বুধবার, ২৬ আগস্ট, ২০০৯

কবি আলতাফ হোসেনের কবিতা

একেকটি লেখা
............

একেকটি লেখা যেন মনে হয় খুব হয়, অন্য লেখা হতেই চায় না
লিখি শাদা পর্দায়, 'উহু' বলি, মুছি

আবার ধুসর আসমানে চোখ রেখে চলে শব্দ খোঁজাখুঁজি

আজ তো সন্ধ্যায় বসে, বসে বসে এখন দশটা, রাত
প্রিয় যে কবিটি একটি অরণ্যের, এতক্ষণে না জানি ক'বার বাজিমাত?

এই যে ষষ্ঠ লাইনটি দেখা হচ্ছে, এর সম্ভাবনা মনে হয় নিঃশেষিত
আমার ঘুমোতে যাওয়া মনে হচ্ছে এবার উচিত

অষ্টম পঙক্তিটি এসে বসে পড়ে। বলে, 'থাকব'। যায় না।



তখন ভূকম্প যদি
............
একদা যা ছিল, ছিল, এখন বলছ 'বন্ধু' হতে
যা ছিলে না তা-ই হতে, সে বরং আলাস্কাতে
গিয়ে আর...না, ফিরবে ধরো বছর পনেরো পরে
এখন ভূকম্প যদি আবার ফিরিয়ে দেয় মাটি...



এই একটা জায়গা আছে তোর
.................
আবার এমনও ভাবি
এই একটা জায়গা আছে তোর
যা-ই হোস অন্য কোনোখানে
সাধু কিংবা চোর
এখানে তো ওয়াচম্যান
ডে বা নাইটের
দস্যু বনহুর বা মোহন
যতদিন আসুসের এই পর্দা তোর
হোক না ইন্টেল, সেলেরন
এ নোটবুকের প্রসেসর
এখান থেকেই তোকে যাত্রা, ফিরে যাত্রা করতে হবে
আবারও জানতে চেয়ে যাত্রারই মানে
কোথাও ভোরের বেলা ছিল কি না সূর্য উঠেছিল কি না
না কি শুধু রাত্রি সবখানে
না হলে দুপুর কেন তপ্ত এত, এত দগদগে
রক্তগন্ধে শ্বাসকষ্ট এত
কালো কীবোর্ডের সঙ্গে হলুদ একটি জুড়ে জানবি তুই
ঠকা ঠক ঠক-এ



কেন এলি রে
..........
কেন এলি রে, ' ভালবাসিলি' হাসিমুখে আর
তরমুজ কেটে নিলি লাল টকটকে, অন্যহাতে
দার্জিলিং চা সাজিয়ে ' আজ যাও, ফোন হবে রাতে'
বেডরুমে ঢুকে গেলি, স্বাদ নিবি নতুন হল্কার...



সরোজিনী শুয়ে থেকে
............

সরোজিনী শুয়ে থেকে শোয় না যে সব আমি জানি
তার জন্মের আগে থেকে। দিচ্ছিল তাড়িয়ে বাবা মা-কে
'আমার জন্মেরও আগে সেই দৃশ্য দেখা সবখানি।'
তারপরও দীপ্তিকে ভাবতে গিয়ে কেঁপে উঠছি রাগে...


ফিরে এসেই না দেখছি
................
একজন ‘আত্মীয়’ দাওয়াত খেতে ডাকলে
রাকা আর আমি
আমরা গোলাম
আমাদের খেতে দেওয়া হলো পায়েস

আমরা খেলাম
খেতে দেওয়া হলো ডিমের হালুয়া
আমরা খেলাম
খেতে দেওয়া হলো কোরবানির খাসির কলিজা
খাসির মগজ
খাওয়া বারণ খাওয়া বারণ
আমরা খেলাম
কোনো কথা না বলে কোনোই কথা না বলে
ফিরে এসেই না দেখছি এমন ফাসবিন্দারের নীরব, স্তব্ধ ছবি!

(আসলে মত হচ্ছে আমার যে সকল শব্দেই উদ্ধৃতিচিহ্ন বসবে, আর ‘আত্মীয়’ শব্দের সঙ্গে দুটো করে, কিন্তু চিহ্নের এমন জঙ্গল তৈরি করাটা এক বিচ্ছিরি ব্যাপার!) - পদ্য-রচয়িতা।


শুভ্রা গানে মজলাম
..........

শুভ্রা গানে মজলাম, মরলাম
বেশ, তবে যা তোমার নাম
কেন তুমি বললে তাঁরই দান, তাঁর
কেন তুমি বললে তাঁরই দান, তাঁর
তোমার তো সুর ছিল, নিজেরই তো সুর, সব সব বোঝাবার!


পা ঝুলিয়ে
.........

জনে জনে বলতে চেয়েছি
শোনাতে চেয়ে পায়ে ধরতে বাকি রেখেছি
খুন করতেও এমনকি
আমাকে বলেছিলেন চারজন
তিন হাজার ছত্রিশবার
তবে তারও আগে থেকে শুনে শুনে
শোনাসংখ্যা নিশ্চয় লক্ষের ঘরও পেরিয়ে থাকবে
তারপর আজই দেখতে পেলাম চিনদেশের সেই তাও-ও বলেছেন:
দুনিয়াব্যাপারে
কী করে গুরুগম্ভীর থাকি
উল্টাপাল্টা সমস্ত যেখানে
আর আমার কাজ কী
আর আমার কী গরজ
টিলায় উঠে গিয়ে পা ঝুলিয়ে বসেছি


হাসান আজিজুল হকই ঠিক
...............
হাসান আজিজুল হকই ঠিক। না আমাদের মৃত্যুদিন জানতে চাওয়াটা ঠিক, না আমাদের জন্মদিন জানাটা। কিন্তু তা হবার কোনো উপায়ই রাখছে না মানুষজন। সব হিসাব নিয়ে নিচ্ছে, কম্পিউটারে যাতে ভরে ফেলা যায়। ‘মাপের মধ্যে’ রাখা যায় মানুষটাকে। অথচ দেখুন না কবি রণজিৎ দাশের ব্যাপারটা, আজ দু হাজার আটে তাঁর বয়স বত্রিশ, না হয়তো বিয়াল্লিশই, অথচ তাঁর জন্ম উনিশশো ঊনপঞ্চাশে। অদ্ভুত কাণ্ড নয়?
বা, ধরুন সদ্যপ্রয়াত সংবাদ সম্পাদক বজলু(র রহমান) ভাইয়ের কথা। তাঁর জন্মতারিখের সঙ্গে প্রকৃত বয়সের কোথায় ছিল বলুন সঙ্গতি? প্রকৃত বয়স বলতে ছুটে বেড়াচ্ছিলেন যেমন তিনি…
এইরকমই সব। সঙ্গতি থাকছে না।
এ কথাটা হচ্ছে অন্য মূল কথাটির বাইরে। মানে যে কথায় সচরাচর বলা হচ্ছিল, সারারাত্র নৌকা বাইয়া, রাত পোহাইলে দেখি চাইয়া গো, আমার যেইখানের নাও সেইখানেতেই আছে…


পাখি বলে
..........

এক বুড়ো এক বুড়ি থাকে এক ঘরে
পাকা ফল ঝুরঝুরে কখন যে ঝরে
ভাবে যতক্ষণ পারি হাত রাখি ধরে

পাখি বলে, যেন ওরা একসঙ্গে মরে


কবিতা কাগজে লিখি
............
কবিতা কাগজে লিখি, হাওয়ায় কাগজ উড়ে যায়
তোমার সকাল হলে পাহাড়ে বেড়াও ভেসে তুমি
তোমার দুপুর হলে তোমার শরীর ভরে ওঠে
বিকাল ও রাত ঘন হতে থাকে খর্জুর পাতায়...


শাশ্বতী
......
কমলাপুরের রেলগাড়িতে সওয়ার হয়ে জেনেছিলে 'সুবর্ণ' এ হেন
চাটগাঁ যাবেই যদি কখন পৌঁছবে ঠিক নেই
সাংহাই স্টেশন থেকে সাবওয়ে ট্রেনে চেপে বুঝেছিলে ট্রেন
পিপলস্ স্কোয়ারে পৌঁছবেই

উ দ্ দে শ্ শ বি হী ন



সিলভিয়া প্ল্যাথকে নিয়ে দুটি
.................
{কবি সিলভিয়া প্ল্যাথ স্বেচ্ছামৃত্যু বরণ করেছিলেন এ কথা সবাই জানেন। তিরিশের কাছাকাছি বয়সে। দুটি সন্তান রেখে গিয়েছিলেন : একটি ছেলে, অপরটি মেয়ে। ছেলেটি সেদিন, চল্লিশ পেরিয়ে, কবি না হয়েও (অথবা কে জানে, ছিলেন হয়তো ভেতরে ভেতরে কবি) একই ঘটনা ঘটালেন, মারলেন নিজেকে নিজে। সেই সূত্রে সিলভিয়াকে মনে পড়ে গেল। মনে পড়ল লিখছিলাম তাকে নিয়ে দুটি কবিতা এ জীবনে।}


সিলভিয়ার উদ্দেশে
............

ভেবেছি তোমাকে তুমি কবিতার জন্য বেঁচেছিলে

আর কিছু তোমাকে টানেনি, নয় স্বাস্থ্য, প্রাচুর্য না
অর্থের, তোমাকে জল নিজেই করেছে অনুভব
অ্যাসিডের নীল রক্তপাত দেখে তুমি হেসেছিলে,

যাকে দিয়েছিলে তুমি পদ্মগন্ধি একুশশরীর
রোমশ পাথর, শব্দবর্ণহীন পাষণ্ড সে
আমূল বসিয়ে দিল ভীষণ ধারালো এক তীর
লেখা তোর গাঢ় হলো ছিন্নকুমারীর কালো বিষে,

একা একা হেঁটেছ বিষণ্ন, ক্লান্ত, স্বস্থ, নির্বিকার
সন্তান চেনোনি, স্বামীকেও নয়, বন্ধুদের ছেড়ে
ঘরে ফিরে অনিদ্র কাটিয়ে রাত খুব ভোরবেলা
যখন এসেছে দুধঅলা তার বোতল বাজিয়ে
ঠুং ঠাং, কাগজ-কলম নিয়ে বসেছ সতেজ,
ভেবেছি তোমাকে তুমি আর কারো নও, কবিতার।

স্বেচ্ছামৃত্যু বোঝা যায়---তার জন্য তোমার প্রস্তুতি,
বুঝিনি তোমার লোভ কেন তৈরি করল শব্দদ্যুতি...


(লাজুক অক্টোপাস : মে ১৯৭৬)



সিলভিয়াকে নিয়ে আরও পঙ্ক্তি
..................
খুব ভোরে কফিকাপ নিয়ে
সে লিখে চলেছে দ্রুত
লেখা থেকে পরিস্রুত হয়ে
তাকে বাঁচানোর
মুচকুন্দ ফুলের পাপড়ি ছড়ানো মেশানো
মদশরবত দ্রুতলয়ে, ছন্দে, ফোঁটায় ফোঁটায়
তার গলা থেকে তার হৃদয়ে নামছে
সে কেঁপে চলেছে
যেন তার চোখ আরও চক্ষুষ্মান হয়
যেন তার হাত এক ধ্রুবজ্যোতি ধরে
যেন সবচেয়ে শ্যাম, উর্ধ্বগ্রীব জীবন সে পায় মুহূর্তেরও
কেননা তাকে যে শেষ করতেই হবে
রেখে যেতে হবে
মৃত্যুর নীলাভ চিরকূট


(বলি যে তারানা হচ্ছে : ১৯৯৮)


Sylvia Plath : Biography
...........................
Sylvia Plath 1932-63, American poet, b. Boston. Educated at Smith College and Cambridge, Plath published poems even as a child and won many academic and literary awards. Her first volume of poetry, The Colossus (1960), is at once highly disciplined, well crafted, and intensely personal; these qualities are present in all her work. Ariel (1968), considered her finest book of poetry, was written in the last months of her life and published posthumously, as were Crossing the Water (1971) and Winter Trees (1972). Her late poems reveal an objective detachment from life and a growing fascination with death. They are rendered with impeccable and ruthless art, describing the most extreme reaches of Plath's consciousness and passions. Her one novel, The Bell Jar (1971), originally published in England under the pseudonym Victoria Lucas in 1962, is autobiographical, a fictionalized account of a nervous breakdown she suffered when in college. Plath was married to the poet Ted Hughes and was the mother of two children. She committed suicide in London in Feb., 1963. Ever since, her brief life, troubled marriage, and fiercely luminous poetry have provided the raw materials for interpretation by a small army of biographers, feminists, memoirists, novelists, playwrights, scholars, and others.

Bibliography: See her collected poems (1981); occasional prose, Johnny Panic and the Bible of Dreams (1979); journals, ed. by T. Hughes and F. McCullough (1983); The Unabridged Journals of Sylvia Plath, 1950-1962 (2000), ed. by K. V. Kulil; biographies by E. Butscher (1979), A. Stevenson (1989), P. Alexander (1991), R. Hayman (1991), J. Rose (1991), and L. Wagner-Martin (rev. ed. 2003); J. Malcolm, The Silent Woman: Sylvia Plath and Ted Hughes (1994); T. Hughes, Birthday Letters (1998); D. Middlebrook, Her Husband: Hughes and Plath-A Marriage (2003); J. Becker, Giving Up: The Last Days of Sylvia Plath: A Memoir (2004); studies by M. Broe (1980), J. Rosenblatt (1982), and L. Wagner-Martin, ed. (1988, repr. 1997).

1 টি মন্তব্য: