শুক্রবার, ২৮ আগস্ট, ২০০৯
কবি আবদুর রবের ১০টি কবিতা
উত্তরসাধক
..........
আছে নীল জাদু, ব্লাকহোল...
তবু রয়ে গেছি
দক্ষিণের আশ্চর্য প্রতীক-
বিভূতি-চঞ্চল এক উড়ুক্কু কিশোর!
সারা দেহে সময়ের বাষ্প
ছেদহীন চেতনাপ্রবাহ;
আবেগ তেহাই মারে, ফসফরাস ভরা
নদীজল আলোক সজ্জিত!
একাধিক আত্মগোপন ও উন্মোচনে
চক্ষুতলগুলি দেখে:
আকাশের নীল প্রতিশ্রুতি-
স্ফটিক ত্বকের নিচে জলের বিস্তার!
সেই জলফাঁদে আটকে পড়া চাঁদ, তার
পরাবাস্তব এ উপস্থিতি নিয়ে
পূর্ণ হয় সব দেহকীর্তি!
সংগোপনে উত্তরসাধক-
ডেকে আনি বননির্জনতা...সুরের ভিয়েন..
এলিয়েন
.........
বয়স্ক শরীরে ঢুকে পড়া
শিশু আত্মাটিকে খুঁজে না পেয়ে লন্ঠন হাতে
জননী আমার
পৃথিবীর মলিন সংসারে
প্রতিবেশীদের সময় কুড়ায়, খোঁজে
সন্তানের ছায়ালিপি, লুপ্ত অভিব্যাক্তি।
আকাশে উল্কার মৃত্যু দৃশ্য,
চমকে ওঠে;
সে কেবলই ভাবে,
উদ্বাস্তু শিশুর কথা!
গর্ভধারণের এই এক গল্পক্রম- সারাক্ষণ
নিজেই নিজেকে দাও প্রবোধ, সাজাও কল্পকথা;
ঢেকে রাখো সন্তানের ত্রুটি-
মস্তিষ্কের নিউরন খুলে দেখো
উষ্ণ স্মৃতিকণা!
শেষে, অনিবার্য সব অভিমান ভুলে
প্রসারিত শীর্ণ দুখানি খড়ের হাত
টেনে নেয়
পৃথিবীর একটি মাত্র শিশু
হোক সে পরিণত- যুক্তিবাদী এলিয়েন!
প্রতিবিশ্ব
.......
শব্দ এক ভয়ঙ্কর প্রতিবেশ
উচ্চারিত হতে না হতেই
দ্রবীভূত, মিশে যায় জীবনকণায়
গড়ে প্রতিবিশ্ব!
যা তুমি জেনেছো
জীবনের পরতে পরতে
পরখ করে তা
মহাজাগতিক লিটমাস!
স্বপ্ন দেখো, পাঠকক্ষ জুড়ে জলাভূমি;
সঞ্চিত পুস্তকগুলি সন্ধ্যার বলাকা-
অন্য প্রাণ, উড়ে যায় শূন্যে...
সংখ্যাহীনতায়...।
তুমি আছো, তোমার প্রতিটি
নড়াচড়া ধরা আছে
অদৃশ্য ফুটেজে!
গ্রীষ্মদৃশ্যে পাকা কুমড়োর রং ধরে
তোমার অস্তিত্ব-
শব্দের পবিত্র সমাধিতে!
ক্ষয়
.....
কাউকে বলে না, তার স্বপ্নসাধ ভেঙে দেয়
সংসারের ক্ষয়। দুর্বোধ্য সমস্যাগুলি
দেখে মনোযোগ দিয়ে আর একা একা
খেলা করে সারা ঘরময়। অনুতাপে
আমি তার করুণ মুখের দিকে তাকাতে পারি না।
হঠাৎ হঠাৎ জ্বলে ওঠে বনভূমি, গৃহকোণ;
ভয়ে গ্রাস ফেলে সে তখন ছোটে দিগ্বিদিক।
শিশু নিগ্রহের এমন মহান প্রাকৃতিক পরিবেশ
তার কচি কলজেটাকে ছিঁড়ে খায়।
খেলনা ভাঙে নিজের পৃথিবী,
ভেঙে ভেঙে ক্লান্ত তবু নিরপেক্ষ- বেলুন ওড়ায়;
স্বপ্ন দিয়ে ভরা তার প্রাণের বেলুন।
মৃত নদীর উপকথা
............
মৃতপুত্রকের মন ব্যথায় টন্টন্, তবু
নদীটির নামে উঠবে না প্রবল ঢেউ;
খুঁড়তে গিয়ে দেখবে শুধু মাটি।
কাঁকড়ার কঙ্কাল ধীরলয়ে
হেঁটে যাবে বিস্ময় ছড়িয়ে।
বাতাসের শব্দে হয়তো বা শুনতে পাবে
ইঞ্জিন নৌকার কাঁপা কাঁপা স্বর।
মাঠের ভিতর ফাঁকা বাড়িটায়
রাতভর কাশতো এক বুড়ো,
এখন সেখানে হরেক রকম ঘরবাড়ি।
জানালায় সাদা-লেস পর্দা ঝোলে
বর্তমান বাসিন্দারা জানে না, কখন
বাগানে খোলস ছেড়ে চলে গেছে সাপ।
ঢেউ
......
ঢেউয়ের সমষ্টি মানুষ;
মানুষের দু চোখে সবুজনীল ঢেউ!
সিসা আর রুপা রং ঢেউগুলো উন্মাদনা-
জীবনের চেয়ে উঁচু!
হাওয়া ঠেলে পরিযায়ী ঢেউ আসে-
একা একা, দল বেঁধে।
মহোৎসব ছাপিয়ে ফুটে ওঠে
ঢেউয়ের লেখচিত্র: উল্লম্বে আত্মবিশ্বাস;
আনুভূমিকে আঘাত; অস্বীকার;
হতাশা, ক্ষোভ, ভয়- এই সব সন্ধিক্ষণ!
ঢেউই ত্রিকাল, স্বপ্নভেদ- সব যুদ্ধ
ছলাৎছল শব্দ উপেক্ষা, অপেক্ষা!
ঢেউগুলি এক একটি অনুকল্প, প্রমাণিত হতে
একে অপরকে দেখে নেয় নিজের আরশিতে!
নিরন্তর জলভঙ্গ, জলযাত্রা-
নিপাতনে সিদ্ধ স্রোতধারা, অনূঢ়া সময়!
ঢেউয়ের মন বুঝি;
মানুয ঢেউয়েরই চক্রব্যূহ!
একটি গুল্মলতা
..........
পাথরের কোল বেয়ে কবিতা শ্রেণীর
একটি গুল্মলতা
জন্ম শাসনের ফাঁক দিয়ে
বেড়ে উঠলো,
পাতায় পাতায় তার মৃত্যু ফোঁটা;
এক উদাসীন স্বরের রাখাল
বেদুইন ইচ্ছা অনুসারে,
দিনে সূর্যালোক দেখে রাতে শীত;
অন্ধকারে তাঁবু হয়ে টানটান
পাহারা বসায় ভিতরের ঘুম
যথাস্থান থেকে বস্ত্রচ্যুতি কিংবা
গোঙানির শব্দ।
শিশিরের অভিযাত্রা শেষ হলো
তার পাতার ওপরে এসে
আর তক্ষুণি সকাল
প্রমিথিউসের ভাই মাতরিশ্বা
নিজেকে কবিতা বলে চিৎকার করে উঠলো
অভিজ্ঞতা স্তরে।
ইঁদারা
......
জলজ সম্পর্কে বাধা পড়ে ইঁদারাটি থেকে গেল।
জল ছিল তার বুকে, জল ছিল তার ঘরে
তবু জল ছিল না তো কোনোখানে!
কেউ তাকে ঠেকাতে পারে না, যেমন পারেনি উদ্দালোক।
সেই কবে জলবৃন্তে ফুটেছিল চাঁদ সেসব কুহক আজ
ঝরা পাতা পুরাতন ছায়া তরল মৃত্যুর ফাঁদ।
কপিকল ওঠানামা করে, ঝুঁকে পড়ে জল মাপে কঙ্কাবতী।
প্রহরে প্রহরে কতো হাস্য কোলাহল, লীলায়িত ছন্দ
তথাপি নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে বিবিধ জঞ্জালে।
জল সরে যায় নতুন জলের উৎস বরাবর
এই ভালো, পাতালের দিকে তাকাতে হয় না আর।
শামুক
......
শামুক স্বাপ্নিক প্রাণী, জানে কি করে
স্বপ্নকে নিরাপত্তা দিতে হয়। তার মতো
আমাদের কোন শক্ত আবরণ নেই। তাই
স্বপ্নকে সুরক্ষা করতে পারি না, কখনো।
গন্ধম ফলের পাপ নিয়ে থাকি ভ্রমলোক;
ইটের অসুখে ম্লান- পতিত গ্রহের অনুগত।
এতো কিছু আবিষ্কৃত হলো তবু সিলিকন-প্রাণ
পড়ে আছে সংকীর্ণ কোটরে..।
প্রতিপাদ্য জীবনযাপন এতো জল্পনা-কল্পনা
সব বিগত যৌবন। ঝড়ের পাখির মতো উড়ি
জন্ম থেকে মৃত্যু, তবু ছুঁতেও পারি না
স্বপ্নভূমি, মহালোক। বিপরীতে,
তোমার শম্বুক গতি; ধ্যান আর জ্ঞানে জীবনের
পরম সংশয় সরে যায়
কোনো এক নবতর নক্ষত্রসন্ধানে।
স্বপ্নবিন্দু নয়, আমরা তো ক্যাকটাস ভালোবাসি
বেদেনীর মন্ত্রমঞ্জুষায় ভুলে থাকি।
ক্ষীণকটি নারীর অধরে
অস্ত যায় আমাদের সকল অর্জন ।
অগ্নিযাত্রা
......
জন্মচিতা জ্বেলে দেয় অগ্নিযাত্রা;
ঘুড়ি বালকেরা ভেবেছিল, আকাশ সাঁতার
সন্ধ্যা হলে দু হাতে গুটিয়ে নেবে
তন্তুর দূরত্ব।
উড্ডয়নের এক একটি সার্থকতা
সময় বিন্দুকে স্পর্শ করলে,
মনে হয় পরিত্রাণহীন- ব্লাক হোল,
ঢুকলেই চিড়িয়াখানার গন্ধ,
কোন ফিরতি পথ নেই!
লক্ষ্যভ্রষ্ট পুড়ছো তুমি,
তোমার পায়ের নিচে নড়ে উঠছে
মৃতভাষা-
ফুরিয়ে যাওয়া কোনো এক
জীবন-কাহিনী ঘিরে!
লেবেলসমূহ:
আবদুর রব,
আবদুর রবের কবিতা,
কবিতা,
কবিতা : আশি দশক
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন