শুক্রবার, ২৮ আগস্ট, ২০০৯
ঘুমায়ে পড়িছে সবুজ পাতাদল
পাপড়ি রহমান
সবুজ পাতায় আগুন লেগে পুড়ে যাওয়া জীবন। পুড়তে পুড়তে কাঁচা পাতার গন্ধ ভেসে আসে- কি রকম সবুজ-সবুজ-কাঁচা-ক্লোরোফিল গন্ধ! তারুণ্য পুড়িয়ে দিতে পারলে মানুষের আর জীবন-মৃত্যুর ভেদ থাকে না! মাটির তল আর উপরিভাগ সমান্তরাল হয়ে যায়!
থাকেনা লোভ-হিংসা-অসূয়া-বেদনা। এসব না থাকলে আনন্দ আর ভালবাসাও থাকেনা। থাকেনা কোনো ব্যর্থতা বা সম্ভাবনার কথা।
রোজ রাত্তিরে ভাবি-
ডাক্তারের ফোন নাম্বার লিখে রেখে যে কবি গ্যাস চুল্লিতে নিজেকে সমর্পন করেন, তাঁর বেদনার নীল বেতফলের কথা।
You come in late
Wiping your leaps…
অথবা
The other does that
His hair long and plosive.
Bastard
masturbating a glitter,
He wants to be loved.
I do not stir.
The frost makes a flower,
The dew makes a star,
The dead bell,
The dead bell.
Somebody’s do
অথবা
The bees are flying
They taste the spring…
বসন্তের স্বাদ জানা কবির পাশে তাঁর শিশু দু’টিও তো ছিল? তবু তাঁর মরিবার হলো সাধ!!!
‘যে-জীবন ফড়িঙের,দোয়েলের-মানুষের সাথে তার হয় নাকো দেখা এই জেনে’-ই কি কবি আনমনা হয়ে পথ চলেন? আর চাপা পড়েন ট্রামের তলায়?
‘কোনোদিন জাগিবে না আর
জাগিবার গাঢ় বেদনার
অবিরাম-অবিরাম ভার
সহিবে না আর-‘
অথচ তিনি কি আমাদের বলেননি
‘আমিও তোমার মতো বুড়ো হবো-বুড়ি চাঁদটারে আমি
ক’রে দেবো কালীদহে বেনোজলে পার;
আমরা দু’জনে মিলে শূন্য করে চলে যাবো জীবনের প্রচুর ভাঁড়ার।‘
প্রেম ছিলো, আশা ছিলো-জ্যোৎস্নায়,-তবু সে দেখিল কোন ভূত? ঘুম ভেঙে গেলো তার? অথবা হয়নি ঘুম বহুকাল-লাশকাটা ঘরে শুয়ে ঘুমায় এবার...
বুকের পাঁজর গুঁড়িয়ে দেয়া ট্রাম, শুন্য করে দিয়ে যায় আমাদের কবিতার পুষ্পিত উদ্যান...
মাত্র ৩৬ শে জীবনকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিলেন- লাস্যময়ী, উদ্ভিন্ন যৌবনা সেই অভিনেত্রী-যাঁর স্কার্ট দামাল হাওয়ার টানে উড়ে গিয়ে চন্দ্রালোকে ভাসিয়ে দিয়েছিল কোটি কোটি ভক্তের চোখ-
তাঁর মোম সদৃশ পদযুগল, আর গোলাপ ফোটা মুখচ্ছবি সকল হরণ করেছিল...
আহা! কেন যে তিনি শিশির ঝরার শব্দের মতো নিঃশব্দে ঘুমিয়ে পড়লেন?
বুলবুলিটির গান ফুরোলো ঘুমের বড়ি খেয়ে...
আর ওই যে এক দার্শনিক-ছিটগ্রস্ত আঁকিয়ে- নিজের কান কেটে উপহার পাঠিয়ে দেন পতিতা-প্রেমিকাকে!
আঁকেন-‘সান ফ্লাওয়ার’-‘পটেটো ইটার’-‘রোড উইথ সাইপ্রেসেস এন্ড স্টার’-‘টু পেয়ার ট্রিজ উইথ শাতু’
‘আন্ডার গ্রোথ উইথ টু ফিগরস’
তারপর ২৭ জুলাই ১৮৯০ নিজের প্রাণের ভেতর ছুঁড়ে দেন বুলেট!
তিনি কি সব চাইতে উজ্জ্বল রংয়ে নিজেকে রাঙিয়ে দেখতে চেয়েছিলেন কোনো নান্দনিক চিত্রকলা- যা তিনি কোনোদিন আঁকতে পারেননি!!!
আর এক তরুণ গল্পকার, নিঃশব্দেই লড়ে গেলেন নিজের অভাব-অনটন আর বেদনার সংগে।
দুপুর পর্যন্ত বন্ধুদের সাথে আড্ডা পিটিয়ে বাড়ি ফিরে গিয়েই তাঁর বুঝি মনে হয়-
সোনার খাঁচার বুকে রহিব না আমি আর শুকের মতন; কি গল্প শুনিতে চাও তোমরা আমার কাছে-কোন গান, বলো,
তাহ’লে এ-দেউলের খিলানের গল্প ছেড়ে চলো, উড়ে চলো,-যেখানে গভীর ভোরে নোনাফল পাকিয়াছে,-আছে আতাবন;
পউষের ভিজে ভোরে,আজ হায় মন যেন করিছে কেমন;-
তারপর কি তিনি সর্প ভেবেই সর্পকে নাকি সর্পকে রজ্জু ভেবে তুলে নিলেন গলায়-হয়তো ভেবেছিলেন সর্প পিছলে যাবে অথবা ছোবল বসাবে।
কিন্তু হায়!যাই ভাবুন না কেন, রজ্জুই কেড়ে নিল তাঁর অনির্বাণ জীবন শিখা!!!
১৯ এপ্রিল জন্মতিথী স্মরণ করে করে সাদা কাফনে নিজেকে মুড়ে ফেললেন আমাদের কনিষ্ঠতম অথচ উজ্জ্বল এক কবি।
ফ্যানের সংগে ঝুলতে ঝুলতে তাঁর মনের বাঁশিতে কোন সকরুণ সুর ধ্বনিত হয়েছিল, কে জানে?
মৃত্য উপত্যকায় প্রবেশ করেও কি তিনি ভেবেছিলেন -
মনে হয় অজ্রস মৃত্যুরে পার হয়ে আসিলাম
আজি নব প্রভাতের শিখর চূড়ায়
রথের চঞ্চল বেগ
হাওয়ায় উড়ায় আমার পুরানো নাম
ফিরিবার পথ নাহি
দূর হতে যদি দেখ চাহি
পারিবে না চিনিতে আমায়
হে বন্ধু বিদায়...
কিন্তু আজো তাঁর কবিতাই তাঁকে চিনিয়ে দেয়।
কত রাত্তির যে ভোর হয়ে যায় তাঁদের কথা ভেবে ভেবে! চোখের নিচে কালো নদীর রেখা গাঢ় থেকে গাঢ়তর হয়।
আমি জানিনা এমন সবুজ পাতাদল কেন পুড়তে পুড়তে কাঁচা-কাঁচা-সবুজ-সবুজ গন্ধ ছড়িয়ে গেলেন এবং বড় অসময়ে ঘুমিয়ে পড়লেন ? কে বলে দেবে তাঁদের এমন অসময় ঘুমরহস্যকথা?
১৮.০৯.২০০৯
বিঃদ্রঃ
খুব দ্বিধা নিয়ে আমার খেরোখাতার জার্নাল আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করলাম। ভুল-ত্রুটি মার্জনা করবেন।
যাঁদের নিয়ে এ লেখা
১. কবি সিলভিয়া প্লাথ ২. কবি জীবনানন্দ দাস ৩. অভিনেত্রী মেরলিন মনরো ৪. শিল্পী ভিনসেন্ট ভ্যানগগ ৫. কথাসাহিত্যিক কায়েস আহমেদ ৬. কবি শামীম কবীর
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন