রবিবার, ২৩ আগস্ট, ২০০৯

ইমরান মাঝির পাঁচটি কবিতা


পরিচয়
......
বাড়ি ভোলার চরে
নদীর ধারে
জলের কল্লোল পাই।
আর চান্স পাইলে লিটলম্যাগে কবিতা ছাপাই।

আমার বাতেনী ডাইরি থেকে কয়েকটি লেখা


এলেম ০১
.........
আকাশ তো কালো হয়ে আসে
শাদা হয়ে আসার কথা ছিল একদম ধবধবে শাদা
মাছের ফুলকার মত লাল কোন বালিকার বয়সের সমান হয়তো তোমার ভালোবাসার দিন
তুমি যা কিছু জানার চেষ্টা করবে, আমি জানি
আমাকে অনেক দূর ঘুরে আসতে হয়েছে হয়তো, হয়তো বা আমি আরও অনেক পথ অতিক্রম করবো।
কিন্তু আমাকে কোন একটা জেন্ত গাছের কাছেই যেতে হবে
আমি তোমার সঙ্গে দেখা করতে চাই
মৌমাছি উড়িয়ে দিতে চাই নীল সমুদ্রের দিকে
শহরগুলো যে জ্ঞান তোমাকে দিয়েছে তা তো ফেলে দেয়ার সাহস তোমার নেই
তুমি বৃথাই তর্ক জুড়ে দিলে আর আমার জামার বোতাম ছিড়ে গেলো

গান করে ওঠে কোন মরে যাওয়া গাছ
তোমার টেবিলের কাছে বিজ্ঞানীদের আসা যাওয়া
তুমি পারবে, আকাশ হয়তো আরও কালো হয়ে উঠবে , মাঠ গুলোতে আর শিশুদের দেখা যাবে না
আবশ্যই তোমাকে লোকেরা গালি দেবে
যাদের ভালো করার জন্য একদিন জাহাজ ঘাটায় তুমি ডুবিয়ে দিয়েছিলে কোন লোহার তাবিজ
আমাকে হয়তো আরও অনেক দূর ঘুরে আসতে হবে
কিন্তু আমি অবশ্যই যাবো



এলেম ০২
............
পথের ঠিক শেষ দিক দিয়ে
কাদা আর কাঁটা অতিক্রম করে মাছিদের তারিয়ে তারিয়ে
তোমাকে দেখার জন্য কোন চশমা নয়
আমাকে ভেঙে দিতে হবে সব কাচ
জানলাগুলোর পাশে দাড়িয়ে যারা বৃষ্টি দেখে, তাদের মধ্য থেকে কাউকে কোন একজনকেই বলি দেয়া হবে
শীতের রাতের শেষ দিকে।
যখন আর কেউ জেগে নেই, পোকা মাকড়েরা ঝগড়া শেষ করেছে
চাঁদের রং হয়েছে ম্লান।
একজন পথিকের সঙ্গে আমার দেখা হবে
সে সাত সমুদ্র তের নদীর ইতিহাস কোন একজন্মে বলে গিয়ে ছিল বলে পাখিরা এখনও উড়তে পারে
আর তুমি হয়তো প্রশ্ন করতে পারো
যদিও তোমার জানা আছে এই দিকে প্রশ্ন করা একদম নিষেধ
কর্দমাক্ত হয়ে ওঠে হাত
কেননা তোমাকে অনেক দূর যেতে হবে
আমি তো ইচ্ছে করলে এই চূড়া থেকে তোমাকে ফেলে দিতে পারি
কিন্তু যে ভদ্র লোক তোমাকে দিয়ে গেলো, তার সঙ্গে তোমার দেখা হয়ে যায় কোন শুকনো নদীর পারে
বৈশাখ শেষ হলে সেখানে মোটা হাতের মহিলারা চুলা তৈরীর পরিকল্পনা করে

কিন্তু তোমাকে আমার সঙ্গে যেতেই হবে, না ।
আর একবার না বললে
আমি তোমার চুলে আগুন লাগিয়ে দেবো
আমি তোমাকে ছাড়বো না, হিচড়ে টানতে টানতেই তোমাকে আমার সঙ্গে ছাল-বকলহীন ভাবে হলেও নিয়ে যাবো।



এলেম ০৩
........
একটা জানলা তো অবশ্যই লাগে
বললেই তো পরী ধরা যায় না
অপেক্ষাই জীবন
বর্ষা শেষ হলে শীতের জন্য যারা কাতর তারাই মানুষ
মৃত্যু প্রসঙ্গ আসবে কেন
এখনও মায়েরা দুধ খুলে দেয়
ভুল বলতে পাড়ার মধ্যে মহত্ব আছে
তুমি শুরু কর
অনেক পথ এখনও বাকি
বসে থাকার চেয়ে এলোমেলো ভাবে
বন কেটে নদী বানানো কিংবা নদী ভরে চাষের জমিন
তুমি শুরু কর



এলেম ০৪
..........
সেই মেয়েটা কি বলতে চায়
প্রেমিক তাকে ভুল বুঝেছিল এমন একটা অভিযোগ শোনার জন্য তোমরা আয়োজন কর
তোমরা তাদের সাপগুলোকে আগুনে পুড়িয়েছো এবং তাদের বিষ থেকে তৈরী করেছো ফুলের পাপড়ি
এমন একটা অভিযোগ
হয়তো বেতারে প্রচার করা হবে
কয়েকটা লোককে ধরে নিয়ে যাওয়া হবে
এবং তোমরা জানো, তাদের যারা হত্যা করবে বলে ঘোষণা করা হয়েছে
তাদেরও স্বামী সন্তান আছে তাদের বাড়িও বৃষ্টি আসে
আমি আর শুনতে চাই
আমি আর মানতে চাই না আইনগুলো
কেননা সেখানে নদী কেটে পাথরের জন্ম দেয়ার জন্য গবেষক দল এসেছিল
আর পাখিগুলো উড়ে চলে ছিল প্রশান্ত মহাসাগরের দিকে
আর জাহাজটা তাদের ধরতে পারেনি
জেলেরা যাদের সাহায্য করে, তারাও মানুষ
তাদের পেটেও চর্বি জমে, আর তারাও মাঝে মাঝে গান গায়
মেন্ডলিনগুলো বেজে উঠে
আমি অবশ্যই গাছেদের ভালো করার কথা বলছি
তোমার কি বিদেশী ভাষার মত মনে হচ্ছে।
এমনই হয়,
দূর থেকে শোনা যায় দেবতাদের গান
পাহাড়ের কোল ঘেষে সব্জির চাষ



এলেম ০৫
..........
কৃষকেরা সত্য কথা বলেছিল
তথাপি গুদামগুলো খালি করার কথা কেন উঠতে যাবে
তাদের পাওনা মিটিয়ে দিলেই হয়
চাইলে ত্রিভূজগুলো খুলে দেখা যাবে
আমার কোন মুক্তি নেই তা তো জানা কথা
তোমাকে ফর্সা হতে হবে
বিশ্বসুন্দরীদের জামা চুড়ি করে দিতে হবে নৌকার পাল
আমি বলতে চাই না, আমি চুপ করে থাকতে চাই
কাদায় পড়ে যাওয়া শিশুটিকে আমি আরও কাদা মেখে দিতে চাই
পাখিতো উড়বেই চাঁদ তো উঠবেই
আমি ভাবতে চাই না তোমরা ঠিক
কেননা আসলে সে দিন যদি তুমি না চলে যেতে
আমরা সত্যি সত্যি আগুনটা লাগিয়ে দিতে পারতাম।

আমরা ছেড়ে ছুড়ে দিয়ে অবশ্য চলে যেতে পারি
কিন্তু মুক্তাগুলো আকাশে উড়িয়ে দেয়ার আগে
আমাদের জানতে হবে কেন তারা সাগর পাড়ি দিয়েছিল
কেন তারা মশলাগুলো ফেলে দিয়েছিল জলে
বনের ঠিক মধ্য পথে একটা লোক যে আমাদের পানি দিয়ে সাহাস্য করে ছিল
আমি তাকে সন্দেহ করি
আমি সন্দেহ করি মৃত সব জ্ঞানীর আত্মাকে
তারা ছুটে এসে আমাদের অন্ধ করে দিয়ে গেল
যদিও আমরা চোখে আন্ধকার দেখেছিলাম
আমাদের কিছুই করার ছিল না
তুমি কথা দিয়ে এলে না,
তুমি আমাদের ঝুলিয়ে দিলে আর শিশুরা ডিল ছুড়ে দিল
কেমন করে যে তারা মিথ্যা ঘটনাগুলোকে সত্য বলে চালিয়ে দিতে পারে,
কোন আগুন জলে ওঠে না আত্মা গুলো ঠিকই থাকে নেংরা হয়ে পচে যায় না

আমি আবার সতর্ক করতে চাই ,তোমাকে আসতে হবে
সমুদ্রে উপর দিয়ে পাখিগুলো মত ঘ্রাণ ছিটাতে ছিটাতে যারা আসবে বলা হয়েছিল তারা তো হয়তো ভুল পথে চলে গেছে
কিন্তু আমাদের আরও নিখুত ভাবে জুতাগুলো সেলাই করে নিতে হবে
আমরা পারবো, মন্ত্র পড়েই নামিয়ে দিতে হবে চুলের বেনি
কৃষকের পাকা ধান ক্ষেতে ঘুড়ির লেছে আটকে যাওয়া বেগুনি বেড়ালের মত
আর তারা হয়তো ত্রিভূজের মানে বুঝতে পারবে
শিশুরা অবশ্যই হেসে উঠবে
চাঁদের গায়ে লেগে থাকবে আইচক্রিমের শাদা।



কবিতার অভিন্ন মৃত্যুও ইমরান মাঝির দুধভাই/মুয়ীয মাহফুজ
....................................

বিজ্ঞানী কলিন্স'রা বিশ্বের কোন না কোন এক দেশের নির্বোধ পতাকা হাতে চাদে লাফালাফি করে।চন্দ্রজয়ের আনন্দটা হাসফাস করতে থাকে ভারি জোব্বাজাব্বার অত্তাচারে!এমন রসময় ও হাস্যকর দৃশ্য ইমরান মাঝি কখনো তার ছইওলা নৌকার তলা থেকে মিস করেননা,কেননা আন্তরাষ্ট্রীয় নাগরিক বা,বৈগ্গানিক কিংবা মহানায়কের বাগাড়ম্বরে সকলের মত বিভ্রান্ত হতে তিনি রাজি নন।বরং তার ব্যক্তিগত নৌকা তাকে মুক্তি দেয় কবিতার প্রহরে,কে জানে হয়ত তিনি বৈঠা হাতে মেপে নেন চাঁদের দুরত্বটা!
কথা বলছিলাম ইমরান মাঝির নব্যপ্রকাশিত দুধভাই প্রসঙ্গে।বইটির প্রকাশনা করেছে মান্জাসূতা প্রকাশন।সুদৃশ্য ও কাব্যকল্লোলে মুখরিত বইটির জন্য কবি ও মান্জাসূতাকে ব্যাপ্তিহীন ও ব্যাপক ধন্যবাদ।

কবি ইমরান মাঝি
..............
মাঝির প্রথম কাব্যগ্রন্থ "দুধভাই"এর উতসর্গপত্রের ধরন দেখে মনে হওয়া স্বাভাবিক যে তার আসলে সভ্যতা,বিগ্গানের প্রতি যথেষ্ট বিরক্তি আছে। আসলে কিন্তু এই বিরক্তি যেকোন ব্যাক্তিক সাফল্য বা একজন সফল কর্পোরেটের প্রতি।ধরা পরে এক মাত্রাছাড়া বৈরাগ্য,যা কিনা ভেঙে ফেলেতে চায় প্রতিষ্ঠানের শেখানো নিয়ম।একজন ইমরান মাঝি পৃথিবীর সমস্ত ইমারত ভেঙে দেখাতে চান কুঁড়েঘর।এরপরই ছন্দের ব্যাকরণকেও একহাত দেখে নেন যথেষ্ঠ বিনয়ে মাথা নত করে!তার কাব্যপ্রচেষ্টায় ছন্দ-ফন্দ নিয়ে যে তিনি আদোউ ভাবিত নন-এটা তারই বহিপ্রকাশ।অতপর মাঝির আত্নভোলা স্কেচের নীচে লাজুক স্বরে জানান যে বাড়ি ভোলার চর,লিটলম্যােগর সাথে সম্পর্ক বহুদিনের।
আধুনিক সময়ের অন্যান্য কবিদের চাইতে মাঝির কেস একটু আলাদা।ইউরোপিয়ান ফিভারে আক্রান্ত সমসাময়িকেরা যখন র্যাবো,বোদলেয়োর ভুতে আক্রান্ত,মাঝি তখন মাঝনদে বসে বিড়ি ধরিয়ে বোসে থাকেন।হাতের বরশিতে নতুন কোনো কবিতা ধরা পড়ে অথচ ছটফট করে ওঠেন তিনি নিজেই!ব্যাগ্র মগজের টানে তুলে ফেলেন গভীরের চেতনা।কবিতার ইমেজগুলো আমাদের পরিচিত পৃথিবীর সাধারন জানালায় দেখা দৃশ্যগুলই।অনেকটা গল্পের স্টাইলে মাঝি উপরে ফেলেন ভেতরের প্যারাডক্স বা বহুমাত্রিক জটিলতা(অবশ্যই সরল প্রকারে)।এ কারনে তাতে জ্যামেতিক বা আঙ্কিক প্রকাশ নেই।

স্মৃতিকাতর কবিতা অনেকগুলোই চোখে পড়ে।দিকভ্রান্ত মাঝি লেজুড়ে ঘুড়ির পেছনে ছুটে যায়।কিন্তু মাঝি ঘাসফড়িঙও এখন আর ধরেনা,কারন সে যে বড় হয়ে গেছে কবে!
তেতুল গাছ কবিতায় মাঝি গ্রামের বধূদের কাছ থেকে তেতুল চুরির গল্প করেন।
"গাছের নিচ দিয়ে যেতে নেই,স্মৃতিশক্তি কমে যায়।পুরুষের তেতুল খেতে নেই।আমি কি তখন পুরুষ ছিলাম..."(তেতুল গাছ)

আছে শৈশবকাতরতা
"আমাদের বাড়িতে অনেক ভাইবোন বলে কখন পাকতে পারেনি ফল।আর দাদার মুখ তাই খারাপ হয়ে গেছে"...পেয়ারা চুরি।

ছাতা কবিতায় মাঝি তার মৃত বোনের স্মৃতিচারণ করেন।
"হারিয়ে ফেলেছিলাম ছোট বোনের ছাতা।আসলে হারাইনি হারিয়ে ফেলেছিলাম ছোটবোন চার পাচদিন পরে।মাটিকে চোর বলি যে নিয়েছে তারে।"ছাতা"

অথবা ভাল লাগে মাঝি যখন "দুধ"কবিতায় আবার শিশু হতে চান।

প্রলেতারিয়েতদের প্রতি তার প্রগাঢ় দৃষ্টিক্ষেপন আমার দৃষ্টি এড়ায় না।তবে তা আরোপিত নয়।অধিকাংশ কবিতায় মাঝি প্রান্তিকদের জীবনসংগ্রাম,অবসর আনন্দগুলো দেখে ফেলেন।
"নিজের জমির পাকা ধান আলে দাড়িয়ে দেখার একটা হলুদ সুখ আছে।আবার কাস্তে হাতে ক্ষেতে নেমে যাবার মধ্যো লাল সুখ।"ধান"

"নব্বই পারসেন্ট শিশু জন্মে বৃদ্ধা খালার হাতে"।...(সংসার)

মাঝির ভেতর আর বাহিরের নদীর ভেতরকার এক সংযোগ আছে।ফলত নদী মাঝির শরীরে মেখে আছে।তাই মন কবিতাটি ভাল লেগে যায়।
"নদীর কাছে যারা থাকে মন খারাপ হলে তারা ঢেউয়ের কাছে যায়।নদী তো নারীর মতো।নারী তো রােতই মধূর।"(মন)

নিসর্গ মাঝির অতিপ্রিয় তাই সে একা একা দেখেছে যে,
"গাছের পাতা নদীতে আত্নহত্তা করে,বিষন্ন সুরে কাদে বাশের কসাই"।(মহিশের নাম)
নিঃসংগ বধূদের প্রতি তার কবিসুলভ আগ্রহ উপচে পড়ে,
"একলা বাড়ির বউ গো তোমার রেডিও কি আছে।"{রেডিও}অথবা তিনি একাই জানেন" বাপের বাড়ি থেকে মাছ এলে বধূরা সব ঘরে ভাগ করে দেয় আর মরা মাছের কাছে জেনে নেয় পিতা মাতার খবর।"(জেলে বউ)
শেষমেশ আর থাকতে পেরে তিনি ভিখিরি হওয়াই ভালো ভাবেন কারন
"আমার ভিখিরি হওয়াই ভালো ছিলো গ্রামের বউদের হাতের রান্না খেতে পারতাম।"(ভিখারি)

এছাড়া জীবনদর্শন কবিতায় উপস্থিত।বিভিন্ন অভিগ্গোতা(দায়বোধ?) বা প্রাতিষ্ঠানিক জ্য়ানে বিরক্ত মাঝি।

"আমি জানি ইতমধ্যে আমাকে কিছুটা পচিয়ে দিয়েছে গ্য়ান।পচে গন্ধ বের হওয়ার আগেই শিরদাড়া সোজা করে দাড়িয়েছি আর সারিয়ে নিচ্ছি আমার ক্ষত"।(দেহ)

প্রেমিকার প্রতি হাহাকার আমাকে খুব পীড়া দেয়।মনে পড়ে যায় মাঝির কোন এক ডায়েরী কবিতা গ্রাস করেছিল কোন এক পদ্মপুকুর।কবিরা সব হারায়,কবিরা সব ূলেও যায় কিন্তু সব কিছু মনে রাখে কবিতা!

"আমার বয়স কোথাও লেখা নেই।তাই ২৩,২৪ এমনকি ২৫-ও হতে পারে।এই ২৩,২৪,২৫ বছর বয়সে হারিয়েছি ৪,৫,৬ জন প্রেমিকা"।(বয়স)

জীবনধারন সম্পর্কে পেশাদারিত্বের বোঝা মাঝির হাড় কাপিয়ে দেয়।
"শুকনো ঢেলার মতো ছুড়ে দিলে জীবিকার মাঠে।চেয়ে দেখি বেলুনেরা ওড়ে।আমি বিদেশের জেলে দীর্ঘ কয়েদি হলাম।(জীবিকা)
"কেন পড়লাম অভাগা অনার্স....এখন বিশুদ্ধ চাকরী নাই।কোথায় অবৈধ টাকা খেয়ে সন্তানকে করবো ভোদাই"(বরফকল)
অথবা
"অন্ন বিরহ ব্যতীত বাকি সব ফ্যাশন....."(বিরহ)

এজন্যই বোধহ্য় শিক্ষিত বেকার বাকি খায়!

"বর্তমানে আমি তিন দোকানে বাকি খাই।ইউসুফ,বাসু আর চোউমাথার সিজার দোকান।সাইক্লোন সেন্টারেও খেয়েছি উপরে বিশ টাকা।বড়লোকেরা ব্যাংক থেকে জনম বাকি খায়।(বাকি)

অথচ মাঝি প্রাচীন ও না পূরন হওয়া স্বপ্নগুলো জানে,
"একটি রাইসমিলের মালিক হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে বড় হয় কৃষকের ছেলে"....(কল)
মাঝি হতাশ হন।যখন দেখেন,

"আশি পার্সেন্ট রাজাকার আজ মার্চ্যান্ট,ব্যাবসা করে"(নদী একটি বাড়ী নিয়ে যাচ্ছে)

মানুষের হৃতবাক্য হয়ে উঠেছে পুথি "বাসর রাতে পতি মরলো গলায় ফাসি দিয়া"।একবাক্য বলা যায় বইটির বিশেষ আকর্ষণ।

ইমরান মাঝি তার কাব্যগ্রন্থ "দুধভাই"তে অতি সরলভাবে নাগরিকদের বিপন্ন একপ্রকার মাথাব্যাথা উপহার দেন।পরিচ্ছদে নতুনত্বের নাগরিকদের কাছে এসব কবিতা রোমান্চকর চিত্র বয়ে আনে,জীবনের।ছূড়ে ভেংগে ফ্যালে প্রাইভেট কারের ব্যাক ভিউ মিরর!

মাঝে মাঝে মনে হয় মাঝির কবিতাগুলো আলাদা করে কবিতা ভেবে লিখা নয়।একারণে তার কবিতাগুলো তার পরিবার,পরিবেশ নদী,ক্ষেত কিংবা মাটিবর্তী,জীবনঘনিষ্ঠ,স্মৃতিকাতর ইত্যাদি প্রথাগত বিশেষণযুক্ত।তবে উত্তমপুরুষ যেহেতু কবিতার সবটুকু জুড়ে আছেন সবসময় তাই মনে হয় ঋতুর বোইচিত্র অনুপস্থিত।

তার কবিতার প্রকাশের ধরণটিও নতুন কিছু নয়।নব্বইয়ের কবি মুজিব ইরম,টোকন ঠাকুর,কামরুজ্জামান কামু প্রভৃতির কবিতায় এই নিরাবেগ গল্পবর্নণা বহুচর্চিত।(পুর্বকালীন জয় গোস্বামীর কথাও বলা যায়।)

একজন কবি যখন অতিরিক্ত নস্টালজিয়াতে ভোগেন,অথবা তার কবিতায় অনিশ্চিত বাক্যো নির্ভরশীল হন,তার মানে দাড়ায় যে,বর্তমান অবস্থা নিয়ে সংকটে আছেন।মাঝির কবিতায় এই আত্নকেন্দ্রিকতা আমার উপভোগ্য মনে হয়নি।এই সংকট শুধু সংকট মনে হয়,কাব্যরস মনে হয় না।যেন স্রোতের বিপরীতে অক্লান্ত বইঠা সন্চালন।কবিতায় তারল্য চোখে পড়ে।আমার মনে হয় কবিতায় ঘনত্ব অল্পএকটু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়,কিন্তু মাঝির কবিতায় অহেতুক ডিটেইলিং তার কবিতার শাস কমিয়ে দিয়েছে।আমি বলতে চাইছি মাঝি যেন তার কবিতা লিখার সময় তার পাঠককে সামনে বসিয়ে না রাখেন।

"দুধভাই"এর কবিতাগুলো একেবারে সরলরৈখিক।সৌন্দর্যের বিচারে সেই নদী তত সুন্দর যাতে বক্রভাব বিদ্যমান। নদীর বাকগুলোই ভাংচুর করে অস্থির করে তোলে লোকালয়। মাঝির কবিতায় সেই বাক নেই,ভাংচুর নেই।অথচ আমাদের জীবন এতটা কষ্টকল্পিত সুন্দর নয়!মাঝি তুমিই বলো,তোমার বিদ্রোহগুলো কোথায়?তোমার দাবিগুলোর কথা কেন তোমার কবিতা উচ্চারণ করেনা?

একজন নাগরিক যদি তার অন্য অস্তিত্ব হিসেবে মাঝি হতে চায় তবে যেন এই বিভ্রান্তি দ্যাখা দ্যায়!তাই ভয় হয়,অচিরাত বুঝি ভেংগে পড়বে কল্পনার প্রাসাদ!

জলে বিম্বিত প্রাসাদ যেন,কম্পমান বাস্তবে ইলশেগুড়ি বৃষ্টি এলেই ধু্য়ে যায় তার তরল ছায়া।

("মান্জাসূতা" সাহিত্য পত্রিকার নভেম্বর ২০০৭,৩য় সংখ্যায় প্রকাশিত)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন