুটকো ইনদুর হৈয়া গেল।
অবোস্তা আরও জুটিল হৈল- যহন মামু ছাগোলের লগেই গুমান শুরু করলো। মামী রাগে গজ গজ কৈরতে লাগল। আগে আছিল গানের পাগোল। এহুন হৈছে ছাগোলের পাগোল।
মামু কয়, একদুম চুপ। এডি ছাগোল নয়রে। এডি আয়ুব খানের ঘোড়া। সমসসা হৈলে মহাবেপদ।
কাউয়ার চরে সাতদিন দৈরা প্যানডেল বানান হৈল। লেহা হৈল শালু কাপুড়ে- ঐতিহাসিক ঘোড়ার দউড়। আর আইল মাইক। দিন রাইতে বাজতে লাগল- লাল দুপাট্টা মল মল মল।
যেইদিন ঘোড়ার দউড় হেইদিন সহালে দুইজুন কসাই আইসা ছাগোল দুইডারে জবাই কইরা ফেললো। অন্য কুনো কতা নাই। কয়জন বাবুর্চি আইসা রাননা বাননা শুরু করল বড়ো ডেকচিতে। মামু আতকা কৈলো- এইডা কি করলেন? মোর ঘোড়ার দউড় হৈবে ক্যামনে?
লুকগুলান কতা কয় না। গুইরা গুইরা নাচে। আর রাননা করে। আর গান গায়- লাল দুপাট্টা মল মল মল।
মামী শরমে ঘরে গিয়া খিল দিল। খাডের নীচে ডুকলো।
মুন্সী সাবের লঞ্চ কাউয়ার চরে আইসা বিড়ল। মাতায় জিননাহ টুপি। চউক্ষে সুরমা টানা। লোম্ব শেরওয়ানী। কালো মুকাসিন পায়ে। মচোর মচোর শব্দ অয়। চোস পাজামা। আতরেরর গইন্দে নাকের মইদ্যে ছ্যাত কৈরা ওডে। খানা পিনা সারলেন লঞ্চেই। লোম্ব ডেইক ছাইড়া কৈলেন, আইচ্চা বি খানা হ্যায়। দিল তক বি ঠান্ডি হো জায়গা।
মামু বিড় বিড় কৈরা এর মইদ্যে একবার কৈলেন, মোর ঘোড়া দউড়োনির কি অইবে?
মুন্সী সাব দাঁত খিলাইতে খিলাইতে কৈলেন, এইডা তুমার চিন্তা না। গান বানাইচো?
-না।
-সে কি? তুমার এহুন কাম নয়া নয়া গান বানদা। আর নাপসোন্দ গানের কতা পাল্ডাও। আরও কত কি কৈলেন মুন্সী সাব। মেলা হিস্টিরি। হ্যাষে কৈলেন, তাইলে একহান গান হোনাও তো দেহি। হুনি।
গওহর মামু কি আর করেন। গান দরলেন-
প্রাণ সখিগো
অই শোন কদম্বডালে বংশী বাজায় কে?
মুন্সী সাবের নয়া বিবি একবার কেবিন থিকা বাহিরে আইলেন। কিচুক্ষণ চাইয়া রইলেন চরের দিক। আবার কেবিনের মইদ্যে ডুইকা গেলেন। তার বয়স ১৬-১৭ বচোর। মুন্সী সাব হাত দিয়া মামুরে থামাইয়া দেলেন। কৈলেন, তুমার এই প্রাণ সুখিডো কেডা?
-রাদা।
-কদম্ব মানে কি?
- কদম পুল।
- বংশী?
- বাশিঁ।
- আর বাঁশিডা বাজায়- হেইডা কেডায়?
- কিসনো।
- কোন কিসনো? মাইয়াগো লগে দিললাগি করতো যেই কালা বেডা- হেই নিকি তুমার কিসনো?
মামু কুনো কতা কৈল না। মুন্সী সাব ঠান্ডা গলায় হুকুম দেলেন, এই ছাগোলডারে বান অই খাজুরগাছের লগে। আর অর কান দুইডা কাইডা ফ্যালা। হালায়, মালাউনগো গান গায়!
মুন্সী সাব ঘোড়া দউড়ানির মাডের দিক হাডা দিলেন।
হেইদিন কাউয়ার চরে লুকে লুকারণ্য। কুনো জাগা ফাকা নাই। ইস্টেজে মুন্সী সাব নাক ডাকতেআছেন। খানাপিনা আচ্ছা হৈচে তো। আর বয়সডাও তো কম না। মাইকে বাজতেআছে- আর কিচুক্ষণের মইদ্যে শুরু হৈবে । অইতিআসিক ঘোড়ার দউড়। এডি যে কুনো ঘোড়া লয়গো। এইডি পিল্ড মার্শাল আয়ুব খানের ঘোড়া।
মুন্সী সাবের গুম বাঙতে বাঙতে রাইত নাইমা আইল। চর জুইড়া গুডগুডা আনদার। দুএকডা জুনাকি পিরিক পিরিক কৈরা জ্বলে। এর মইদ্যে কুন সুমায় ঘোড়ার দউড় শুরু হৈল বুজবার পারলাম না। আবসা আলোতে দেকলাম, কয়ডা শুডকি ইনদুর দউড়াইতাছে জিমাইতে জিমাইতে। আর হ্যাগো পিচে একডা মানুষ মেলা কষটে দউড়ানোর বঙ্গি করতাচে। লুকডা ঠিকমতো খাড়াইতেই পারে না। দউড়াবে কি! পইড়া পইড়া যায়। আর দুইডা দইত্য হ্যার ঘাড় দইরা তক্ষুণি উডাইয়া দ্যায়। হাইকা কয়, দৌড়া- ঘোড়া দৌড়া।
মেলাদিন পরে গঞ্জে গেছি। লঞ্জ গাডে দেহি ছুডো খাডো বিড়। বিড়ির মইদ্যে একডা লুক কিমরির বড়ি বেচতেআছে।
মাতায় জিননা টুপি। কানের জাগায় কান নাই। হেইহানে ছাগোলের দুইডা কান দড়ি দিয়া বানদা।
কৈলাম, মামু, অ মামু!
কেডা কার মামু? লুকডা বেঞ্জু বাজায় আর গান গায়-
পিয়ারা দোসতো গো
অই শোন খাজুর তলায় শিঙ্গা ফুকায় কে?
পরিশিষ্ট/ ১
(হারিয়ে যাওয়া : শোলার ফুল গল্পে সংযোজিত হয়েছিল অন্তর্জালে)
হারিয়ে যাওয়া
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
ছোট্ট আমার মেয়ে
সঙ্গিনীদের ডাক শুনতে পেয়ে
সিঁড়ি দিয়ে নীচের তলায় যাচ্ছিল সে নেমে
অন্ধকারে ভয়ে ভয়ে, থেমে থেমে।
হাতে ছিল প্রদীপখানি,
আঁচল দিয়ে আড়াল ক’রে চলছিল সাবধানী।
আমি ছিলাম ছাতে
তারায়-ভরা চৈত্রমাসের রাতে।
হঠাৎ মেয়ের কান্না শুনে, উঠে
দেখতে গেলেম ছুটে।
সিঁড়ির মধ্যে যেতে যেতে
প্রদীপটা তার নিভে গেছে বাতাসেতে।
শুধাই তারে, ‘ কী হয়েছে বামী?’
সে কেঁদে কয় নীচে থেকে, ‘ হারিয়ে গেছি আমি।‘
তারায়-ভরা চৈত্রমাসের রাতে
ফিরে গিয়ে ছাতে
মনে হল আকাশ-পানে চেয়ে,
আমার বামীর মতোই যেন অমনি কে এক মেয়ে
নীলাম্বরের আঁচলখানি ঘিরে
দীপশিখাটি বাঁচিয়ে একা চলছে ধীরে ধীরে।
নিবত যদি আলো, যদি হঠাৎ যেত থামি,
আকাশ ভরে উঠত কেঁদে, ‘ হারিয়ে গেছি আমি!’
পরিশিষ্ট/২
(প্রজ্ঞা পারমিতার জলতল অথবা এ্যান্ডারসনের চকোলেট- গল্পে সংযোজিত হয়েছিল অন্তর্জালে)
My little seeds to
Flower
..........
Progna Paromita
It was noon I gave my flower seeds to my mother and said can you plant my seeds mother please. Mother said okay progna. Then mother planted the seeds. I waited and waited. I watered it every day. After a week I saw nothing!
After a month and a half I saw a plant. I have waited 2 months for a flower and the seeds grew lots of flowers. I saw some ant and flies bothering the flower. I got angry. I squashed and smashed them. I felt better.
My father bought me a laptop. Sometimes I use my new laptop near the flower pot. My flower likes laptops and it wants one.
What should I do?
পরিশিষ্ট/৩
(ঈশ্বরের চোখ : আদিপাঠ- গল্পে সংযোজিত হয়েছিল অন্তর্জালে)
if i wasn't dead
Purba Atanrila
Natasha, age 13, queens, New York City, middle school, 8th grade, senior year. My days weren’t going good, I was not the best student anymore, lost my place. It’s hard to see someone taking my place suddenly. I used to be the best student in class, 6th and 7th grade. School was not fun anymore. I used to have no best friends. May be some were but didn’t think they were. I used to have few friends but in 8th grade I had lots of friends, a lot, more than I wanted.
I had depression since 2001, since I was 5. I didn’t like it, when I used to go to bed everything that happened that day used to eat me. that year my depression was increasing, everything was going wrong, or I thought they were wrong, no, some of them were going wrong. I was always busy so I didn’t have any time, I wanted summer back to sleep and seat at home without a tension. I couldn’t handle my life cause it’s way too out of control. School, teachers, report card grades, friends, bullies, homework, theatre, subway, band, piano, drawing, internet, dance, auditions, exercise, soccer, writing, sleep, etc… etc… etc. other side my parents, they didn’t want me to be an actress which was a big issue for me.
I thought my wishes will never come true so I just wanted one thing and that was to die. I wanted to suicide. Never thought of that before but at last I did. I decided to have sleeping pills after taking a bath. One of the Sundays I took a fresh an hour bath and then eat my lunch. After finishing my lunch I stole lots sleeping pills from my dad’s medicine box and then I locked my door as usual. Just like other days there was a bottle of water in my room and I took all 20 pills one by one. And then what happened I have no idea.
Then I woke in a place where people were crying, laughing, just sitting, doing their own stuff. Then I realized that I was in a graveyard standing on my grave. Now I am dead forever. What I have done that nothing left without the grave.
After three month,
In those months I stayed in the graveyard, some people came and visit my grave, I made a friend called Violet, I like the name Violet. There are also cute guys around here but I like one of them named Evan, I guess he also likes me. he said, he forgot to give a letter to someone but he couldn’t reach him cause of his death and now he will not leave the world until the person get the letter. I wish the person never gets the letter and never go away.
My mom seats on the steps of my grave and starts crying. She puts some bloom gerberas on my grave and I walk to her. I love gerberas specially those blooms. Nobody used to give me flowers before, I love receiving flowers and now I am dead so everybody gives me flowers, lots of flowers, I don’t need flowers anymore. She says crying, “why did you do that? Why? I would listen to you and let you become whatever you wanted to be, then why?”
I say, “no you wouldn’t.”
I see my sister and dad comes over to my grave. My dad touches my mom’s shoulder and I see a book in my dad’s hand written on the cover ‘Variant by Natasha Wilson’. I wrote a novel before I died and I wanted to write more but I decided to die. He put the book on my grave and left.
After a year later,
What a bad luck, Evan left because the person got the letter so he was free. I want to go too just like him somewhere. Many people came to visit me, most of them where my fans. I have lots of fans now and I heard I got some awards and my book became one of the bestselling books. My sister came to visit me. she is eighteen months younger than me but I always have been jealous with her in everything.
She sat and said, “I read your all wishes and journals. I decided to make your wishes come true. now your wish will come true. There gonna be a movie about your book but I am gonna act as the main character.” He face looked happy.
Everything was finished, I didn’t want to make a movie about my novel if I wasn’t in the movie and I didn’t want her to be in there at all.
She continued making a sad face, “We really miss you, I wish you weren’t dead.”
with my elder daughter Purba Atandrila
Nothing is left, I am sure that I will be never able leave the world because everything happened against my wishes. Now I have only one thing to say and that is, “If, I wasn’t dead.i have to stuck here forever between life and death. ”
পরিশিষ্ট/৪
কবি কাজল শাহনেওয়াজের কবিতা
বাহাদুর
প্রতি সন্ধ্যায় দেখি তাকে হেঁটে হেঁটে হারিয়ে যেতে, চলে যায় কোথায় যেন
লাল টানেলের করিডোর ঠেলে প্রেমিক প্রেমিকার মাঝ দিয়ে
লাইব্রেরীর কাঁচ ভেদ করে এলামন্ডার উজ্জ্বল হলুদ পাপ ছুঁয়ে
সে যেন কোনো এক অসীম বলবান শক্তিশরীর হয়ে
অদৃশ্য হয়ে যায় খোঁড়াতে খোঁড়াতে।
এইতো ছিলো সে এই অন্ধকারে, খুঁটে খাচ্ছিল
ভিটামিন, শর্করা, সেলুলোজ, খনিজ কিছু কিছু
পরক্ষণেই সিমেন্টের ঢেউ ভেদ করে অন্যদিকে রাজপথে
খুট খুট করে হাঁটছে একাকী একা একা
সারারাত মাঠময় ঘুরে ঘুরে হাঁটে, দু’এক কদম
থমকে দাঁড়ায় লেভেল ক্রসিংয়ে, দূর থেকে দেখে
নতুন স্টেডিয়ামের হংশবলাকা ছাদ, ধীরে ধীরে হাঁটে
হাঁটে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে আমাদের শিক্ষার্থীদের হাতে আহত করা
অপারেশন শেখার গিনিপিগ ঘোড়া
রাত শেষে পেরিয়ে যায় তুঁত গাছ, আকাশের তারাদের দিকে।
আরো একবার ফিরে আসে
যেন ভালোবাসার লোভ হয় অপারেশন ঘরে...
রহস্য খোলার রেঞ্চ
হাত থেকে পড়ে গেলো ইস্পাতের রেঞ্চ ঝনঝন শব্দ করে
মেঝে মেঘলাতে
এমন সময় সোনা গাভী এসে মুখ দিলো হীরের ঘাসে
ওয়ার্কশপে যন্ত্রপাতির কাছে
আমি ঘষে যাই লোহার কবিতা
একা একা
কবে থেকে
টুকটাক ধাতুখন্ডদের সাথে কথা বলি
গল্প বলি নেবুলার বড়ো হয়ে ওঠা
মহাকাশযানের আজীবন একা থাকা
চতুর্মাত্রায় অনন্ত জীবন
কোয়ার্ক নাম ধরে ডাকি, ওগো দরোজা খোলো, জানালা খোলো
আমার কথা শোনো
কিউব, ট্যাপার আর গিয়ারের ফুলেরা
আজ কি যে হলো আমার
হাত থেকে কেন যে পড়ে গেলো ঝনন করে
রহস্য খোলার রেঞ্চ
সোনার গাভী এসে মুখ দিলো আমার
বাগানের হীরের ঘাসে
অচেনা ধাতুর এক গাভী এসে।
পরিশিষ্ট/ ৫
কবি তুষার গায়েনের কবিতা
(বৃষ্টির অন্তরত্রাস থেকে)
একাত্তরের খনি
( রৌদ্র ঝলসিত পথে সময়ের সহিস, আবুল বাশার খান বন্ধুবরেষু)
জোনাক হয়ে জ্বলছে আকাশ আখের বনে
নদীর জলে দগ্ধ হাড়ের ফসফরাসে
স্তব্ধ ছায়া ডুমুর গাছের ফিসফিসানি
কলার পাতা কাঁপতে ভোরের তারার রাতে।
আমার যাবার কথা ছিলো অনেক সে দূর
পথের পরে পা বাড়াতেই আর্জিনাপুর
পথের পাশে জবাপুকুর, ভয়াল কালীর
পূজার ফুল- লাল জ্হিবার দলচক্র
মেলে আছে মৃত্যুমুখ ... বুক ধুকপুক
ধুকপুক বুক, উঠোন ছেড়ে অশ্বত্থছায়া
পা যে দুটোই কাদায় মাখা, ভাবছি জলে
পা ধুয়ে যাই, হাঁটতে হবে অনেক দূর ...
একটু থেমে ঘোরের মাঝে টিপকলে চাপ
দিতেই জল, গলগলিয়ে উঠে এলো
জল সে নয়, রক্তঢল! আঁতকে উঠে
তফাৎ যাই, রক্তে ভাসা শাদা শাঁখা
ভাঙা চুড়ি দেখতে পাই ... 'কার এ শাঁখা
ভাঙা চুড়ি? - কেঁদে ওঠেন কাজলদিদি
'একাত্তরের মাঠ পেরোতে, খান সেনারা
আমায় ধরে!' ... স্তব্ধ আমি, পা সরে না
জনমানুষ রা করে না। এক পা দু'পা
এগিয়ে যাই, জলের কলে হাত লাগাই
ঘরঘর শব্দ তুলে সফেন ঘিলু
বেরিয়ে আসে, ভাঙা কাঁচের চশমাখানা
বিদ্ধ আছে স্নায়ুর জালে - আঁতকে উঠে
শুনতে পাই ... 'গুরুমশায়, আমি যে তোর
একাত্তরের পাঠশালায়!!' হায় রে হায়
কি যে করি কাকের ছায়া মাথার পরে
জনমানুষে হুমড়ি খেয়ে জলের কলে
ভিড় করে ... গলগলিয়ে উঠতে থাকে
মগজ এবং মাথার খলি, উৎপাটিত
চক্ষু এবং পেটের নাড়িভূঁড়ি
ক'জন তারা ক'শতজন বুটের লাথি
বেয়নেট গুলি খাওয়া ঝাঁঝরা বুকে
মাটির তলে সেঁধিয়ে আছে? মাথার পরে
সূর্য বাড়ে, অবরুদ্ধ পথের পরে
ত্রিশটি সাল উধাও হয়ে কোন অতীতের
প্রদোষকালে, রক্তঘন দৃশ্যগুলো
একের পর নাচছে ঘুরে ... নিথর ছায়া
গাছের তলে, সাক্ষী থাকে জনমানুষে
এগুতে যাই চেতন হারাই ভয়াল কালীর
পায়ের তলে!
পরিশিষ্ট/ ৬
(কবি আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহর কবিতা/ পলাশী ও পানিপথ)
পলাশী
জিজ্ঞেস করো ঘোড়া হে উড়ন্ত অশ্ব তোমার পিঠে কে ভাসমান
জিজ্ঞেস করো প্রবর্তক পথিক অথবা গোপন রাজদূত কিনা
জিজ্ঞেস করো জিজ্ঞেস করো কারণ সম্মুখে আমাদের গণজমায়েত
কারণ এটি জানা দরকার আরোহীর আগুন আমাদের ভিটেমাটি কতোটুকু পোড়াবে।
জিজ্ঞেস করো হাতি হে উজ্জ্বল ঐরাবত কতোদূর যাবে
অথবা কাকে নিয়ে যাবে জিজ্ঞেস করো
জিজ্ঞেস করো কারণ সম্মুখে আমাদের ভোজসভা
কারণ এটি জানা দরকার কী সংবাদ ছিন্ন করে দেবে
ক্ষুদিরামের কন্ঠ।
ঘোড়া আসছে ঘোড়া যাচ্ছে। আমাদের গ্রাম্য চুল্লি ভরা
বিরামবীন বরফের স্তর।
ইংরেজ আসছে নবাব নামছে। আমাদের পিতা প্রপিতামহের
সমাধি কঙ্কাল।
আমাদের পলাশী বলতে আমার একটি বোন
আদিঅন্তে ভাতের থালা হাতে পথে পথে ঘুরছে
তার অনাগত সন্তানের নাম সিরাজদৌল্লাহ।
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন