বৃহস্পতিবার, ২৭ আগস্ট, ২০০৯
চিরপুষ্প একাকী ফুটেছে
মুজিব মেহদী
সূচনাকথা
.......
যেন মহিমামণ্ডিত হয় এই উঁকি দেয়া, রোদের
আগেই যেই আভা এসে লাগে ধানগাছে, খঞ্জনা
পাখির কণ্ঠে উঠে যেন আসে ওই গান, মানুষের
ঠোঁটে
যুদ্ধ মনে না-যেন করি কেবল জীবনটাকে, যাপন
আনন্দে গাঢ় এই ইহবিদ্যালয়, সকলে আমার আর
আমার সকলে, সকলের ভালোবাসা এসে যেন পড়ে
ঠিক আমার ভাগেও
যেন ধ্যানের চেয়ে কখনো বেশি মূল্য না-পায়
কোনো দৃশ্যগান, আর মানুষই যেন হয় প্রকৃত
আরাধ্য জন আগুনে ফাগুনে পুড়ে
মন খুলবার শব্দ
..........
মন খুলবার শব্দ পেলাম নরম এই কুয়াশা শরতে, ভেজা ঘাসমাঠ হাহা হিহি করে জানিয়ে গেল রোদের কাছে এই কাণ্ডকীর্তি, বিপ্লবী ঘটনা যেন পুঁজিতান্ত্রিক বিশ্বে
কথার শক্তি বিষয়ে আমার ধারণা জন্মেছিল বেশ বালক বয়সে, কথাদের কলা হয়ে উঠতে যে অস্ত্রশস্ত্র লাগে, লাগে যে শানবিদ্যা, বাতাসের চেয়েও ওটা কম আয়ত্তে ছিল, এমনকি জানতাম না যে আয়রনি কাকে বলে, ঘৃণাকে ঘৃণার অধিক কিছু কখনো ভাবি নি
বহু তিতিক্ষা তরণি বেয়ে মতিফুল ফুটল এবার, রূপকাহিনির ভিড়ে ঢাকের বাদ্যের নিচে প্রকাশ্য শব্দ পেলাম মন খুলবার, সাক্ষী হয়ে মাথা নাড়ল শস্যসুরভি
এমভি নন্দিতা
........
তুমি এসে ধাক্কা দিলে আমার পন্টুনে
ধ্বনি-প্রকম্পনে সমুদ্র ঈগলগুলো কেঁপে ওঠে
মোহনার জলমাখা গোপন বেদিতে
রৌদ্রগন্ধময় হাওয়া এসে খেলে
সমতল ফুঁসে আসা জল
পাটাতন ছুঁয়ে গেলে
যৌথ-যুগ্ম যে সৌন্দর্য জন্ম নেয়
তার কষাঘাতে হই আমিও ঈগল
কাঁপি, বিশাল তোমার দাহে
নন্দন প্রহার
...........
কটিভূষণ পরার মতো কেউ কি আজ আর নেই এই ভূ-ভারতে
অরব মেখলা, মানস-সমুদ্র সন্নিহিতা, একে একে উঠে যাচ্ছে তীরে
খাঁখাঁ শূন্যতার লেজ ধরে নেই-গ্রামে নামত ঝুলে থাকবে বলে
ছিলে বাহানার ধনী, নিবিড় বাহানা তুমি কর নি অথচ
ফুটে ওঠে লালসা কাহিনি এক মনের আনাচে
ভালোবাসি নিজেকেই বেশি এই অপবাদ কাঁধে নিয়ে
একটা বসন্ত পুরো হিমালয় পাড়ি দিয়ে ফিরেছি ঘুরেছি
লামার পাহাড় ধরে গম্ভীর তিব্বতে
কটিবন্ধে গাঁথা ছিল ভোঁতামুখ অহিংস তরবারি
তুমি কতদূর যাবে ওই বাতিকসমেত কোনো আনকোরা পথে
যদি দেখ নি পথের পাশে চিরপুষ্প একাকী ফুটেছে
পুরোটা শ্রাবণ জুড়ে বিলিয়েছে গন্ধ নিরলস
পথে নাম নিও চিরপথিকের
এই নাও মৃদুবিছা প্রেমচন্দ্রহার
মৌনতার ভাষাবলি নন্দন প্রহার
পুরুষের ধর্ম
..........
নারীমানুষের ধর্ম আছে, নারীশরীরের নেই
সম্প্রদায় নিরপেক্ষ খুব নারীর শরীর, জাতপাতহীন
জাতপাতে অন্ধ ধর্মঅলারাও ধর্ম খোঁজে না বিশেষ শরীর পূজায়
পুরুষের ধর্ম বড়ো বিচিত্র জিনিস
তেভাগা
....
এতদিন আধিয়ারই আছি
আজ থেকে পেতে চাই তেভাগা হিসেবে
রতিচাষে যত ফল
মাড়াই করতে চাই নিজস্ব খোলানে
তুমি তো নিষ্ক্রিয় জোতদার
ফসল ফলাতে যত প্রাক-আয়োজন
সেচকাজ আগাছা নিড়ানি ও হলকর্ষণ
সব আমারই শ্রমজাত
লাঙ্গল-জোয়াল শক্তি-বীর্য তাও
মাড়াইটা কেন তবু তোমার অধীনে
এতদিন ঠকিয়েছ থেকেছি নিশ্চুপ
আজ থেকে পেতে চাই তেভাগা হিসেবে
কমরেড
লাল ঝান্ডা তোলো
রন্ধনশালার রাজনীতি
............
রন্ধনশিল্পের আমি আশপাশ দিয়ে নেই
সে জগতে সর্বেসর্বা আজো মা-বউ-বোনেরা
হেঁশেলের চৌহদ্দিতে মায়া সুতো দিয়ে বেঁধে রেখে
নারীদের আমরা অনেক পিছিয়ে দিয়েছি
এটা যদিও ঠিক যে মাপমতো পানি দিয়ে মাড় না-গালিয়ে
ভাত রাঁধা আমি শিখে গেছি
সানফ্লাওয়ারের মতো বড়ো করে ডিম আমিও ভাজতে পারি
আমার রাঁধা ডালের পানি চেটে খেতে হয়
তবু এইসব হলো গিয়ে ঠেকা কাম
নিয়মিত হেঁশেল ঠেলতে আমি কখনো যাই না
নারীদের রান্নাবান্নাকে আমরা শিল্প বলি
তবু নিজেরা করি না
আমরা অন্য শিল্পের লোক
গুমরসম্মত
..........
সকল দরজা হাট হয়ে গেলে রহস্যক্ষেপণ ঘটে প্রাসাদের
শূন্য হোক তবু লাগে চাবিহীন পুরানো সিন্দুক, গুমরসম্মত
মানুষ কেননা একজীবন সাবাড় করে দিতে পারে
রহস্যসূত্র সন্ধান করে করে
অকপটতা গুণ ধর্মের
তবু বহুদিন ধর্মের ছিলে না-হয়ে ধার্মিক
বাইরের আলো ঘরে আসে তো আসুক
ঘরের আলোক যাতে বাইরে না-যায়
রাখো তার পাকাপাকি আয়োজন করে
সভ্যতার তরী বেয়ে আসা এইসব
সার সার স্থাণু কর মুদ্রারসদের গোপন কলস
রহস্যসমিধ কিছু দৃশ্য হোক প্রাসাদের ঘুলঘুলি পথে
বিস্ময়ে আবিষ্ট হোক অভ্যাগতজন
সকল দরজা হাট হয়ে গেলে
ফাঁস হয়ে যায় সব রূপের গুমর
ভ্রমণ, গদ্যভঙ্গিতে
...........
গদ্যভঙ্গির অদূরে স্থাপিত সুউচ্চ আশ্রয়কেন্দ্রে তোমার
কাটিয়ে এসেছি গুরুতর সন্ধ্যা এক থই থই এবার ভাদরে
পথে ছিল জল বাক্যে বাক্যে ঢেউ চাল ছুঁয়ে থাকা
বাঘে-মোষে একাকার হয়ে থাকা পৃষ্ঠা জুড়ে
বহুত্ববাদের সব চারাগাছ দুলতে দেখেছি
বিষাক্ত একটা সাপ প্রকাশ্যে সাঁতরে এসে যে বাক্যে বসেছে
পাশে তার একটি শিশুর হাতে লুটছে পৃথিবী
বানের জলের নেই ছেদবিভাজন
টানাস্রোত ভেঙে ভেঙে যেখানে দাঁড়াই
সেটা ছিল বিস্তারিত ফুটনোট গলাঅব্দি জলে
স্বতঃস্বচ্ছ এক বাক্যের কোমর ধরে সামনে এগোতে দেখি
একটু আধটু করে কমে জল জেগে ওঠে ঊর্ধ্বমুখী সিঁড়ি
মিতক্রিয়াময় বাক্যদের জানালায় টইটই প্রভূত বাতাস
শৈলীপনা
.......
একটা শব্দকে ধরে ঝুলে পড়ে কতদূর যাওয়া যায়
দেখিয়ে গেছে আমাদের সুরেশ কাহারি
রেশ ধরে যেতে গেলে জানত সুরেশ
যারা থাকে পড়ে থাকে পথের দুধারে
একদিন ঝুলে পড়া ছেড়ে দিয়ে
যথেচ্ছ সে ভেসে গেল নিরাবলম্বন
যাপনবিষাদঘেঁষা ওর সব স্মৃতি থেকে
রূপের কুহেলি মেখে উঠে আসে
স্যাঁতসেঁতে জীবনের আনাচকানাচ
ওর কিছু দস্যিপনা আমাদের ভালো লেগেছিল
ওর কিছু শৈলীপনা মিথ্যে নয় আজো ভালো লাগে
লঘুকথা
....
কী যে হয়
প্রতিদিন আসে না মনে গুরুভাব
নিটোল লঘুর যত নর্তনকুর্দনে
আরো যদি মুড়িয়ে ফেলি পত্রপল্লব
নাসারন্ধ্র ভরে যাবে অঙ্গারাম্লজানে
বরং আজ নিশানা করে রাখি তাক
কাঁধের গামছা খালই ও জাল রাখি তৈরি পাশাপাশি
ভোর ভার বেলা কাল
না-টুটতে নেশা মেছো বাঘেদের
খুঁজে নেব অথই জলের কোনো যথাযথ থই
আজ থাক
সূর্য তো কালও উঠবে
রাত্তিরে চাঁদও
শর্মা বিষয়ক জটিলতা
.............
কখনো চিকেন শর্মা খেতে খেতে তনুজা শর্মার কথা
মনে পড়ে গেলে
কারো কোনো দায় নেই চিকেন বা তনুজার
সব দায় গিয়ে বর্তায় কুচিকুচি শর্মায়
প্রভাব শব্দটি ঘিরে যা কিছু অস্বস্তি আমার
শর্মার বরাতে দেখি কিছুটা কমেছে তাই
সাহসে দাঁড়াই এসে প্রকাশ্য রোদ্দুরে
চুল দেখলেই যারা মেয়ে ঠাওরায়
আর গোঁফ দেখলেই পুরুষ বেড়াল
মোটেই তাদের কথা হচ্ছে না এখানে
নিন্দুকের হাতে অস্ত্রের মজুত বাড়ানো
কখনো কাজের কথা নয়
আমরা বলছি ঐতিহ্যের কথা
কথা বলছি পরম্পরার
ছেঁড়া নদী কেননা কখনো সাগরে পৌঁছে না
থেমে থাকে কানাগলিতে এসে সকল যন্ত্রযান
বেড়াল থাকল বেড়ালের জায়গায়
মেয়েও থাকল মেয়েতেই
চোরা উল্লিখনে ছেয়ে গেল কেবল
বাংলা কবিতার ঝাড় ও জঙ্গল
পুনরাবৃত্তিময়
.......
একটা পথের শেষে আরেকটা পথ নয়
পুরানো পথের ধুলায়ই বুঝি শরীর রঞ্জিত হলো
তোমার সমূহ ছুঁয়ে থেকে আরেকটা আকাশ বিহার
হলো না বিশেষ
একটা পাতার সবুজে নিবিষ্ট হয়ে
দেখতে দেখতে পুরোটা জীবন প্রায় ক্ষয়ে গেল
পরিধি ডিঙিয়ে কোনো নবোদিত ঠিকানা খোঁজার
সামর্থ্য হলো না
খুঁটি পোতা একটা খাসির মতো ঘুরে ঘুরে
মাঠের ছালচামড়া শুধু উঠিয়ে চলেছি
লিখতে লিখতে লেখা
............
লিখতে লিখতে লেখা যখন একদম থেমে যায়, আলস্য ভর করে আসে মনে, গণ্য কবির বই হাতে নিয়ে বিছানায় গড়াগড়ি যেতে যেতে ভাবি-- এরকমই যদি হবে দৌড়ঝাঁপ, তবে আর বেড়ায় গোঁজা ছেনি হাতে নিয়ে মূলা ক্ষেতে চলে যেতে ভয় পাচ্ছি কেন, ভোরবেলা মাটি ভেজা থাকতে থাকতে যেসব দোয়েল পাখি কেঁচো খুঁজতে নেমে আসে পাশেই মরিচ ক্ষেতে, তাদের সাথে ভালোমন্দ দু-চার কথা হলেটলে লিখে ফেলতে পারি নির্দ্বিধায়, কবিতা পাঠকের গোপন পক্ষীপ্রীতি সাধারণ্যে জ্ঞাত, যদি কুদুলে কাউকে পেয়ে যাই ওইখানে মুফতে মোড়লবাড়ির, বিড়ি টানতে টানতে বাতরে বসে ওর সংসারের হালহকিকতও কিছু রিলে করতে পারি-- পুকুরে পড়ে ওর যে মেয়েটা মারা গেছে গতবার, তার পরে ওদের আর কাচ্চাবাচ্চা হলো কি না কোনো, ভূতেরবাড়ি বলে খ্যাত ওই উঠোনে ওদের যে গাবগাছ ছিল, এতদিনও বেঁচেবর্তে আছে কি না, কবিতা পাঠকের এসবেও বড়ো বেশি অনাগ্রহ আছে বলে জানা নেই
অথচ লিখতে লিখতে লেখা যখন একদম থেমে যায়, কাগজ-কলমকে ঢাল-তলোয়ার ভেবে আমি যথেচ্ছ রাজা-উজির মারি, মারতেই থাকি
ব্যাকরণপ্রবাহ
...........
লিখতে বসে অনুভব করি জানলাপথে বাতাস বয়ে আনছে পাণিনির অষ্টাধ্যায়ী ব্যাকরণের বিচ্ছিন্ন পাতা, সাথে হেমশব্দানুশাসন, বোপদেবের মুগ্ধবোধ, চান্দ্র ব্যাকরণ... এমন ব্যাকরণপ্রবাহে ভেসে যেতে যেতেও আজকাল মূকতাই শ্রেয়জ্ঞান করি, শুদ্ধ শব্দ-বাক্য আশা করলে একদল লেখক কেবল মারতে আসা বাকি রাখে, বলে যে পশ্চাৎপদ, এই ভয়ে আজকাল একটুও না-পড়ে ছিন্ন পাতা, ধরে ধরে ভাঁজ করে ১৮ খণ্ড ‘রবীন্দ্র-রচনাবলী’র পাশে রেখে দেই, ঐতিহ্য সংস্করণ তাতে মোট ১৯ খণ্ড বলে ভ্রম হয়
এহেন বেহাল দশাকে ঠিক আমলে না-নিয়ে স্ত্রী এসে জিজ্ঞেস করে, রেফের ক্ষেত্রে দ্বিত্ব পরিহার কেন জরুরি মানব যদি ‘ধর্ম্ম’কে ‘ধর্ম’ লিখলে মানেই বদলে যায়, ছেলে বলে কোনটা বলব বাবা, কাউয়া না কাক, অনেক কথাই বলার থাকে, বলতে পারি না
বাংলা ভাষার প্রাণভোমরার খোঁজকারী কলিম খান এসব নিয়ে বলেছেন বিস্তর কথা, তাই চুপচাপ বাড়িয়ে দেই শুধু প্যাপিরাসের পরমাভাষার সংকেত, ভুলভালে ভরা, এবার দেখি বাতাস আরো বাড়ে
প্রকৃতিপাঠ
......
স্কুল খুললেও বই কাঁধে আমি যাই নি এ বেলা ক্লাসে
বারান্দায় মোড়া পেতে বসে বসে আকাশ দেখছি
আকাশকে শূন্যতাসুদ্ধ আমার ভালো শিক্ষক বলে মনে হয়
যুগ যুগ একই শিক্ষা নির্গত হয় ক্লাসের ভিতরে
রাতেদিনে গুরুর বাঁশি বাজায় একই সুর
আমি নাদান না-ক্লাস ছাত্র আকাশের আয়নায়
নতুন করে শিখছি প্রকৃতির মনোভাব--
মানুষে মানুষে ব্যবধান আসলে বিস্তর
পুরোটা ঘুচানো যার নিরেট কল্পনা
সত্যের নিকটে থাকে
............
তত ঋদ্ধ হয় মানুষ জানে যতজনকে
খাসি হতে দেখলে পাঠাকে জ্ঞান বাড়ে
চাকুরি এক প্রক্রিয়া খোজাকরণের
তার কাছে গতায়াত মাঝেসাঝে
আতঙ্ক গভীরে এক সেধে যাওয়া
সোজাকথা ধারালো চাকুর প্রায়
সত্যের সবচে নিকটে থাকে
সত্য হলো পূর্ণোত্থিত লিঙ্গের মতো
সত্যকথন-স্বভাব
যুদ্ধঘোষণার মতো একটা ব্যাপার প্রায় কথাসভ্যতায়
চোখ
...
একটা জানলা খুলে যাওয়া মানে
বেড়ে যাওয়া আরেকটা চোখ
অর্থাৎ জানলা হলো মানুষের তৃতীয় নয়ন
দিনে দিনে লড়তে লড়তে
মানুষের হৃদঘর ভরে যায়
তথাগত নয়নে নয়নে
যেহেতু বাতাস আছে আমাদের হিতার্থেই
তার চলাফেরাকালে কিছু খড়কুটা ধুলাবালি
আমরা তো মেনেই নিয়েছি
চোখ যদি
কোনোদিনই তাকাতে ভোলে না
স্কিৎজোফ্রেনিয়া
........
স্কিৎজোফ্রেনিয়া, আসো তুলতুলে মেঘে বসি, শুই
নিরঙ্কুশ আনন্দে আমি ঘুমাতে পারি না বহুদিন
ঘুমের আগে চলো বায়ুমণ্ডল নিয়ে কথা বলি
যারা কাঁধে করে বয় এ-দেশে সে-দেশে
শ্বেতশুভ্র ওইসব মরমি বিছানা
স্কিৎজোফ্রেনিয়া, প্রিয়তমা প্রথমা আমার
আসো তোমার চিবুক ছুঁই
চুমু দেই কনিষ্ঠ আঙুলে
আসো ভালোবাসি
আসো বিছানা নাড়িয়ে দেই
মেঘ ভেঙে গড়িয়ে পতিত হই পৃথিবীতে বৃষ্টি
স্কিৎজোফ্রেনিয়া, আসো ছুটে যাই সাগর সঙ্গমে
আসো ঢেউ খেলি
সূর্যোত্তাপে অভিমান করে করে
তারও বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করি
আর বাষ্পপাখি হয়ে ঊর্ধ্বমুখে উড়ি
স্কিৎজোফ্রেনিয়া, আসো খানিক জিরিয়ে নেই
মেঘে গিয়ে বসি
ঘুম
...
আয় প্রার্থিত শান্তির ঘুম
চোখের ক্লান্ত পাতায় পাথর কুসুম
ঘুম
নেমে আয় কুয়াশায় ভাসা বকের পালক
ভেজা জোছনার পরী
সাদা উম
ঘুম
আকাশের নিচে খড়বিচালিতে আয়
আয় ইটে মাথা রাখা ফুটপাতে
ঘুম
শুভনিদ্রা
আয়
শক্ত চাটাইয়ে পাতা রোগশয্যায়
যদি আসবি না তবে বেলুনও উড়াবি না বলি চোখ জুড়ে লাল নীল ভাঙা ভাঙা স্বপ্নেরা যারা জলের উপরে ভেসে খেলা করে পুঁটিমাছ ডুবে যায় সেসবের থেকে আমি বেঁচে যেতে চাই-- এই আঁখিপট লোনাজলে ডুবে থাক কেন-বা ছড়াবি তাতে মরিচের গুঁড়ো
তবু ঘুম
রাজকন্যে
আয় প্রীতি
মালা গেঁথে রাখিয়াছি
শতকোটি পুঁতি
মিথ্যার প্রতিবেদন
............
সবকিছু ফুরালে বসে বাতাস গুনছি-- কোনটা তোমার কানের গা ঘেঁষে এল, কোনটা দূরের বাঁশির, কেশগুচ্ছ তার সুর পান করে বেঁচে থাকে
এই ভরা দুপুরবেলায় বাতাসের যত বাতচিৎ বাঁশঝাড় ঘেঁষে, কাছে দাঁড়ানো ছিলাম বলে ঝরাপাতাদের কাছে সেসবের ঠিকঠাক নোটিশ করেছি, তা না হলে পাতার বেদনা সব থেকে যেত তথ্য-অন্ধকারে, উড়ে উড়ে যেখানে পড়ত গিয়ে, সেখানেই ছড়াত যে, কোনোকালে মিথ্যার সুদীর্ঘ লেজে কেউ আগুন দেখে নি
কথিত গানের মর্ম এরকমই উলুঝুলু, লেজে এক দগদগে ক্ষত নিয়ে মিথ্যারা করে যাচ্ছে প্রাণান্ত সংসার সত্যের প্রতিবেশী হয়ে-- সুর হলো ভালোমন্দ বোঝাপড়া দুইয়ের
২.
রোদের প্রান্তরে কিছু পাণ্ডুলিপি ওড়ে, পিছু ধাওয়া করে তার একদল মৌমাছি শুষে নেয় সৃজনের মধু, রোরুদ্য কঙ্কাল হয়ে পড়ে থাকে বর্ণমালা-- অর্থ ও শাঁসহীন, খোসা
মৌমাছিদের ফিরতি পথে চলে যায় ক্যামেরার চোখ, পড়ে থাকা গুনগুন ধরে, দেখে সুরের পায়ের ছাপ, আমরা এগোতে থাকি, যতক্ষণ না গানগুলো বদলিয়ে নিচ্ছে রূপ কোলাহলে
যেখানে সম্পদ স্থির হয়ে থাকে, সমবেত হল্লা জমে সেখানেই, অন্তত যেখানে চুঁইয়ে নামছে কিছু বলে মনে হয়, যেকোনো নালার ফোঁটা ফোঁটা জল, পিছনে নদীর উৎস নির্দেশ করে-- এইসব মিলেমিশে রচিত হতে পারে আরো কোনো ছায়াঢাকা পাণ্ডুলিপি, মৌমাছিঘটিত ও মধুময়, যার পরে থাকবে না আর কোনো গুনগুন গান, আমাদের কেউ কেউ দলেবলে হাঁটছে ওদিকে
৩.
চোখ যখন ক্রমশ বন্ধ হয়ে আসতে চায়, তখন তাকে তাই হয়ে যেতে দেয়া ভালো, বড়ো করে তাকাবার জন্যে ক্ষীণদৃষ্টি মুহূর্তদের ছুটি দিয়ে দেয়া ভালো
যাও, ঘুমোও গে চোখ, প্রায়ান্ধ একটা মন নিয়ে আমি খাতা ও কলমে কিছু লোফালুফি খেলি, রাতভর অতন্দ্র সাধনে রচিত হবে যে বাঁধ, তা দিয়ে এমনকি ঠেকানো যেতেও পারে আগামীদিনের ঢেউ, কূল ভেঙে ভেঙে নইলে কখন যে টান পড়ে যাবে ভিটের মাটিতে, ঘুমঘোরে তার শেষে ঠাহরই পাব না
যাও, ঘুমোও গে চোখ, আরেকটু বসেটসে নদী পাড়ি দেব আমি শেষ খেয়া দিয়ে, সাথে রবে আমাদের সুরক্ষা গায়েন
৪.
ঘরে বসে সমুদ্র দর্শন শুধু মানুষই করতে পারে, গরু-ছাগল পারে না, এমনকি হাঙরেরও সমুদ্র দরকার সমুদ্রসিনানে
সমুদ্র তো তুচ্ছ খেল, মানুষ এমনকি মনে মনে মানুষেও করে ওঠে স্নান
অনন্তকথা
......
মুহূর্তের গান মুহূর্তকে মহিমান্বিত করে অনন্তে মিশে গেল
অনন্ত হলো অনন্ত যা অনন্তের দিকে অনন্তকাল ধরে হাঁটে অনন্তর
মুহূর্ত প্রতি মুহূর্তে জন্মায়, আর অনন্ত সর্বদা অনন্তে মিলায়
এই হলো মুহূর্ত ও অনন্তের মধ্যকার প্রেমভাব চিরটানাটানি
আমরা তার চেয়ে থাকি গমনপথের দিকে
মুহূর্তে দাঁড়িয়ে শুনি কোরাস কাহিনি বাজে
কোথা বাজে কিছুতে নাগাল না-পেয়ে তার
দেহ রেখে অনন্ত টানেলে এক হাঁটতে থাকি অনন্ত লয়ে
মায়া খরগোশ
.........
ঘুম এক শৃঙ্খলা জেনে শয়নভঙ্গির বিশৃঙ্খলা আমি আমলে আনি নি
রাতের বাতাস ঘেঁটে নিদ্রার গন্ধ কুড়িয়ে শুধু শুধু কোঁচড় ভরছি জেগে
দুধ নয় সবই এর ঘোলমাত্র জানি
শৃঙ্খলার দিকে দৌড়ে দৌড়ে যারা সুস্বাস্থ্য কুড়ালো
জীবনকে ঝেড়েমুছে কড়া রোদে শুকিয়ে আমূল ভাঁজ করে রাখে যারা
তাদের আনন্দে আমার ভরে না তনুমন
আমার একটা গানঅলা তৃপ্তিপাখি চাই
তাজা কালো শব্দ ভর্তি রোল করা এক খাতা
পাতা উলটে খুঁজে পাওয়া যাবে যাতে একটা অন্তত
মায়া খরগোশ-- সৌন্দর্য আঁটে না যার দেহে
মদনপুরের দিকে
............
আমার কী হলো তবে, হাঁটতে হাঁটতে পরিচিত পথে কেবলই
অপরিচিতের বাঁক-মোচড় ও টিলা-ট্যাঙ্গর কল্পনা করে বসি
মনে হয়, শিবগঞ্জ থেকে একটা রসের হাঁড়ি কাঁধে নিয়ে
একা যাচ্ছি মদনপুরের দিকে
পথে একটা খাল পড়ছে সাঁকোহীন
আর আমি নেমে যাচ্ছি গলা জলে বস্ত্র হাতে নিয়ে
ভাবনার কোনো ট্যাক্স নেই এই ভূ-ভারতে
কারো কোনো ক্ষতিবৃদ্ধিও নেই যে মামলা ঠুকতে পারে
বাকস্বাধীনতা নেই যেদেশে কিংবা নেই তথ্যেরও
কল্পনার স্বাধীনতা অবারিত সেদেশেও
যেজন্য জারিয়া-ঝঞ্জাইলের ট্রেনে চড়েও ভাবতে পারি যে
যাচ্ছি ট্রান্সসাইবেরিয়ান রেলপথ ধরে
নিরাপদ, যৌনতাপ্রুফ
.............
কবিতা লিখতে লিখতে প্যাচপেচে কাদা ও মার্সগ্যাসযুক্ত জলাজংলা পেরিয়ে গিরগিটির সামনে পড়েও তেমন অস্বস্তি হয় নি, ভরদুপুরে যেদিন ‘যৌনতা’ বিশেষ্যের সামনে গিয়ে পড়লাম, চিনতে শিখলাম ওর ক্রিয়াভিত্তি, সেদিনই উঠল গা-টা কাঁটা দিয়ে, লজ্জায় এমন জবুথবু অবস্থা হলো যে স্কুল-মিস্ট্রেসের চোখের দিকেও তাকানো গেল না
সেসব দিনে আপনজন থেকে পালিয়ে আমার নিগূঢ় ভূতের সাথে লড়ে যেতে হতো নিশিদিন, সবাই শুধু জানত যে আমি বদলে যাচ্ছি, বদলটা ঘটছে ঠিক শরীরে কোথায়, সদাউড্ডীন লালেহলুদ প্রজাপতি ছাড়া আর জানত না কেউই, বোধটি তখন থেকে নাছোড় ছায়ার মতো লেড়েল্যাপ্টে যায়, একত্রে স্নানাহার করে, ঘুমাতে যায়, পড়ার সময় বইয়ে খুঁজে জ্ঞাতিশব্দ যত, আর সুন্দরী দেখলেই দৃষ্টির চোরাগোপ্তা হামলা চালায়
প্রায় স্বাভাবিক হয়ে এলে সম্পর্ক ওই শব্দের সাথে, একদিন খুব স্যাঁতসেঁতে অনুভূতি হলো, বিরক্তি ও আনন্দ মিশ্রিত ওই যৌগানুভূতি সামলাতে না-পরে রাগেদুঃখে কবিতার খাতা থেকে নামিয়ে শব্দটাকে এমনই আছাড় দিলাম যে লাখ লাখ রঙিন প্রজাপতি হয়ে যৌনতাগুঁড়োগুলো উড়তে থাকল একা থাকা সব টিনেজের পাশে
তারপর থেকে, হে হে, আমার কবিতা খুবই নিরাপদ, যৌনতাপ্রুফ
প্রেম
...
অধীর একটি পাখি ডাকছে মাঘে
তার কাছেও এক শিক্ষা নেবার আছে
ফুল-পাতা নেই হাড়-কাঁপানো শীতে
ফুটাবে ফুল নিজেই গাছে গাছে
বছর ঘুরে একবারই তো ফাগুন
কতদিন অপেক্ষা করে যাওয়া
তার চেয়ে এ নয় কি ভালো রোজ
সকাল-বিকাল চেষ্টাতরী বাওয়া
২.
ডাকমাত্রই দেয়া ঠিক নয় সাড়া
মাঝে মধ্যে ঘোর রচনাই রীতি
সস্তা আমের সবটা জুড়েই বড়া
টানতে থাকে দূরের ক্ষিপ্রগতি
৩.
রোদ্দুরে যেই অস্তাচলের আভা
শুভলয়ের চিহ্ন হয়ে ফোটে
তেমনি একটি বিশ্ব দেখি রোজ
সন্নিকটে রাত্রিদিনই লুটে
এমন তো নয় কালো মানেই কালো
কালোর ভিতর সাদা রঙটাও থাকে
সেটুকুর উত্থান হলে সম্ভব
আমাকে তুই জড়িয়ে নে তোর পাকে
খণ্ডভাব
....
তোমাকে সাশ্রয় করি না-ধরে না-ছুঁয়ে
জীবনের এটা এক প্রত্যহ সঞ্চয়
একটা দুঃখ চুপে তোলা থাক
কাজে দেবে মাড়ি-মন্বন্তরে
২.
শুধু আজ বজ্রভীতি মনে
ব্যথাম্লান, ভাদুরে গঞ্জনা
তাড়া করে ফেরা দমন-বাসনা
যেন আর না-জাগে কোনো বিদ্যুচ্ছটা
সব উচ্ছ্বাসেরই প্রকাশদুয়ারে তালা
মেঘ করা তবু এড়াতে পারি না
৩.
ভাঙা গান থেকে ওঠে আসা একখণ্ড সুর
স্তব্ধ হয়ে যায়
লম্ফনশীলতা দেখে তোমার চুলের
৪.
ছিলে দূরাগত ধ্বনি
খোলা ছিল বোধ কান সাহসে পাতি নি
কানে মুখ পেতে আজ যে গান বাজালে নিজে
না-শুনে কেমনে পারি পোড়া দহলিজে
আমার তো নেই কোনো রীতিনীতিপ্রীতি
অখণ্ডভাব
.....
আলতামিরার গুহা আমি দেখেছি ম্যালাই
সুউচ্চ গ্লেসিয়ারের নেমে আসা অব্দি ধ্যানে স্থিত হয়ে আজ
ব্যক্তিগত টানেলের মুখে এসে দাঁড়িয়েছি একশৃঙ্গী প্রাণী
যেইখানে
মননের দৃঢ়তা ও পতনের ধীরতাকে সবে
সশরীরে যাঞ্ছা-বাঞ্ছা করে
২.
সছন্দ জলের ছড়ানো বুকের তুমি সবখানে আছ
প্রতিঅঙ্গ জলের সাথেই সূর্যের সম্পর্ক নিবিড়
আমি তাকে ‘পড়া’ বা ‘পরা’ যে ক্রিয়ায়ই নিচ্ছি
দূর থেকে ভেসে আসতে শুনছি শুধু নামকীর্তনের ধ্বনি
আর পৃথিবীর সমুদয় নামকীর্তনের লক্ষ্যই তো হলো নৈকট্যস্থাপন
একূল-ওকূল দূরত্বমোচন চেয়ে প্রাণ ঢেলে দেয়া আর্তি
ছোট ও বড়োর মাঝের এই সম্পর্কটাকে আমার
চিরকালই খুব মিথ্যা ও অবিনাশী বলে মনে হয়
বৈকাল, যদি চুমু পাঠাই
...............
দুহাতে নারকেল পাতা নিয়ে খেলছে ঢাকাই বিকেল, বাতাস ওর ছোট ভাই, মেয়েদের গোপনতা প্যান্টি ও ব্রাগুলোকে উড়ে’ নিয়ে ফেলে রাখছে নিচে
এখন আকাশে একটুও মেঘ নেই, বৃষ্টিসম্ভবা পাখিরা উড়ছে, উঁচু বাড়িগুলো সম্মানবশত দীর্ঘ অ্যান্টেনাবলি রাখছে নামিয়ে, বুঝি শাদাটে শরৎ আজ সমস্ত দোষগুণ নিয়ে তার বেড়াতে এসেছে বর্ষায়
শহরের সব সম্মোহিত নরোম বালিকা এখন ছাদে, নিসর্গে এখন শুধু প্রীতিরঙ, গোটা ঢাকা পরে আছে রামধনু শাড়ি, বিকেল ওহে বৈকাল, হাওয়ায় পাঠালে চুমু লুফে নেবে কি না
দূরের ঝলক
.........
ভাঙিয়া রুদ্ধ কবাট সেটা পাহাড়ে পঞ্চমবার
ঢালে নামে কৃষ্ণবল ফণাবিস্তৃত যে অন্ধকার
একাকী সঙ্গের ভিড়ে মাত্র একটি হলুদ পাতা
কখন ঝরেছি কোথা কেউ একটুও জানে নি তা
ভেঙে মচমচ গুঁড়ো বালির শরীরে গেছি মিশে
প্রথমে কয়লা পরে পিচে খুঁজে নিই দেহ দিশে
ঘনানো সন্ধ্যায় চূড়ার গির্জায় দিলে শুভ ঘণ্টা
তবে একজন বোঝে ভিতরে ব্যাপৃত ক্ষরণটা
টুপটুপ ঝরা ক্ষরণের এক জলবিন্দু টিপ
হৃদয়ে মেখে সে জ্বালে রূপশালী প্রেমের প্রদীপ
মাত্র একটি শ্রুতির ঘায়ে নামে নদীতে আকাশ
যেভাবে দূরের শৃঙ্গ করে গর্বে নিজেরে প্রকাশ
কাঁপে ফালি-ফালি মনোভাব চৌকোনো আবেগ
লতানো উদ্যানে নামে মত্তহস্তী আরণ্য-উদ্বেগ
দৃষ্টিতে নৈকট্য ঠেকে বস্তুত অভীষ্ট ঢের দূরে
শিল্পী সহজে ঘুচায় ব্যবধান কথা আর সুরে
তবু যে দূরত্ব থাকে ঝিরঝির করে বয়ে চলা
সময়ে সেটাও ঘুচে ধরা দেয় অরূপ-চঞ্চলা
অমিত কাঙ্ক্ষায় ঠোঁটে কাত করি শরাব পেয়ালা
অপরে হারিয়ে গিয়ে টের পাই দ্বিগুণ সে জ্বালা
মনে মনে যত কাছে দেহে বাড়ে ততটা ফারাক
বুঝেছে কি বিরিশিরি সুরাচর রফিক মারাক
নোজ মাস্ক ও ইহার ব্যবহার
.................
ইহা ধুলাবালির ক্ষতি হইতে ফুসফুস রক্ষা করে
ইহা শ্বাসকষ্টরোধী
ইহা প্রতিষ্ঠানের ঠিক উলটো
নোজ মাস্ক দুইদিন অন্তর-অন্তর ধৌত করিতে হয়
প্রতিষ্ঠান একদিনে
সমুদ্রছায়া
.....
সমুদ্রছায়ায় বসে ছিলেন
আমাদের উৎপলকুমার
কোনো শেষ ছিল না সন্দেহের তাঁর প্রতি
সমুদ্রের আবার ছায়া-- আমরা ভেবেছি
হয়ত ছিল পুরীর স্মৃতিকাঠ তাঁর, চেরা
মিথ্যা নয় তবু এই ছায়াগান
সমুদ্রও
কোনো ছায়া ফেলে হয়তবা
আর সময়ও
‘কবিতা যারা পড়ে না তাদের জন্য কবিতা’র ছায়াঞ্চলে
এরকম এক সাক্ষ্য হাজির করেন
হান্স্ মাগনুস্ এন্ৎসেন্সবার্গার, জার্মান
আমরা এবার ভাবি, সত্য বলেছেন আমাদের
উৎপলকুমার
আমাদের যেকোনো সন্দেহ দূরীকরণে
ওদের সাক্ষ্য লাগে, লাগেই
আমরা কেমন নপুংশক দেখুন
ঢেকে যাচ্ছে পশ্চিমে পশ্চিমে
......................
আপন রূপের বিভা অপরতমস লেগে কালো
ভুবনবিদ্যার ঘাটে নিভে আসে সূর্য ক্রমে ক্রমে
লালনের সুর-তাল র্যাপ মিউজিক দিয়ে মোড়া
আমার এ পূর্ব তবে ঢেকে যাচ্ছে পশ্চিমে পশ্চিমে
ঠাকু’মার ঝুলি পেল আসরের এক কোণে ঠাঁই
বাংলা থিতিয়ে আসে বিভাষার সীমাহীন চাপে
রসনা কাতর ধ্বনি তুলে বটে বিদেশী বর্ণের
জমা অভিমানটুকু পুবালি বাতাস লেগে কাঁপে
ইড়া ও পিঙ্গলা জানে দেহের মহিমা কত খাটো
ভিতরে বাড়ছে দ্রুত লেলিহান ভোগের পিপাসা
মানুষ এগোলো কত ভুলে থাকি তার ইতিহাস
যেন বহে পিতামহদেরই কালে কাবেরী-বিপাশা
পুবের মাটিতে মহা জেগে আছে শস্যসম্ভাবনা
মাথায় গোছানো তবু পরকীয় পশ্চিমা ভাবনা
কথা ও বার্তা
..........
এ বেলায় মনে হয় কিছু কথা বলে রাখা ভালো
এখনো বিদ্যুৎ আছে এই মগের মুল্লুকে
মণিবন্ধে তাকানোও যাবে ঢের-- এই পথে
হৃদয়ের স্পর্শ নেয়াটারও একটা চেষ্টা করা যাবে
কথা তো আসলে কথাই নয় কেবল খানিকখানি বার্তাও
‘ঢেকে যাবে এদেশ আঁধারে’--
হাসি হলো আমারই অল্প ক্রিয়া ব্যবহারে
‘ঢেকে গেছি’ স্থলে ‘ঢেকে যাবে’ বলে
যা কিছু ঢাকতে চাই
তা এমনকি অবাধে বিজ্ঞাপিত আজ হাটে মাঠে
‘আমার ঘরের চাবি মাওলা পরের হাতে’ বলে
লালন শাহ ইঙ্গিত করেছেন দেহে
ওই বাক্য ধারে নিয়ে আমি আজ দেশকে বোঝাতে চাই
অপচ্ছায়া দিয়ে যারে রেখেছে আঁধার করে নীরব উপনিবেশ
--আমার বস্তুত ছিল বার্তা এটুকুই
এবার তাহলে কথা হোক কিছু ভিতরমোহিনী
এ যে, সাবধানে থেকো
নিগূঢ় এ প্রেম রেখো নিরাপদে
হিসেব নিকেশ দিয়ে যদি তারে বেঁধে রাখো শুধু
দরদাম হবে আজ, কাল উঠবে নিলামে
আর পরশু কী হবে সে ভেবে তটস্থ আমি
লুকিয়ে রাখতে চাই বুকের ভিতরে তাই
আবেগও চাই কিছু লসলসে দানা বাঁধা
প্রেমের ছন্দ কি তুমি টের পাও দেশ
অক্ষরবৃত্তের দোলা
ক্ষত
..
কুয়াশা নাড়ার মাঠে নিশিজাগা মলুয়ার সুর ভেসে আসে
বাতাসে লতিয়ে ওঠে আগুন পোহানো ভোর
লেপ-তোষকের বাহানারহিত কুয়াশাস্বরিত আঙিনায়
পত্ররিক্ত গাছপালাসহ কেঁপে ওঠে দূর বনগ্রাম
জাগে সারা বাংলার শুষ্ক ও ক্ষুধার্ত মুখ মংগার
জমাট কঠিন কান্না শুয়ে থাকে বরফের রূপে
রামশীল থেকে দূর উল্লাপাড়া তক
মানুষেরই মাথা ফেটে হওয়া যমজ দু’ভাই মিলে
ঘরে ঘরে মিথ্যা মল্লযুদ্ধ ঈশ্বরে-আল্লায়
ভাইয়ে ভাইয়ে অযথা কামান দাগা
নামাতে আসে না কেউ এই ভার মানচিত্র থেকে
ইতিহাসপাঠ
.........
প্রচল ইতিহাসের একটা ডিসক্রেডিট হলো এই যে, ওতে প্রায়ই অলংকারের বাড়বাড়ন্ত থাকে, যেমন অতিশয়োক্তি, ইতিহাসবিদেরা ইতিহাস রেখে কাব্যে নিমগ্ন হলে, কল্পনাপ্রতিভার নবতর উন্মোচনে কাব্যের সংকট কিছুটা ঘুচত, বলা যায়
আমাদের ইতিহাস বইগুলো উপুড় করলে তা থেকে পড়তে থাকে রাশি রাশি বানানো হাত-পা, বানোয়াট মহিমা ও গৌরব, এই ধারণা আমি যেদিন লাভ করি সেটি ছিল ইতিহাসের আওতার বাইরের একটি অনৈতিহাসিক দিন, দুহাতে চোখের ওপর ধরে শুয়ে আমি পড়ছিলাম সমাজেতিহাস, সহসাই টের পাই চুঁইয়ে পড়া বহুকালের ভেজাল তথ্যপাতির গন্ধে আমার দমবন্ধপ্রায়, লাগাতার গোঁ গোঁ আওয়াজ শুনে পাশের ঘর থেকে নায়কোচিত লম্ফনশৈলী দিয়ে এসে খপ করে বই কেড়ে নিয়ে বউই সে যাত্রা আমায় প্রাণে রক্ষা করে, ওইদিন মনে হয়েছিল, সম্ভবত আমি নতুন একটা চোখ পেতে যাচ্ছি ঐতিহাসিক অন্ধকারে
কার্যকারণ সহযোগে মানুষের পরম্পরা ধরে পিছন দিকে চিন্তাকে চালিত করা গেলে ইতিহাস নামধারী গ্রন্থকে সন্দেহ করা লাগে, এরা কেননা শুধু একপক্ষ দেখে, এ যাত্রা হতে পারে মানুষের বলিরেখা, চিত্রকর্মের রঙ, চলচ্চিত্রের আলো ও সাহিত্যের রঙবেরঙের রহস্যময়তা সহযোগে
জলপাইরঙা দিনে
................
ধানের মাঠ ডিঙিয়ে এই যাওয়া, চালের স্বপ্ন ছাড়িয়ে ঠিক আলুগড়ের দিকে
পিছনে পড়ে থাকে মৌ মৌ ভাতের ঘ্রাণ, সাথে পাটশাক ও শুকনা মরিচ ভাজা
জলপাইরঙা দিনগুলো জুড়ে উদাসী মাঠে তাকিয়ে ছিল রৌদ্রালোকের মড়া
মহা উৎসাহে আমরা সকলে আজ মিলিত হয়েছি তার শেষকৃত্য ছলে
লোকে বলে
ভূত মরে গেলে তার অস্থিভস্ম থেকে নাকি প্রেতেরা জন্মায়
বাঁশফুলের ঘটনা
.............
কেন ফুটলি রে বাঁশফুল কেন
ইঁদুরবন্যা হলো আমাদের জুমযজ্ঞ ঘিরে
শস্য গেল রবি ও খরিফ
গেল ঘর-গেরস্থালি সব
বই বস্ত্র জমানো সঞ্চয়সহ সবকিছু
চাষ অধিকার গেল পাহাড়ের থেকে
ফুটলি রে বাঁশফুল যদি এতদিন পরে
অভাব আনলি কেন ডেকে
লেখার টেবিল থেকে দূরে
...............
লেখনের ফাঁকে ফাঁকে নিজস্ব টেবিলে গূঢ় কিছু কথা এসে লুটোপুটি খায়, কখনো আত্মীয় তারা কখনো অনাত্মীয় দূরের আভা, তবু লেখার বিষয় জুড়ে জড়োয়া গয়না হয়ে থেকে যায় সেসবের কিছু কিছু ছায়া-কম্পমান, বিষয়ের অনাত্মীয় এসব ছিন্নকথার যে দূর পুরীতে বাস, তোমার তুমুল হাসি সেখানেই কান পেতে আমি আজ শুনতে পেয়েছি বড়ো মাদকতাময়
সে যে কতকাল হলো, কত যে নিশির ভার তার ’পরে চেপে আছে আঁধার-পাহাড় হয়ে, আমাকে জাগায়ে যেতে এই ঘোর ভেদ করে আয়োজনহীন তুমি আসো, কালের পাথর-নুড়ি দুহাতে সরায়ে দ্রুত, বল-- অনেক তো লিখলে কবি, বিগতার আবির্ভূতি নিয়ে আজ লিখ
কলমকে আমি তাই মননে ডুবাই, মননকে ভাবে, ভাবকে তোমার নামে দাগায়িত করে করে তোমার চাহনি লিখি, তোমার লাবণ্য লিখি, আর লিখি লতা-পাতা কেঁচো-সাপ চাঁদ-নদী নীহারিকা, তোমার স্বকাল
লতা-পাতা
ছিল গানের মতো লতিয়ে ওঠা সবুজের বন, ছিল পাথরের স্থির ঢিবি, এমনকি ফুল ছিল পাথরেও বিকশিত সুগন্ধমদিরা, ছিল পিঁপড়ের ঘর আর আকাশ উজানে ফেরা পাখি-প্রজাপতি, ছিল মৃন্ময়-আনন্দ ভরা ফসলের মউমউ ক্লান্ত-প্রাণ আধিয়ার, ছিল যশোদা ও কণ্ঠমণি-- মাঠ ভরা সোনা সোনা পাকাধান
কেঁচো-সাপ
মাটিময় রাশি রাশি কেঁচো-সাপ মাথার ওপরে ক্রূর জমিদার (এ যুগের), দাঁতাল পেয়াদা তার আর যত জোতদার লাঠিয়া-বাহিনী, এসব ছাড়িয়ে সাথে ছোলাকলা নিয়ে বাবু মধ্যস্থতাকারী, কখন ফোটাবে কাঁটা কখন ঢালবে জমা নীল নীল সেঁকোবিষ, রোদে ও আগুনে পোড়া অবশিষ্ট খেটে খাওয়া মানুষের দেহে, তারই লাগি অনন্তর অপেক্ষা চলে লোকেদের চোখে ধুলা দিয়ে
চাঁদ-নদী
অয়নান্তে সূর্য তখনো যায় নি বেড়াতে, আসে নি আলোও এত পৃথিবীর কাছাকাছি, তবু তারা ছিল, নদীতে তখনো চাঁদ ডুবে গিয়ে কৌটো-ভ্রমর খুঁজে ডালিমকুমার, বনের যে ছায়া এসে পড়েছে নদীতে, চাঁদই পিছনে তার প্রথম উদ্গাতা, এই প্রেম পুরানো পুরানো অতি-- পৃথিবীর ‘রূপ নিয়ে চলে গেছে দূরে...’
নীহারিকা
তবু রক্তে ভেসে গেল রাজপথ, নিলাজ চন্দ্র কিছু আলোক ঢালিল, অধিকার চূর্ণ হয়ে ভারতবর্ষ জুড়ে কুয়াশা হলো মৃদু মৃদু, শীত হলো অনাথের, মানুষের দিন কাটে আজো খেয়ে বা না-খেয়ে
তোমার স্বকাল
আজো যত অধিকার হরণ ঘটে নারী ও পুরুষের, কালভেদে নানারূপে একই সব হরণ ডাকাতি, দূরদেশী ছদ্মবেশী হঠকারী ত্রাণকর্তা যত, নীতির বাগানে হাত সাফা করে ছিঁড়ে ফেলে মানুষের স্বস্তিকুসুম, ছোটবড়ো ম্যালা দায় তাদেরও স্কন্ধে চড়ে, জবাবদিহির ভার গুরুভাগ জমেছে তাদেরই
শ্যাঁওড়াকাহিনি
...........
শেষ কবে শ্যাঁওড়া গাছের সাথে আলাপ করেছি ঠিক মনে নেই, ঘাড়ে একটা বিকট মাছি এসে বসবার আগঅবধি অনবরত সে বলে যাচ্ছিল মাঠের রাজনীতি আর শস্য সম্ভাবনা নষ্ট হয়ে গেলে পাখিরাজ্যে যে বিপ্লব দানা বেঁধে ওঠে তার কথা
ভূতপ্রেত ছাড়িয়ে এগোনো ওইসব কথামালা হারিয়ে ফেলেছি দ্রুত ভগ্ন জনপদে, আজ মনে হয়, আমাদের একেকটা চূড়ান্ত বৈঠক লিখে রাখা গেলে অপচয় না-করে অযথা, দূরত্ব কমত খানিক বাজারমূল্যের সাথে শস্যলগ্ন কৃষকের, ঝরা ফসলের সাথে পাখিদের
গাছপালা থেকে অনেক দূরের মরু এ নগরে মুটে বইতে বইতে আজ জাবর কাটার কথাও প্রায় ভুলে গেছি, সেইসব মহাঘোর স্মৃতি
আলুকৃষকের চটি
..........
প্রান্তর শয্যায় মধ্যরাত ঢেকে গেল চন্দ্রপৃষ্ঠ থেকে উড়ে আসা ধুলায়
ধূলিমলিন এই ঘাসের দেশে আমি টর্চহীন খুঁজছি একটি ন্যায়ের পালক
এবারে আলুর ফলন মিত বর্ষণে বেশ বেড়ে গেছে
সিরাজদিখান জুড়ে মাঠে মাঠে আলুকৃষকেরা মিলে করছে উৎসব
কিন্তু বহুপ্রতিক্ষিত কোথায় সেই বাহারি রঙিন পালক
বাতরে নিজের চটিজোড়া খুলে রেখে যে কৃষক ক্ষেতে নেমেছিল কাল
ভুলে থেকে যাওয়া তার চটির ফিতা পালকের বদলে আমার চোখে লাগে
এরপর থেকে পুরানো পৃথিবী জুড়ে দায়ে পড়ে হাঁটছি গ্রামকে গ্রাম
চটির বেদনা ভোলা আলুকৃষকের কল্পিত একটা নাম জপে জপে
ভাসাপদ্য
.........
ভেসে যাচ্ছে শূন্যের ওপর দিয়ে এই প্রাণ শনৈঃশনৈঃ বায়ুপ্রবাহের সাথে
একটা কুটার সাথে যেই লাগছে আঘাত উহু-আহা আর্তনাদে ভরাচ্ছে আকাশ
ভেসে যাচ্ছে ভেসে যাচ্ছে যেন ভাসাই নিয়তি এই বিরুদ্ধ সময়ে
ঠেকবে কোথায় গিয়ে ভাসাপ্রাণ ভাসাদেহ বা আদৌ ঠেকবে কি না
এইসব ভেবে ভেবে ওড়ার মুহূর্তগুলো লাল করে দিয়ে আর ফায়দা কী
বাতাস ভাণ্ডে যেখানে মিশে যাচ্ছে গোল গোল অপূর্ণ ইচ্ছেরা
ভেসে যাচ্ছে সবকিছু ব্যথা ও বেদনা, সুখ ও স্বাচ্ছন্দ্য, প্রেম ও অপ্রেম
ফোঁটা ফোঁটা ঝরে পড়ছে শুধু যাপিত সময়ের স্মারক যন্ত্রণাগুলো
হারানো মুহূর্ত খুঁজি
...........
গোধূলিবেলার ত্রাসে হাহাকার এসে লেপে দিয়ে যায় মুখে কালো
বিগতার উপেক্ষাবাহনে আসে শূন্যতার সুবিপুল ধুধু বালিগ্রাস
রাত্রির কালিমা শুঁকে হারামণি তার কেশের গন্ধের বেশি
আর কোনো জেগে ওঠা বহুদিন কোথাও খুঁজি নি
হেলেঞ্চা বীথিতে ঝিলে নেচে গেলে কোমল রোদের আভা
হাস্যেলাস্যে ফুটতে দেখেছি শুধু তাকে
হিজলের ছায়ার নিচে তপস্যা নড়ে ওঠে দরদি সন্ধ্যায়
টান পড়ে ছিপের রশিতে মৃদু মনে মনে
শুধু মনে মনে আমি তার স্মৃতির সকাশে হেঁটে
বহুদূর পিছন পাহাড়ে হারা কোটি কোটি মুহূর্ত কুড়াই
যাপনবিদ্যা
..........
যৌবনবাদ্য থেমে যাবার আতঙ্ক গভীর হয়ে এলে রুটির দিক থেকে মুখ সরিয়ে নিয়ে রাখো ঘাসে বসে ঝিমানো নিসর্গের প্রচ্ছদে, টানো গভীর নিঃশ্বাস, ফড়িঙের ওড়াওড়ি তাতে বাড়ে, বৃষ্টি নামে ঝমঝমিয়ে আকাশের ছাদ ভেঙে, এর যে নিজস্ব তৌর্যত্রিকতা সেটা কানে নিয়ে প্রৌঢ়ত্বের পরিধির ভিতরে নির্মিত প্রফুল্ল গৃহে করে যাও যথেচ্ছ যাপন
এটা হবে ক্রমশ পচে ঘিনঘিনিয়ে ওঠা সমাজদেহ থেকে সুদূরে স্থাপিত, রাষ্ট্রদেহের জঙ্ঘার নিচে গজানো এইসব যাপনবিদ্যার দিকে কালা সব কানুনেরা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে যাবে, রাষ্ট্রের সামর্থ্য নেই যে মনের পায়ে শিকল পরাবে মানুষের, কিংবা গাধায় চড়িয়ে দেবে পার করে আচার সীমানা, রাষ্ট্রের চোখ বড়ো স্থূল, ওটা যা দেখে তা দেখে কানারাও, যা দেখার তা দেখে না কস্মিনকালে
ভিতর দিক থেকে একটা একটা করে খড়কুটা নামিয়ে এনে গড়ে তোলা ওই পাখিনীড় পাতার পৌরহিত্যে দেখবে মানিয়ে যাচ্ছে বেশ
একাগাছ
.....
শালজঙ্গলের কোনো জেরক্স হয় না
পোড়োবাড়ির কোনো সারাই হয় না
আমাকে আধলে রেখে উড়ে গেলে তুমি
পোড়োবাড়ির ধারণা পড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে
বাতাসে বাতাসে ভাঙনের সুর বেজে ওঠে
মাঠের ভিতরে থাকা একাগাছ যত দেখি
শূন্যতার তত বেশি পড়ে যাই প্রেমে
গোড়ার জল কী দারুণ আগলে রাখে
থমথমে কালো ছায়া
একদিন সবকিছু ছেড়েছুড়ে
ধু ধু পথে হাঁটা দেব শূন্য অভিলাষে
তুমি জেনে রেখো
শরীরগাছের জন্য এপিটাফ
...............
শরীর বিস্মৃত হয়ে যেখানে নেমেছি
সেই খাদ থেকে ওঠা মুশকিল
অবিকল অবয়ব নিয়ে
কখনো পারে নি কেউ পারব না আমি
এ ক্ষত বইতে হবে বাঁচি যে কদিন
ঘোড়া এসে দাঁড়িয়ে থাকবে
আমাকে আনন্দপুর নিয়ে যাবে বলে
চড়ে দেখবার সাহস পাব না
চোখের সামনে ঝুলবে তামাশা
শরীর চাবে না বলে দেখাই হবে না
শরীর আমাকে শরীর দিয়েছে
দেয় নি যথেচ্ছ মন্থনাধিকার--
এইকথা বুঝেছি যখন
ম্যালা ডালপাতা ঝরে গেছে ততদিনে
শরীরগাছের
দিনে দিনে এতসব হারালাম যদি
তবু কি যথেষ্ট আমি শরীর চিনেছি
সময়ের ফুরালে সময়
....................
তীরের নিকটে এসে ডুবে গেল তরী
এই ক্ষত বয়ে বেড়াবে অনন্ত জল
আমার মনের
একটা নতুন রেখা সমতলে জেগেছিল বলে
কোনোভাবে এইবারও বেঁচে যাওয়া হলো
সঞ্চয়ের মতো মনে হয় নুড়িসব
আসলে সঞ্চয় নয়
পাহারা বসিয়ে রেখে তার চারপাশে
শুধু শুধু করে যাচ্ছি আয়ু-উদযাপন
সময় সইছে বলে এত কিছু
সময়েরও ফুরালে সময় একদিন
নুড়িপাথরের প্রেম ভেঙে যাবে
জলের জগতে গিয়ে লীন হবে
জীবনের সকল রসদ
দুটি বিলবোর্ড
.........
ঘড়ি
ঘড়ির কাঁটার দিকে তাকালে আমার কেবলই মরে যাচ্ছি বলে মনে হয়
আত্মা
আশ্চর্য, গ্রাম গ্রামকে ছেড়ে গেছে, নদীও নদীকে
আমি কবে ছেড়ে যাব আমার আমিকে
মৃত্যু
.....
জীবনের ভিতরে আজ মৃত্যুর লোমশ একটা হাত ঢুকে গেছে
আনাচে কানাচে তার জন্মেছে পাথরকুচি
মৃত্যুর মরণ নেই
প্রবাস নদীর তীরে
..............
সবুজের নিচে হাত বাড়িয়ে পথ আগলে আছে হেমন্তকাল
ছাতিমফুলের ঘ্রাণ
সাধু অন্ধকারে কুড়িয়ে পাওয়া ঘ্রাণের তসবিগুলো
রাতের মদিরা জ্ঞানে ছুঁয়ে যায় ধ্যানে ধন্য বজরার সারি
কুয়াশার ধুতি খুলে খুলে পড়ে
পাতার উপরে জাগে দূরপ্রভারাশি
তবু সৃজনচিন্তার মৃত্যু লিখে রাখে বাচাল সময়
নগ্ন ও অস্থির
তীরাঘাতে ঝরেপড়া এক মড়া শালিকের মতো আমি
চুপ করে থাকি
এইসব নিয়ে থাকি
...........
বলি লোহালিয়া অতিরূপকথা, তোমার প্যাঁচের ভিতরে সমাজ ও সংসার যেভাবে তরতর বেড়ে ওঠে বাঁচার নিয়মে, আমাকে সেভাবে তুমি রাখো, গাছের আদরে রাখো পাখি
দূরপ্রবাসের তীরে ফণা ধরা হাহাকার ছুড়ে ফেলি, ঢুকি মনের খোড়লে, ওখানে থাকেন যিনি, ভাব করি তার সাথে, তারে ছুঁয়ে যাই, ছুঁতে ছুঁতে যাই, দেখি ঢেউ নাচে হিয়ার বাতাসে আর নাচের মুদ্রার সাথে মেশে এসে জলের গলাও
ধানে-জলে মাখামাখি ভাটিজনপদে, হেসে ওঠে বাংলার দেহবল্লরি, এই রূপকাহিনির দেশে ভেসে যায় রাশি রাশি তরী সদা’গরি, উজানি বাতাসে ভেজা রয়ানির সুর ধেয়ে আসে, বিষণ্ন বাদামি
ঘুরি পথে পথে আর পথের পাথর বুকে এইসব নিয়ে থাকি, তা না হলে কার সাথে ভাগ করে নেব বলো কুড়ানো বেদনা, এতসব যন্ত্রণাকুসুম
জীবনপাঠ
....................
পতনের পর দীর্ঘশ্বাস যতক্ষণ সম্ভাবিত
ততক্ষণ থাকা ভালো শুয়ে বা বসে ওই পতনাসনেই
ভেবে নেয়া ভালো খুব এ যাত্রার ভুলভাল
উঠে দাঁড়ানো মানেই তো আর বিজয় নিশ্চিত হওয়া নয়
ওঠারও রকমফের আছে
এক জীবনে মৌসুম আসে অনেকানেক খেলার
এবং সেটা অনেকানেক মাঠে
বরষা সাঁতার
..........
মুহূর্ত চূড়ায় দাঁড়িয়ে আমাকে
আরো একবার বেঁচে যেতে হবে
জীবনে কেননা যত রোদ্দুর পথের পাশে
লতাঝাড়ে পুষ্প হয়ে ফোটে
তাদের সুগন্ধ নেয়া আজো বাকি রয়ে গেছে
আজো আমার মনের পাখির সাথে মিলিয়ে পার্শ্ব গলা
সুর করে পাখিশাস্ত্র অধ্যয়ন করাই হলো না
আমার গ্রামের গান সময় হলো না বলে
আজো দেখো গাওয়া-থোওয়া বাকি রয়ে গেছে
এমনকি বলতে পারি নি আজো ঘরের কথাও
আমি তো এখনো ভরা বরষায় তুঙ্গ যমুনায়
মাঝনদী সাঁতরিয়ে কূলে যেতে চাই
বিস্ময় কখনো যদি এর মাঝে
ডাক পাঠিয়ে জানায় যে আমাকে যেতে হবে
অন্যথা করব আমি কীসের বাহানা দিয়ে
যাবার বেলায় এই স্বপ্ন আমি কাকে দিয়ে যাব
কোন পটে এঁকে যাব অসমাপ্ত পাহাড়ের ছবি
লেবেলসমূহ:
কাব্যগ্রন্থ,
চিরপুষ্প একাকী ফুটেছে,
মুজিব মেহদী
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
প্রিয় খোকনদা,
উত্তরমুছুনআপনার এই পোস্টটায় চোখ বুলালাম। অন্যের লেখালেখি পোস্ট করবার আপনার যে মানসিকতা তাকে স্যালুট, আর এ কাজে দৃষ্ট যত্নের ঘাটতিটাকে নিন্দা!
আপনি আপনার নিজের পছন্দমতো লেখা নির্বাচন করে এনে এখানে রেখেছেন, সেটা আপনি রাখতে পারেন; কিন্তু বিন্যাসটা আপনার মতো করে করতে পারেন না বোধহয়। সেটা যে আপনি ইচ্ছে করে করেছেন, তা নয়; হয়েছে অসতর্কতার দরুণ, অনিচ্ছায়।
এসব করে আপনি এই ব্যস্ততম সময়ে বিস্তর সময় বিনিয়োগ করেছেন। এজন্য ধন্যবাদ জানিয়েও আরো একটু সময় দিয়ে সমস্যাগুলো দূর করতে অনুরোধ করছি। তা নইলে কেউ কখনো এই পোস্টে এলে তাঁর বিরক্ত হবার সম্ভাবনা তো থাকবেই, থাকবে আমার কবিতা সম্পর্কে ভুল ধারণা পাবার সম্ভাবনাও।
প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে যে সমস্যাগুলো দৃষ্ট হলো নিচে একে একে তা জানানো হলো।
১. পোস্টের ‘এমভি নন্দিতা’, ‘নন্দন প্রহার’, ‘পুরুষের ধর্ম, ‘গুমরসম্মত’, ‘শ্যাঁওড়াকাহিনি’, ‘হারানো মুহূর্ত খুঁজি’—এগুলো প্রতিটি আলাদা আলাদা কবিতা। অথচ প্রতিক্ষেত্রেই আগের লেখার সঙ্গে গুলিয়ে গেছে। এবং প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই, উপরে, সময়ের উল্লেখসহ বাংলা ব্লগারের ডিফল্ট নোট ‘এর দ্বারা পোস্ট করা মুজিব মেহদী এই সময়ে’ কথাটিও থেকে গেছে।
২. ‘রন্ধনশালার রাজনীতি’ কবিতার শেষ লাইন ‘আমরা অন্য শিল্পের লোক’কে দাগানো হয়েছে ‘গুমরসম্মত’ কবিতার নাম হিসেবে। আবার নিচে ঠিকঠাক অবস্থায়ই 'গুমরসম্মত' কথাটা থেকে গেছে।
৩. ‘লতা-পাতা’, ‘কেঁচো-সাপ’, ‘চাঁদ-নদী’, ‘নীহারিকা’, ‘তোমার স্বকাল’—এই পাঁচটি ‘লেখার টেবিল থেকে দূরে’ কবিতার উপশিরোনাম (‘দুটি বিলবোর্ড’ কবিতা দ্রষ্টব্য); কিন্তু ফরমেট অনুযায়ী প্রতিটি আলাদা আলাদা কবিতা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
৪. শেষদিককার ‘জীবনপাঠ’ ও ‘বরষা সাঁতার’ কবিতা দুটিতে অনর্থক প্রতি লাইনে স্পেস হয়ে আছে। নির্দিষ্ট প্যারাস্পেসগুলো (‘জীবনপাঠ’-এ ১টি এবং ‘বরষা সাঁতার’-এ ৫টি) রেখে অন্য স্পেসগুলো রিমুভ করা দরকার।
আপনার আশু তৎপরতা আশা করছি।