রবিবার, ৩০ আগস্ট, ২০০৯

কবি সরকার আমিন : বিবাহিত প্রেমের কবিতা




ডাকাত
.............................

নিজ স্ত্রীর প্রতি বিশ্বস্ত থাকতে গেলে
বহু ঐশ্বর্য রাই বৃথা যায়।
মন্দিরে দেবী দর্শনে গিয়েও লুকিয়ে রাখতে হয় চোখ
মানিব্যাগ নিয়ে সতর্ক থাকার মতো প্রযত্নে রাখতে হয় হৃদয়

বৃষ্টি মানেই মেঘের পরিণয়
আকাশকে আকাশ থাকতে হলে মাথা উঁচু করে রাখতে হয়।

হে আমার স্ত্রী
আমি অনুনয় করে বলছি
ডাকাতি কর

তোমার ডাকের আশায় ঘুমের পাশে বসে থাকি
তোমার ডাকাতির আশায়, পুলিশ স্টেশনে চাকরি করি।




হতভম্ব প্রেমিকের স্বীকারোক্তি
...........................................

কাউকে কি কোনো কথা দিয়েছিলাম
ভালোবাসব, খুন করব
কিংবা ধার দেব কিছু নিরবচ্ছিন্ন টাকা?

কেউ কি অপেক্ষায় আছে সমুদ্রের ধারে
নীল রেস্তোরাঁয়
পাহাড়ের ভাঁজে, মেঘের আড়ালে
শেষনিশ্বাসের নরম ছন্দোময় বাতাসে?

কেউ কি আমাকে আঘাত করেছিল?
খুব রক্তক্ষরণে ক্লান্ত আমি
নীরব জ্যোৎস্নার ভেতর
ধবল এম্বুলেন্সে চড়ে
যাচ্ছি গোঁসাইপুর!

মনে পড়ে না
রাধার ব্লাউজে মুখ লুকালে
কিচ্ছু মনে পড়ে না।




শুভ সঙ্গম
.........................

ধোঁয়া দেখা যায়, আগুন কোথায়?
চারপাশে খুনি, বদমাশ, যম
তীব্র শীতে জমে যাচ্ছে শরীর, কোথায় শুভ সঙ্গম?

কতবার বলেছি ভালো আছি ; ভালো থাকা দরকার
ধন্যবাদ বিবি হাওয়া, মনে করে খেয়েছিলেন গন্ধম !




যতটা সম্ভব পরাজিত থাকি
.........................................................

তোমার নামে গান গাই, নাচি
বাঁচি।
ক্যামেরা কাঁধে ছুটে যাও কোন মহাপুরুষের বাড়ি?
তার হৃদয়ে দাহকান্ত ছোরা আছে কি ?
পারে কি সে নরাধম প্রেমের কথা বলতে
তুমুল মৃত্যুর সময়?

অন্ধ পাথরও ফিসফিস জানে ভালোবাসি সই,
ভালোবেসে যতটা সম্ভব পরাজিত হই।





জরুরি কথাবার্তা আছে
...........................................

একটা মিষ্টি আঁধারে হৃদয় ডুবিয়ে বসে থাকি
বৃষ্টির শব্দের মতো বদমাশ আর কেহ নাই জগতে
আমার চোখ খোলা
হৃদয় দৌড়াচ্ছে দুষ্টু শিশুর মতো


এখন মধ্যরাত। রাধা ঘুম ভুলে যাও
প্লিজ ঘুম ভুলে যাও
আমার কিছু জরুরি কথাবার্তা আছে।






কে যেন
.....................................................

কে যেন হারিয়ে ফেলেছে রঙিন ঘুম
চুরি হয়ে গেছে তার সবগুলো নক্ষত্র

কে যেন খুঁজে পেয়েছে ছাদের কিনারে নিজেকে একা
তার সাথে নিশ্চয় হয়েছে
শয়তানের
সর্বশেষ দেখা।



ভালোবাসার সংজ্ঞা
...................................................

ভূতের বাড়ি থেকে ফিরে
বলেছি --ভালোবাসি
মন্দ বাতাসের হাতে খেয়েছি কানমলা
ভালোবাসা সই সহজ ব্যাপার নয়।

ভালোবাসাটাসা
শত ফুট কুয়ার তল থেকে
তুলে আনা শীতল জল

মিষ্টি জলের খোঁজে
নির্জন দ্বীপে অনর্থক ছোটাছুটি।



কাদের ঘুম ভেঙে গিয়েছিল?
...................................................

মরামাছির মতো পড়ে আছি ভাতের থালায়
জ্বলে ওঠো আগুন, প্রার্থনার সুরে বলি
বারবার জন্ম নিতে ইচ্ছে করে না।

মনে হয় হারিয়ে ফেলেছি পরনের জামা
শিরোস্ত্রাণ, জ্যাকেট, কামান, বন্দুক
আর কিছু অতি প্রয়োজনীয় বন্ধু ।

যাদের জন্য জন্ম হতে চেয়েছি
সবাই দেখি পুড়ে গেছে
পুড়ে গেছি আমিও নরম আগুনে।

চোখ বন্ধ করে আছি
কেউ দুঃখ দিতে আসছে না
কেউ দুঃখ মুছে দিতেও আসছে না
ঘন জলের ভেতর হৃদয় ডুবিয়ে বসে আছি।

কাদের সাথে যেন দেখা হবার কথা ছিল
কারা কথা দিয়েও আসেনি
কারা খুন করার সময় কেঁদেছিল
মৃত্যুর শব্দে কাদের যেন ঘুম ভেঙে গিয়েছিল?




দৈত্যই জানে ভালো
...........................................................

যে বাস আমাকে ফেলে চলে যায়
ট্রেন ছুটে যায়, নৌকা যায়
আমি তাহাদের জন্য দুঃখ করি না।

গন্তব্যের স্বপ্ন নিয়ে বেঁচে থাকো খোকাখোকোরা
তোমাদের হাজারো সালাম
ছোট্ট চিংড়ির মতো বাস করো খালের কিনারে
তোমাদের নমস্কার জানাই

দূরে কারোর বিয়ে হচ্ছে
বাজছে মিলন সঙ্গীত
অপূর্ব কান্নার ঢং নিয়ে বাজে অসৎ সানাই।

হৃদয় বরফের মতো শীতল হয়ে যায়নি এখনো
দৈত্যই জানে ভালো কাহার কারণে বেঁচে আছি।


শত্রুতা
..................................

আমি কী বোকা ! শত্রুর কাছে মনের কথা বলি
যে আমাকে খুন করে মনে মনে
‘আপনি খুব সুন্দর’ বলি তার কানে কানে
ফুল আর ফল হাতে
ছুটে যাই শত্রুর বাড়ি।

হৃদয় মেলে ধরে, প্রাণের মাঝে মন ঢেলে দিই আন্তরিক বক্তৃতা
শত্রু মুখ মুছে, নাক ঝাড়ে, বারবার হেসে অব্যাহত রাখে শত্রুতা।




আজ অফিসে যেও না গো
............................................

কাঁদছে আকাশ যেন বাচ্চা মেয়েটি।
খুব মেঘ করেছে
মেঘগুলি মনে হচ্ছে শুয়ে আছে মেটার্নিটি হাসপাতালের বেডে
সহসা বাচ্চা হবে।

এমন দিনে অফিসে যেও না গো
পরিত্যক্ত হোক মাইক্রোফোন, ক্যামেরা-পিটিসি
আজ আমার হৃদয়ের পাশে চুপ করে শুয়ে থাক।






এখন কী করি
.........................................

সোনালি ঘাম মুছে দিয়েছে রাত্রির টিসু
শ্বাসরুদ্ধকর প্রেমই আমাদের নিয়তি
এখন নিশ্চিন্তে নিদ্রা যেতে পার।

কত নির্লজ্জ সকালকে আমরা অন্ধ করে দিয়েছি
দেখতে হয়েছে নয়ন মেলে মাছিদের স্বল্পপরিচিত উল্লাস
একখণ্ড আকাশে এখন রোদ উঠেছে
এই আংশিক রঙিন জীবনে এখন কী করি?

নগ্ন পা পরিখার দিকে হেঁটে যায়
বৃষ্টি পতনের শব্দে কিছু নিদ্রা ছুটি চায়।




আমার সুখ থাকতে নেই?
........................................

সারা মনজুড়ে সশস্ত্র উকুন
সহস্র বছর ধরে উপোস করে আছে মন
এমন দুর্ঘটনার রাতে
মন আন্ধার করে বসে আছ কেন
আমার বুঝি ঘুম থাকতে নেই?

সহস্র রাত হল গল্পের ভেতর। ঘুমিয়ে পড়েছে রাজকুমারী।
জল্লাদের হাত কাঁপছে
আমার বুঝি সুখ থাকতে নেই নারী?



ডিম লাইট
...............................

আজ খামাখা নিষেধ করো না, বৃষ্টিকে পড়তে দাও নিজের মতো
বখাটে কিশোরের মতো ঝড়কে হতে দাও স্বেচ্ছাচারী
দুটো ট্রেন মুখোমুখি সংঘাতে শেষ পর্যন্ত জড়িয়ে গেলে
বুড়ো স্টেশন মাস্টারের কী আছে করার?





বোকামি
.................................

হৃদয় তুমি এত মূর্খ কেনে?
একটু ভুল বাতাসেই বেঁকে যাও
একটু ভুল স্পর্শে কেঁদে ফেল !

সম্ভবত বোকাদের রাজা আমি
আমার আসমানি ধর্মের নাম বোকামি !





খুব বেশি ঘুমিয়ে পড়লে
...............................

যদি খুব বেশি ঘুমিয়ে পড়ি
শেষনিশ্বাস দেখবে তোমার ওড়নায় লুকোচুরি খেলছে
বিরক্ত হতে পার, তাড়িয়ে দিতে পার স্বর্ণের মাছি
জেনে রেখ আমি আছি। হেই, আমি আছি।

আমি ‘ছিলাম’ মিথ্যে, সত্য আমি ‘আছি’
আমার বিকল হৃদয় সত্য-নিশ্বাস ফেলছে
তুমি গ্রন্থ সাহেব আমি তা পড়ি
তোমার ঠোঁটে প্রতিদিন বাঁচি। প্রতিদিনই মরি।





দাসত্ব ভালোবাসি
......................................

আমি কারো দাস হতে চাই না
চাই না হোক কেহ দাসী
বলতে দ্বিধা নেই তবু
দাসত্ব ভালোবাসি।

অবনত মস্তিষ্ক পছন্দ করি না
অবনত হৃদয় ভালোবাসি
অবনত হৃদয়ে আমি জলদাস
রাধা জলদাসী।





আমাদের আমাকে
.......................................

ভূতের গলিতে কিছু গোলাপের গাছও আছে।
ভূত ভালোবাসে অন্ধকার। আমিও কি আংশিক ভুত অদ্ভুত রাতে?

আমাদের আছে কিছু অন্ধ ইতিহাস। সারারাত বাদুরের উৎপাত।
রাত্রির শেষে শুভ পরিণয়। মরা মানুষের মতো শান্তির নিদ্রা।
আহ্বায়কের ঘুম জড়ানো মসজিদ-সঙ্গীত। অর্থাৎ সকাল হয়ে আসছে।
অর্থাৎ জীবন ডাকছে। যেন সে কাক। অনবরত ডাকে।
কাকে?
আমাদের আমাকে।




তখন ঘুমানোর সময় নয়
..........................................

সন্তানসম্ভবা মেঘগুলো ছুটে যাচ্ছে চেরাপুঞ্জির দিকে।
এমন বৃষ্টির দিনে
রাত্রির হাত ধরে নীরবে বসে থাকা অপরাধ
চল বৃষ্টির প্রতি ছুড়ে দিই সৃষ্টির শীস
মৃত্যুর দূতও জানে রোদ্দুরের স্পর্শে ভেঙে যায়
যে কোন সকালের হালকা ঘুম

এখন ঘুমানোর একদম সময় নয় রাধামনি।





ঘাম শুকিয়ে গেছে
...........................................

স্নানঘরের নিষ্পাপ বৃষ্টিতে ভিজে গেলে
মনে হয় বাহ কী চমৎকার বেঁচে আছি।

গোলাপি বাতাস স্নেহভরে মেলে দিয়েছে পাখা
ঘাম শুকিয়ে গেছে, এ কথা জেনে গেছে গোলাপি মাছি।



ওগো শীতল জল
........................................

আমার জাগরণ রেলস্টেশনের ঘড়িতে ক্লান্ত
সেকেন্ডের কাঁটার মতো থমকে গেছে।
আহত মন নিয়ে খুঁজে বেড়াচ্ছি স্পর্শজল
আর দুচারটি গৃহস্থ নক্ষত্র
দুর্ঘটনার রাতে।

আমার তৃষ্ণা একটু বেশি
ওগো নির্মম জল, কেন তবে এত কৃপণতা কর ?





ভূতের ট্রেন
..............................

একদিন আমার নিশ্বাসকে সন্দেহ হত
এই বাষ্পশ্বাস কোথা হতে আগত
হয়তো শত্রুর দুর্গ থেকে
ছুটে আসা আগুনের গোলা

একদিন পর
কে যেন আমার চোখ মুছে দিল
মুখ মুছে দিল
অপারেশন টেবিলে উন্মুক্ত করে হৃদয়ে ধুয়ে দিল

আমার রাধার দিকে হাত নাড়ালাম
হুইসেল দিয়ে স্টেশন থেকে বেরিয়ে গেল আহত ভূতের ট্রেন।






বিড়ালের মন খারাপ
.........................................

একটা বিড়ালের মন খারাপ দেখলে
আমার চোখে ঘুম আসে না
মন কেন তুমি এতো যন্ত্রণা করো?
খুব দুশ্চিন্তা হয়, কেন বিষন্ণ বিড়াল হাসে না।

আকাশের অসুস্থ তারাগুলোর জন্য কাঁদে প্রাণ
কেমন নিভু নিভু রোগাটে
বৃষ্টির দিনে হৃদয় কেন এত হাহাকার প্রবণ
আমি আর রাধা পড়ে গেছি এক সাথে বিরল জলের ফাঁদে !




অবশ্যই বলব
............................

তুমি আমার কি লাগ অরণ্যের বৃষ্টি?
আমার হৃদয় খারাপ, সময় খারাপ
তা বলে এসে একবারও ভিজিয়ে দেবে না?
কাকের মতো ভিজতে ভিজতে কাঁপতে থাকলে
লোমকূপগুলোর ভেতর ঢুকে যাবে আরাধনা

মরতে মরতেও বেঁচে ওঠে বলব প্রেম মন্দ কিছু নয়




সমবয়সী প্রেম মরে না
..........................................

বোকা আর শ্রদ্ধেয় ঈর্ষুকগণ বলেন
সমবয়সীদের প্রেম টেকে না

মন বলে আমি ছিলাম টারজান
না হলে কেন এত টান
এত কঠিন প্ররোচনা।
কেন তবে এত অবহেলা
চলছে প্রাণের লুডুখেলা
বান্ধবী শোন গো, সমবয়সী প্রেম মরে না





আমাদের অসুখবিসুখ
............................................

কন্যার অসুখ হলে কিছু সময়ের জন্য মরে যাই
অসুখ সেরে গেলে হেসে উঠি
এভাবে কতবার মরেছি, কতবার বেঁচেছি !

রাধার অসুখ সাধারণত হয় না
মনে হয় সে সুখের রানি
মাঝে মাঝে আমার অসুখ করে
তখনই শুরু হয় আসল রাহাজানি।


দুষ্টুরা যায় না
..........................................

দুষ্টেরা থেকে যেতে পছন্দ করে।

প্রতিটি চুমুর আড়ালে রয়ে যায়, সে বাস করে অর্ন্তবাসে এবং দুটো কবুতরের মাঝখানে, যাকে মূর্খরা হৃদপি- বলে সম্বোধন করে। আসলে তা হচ্ছে স্বর্গের খসে পড়া দু পেয়ালা সুখ।

এক নিশ্চিত দুর্ঘটনার পরও দুষ্টুরা কোথাও যায় না।





ভয় লাগে
...............................................

প্রতিবাদ করে ফেলি। ভয় লাগে
কি জানি কি হয়
তবু হাত দুটো
প্যান্টের পকেটে ঢুকিয়ে রাখি না।

যে ওড়তে জানে না
জানি সে পাখি পাখি না
দুঃখ বিষাদ কিছু দিন পর পর স্মৃতি হয়
ভয় লাগে তবু সরবে থাকি সবার আগে
জয় এবং কিঞ্চিৎ পরাজয়ের আশায় থাকি।

ভয় লাগে, ভয়কে বুকের ভেতর বিছানা পেতে শুতে দেই
পড়তে দিই রঙিন জামাকাপড়
তবে ভয়ের নির্দেশ সব সময় গায়ে মাখি না।





টুথব্রাশ
..............................................................

কান্ত কুকুরের মতো তাঁর পায়ের কাছে বসেছিল রাত
আমি হাতপাখা মেলে রাখি, মেলে রাখি চোখ
ঘুমের মধ্যে যদি সে একটু হাসে। স্বপ্নে বাড়ায় হাত।

হঠাৎ ম্রিয়মাণ কুলবধূর সুরে কেঁদে ওঠে দেয়াল
ভেঙে পড়ে ঘুম
নিশ্চয়ই কোথাও কেউ রান্না করছে জীবন
বিকল গন্ধে ভরে গেছে ঘর
চলে যাই সবজি বাগানে
চারপাশ থেকে বিশ্রী স্বরে ডাকতে থাকে নিরন্ন শেয়াল।

একটা মৃদু চাঁদ দেখি উপুড় হয়ে মরে পড়ে আছে ছাদে
তাঁর টুথব্রাশে লেগে থাকে আমার নিশ্বাস।




হৃদয়ের সাংবাদিক

আমার রাধার ভ্যানেটি ব্যাগটি ভরে থাকে রাজ্যের বিস্ময়।
কবে কোন রাজা ধৃত হল তরুণীর ঠোঁটে
দুঃখ কতটা নিঃসঙ্গ করেছে চেরি বৃকে, সে বলে
দেশ-বিদেশের সর্বশেষ খবর, কবরের নীরবতা তৈরি করে
আমি শুনে যাই, হাসি
কখনো রেগে যাই।

রাধে আমার হৃদয়ের সাংবাদিক
সে সাড়ে সাতটায় কেন সকলের প্রিয় হয়ে যায়!




রাধের ঘুম : এক
অবিকল সন্ধ্যা রঙ মেখে রাখে তাঁর শাড়িতে
আমি দাঁড়িয়ে থাকি মাথায় রেখে রাত
সারা পথ ধুলার ঘামে ভেজা

একটা দীর্ঘশ্বাস লাশ হয়ে পড়ে আছে মাটিতে
রাধে এখন নিশ্চয়ই পৌঁছে গেছে রাত্রির বাড়িতে।

আমার রাধে ঘুমোয়, জাগে শত সূর্যের চুমোয়
আমি মাঝে মাঝে তার মাঝে জাগি, কখনো ঘুমোই।



রাধের ঘুম : দুই

রাধে ঘুমুতে থাকে
আর আমি ঢুকে যাই ইঁদুরের গর্তে
প্রতিটি ঘুম তার মুখে নাচে, হাসে, গায়
আমি জেগে থাকি, পাহারা দেই মন, শৃগালের শর্তে।

কতবার বলি, কখনো আর মাতাল হব না
তারপর, ভুলে যাই, নিজের কাছে, কি কথা কখন বলেছিলাম
এসব জানে আমার ঘুমন্ত রাধে, জেগে ওঠে সে সবই ভুলে যায়

আমি কখনো মাতাল হতে চাইনি
আসলে কখনোই খাইনি মদ
তবু কি বলা চলে যাইনি ?
জলে মেশানো নেশা, তীব্র ঘোর, সংগ্রহ করি রাধার সম্পদ!




ক্রন্দন

আমি ঘুমিয়ে গেলে, যত্ন করে ডাক দিয়ো
জেগে উঠলে স্বপ্ন করে শুয়ে দিয়ো
স্মৃতি হলে সুখিত হয়ো
হে রাধে, ক্রন্দন করো না।





ইস্ত্রি
থাক একটু এবড়োখেবড়ো
ছেঁড়াবেড়া
অকারণে রিপুকরা মন

অসাধারণ অভিমান, ঝগড়াঝাঁটি
ঘুমের ভেতর হাঁটাহাঁটি
দুধের বাটি উল্টে দিয়ে বিড়াল ডাকা চ্চু...চু

ভুলে যাওয়া রাতের সাথে খুনোখুনি
রাধে, আমার মন প্যাকের তৈরি

কুঁচকে যাওয়া মনটাকে বৌ
ইস্ত্রি করার কি দরকার?





বৃষ্টির দোষ

দোষ করেছে দুষ্ট বৃষ্টি, আর রাত্রির ঠোঁট
কপাল দোষে আমি যাচিছ
মরে যাচ্ছি, ভীষণ মরে যাচ্ছি।

হাতে ছিল বর্ষার রিমোট
আমি অনেক চ্যানেল ঘুরে ঘুরে
আসিয়া থামিয়াছি তোমার কৃপণ ঘরে।

আমাকে প্রেম কর
বৃষ্টির শীতে কাঁপছি, ত্রস্ত,
আর মাপছি হৃদপিণ্ডের অনির্ধারিত গতি

আমাকে ময়লা জলের মতো ফেলে দিয়ো না
আমার তি হলে তোমারও তি হবে।




আমার রাধে, রাঁধে

আমি নিশ্বাসকে ছুটি দিয়ে দিতে চেয়েছিলাম
কানে কানে বলল রাধে ‘দুষ্টমি করো না’

সেই থেকে আমি অনাথ বৃষ্টির সংখ্যা গোনতে পারি।

পৃথিবীতে আমি তেমন গুরুত্বপূর্ণ নই
এ রকম কথা জীবনেও ভাবিনি
অনেক সম্রাটের সাথে মল্লযুদ্ধ করে-টরে
কয়েকশ মরা নগরীর ওপর দিয়ে ছুটিয়ে মন
রাধে, তোমাকে করেছি অর্জন আমি তথাগত,
এখন আদেশ করতে পারি বনের বাঘকে
সে যেন না করে আহার কারো অপ্রাপ্ত প্রণয়।

আমার চোখে রাজ্যের দুখীরা জমা রাখে জল, তারা কেবল কাঁদে
আর তাহাদের জন্য সরল পথ্য রাঁধতে পারে আমার রাধে।




বোকা চোর

একটি শীতার্ত ভবন ঢলে পড়ে অন্য ভবনের গায়ে
একে বাৎসায়ন বলেন ‘প্রেম’
পাখি বলে ঠোঁটের আদর
একটি মাছ বলে উন্মুক্ত সাঁতার।

আমি তাঁর কাছে ব্যক্ত করি অপ্রচলিত ভোর
পূর্ব স্মৃতি ঘেটে সে বলে দেখিনি এ রকম
বোকা আর চোর।



গত শীত

কিছু কথা শুনে ফেলেছিল মৃত কবিদের শব
সব কথা বোঝেনি ক্রন্দনরত কুকুর
আমি ছিলাম ভয়ে, রাধে ছিল বিস্ময়ে ;
একটা পূর্ণদৈর্ঘ্য রাত উপুড় হয়ে শুয়েছিল আমাদের সাথে।

সারা রাত্রিতে ছিল হৃদয় মেলে ধরার আয়োজন


মন হাঁটে, নাশতা খায়

আমাদের মন পাশাপাশি হাঁটে
যেন বা রেল লাইন, সামান্য উঁচুনিচু পাহাড়

অকথ্য শত্র“র জিভে আসে পানি
তারা নানা রঙের অভিশাপ দেয়

দেহ মনের বাড়িতে নাশতা খেতে যায়
আমাদের মন দেহ খুঁজে পায়।





আয়না

আমি ঈশ্বরের সাাৎ চেয়ে আবেদন করি
কোনো উত্তর আসে না আকাশ থেকে
শেষে রাধার সাক্ষাৎ করি কামনা

যা কিছু দেখি, বিবাহিত চোখে, মনে হয় আয়না।





বুড়ো দৈত্য

একটি বয়স্ক সন্ধ্যার ঠোঁট থেকে শিখেছি যৌনতা
এরপর মৌন আছি।
তোমরা সমতা আনতে চাও অপাপের
আমি করি দৃঢ় সমর্থন।

বুড়ো দৈত্য এবার আসতে পার নিকটে
বেড়াতে যাব বিরল শস্যের হাটে।





বিছানা

কঠোর রাতে বিছানা হয়ে ওঠে
হৃদরোগের উপশম
কঠোর প্রভাতে সূর্যে আগুন ধরে গেলে

হৃদয় হয়ে ওঠে আরোগ্য আশ্রম।




হাঁস

রাধার মানিব্যাগে জমা থাকে
গরিব মানুষের দীর্ঘশ্বাস
লাল নীল হলুদ বেগুনি কাদায়

আমার রাধা যেন উড্ডয়ন-প্রবাসী হাঁস।





শিয়াসুন্নিকুর্দিরা

বরফের মতো জমাট হৃদয়কে রেখে দেব ফ্রিজে
নাজ, শুধু তোমারই জন্য হবে আমার
এই আত্মঘাতী আয়োজন।
আমি আছি আমার নারীকে নিয়ে
এই লজ্জায় চুমু খাই শিশুদের।
তবু লজ্জা যায় না।

যুদ্ধ করতে আমি ইরাকে যেতে পারিনি,
তোমার পায়ের কাছে ঘুরঘুর করি
আমি জানি শিয়াসুন্নিকুর্দিরা আমাকে শুধু এ কারণে মৃদু হেসে মা করে দেবে।



ফাঁদনগরে

যে কোন ঘুমন্ত ফাঁদের আছে স্বল্পদৈর্ঘ্য দেহ
এক লাফে পেরোতে হয় পরিখা
না হলে পাথর হতে হয়
কাঁচা আতরের মতো ভীতি মেখে আছে প্রাণে

ফাঁদেরও আছে গোপন অঙ্গ, কিছু অবধারিত পোসপাস
লিপিস্টিকে ঠোঁট মাখালে আরো উজ্জ্বল হয় প্রীতি
এ কথা কে না জানে দিল্লী থেকে আগ্রা অনেক দূর!


মৃত্যুর একখণ্ড অনাবাদি জমি চাষ করি
আর খুব ভয়ে ভয়ে বাস করি ফাঁদনগরে
আশা করি পড়বে মনে
কী কথা বলেছিলাম কানে কানে।





শেষ মিনিট

প্রি-প্রেইড কার্ডের ফুরিয়ে যাবার মতো
রাধে, কথা বলতে বলতে
বলতে বলতে বলতে বলতে

ফুরিয়ে যেতে ইচ্ছে করে।






পুরুষের উপকারী

কে গো তুমি গার্ল বাস করো পর্ণকুটিরে
কে তোমারে ডাকে বাজে কাজে ?
হাসির মতো শব্দ করে কেন তুমি কাঁদো, কনে ?

সচল ক্যামেরা। ধূর্ত ক্যামেরাম্যান।
সাইবার ঋতুতে অনিদ্র চোখ।

দেখি একটি ক্ষুধার্ত শিশু ছুটে যাচ্ছে যখন
তোমারই স্তন্য হয়ে যায় শিশুদের উপকারী স্তন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন