মঙ্গলবার, ২৫ আগস্ট, ২০০৯

কবি অদিতি ফাল্গুনীর কবিতা






অভিকর্ষের মেদ
...........
সে আমার প্রভু, সে আমার ক্রিতদাস
আধখানা ঘৃণা, আধখানা অধিবাস-
তবুও প্রণয়, তবুও গ্রহের বঞ্চনা-
সিন্দারেলার পালক জুতো,
সে-ও হয়েছিল ভারি-

উড়ো না ও মেয়ে,
উড়ো নাকো তুমি বলশয় ব্যালেরিনা-
মাটির মানবী মাটিতেই থাকো দৃঢ়-
আকাশ গঙ্গার সন্ধান না করে!

আকাশগঙ্গার সন্ধান যদি করো,
নিমেষে হবে আলোকবর্ষ পার,
এখানে তোমার সময়েরা ছিল যত-
কাটাবে নিষ্ফল প্রতীক্ষার সম্ভার!
..............................................
গোত্র প্রাচীন, লুপ্ত লিপির অনামা অন্ধকারে-
অভিকর্ষের মেদ জমা হলো পুরাতণ সংসারে
.....................................................
সে আমার প্রভু, সে আমার ক্রিতদাস
আধখানা ঘৃণা, আধখানা অধিবাস।

রচনা: মে ১৯৯৫।


অধিবর্ষ অপরিচয়ের
...........
“প্রেম নিঃশেষিত মিতিয়া,” কাতিয়া আবার বলা শুরু করে, “তুমি আজ অন্য এক নারীকে ভালবাসো আর আমি ভালবাসি অন্য এক পুরুষকে- তবু, ভালবাসো- ভালবাসো আমাকে আরো একবার।”
: ব্রাদার্স কারামাজভস্, ফিওদর দস্তয়েভস্কি।

কেউ কারো খোঁজ রাখে নাকো আজকাল,
অপরিচয়ের বছরগুলো ক্রমাগত পার হওয়া-
একটি যুবক ডেকেছিল তোতাপাখি,
একটি যুবক বলেনি ত’ ভালবাসি।

একটি যুবক ডেকেছে ময়নাপাখি-
তবু সে যুবক বলেনি ত’ ভালবাসি!

পুরণো পাহাড়ের ফসিলে হবে কি দেখা-
মৃত শহরের রৌদ্র ও অঞ্জনে?
অনেক মেঘ অনেক রোদের পর
শস্যসমিধ জ্যোৎস্নায় মাখামাখি।

তাম্রলিপিতে আমার মুখটি দ্যাখো,
অল্পেই বিচলিত হতে নেই কান্ত-
নূহের প্লাবনে নৌকাটি ভেসে এলে,
আমরা কবের ঈশ্বর ঈশ্বরী!

নগরীতে আজ মড়ক নেমেছে প্রিয়,
পুণ্ড্রবর্দ্ধন নগর তোমার,
আমার তাম্রলিপ্তি-
রাঢ়, সমতট, সূক্ষè ও হরিকেল
একাই হেঁটেছি তোমাকে পাব জেনে!

তোমাকে পাব তোমাকে পাব না আমি...
রাঢ়, বঙ্গ, সূক্ষ ও পুণ্ড্র
(তুর্কী আসে, আসে শক হুন দল
মাজারে মিলালো শুদ্রের পূজাবিধি!)
মড়ক নেমেছে মসলিন কে বোনে?
মড়ক নেমেছে মিশরে নৌকা যাবে!
মারীতে খুঁজছি তোমার শবটি প্রিয়...

গঙ্গাঋদ্ধির ওপারে গ্রিকসৈন্য,
গঙ্গাঋদ্ধির এপারে হস্তীদল-
কি করে যাই তোমার কাছে যে প্রিয়?
নৌকা গড়ে তাম্রলিপ্তি মজুর,
তুমি লুপদখ পুণ্ড্রনগরে বাস...
একবার তবে আমার মুখটি আঁকো!

কে যায় ভৈরবী ঐ?
বিয়ে করে নি ত’ আর বিধবাও সে নয়!
আরো দ্যাখো তার যৌবন সারা অঙ্গে,
যার খোঁজে হাঁটে সে ত’ কৃতদার বেশ!
তবে কেন হাঁটে সারা দিনমানভর?
রাঢ়, সমতট, সূক্ষ ও হরিকেল?

পথে কত যুবা বৈশ্য ও শুদ্র,
পথে কত যুবা ব্রাহ্মণ ক্ষত্রিয়,
পথে কত যুবা গ্রিক-আরব-চৈনিক...
তাদের কাউকে ভালবাসলেই হয়!
ও কেন হাঁটছে সারা দিনমানভর?
যার খোঁজে হাঁটে সে ত’ কৃতদার বেশ?
রাঢ়, বঙ্গ, সূক্ষ ও পুণ্ড্র?

নিরুদ্দেশ হলাম যখন,
কোন খোঁজ করলে না-
সম্রাটের অকারণ দণ্ডে
নিরুদ্দেশ হলাম যখন
কোন খোঁজ করলে না!
বিশ্বস্ত বার্তাবাহক তুমি সম্রাটের,
বিশ্বস্ত রূপদক্ষ তুমি সম্রাটের-
আমি ভৈরবী বুঝতেই
হলো নির্বাসন!
সেই থেকে হাঁটছি তেপান্তর-
নিরুদ্দেশ হলাম যখন,
কোন খোঁজ করলে না-

এখন এ নগর মড়কে উৎকট,
প্রজাবিপ¬ব অত্যাসন্ন হলে-
সুখী অমাত্য, বাম পার্শ্বে জায়া,
আমাকে দেখছো ধুলোমাখা ভৈরবী?

কেউ কারো খোঁজ রাখে নাকো আজকাল,
অধিবর্ষ অপরিচয়ের ক্রমাগত পার হওয়া!

রচনা: জানুয়ারি ২০০২।


ফ্রিভার্স: বিরহরামায়ণসর্গ
..............
এবং সীতা ও রামের মতো, সেই অনন্ত রামায়ণ-গাথার মতো আমাদের বিরহের এই বিস্তৃতি। যে-বিস্তার নিরন্তর ভুল-বোঝাবুঝি, নিরুক্ত ক্রোধ, অভিমান গাঢ়, সুদূরতর- ছায়ালোক... ঝঞ্ঝা ঈজিয়ান-শিপ্রায়! কেউ কি কোনোদিন দেখেছে সেই অনন্ত রামায়ণ-গাথা? হেলিওট্রোপ... শীতরাতে, শীতঘুমে... ছায়াপথের কঙ্কালের নিচে দাঁড়িয়ে তবে শোনো সেই অনিঃশেষ অভিমান গাথা... অযোধ্যার সাময়িক মিলনোচ্ছ্বাস-শেষে মৈথিলীর বনবাস, লঙ্কাপুরীর সেই রাক্ষসরাজাকে ঘিরে তোমার সন্দেহ, কলঙ্ক ও অপযশ, ভ্রষ্টতার - প্রাসাদের আলিঙ্গন তবে থাক, নির্বাসনে যেতে দাও, জানকী বনবাসী হোক! বাকি থাকে অগ্নিপরীক্ষা, ফিরে আসা অযোধ্যার রাজগৃহে আবার। কত কত সৌরবর্ষ পরে! তোমার অবিনশ্বর পুতুলখেলা - আমাকে নিয়েই - তুলে নিচ্ছ, ছুঁড়ে দিচ্ছ... হায়! তোমার দশাশ্বমেধ, স্বর্ণসীতার আড়ম্বর - আমার একাকী অভিমান - আমাদের ঘৃণা পরম্পরা - আমার পাতাল যাত্রা! আমার দুস্তর নির্বাসন!

রচনা: ১৫.১০.২০০৪



রি-মিক্সিং নৃত্ত (মোহিনী আট্টম) সংবর্ত্ত
..........................
বেহুলাও... একদিন অমরায় গিয়ে
ছিন্ন খঞ্জনার মতো... নেচেছিল ইন্দ্রের সভায়,
বাংলার নদী মাঠ ভাঁটফুল ঘুঙুরের মতো তার কেঁদেছিল পা’য়।

দশায় পেয়েছে তোকে,
ওলো সর্বনাশী!
অশনে নাইকো রুচি, বসনে বিকার,
এ-ভরসন্ধ্যায় এলোকেশী!

লোগ কহে মীরা হো গ্যয়ী বাউরি,
নাথ কহে কুলনাশী রে...
বিষ কা পেয়ালা
রাণা নে ভেজা
পিবা তো মীরা হাসি রে
*
পগ ঘুঙর বাঁধো মীরা নাচিরে।


নেচেছি বহুকাল ঘুঙুর জঙ্ঘায়
উন্মাদিনী একাকিকী,
এ মাহ ভাদরে চরণ বিক্ষত,
ফেলেছি খুলে কিঙ্কিনী -
এ মাহ ভাদরে চরণ বিক্ষত,
ছিঁড়েছি আমি শিঞ্জিনী;
খুলেছি কেশপাশ খুলেছি কবরীও
ছেড়েছি বসনের ভার,
এ মাহ ভাদরে শূন্য মন্দিরে
বিরহে আমি ছারখার।
কান্ত গ্যাছে হায় সুদূর যবদ্বীপে
কোন্ বাণিজ্যের তরে -
প্রাবৃষ আসে যদি আঁচল উড়াইব,
প্রাবৃষ আসে যদি বসন ছুপাইব,
যদি গো ফেরে নাথ ঘরে।

আমিও একাকী তুমিও একাকী আজি এ-বাদলরাতে,
সখী, নিদ্ নাহি আঁখিপাতে।

নাচি নাচঘরে দেবমন্দিরে
ঝাড়বাতি জ্বলেনি হে,
জ্বলে নাই শামা, সহস্রদীপ
দেবতা-গর্ভগৃহে...


আনাতোলিয়ার মন্দিরে ভক্তদের কোরাস
........................
দেবদাসী তুমি পরমা গেইশা, হে অযোনিসম্ভূতা!
নর্তকী তুমি বাঈজি তুমি হে, দেবতার রক্ষিতা!
জনপদবধূ অয়ি বারনারী, হে দিব্যা, সুস্মিতা!
লহো অঞ্জলি ভক্তকুলের, ত্রিরজনী-উদ্ভূতা!


ইবনে বতুতা বাংলাদেশে ভ্রমণকালীন সময়ে যে কিশোরী হাটে বিক্রি হয় এক দিনারে
..................................................
বাবা-মা ছিল তবু ডাকাত-দল
হরণ করেছিল আমাকে,
হাটের থেকে হাটে বিক্রি হতে হতে
নেচেছি সুলতানি দরবারে -
আমিই নেচেছি গো দাক্ষিণাত্যে
কর্নাটকী মন্দিরে,
সাতশ’ সালে যবে হিউয়েন সাং
বাংলাদেশে পর্যটেছেন।
পাচার হয়েছিনু পারদে, কম্বোজে,
গ্রিসে ও রোমে, কার্থেজে,
সার্থবাহ পনি আমাকে কারাভাঁয়
নিয়েছে ক্রীতদাসী ক’রে।

ঘর নাই ওগো ভাত বাড়ন্ত
নাগরের আনাগোনা -
নিত্য উপোসে মরে না শরীর
পরমা সুলক্ষণা।


ভক্তমণ্ডলীর কোরাস
............
এ সুলক্ষণ বারাঙ্গনার
কুললক্ষ্মীর নয়,
রূপ-গুণ-শীল বাড়ন্ত যার
কসবী সে নিশ্চয়।
দিয়ো নাকো ঘর দিয়ো নাকো বর,
কান্ত ছাড়–ক তারে,
সে দশজনার, আমজনতার,
দাও তারে মন্দিরে।


আভোগ
........
নেচেছে মীরা
বেহুলা নর্তকী
ছিন্ন খঞ্জনা
নেচেছি আমি
অধিত্যকায় -
হিন্দুকুশ ফারগানায়।
নেচেছে ইসাডোরা
ব্যালের ঘূর্ণনে,
কক্ষপথ-চ্যুত উল্কা -
নাচে হংসী,
সোয়ান লেক -
তীব্রতর মনোরমা।
রক্তস্কার্টখানি ওড়ালে, মেরিলিন?
ভোজালি হানো নাকি বুকে?
শেহেরজাদির
গল্পে নেচেছে
দুরন্ত মর্জিনা।


মোহিনী আট্টমের ইতিকথা
..............
নৃত্ত নৃত্য
লাস্য ও তাণ্ডব,
আলারিপ্পু গণেশ প্রণাম
তিল্লানা তারানা...
উমরাও জান,
ভানু রেখা গণেশন
(চাঁদনি বার,
মেলাঙ্কলিক টাবু...
ক্যাবারে নৃত্য,
বেলিডান্স উদ্দাম)।
*
ওঙ্কারে অঞ্জলি দেই নৃত্যসকল,
...যেন এক ফুঁ-য়ে উড়ে যাব ঝরাপাতা,
ও নিঠুর কানহাইয়া -
মীরা যে বাউরি হলো
ছাড়ল স্বামী, সিংহাসন।
রাজবধূ পথের ভিক্ষুনি,
হেমলক দাও, রাণা!

পিবা তো মীরা হাসি রে
ম্যায় তো উনকি নারায়ণ কি,
হো গ্যয়ী আপনি দাসীরে,
বেগ মিলে অবিনাশীরে
*
পগ ঘুঙর বাঁধো মীরা নাচিরে।


করেছ ভৎর্সনা, দয়িত আমার,
ড্যানিশ যুবরাজ হ্যামলেট,
বলেছ, ওফেলিয়া! গণিকালয়ে যাও -
তোমার যোগ্য সে-জায়গা।

করেছ ভৎর্সনা, প্রেমিক আমার,
বলেছ আমি বহুজনার হে,
নগরদাসী বিনোদিনীর কপালে
স্বয়ংবর লেখা নাই রে।


নেচেছি বহুকাল ঘুঙুর জঙ্ঘায়
উন্মাদিনী একাকিনী,
এ মাহ ভাদরে চরণ বিক্ষত,
ফেলেছি খুলে কিঙ্কিনী -
এ মাহ ভাদরে চরণ বিক্ষত,
ছিঁড়েছি আমি শিঞ্জিনী;
খুলেছি কেশপাশ খুলেছি কবরীও
ছেড়েছি বসনের ভার,
এ মাহ ভাদরে শূন্য মন্দিরে
বিরহে আমি ছারখার।

রচনা: ৯ই এপ্রিল ২০০৫।


স্বপন মেইয়া, আয় চলে আয় কাছে!
......................
বুকের ভেতর জলশব্দ,
আছড়ে পড়া প্রপাত-
রামধনু রঙ শান্ত বিকেল
অপাপবিদ্ধতা,
পণ্ড করে দেওয়া তোমার নষ্ট করে দেওয়া,
আত্মগর্বী প্রভুর অহঙ্কারে-
এখন যদি ভেঙ্গেও পড়ো শতেক হাহাকারে,
কি আসে যায় ক্লান্ত এই মেয়ের?

এখন আছে অন্য বিকেল, অন্য খোকাখুকু
দোলনা আছে, অশ্ব আছে, খেলার পুতুল কত!
(তোমায় নিয়ে খেলেছিলেম খেলার ঘরেতে,
খেলার পুতুল ভেঙ্গে গেছে প্রলয় ঝড়েতে!)
আজ যে শুধুই তোমার আমার খেলা দেখার দিন,
কানামাছির দিন ফুরলো যদি!

ফুটপাথে আজ হলুদ পাতার রাশ,
পাতা ঝরার দিন কি চলে এলো?
মুণ্ডা পাড়া, বেদের বহর ডাকে-
তুচ্ছ শহর, করুণা তোমায় করি!
সাঁওতালি গীত ঝুমুর বোলে ডাকে,
‘স্বপন মেইয়া১, আয় চলে আয় কাছে!’

আত্মগর্বী যুবক তুমি থাকো,
বিদ্যাবত্তা ঠাসবুনোট পেঁচার কোটরে,
লবণখনি, সূর্যমুখী ছুঁয়ে নাচব আমি পাতার পাহাড়ে!

রচনা: ডিসেম্বর ১৯৯৮।


সমুদ্রশরৎউল্লাস
..........
১. শরতের হাওয়া, সে বন্য নেকড়ে-
দাঁতাল ছুরিতে ছেঁড়ে ফুসফুস যত,
শরবনে তাতানো ভাদ্রের হাওয়া...
চলে গেছে বিসর্পিল রেল,
অরণ্যের কিনারা ছাড়িয়ে-
ভাঙ্গা স্টেশনে যেও না আর,
যেতে নেই-
ওখানে ভাঙ্গা ইঞ্জিন,
মৃত কুলীদের দাঁত কপাটি হাসি,
চকচক কালো দেহ, সাদা ছেঁড়া গেঞ্জির ঘাম-
এখনো পেশল বাহু, স্ফীত সিনা!

২. আজো আমি তোমাকে দেখতে যাবো না,
যখন দাঁড়িয়ে আছি এই ভাঙ্গা বাতিঘরে-
বাতিস্তম্ভ ডুবুডুবু- পায়ে লোনা জল, শাদা তিমি
তিমি পিঠে পা পিছলালো? জলস্ক্রিনে এসওএস বিপদ সংকেত-
না হয় এলোই ঘূর্ণি টর্নেডো!

বাতিঘর ডুবুডুবু,
আরও কত দূরে নুলিয়া বস্তি যে!
ছেড়েছি নুলিয়া বস্তি সেই কোন্ কাল্রে?
যখন পর্যটন এলো/ মোটেল/ ঝক্ঝকে লাক্সারি কোচ-

ডুবে গেল পোতাশ্রয়, ডকমজদূর, বয়লারে ফুটন্ত কয়লা
ইঞ্জিন, হলদে টুপি ঘাঢ়ে ওভারসিয়র
তারা শৈবাল হলো, শঙ্খ ও ঝিনুক হলো কেউ,
তারামাছ/সি-হর্স/ প্রবাল প্রাচীর!

আমার পোশাক নেই তাই নগ্নতা নেই
কেননা পোশাক নেই তাই নগ্নতা নেই
তবে কেন তিমি-পিঠে চড়ি আমি নগ্ন তিমি মেয়ে?

বিশ ফুট সমুদ্রের জলে ত্রিশ ফুট তিমি,
মাঝরাতে কৃত্তিকা নেমে এলে চুলে
দ্বিখণ্ডিত চন্দ্রযানে নভোচারী তারামাছ
পরমাণু স্বর্ণকণা ঢালে!

রাত বাড়ে, এখনো এল না সে এ্যালবাট্রস
আমাকে যে পৌঁছে দেবে তোমার বর্ষণে-
আহ্ রজঃপুষ্প রক্ত উরু মেলে দিই জলে
ট্রাউজারে শরৎ পুরে হেঁটে চলো সমুদ্র আমার!

উড়ে যাও দুঃখ শরৎ ব্যাধিকাল অস্ত্রোপচার স্ক্র্যাপ ব্যাণ্ডেজ,
হিবিসোল ইঞ্জেকশন তুলা
উড়ে যাও বিসর্পিল রেল, কুহকমগ্ন খনিদেশ
শহরতলির উদ্যানে খোঁড়া পায়ে ক্যালিপসো নাচা-
উড়ে চলো সমুদ্র শরৎ!

রচনা: সেপ্টেম্বর ১৯৯৮।


সামুরাই মেয়ে
........
স্না স এ চে
ন ল ক য়ে
ঘ জ্জ টি ছি
রে ল
কি চ
খু মো ড়– কা
লে নো ই চে

ফে আ শু
লি মা ধু ও
র, পা
রে।

*

আজ সাকুরার উৎসব ছিল, প্রিয়,
সাকুরা, তোমায় জানি বড় মোহনীয় -
যত মোহনীয় হবে সামুরাই মেয়ে
তৃষিত কৃপাণ তলপেটে গেঁথে দিয়ে।

রচনা: ডিসেম্বর ১৯৯৮


চুমু
...
কাল রাতে এক রুপালি নক্ষত্র
আমার দু’গালে দিলো দু’ফোঁটা শিশির -
একেই কুয়াশা বলে - প্রাচীন প্রবাদ।

রচনা: ডিসেম্বর ১৯৯৯



প্রিয় অভিনেতাকে
...............
সঙ্কেতে বোলো নাকো কথা,
বোলো না গুপ্ত মুদ্রায় -
বুঝি না সন্ধ্যাভাষা আমি,
ইঙ্গিত-ইশারা জানি না,
পড়তে পারি না আমি ফিনিসীয় লিপি।

যদি পৌরুষ থাকে
নতজানু হও -
উদাত্ত ভাষে বলো তুমি,
সঙ্কেতে কোনোকিছু চেয়ো না,
সঙ্কেত বুঝি নাকো আমি।

চিহ্নবিদ্যা জানা নাই,
সেমিয়টিক্সে ঘাঘু নই,
প্রতীকের পরা ও অপরা,
মিশরীয় হায়ারোগ্লিফিক্স্,
সুমের দেশের আখ্যান,
জানি না প্যান্টোমাইম আমি,
পার্সোনা পরে নাচে ছৌ নর্তক,
ধরতে পারি না আমি দেহভাষা আর
শরীরবিদ্যা তার...

মুখোশ খশাও, হে নর্তক!
যে-তুমি তুখোড় অভিনেতা -
ছায়াবাজি কত ভালো লাগে?
কতদিন ভোজবাজি খেলা?
(ছায়াপথে মায়া-পায়ে হাঁটা
তামস আকাশগঙ্গায়...)

ষাটটি ঘণ্টা কথাকলি-প্রসাধনে,
হে নায়ক, সুষ্ঠু তোমার সৌষ্ঠব!
ব্যাকাসের উৎসবে তুমিই কি
নাচো না পার্সোনায়?

জনপদ-মণ্ডপে বক্তৃতা তুমিই তো করো,
তোমারই অভিভাষণ প্রাকৃতজনের পরিষদে,
মৃগয়ায়, দ্যূতপণে, বা লাইসিয়ামে,
হাম্মাম-হারেমে কি গোপিনীসমীপে
তুখোড় তোমার অভিনয়!

তোমারে ডরাই, নর্তক,
হে আশ্চর্য অভিনেতা,
একবার মুখোশ খশাও,
একবার বলো অকপট
বলবার থাকে যদি কথা।

রচনা: ০১ মে ২০০৫



তৃতীয় অধিবর্ষের পর
.............
ঘৃণার আলিঙ্গনের ভেতর থেকে আমি ফুঁসে উঠলাম।
বলতে চাইলাম, “না!”... হিম প্রতিরোধে।
এই আলিঙ্গন, যা শুধুই ঘৃণার ছিল। এই আলিঙ্গন, যা শুধুই প্রতিরোধের ছিল। ছিল প্রতীক্ষার।
“কেন পালিয়ে গেছিলে? আমি ত’ দিতে প্রস্তুত ছিলাম চকোলেট, ফুলের তোড়া, দামি সুদৃশ্য মখমল, হে আমার একদা প্রেয়সী, একদা রক্ষিতা?” সে জিজ্ঞাসা করে।
“তারও চেয়ে বড় ছিল অসম্মান,” আমি বলি।
“অসম্মান নিয়ে কোন্ নারীই বা ভাবে? তারা ত’ চায় দামি আয়না, ব্রোকেড আর হীরের ব্রেসলেট!” সে অস্ফুটে বলে। আমার চুলের অনুবাত ঢালে ঠোঁট রেখে হাসে, “তবে এখন ভালবাসছো যে বড়?”
“সেটা এখনি বিচ্ছেদ হবে বলে,” আমি উত্তর করি। “আমাদের রাস্তা আলাদা, নয় কি?”
“শুধুই অসম্মান ? আর কিছু?”
“আর ক্লান্তি - তীব্র ক্লান্তি,” আমি কই।
“কিসের?”
“তোমার সকল রক্ষিতার প্রতি সমবণ্টনের নীতি,” আমি হাসি।
“হ্যাঁ,” সে আনমনে চুরুট ধরায়। “কিন্তু সবাই জানত তুমি আমার সবচেয়ে প্রিয় বেশ্যা যাকে ক্রমাগত কষ্ট দিতে আমার ভালো লাগত। উত্তেজনা বোধ হতো। আশা হতো, একদিন তুমি আমার পুরোপুরি হস্তগত হবে। যার ওপর ইচ্ছা খুশি চড়াও হওয়া যায়, প্রহার করা যায়, অসহ আদর করা যায়... অন্য নারীদের মতোই। অথচ, দেবী ইশতারের মন্দির থেকে যে-কৌমার্য ও প্রতিরোধ সঙ্গে করে এনেছিলে, তা’ নিয়েই ছাড়লে আমার আশ্চর্য হারেম। যে-হারেম যে-কোনো নারীর ভাগ্য এই রাজ্যে।”
“সমর্পণ করতে চেয়েছি। তবে, প্রভুর কাছে নয়। প্রেমের কাছে,” আমি মাথা নোয়াই।
“অন্য নারীদের সাম্বৎসরিক পুঁতির মালা দিলে তোমাকে দিয়েছি মালাকাইটের গহনা। তবু, দূর থেকে তোমার নৃত্য-গীতের সুগন্ধে অসহায় মুগ্ধতা ছাড়া কিছুই পাইনি। কতকাল এত অল্পে তুষ্ট থাকা যায়? তোমার অন্য সতিনেরা কেউই এত বেয়াড়া ছিল না তোমার মতো!” তার চোখে ক্লান্ত, হতাশ ও প্রাক্তন প্রভুর ভ্রূকুটি।
“এখন কি অবস্থা তোমার হারেমের?”
“ভেঙেছে শীশমহল, আশ্চর্য অলিন্দসকল। আমারও ক্লান্তি লাগে আজকাল। যাবে... ফিরে?”
“ফিরে যাবার জন্য বুঝি পালিয়ে এসেছিলাম?”
“তো এখন জীবন কেমন?”
“চমৎকার। এই পাহাড়ের কাছেই আমার কুটির। সব্জি ফেরি করি, ভেড়া চরাই। কুয়া থেকে জল তোলা। কাপড় কাচা। একবেলা রান্না। একটি অনাথ শিশুকে নিয়েছি দত্তক।”

“ভালো থাকো,” পুরনো প্রভু মাথা নাড়ে।

“তুমিও।”

তৃতীয় অধিবর্ষের দিনে পুরনো প্রভু হেঁটে যায় পাহাড়ের ঢালে।

রচনা: ২রা মে ২০০৫।



ওফেলিয়া
........
কোথাও মরমে লেগেছে,
কোথাও জোছনা কেঁদেছে,
কোথাও শরমে বেধেছে,
কোথাও কান্না জেগেছে।
*
এ-মেয়ে মর্মঘাতিনী,
এ যে চির-অভিমানিনী,
তীব্র গরলপায়িনী,
ওফেলিয়া, জলশায়িনী!

রচনা: মে ২০০৫



ছুরিবিদ্যা
........
বন্ধু, তোমরা মারছো আমায় ছুরি,
বন্ধুরা, ব্যথা লাগেনি আমার বেশি -
রক্ত ঝরেছে রক্ত ঝরেছে খুব,
প্রতি ফোঁটাতেই হয়েছি সঞ্জীবিত।

বন্ধুরা, আমি রক্তবীজের মেয়ে,
পলায়ন নেই, জানি নাকো ভয়ভীতি
বন্ধু, তোমরা আরো আরো ছুরি হানো
মার খাব পড়ে, টুঁ-শব্দ করবো না।

শানাও ছুরিকা অবিরাম ঘর্ষণে,
ভালো তবু আমি বাসবো কাতেলকেই।

রচনা: জুন ২০০৫



স্বরবর্ণের প্রভু
.........
পৃথিবী যখন তার সুপ্ত আড়মোড়া ভাঙতে উদ্যত, মাৎস্যন্যায়ের গোলাপবর্ণ আকাশে ছড়ালে, স্বরবর্ণের প্রভু এসে সামনে দাঁড়ালেন। “আমি অনন্ত, অসীম স্বরবর্ণ রাজির প্রভু। আমাকে কুর্নিশ করো,” প্রভু বলেন। “হতে পারে আমিই ধ্বংসের আগের শেষ রোদ অথবা সমুদ্র শঙ্খ। তুমি কি অবাক হলে?” প্রভু জিজ্ঞাসা করেন। একথা কে বলে কাকে? হয়তো মৃত্যু বলেছিল সময়, ধূলিকণা অথবা বাতাসকে।

রচনা: জুন ২০০৫


পুরনো গলিতে
.........
পুরনো গলিতে এলে,
রিকশা ভুল করে চলে পুরনো বাড়ির দরজায়,
রিকশাকে থামাতে ভুলে যাই...
পুরনো গলির মোড়ে নিরন্তর সব্জি কিনছেন মা...
পেঁয়াজ, কাঁচামরিচ, আলু, কলা,
কখনো বা রুটি, ময়দা, চিনি কি চাপাতি

এই মার্চে বাসা বদলেছি,
পুরনো গলির ভোরে এসেছিল সাদা অ্যাম্বুলেন্স,
আরও সাদা চাদরে মায়ের দেহখানি -

পুরনো গলির ঘরে মা’র রান্না চলে নিরন্তর,
মাছ আর আনাজ কোটেন,
কেটলিতে চায়ের জল ফোটে,
বিছানার চাদর বদলান, বালিশের খোলেন ওয়াড়...

আ-র আ-র
সারাটা বিকাল জুড়ে থাকে
ছেলেদের চিঠির অপেক্ষা,
ছবির, প্রবাসী মেয়েদের।
অপেক্ষা করেন আর রান্না...
আর হিসাব লেখা,
বাজারের হাজার হিসাব...

আলু এক কেজি আর এক কেজি পটোল,
গরম মশলা-চিনি-সুজি...
পুরনো গলির মোড়ে নিরন্তর মা’র সব্জি কেনা,
এই মার্চে বাসা বদলেছি...

আমরা, যারা আজন্ম ভাড়াটে,
আমরা, যারা চির-যাযাবর,
এই বাড়ি থেকে ঐ বাড়ি,
এ-শহর থেকে ও-শহর...

পুরনো বাড়িতে আজ নতুন ভাড়াটে,
জানলায় নতুন পর্দা, নতুন আসবাব,
নতুন চাদর আর বালিশের নতুন ওয়াড়।

নতুন বাসায় মা’কে কোথাও পাই না,
নতুন ডিসটেম্পার, নয়া লোকেশন,
নয়া পাড়া-পড়শি, পরিজন...

পুরনো গলিতে এলে,
রিকশা ভুল করে চলে পুরনো বাড়ির দরজায়,
রিকশাকে থামাতে ভুলে যাই।

রচনা: ২রা মে ২০০৫।



ইসক্রা
......
লেনিন সেবার শীতকালে ভালবেসে হন জীবন্ত,
রবীন্দ্রনাথ দিলেন এনে হঠাৎ হাওয়ার বসন্ত।
: কবীর সুমন।

অঙ্গারধূমে জ্বলে উঠেছি কাঠ,
নির্বাপণ করোনি অগ্নি,
যথাসময়ে...
ধিকি ধিকি জ্বলে যেতে দিয়েছ,
*
এখন কী আর পাবে
চাপ ছাই ছাড়া?
দু’একটা পোড়া কয়লাও
খুঁচিয়ে দেখতে পারো,
পাবে না এক টুকরো আগুনের অবশেষ -
একঝলক ফুলকির রেণু...
কিংবা, অমলিন ইসক্রা কোথাও।

রচনা: ৩রা মে ২০০৫



আত্মঘাতী বোমা হামলা
..............
জ্বলে উঠব অন্তহীন দাহ্যতায় আমি,
সেইসাথে পোড়াব তোমাকে -
ভেঙে চুরমার হব,
তোমাকেও ভাঙব একইসঙ্গে -
মরবো
এবং মারবো -
খুন হবো, খুন করে যাবো...

আমার দাউ দাউ দাবানলে
পুড়বে তোমার শস্যক্ষেত্র আর টুইন টাওয়ার,
সুরম্য হর্ম্য আর বিমানবন্দর।

পুড়বে যতেক তেলখনি,
সমরাস্ত্র কারখানা, নাইটক্লাব, রণতরী-ফ্লিট!
আমার তো হারানোর কিছু নেই প্রাণটুকু ছাড়া,
সে-প্রাণের অবসান তোমার প্রাণের সঙ্গে গাঁথা।

আমার আত্মার শহিদানে
লেখা হোক তোমার মৃত্যুর পরোয়ানা।

রচনা: ৩রা মে ২০০৫।


বর্ণমালা ও প্রেমিকেরা
.............
প্রত্যেকটি কবিতার পাশে
যে-প্রেমিককে নিয়ে লেখা খোদ কবিতাটি
তার নাম লিখে রাখি -
যদি ভুলে যাই, সেই ভয়ে।

নাম লিখে পরক্ষণে মুছে ফেলি নাম,
পাছে বাবা দেখে ফ্যালে নামগুলি, এই ভয়ে-ভয়ে,
ইস্কুলের খাতা ভেবে কবিতার খাতা যদি খোলে...

এভাবে রাবার ঘষে নাম মুছতে মুছতে,
একদিন খাতা খুলে দেখি
আর মনে পড়ছে না মোটেই
কাকে নিয়ে কোন্খানি লেখা হয়েছিল।

‘ক’ কবিতা ‘খ’-কে নিয়ে লেখা?
নাকি ‘গ’ ‘ঙ ’-কে নিয়ে?
‘চ’ কি ‘ক্ষ’ সংক্রান্ত আসলে?
আর ‘শ’ হয়তো ‘স’-কে নিয়েই মূলতঃ?
ক চ ট ত প ল ব শ ষ স হ ং ঁঃ

রচনা: ০৬ মে ২০০৫


হাইকু পঞ্চমী
.........
১. শুভদৃষ্টি
....
বৃহস্পতির সাঁঝ,
ছেলেটার চোখে বিষণœ পিপাসা -
মেয়ের হঠাৎই হার,
মেয়েটার জেরবার...

রচনা: ২১ জুলাই ২০০৫


২. ভাসানের গান
..........
ভেসে যাচ্ছি, ভাসিয়ে নিচ্ছ
প্রবল জলের তোড়ে,
কেন ভাসাও, অমর পুরুষ,
নিঃস্ব করার তরে?

রচনা: ২৬ ডিসেম্বর ২০০৪

৩. অশ্বকাহিনী
..........
তাগড়াই বুনো অশ্বের মতো সেই উন্মাতাল যুবকের মৃদু অথচ দীপ্ত হ্রেষাধ্বনি বুঝতে আমার সময় লেগেছিল। যতক্ষণে বুঝেছি, ততক্ষণে সে ফিরে গেছিল তার বিশ্বস্ত, পুরনো অশ্বিনীর কাছে।

রচনা: ১০ আগস্ট ২০০৫


৪. ছায়ালোক
............
তোমার বিরহে ডুবি,
তোমাতেই আমি ভাসি-
জেনে নাও, ছায়ালোক,
তাহাকেই ভালবাসি।

রচনা: নভেম্বর ২০০৪

৫. মাংস
........
তোমরা মাংস চাও,
ভালবাসো না -
শুধু শুধু কাছে আসো,
ভালবাসো না।

রচনা: নভেম্বর ২০০৪


আমার এলিজি
.........

১. তোমাকে আঘাত দিয়ে আমিও ভীষণ পুড়ে যাই
জ্বরগ্রস্ত প্রেম থরোথরো
হায় ক্রৌঞ্চমিথুন,
ব্যথাভারে নুয়ে যাওয়া দিন -
মেঘে-মুছে-যাওয়া শরতের ভায়োলিন,
মেঘে ভেসে যায় শারদ বেলার দিন!

২. অনুতপ্ত আচ্ছন্নতা
আহা অনুভবভেদ্যতা
সাদা মেঘ / শ্বেত শেফালিকা
মৃত্যু / শোকাগ্নি,
বিষাদধূম -
ফুজিয়ামা, তুমি শান্ত চাপা ছাই
শাস্তি নেব গাঢ় অভিমানে
শাস্তি দেব গূঢ় অভিমানে
মেনে নেব তোমার চুম্বন,
মেনে নেব তোমার ফতোয়া : প্রকাশ্যে একশ’ দোররা
মানব প্রেমভাষণ
মেনে নেব প্রকাশ্য গালি, অভিসম্পাত


৩. প্রত্যর্পিত অন্তর সন্তাপ
হায় অযথা চন্দ্রতাপ
হু হু অশ্র“ উন্মাদনা
ও অশ্র“র ব্রিজ,
উন্মাদ দিনরাত যত
চেপে আছে আমার শরীরে
অর্থহীন কবিতা-মঞ্জির -
বিস্বাদ আহার্য পানীয়।

৪. ছাইপোড়া পাণ্ডুলিপি
কান্নার মেঘ
ও রোদনের রঙধনু -
তোমার সৎকার গাথা
আমার কবরে এপিটাফ -
কেন বেঁচে আছি, সৌরঝড়?
বলো, তুমি চান্দ্রবর্ষ!
বেঁচে আছি কেন?
বলো, মেরুজ্যোতি নাইনাস!

আমার ঝুমঝুমি যদি,
তোমার দোলনা -
তোমার মাটির অশ্ব¦
সে আমার খড়ের পুতুল -
তোমার সৎকার গাথা,
আমার কবরে এপিটাফ।

৫. শেষ বিদায়ের আগে দেখা করে যাব,
প্রব্রজ্যার আগে আমি নিশ্চিত দেখা করে যাব -
তুমি জানতেও পারবে না।

৬. কারা বয়ে নিচ্ছে তোমার কাডাভার?
খাটিয়া বহন করছে কাঁধে?
কে আমার সমাধিতে সূর্যমুখী গোঁজে?
কারা তারা? তারা কারা-কারা?

৭. কোনো আলিঙ্গন আজও বাকি রয়ে গেছে,
ভুলে আছি,
ভুল করে আছি -
ভুল করে ভুলে আছি বহু বহু কাল?
কত ভুল করা যায়, যাবে?
ওফেলিয়া হই যদি,
গায়ে ছেঁড়া চট, বুনো পদ্ম চুলে গোঁজা -
নাগরিক হ্যামলেট, হে সংশয়বাদী,
বেশ্যা বলবে তুমি কি আমাকে?

৮. যে আমার অনাগত স্বামী,
তাকে ভালবাসো তুমি?
প্রতিদ্বন্দ্বীর কুর্নিশে সরে দাঁড়াবে কি?
আশা করি ডুয়েল লড়বে না?
সে যে অসৌজন্য,
তোমার বধূকে আমি
কখনোই ঈর্ষা করি নি।

৯. ভুলে আছি,
ভুল করে আছি -
ভুল করে ভুলে আছি বহু বহু কাল?
কত ভুল করা যায়, যাবে?
কোনো আলিঙ্গন আজও বাকি রয়ে গেছে...
রচনা: আগস্ট ২০০৫।


হাওয়া সমগীত
............
১.বহো উত্তুরে, বহো দক্ষিণা হাওয়া
তুমিও বও, শোন হে উতল হাওয়া
খানিকটা ধীরে যেমতো বলেন গীতবিতানের কবি-
পাথর দেয়ালে ধাক্কা খাবে যে হাওয়া,
বহো উত্তুরে বহো দক্ষিণা হাওয়া।


২. যে হাওয়া ওড়াল যত ঝরাপাতাদল,
যে হাওয়া ওড়াল অনিমিখ বল্কল-
ওপড়ালো হাওয়া, গুলমোহরের খুন,
আমিও কেঁপেছি... বাতাসে হিমের নুন-
কালোবৈশাখী ওড়ালে শিমুল তুলা
উত্তুরে শীতে ভাইকিংদের পালা!
সেই হাওয়া যাবে মৎস্যকুমারী দেশে,
উইণ্ডমিলের বিপরীতে দন কিহোতোর অভিযানে
আমি কিহোতোতে, তুমি কি সাঙ্কো পাঞ্জা?
বেঁটে ঘোঢ়াটাই সঙ্গী সে যদি,
ঢাল নেই হায় নেই নেই তরোয়াল
আমি নিধিরাম আমি কি সাঙ্কো পাঞ্জা?
উইণ্ডমিলের ভূতেরা সবাই শোনো,
বহো উত্তুরে বহো দক্ষিণা হাওয়া!

৩. হাওয়া আছড়ায়,
হাওয়া আছড়ালে,
সমুদ্র গর্জাল?
(অমল ধবল পালে কি লেগেছে
মন্দ মধুর হাওয়া-
গীতবিতানের কবি তো দ্যাখে নি
অমন তরণী বাওয়া)।
উড়ে গেল নাকি সাতশ’ শঙ্খচিল?
মৎস্যকুমারী পুচ্ছটি নাড়াতেই
স্রোতোধারা ভঙ্গিল?
মাছকন্যারা কেঁদেছ যখন
সমুদ্র বর্ণিল?

৪. ফ্লোরিডার তটে ঝড় যদি উঠলোই
এ-সান্তিয়াগো একাই টানো না, তিমি,
তিমি হ’লে ভালো, বা তিমির কঙ্কাল
স্রোত ধাক্কালে প্রাচীরের হবে কী?
পাথুরে প্রাচীর দাঁড়িয়ে ত’ থাকবেই!

৫. মৎস্যমেয়েরা এবার হাঁটতে শেখো,
অথবা ফিরেই যাও
মহীসোপানের পথে-
মহীঢাল বেয়ে আরো নিচে নেমে যাও-
-----------------------------------
ভেসে যায় যত লেগুনের শৈবাল,
হাওয়া আছড়ালে সমুদ্র গর্জাল?
বহো উত্তুরে বহো দক্ষিণা হাওয়া!

৬. যে তার হাওয়ায় আমাকে উড়িয়ে দিলো,
আমাকে ওড়ালো হাওয়ায় যে একদিন-
উড়ে গেছি আমি দীর্ণ শিমুলতুলা,
উড়ে গেছি ম্লান ঝরাপাতা
নিজে সে প্রাচীন
প্রাচীর সে চৈনিক-
আমি হই হাওয়া
আমি হই বায়ু উর্দ্ধে
অগ্নি, ঈশান, অধঃ আর নৈর্ঋতে...
আমাকে ওড়ালো হাওয়ায় যে একদিন।
নিজে সে প্রাচীন
প্রাচীর সে চৈনিক-

৭. আজ যদি আমি অহল্যা হই,
তুমি যদি হও তুফানের ঈশ্বর,
তুমি হও বায়ু উর্দ্ধে
অধঃ আর নৈর্ঋতে
প্রস্তরীভূতা...
আমার জড়িমা ভাঙ্গবে?

৮ই আগস্ট ২০০৫।



নির্বাপণ
............
১. জ্বলে উঠেছিল,
প্রেম
একবার
নিভে যাবে বলে,
চিরতরে,
তাই জ্বলে উঠেছিল
বাসনার শিখা লেলিহান
জানি না কি বাসনা কি বেদনা গো
বাঁধ আর বাঁধিতে নারি
নিভবে বলে উত্তুরে ঘৃণার হাওয়ায়
যেমন জীবন জ্বলে নিশ্চিত মৃত্যুর আগে
যেমন প্রদীপ জ্বলে ফুৎকারে নেভবার আগে

২. কেন ঘৃণা, হায়?
পারক্যবোধ? অভিমান?
অবিশ্বাস, সংশয়-দ্বিধা-দোলাচল?

৩. দিয়েছি তোমার শত্র“দের হাতে তুলে
তোমাকে হত্যার ছুরি -
করেছি তোমার পরিবাদ,
অভিযোগ-তর্জনী তুলেছি
তোমাকে আঘাত দেব বলে -
তুমিও ভালবেসেছ, সম্মান করেছ
সেই নারীদের
আমার প্রতিদ্বন্দ্বিনী যারা,
আমাকে কষ্ট দেবে বলে।

৪. ফিরিয়ে নেবে যে মুখ, জানি,
নিয়েছ ফিরিয়ে -
আমিও ফেরাই।
তুমি ভালবাসবে অন্য নারী, অন্য নারীদের
(র, এর, দিগের, দের)
সারাটা জীবন
আমি ভালবাসব অন্য পুরুষ, অন্য পুরুষদের
(র, এর, দিগের, দের )
সারাটা জীবন

ভুল মানুষের সংসারে,
ভুল মানুষীর খেলাঘরে
ভালোই কাটিয়ে দেওয়া যায়
ভালোই কাটানো যেতে পারে

ভুল ছেলেদের কাফে-হল্লায় আমার বসে পড়া,
ভুল মেয়েদের ইকেবানায় তোমার শ্বাস নেওয়া,
ভুল ছেলেদের রকে আড্ডায় আমার কালক্ষয়,
ভুল মেয়েদের মীনাবাজারে তোমার ভ্রমামোদ।

৫. আমরা আমরা
ঘৃণা করবো ---
পরষ্পর পরস্পর
একজীবন একজীবন

রচনা: আগস্ট ২০০৫।


পরিধি পোড়ার গান
..............
বিরহে বিরহে পুড়ে যাব,
তুমি ফিরেও দেখবে না
অভিমানে নিঃস্ব হব,
হব উন্মাদিনী -
তুমি ছুঁয়েও দেখবে না
আমাদের হাসি
দৃশ্যময়তা
চোখের সঙ্কেত... কান্না
তোমার স্পর্শের আকাক্সক্ষা,
আমার নিয়ত প্রতিরোধ -
স্রোতস্বিনী বাঁধে যদি জল
তোমার প্লাবন এসে আবারও ভাসাবে!

কিন্তু সেই আমি
তৃষ্ণার্ত যখন
ফটিকজল চেয়ে কাঁদি
আল্লাহ্ মেঘ দে পানি দে ছায়া দে রে তুই
নিষ্ঠুর সেমিটিক ঈশ্বর!
দাও না ত’ একফোঁটা ছায়া-মেঘ-জল

তৃষ্ণায় অনন্ত অঙ্গার
পিপাসায় বালিয়াড়ি ধুধু
আদিগন্ত বালুচর
খরায় পুড়ছে প্রান্তর
রৌদ্রে পরিধি পোড়ে শুধু।

রচনা: নভেম্বর ২০০৪


রেশমপথে
..........

রেশমপথে অন্ধমেয়ে
হাঁটি
একা...
আসবে
উটের ক্যারাভান
মালভূমির খচ্চরদল
পণ্য
সিল্ক
প্যাপিরাস

(ভূর্জপত্রে নবগীত করো রচনা ) আহ্ প্যাপিরাস
গোলমরিচ...
বারুদ ও কার্তুজ
গিলোটিন
(সাম্য-মৈত্রী-স্বাধীনতা...
এ টেল অব টু সিটিজ
দুই শহরের উপকথা)
গান্ধারমূর্তি
জায়নামাজ
আসবে বিগব্যাং
আমির খসরু...
ফারগানার তুজুক-ই-বাবুরি
পাখোয়াজ খাম্বাজ
তিলকামোদ
তরমুজ রস
মানমন্দির
মোঙ্গল রাজপুত্র
কুবলাই খান
আকাশের ধর্ম শামান

তবে লেখো:
ধর্ম
: শামান
ঈশ্বর
: অনন্ত আকাশ
রূপ
: দৃষ্টিহীন
ঠিকানা
: রেশমপথ...

রচনা: এপ্রিল ২০০৫।


জটিল মনোরোগ
..........
দিয়েছ আগুন আরো, অবোধ্য প্রেরণা..
তাই পাহাড়ে জমেছে নীল-
সুদূর কুয়াশায়...
-------------------
আমি কি জেনেছি তার অবাধ্য ঈর্ষা?
আমি কি জেনেছি তার জটিল মনোরোগ?
-----------------
আমাকে ফেরাও তবে সমুদ্র লবণে,
আমাকে ফেরাও তবে রোদের প¬াবণে!

রচনা: ৩০ শে আগস্ট, ২০০৫।


অপরাধী যুবা
...........
অপরাধী যুবা,
পুরণো দয়িতাকে পাশে রেখে,
বারবার ছুটে আসছো আমার কাছে,
ভীরু হাতে বারবার আমার দরজায় নাড়ছো কড়া...
জানালায় দিচ্ছ উঁকি...
যদি না খুলি দরোজা? না খুলি জানালা?
--------------
আর যদি খুলি,
তখন কি আমাকে রেখে
ছুটে যাবে নতুনতর দরোজায়?
রচনা: মে ২০০৫।

পাশ ফেরা
আজ সারাদিন থেকে থেকে মনে পড়া,
ঘুমের ঘোরে এতটুকু পাশ ফেরা।
রচনা: ২৮ নভেম্বর ২০০৭।


ফেরা না ফেরা
..............
আসলে ফেরে না কেউ,
যারা ভাবে নতুন মানুষীর কাছ হতে ফিরেছে পুরণো প্রেমে,
আসলে ফেরে নি তারা,
ফেরে নি কোথাও-
কোন মৌসুমী বায়ুর উপকুলে!

তেমতো যেসকল নারী,
ভেবেছে ফিরেছে তারা পুরণো পুরুষের কাছে,
তারাও ফেরেনি কোথাও,
ফিরতে পারে নি...

এ সত্য বুঝেছিলো সেই মেয়ে...
যার কাছে আসতে আসতে,
ফেরার কথা ভেবে-
বিনষ্ট জতুগৃহে ফিরে গেছে কিছু অসুখী পুরুষ।
ফিরেও হয়নি সুখী-

আর, তার কাছে ফিরবে বলে
নতুন মানবী ছেড়ে আবার যে পুরুষেরা ফিরে আসে...
ভীষণ একাকী হয়েও পুরণো তাদের ফেরা ফেরালো সে,

যেহেতু জানতো সে ফেরে না কেউ,
ফিরতে পারে না...
কোন মৌসুমী বায়ুর উপকুলে।


ভাঙা ঘর খেলাঘর
দৃশ্য ক
একটি খোকা, একটি খুকু-
কুড়িয়ে নিল ঝড়ে ধ্বস্ত একটি পাখির বাসা,
খড় গুঁজলো, গোছালো বাসা...
পাখি ও তার ছোট্ট ছানা যত!

দৃশ্য খ
একটি খোকা,
পাখির বাসায় ছুঁড়লো ঢিল,
উদাসীন আর পাগলাটে সে,
হারিয়ে গেল রেললাইনের পারে...

একটি খুকী,
খাঁচার পাখি দিল ছেড়ে...
উদাসীন আর পাগলাটে সে,
হারিয়ে গেল শাপলা ভরা ঝিলের ওপারে!


দৃশ্য গ
একটি যুবক একটি যুবতী,
ফ্ল্যাট কিনেছে, গাড়িটি ডাউন পেমেন্টে-
নতুন আসবাব...

দৃশ্য ঘ
একটি যুবক,
পাহাড়ের খাদে-
রুকস্যাক আর খাদি পাজামায়-
শুয়ে ছিল হাত ছড়িয়ে মৃত...
রাইফেলের ম্যাগাজিনটা কবেই খালি হলো!

একটি যুবতী,
কাঁধে তার ওষুধের বাক্স,
গলায় ক্রুশিফিক্স...
হেঁটে চলেছে খাসিয়া পল¬ীতে!

২৯শে নভেম্বর ২০০৬।


কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে
......................
আজ আর কোন ইন্টারভিউ নয়,
নয় কেসস্টাডি, সাক্ষাৎকার গ্রন্থনা...
যে পঙ্গু শিশু ক্রাচে ভর করে ঝিনুক বেচছে সৈকতে,
ঐ যে জেলে একটু দূরে সমুদ্রে ঝাঁপিয়ে পড়ছে মৎস্য আহরণে,
(অর্ধ-নগ্ন, সুঠাম-পেশল,
যেন সাক্ষাৎ দাভিদ মিকেলেঞ্জেলোর!)
আমি নগণ্য সমাজকর্মী,
গুটিয়ে রাখছি কলম-ক্যামেরা-নোটবুক,
বন্ধ করছি অডিয়ো টেপ!

সমুদ্র! শুধু তোমাকে দেখাই আজ!
শুধু তোমার উচ্ছাস!

আমি বিষণœ মধ্যবিত্ত,
দায় নেই গণমানুষের আখ্যান শুনবার/ শোনাবার,
তার চেয়ে দেখি না কেন নৌকার সারি?
স্তিমিত ঝাউবন আর নারিকেল বীথি?

আমার পায়ের পাতা ভিজছে লোনাজলে,
আমার চুলে অবাধ্য বালিয়াড়ি...
লক্ষ নীল সাদাটে ফেনার বুদ্বুদ...
আর তাজা হাওয়া সগর্জন!
এবং বেতারে...যদি বলো আকাশবাণী,
শান্তিদেব ঘোষ অমিয় ধারায়:
‘কোন্ সাগরের পাড় হতে আসে কোন্ সুদূরের ধন!
ভেসে যেতে চায় মন, ফেলে যেতে চায় এই কিনারায়
সব চাওয়া সব পাওয়া!
দেখি নাই তো দেখি নাই কভু এমন তরণী বাওয়া!’
রচনা: জুন ২০০৬


চতুর্ভুজ গল্প
.........
স্বরে অ নামের মেয়েটিকে...সত্যি সত্যি যদি একটি বাহারী কি পোশাকি নাম যদি মেয়েটার তোমরা চাওই...মনে করো তার নাম অরুণিমা...তা’ স্বরে অ-কে ভালবাসলো ক নামের বন্য ছেলেটি...লিখে নাও ওর নাম কল্লে¬াল! কল্লে¬াল প্রবল পুরুষালি আর বন্য...অথচ, অরুণিমার সামনে এলেই ও ভারি লাজুক...মুখ ফুটে কিছুই বলে না...কিšত্ত, অরুণিমার আসা-যাওয়ার পথে পশুর মতো একাগ্র, জ্বলন্ত দৃষ্টি মেলে দাঁড়িয়ে থাকে। অরুণিমা ভাবে কল্লে¬াল কোন একদিন পথ রোধ করে দাঁড়াবে, বলবে কোনো কথা! শুধু অপেক্ষাই সার! এম্নি যাওয়া-আসার পথে একদিন অরুণিমার পথ রোধ করে দাঁড়ালো...না, ক নয়...সে তালব্য শ...ধরো তার নাম শিশির। শিশিরকে দেখতে নম্র অথচ ঠোঁটে তার মৃদু হাসি আর দিব্যি অরুণিমার পথ রুদ্ধ করে সে শুরু করলো এন্তার কথা! কথার পর কথা! কল্লে¬াল যন্ত্রণায় পশুর মতোই গুঙ্গিয়ে উঠলো নিজের ভেতরে, “ওহ নিষ্ঠুর মেয়ে...একটা বছর আমি তোমার যাওয়া-আসার পথে দাঁড়িয়ে থাকি! শুধু বোবা জšত্তর মতো কথা কইতে পারি না বলে তুমি কিনা গল্প করছো ঐ কথার সওদাগর...কথা বেচে খাওয়া শিশিরের সাথে? চোখের ভাষা কি তুমি একদমই পড়তে পারো না মেয়ে?” দূর হতে অরুণিমা আর কল্লে¬ালকে কথা বলতে দেখে আর একজন কষ্ট পেলো খুব। তার নাম ফ...ফুল্ল¬রা! ফুল্লরা ঈর্ষায় ছত্রখান হলো! আজ কত কত দিন সে আর শিশির একই দোলনায় দুলেছে প্রতি সকালে, কুড়িয়েছে শরতের প্রথম শিউলি! আজ কোথাকার কোন্ এই অরুণিমাকে দেখে...আর, এই মুখপুড়ি অরুণিমা কি দ্যাখে না কল্লে¬াল নামের ছেলেটি কেমন অভাবী জšত্তর চোখে আজ একটি বছর দাঁড়িয়ে থাকছে ওর আসা-যাওয়ার পথে! দ্যাখো না শিশিরের ঢং কত! বারবার তার চোখ চলে যায় ঐ অরুণিমার দিকেই। গল্প ফুরোয় না অরুণিমার সাথে। আর, অরুণিমাও কল্লে¬ালকে আড়চোখে একটু দেখে নিয়ে আবার গল্প করতে থাকে শিশিরের সাথে! চুুলে ফুল গুঁজলো ফুল্ল¬রা, “করুক ওরা দু’টা গল্প! আমি একটু আলতা মেখে নিই পায়ে!” ফুল্ল¬রা এসে দাঁড়ালো কল্লে¬ালের সামনে। ফুল্ল¬রা চুল খোঁপা করে, আবার ছেড়ে দ্যায়। কল্লে¬াল বোঝে কেন এই ছল করছে ফুল্ল¬রা! “ওহ্ প্রিয় বোণ ফুল্ল¬রা, কেন এমন করছো তুমি বুঝছি খুবই!” মনে মনে কষ্ট পেয়ে মাথা নাড়ে সে। ছল করতে করতে ফুল্লরার চোখেও জল এসে যায়, “হায়, আজ এই নতুন মেয়েটির দিকে শিশিরের চোখ আটকে না গেলে অন্য কোন ছেলের কাছে এসে আমাকে গল্প করতে হয়? গণিকার সাথে তবে আর পার্থক্য কি থাকে আমার?” মুখে ম্ল¬ান হাসি, ভীতু চোখে কল্লে¬াল তাকায় অরুণিমার দিকে। অরুণিমার মুখ ঈষৎ ম্ল¬ান ও অভিমানী! “আমার কি দোষ? একবছরেও কল্লোল যদি মুখ ফুটে একটা কথা আমাকে না বলতে পারে, তবে ওর জায়গায় নতুন কেউ এসে যদি কথা জুড়ে দেয়...আমি কি করতে পারি? আমি মেয়ে হয়ে বুঝি উল্টো নিজে থেকে কথা বলতে যাবো?” শঙ্কিত, থমথমে মুখ শিশিরেরও। ক্রুদ্ধ চোখে সে দেখছে ফুল্ল¬রাকে...!


সিন্দারেলা ২০০৭
.............
সিন্দারেলা বোর্ড রুমে,
দিন ব্যাপী বাজেট মিটিংয়ে...
ঘড়ি ছুঁই ছুঁই সাড়ে সাতটায়,
ভর সন্ধ্যা...

রাজপুত্র একা একা ঘুরছে ব্যুলভারে,
সিন্দারেলা সিন্দারেলা...
মিটিং তোমার কখন হবে শেষ?

সৎ মা নেই, নেই সৎ বোণ ঘরে...
কয়লা উনুন ছেড়ে...
সিন্দারেলা কাজ করছে মাল্টি ন্যাশনালে,
নাচের আসর, ফুলের বাগান..
রাজপুত্র বৃথাই ঢুঁড়ে মরে...

সিন্দারেলা, মিটিং শেষ হলো?
অন্য মেয়ের জুতো পিছলে গেলে-
রাজপুত্র তাকেই বিয়ে করে!

রচনা: ৯ই সেপ্টেম্বর ২০০৭


বালুঘর মেঘবাড়ি
............
আমাদের প্রতিটি বালুঘর মুছে দেবে সমুদ্রের ঢেউ,
আমাদের মেঘের সংসার ছেয়ে যাক অন্যতর মেঘে-
তুমি থাকো অন্য কারো হয়ে,
কোন দিন চাব না তোমাকে।

রচনা: জুন, ২০০৬।



আয়ুষ্কাল
........
আমার চোখের জলে,
ফুরোবে কি তোমার আয়ুষ্কাল?
বুনোগোলাপের প্রতিশ্র“তি দিয়ে,
আমার প্রতিটি পথে বিছিয়েছ কাঁটা...
বলেছো স্বর্ণমুকুট দেবে,
একযুগ বঞ্চণার পরে...
রচনা: জুলাই ২০০৬।


যাব না কোথাও
...........
যাব না কোথাও আগুনে,
বিনষ্ট ভ্রুণের সঙ্কেতে-
স্রোতমগ্ন শৈবালকণা

আজ দ্যাখো ভৌত জলবিদ্যা,
হু হু হাওয়ার আরণ্যক দিন
ও বৃষ্টিমগ্ন শৈবাল,
ছাদের কার্ণিশে তুমি পরজীবী!
-------------------------------
কুঠুরি ও কক্ষতল,
ভূ-গর্ভস্থ খনির পৃথিবী,
কৌনিক রোদ,
আল-হামরার প্রাসাদ থেকে বেরিয়ে এলো
মৃত ঘোঢ় সওয়ারের বাহিনী...

মরক্কোদেশীয় কালো সেনাপতি,
চামড়ায় বাঁধাই কোরাণ,
স্প্যানিশ সেনাবাহিনী,
সন্ত সোফিয়ার গির্জাৃ

সুড়ঙ্গপথ হতে এক ঝাঁক কবুতর
সহসা পরিদৃশ্যমান,
আমি জানি আল-কেমি,
জানি ধাতুবিজ্ঞান!
রচনা: আগস্ট ২০০৬


খেলা
.....
খেলতে কি আমিও জানি না?
চতুর বিভ্রান্তির ফাঁদে আমিও ফেল্তে জানি...
বর্ণালী প্রতিসরণ, আলোর অধ্যাস...
মরীচিকা, মায়ামৃগ
মায়াবনবিহারিনী হরিনী
গহনস্বপন সঞ্চারিনী...
রচনা: আগস্ট ২০০৬।



বাতাসের কক্ষপথ
..............
বহু বহু কাল আগে ছেলেটি নিজে থেকেই এগিয়ে এসে মেয়েটিকে বলেছিল, ‘আমি তোমার জীবনের চিরন্তন বর্তমান হতে চাই, আমার জীবনে এতদিন যে মেয়েটি ছিল তাকে আমি অতীত করে ফেলতে চাই, হয়তো তাতে কিছু সময় লাগবে...সেই সময়টুকু তুমি আমাকে দাও!’ মেয়েটি একথার উত্তরে দ্বিধাগ্রস্থ ভাবে রাজি হতে গিয়েও ঘাঢ় নাড়াল, ‘সে হয় না। তুমি যদি ওকেই ভালবাসো, তবে ওর সাথেই থাকো- আমার তো মনে হয় ওর সাথেই থাকা উচিত তোমার!’ এড়িয়ে যায় সে। ততক্ষণে অতীতের মেয়েটিও এসে অনেক কান্নাকাটি জুড়ে দিয়ে বর্তমানের মেয়েটির কাছ থেকে ছেলেটিকে ডেকে নিয়ে গেল বহু দূরে এবং বর্তমানের মেয়েটির কাছে ছেলেটি হয়ে গেল অতীত অথবা দু’জনেই দু’জনের কাছে হয়ে উঠলো অতীত...চলে গেল যখন, মেয়েটির কিšত্ত ভয়াবহ খারাপ লাগলো... ‘এমন এলোই বা কেন আর গেলই বা কেন? হয়তো ফিরে আসবে আবার...এক্ষুণি!’ দিনের পর দিন অপেক্ষা করে মেয়েটি, ছেলেটি কিšত্ত আর আসে না। এমনিতরো বহু বহু দিন অপেক্ষার পর, মেয়েটি যখন অতীত স্মৃতির কফিন হতে নিজেকে মুক্ত করে, কফিনের ডালা সরিয়ে হাত বাড়িয়ে দিলো কফিনের সামনে দীর্ঘদিন ধরে নতজানু হয়ে থাকা বর্তমানের এক পুরুষের হাতে, বাতাসের কক্ষপথ বেয়ে...বহু বহু দিন পর সেই আগের ছেলেটি আবার চলে এলো সামনে, ‘আমি এসেছি! ফিরে দ্যাখো!’ অভিমানে মুখ ঘোরালো মেয়ে, ‘আমার এতদিনের একাকিত্ব আর প্রতীক্ষার যন্ত্রণায় তুমি একটি খোঁজও নাও নি! এই ছেলেটি তখন দিনের পর দিন আমার বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে থেকেছে। আমাকে সুস্থ করে তুলেছে। আজ আমি ওকে কি করে ফেরাই? সে ত’ পাপ হবে!’ বর্তমানের ছেলেটি মেয়েটির কাঁধে হাত রেখে অতীতের ছেলেটির দিকে তাকিয়ে ক্রুর, অহঙ্কারী হাসি হাসলো। দ্বিতীয় কোন কথা না বলে, কোন দ্বিরুক্তি না করেই অতীতের ছেলেটি বাতাসের কক্ষপথ ধরে আবার হারিয়ে গেলো সময়হীনতার সভ্যতায়।

রচনা: অক্টোবর, ২০০৭।


মাটিকন্যা
..........
ইচ্ছে হয় একটু মাটি দিই তোমাকে,
দেশের মাটি এক/আধ মুঠো...
মাটিকন্যা এই তো আমি...
য্যানো তুমি ম্যালো শেকড়,
ফুলে-দলে, বৃতি-কাণ্ডে, লতায়-পাতায়!

হায় মাটি হায় সৈকতের
পোড়া বালু যাচ্ছে সরে,
অথবা তুমিই যাও কি সরে? মাটি না নিয়েই?
অচিন দেশে? যেখানে শুধু বরফ ধূ ধূ?
মৃত্তিকা নেই-
আছে শুধু কংক্রিট আর বরফ ধূ ধূ?

এখন তোমায় কিভাবে দিই একটু মাটি, একটু শেকড়?
দোগজ জমিন? ইয়াঙ্গুনে নির্বাসিত চেয়েছিল যা দিল্লীশ্বর,
দোগজ জমিন না মিলি জাফর,

আজ তবে,
কিভাবে পরাই মাটির তিলক কপালে তোমার?
বরফ দেশে মেরু নেকড়ে না খাক তোমায়,
মুঠোয় আমার দেশের মাটি ধরেছি চেপে,
সামনে হু হু অসীম বাতাস মহাশূন্যে...
কিভাবে পাঠাই একটু মাটি তোমায় ওগো?
কিভাবে পরাই মাটির তিলক কপালে তোমার?
রচনা: জুন ২০০৬।


সমুদ্র দেয়াল
..........
তোমার সাথে সমুদ্রের দেয়াল,
তোমার সাথে মহাদেশের বাধা-
অচিন বাঁশী বাজিয়েছিলে কানাই,
সেই বাঁশীতে জ্বলছে আজো রাধা!

রুক্সিনী থাক, থাকুক সত্যভামা...
ডানে-বাঁয়ে শতেক তোমার নারী,
আমি ডুবি নীল যমুনার জলে,
স্রোতের টানে ভাসে যে গাগরি।

দেহাতি মেয়েদের কোরাস:

পনঘট মে চলি ভরন গাগরি,
রোকত টোকত নন্দ কিশোর মেরি,
ও তো চলি হুঁ, যমুনা ঘাট পে-
নাহি শুনতি মেরি ইতনি বিনতি,
সিনত সিনত গাগরি মেরি!

রচনা: ১৪.০৬.০৬।


পুনরুক্তি
......
১. পুনরুক্তি পুনর্ব্যক্ত পুনর্ব্যপ্ততা-
পুনরুক্ত
ঘৃণা ও প্রেম,
ক্লান্তি, ক্ষমা
পুনর্ব্যপ্ত দ্বিধাগ্রস্থতা।

২. পুনরুক্ত অস্তিত্বের নাড়ি,
পুনর্ব্যক্ত তোমার ছায়া খোঁজা...
পুনর্ব্যপ্ত আমার কায়ার মায়া-
পুনরুক্ত স্বপ্ন মদিরতা।

৩. পুনরুক্ত দূরত্বের প্রেম,
পুনর্ব্যপ্ত দূর বন্ধুতা,
পুনর্ব্যক্ত আমার ফিরে আসা,
পুনরুক্ত তোমার দূরে যাওয়া।

৪. পুনরুক্ত আমি ডানা গুটাই,
তুমি তখন পাঁপড়ি মেলো তোমার-
আমিও হাসি পুষ্পায়ণের লোভে,
পুনর্ব্যপ্ত তোমার ফিরে যাওয়া !
৫. আমি আমার পাঁপড়ি যখন গুটাই,
তুমি ফের উড়ে আসো প্রজাপতি!
আমি ঝলকাই পুষ্পায়ণের লোভে,
পুনরুক্ত তোমার ফিরে যাওয়া!

শুধু
ঘুমপাড়ানি গানের ধুয়া

ফিরে ফিরে আসে...


জুলাই ২০০৬।


খরোষ্ঠি লিপির কবিতা
.............
একটি পুরণো খামে,
তোমার সকল চিঠি,
ক্ষীয়মান খরোষ্ঠি লিপি...

যে পাখি হারিয়ে যায়,
হারায় যে মানুষ...
বদ্বীপ ছেড়ে,
ভিন্ন কোন অনামী ডেল্টায়...

শীতে ফের অভিবাসী পাখি আসে,
বরফের দেশ ছেড়ে উঞ্ষমণ্ডলে-
আবারো চলে যায়...

একটি পুরণো খামে,
তোমার সকল চিঠি,
ক্ষীয়মান খরোষ্ঠি লিপি...

জীবনের সমূহ ঝড়,
আমাকে দেবে আয়ু,
শেকড় সমর্থ করে...

লোকে বলে “স্যান মেরিনো!’’
অথবা সে সেন্ট মার্টিনস্!

আমি বোতলে ভরবো চিঠি,
ভাসাবো সে বোতল,
প্রবাল দ্বীপের জলে,
তুমি কুড়িয়ে নিও,
যদি মেলে অবসর...
অনামা সে রৌদ্র নদীকুলে!
জুলাই ২০০৬।


ভুল বেভুল
চিরতরে ভুলে যাবার আগেই,
ভুলবার প্র¯ত্ততি হিসেবেই,
তোমাকে আহ্বান করলাম
শেষবারের মতো...

তুমি সাড়া দিলে,
নিরাপদ দূরত্ব হতে...

আমি শেষবার হাওয়ায় তুললাম স্বর,
দূরান্তের বন হতে
পুরনো বন্ধু এসে বাড়ালো
আশ্বাসের হাত...

তুমি ত’ হারিয়েই গেছ,
এবার আমিও হারাচ্ছি...
তোমার প্রতীক্ষা হতে নিজেকে ফিরিয়ে নিচ্ছি...
অন্য কারো জন্য।

রচনা: ২রা মে ২০০৬।

শীত ঋত
.........
এত এত স্মৃতি,
এত প্রজাপতি
নিঃসঙ্গতা মহাকাল-
এত এত শীত,
আত্মা শীত ঋত
মাঘজ্যোৎস্নায় হিমপ্রাণ।
রচনা: ফেব্র“য়ারি ২০০৬।



ময় দানবকে
.........
আর রক্ত নিও না আমার,
নিও না স্বেদবিন্দু, চুল আর
অস্থিমজ্জা, রক্তকণিকা,
নিও না বেঁচে থাকা,
নিঃশ্বাস নেবার অধিকার-

নিও না জীবন আর স্বস্তি আরোগ্যের,
রে বিকট রাক্ষস!
তুই অচিন ময়দানব-
যা যা আমার অস্তিত্ব থেকে...
দূর হ একেবারে,
চিরদিনের জন্য!

রচনা: মার্চ ২০০৬।



পুরনো রোদ
.........
১. ভাবছ বুঝি পুরনো রোদ,
পুরনো গলি,
অবিশ্বাস্য হন্তারক,
ছিল যেমন...
আগুন দিনের কথকতায়
মুকুলিত তীব্র কুঁড়ির
অন্য আমি,
হঠাৎ দেখায়-
এই শহরের নিসর্গ আর
অচেনা সব ছায়ার খেলায়...

২. অন্য জীবন তেপান্তরে,
দ্বীপান্তরে দূরান্তরে...
অন্য কোথাও
হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা
যথায় তথায়
হারাতে তোমার,
পালাতে তোমার,
লুকাতে তোমার
নেই মানা
ধানের ক্ষেতে রৌদ্র-ছায়ায়
খেলতে ক্ষণিক লুকোচুরি
নেই মানা হায় নেই মানা!

৩. নির্বাসনে নেই মানা...
বন্দরে আর বাতিঘরে,
নিরুদ্দেশের কাল কাটাতে নেই মানা,
এই শহরে হাইরাইজ কম,
শপিং মলের বাড়বাড়ন্ত
তেমন তো নেই...
হাইওয়ে নেই, ফ্লাইওভার আর
এক্সেলেটর তেমন তো নেই...
আছে শুধু পুরনো দিনের দালানকোঠা,
শতেক গলি, হেমন্তেরই গন্ধবাহী...

৪. অস্ত্রাগারে হামলা চালায়
সে কোন্ তরুণ?
রেঙ্গুনের জাহাজ এলে সীগাল ওড়ে...
ভয় হতে অভয় পথের মন্ত্র জানায় বর্মী নারী,
যাবো বুঝি ডানা মেলে তার দেশেই!

রচনা: ২৮ শে নভেম্বর ২০০৬।



বৃষ্টি ও সহকর্মিগণ
.............
...মেয়েটি জানতো সহকর্মী ক, গ ও ঙ ভালবাসে তাকে। ক-এর প্রেম এদের মাঝে সবচেয়ে প্রবল। প্রায় নির্বোধের মতো প্রেম তার। কিছুটা নির্বোধ আর কিছুটা আদিম ও বন্য শিকারীর দৃষ্টিতে ক তাকে নিরন্তর অনুসরণ করে চলে। গ মেধাবী ও বুদ্ধিজীবী। সুচারু ও সংস্কৃত। আরণ্যক শিকারীর চোখে তাকায় না সে। তার চোখে নাগরিক শিল্পীর মুগ্ধতা, অহম ও পর্যবেক্ষণ। ঙ কিছু আরণ্যক ও কিছুটা বুদ্ধিজীবী। থই পায় না সে ঠিক কোন্ ভূমিকায় বেশি মানায় তাকে! এই তিন পুরুষই কুমার বা অকৃতদার। “যেহেতু আমিও একাকী, স্বয়ংবর মালা পরাতে হলে এদেরই কাউকে!” ভাবে মেয়ে মনে মনে।...

সেবার ঢাকা শহরে একশ’ রাত ধরে বৃষ্টি ঝরা শুরু হলে মেয়েটি পুনশ্চ শ্যামল ও মেঘমালা ঘুমাতে যায়! সে ভুলে যায় ভীতিকর নরকের কুকুরদের তাড়না ও বিভীষিকাময় ঘেউঘেউ (একশটি কুকুর ও এক কুকুরীর হিম ভয়াল গর্জন), নগরীর পথে লম্পট পুরুষদের কামার্ত চাউনি ও অশ্লীল স্পর্শ...ভুলে যায় দৈনন্দিন গ্লানি! তখন সারারাত আচ্ছন্ন শম্পার ঘোর অয়ি বিদ্যুন্মালা...উচ্চকিত আলোর বর্শা ফুঁড়ে গেলে আকাশের আল যবে আকাশের দেবতা স্মিত হাসেন হারু ঘোষে...নগরীর কৃত্রিম হ্্রদে প্লাবন উচ্ছ্বাসে আর ঝড়ে উড়ে গেলে মুখের আঁচল তিমির নিবিড় রাতে...আকাশের বিদ্যুৎ বহ্নি অভিশাপ লিখে গেলে হা-হা- কৃষ্ণচূড়ার লাল পল্লবিত ও উপুড় রাজপথে ...প্রভাতকালীন প্রার্থনায় মুয়াজ্জিন বিচলিত...যখন ঈশ্বরের বন্দনা ছাড়িয়ে প্রকৃতি মেঘগীতি অনিন্দ বাদ্যে ও ব্যজনে...হে ঘোর বায়ু হা-হা- তুমি ঝড় ও আলোর বর্ষণে আমাদের প্রসন্ন করো...করো শীতল: তবে মেয়ে দ্যাখে ভোররাতে (যদি স্বপ্ন বলো তুমি), তবে সেখানেও প্রতি সকালের দপ্তর ও তার দাপ্তরিক দৃশ্যছায়া...অবভাস/প্রতিলেখ...আহা ধূ ধূ দাপ্তরিক করিডোর কক্ষপথ...ফাইল আর ডেস্ক...ডেস্ক পেরিয়ে সহকর্মীদের মুখ! আর অদ্ভুত ব্যাপার দ্যাখো, যে তিনজন অবিবাহিত পুরুষের কাউকে না কাউকে
ভাল লাগছে ভেবে মেয়ে সুনিশ্চিত হয়েছিল...স্বপ্নে মেয়ে দ্যাখে বিবাহিত ও দু’সন্তানের জনক সহকর্মী “খ” তার দিকে তাকিয়ে আছে যেন পরম হন্তারক!!
রচনা: জুন ২০০৭।



উত্তরাপথের বাতাস
....................
স্পর্শ করেনি পঞ্চভূত আমাদের,

তুমি ঘর করছো পুরনো মানুষীর সাথে...
আমার কাছে আসতে চেয়েও আসো নি শেষ অবধি!
আমি বৃষ্টিতে হাঁটছি নতুন মানুষের সাথে,
তোমার কাছে যেতে যেতে যাই নি শেষ পর্যন্ত!

তুমি দ্বিধায় ছিলে: আমার কাছে আসবে কি আসবে না?
আমি সংশয়ে ছিলাম: তোমার কাছে যাব কি যাব না?

তুমি দেখছো পুরনো মানুষীর নগ্ন দেহ,
উন্মোচন করছো চিরচেনা সঙ্গিনীকেই...
আমার চোখে চোখ রাখছে কোন নতুন পুরুষ,
আমাকে দেখছে কোন নতুন যুবকের দৃষ্টি...

ভেতরে অসমাপ্ত কান্নার ভুবন,
ভেতরে নিরুদ্দিষ্ট হাসির কথকতা,
ভেতরে উন্মার্গ রোদের অতলান্ত!

সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে এলো...
ভাল কি বেসেছিলে তুমি আমাকে?
আমিও কি বেসেছি ভাল তোমাকে?

অথবা খেলা ছিল? দু’জনেরই?
ছিল প্রেম কিংবা প্রতারণা? পাপপুণ্য, ভাল-মন্দের যত হালখাতা?

শুধু উত্তরাপথের বাতাস এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেয়েছিল!

রচনা: জুলাই ২০০৭।



কৃষ্ণচূড়া লাল
.............
এতদিনে...বুঝি এতদিনে... বুঝেছে সেই মেয়ে ছেলেটির দৃষ্টি,
বুঝি যতদিনে হায় ততদিনে আকাশ ভেঙ্গে নেমেছে বৃষ্টি...
যদি কতদিনে হায় গতদিনে কৃষ্ণচূড়া হলো লাল?
বুঝি শতদিনে, বুঝি এক দিনে... তুমি তবে ঘুমের ঘোরে
হেঁটেছ কি পথ এই প্রবল শুক্লপক্ষকাল?
রচনা: মে ২০০৭।


কি যেন হয়েছিল
কি যেন হয়েছিল, কি যেন হচ্ছে-
কোথাও দাবানলে নগর পুড়ছে!
কি যেন হয়েছিল, কি যেন হচ্ছে-
কোথাও ফুলভারে প্রশাখা ভাঙছে!

ভ্রমর মধুমাসে, ভ্রমর লুব্ধক...
ভ্রমর উড়ে যায়, ভ্রমর পলাতক!
ভ্রমর আগ্রাসী, ভ্রমর প্রতারক...
ভ্রমর ক্রীড়া-প্রিয়, ভ্রমর সুন্দর..

কি যেন হয়েছিল, কি যেন হচ্ছে-
কোথাও ধূলিঝড়ে বাতাস ভাসছে...

কি যেন হয়েছিল, কি যেন হচ্ছে-
কোথাও বৃষ্টিতে আকাশ ভাসছে!
কোথাও মেঘমালা করুণ, সুশীতল-
ভ্রমর নিশব্দ, ভ্রমর হন্তারক।

কি যেন হয়েছিল, কি যেন হচ্ছে...
কোথাও অনিমিখ হৃদয় কাঁদছে!

আমার মধুমাসে, তোমার মুগ্ধতা-
আমার চাঁদনিতে তোমার চাঁদোয়া...
কি যেন হয়েছিল, কি যেন হচ্ছে...
কোথাও লহু-নদ হৃদয়ে ভাঙছে!
কোথাও হাঁস-রব বাতাসে বাজছে?

কোথাও মধুচাঁদ আকাশে ভাসছে,
কোথাও দুধচাঁদ আকাশে পলাতক...
ভ্রমর নির্বাক, ভ্রমর হন্তারক!

কোরকে রাখো মম,
পরাগ-স্মৃতি তব...
আমার পাঁপড়িতে তোমার সিক্ততা...

এভাবেই,
ফুল হতে এক ফুল, দুই ফুল করে...
শতফুল ফুটি যদি,
যদি ফুলে ফুলে হই খানখান...
তোমাকে প্রমত্ত করি,
বহুধাবিদীর্ণ করি, ও পুরুষ!

কি যেন হয়েছিল, কি যেন হচ্ছে...
কোথাও ফুলভারে প্রশাখা ভাঙছে?
কোথাও সৌরভে ঘুম কি আসছে?
কোথাও সুগন্ধে স্বপ্ন হাসছে?


ইটস কফি টাইম
আবারো তিতা কফি,
জিভে দুধ চিনি...
কি দারুণ মনোটনি...
ট্রাফিক জ্যামের মতোই,
বিশৃঙ্খল মনোজটে যানজটে
জড়িয়ে পেঁচিয়ে চলেছি পাতালের পথে,
জাগো হেই ক্রিতদাস! জাগো ঘুমে...
আমাজন অরণ্যে জাগো,
ছেঁড়ো কোকো পাতা,
চিবিয়ে তাড়াও ক্লান্তি...
মালিকের খামারে তুলা কম না পড়–ক
সেই সাথে ক্রিতদাসী গর্ভিনী হোক...
মালিকের খামারে আসুক দাসের নতুন শিশু,
চমৎকার ক্রিতদাস হবে বলে...

জাগো ক্রিতদাস! জাগো ঘুমে
স্টক এক্সচেঞ্জ শেয়ার মার্কেটে,
মিডিয়া ও ইউএন সিস্টেমে,
ব্লেণ্ডিং মেশিনে চড়াও কফি...
ইটস কফি টাইম! কম্পানীর প্রফিট হোক,
হোক গৃহস্থের খোকা...
ইটস কফি টাইম? ইটস টাইম টু মেট...
এক্সিকিউটিভ পতœী গর্ভিনী হোক,
শেয়ারের লভ্যাংশে বুম হোক জোর!
এসেছে নতুন শিশু...
বিশৃঙ্খল মনোজটে যানজটে
জড়িয়ে পেঁচিয়ে চলুক সে পাতালের পথে...
জাগো ক্রিতদাস! জাগো ঘুমে...

রচনা: অক্টোবর ২০০৭।


অচিন তন্তুবায়
..........
পারো কি তবে ঘাস ও পাতার একটি শাড়ি বুনে দিতে?
ও অচিন তšত্তবায়?
সেই শাড়িতে মেঘের জমিন,
বৃষ্টি পাড়ে বনভূমির দুর্বাসবুজ...
মেঘজমিনে ফিরে আঁকো শঙ্খপ্রবাল, উপল কিছু...
কুড়িয়ে যা পেয়েছিলে অনিঃশেষের বেলাভূমে,
জনম আগে, জীবন আগে-
কদমফুলে বৃষ্টিরেণু, আগুন রেণু
শতাব্দী ফোঁড় যুগান্তরের কালান্তরের-
রংধনু পাড় গুল্মলতায় অচিন হরিৎ,
শাপলা শালুক পদ্ম আঁকা,
জারুল ঢাকা, হিজল ছাওয়া..
তেমন শাড়ি বুনে কি তুমি দেবে আমায়?
ভিনদেশী ও অচিন তšত্তবায়?

রচনা: ৯ই সেপ্টেম্বর ২০০৭।


ডিসেম্বরের পংক্তিমালা
.................
১. আমাদের সুরম্য দিন,
আমাদের বিকেল মেহগনি...
আমাদের অলস কালবেলা,
আমাদের ঈশ্বর (নক্ষত্র) লিখন!

আমাদের বিনষ্ট যৌবন,
আমাদের গোধূলি বিরহ
আমাদের মৃত্যু মাছি বিকেল,
আমাদের ধূলি অমরতা...

২. তুমি সংক্রান্ত
পরেছো সঘন, নীল পাঞ্জাবি
ও তীব্র বুনো ছেলে!
তোমার আয়ুধ অসীম,
পৌরুষ দুস্তর...

৩. তখন পাহাড়ের শেষ ঢালে অপেক্ষা করছিল অপেক্ষা। পাহাড়ের শেষ ঢালে পৌঁছে গেলে পর উপত্যকা তার আদিগন্ত করুণায় হেসে বললো, এখান থেকে তোমার সব ক্লান্তি শেষ। এখন শুধুই...

৪. তুমি বাঁচালে ক্ষতস্থান,
জখমে শস্ত্রাঘাত করলে না আর...
সেই পরম দয়ায়
আমি আজো নতজানু...

তুমি বাঁচালে ক্ষতস্থান,
দিলে আরোগ্যের সেলাই...
দিলে দুঃসাধ্য পাহাড়ি ভেষজ,
সুগন্ধী লতা আর ভিষক বল্কল...

৫. আজ অলস লাগছে,
ও আজ মন্দীভূত হাওয়া..
ওগো শোন মন্দমধুর হাওয়া...
দণ্ডিত রাজ কয়েদির মতো
প্রহরী সেবিকার কাছে ঈষৎ কফি
আর সিগারেট চেয়ে নিয়ে,
(ফাঁসির আসামিকে সংবাদপত্র দেবার মতোই)
জীবনকে তারিয়ে চাখা...
মৃদু উপভোগ

৬. বিষণ্ন হচ্ছে দিন,
মুগ্ধ সেই দুপুরবেলা...
ধূলি-রাঙা অরণ্যের পাতা,
শুধু শতবর্ষী ফুল বলেছিল
আমি তার যমজ ভগিনী,

এমন মায়া দিনে,
কার কাছে যাব আমি?
কে আমার সঘন শ্বাস
টেনে নেবে তার ফুসফুসে?
কে আমার রাত চুল
পেঁচাবে তার হাড়ের কফিনে?

৭. নিষ্ঠুর শিকারী তুমি,
এমন প্রলুব্ধ চোখে দেখো না কো আর...
অমন আগ্রাসী চোখে
পড়তে চেও না সর্বস্ব আমার...
আজ...কিভাবে...কিভাবেই বা লুকাবো নিজেকে,
তোমার দৃষ্টির তীক্ষè তূণ হতে?

রচনা: ২৮শে ডিসেম্বর ২০০৬।


শীতের হাইকু
...........
এই শীতে কাঁপছি জ্যাকেটের নিচে,
শীত নয়, তোমার প্রখর দৃষ্টিপাতে।
রচনা: ২৮শে ডিসেম্বর ২০০৬।

হাইকু পহেলা ফাল্গুন
গাঁদায় আচ্ছন্নতা, গোলাপে আগুন...
পলাশে ঘুমঘোর আর শিমুলে কুহক,
ডালিয়ায় স্বপ্নভার...
আমার হলুদ শাড়ি তোমার প্রচ্ছদ
যদি, চন্দ্রমল্লিকা যেন রাগ তিলক কামোদ...
তুমি দাও হলুদ ক্রিসেনথিমাম,
দাও, আমাকে দাও!
দু’মুঠোয় ভরে দাও
যত দোপাটির সাদা
আর হলুদ বসন্ত দিন...
আমাকে দাও তুমি সন্ধ্যার মেঘমালা,
অথবা আমিই হই যদি সেই সন্ধ্যার মেঘহার...
কবে তুমি আমার সন্ধ্যা ছিলে?
অনন্ত গোধূলিবেলা তুমি তো আমার,
পরিচয় ও প্রথম দৃষ্টির আগে থেকেও
তুমিই ছিলে বসন্ত সন্ধ্যা,
রক্তঅস্তমেঘ...
যা জানতে কেটে গেল এত এত দিন!

রচনা: ১৩ ফেব্র“য়ারি ২০০৭।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন