সোমবার, ৮ মার্চ, ২০১০

কুলদা রায়ের 'কাকমানুষের চকখড়ি' গল্পগ্রন্থ থেকে

ভাসান চর- হাসান চর

ভাসান চরে একবার লটকন গাছ লাগানোর ধান্ধা করেছিলাম।
অতি প্রত্যূষে লঞ্চে উঠেছি। কীর্তনখোলার বাঁক পার হতেই চক্ষু চড়কগাছ। নদীর কূল নাই- কিনারা নাই। প্রাণ উড়িয়া যায়। সারেং দ্যাখে আর হাসে। বলে, স্যারের বাড়ি কই?
- ফরিদপুর।
-চোর ছ্যাছোড় আর খেজুর গুড়।
হ্যায়রে কয় ফরিদপুর।।
চোখ মুখ লাল হয়ে গেল। বলে কি লোকটা! ডাকাত বললেও মান-ইজ্জত থাকত। এক্কেবারে চোর! আবার চ্যাছোড়!! বললাম, তর বাপে চোর। চৌদ্দগুষ্টি ছ্যাছোড়।

সারেং শুনে লাফ দিয়ে উঠল। লঞ্চের ঘুল্লি হালটা ছেড়ে দিয়ে আমার টুঁটি চেপে ধরল। লঞ্চ এদিক যায়। ওদিক যায়। থর থর করে কাঁপে। ঢেউয়ের দোলায় নাচে। নদীটা ছোট্ট হলেই খেল খতম হত। কত যে এক্সিডেন্ট হত- বলা মুশকিল। এদিকে সুকানি, কেরানি আর হেল্পাররা কাজ ফেলে এসে গেছে। আমাদের লড়াই দেখছে। আর কষে হাততালি দিচ্ছে। মোরগ লড়াই। মাঝে মাঝে গালাগালি। আর হাতাহাতি। চুলোচুলি।
তিন ঘণ্টা পরে সারেং বাবাজি আমার ধূলো ঝেড়ে দিল। পিঠ চাপড়ে দিয়ে বলল, সাব্বাস। দ্যাহেন- ভাসান চর আইসা গ্যাছে। নামেন।
নামতে নামতে শুনলাম, ভয় খাইয়েন না। লড়াই কৈরেন। ভয় যাব গিয়া।

এত খাঁটি কথা জীবনে শুনিনি। সারেংকে সেলাম।


এই ভাসান চরেই আখুঞ্জী সাবের সঙ্গে দেখা। সুপারি গাছের নিচে বসে ছিলেন। বললেন- লটকন লাগাইবেন ক্যান, হেইডা কন তো মিয়া?
-নতুন ফল।
- সোয়াদ কেমুন?
-মিঠে আর টকা।
- হুম। চলবে না। চৈলা যান। খামোখা ভেজাল কৈরেন না।
-ক্যানো চাচা?
-এক লগে মিডা আর টক? খুব সন্দোহজনক। হয় মিডা- নাইলে টক। মিশাল জিনিস মানেই ভ্যাজাল। ভ্যাজাল মাল চালাইবা ক্যান বাবাজী?
কঠিন প্রশ্ন। এর উত্তর দেওয়া আমার বাপের সাধ্যি নাই। বললাম, চাচা, আপনি কি করেন?
-কাজ থাকলে বিশ্বাস করি। আর অবসরে থাকলে সন্দোহ করি।
-সেতো বুঝলাম। এখন কি করছেন?
- ব্যাডায়, এই বুড়া বয়সে আবার কাজ কি? আছি অবসরে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন