শুক্রবার, ২৮ আগস্ট, ২০০৯
কবি আবদুর রবের ৯টি কবিতা
একক
......
অদ্ভুত কাণ্ডটা ঘটে যাক কোন এক ফাঁকে
তাড়া নেই, নির্দেশনা নেই, আছে অনিবার্যতা
অস্তিত্বের ছোঁয়া দৃশ্যপারাপার
ভারমুক্ত মনে হয় সব
চোখের বাইরে থেকে প্রশ্নগুলো চলে সাথে সাথে
ওষুধ-নির্ভর মানুষ কি স্বাধীন?
দুর্ঘটনার আগে ট্রেন ঢুকে যায় নিজস্ব স্টেশনে
বাজে ভাবে শুরু হওয়া দিন শেষ হয় ভালোয় ভালোয়
প্রশ্নকর্তা হলে যৌক্তিক উত্তর ছাড়াও মেনে নিতে হয় কত কিছু...
ক্রিষ্টাল শৈশব
.........
সেইসব ফসলের ক্ষেত
নদীনালা ঘরবাড়ি ও মানুষজন
এখন কোথায় বাস করে?
আসন্ন পঞ্চাশ, বুকে ধরে আছি
ক্রিষ্টাল শৈশব;
কাচের ঘুড়িতে উড়ি, বৃক্ষের বাকলে ঢুকে
বৃষ্টিছাঁট থেকে আত্মরক্ষা করি।
দুপুরের রোদে ঘুরি হলুদ পতঙ্গ;
কি রোমাঞ্চকর ছিল সবুজ পানিতে ঝাঁপ দেয়া;
মনে হয় ফিরে যাব, কিন্তু সত্য নয়।
কী চেয়েছি অর্থহীন- রাস্তার দুপাশে
বেগুনি ও সাদা ফুল দোলে-
জীবনের ডানে আর বায়ে...
শরীর প্রিয়তা
.........
অন্ধকারে আলো জ্বলে শরীরে শরীরে
চিরকাল সে এভাবে নিয়ন্ত্রন করে
বাঁচার উপায়।
দৈহিক প্রেমের প্রচারক,
তুমি কষ্ট পাও;
শরীর ও মনের রক্ত চলাচল থেকে
ক্ষুধাতুর হয়ে ওঠো,
যৌ্নতার উপাদাবগুলো
অনুভব করো, জীবনের
শেষ বিন্দু দিয়ে।
যে আঁখি দিগন্ত দেখে
...............
সৃষ্ট সম্পর্কের ডালে উড়ে উড়ে বসে
ভ্রমণে বিশ্বাসী এক সদা-ব্যস্ত পাখি
তৃষ্ণায় চুমুক দেয় বৃক্ষ-ছায়া-রসে
কেউ কি কখনো তারে বাঁধে নাই রাখি!
ডানাহীন নয় তাই উড়েছে আকাশে
তৃষ্ণামুক্ত নয় তাই জলে ঠোঁট রাখে
গরজে আবদ্ধ হয় কৃতজ্ঞতা পাশে
আঘাত পেলেও সেকি মুখচ্ছবি আঁকে!
যে-কিনা আকাশ চেনে মানে না সীমানা
তার কাছে অর্থহীন সুখের বয়ান।
ছায়া দুঃখময় হলে মেলে দেয় ডানা,
পৃথিবীকে ভাবে তার নিজস্ব উদ্যান।
যে আঁখি দিগন্তে দেখে উজ্জ্বল তিলক,
সেও চেনে ভালো করে তিক্ত হেমলক।
আর্তনাদহীন
.......
সবাই অতৃপ্ত আজ তীব্র ক্ষত বুকে,
লেজ থেকে মাংস খসা মাছের মতোন
অস্থির বেড়ায় ভেসে আর্তনাদহীন।
স্পর্শভীতি কাজ করে সবার দু চোখে,
বিভ্রমে বিনষ্ট হয় আনন্দ ভূবন;
সর্বত্র প্রাচীর তুলে রয়েছে স্বাধীন।
ছদ্মবেশ ছাড়া চলে নির্মম ঘাতক
দেরিতে বুঝেছো বাছা জলের জাতক।
কাকতাড়ুয়ার দর্শন
...........
ভূমি আর ফসলের পাহারায় আছো
লাঠির মাথায় তুমি ষাঁড়ের করোটি;
তোমার ভিতরে জ্বলে ঋগ্বেদের অগ্নি
তুমি পরিণতি আর স্বপ্ন উপাসনা।
প্রাণ থেকে প্রাণহীন বস্তু হয়ে হাসো;
সৃষ্টির এমন ছন্দে নেই কোনো ত্রুটি।
অসীমের মধ্যে আছে প্রকৃতির লগ্নি,
কিসে তাৎপর্যময় তোমার সূচনা?
নিগূঢ় অনেক কথা নিজে বলে দিলে
বাকিটা আমার মুখে শুনতে চাও জানি।
শোন তবে মাঠ থেকে দু-একটি কথা;
সর্বদা বিনিদ্র থাকি ফসল মঞ্জিলে;
আমার উপমা আমি, নয় দেহখানি,
ঝুলে থাকা জীবনের এই সার্থকতা!
সহজ পাঠ
........
শিখিনি সহজ পাঠ জীবনের কাছে
ফলে দু চোখে যা দেখি, তার সব ভুল
অনুভবগুলো যেন যন্ত্রণার শূল,
হৃৎপিণ্ডে ফুটে গিয়ে খুব গেঁথে আছে।
আমার সমস্ত সুখ প্রজাপতি-লয়ে
ওই দেখো, উড়ে যাচ্ছে চঞ্চল-সুন্দর;
দুঃখ-পাপড়ি মেলে থাকা ফুলের ওপর
সারা দিন খেলা করে পরম নির্ভয়ে।
জেগে জেগে স্বপ্ন দেখি আকাশ কুসুম
সরোবরে জলকেলি, শিস দিয়ে ডাকি
সঙ্গোপনে তুলি টেনে মুখচ্ছবি আঁকি
ভুলে যাই সব দুঃখ পাই উপশম।
কিছুই পাইনি আমি বেদনার কাছে
প্রিয় পাখি উড়ে গিয়ে বসে ভিন্ন গাছে!
খরা
.....
আগাম রমণ স্বাদ নেবে যদি আজ
কাল তবে ঘরে নিও, নইলে আমার
থাকবে না জেনো মুখ লুকোনোর লাজ
সখা তুমি দেখো ভেবে আরো একবার।
আকলিমা আর তারে কদিন ফেরাবে
কদিন শোনাবে সেই একঘেয়ে গীত
ইরিপাতা দেহখানি কদিন ঠেকাবে
শরীর মানে না বাধা যৌবন অর্পিত।
কি দিয়ে ঘুচাবি তুই মুখের কালিমা!
মা'র কথা ভেবে মেয়ে ছটফট করে,
কাটা কবুতর যেন দুঃখিত পূর্ণিমা;
আর কান্না শেষে চোখ মুছে ফেরে ঘরে।
খরা ও আকাল তার ভেঙেছে বিবাহ
কুমারী কিষান কাঁদে বুকভরা দাহ।
আলোমতি
........
তুমি সেই আলোমতি, দেখে মনে হয়
অন্নপূর্ণা রেঞ্জ থেকে দেখা সূর্যোদয়॥
তুমি হাঁট, থর থর কাঁপে হিমালয়
ভেঙে খান খান হয় সংযম আলয়॥
তুমি হাসো, ঝড় ওঠে- বুকে জাগে তৃষ্ণা
করি কৃষ্ণ-কৃষ্ণ-হরি, ভাবি, না বিষ না॥
তুমি কাঁদো বন্যা নামে মনসমতলে
ত্রাণ ভিক্ষা করি যেন লুকাও আঁচলে॥
রোদ ওঠে, দেখি তুমি ছড়াও উত্তাপ
ভাবি এর অর্থ হলো তীব্র নিম্নচাপ॥
তুমি এতো কিছু তবু অন্তিমে কিছু না
ভোগবিন্দু থেকে আমি করেছি সূচনা॥
লেবেলসমূহ:
আবদুর রব,
আবদুর রবের কবিতা,
কবিতা,
কবিতা : আশি দশক
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন