সোমবার, ৩১ আগস্ট, ২০০৯

কবি সুমন সুপান্থ-র কবিতা : নিশিন্দা মেঘের বাতিঘর







যৌথ ভুলের দিন
..........

একে একে বিফলে যাচ্ছে যতো সমুদ্রচর্চা ; ঢেউপ্রজনন!
তোমার জন্য থাকছে- গীত, বাঁশিসমেত পল্লীবিজ্ঞান
যেভাবে শিখেছি একদা স্তবের বিনিময়ে ভিক্ষা গ্রহণ
থৈ থৈ করে বাজছে তেমনি পরমায়ু হনন পিয়াসী অর্গান
উন্মুক্ত করে দিচ্ছে ক্ষয়ে যাওয়া যতো দগ্ধঘন ত্বক
তরঙ্গ তুলে নেচে উঠছে ধুলোবর্ণ বিকেল, অধুনা আলোক
স্রোতে স্রোতে ফিরে আসছে মুখোমুখি বসিবার দিন
দ্রোণফুলে নিবিষ্ট ভোমরা- অর্ধেক বিরহী বাকিটা রঙিন
উড়ে গিয়ে পুড়িয়েছে ডানা বিলোড়নের কালে
রঙ হারানোর রাতে তাই শোনো স্মৃতিমাতৃক যতো ভায়োলিন
সূত্র ভুলে বেজে উঠবে আবার অ্যালভিয়োলাস সকালে
নতুন সন্ধিতে কেউ ফিরে পাবে ফের যৌথভুলের দিন।



রোদ রঙা ঘোড়া চরিত
...............

বছরের শেষ মৃদু সন্ধ্যায় আমাকে এসে দেখে যায় মাছঘরের পাখি
ঘোর লাগা চোখে আমি তন্দ্রায় যাই আমার শিকারী পিতার মতন
কতো চন্দ্রমাস জালে আর জলে বন্দী নিজেদের পৌরাণিকী !
জেনো, আমারো ভাই ছিলো এক, লাঠিয়াল। আরেকজন বিভীষণ

আমাদের ধানসিঁড়ি নদীতে এসে জল খেতো রোদরঙা ঘোড়া
আমার বর্ষীয়সী দিদি’মা একবার কাঁথায় গেঁথেছিলো সেই অধ্যাস
পড়বে বলে আমার ভাই সেই যে ইশ্কুলে গেলো আর হয়নি ফেরা
আমার মা তাই মাঠের ভেতর খুঁটে ফেরে আত্মজ রক্তের ঘাস

প্রতি সন্ধ্যায় পুরোনো গাঙুর নদীটি উৎসবের সুরে
ভাঙতে ভাঙতে দু’তীর বেহুলার মতো মূক হয়ে যায়
আমার লখিন্দর ভাইটি তবু জেগে ওঠে না বিস্মরণের ভোরে

ধূম লেগেছে বিদ্রুমে আজ - নবান্ন ‘উপ-হাসে’ বছরান্তর
কালো ডানা থেকে বিন্দুপুরে তবু কৈবর্ত্যরে উষ্ণতা বিলায়
বর্গি তাড়াবে তাই, আমার সন্তান শুধু জেগে থাকে রাতভর



স্মৃতিফলকে গাঁথা কুমারী
...............

আমাদের পড়শি যে নদী ছিলো স্মৃতেশ্বরী
ভোর হলে ঘাটে ফিরে আসে ভেলা, বেহুলাভাসানতরী
তুমি তারে আঁচল করে পরে নিলে গত শীতে !
অথচ তুমিই তো কবে যেন আমাদের হাড়ে ও পেশীতে

এঁকেছিলে নাচঘর, হাড়ানো ঘুঙুরের মৃত ধ্বনি
স্রোতের গহিনে ডুব সাঁতারের দাগ, রক্তের সিস্ফনি
মাঝ সায়রে ডুবে যাওয়া এলাচের জাহাজ !
এই সবই গত শীতে।

আর আসছে যে বসন্ত সে কালে আমাদের অভিমান ফোটে
ফুটে কী, ফুটে ঝরে যায় ! তাতে স্বপ্নের অধিক
নিয়তির প্রতীক
তোমার অই বেহালা শীতেরই গান গেয়ে ওঠে

ওপারে তখন কেউ ছেড়েছে ঘুড়ি ধারালো সুতোয়
তাতে আমার আঙুল কাটে তোমার ছেঁড়ে আঁচল
গান নয়, রক্ত না জল
গূঢ় অভিমানে ফের আমার বুকেই শোয়




দাদাজানের ফরচা
..........

এই যে বিরহবেলায় রচিত গান গাওয়া হলো বিষণ্ন সুরে,
উড়ে যাবার আগে ব্যথিত শিস কেটে গেলো পাখিদম্পতি
তাদের ডানার নিচে কিছু রোদফুল ছিলো প্রতি ভোরে
ঝরে গিয়ে তারা ফুটেছে আবার! অতি সম্প্রতি
এমন কিছু তথ্য পেয়ে দিশেহারা ধুলোসমাজ
এবার একটা আবিষ্কার হবে নিশ্চয়ই ! কী করে
গানে ও শিসে সখ্য হলো, কেমন করে এমন কারুকাজ
ঝলসে ওঠে তোমার ঊরুমূলে, কিংবা আরও কিঞ্চিত ভিতরে
সবুজ সবজির মতো বাড়ছে যে এক হৃৎফুল
তাতে আমার কিছু প্রাপ্য আছে - তোমারও অর্ধেক
দাদাজান আমার রেখে গেছেন এমনই ফরচা এক
পশ্চিমে পোড়ারোদ, উত্তরে নদী, পুবে ঘর হয় যদি- দক্ষিণে তবে যৌথভুল !



ফেরা
....

ওগো নিদ্রিতা মেঘ আজ এসো আমাদের ইশ্কুলে
এসো প্রিয়পঙ্খি. . . নিশিন্দা নদীকূলে
জীবন অনন্যমাঠ- এটুকুই গোপন সম্ভাবনা
আমরা লিখিব পদ্য, তিরিশ উন্মনা

কথারা আজ উড়িতেছেন জাহাজের ডেকে
আমিও উড়েছি ধুলো বনেদি গন্ধ মেখে
বাতাস গ্যাছেন দূর; বহুদূর- মালয় সাগরে
প্রতিকূল স্রোতে ফিরো- বাদামি যুবক চেনা বন্দরে

আজ এসো প্রিয় প্রতিমা, এ মণ্ডপ দারুচিনি দ্বীপ
এসো যীশু ঘুমঘোরে- আজ দ্যাখাবো দোল পূর্ণিমা
সাঁওতাল মেয়ে নাচে : ঘুঙুরের মতো এক পাঁড় প্রদীপ

হেঁটে এসো পুরনো বেদেনি , শিঙায় নাচাও খোঁড়া অপ্সরী
মন্ত্রের কৌটা রেখেছি বাজি এই সহি স্মৃতিনামা
পীড়িত শালিখ আজ বাড়ি ফিরবে, সে তথ্য বিপণন করি



বৃষ্টি সন্ত্রাসে
........

এইবার বলো মেঘ কী শিখালে বৃষ্টির বিপরীতে
আমাকে কি ঝরিয়েছেন কালিদাস সেইসব মেঘের অন্তরালে
ঝরে ঝরেই শ্রীমান ফিরবো উত্তর আধুনিক মিথে?
ক্যামনে তবু মেঘের মেয়ে বেড়াতে আসে অমন বৃশ্চিক বিকালে !

না হয় সেই গান জানি বলে স্পাইরাল বৃষ্টির সংবর্ধনা আজ
প্রসঙ্গত মনে পড়ে যায় স্মৃতিবরেষু কেউ থাকে অজ্ঞাত
এমন প্রতীক্ষা কেমন বিস্বাদু যেন বা... পুনশ্চ শ্রাবণ রাত ও
স্মৃতিলুপ্ত ওফেলিয়া ফুটে ভেঙে গেলে যৌগ কোলাজ

সব ছন্দ অস্বীকার করে আমরা অপেক্ষা করি মেঘ কিশোরী
আমাদের ভিটে মাটি প্রত্নধনু ধুয়ে দিয়ে যাও রজস্বলা স্রোতে
বেয়াড়া ছাঁটে ভিজুক অধিরূঢ় ব্যাকুলতা...আহা মরি মরি!

আরো একবার পথভ্রষ্ট হয়ে আমরা গিয়েছিনু মেঘদূত সকাশে
ঠাকুরের গানে পাতা নড়ে, এমতো থৈ থৈ নির্লিপ্তি
তেইশ বছরের জীবন কাঁপে বৃষ্টির সন্ত্রাসে!


শুদ্ধমৃত্যু, প্রখরভুলে
............

কিছু কিছু ভুল সুর থাকা ভালো প্রতি অন্তরায়
হলুদ শ্মশানপথে মুদ্রিত উজ্জ্বল রোগে
পীড়িত হয়ে গেলে কিছু ভুল খেয়ে নেয়া যায়
দ্রাক্ষা ভেবে যাবতীয় মুদ্রাদোষ সহযোগে

তাতে সফেদ মৃত্যুর পূর্বে বেঁচে থাকার আশা ফোটে...

প্রত্যহ প্রত্যূষে কিছু ভ্রম মেখে নিলে ভালো
গহিন ক্ষত চিহ্নে ঘনঘোর গোপন ডানায়
ঠিক তখনই দ্যাখো আসমান চমকালো !
দূরের নক্ষত্র ছুটে এলো পেঁচার আস্তানায়

সফেদ মৃত্যুর পরে পেঁচাশিশু যাতে শুদ্ধ হয়ে ওঠে!



প্রয়াত কবির গ্রামে
...........

আকাশে আগুন লাগিয়ে আসমানি কৈতর
কী গীত গাহিলো শেষে
বোকা সন্ত বোঝেনি মনে অনন্ত ধ্যানের ভেতর।
কুমারী চাঁদের স্ব-হনন, মৃত লোবানের ঘ্রাণে
মিথ্যে শোকার্তের বেশে
বেজে চলে শিস্ তনু মন প্রাণে
চাঁদহীন রাতে ভেসে যায় কবির খসরা খাতা
ক’জোড়া পাঁজর হলো ভস্ম ছাই,
মর্মরতার জল পাতা
টুপ করে ঝরে কবি ঝরে শিস্ওয়ালা আচমকাই
কবিতার মাত্রা ভেঙে যে আঁকে কুমারী দেহ
বিষ বিঁধে বুকে কোমল সর্বনাশ
ঘর গেরস্থালি লক্ষ্ণৌ বাঈজী শুধু হাইড্রান্ট আশ্বাস !

কত বছর পর কোন দূর জানালায়
নিশির ধ্বনিরা নামে মাঝ রাতে সিন্থেটিক অধ্যায়
কবির সহোদর গাছ অবসাদহীন খেলা দ্যাখে
বনান্তে নক্ষত্রের বিয়ে জ্যোৎস্নার ঝালর নামে
ডানা মেলা কথার পরিরা ফের
নৃত্য করতে আসে প্রয়াত কবির গ্রামে ।



জলজ শোকগাঁথা
...........

রুপোলি ঘুড়ি যায় লুটেরা মেঘের শেকলে
কেন যায়? কে পাঠায়? সকলি থাকে অজ্ঞাত
আমরা দাহ করি জ্ঞাত স্বপ্ন হিম দাবানলে
তবু জোনাকি গিলে ফেলে রাজর্ষি রাত !

জানি জানি গো বিবাগি মেঘ বসিয়েছে পিঞ্জরে
এখন আমার বাড়ি হবে শান্তান পাড়া
এখন আমি মাতাল হবো ছায়াঘুমের তরে
বনেদি হাওয়া ও ভুলে যাবে পর্দা নাড়া

অন্ধতাকে তাই কেউ বলবেনা দৃষ্টিহীনতা
যতোই কাঁদুক একলা আকাশ ইস্টিশনে
মলাট দুটো লুকিয়েই রাখে জলজ শোকগাঁথা

এ কেমন পথভোলা? নদীরে বিশ্বাস করে
যেন বা নদীই জানে শুধু চিতাগ্নির গল্প!
চিঠি তাই আসেনা বুঝি ভাঙা ডাকঘরে?




আখ্যান ফের নাইওরি নাও
...............

বড় অসহায় আজ লেপ্টে আছে ঘাসে
আজ নামেনি বাক্য আজ অভিমান
উড়তে শিখেছে নৈর্ঋতের আকাশে
উড়ে উড়ে বুঝে গেছে বৃত্তই প্রধান

কাল এসে পড়ে যেয়ো নাইওরবরন শাড়ি
কুঁচির ফাঁকে ফাঁকে মেঘ বরিষন
ঝিঙের বধূরঙ ফুল আর স্মৃতিপ্রসারী
সব গহনা তুমি চেয়েছিলে ভীষণ

বৃত্ত ভেঙে তাই বুঝি প্রলুব্ধ করে দাও !
আর তাতেই খোয়াবেরও অতীত সব দৃশ্য দেখি
যেমন, দৃশ্যের আখ্যানে ফের নাইওরি নাও
নিকাহ্ হাওয়া লেগে গেলে পাল তোলে ঠিক ই।



নৈশ বিলাপের চতুর্দশপদী
.................

সরীসৃপ অন্ধকার পেরিয়ে জন্মস্মৃতি উঠে এলে বুক বরাবর
বিগত দিবারাত্রি খুঁজে জ্বেলেছি কুপি অভিবাসী সন্ধ্যায়
দূরে নয়, ওই খানে পুড়ি চিতা; শ্লোকঠাসা সমাধিপ্রস্তর
চঞ্চলা নদী এক পঙ্গু হলো বলে শুনেছি পলি ও কাদায়!

শেষ বার বিয়ারিঙে চড়ে ঘুরে এসেছি গোধূল নগর
বাল্যবন্ধু সেই স্মৃতি সেলাই করে লেখে চিঠি- ‘ফিরে আয়’
আজো সেই বেতবন, নিসর্গ লুটিয়ে আছে মৃতপ্রায়
পালকের চিহ্ন নেই আর কোন নাম নেই খামের ’পর

তবু কারা যেন লেখে ফের স্মৃতিতে জ্বলে পুড়ে
মানুষ নাকি আবার ডাকতে শিখেছে ডাক নামে
যে পাখি ভিনদেশে করে বাস সে ও নাকি স্বদেশী পাখায় উড়ে
নির্বাসিত রাত্রিগুলো বেচতে যায় প্রাত্যহিক দামে

এই সব নৈশবিলাপ; ছাইভস্ম, ফুল হয়ে ফোটে
একজন্মের সৌখিনতা উড়িয়ে দিয়ে হরিয়াল পাখির ঠোঁটে



শাস্তি
....

নিজের ক্রুটি কী করে স্বীকার করি যে, আমি প্রায়ই
মাতাল হয়ে পড়ে থাকি পথে! চোখের ভেতর জমা করি
নেশা, টলমলে দুঃখের মদ পান করে চলে যাই
অমৃতপাড়ায়! কখনো বা তোমার মতো কারো সুখের কানাকড়ি
ছিনিয়ে নিয়ে দিই দৌড়। পেছনে দৌড়ায় পুলিশ, বাঁশি
ফোঁকে তারা গগনবিদারী- ‘এ্যাই দাঁড়াও, না হলে
গুলি করবো...!’ এই তো আমার নিয়তি আমার বারোমাসী
ছুটছে আমারই পিছে ছায়ায় ও রোদে ক্রুর দাবানলে!
আগুনের মতো দূরে ন্যাড়া দ্বীপ ক্ষীণআশাপুরী
ভাবি, এইবার ওখানে থাকা হবে বেশদিন, নির্ভয়ে বেশ
হায়, কে যেন তবু জেনে যায় এই লুকোচুরি
ডেকে বলে, ‘উইঠ্যা আসো মিয়া ভাই! রানীমা’র নির্দ্দেশ
তোয়ার লাই নয়া দ্বীপ। নয়া ঠিহানা
সবি আছে; মাগার চান্নিটা দ্যাখবার পারবা না!’



নির্বাচিত স্মৃতির প্রণতি
.............

ভ্রমণে গেলে পাবকের প্রিয় পাখি?
আমি সেই ডানা ভেঙে দাঁড়িয়ে থাকি
প্রদগ্ধ গল্পদের ফিরে পাবো বলে
তখন দহনের সব স্রোত মথুরার জলে !

এই ভুল শিলাস্বপ্ন ফের ঘুমোবে না আর
যে গাঁথা এ জীবনের; শিল্প তার বিষণ্ন অধ্যাস
কার্তিকের মাঠ বোঝে মর্ম, করুণা বিলাস
কোন পাখি লেখে শিস্ নির্বাসন ব্যাকুলতার!

কোন্ দুঃখ বেশি বলি, কোন্ বেদনার গান!
কবি যে ভাসে আজ দুতাবাস কল্লোলে
লিখি স্মৃতি. . . উঁকি দেয়া প্রব্রজ্যা অভিমান
মধ্যরাতের পথিবী পোড়ে বৃহন্নলা জলে

তবু সেই ছোট নদী... ভস্মপ্রেম... উজানেতে যাই
‘কালকের না পাওয়া স্বপ্নটা আজ যদি পাই!’




স্মৃতি মাতৃক খুচরা কষ্ট
..............

সারারাত মুখরিত দহন; মথুরার গল্প নেমেছে পদ্যসুরে
ঘুমহীন মফস্বল কবি গ্রন্থিত হই শিশিরে পুনর্বার
কতোবার বলেছি আমার শহর দেখতে আসো যোজন দূরে
নিভৃত নিধুবনে নিঃস্বরাত জানে মর্ম, হৃদি যাতনার

সেই তো গেলে ভেসে ভেসে জলের বৈঠায় উজানে বহতা
আমার বর্ণিল মুখরতা এক ফাঁকে উড়ে গেলো গার্হস্থ্য রোদে
স্বপ্নকে আর ভাই ডাকি না এখন পথে ঘুমায় শ্যাওলা পিচ্ছিলতা
কতো পূর্ণিমাও চলে গেছে দূরদেশে. . . কতো প্রতীক্ষা ভ্রষ্টবোধে!

তবু জোছনা এলে মনে হয় তুমি দেখতে এলে আমাদের
মৃত্যুর উদ্ধৃতি ভুলে নাচতে নেমে যাই উন্মাতাল- স্বপ্নমাঠ
অকস্মাৎ কে কার ভাঙায় ভুল ব্যর্থতা এই রাতের!

সেই তুমি খুলে এলে লোকায়ত অন্তর্বাস. . . শাড়ি
অভিশপ্ত ভাস্কর তখন পেরিয়ে গেছে নিয়তির চৌকাঠ
নির্বাসনের সেই রাতে আমিও আর ফিরিনি বাড়ি



বনশ্রী রোড ২৫ অক্টোবর ১৯৯৬
....................

পাথর সময় নিয়ে চিঠি গ্যাছে বিষাদের শহর
পুরানো গ্রাম শুয়ে থাকে নির্জনতা অথৈ
তবু সাধ হয়, চিতায় না চৈত্যে হই খবর
বলো তবে এই সত্যে কী এমন অর্থ হলো সই!

পিরিতি গড়ায়ে গড়ায়ে যায় আমাদের বনশ্রী রোডে
যদি বলি প্রান্তরে ও পথে ঘুরে এটুকুই সঞ্চয়
আর কিছু দেখিনি পথিক মেট্রো সোডিয়াম শেডে
ও প্রত্ন প্রেয়সী তবে কি লিখিবে ‘পরাজয়’!

আর অই যে থাকলো কোলাজ ঘুড়িতে ওড়া গল্পাঞ্জলি
পাঁজরে বয়ে চলে সান্দ্র নদী... পুনশ্চ এক পড়শি জানি
অপাঠ্য থেকে যায়! সূর্যাস্তে আর নাই-বা বলি
আমিই তো বিস্মৃত হবো জুডাস-প্রভু যেশাসের বাণী!



সীমানা
....

ঘামে ও গল্পে এখনো ভেসে ওঠে রুচিতাদের বাড়ি
তীরের ফলায় স্বপ্ন ঝোলে, বিদ্ধ বনচারী
আজ কাগজে লিখি সেই সব কুয়াশা
তুমিও যেন শীত বৎসরান্তে ফিরে আসা

নদীঘাটে আরো যে ছিলো পড়শি বালিকারা
ওপারে রাখাল বালক আজ প্রিয় বাঁশিহারা!
কিংবা নকশি কাঁথার মতো চিত্রল তোমার দিদি’মা
এই পদ্য আজ বিজ্ঞাপিত করে তাহার মহিমা

আমার কিশোর ছায়া সেই দাউদাউ লাফায় অন্তর-তলে
বেইলি রোডে দেখি নাট্য সেই উপকথা বলে!
অমোঘ প্লাবনের নিচে কিছু শ্মশান থাকে অজানা
তৃণমূল কবি কি করে ভাঙে দশকের সীমানা!



ধূলো প্রবাহে রচিত
............
[ সোনিয়া চৌধুরী সুমি. ছায়ার অধিক ছায়া জমা করে পান্ডুলিপি রচি ]

সেই ভিজে মেঘের দুপুরে উড়েছিলে চিল সোনালি ডানার
তোমার কান্নার সুরে ধানসিঁড়ি দ্যাখে ম্লান চোখে অন্ধকার
পৃথিবীর রাঙা রাজকন্যা চলে যায় দূরে সবটুকু রূপ নিয়ে
সে দুঃখ পড়ে থাকে ঘাসের পাখনায় আমি কাতর লিখিয়ে!

কখন কুড়াবো সে ঝিনুক : নীরবে নীরবে যে সহে যায় ?
পদ্য না কি মুক্তো ফলাতে ঝরঝর ঘামি এই সন্ধ্যায় !
সন্ধ্যা তো জানে স্বাতীর হাতে কমলালেবু হৃৎপিণ্ড মানবিক
দ্রৌপদী শাড়ি রহস্য খুলে দেয় - আমি হাল ভাঙা নাবিক !

সমুদ্র যাত্রায় যাবো তাই জঠর অব্দি নেপথ্য তাপ

দিনগুলি আজ কী প্রকারে প্রকাশি এই ক্রুর জ্যোৎস্নার দেশে
পূর্ণিমার প্রচ্ছন্ন বিষাদে এই গৃহবিদ্যা. . . স্মৃতিপ্রদাহ ভালোবেসে !

পাতা কুড়ানো বউ আমার, মেঘমাতাল সই। . . .লিখি
ধু ধু সম্প্রদায় গুণে রেখো আজ পলায়নবার্ষিকী

ধুলোপ্রবাহে রচিত নিখোঁজ কিশোরের এফিটাফ




ইলোরা, তোমাদের মিথ্যে কথার শহরে
.......................

হাওয়ায় ভেসে এসেছি তাড়িখোর শহর স্বপ্ন মায়াবিনী
তোমাদের তুলতুলে শয্যায় দেখি উড়াল চাঁদঘুম
কষ্টমন্ত্রে পেয়েছি ছাড়পত্র তাই শস্যস্মৃতি আনিনি
চাষীপুত্র বুনেছি আশ্বাসবীজ. . . আলো আক্রান্ত মৌসুম

ইলোরা তোমার শহরে আজ বিভাজিত করি যতো ব্রাত্যগান
প্রিজম স্বপ্নে মুড়ে দেয়া উপকথা কিম্বা নিঝুপুর বৃত্তান্ত
পথ ঘুমিয়ে গেছে না হয় রাত ছুঁতো মাসকান্দির যাত্রানৃত্য আবহমান
বনেদি দৃশ্যে যৌবতি কন্যার আরো কিছু শোক ছিলো
হ্যাজাক বাতি জানতো।

আমি এসেছি দলছুট এসেছি মিথ্যে কথার শহরে
পৌরাণিক বাতাস তাই স্বনন কাটে ‘পলাতক হলো রে!’



জন্মান্তরের যাত্রা
.............

কীর্তনসখী, রাত উন্মনা বলে আমি এসেছি বোধশূন্য
প্রাচীন অধ্যায়ে সেই অঙ্কশাস্ত্র ফলাফলবিহীন যেনো
আমারো কোন পদচিহ্ন থাকে না ধূলির সাথে
আর ঐশী পুস্তকের বিশ্বাস
একে একে নগ্ন হয়ে যায় পশ্চাতে!

প্রাচ্যেও কোলাহল ভারী- নেশাবদ্ধ মানুষের ভিড়
যুদ্ধ বিজ্ঞানের সূত্র বলে যায় বর্গিপুরুষ
ম্রিয়মাণ কিশোর, গন্তব্য নিকট নয় খুব
গল্পটা তবু আশ্চর্য মৈত্রীর!
প্রতি উত্তরে লিখি ব্যাকুলতা. . . মাইল কিংবা ক্রোশ

শোনো, পলায়নে গ্লানি বড়ো জন্মান্তরের যাত্রায়
অবুঝ কিশোর
শুয়ে থাকি তবু
ঘাতকের সাথে
একই শয্যায়!



গল্প বৃত্তান্ত
..........

আরো কিছু গল্প বাকি থাকে
আমাদের নবান্নের দেশে
পৌষ-পিঠার গন্ধে মাতোয়ারা নদীও অবশেষে
সুবসনা বাঁশির টানে
ভাটিতে যায়
ওঠে উজানে।
সে বড়ো পীড়িত আজ
আত্মজ জলের দহনে
অঙ্কও বেশ জানে
সুদ কষা...শুদ্ধতম ঐকিক
কোন সূচকে লভ্যাংশ- লোকসানের ক্রমিক।

বলি নদী শুনে যাও মর্মাহত সন্ধ্যায় কে ডাকে কারে
বলি নদী দ্যাখে যাও কারা নেমেছে ডুব সাঁতারে
বলি নদী শুঁকে যাও কার ত্বকের ঘ্রাণ নিভৃত শ্মশানে
বলি নদী বলে যাও গৃহবন্দী কারা যাবে সমুদ্র সন্ধানে


সন্ধ্যায় বৃষ্টি এলে
..........

সন্ধ্যায় সামান্য বৃষ্টি... বৃষ্টি খেলতে শহরে এসেছেন বাল্মীকি
বিভঙ্গ চৈতন্যের কাব্য হবে এবার, এ সন্ধ্যায় আমরা কী লিখি!

প্রত্ন সভ্যতা বার্ধক্যে গ্যাছে এমনই প্রশ্নের তোড়ে
ফি-সন্ধ্যায় আমরা উত্তর খুঁজি প্রাত্যহিক সুরে

ধ্রুবতারা জানে ধ্রুবসত্য, ঢেউয়ের বাড়ি নদীকূলে
লুপ্ত সন্ধ্যায় কেন নাচে দহন গহিন মর্মমূলে

তবু
সন্ধ্যায় বৃষ্টি এলে, আমরা দাহ্য হতে নামি পথে
সন্ধ্যায় বৃষ্টি এলে, নিজেকে বাঁচাই কোন মতে
সন্ধ্যায় বৃষ্টি এলে, ভাসে বিষণ্ন আত্মার গান
সন্ধ্যায় বৃষ্টি এলে, বুনি ‘নাভিতে সবুজ ধান’
আর
সন্ধ্যায় আশা রাখি কুমারী প্রেমিকা এবার রজস্বলা হবে
সন্ধ্যায় আশা রাখি শিসগুলি নির্ভুল ঠিকানা পাবে
সন্ধ্যায় কাব্য এলে প্রান্তিক বাজারে বেচতে যাই
সন্ধ্যায় কাব্য এলে কাতর কবি দগ্ধ বনসাই !


ভুল গ্রামে এসে
.........

সান্ধ্য জলে কবিতার ঢেউ, ভেসেছি সেই প্রপাতে করুণাবিহীন
খড়কুটো, নর্দমা, শিল্পপ্রাণ বেদনা ভরা রাতে বেদনা প্রাচীন
স্বপ্ন আমার সারা ত্বকে; স্বপ্নপ্রজ দিন ও রাত দাহ্য হলে আজ
পৃথিবীর পুরোনো মেয়েরা গেয়ে ওঠে গীত অকস্মাৎ সুরে কারুকাজ
পাখিরা ছিটিয়েছে সে গাঁথা আত্মার প্রতিভাসে বুকের খাঁচায়
অহর্নিশ পোষে যেতে দ্বৈত জীবন, নদী আসে দগ্ধ মোহনায়
কুয়াশার মুখ মেঘশয্যায় বিচ্ছেদের চাঁদ খোঁজে প্রতিভার পাপে
মেঘমাসে ফেরারি কবি প্রেম বোঝে না, প্ররতি বোঝে নিভৃত সন্তাপে
ঘুরে আসি তবু আনবাড়ি পথ... স্বপ্নভ্রষ্ট চোখ মসৃণ বেদনা
আমাকে চিনিয়ো ডাকঘর: সাঁওতালি সুর, প্রিয়মুখ বিষাদ অজানা
ভুলে গেলে পড়শি কথা সঞ্চয়ে জমে উঠে মিহি অভিমান ম্লান নীরবতা
খামই ভালোবেসেছি শুধু, হিম নীল অক্ষরে বোনা গান যতো কুশলতা

ঘুড়ি বেলার নিরীহ বালক পায়নি চিঠি বিকেল শেষে
কুড়িয়ে ফিরেছি শুধু যন্ত্রণা
ভুল
করে
এই
গ্রামে
এসে।




মেঘকাহিনী
.........

সে এক মুদ্রিত মেঘ আমাদের অন্ধ আবেগ

নিয়ে উড়ে গ্যাছে দূর ব্রজধাম

কেউ ভেবেছে চিহ্ন তারই এমতো এক সাদা শাড়ি

রাধিকারই বায়বীয় ঘাম

আমরা শুধু খোঁজ রাখি ঘর পালানো স্মৃতির পাখি

মেঘ হয়ে যায় অন্তিম প্রয়াণে !

মেঘের ভেতর প্রাচীন পাপে সুঁই সুতারই সন্তাপে

নিজের ছায়ায়, নকসিকাঁথার গানে!




বনশ্রী রোড -০২
............
(সোনিয়া চৌধুরী সুমি, প্রিয়রুচিতাষু)

যদি
দূর বাতিঘর যাবে বলে জলপথ চেনালে
জলেই দেখি বিপন্নতা আটকা কেন জালে!
জানি
তখন প্রতি ভোরের রোদে অতি প্রিয় ছুটিবার আসে
সে সকল স্মৃতিরা ত্রিবোধে আজো স্বপ্ন ভালোবাসে
আর
মৈথুনের চিহ্ন কিছু রাখি পাহাড়ের ক্যাম্পাসে
কুড়িয়ে ফিরি বিচ্ছেদ জ্ঞান দু’জনে ধু ধু বাতাসে
তাই
চুমুর দিনের শেষে জীবিকা উঠে এলে জলেই ভাসি, জলের প্রেমিক তবু জেলে!
শোন
এসো আজ তুলে রাখি অ-শিল্পিত রমণ
বালিশের নিচে চিঠি দিনগুলি গোপন
এই
নির্বাসনের পথে পথ দূতাবাসের গান
বনশ্রী রোড মনে রেখো করুণ অভিমান
শুধু
তোমার সমীপে এ কাব্যবেলা তোমার কাছে ঋণী
তোমার কাছে রাত্রি বিয়োগ ত্রি-কোণ ভূমি চিনি!


চিনি কিছু কচি পাতা পেলব উপত্যকা
ফের ডেকো মেঘমেয়ে। সাধ লয়, ফিরিবার। একা।



দোঁহা
......
ক.
প্রতিভার দোষে হয়নি কিছুই করা
বিক্রি হয়ে গেলে যাবতীয় আয়ু
সেই তথ্যই মেঘ জেনেছে, জেনেছে বায়ু
এই মহাভাদর কেন তুমুল বর্ষাভরা !

খ.
ক্রমশঃ ঝাপসা হয়ে আসে বান্নির পুতুল। আর
সেই বিরহ নিয়েই আমরা লিখতে বসি গান
একদিন সেই স্মৃতির বদলে কিনেছি অন্ধকার
আজ কিনি কবিতা ও পতিত পাতার অভিমান।

গ.
এই যে বললে জীবনের নাম রক্তজবা !
মৃত্যুর নাম কি তবে সাঁকো ?
একটা প্রমাণ, তবে হোক। অথবা
জেনো সাঁকোটাকেই তুমি ফুল বলে ডাকো।

ঘ.
এই বিরহ আমার নয় গাছের পাতায় লেখা থাকে
আমিতো নদীর ছেলে, জলেই আমার যাতনারে
ভাসিয়েছি সেই কবে! ভুল করে ডাকলে কাকে ?
জানো না কি সে মরেছে গত রাতে জলের প্রহারে !

ঙ.
কী করে তুমি লিখে দিলে দাসখত কী ভুল স্বাক্ষরে
ওড়ালে গাঙভরা জল সন্ধিতে বিশ্বাস করে
বলি কেন তুমি উড়েছিলে ওই নৈর্ঋতে কোন সে রহস্যে
সেই সব প্রশ্নগণ আজ ফুটেছেন এখানে, আমাদের বীজে ও শস্যে !

চ.
তোমার পাখিটাকে তবু, বড় মায়া করে রাখি
শুতে দিই, বসতে দিই, পেতে দিয়ে করতল
স্বপ্ন ও সুখ খেতে দিয়ে নিজে খাই বিষফল
অথচ দ্যাখো এটাকেই পরকীয়া বলে ঝিঁ ঝিঁ ও জোনাকি।।

এবং. আমি তবু বংশীওয়ালা রক্তের প্রণোদনায়
কাব্য ও স্মৃতিবিজ্ঞান পড়তে যাচ্ছি দ্বারকায়।



জানি কেবল ক্লান্তি পথিক
...................

নদীর কিসের দুঃখ অজানাই থাকে
পাহাড়ের কষ্ট কেমন বোবা আর্তি
কতোটা যন্ত্রণা সাগরের ঢেউয়ে চঞ্চল আর্তনাদ
আমি জানি না আকাশের বেদনা কতোটা নীল, গাঢ়
বৃষ্টি কি আসলে অশ্রুপাত!
বৃক্ষেরা কি তবে বিরহের উপমা?
আগুন জ্বলে সে কোন দহন জ্বালায়?
ঝরাপাতাদের কান্না কোন সানাইয়ের সুর-থাকে অজানা
জানি কেবল ক্লান্ত পথিক একদিন জেনে যাবে শুভঙ্করের ফাঁকি
জীবনপুরের ট্রেন ধরে চলে যাবে প্রাচীন প্রেমের দিন।



তৃষ্ণাচিত্র -০১
...........

আয় তবে সহচরী পড়তে যাই প্রাথমিক জ্যোৎস্নায়
সন্তরণের গণিত ভুলে শিখে আসি ঘাসের ধারাপাত
আমাদেরও পাঠঘর ছিলো এক, পিতামহের দিন
এই যে এখন গাইছি অতীত, বাঁশির সুরে হাড়ের ধ্বনি
নিঃস্ব তো নই একেবারে, প্রাচীন ভ্রমে সবটুকু রোদ দেইনি উড়িয়ে
রোদেরও আছে অভিমান শোকানলে পোড়ে কন্যা ক্রন্দসী
শোকের অধিক ভালোলাগে পাপ কাহিনী সন্ধ্যায় শুনতে বসি
কুমারী নদী বেড়াতে যায় ঊরুমূলে তৃষ্ণা বয়ে নিয়ে
দ্রাবিড় পুরুষ তৃষ্ণা বোঝে... সুপারি স্তনের স্মরনি
ফসলের মৌসুম এলে এবার শুধিবে হরপ্পা শস্যের ঋণ
বিষাদ দৃশ্যে মিথ্যে কতো সেলাই হবে মনু ব্রিজের রাত?
আমার প্রেমিকা তবু শরীরবিদ্যা পড়ে রাত্রিকালীন সংজ্ঞায়!



ছায়া
....

সে গল্প তো মনে আছে . . . রূপকথার মতো মখমল
কী ভীষণ প্লাবণের তোড়ে ভেসে গ্যাছে আমাদের বাস্তুজীবন !
আজ পরিচিত শয্যায় নেচে ওঠে অচিন কায়া
কপালে জন্মদাগ নিয়ে আমি বসেছি রাজাসনে এইবার
তবু শস্যপুত্রের মনে পড়ে যায় নদীতে এখনো দহনের দাগ
এখনো বিকেল দীর্ঘ হতে থাকে প্রপিতামহের ছায়ায়।



প্রাকৃত বেদনা
..........

কৈশোরের সাহস নিয়ে পথে নেমেছি এই ঘনরাত্রি. . .
স্রোতের প্রতিকূলে ভাসা কতোদূর ডুবুরি তুমি ?
বৌ বৌ খেলায় স্বপ্নের পাখোয়াজ ছিলো আরণ্যক বিকেলে
তবে কেন এই বচসা জীবনের নাম বনভূমি না কি মরুভূমি!
আমাকে দেখে হাসো কেন বেবিডল আলিশা?
আমি কি খাঁচার পাখি. . .। হাট ফেরতা কিশোরের হাতে!
স্নান ঘরে দেখেছি তো বেআব্রু উর্বশী স্তন
অতএব, নদী ভাষান্তরে বৃষ্টির স্বরলিপিগুলিই থাকে
আরও কিছু বেদনা এই সুযোগে দস্যু হতে জানে



ভাবনা
....

মাঝে মাঝে মনে হয় পুরাতন মুখটা বদলে ফেলি
আবার ভাবি আত্মজ দহন এসে কী করে চিনবে আমাকে!




চামেলীবাগ
......

আসলে কেউ সুখী নয়। পথ দুঃখী। পা দুঃখী।
আমাদের সমূহ যাত্রা তবু চামেলীবাগ মুখী!




ধ্রুপদী রাত চুষে নেয় চাষীকন্যা
..................
জোছনা খুলেছে পালক তার
নিদারুণ রাত্রিতে
মহুয়া সহবাসে
মাতাল দূরের কোন পাহাড়

বিরহনগরে রচিত মূর্চ্ছনা
ততোধিক বোঝে সে
স্বপ্নমন্ত্র ভালোবেসে
ধ্রুপদী রাত চুষে নেয় চাষীকন্যা।



ছুটে যায় ধাবমান ট্রেন
.............

আজ কারা যায় নকশি কাঁথার মাঠে? কারা গায় কাব্য কলার গান!
একদিন স্বপ্নের প্রাথমিক স্রোতে জীবনের এমন বহু অর্থ জেনেছি
সারা গ্রাম জুড়ে স্বপ্নবসতি. . . চৌকাঠ ডিঙালেই নিকানো উঠোন
ঝিঙেফুলের বিদূরতা, অমন দূরে নিজেকে গেঁথে ‘চন্দনী’ প্রার্থনায়

ছুঁতে গেলেই পেয়ে যেতে নীল নীল স্নায়ুর ভেতর স্বরচিত অবসাদ
তুমি দ্যাখোনি সই; এতোকাল পর আজ মনে পড়ে ব্যর্থতার ধারাপাত
আকাশের গায়ে গায়ে ধনুকের নব্যভাষা. . .
ফেরারি পাখিরা তবু মনে রাখে বিপন্ন পালকের আর্তি

নদী শুধু কিঞ্চিত বোঝে জলের অতলে নিঃস্ব মাছের দাহ্য রোদন
আমিও নিঃস্ব বড়ো, স্বপ্ন ছাড়া বুনিনি কোন বিকল্প শস্য
শেষ রাতে তাই বনশ্রী রোডের করুণা নিয়ে ছুটে যায় ধাবমান ট্রেন
স্টেশনে তখন বন্ধ্যা রাত আর ব্যর্থ তীরন্দাজ একসাথে ঘুমোয় !




সাক্ষী
.....

কেবল ওই জ্যোৎস্না জানে জ্যোৎস্না আমার সই
স্মৃতি ভোলে বাউলপরান ক্যামনে গৃহী হই

গৃহ জানে- অজানা বিষাদে শূন্য গৃহাঙ্গন
রাতের কাছে নেই কেন সেই বিরাগী জীবন

তারা জানে, তারাগুলো গর্ভজাত ভাই
কোন ভুলে একাকী কিশোর ভুল পথে আজ যাই

স্বপ্ন জানে কোন ছলনায় বুকের কাছে ঘুমায়
কোন বিরহে স্বপনেরাও পঙ্গু হয়ে যায়

প্রিয় পাখি লেখেনি শিস এইবার জানলাম
ভুলে গেছে বন্ধুরাও পরাজিত নাম



নোনতা জলের উপকথা
..............

একদিন বন্দীত্বকে ভালোবেসে প্রিজন ভ্যানে উঠে পড়েছিলাম
একদিন সারা শহর চষে বেরিয়েছি একটা নীল বোতামের খোঁজে
একদিন দূরের ট্রেন তুলে নিয়ে গেছে অপুষ্পক স্বপ্ন সকল
একদিন জীবনকে ভালোবেসে রাত ভর কেঁদে গেছি দুর্বিনীত পাতক !

তখন শ্রাবণের পূর্ণিমায় বলা হয়ে গেছে নোনতা জলের উপকথা
তখন বন্দী ক্রীতদাস ভুলে যায়নি বন্ধুদের নাম
তখন শীতের শৈশব লাল লেপের কাছে সকল উচ্ছ্বাস
তখন দোষী দুইপ্র’রে খইচূড়া গাছে নেমে আছে ভয়ের নারী।
একদিন বন্দীত্বকে ভালোবেসে

একদিন রক্ত ঘামে মাখামাখি বেয়ারিঙে কেটে গেছে পা
একদিন পড়শি মেয়ে শুনিয়েছে সাপে কাটা বিনোদের কেচ্ছা
একদিন ঘুড়ি কেটে গেছে বলে ভাত খায়নি অভিমানী কিশোর
একদিন বুবুর বুকের কাছে গুটিসুটি, দেশে এসেছে অচেনা বলা!




আর এক্ষণ
বেদনারে ভালোবেসে পুড়ে গেছে আস্ত একটা জীবন।





লুরা পর্ব
..........

ভাবো তো দেখি একবার তুমি ফের লুরতে যাচ্ছো হিলঞ্চি বিলে
উন্দুরের গর্তে হাত পুরে পেলে হারানো ধানের ছোঁছা!
বিফল বেদনায় ফুটছে তাই নোনতা ফুল কেচমা দুটি দিলে
আর ওপচালো জল অবিরল, তবু যাচ্ছে না মোছা!

কিংবা যে রাতে তুমি ভুলে গেলে সূত্র মৈন মৈন খেলতে গিয়ে
চাঁদের প্রতারণায় আমিও হয়েছি বেফানা সমানে সমান
জিনিপোকার কাছে সমূহ অন্ধকার বন্ধক দিয়ে
আমরা রাঙিয়ে নিলাম ফের পরস্পরের রূপদুয়ারি আসমান!

এখন আবার এইসব কথামালা ভুল কাগজে লিখে লিখে
আমাদের দুইপ্র’র চলে যাচ্ছে তোমাদের সন্ধ্যার দিকে!
রাতের ভেতর জন্মাচ্ছে কিছু জন্মের আঁকিবুকি
বলে দিচ্ছে সব, কারা কারা জন্মের অসুখী

সে তালিকায় আমিই থেকেছি প্রথম, সবশেষেও আমি
হিলঞ্চিতে ফিরবো বলে এসে ফের ভুল স্টেশনে নামি!



আততায়ী প্রণোদনা
............

কী গান গাহিলে শেষে এই মিলন ও প্রণয়গাঁথা জ্যোৎস্নায়
আমি তার করি নি অনুবাদ, তবু জেনেছি যেটুকু বাকি
আমাদের গোপন গহন এক আততায়ী প্রণোদনায়
পৃথিবীকে একলা রেখে আমরা দু’জন বিষাদঘরে থাকি!

কার শিয়রে কে রেখেছি মাথা, কোন্ চোখে কার জল
কার ঠোঁটে ওষ্ঠ রেখে কে মরেছি প্রথম
আগুনের ধর্ম মেনে ; বসে থেকেছি নিশ্চল
পাহাড়চুড়োয় নেমে গেলে বর্ষানিদাঘ ঝমঝম।

আজ আর কিছু মনে নেই, মনে নেই কিছু-ই
কী করে ফিরেছি দু’জন অনূঢ়াবৈভব রাতে
চাঁদ নেমে গেলে চাঁদপাড়ার মাঠে, চন্দনী অথৈ
ভাসিয়ে নিয়ে গেছে আমাদের, দূর দূর আশ্চর্য তফাতে।



নিশিন্দা মেঘের বাতিঘর
.............
একটা ভোরবেলা পাখির মতো গেয়ে উঠলে নিজস্ব ঠোঁটে
একটা রাতের যাতনা মিশে গিয়েছিলো কিন্নর কুয়াশায়
একটা স্বপ্ন সে বার ভিখিরির মতো খড়খুট খুঁটে খুঁটে
উনুনের পাশে বসে দেখছিলো দাহ বলক জাগানো মুগ্ধতায় !

এই দৃশ্যে তুমি রাখোনি আমায়, আমি ফিরেছি রিক্ত
ডানা ও পালকে সঞ্চিত যে বিবিধ বেদনা, তারও অধিক
বিরহ নিয়ে এক যাতনাগাছ ভুল জলে সিক্ত!
ফুটায়েছে বিদ্যাপতি ফুল, বলেছে এ বিচ্ছেদেরই প্রতীক।

এ রকম গল্পে তুমি রাখোনি আমায়, আমি ফিরেছি একা !
শঙ্খের ভেতর জমানো নিষাদ অপ্রস্তুত বালির কাছে
পড়ে র'লো কয়েক জন্ম ; আর দেখো, কিছু মৃত্যু নীল তটরেখায়
পরিশ্রান্ত জাহাজের মতো তবু নোঙর করে আছে!

কিছু গল্প তবু বাকি থাকে- কিছুটা অর্ধেক বলা
অর্ধেক আঁধার রেখে বাড়ি ফিরে যায় পৃথিবীর শেষ বাতিওয়ালা।


আছি, বিগতের কাছে নত
.................
আমি আছি বোন
অন্ধ ভীষণ প্রহেলিকা পেরিয়ে
গৃহস্থ উঠোনের সনাতন দাইড়ে
দুঃখ প্রবণ গাঁওগেরামের কেচ্ছা সমেত;
সকলের ভাই সেজে শুনছি সহোদর সংগীত।

হাড়ের ভেতর পুরে শঙ্খের নিনাদ
কায়ক্লেশে নিজেকে টেনে নিয়ে ফি সন্ধ্যায় হতেছি রিক্ত
মৌনতৃণ তাই পুঁথিপুরাণের করুণ রাখাল, গোপন
প্রহসন মার্বেলের মতো গড়িয়ে দিচ্ছি
আছি বিগতের কাছে নত, ব্রাত্য গল্পঅলা

তুমি বোন কেবল তুমি’ই
দেখলে সাপ, তটস্থ মৃগয়া, ফাঁদ, প্রতারণা
মানুষের জন্মের পূর্বে ও পরে
সে কেবল ফিরতে পারে নিজের কাছেই
জগতের সকল কেচ্ছা তাই পুনরাবৃত্ত
তবু তুমি বোন, তুমি জানালে চিতার বাঁপাশে এক শূন্য আসন
জানলে, আমাকে হত্যা করে তোমাকে বশে পেয়েছে উত্তরাধুনিক দস্যু।



ধুলোগ্রাম প্রাইমারি ইস্কুল
................
অকাতরে হারিয়ে গেলো অগ্রন্থিত সব ঘুমদৃশ্য!
চোখের পাতায় বসেছিলো চড়কপূজা ; তখন পৌষকাল
শীতের সমস্ত মহিমা ফুটেছিলো স্কুল পথের পাশে
পায়ে পায়ে লেগে গিয়ে বেজেছিলো মন্দিরা, তখন কীর্তনরাত

ভালোবাসতে গিয়ে সেই বার-ই প্রথম জানা হলো তোমার নাম
পরানের গভীরে পাওয়া চিরকালের পাখি তুমি-পঞ্চপূর্ণা
ছত্রে ছত্রে কেবল স্মৃতিচর্চা-যদি স্রোত ও নদীর কথা বলি
এইক্ষণ জল নেমে গেলে, নেমে গেলো নাও ও ঘাট, পইঠা

শত শত টাইমফুল ভ্রম জন্মের ভার নিয়ে অবনত
প্রাচীন পৃথিবীর দরদালানে জন্মানো সব নিবৃত্তির গান
তখনও প্রস্তুতি ছিলো কণ্ঠ ছিঁড়ে গেয়ে দেবার, ঘুড়িগীত
দু’একবার বুঝি বা উড়েছিলো সুতো; ছেঁড়া-বিধবা নাটাই

থির থির করে বেঁচে থাকলে হৃৎপিণ্ড, কুহুকুহু বোল
পরের বার রচিত হবে পালা-‘ধুলোগ্রাম প্রাইমারি ইস্কুল’



মৃত্যুর মহিমা
...........

এইসব ঘর-দোর, টিনের দোচালা-আমি যদি না’ই থাকি একদিন!
নক্ষত্রের ইয়ার-দোস্ত ; বিন্দু হয়ে জ্বলি-তোমার হাতে পার্থিব দূরবীন
সবুজ মখমলের মতো সন্ধ্যায় প্রস্থানের যতো বাণী বাজে
এ-পাড়া, ও-পাড়া ঘুরে আসা এক বিষণ্ন এস্রাজে...

আমের মুকুলে মকুলে সে কথা ধুলো হয়ে লেগে রবে
যতোটা তুমি পুষেছিলে প্রেম, জন্মের অধিক গৌরবে
আমরা তাই যৌথ ভেসেছি এক বর্ষায় নাইওরময় পানসিতে
স্বভাব দোষে তুমি ভুলেছো সেইসব এই ম্লান শীতে

আমি তবু শীত হয়ে বসে দেখি সকালের ডানা ঝাপ্টানো
গল্প বলার ছলে তুমি ফের সেই বর্ষার দিকেই টানো!
কতোটা নিরীহ আমি, নতজানু এই শোক প্রবাহের কালে
না জেনে সেইসব গল্পদের তুমি পুষেছো পাঁজরের আড়ালে।

পাঁজর খুলে আমি ফের উড়ে যাবার গল্প শোনাই
এই সকল ঘর-দোর, পুবালি হাওয়া-তবু আমি যদি আর নাই!
মৃত্যু বলে অযথা তুমি দিয়ো না কোনও গালি
মৃত্যুর মহিমা জেনেছে শুধু এই চৈত্র ও চৈত্রালি।



যৌথ ভুলের দিন -১
...............
রোদের বদলে আজ দেখি চাঁনমুখ ফুটে আছো আমাদের যতো ঘাসে! গতরাতে দেখা স্বপ্নটা তাই নতুন করে পড়ি, ওই যে আমাদের ঘরলাগোয়া তোমাদের দোচালা। মৈন মৈন খেলবে বলে বলে তুমি এসে দাঁড়ালে দাইড়ে। চোখ বন্ধ করে ছুঁড়ে দিয়ে মৈন; মন্ত্রের মতো গেয়ে উঠলে সন্ধানীশ্লোক পুবে গেলে পাবে চান পুন্নিমার। দক্ষিণে গেলে হাওয়া। উত্তরের মৈনগুটি, পশ্চিমে যাবে না পাওয়া!

এমনই বেবুতা আমি তবু পড়ে যাই পশ্চিম-ফাঁদে !
হাড়ের হার্পুনে বাজে ভুল , ভ্রম ফরিয়াদে...



স্বপ্ন বিষয়ক আরও এক
................
মলিন স্বপন গায়ে দিয়ে ঘুমিয়ে গেলে বয়সী গ্রাম সকল
মসৃণ গালের পাশে আগুন লাগে, চন্দনী অবিরল !
পাখিদের ডানা থেকে হিম ঝরে গেলে সন্তরণ গুণে
সেই শেষবারই তেপান্তরে পুড়েছি তোমার আগুনে !

স্বপ্ন দেখে টান দিলে বুকে। কাতর ঘাসফুলের কাছে অভিমানী নাকছাবি। জ্যোৎস্নায় ভেসে ভেসে ফিরেছিলে গৃহে। শ্মশানে আমার ঘুম তবু ভাঙে নাই ! চাঁদমাখা এক পাণ্ডুলিপি অপ্রকাশিত থাকে চাষীকন্যা ! তোমার বুকের মত পেলবমাটি, পুর্ণদৈর্ঘ্য বেদনায় কেবলি শস্যে জন্মায়। চন্দ্রহাত চাষীপুত্র ভুলে গেলে লাঙলমাত্রা রমণের ভিন্ন অর্থ। পথগুলো আর চেনেনা পথ। নদীও না নদীকে। তোমার নকশিকাঁথার বই অপাঠ্য রয়ে যায়। ভুলে যাই আমার গ্রাম কোনদিকে! কী করে এ
সন্তাপ উড়াই ! স্বপ্ন দেখে টেনেছিলে বুকে। আন্ধার দ্যাখো নাই !



ডানা
....
বিস্মরণের কালে তুমি ফের গাইলে এই গান! পথে পথে ছিলো যতো তৃষিত ধুলো, তারা সব আজ মেতেছে বহ্নিহরণ উৎসবে! তোমার করুণায় একদিন ডানা পেয়েছি। শ্বাসের বদলে পারিজাত হাওয়া ! সেই মহিয়সী কথারা আজ সন্তরণের দোকান খুলেছেন। তাতে সাজানো যতো কেচ্ছা, রক্তসংরাগে। আমি কৃষকপুত্র, বাণিজ্যের সূত্র জানি না! ভাবি, যদি সেই পূর্ণিমা আবার আসে ইতিহাসের বাঈজীর মতো। যদি আবার কেউ যায় মৃগয়ায়. . . হরপ্পার হলুদ হরিণ তখন একাকী !

দ্যাখো, সেই লোভে তোমার দেয়া ডানা খুলে রাখি !




ব্যর্থ দুপুর, অরুণাক্ষ রাতের মতো
......................
দুপুর
সেই পুরাতন দুপুর। রোদ গড়িয়ে যায় মথুরা নগর। আর আমাদের ছিলো যে ছায়া, রূপজ বিন্যাসে তারা সব উড়ে গ্যাছে পাখোয়াজ হয়ে। তবু কী নিদারুণ বেদনায় আমরা ক’জন মধ্যবিত্ত পাতক মার্গীয় প্রেম খুঁজি নগরের পুরাতন পথ ধরে... ও প্রান্তরে যা কিছু আছে, তার সব কিছুই হয় স্বপ্নের অনুসঙ্গ। ফলত আমরা নিরন্তর পরাস্ত হই পাতকী প্লাবনে। আর অই প্রলুব্ধদিন ভেঙে সবুজ মেয়েরা যখন ইশ্কুলে যায় আমরা ভাবি এবার উঠে দাঁড়াবেন অরুণমিত্র। যেমন দাঁড়ান...। দাঁড়াতে গেলেই ভেঙে পড়ে নীরবতা। মফস্বলের কবিরা জানেন কোথায় নির্জনতার শ্রাদ্ধ হয়। আমরাও যাত্রা শুরু করি ঈশ্বরের প্রণয়বাড়ি। কোথাও কি তবে বাজে দুপুরের ব্যর্থ মৃদঙ্গ? পৃথিবীর প্রাচীন আর্তনাদ?

রাত
রাতগুলোও তেমন। কাশবন থেকে ভেসে আসা আটপৌরে স্তব্ধতা লেহন করে আমার ঘাসের চিতা. . . রাতের সাথে টানাপোড়েনের যৌনপাঠ। পায়ের স্যান্ডেল ক্ষয়ে গেলে শতাব্দীর ব্যর্থতা নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে আমাদের গ্রাম। আমার জেগে থাকা নিশাচর ট্রেনের যাত্রী হবো বলে। এইবার আমি গেঁথে নেবো আমাদের ছাপোষা সন্ন্যাসে... প্রিয়রঙা জোছ্না... উড়োপাতার জর্নাল। কখনোই ওভাবে যাবো না, যেভাবে মানুষ যায়। রাতের ভেতর হেঁটে যাবে ফিনিক্স পুরুষ।



সন্ধ্যারা অমনি হয়
............
এবার সন্ধ্যাদের কথা বলি। তারা নিশ্চুপ নেমে যায় স্বপ্ন তিথির সান্নিধ্যে। দৃশ্যত তারা আমাদের বৃদ্ধাঙ্গুলি দ্যাখায়, যেন তারা বংশিবাদক। আমরা মাতোয়ারা। মাসিরা অপেক্ষায় থাকে প্রবারণা পূর্ণিমার। পাখি সব রেখে যায় বিগত-ছবি সোনামুখী মেয়ের কাছে। কুলুলুলুতে গ্রাম নাচলে হাঁসের পিছনে ধাবমান বোন। সে সন্ধ্যাতারাকে বলে দুই বেণীর বিন্ন্যাস। আর পাখিরা ঘরফেরতা, জেনে নেয় শেষবার কবে তারা দেখেছে এমন দিনপাত!

পুনশ্চ পাঠঃ সন্ধ্যা যেন আমার বড়দি’। সে কপালে টিপ পরে। গোধূলি রঙা। পথ রেখা অস্পষ্ট হলে সে ভাবে সন্ধ্যা তার গোপন প্রেমিক। আমরা তাই সন্ধ্যাদের জয়গান গাই।


একটি মৌল কবিতা
.............
এই পথেই তবে ফিরিতে হয় পুনর্বার। যাবার বেলা কে ডেকেছিলো, আয় পাখি আয় মুখরতা; মনে থাকেনা। এই যে ভাসমান, এই স্বপ্নক্ষুধাতুর বিষণœ বারোমাস-বান্নি থেকে কিনে আনা পুতুলের মতো তুলে রাখতে হয় স্মৃতি অস্মৃতির ছিক্কায়। গহিন হৃদয় খুলে রেখেছিলাম এক হাজার বছর। হাইঞ্জাবেলা ফিরে দেখি তবু পথ মনে রাখে নাই দুঃখবতী মেঘেদের গান !



স্মৃতি বিষয়ক হলদে খাম -০১
.....................
আমার পর আরো একজন আমাকে যে বোঝে
গোপনে অনেক দহন, যেমত মৌনতায় বাজে



নিপু ভাই # প্রিয়পরানেষু
.................
...তারপর জানলেন নোনাজলের ইতিবৃত্তান্ত? পাতারা যেদিন ঝরেছিলো শোকার্ত বিন্যাসে; আমরা কেবল জমিয়েছিলাম অট্টহাসির দুপুর!
সেই চৌরাশিয়া রাত . . .রাতের ভেতর আমাদের হাহাকারমালা। লেইক রোডে ব্যর্থ প্রার্থনা; আপনি বলতেন পাথর পুষে যাও। আর আমাদের ভবঘুরে স্বপ্নেরা নগরে এসে হোঁচট খেলে, বাউণ্ডুলে বাতাস কানের কাছে শিস দিয়ে গ্যাছে, মিছে এ জীবন ! আজ পুড়ে যাই, কেন যে সেদিন বিলিয়েছি অমন অরুণাক্ষ দিন ! যদি ফলাফল চান; দেখবেন, ঘাসেদের কাছে কিছু নীল ফুল; তার কাছে পড়ে আছে আমাদের অব্যয় পৌরাণিকী! কে তারে স্পর্শিল বিরহী সম্পূরকে! জানা হবে না এই জন্ম। জানা হবে না আমাদের শস্যময় প্রান্তর কেন অধিকন্তু শস্যহীন. . .। আমরা কি তবে বাতিল বান্ধব, এই প্রাবৃষ্য বেলা!

ইতি
সুমন

পুনশ্চঃ যে একদা গাঁথিয়াছিলো স্বপ্নাদ্য নোঙর, তাহারে কুশল জানাইবেন।



আত্কা পাওয়া দুই
.............

১. ঠিকানা যেন কী! আমরা স্বপনপারে থাকি। স্বপ্ন ফেরি করে খাই। সন্ধ্যা নেমে এলে দাইড়ে মনের কোণের বাইরে স্বপ্নরেণু উড়াই। দূরে ঢেউ সম্প্রদায়, আমরা তাদের আত্মীয় জেনে স্বপ্ন কিছু বিলাই। যে আকাশ আমাদের পাড়ায় রতি খেলতে আসে। বলে উপহাসে, পানি নাই পুকুরেতে তবু পাতা ভাসে ! ধৈবত ভালোবেসে তাকে স্বপ্নপোলাও খাওয়াই ! আর প্রতি হাটবারে তন্দ্রার ভেতরে স্বপ্ন কিনে আনি। জানি, এ জীবন ফড়িঙের, ফেরিওয়ালার। তাই এই বিভীষায় ঘুমে ও তন্দ্রায় পুড়ি স্বপ্ন চিতায়!

২. আমি কূলহারা এক কলঙ্কিনী বলে যে নদী নাইতে গেলো সায়রে সন্ধ্যা তারে তাড়া করে ক্লান্ত বানায় শস্যও বীজের কামনায় ফুঁসে ওঠে পৌরুষ রক্তমাখা ন্যাকড়া দেখে বর্গি বেহুশ বোঝে তবে বিশেষ দিন হয়তো হবে লাজুক রমণীর ! ভেঙে পড়লে তীর ফিরিতে ইচ্ছে হয় ঘরে শরমের চিহ্ন তবু লেগে আছে কাপড়ে! লাল টকটকে খুন ! ধর্ষিতা এই নদী আমার গত জন্মের বোন।



ব্যাখ্যা ক্লাস সেভেন অনঙ্গ বৌ
......................

মূল
তোমারে একদা দেখিয়াছি অনঙ্গ বৌ
আমাদের পোয়াতি স্বপ্নের কৈশোর

বিশ্লেষণ

আলোচ্যাংশে সেইসব চেনা দৃশ্যরা খেলা করে। প্রলুব্ধ আত্মার গহিনে ক্রীড়ারত জল . . . জলের প্রহার ! এ বড় নিষ্ঠুর খেলা, বাতাসেও তার মুগ্ধ প্রবাহ ! নদীতে, ডাঙায়, চিতায়, স্মৃতিনাট্যম মুদ্রায় নেচে ওঠে সেই বধূমুখ ! আর কোন নদী নেই . . ধুলো নেই
কবি আর, স্মৃতি অধ্যুষিত রাজ্য পাটে !

মন্তব্য

স্মৃতির উদ্ভাসন দেখে তোমাকেই বধূ হতে বলি
পুনশ্চ স্মৃতিপুর যাই। হাতভর নৈবেদ্য; স্মৃতিময় অঞ্জলি !



সওয়াল
........

এইবার দ্বিতীয় মৃত্যুর কথা বলি। মৃত্যুর উৎসব থেকে নেমে আসেনি কেন জীবনশবের চাঁদমারি। বলি একদা বিনাশবেলায় পথগুলো কেমন করে নিয়ে গিয়েছিলো নিরুদ্দেশ যাত্রায়। রক্তের ভেতর ছলাৎ ছলাৎ দেখে কেউ কেউ বলেনি কি, আসলে ছেলেটাকে দিয়ে হবে! আর গার্লস স্কুল রোডে সবুজ মেয়েরা আচমকা ভেবেছে নতজানু প্রেমিক। কেউ বা ফিসফাস করে বলেছেন, সত্যি সম্ভাবনা ছিলো! কেবল আমি জেনে গেছি লোবানের ঘ্রাণে আসলে পরাজিত মৃত্যুর কথাই লেখা থাকে! নব্বুয়ের পরাজিত কিশোর যেমন বাবার আঙুলে ছুঁয়েছিলো প্রথম নগরযাত্রা। তারপর কাশীনাথ রোড ধরে গড়িয়ে গ্যাছে বহু পঙ্গু সন্ধ্যা। তার ভেতর দিয়ে হেঁটে এসে আমি দেখেছি শহরে কোথাও কোন সবুজ কিশোরী শেমিজের আড়ালে তুলে রাখেনি আমার হারিয়ে যাওয়া নীল বোতাম। পূর্ণিমার বিশ্বাসঘাতকতায় আমি বরং নদীর কাছে নত হয়েছি প্রার্থনায় বহুদিন। নদী তার অক্ষমতা নিয়ে কেঁদে দিয়েছিলো একদিন। দুপুরগুলোও কম যায়না। ঢের দেখিয়েছে তারা তেজি রোদের স্বপ্ন। তৃষ্ণাতুর আমরা কিছু পাতক চৌমু’না চত্বরে নিজেদের কাতরতা ঢেলে দেইনি কি একটা রঙিন রুমালের জন্য? তবে কেন এমন অসহায় মৃত্যু? এমন পলায়ন? সখীরে আমার, বিশ্বাস করো আমি তোমাদের শহরে ঘুমিয়েছি জননীর জরায়ু ভেবে। তোদের শহরকে ভেবেছি বৃষ্টিবন্ধু আমার। নৈর্ব্যক্তিক বেদনা পুষেও গান গেয়ে হেঁটেছি তোদের শহরে। তবু কেন যে এ নগর উগরে দিলো আমাকে!


বিগত লোভ জাগিয়া উঠিলে পর
.....................

হিলঞ্চীর বিলে খুইয়েছি একটা আধুলি, ফের কালনী হাওরের হাওয়া এসে লাগে মখমল নিবিড়! আর আমি তন্দ্রায় সেই বয়ারের সুরে শিস তুলি। স্বপ্নে দেখি বিয়ের বাদ্য বাজে ভেলুয়া সুন্দরীর! বধূমহল কলসি ভরে তুলে নিয়ে গেছে এমনই কেচ্ছা কিছু বিগত! ভেট ফুলের লাগি কেঁদে উঠলে মা তুমি বলতে, বড় হলে লোভী হবে ঠিক। আজও লোভের ঘুঙুর খেলে রক্তের পাতালে কতো! স্মৃতিজ শ্যাওলায় ভরে ওঠে দিগি¦দিক। নদী তাই বন্ধ্যা হলো শুনি। ফের সেই আর্জি বুনি। বলি, লোভ বেড়েছে মা এবেলা আচমকাই! ও বেলা কেন ফের নাইওর যেতে চাই!


এলিজি রিটেন ফর চম্পকনগর
....................
শেষ চৈত্র। ঘেসোনীল আসমান। মুঠো মুঠো রোদ্দুর বড়ো বেশি নির্জনতাগামী। কুল কুল ধ্বনি বহে নদী সুরমা। মানুষের ঢল নেমেছে কীনব্রীজে। দেখবে এসো। একদিন তো অমাবস্যায় জোছনার উৎসব দেখে কেঁদে উঠেছিলে। আমি তো সেই অ্যাঞ্জেলোর ছবি। বহুকাল থেকে দাঁড়ানো হয়নি অচেনা গঞ্জে; ঝরা পাতাদের উৎসবে। দু’ আনার তালপাতা বাঁশি, ‘কে কথা কয় রে দ্যাখা দেয় না...।’ মনে আছে একদিন রাত্রিময় নিঃসঙ্গতা কেটে এক কামুতি শশীর কবলে পড়েছিলো চম্পকনগর গ্রাম। আমি সেদিন নীল পেঁচার ডানায় ভর করে আকাশে ভেসে গেছি। দূর বহুদূর। সহসা সন্ত্রস্ত হলো হৃদয়, আমিও তো ঘুণ পোকার কবলে...।


পথপাঠ
.......
পথ ও হাড়ের বেদনা যার ঔরসে তার প্রজ্ঞা লোভ হয় একদিন, পথিক বলে কুড়াবে সুনাম। শূন্যতার ওপারে কীর্তিপাশা তারপর অরণ্যপুর গ্রাম। আর সেই পরিভ্রমণ পায়ের ছায়ায়... পড়শিকন্যা বোঝে কিছুটা। কিছুটা না বুঝেই গেঁথে রাখে বেণীজুড়ে; নকশিকাঁথায়! পথ তাকে দ্যাখায় মুগ্ধতা। প্রতিবেশীজন বিভূঁইগীত... অন্য আরো কথা। নিবিড়তা তবু জানে না ছাই, কতখানি দূরে গেলে হায়! সন্ধ্যারা সব সই, ডাক বাক্স কেঁপে ওঠে মরাল গ্রীবায়।


পুনশ্চপাঠ
..........
আমি যদি আজ হেঁটে আসি দূর। আমি যদি আজ খাম
তুমি ফের ই-মেইল করো কুশল, বিকেলবার্তা ঘামগন্ধ অক্ষর
লেখো নীল লেখো রাত ঠিকানা ধাম
মৌন ঘুরে এসে তোমার পাড়ায় যাবো। দোতলায় তোমার ঘর।

নীচে যদি আমি শিস কাটি নীচে যদি আমি ঠায়
তবে জেনো সত্য আমি যাইনি আমাকে রেখে পথ বয়ে যায়!



আর্তি
......
গূঢ় সব পথ ধরে এসে আজ ভাবি-এমনও দিনে বুঝি মরে যাওয়া ভালো ! অন্ধরাতের ভেতর কী পাতা, কী কাণ্ডে যে স্বপ্ন চমকালো-তার ধরন এমন-ই! পূর্বাপর গাঙে যতো লখিন্দর ঢেউ; তাদের কোমরেও ঝুলে আছে মৃত্যু মুখর ঝনঝনি ! সাপে যারে কেটেছে সে আমারই পিতা ছিলো।

পাতায় পাতায় পড়ে ছিলো যতটুকু ছায়া, ঘাসের পায়ের নীচে আবাদী জমি। আমার কৃষক পিতা তাতে বুনেছিলো ভুলবীজ! আজ আমি তবে কোন শস্য বেচে যাবো দূর বাণিজ্যে ? পথ ভোলানো এক মক্কল পিছু নিয়েছে আমার। তাই বুঝি প্রতি রাতে ভুল দরজায় কড়া নেড়ে বলি, আমি এসে গেছি বোন!

এইসব প্রশ্নেরা জেগে উঠলে আমার নালিশাকের কথা মনে পড়ে। গিঁটের পর গিঁট দিয়ে তুমি রেঁধেছো মা। তার সঙ্গে কি বেঁধে দিয়েছো আমার জীবনের যতো দাগ খতিয়ানও? আজ তাই কোনও পরচায় মেলে না তারে!

কী করে বলো ফিরে পাই নিজ বসত? কোন অধিকারে?



লিখিতেছি চিঠি
..........
আজ এইখানে
প্রথম বর্ষার বানে
ছাড়িয়াছি নৌকা- কাগজের

আজ এইখানে
ঈশান মেঘের পানে
উড়িয়েছি স্মৃতি - মগজের

আজ এইখানে
পুরোনো দিনের গানে
তুলিয়াছি সুর- পূঁথিবাংলার

আজ এইখানে
গুপ্ত এক অভিমানে
লিখিতেছি চিঠি- ব্যথা সারাৎ্সার

আজ এইখানে
প্রতিবেশীরা জানে
জমিয়েছি কেন মিছে - প্রীতি ও প্রেম

আজ এইখানে
এই কবিতার মানে,
তোমার দরজায় এসে ফের দাঁড়ালেম ।



প্রাচীন চৌকাঠ
.........
ফের ঘুরে ঘুরে ফিরে আসি প্রাচীন চৌকাঠ
আমরা বেরিয়েছিলাম ক’জন শখের পর্যটক
ডুব ডুব ছায়া সন্ধ্যায় ক্রেতা সেজে বেহুলার হাট
দেখেছি সর্পবিষে আর নীলাভ হয়না কুমারী ত্বক

বেদেনিরা বরং বড়বেশি ঘরমুখী আজ
আমরা পাইনি তাই বহর... শস্য কীর্তন... শাড়ি
রোদের নিচে ঘুমিয়েছে গ্রাম-মোহন কারুকাজ
শিখে আসি শুধু বিচিত্র ছলনা ! ব্যর্থ সম্প্রচার-ই



এবার এসো শ্রাবণের নদী
.................

বসন্ত স্মৃতিকথা নিয়ে উড়ে গেছে ঘাসফড়িং
নিসর্গের চোখে জলের নহর দেখিয়েছো তুমি
রাতের ভেতর দেখি স্মৃতিকালীন গার্হস্থ্যভূমি
কিছু কিছু মুখরতা গুহা চিত্রেও ইদানীং

আরো দূরে, চম্পকনগরে দ্রৌপদীকথার বধূ
একা একেলা রাত্রি গভীরতা মাপে. . .
আহা নগর! কেতকী ফুল পোড়ে সূর্য তাপে
এবার এসো শ্রাবণের নদী. . . পদ্মাচরের ধু ধু. . .।



১.
জল দরবারে সাক্ষ্য দিতে এসে ঘুমিয়ে গেছি ফের প্রিয় মাছঘরে!
তোমার রঙে আর রাঙা হয় নি অনাবাসী এই উতলা রাতে
মানুষেরা সন্ধিবেলায় এসে ভুলে গেছে যেহেতু পুরাতন সাকিন
এই বিষাদিত নিদ্রা তবে ভালো- ভালো এই নুনমাখা চান্নীপান

কাছে এলে দেখতে পাবে ঠিক,শিরার ভেতর রেখেছি হাফ-সমুদ্দুর
তার নুন ও নোনতা পৃষ্টা এক, বিরহবেদনার হালখাতা ।
ভুল সাহসে দাড়িয়েছি সাপ্তাহিক হাটবারে
এইবার যদি বিক্রি হয়ে যায় সব, এইবার যদি তুমি কিনে নাও আমারে!

২.
আধারে কভু ফিরি নি বাড়ি, পাছে চাঁদের গতরে লেগে যায় দাগ!
পথের বাঁকে গাছেদের মেনেছি ইয়ার, তারা নিজস্ব স্বভাব সংকেতে
কাছে টেনে আবার ছুঁড়েছে দূর; তাতে যাহা গুপ্ত অনুরাগ
মিলেছে আর মিলায়েছে ফলাফল মন মজানো অংকে

আমি ভাঁড়ারে রাখি নি সঞ্চয়, শিল্লি মেরে চলে গেছে কাল
ফিরতি পথে দেখি তুমি দাঁড়িয়েছো মুদিত পুষ্পের লজ্জায় লাল
সেই চির রহস্যের ভেতর পথের ইতিহাস পেয়েছে গূঢ় ব্যঞ্জনা
নিরবতা? কার নিরবতা বলছে উঠে 'কেউ নয় আপনজনা?




১২৩৪৫৬৭৮৯
...........
জন্মই যখন দিলে মা, না হয় গাছ করেই জন্ম দিতে
রক্তের এই আনচান করা জ্বালা ভরে পাতার ধমনীতে
বেফানা জীবন পেতো বৃক্ষজন্মের মহিমা
বলি মা,
দেমাগী রইদে পুড়ে পুড়ে কিংবা প্রপঞ্চ বৃষ্টিতে ভিজে
জেনে নিতাম কে বেশী অনর্থক
আমার জন্ম, না আমি নিজে!

না হয় পাখি করেই দিতে জন্ম
পালকের নিচে লুকিয়ে ভুল জন্মের হাহাকার
উড্ডয়ন সুখে ভীষন তন্ময়
আমি; পঙ্খিচরিত্র ভুলে অভিধা নিতাম রাজার!

মনুষ্যজন্ম বড় যাতনার মা !
পাখি কিংবা গাছেদের সমাজে স্মৃতিদন্ড নেই
কিন্তু মানুষ?
ভুবন ভ্রমিয়া শেষে
ফের এসে
ঘর বাঁধে স্মৃতেশ্বরী নদীপাড়েই !

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন