শুক্রবার, ২৮ আগস্ট, ২০০৯

কবি মাহমুদ সীমান্ত-র কবিতা

ভৌগলিক
........
আকাশের তারাদের খবর আমরা কেউই রাখি না।
ভূমণ্ডলে, সবগুলো নক্ষত্রের কথা জানা হয়ে গেলেও
তারাদের কথা বাকি থেকে যাবে।
কিভাবে রচিত হলো এইসব ভূচিত্রাবলী, বা
কি করে যে ফুটে আছে ওই সপ্তর্ষিমণ্ডল রাতের আকাশে আর
কিভাবে রচিত হলো বিন্দু বিন্দু আলোর স্ফূরণ পৃথিবীর মুখোমুখি করে।
এইসব প্রশ্নের জবাবে, আমাদের শিশু বিজ্ঞানীরা
ঘরে ঘরে ঘটাবেন সার্চ লাইটের আলো;
দেখাবেন তারাদের জন্ম-মৃত্যু, চুলের গণনা। তবু-
ভূমণ্ডলে, সবগুলো নক্ষত্রের কথা জানা হয়ে গেলেও
তারাদের কথা বাকি থেকে যাবে।
কি করে উদগমন হলো এই অজস্র জন্মের...


দৃশ্য
....
চারুকলার সামনে সুসজ্জিত তরুণ-তরুণীগণ
পাতার পোশাকে করে মধ্যাহ্ন খাবার খাচ্ছে;
আর একে-অপরের দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে।
পাশে, ড্রেনে পড়ে থাকা গাছের পাতারা
চলন্ত গাড়ির গতি গুনতে গুনতে
তরুণ-তরুণীদের হাতে রাখা চামচ ও
সিলোফেন পেপারের রহস্যের দিকে উড়ে যাচ্ছে।


একবিংশে মধ্যবিত্ত কথাগুলো
....................
যে বছর আমি শিখি নদীস্রোত, চলার বৃত্তান্ত
সে বছরই বাবা বলে.. থাক থাক তোমাকে সুতোয়
বেধে ফেলা জরুরি এখন...
কাল যদি অন্ধকার ফোটে ভুলে যাবে পথঘাট,
পরিচিত নদী, প্রিয় বিলদিঘা, আমার বসন্তে-
কোকিলেরা গেয়েছিলো গান আর তুমি বলেছিলে...
রেডিওটা ফেলে দাও বাবা, তার চেয়ে চলো একটা
কম্পুটার কিনে ফেলি!
আমাদের অন্ধকার থেকে কথা বলে একজন...
আমার সন্তান।
কাল স্টাডি টুরে যাবো চাঁদের মাটিতে, পাশাপাশি-
মঙ্গলেও, চেকটা সই করে যেও... সন্ধ্যায়ই ফিরবো।


পরম্পরা
.....
মনে হয়, ধারণার মধ্যে কোন এক সমুদ্র বিস্তার করেছিলো
আর আমি রচনা সম্ভারে আরো নত হয়েছি কেবল, কবিতা কবিতা বলে।
পিতামহ- তার দীর্ঘছায়া, সুতো টেনে আনিয়াছিলেন পিতৃদেব;
তারা চাষ করেছিলো শস্যের মহিমা, মানুষের প্রতি ভালোবাসা।
গেরস্তালি সূত্র ধরে একদিন সকলে ঘরে ফিরে যায়;
পথ ভুলে আমিও গিয়েছি কিন্তু যে পথে যায় না আর কেউ।


পথ
...
ধুলোসমেত ঘুমিয়ে আছে আমাদের পথগুলি
পায়ের চিহ্নের ফলে পথ চিনি, পথে চলি-
ধুলো উড়া পথে চলে জেনে যাই...
এইপথে চলে গেছে বহুদূর- মানুষের দিকে।
এইপথে লেগে আছে সেইসব পা, পায়ের ছবি
যেখানে হারিয়ে গেছে আমার চব্বিশ, প্রিয় মুখরতা।
আমি যার ধুলো নিয়ে রাঙাই চরণ,
আমি যার ধুলো নিয়ে ঘরে ফিরি রোজ।


নিচে ঢুকে গেলে
.............
তন্দ্রাচ্ছন্ন রাত ঝাঁপিয়ে পড়ছে পৃথিবীর গর্ভে
কেড়ে নিচ্ছে রমণীয় স্রোত, কালক্ষেপণের শব্দ;
এ শব্দ আমার জানা ছিলো না কখনও!
এবার উৎসের দিকে যেতে যেতে দেখি
বৃহৎ গোলকধাঁধায় শব্দগুলো ফিরে আসছে ক্রমশ
আর পত্রস্থ শব্দরা, দূরে যাচ্ছে আরও বেশি;
শব্দগুলো পরিচিত নয়, স্পষ্ট হয়ে গেলো।
নদী ও নারীর মধ্যে ঢুকে গিয়ে দুএকটি গাঙচিল
ঘনিষ্ট সম্পর্কে জন্ম দেয় নারীর প্রথম রূপ পৃথিবী আমার
দেখি, আমার ভেতর থেকে কি যেন কি চলে যায়
আর কি রকম ধোঁয়াশায় ঢুকে যায় মহাকাল
অচেনা আলোয় দেখা পথে, মহাপ্লাবণের দিকে।
দূরের অচেনা শব্দগুলো সাবধান করে যায়, দেখো...
একটি পাখির কণ্ঠও যেনো হেরফের না হয়।


ঘুম
..
আবার আমরা মিলিত হবো শহর থেকে দূরে
কোনও এক নিভৃত গাঁয়ের শ্যামলিমা কুটিরে- একপ্লেট অন্ধকার নিয়ে।
পকেটভর্তি বহুদিন না দেখার শুকনো পাতার মর্মরতা
এক কামড় দেখা হবে, এক ছিলিম কথা হবে
সবুজ ধানের ক্ষেতের আলে হেঁটে হেঁটে, ঘরে ফিরে
তারপর আবার না দেখার ধুম। হয়তোবা আবার কোনদিন
এক পাহাড় দেখা হবে বলে চলে যাবো আরও দূরে।


চাঁদ কিংবা সূর্যের বিপরীতে
..................
এই যে শীতের প্রখরতা। এই যে চাঁদের জোছনায়
আমি দেখি ঠিকড়ে পড়ছে ভাসমান আলো হিমালয়ে।
মাথার উপর দিয়ে চাঁদ চলে যাচ্ছে অন্যগ্রহে, ফলে
কেউ তো নিশ্চয়ই রাত্রি দেখে আর নীড় ছেড়ে পাখিগুলি
রোদ্দুরের জন্যে বসে থাকে; ফলে সেখানের বৃক্ষগুলি
এরকমই পাতা ছেড়ে দেয়? এরকমই ঝরে পড়ে তারা?
সূর্যের ওপিঠে থাকে সূর্য। চাঁদের ওপিঠে থাকে চাঁদ।
তাদের ওপিঠেও হয়তো বাড়ছে এমন কোন প্রাণ।


পাখিপর্ব
.....
বেখোয়াজ পাখিস্বপ্নে কি করে যে কেটে যায় দিন।
প্রতিদিন পাখিগুলি আমাদের হয়- আমাদের হয় ওদের হারিয়ে যাওয়া;
হারিয়ে হারিয়ে চিরকাল পাখি হয়ে আছে তারা।
ভালোবেসে মানুষেরা পাখি হতে চায়
কিন্তু মানুষেরা, পাখি হতে পারে না বলেই তারা শুধু উপমাপ্রবণ।
যেসব কণ্ঠের স্বর আমরা বুঝি না, পাখি কিন্তু বুঝে ফেলে
আর তারা উড্ডয়নপ্রিয় হয় আকাশে আকাশে।
কিচিরমিচির করা পাখিগুলি কি যে বলে যায়
তার বুঝি না কিছুই... ফলে, পাখিশাস্ত্র পাঠ করে যাই।
বাতাসের নাম পাখি হলে আমিও চাই
পাহাড়ের নাম পাখি হলে আমিও চাই
নক্ষত্রের নাম পাখি হলে আমিও চাই
সাদি তাইফ পাখিশাস্ত্র পাঠ্য হোক আমিও চাই।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন