শনিবার, ২২ আগস্ট, ২০০৯

কবি আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহর কবিতা




পলাশী
...................................

জিজ্ঞেস করো ঘোড়া হে উড়ন্ত অশ্ব তোমার পিঠে কে ভাসমান
জিজ্ঞেস করো প্রবর্তক পথিক অথবা গোপন রাজদূত কিনা
জিজ্ঞেস করো জিজ্ঞেস করো কারণ সম্মুখে আমাদের গণজমায়েত
কারণ এটি জানা দরকার আরোহীর আগুন আমাদের ভিটেমাটি কতোটুকু পোড়াবে।

জিজ্ঞেস করো হাতি হে উজ্জ্বল ঐরাবত কতোদূর যাবে
অথবা কাকে নিয়ে যাবে জিজ্ঞেস করো
জিজ্ঞেস করো কারণ সম্মুখে আমাদের ভোজসভা
কারণ এটি জানা দরকার কী সংবাদ ছিন্ন করে দেবে
ক্ষুদিরামের কন্ঠ।

ঘোড়া আসছে ঘোড়া যাচ্ছে। আমাদের গ্রাম্য চুল্লি ভরা
বিরামবীন বরফের স্তর।
ইংরেজ আসছে নবাব নামছে। আমাদের পিতা প্রপিতামহের
সমাধি কঙ্কাল।
আমাদের পলাশী বলতে আমার একটি বোন
আদিঅন্তে ভাতের থালা হাতে পথে পথে ঘুরছে
তার অনাগত সন্তানের নাম সিরাজদৌল্লাহ।


পানিপথ
..............................

দেহাবেশষ নিয়ে ফিরেছি ঘাটে । বংশচিহ্ন অপহৃত ।
পরিচয় বলতে শুধু আধপোড়া নাভিখন্ড
তার স্মরণে একলা মানুষ।
দূরে লালরশ্মি আগুন, উথ্থিত ঘোড়ার ফণা
মনে করিয়ে দিচ্ছে প্রয়োজনে সেও অজগর।
নদী নদী শূন্য প্রবজ্যা। ঘূর্নিজলে কানাইয়ের নাও
পাতালমুখো।
একদিন নিদ্রাশেষে ঘুটে কড়োনির মেয়ে
ঘেমে ওঠা ভাতের হাড়ি স্পর্শ করে দেখে
মাঠে মাঠে শস্যের যুবক ভস্ম হয়ে গেছে।

অশোক গাছের নিচে রাঢ় বাংলার মেলা
তখন সবুজ শীতকাল
হিম জামার নিচে আগুনের জন্ম
অর্থ্যাৎ অগ্নি বাসরে বাল্যবিবাহ।
বধূ দাড়িয়ে আছে কুয়োতলার কাছে
কিন্তু তার কাছে এমন সংবাদ নেই-
যে সে বিছানা সাজাবে।
শুধু কুন্ডলিত রণধ্বনি ভ্রুণ বিকাশে দেখা যায়
মোঘল বধে উজ্জীবিত শেরবাহিনী।

এই পথেই শুভযাত্রী বরপুত্র অওদিপাউস আসবে
অপেক্ষোয় আছে ক্রমাগত বিবাহযোগ্যা মাতা
হায় নিয়তি সন্ততি সবকিছু পানিপথে লেখা
এখন এই গান ঘুরে ঘুরে আসে
চড়ুইয়ের মতো নাচে
আমি দৌড়ে যাই পুত্র দৌড়ে যায়
পানিপথ গন্ধম নামে গড়াগড়ি খায়।



সতীদাহ
...................

এ আগুন আমার নয়। এ মড়াও…
আমার যা কিছু তা মাটির শানকিতে
সরল ভাতের সাথে মিশে আছে
প্রার্থনার নামে।
জঙ্গলের সরীসৃপ পুকুরের জল
উঠোনে উঠোনে প্লাবনের কীর্তন
লন্ঠনের নিচে সন্তানের মুখ-- আমার।
তাই বলেছি এ আগুন আমার নয়, এ মড়াও…
আমি সতী নই সতী নই। বিষ থেকে বিষের ভান্ড
আমার নারী অঙ্গে লেগে আছে
আমি মন্দিরের কাছে এক মাঝির ছেলেকে দেখেছি মাছ হতে
আমাকে সে মৎস্যবউ করে নিয়ে গেছে কোন পাতালে
আমি এমন পাপ করে বলেছি আমি সতী নই।

তবু ওরা ধরে এনে শুইয়ে দিয়েছে কেরোসিন আর কাঠে
আমার মাতৃচিহ্ন বলতে কিছু নেই
কুলের দক্ষিণা আমি-- পাপক্ষয়ের বেদনা মাখানো আগুন
অগ্নিঈশ্বর তুমি আমার ঘাতক।
একদিন লন্ঠনের আগুনে পুড়ে মরেই গিয়েছিলাম
এখন বেচেঁ গিয়ে পড়েছি কোন দস্যুদের হাতে
বনে বনে ঘুড়ছে আমার ছেলে
তার হাতে ভিক্ষাশিক্ষনের প্রথম ধনুক
তাকে বলো আমার অবশিষ্ট নাভিখন্ডের নাম
রাজা রামমোহন।



জীবনানন্দ দাশ স্মরণে
.......................

পাথরও রক্ত চায় যেনো মহাভারতের মুনি
যাহা চায় তাহাই জীবন্ত মাঠে
ঐ আসছে ভেসে শুদ্ধতম ঘিলুর সুঘ্রাণ
নাসারন্ধ্রে হাত দিয়ে দেখা যাবে
জল কীভাবে আলোর ভূমিকায় ঘুরে ঘুরে
ট্রামের ভাষায় কথা বলে।
অধিকন্তু ট্রাম বনলতা সেন
দেখে মাথার টানেলে হরিতকি গাছের প্রতিভা
দুটো চড়ুই অনন্ত ভ্রমণের কথা বলে গেছে কতোদিন।

হাজার বছর ধরে বিকেলের গৃহমুখি রাস্তা
অপেক্ষায় এমন অপার্থিব পথিকের
যার আছে তৃণ ইতিহাস গভীর কলসে।
বরিশালের শিশির মাখা পথের ঘটনা শেষ
জেগে আছে কলকাতার শিকারি হীনম্মন্য রাস্তা
দেখে নির্বিবাদি এক মানুষের ক্রোমজমে
ধানসিড়ি জলের ক’ফোটা
অযোনিসম্ভূত মহিলার প্রতিলিপি
আর বাংলা কবিতার ভবিষ্যৎ।

তখন আমাদের বানিজ্যপ্রবণ চলাফেরা
শুকনো পাতায় জল ঢেলে অনেক সময় ধরে
রেলপথ অতিক্রম করে আসি।
জানি মূঢ় ভারতবর্ষের কয়েকটি আর্যগাথা
একদিকে চিরজীবি অশোকের ভ্রাতৃবধ আর একদিন
বাংলা কবিতা লেখেন জীবনানন্দ দাশ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন