
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরদের পরিবার একেতো ব্রাক্ষ ছিলেন তারমধ্যে আবার পিরালী। তাদের সাথে বিয়ের সম্পর্ক করতে সামাজিকভাবে অনেকেই সাহস পেতেন না। সেজন্য বাংলাদেশের যশোরের দিকে, যেখানে ঠাকুর পরিবারের জমিদারী ছিল, তার আশে পাশের গ্রামের সাধারন ঘরের মেয়েদের দেখে বউ বানিয়ে আনা হতো। কিন্তু কাদম্বরী যশোরের সেরকম রায় বংশের মেয়ে ছিলেন না। তিনি ছিলেন কোলকাতার মেয়ে। যদিও তাদের আগে থেকেই ঠাকুর বাড়ির সাথে বিয়ের আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিল। শুধু জোড়াসাকোর ঠাকুরবাড়ি নয়, পাথুরিয়াঘাটার ঠাকুর বাড়ির সাথেও তাদের আত্মীয়তা ছিল বিয়ের সূত্র ধরে। তারপরও কাদম্বরীর সাথে জ্যোতিরিন্দ্রনাথ এর বিয়েতে জ্যোতি এর দাদা সত্যেন্দ্রনাথ কিছুতেই রাজী ছিলেন না। কাদম্বরীর দাদা একসময় কাদম্বরীর বাবা ও কাকাকে নিয়ে তাদের বাড়িতে আশ্রিত ছিলেন। কাদম্বরীর দাদা তাদের বাড়ীর সন্দেশ খেয়ে বলে দিতেন কোনটি বাসি আর কোনটি নয়, সে সন্দেশ পরীক্ষকের নাতনী হবে তার আদরের ভাই জ্যোতির বউ? জ্যোতি তখন বিলেত যাবেন পড়তে। ফিরে এসে এই ছোট্ট খুকীর সাথে মানিয়ে নিতে পারবেনতো? শেষে না দুটি জীবন নষ্ট হয়ে যায় এই ভাবনায় তিনি কাতর ছিলেন। কিন্তু এতদসত্বেও তিনি কিছুতেই গুরুজনদের মত পরিবর্তন করতে পারলেন না।

ঠাকুরবাড়ির অন্দরমহলের যা কিছু সুন্দর তার সব কিছুর সাথে জড়িয়ে আছেন কাদম্বরী। তিনি এ বাড়িতে এসে তিন তলার ছাদে গড়ে তুললেন “নন্দন কানন”। পিল্পের উপর বসানো হলো সারি সারি পাম গাছ, আশে পাশে চামেলী, গন্ধরাজ, রজনীগন্ধা, করবী, দোলনচাপা। তার সাথে এলো নানা রকম পাখী। ঘর সাজানোর দিকে প্রথম থেকেই কাদম্বরীর প্রখর দৃষ্টি ছিল। দেখতে দেখতে ঠাকুরবাড়ির চেহারা তিনি পালটে দিলেন। কিশোর রবীন্দ্রনাথের সৌন্দর্যবোধকে তিনি সবচেয়ে উচু তারে বেধে দিয়েছিলেন, যা থেকে রবীন্দ্রনাথ আর কখনো সরে আসতে পারেননি। মাত্র কয়েক বছরেই প্রায় অশিক্ষিত এই বালিকাটি ঠাকুর পরিবারের মতো বিখ্যাত পরিবারের সাহিত্যের প্রানকেন্দ্রে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। কিন্তু তিনি নিজে কিছুতেই অংশ গ্রহন করতেন না। অপরকে প্রেরণায় উজ্জীবিত করাই ছিল তার ব্রত। যেটাকে প্রচলিত অর্থে বলা হয় রোমান্টিক সৌন্দর্যবোধ, তা কাদম্বরীর পুরোমাত্রায়ই ছিল। হয়তো ঠাকুরবাড়ীতে অনুকুল পরিবেশ পেয়ে তা তরতর করে বেড়ে আত্মপ্রকাশ করেছিল কিন্তু তার ভিতরে তিনি সেটা বহু আগে থেকেই লালন করতেন। নইলে এ বাড়ির প্রানপুরুষকে জাগিয়ে দিতে তিনি যতোটা সফল হয়েছিলেন, অন্যকেউই তা পারেননি। কাদম্বরীকে নিয়ে এতো বেশী আলোচনার কারন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর স্বয়ং। কিশোর রবীন্দ্রনাথের মানসিক গঠনে কাদম্বরীর ভুমিকা অসামান্য। তার অকালমৃত্যু রবীন্দ্রনাথের মনের মধ্যে গভীর ছাপ রেখে যায়, যা তার অসংখ্য গল্পে, কবিতা, গানে তিনি প্রকাশ করেছেন। যারা অনেক কিছু কল্পনা করতে ভালোবাসেন তাদেরকে সেসব কল্পনা করার রাস্তা তৈরী করে দিয়েছেন কবি নিজেই। তিনি নিজেও জানতেন সেকথা। যার জন্যে তিনি কৌতুক করে শেষ বয়সে লিখেছিলেন, “ভাগ্যিস নতুন বৌঠান মারা গিয়েছিলেন, তাই আজোও তাকে নিয়ে কবিতা লিখছি, বেচে থাকলে হয়তো বিষয় নিয়ে মামলা হতো” ।
(মাঝে মাঝে জানেনতো আমি আপনাদের সাথে আমার কিছু ভাল লাগা শেয়ার করি। আজকেও করছি। আমার গনক যন্ত্রটিতে এগিয়ে আসা পরীক্ষার নোট খুঁজতে খুঁজতে হঠাৎ করেই একটি ফাইল খুলে নিজেই অবাক হয়ে যাই। কবে, কখন ফাইলটা পেয়েছিলাম মনে নেই। কিন্তু খুব ভাল লাগা একটা জিনিস আমার। তানবীরা তালুকদার এর এই একটা লেখাই আমি পেয়েছিলাম। তাই অনেকদিন পরে আবার পাওয়া মাত্রই আপনাদের সাথে শেয়ার করা।)
http://prothom-aloblog.com/users/base/abarshurute/39
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন