রবিবার, ২৩ আগস্ট, ২০০৯

সরকার মাসুদের কবিতা

আক্রান্ত
..........
বনপথে বেরিয়ে পড়েছি ঝড়ো হাওয়ার ফাঁদে
পাতাউড়ি ধুলিউড়ির ধূসর আক্রোশের ভেতর
জঙ্গলগড়ের বাড়ি পড়ে আছে জলে!
কিছু লোক কাঠঠোকরার মতো
গাছপালার রক্ত ঝরিয়ে বাড়ি ফিরে যায়;
সারারাত পাখিদের দুঃস্বপ্নে অগ্নিকা-। সবুজ পাতায়
সারাদিন ছোপ-ছোপ রক্তের দাগ।

জনশূন্য ও অরণ্য অন্যমনস্কতা দেবে
সৌরভ চিহ্নিত পথ আমাকে পৌঁছে দেবে
কুঁড়েঘর!
সেখানে শ্যামল আর আমি একসঙ্গে থাকি
একসঙ্গে বসে দেখি খালের পানির পাগলামি
অরণ্য সন্ধ্যার আলপনা, অশ্রুমাখা,
এলোমেলো গাছের ভেতর!

একটু এগোতেই এক টুকরো সুরমা রঙ মেঘ
টিপটিপ জল, লুকোচুরি হাওয়া
একটু পরেই পা বাড়াবো আবার
তখন হাজার হাজার পাতা হলুদ সবুজ পাতা
উড়ে এসে মুহূর্তেই ঢেকে দিলো আমার শরীর।

ঝরা সবুজের স্তূপ ঠেলে উঠে নিজেকে রক্তাক্ত দেখি
তাহলে কি পাতার আড়ালে পাখিদের নখ?
আমি হতবাক আর ভীত কী ঘটে গেছে
বুঝতে না বুঝতেই চেয়ে দেখি
পাতার স্তূপ শত শত পাখি হয়ে উড়ে চলেছে সমুদ্রের দিকে!

জলঢাকা
দুঃখের সংবাদ সব জানা শেষ
এখন কেবল অন্তহীন অপেক্ষার শুরু



সমুদ্র সুলতান
.........
কবির স্বপ্নে শীলমাছ কুমেরু স্বপ্নে পাহাড়ের মিঠে রোদে দেখা দিয়েছিল
অগণিত মেরুশীল মহারাষ্ট্রের সামান্য খয়েরি শাল প'রে আছে!
এইমাত্র পানি থেকে উঠে আসা সূর্যচিকচিক গা
কল্পনাপ্রবণ এক ভাবুক গতকাল যা দেখল :
শত সমুদ্র সুলতান একসাথে গান ধরেছে!
গান গা'বে ব'লে দক্ষিণ সমুদ্রে ফিরে ফিরে আসা
প্রতি গ্রীষ্মের মাঝামাঝি নতুন স্বামীর ভালোবাসা!
নতুন ঋতুর নেপথ্য-প্রেরণায় শীলমাছ ভেসে যায়
জানা দেশে অজানা গন্তব্যে কোথায় বলো তো!
তারা আবার গ্রীনল্যান্ড কি আলাস্কার রোদঝলমল ইশারায়
এতদূর এসে ব'সে আছে।

হাজার কিলোমিটার সমুদ্র পিছনে প'ড়ে আছে
শীলমাছ-- অবিশ্বাস্য সঞ্চরণশীল প্রাণীর দুই কান
এখন বধির। সমুদ্রধ্বনি মাথায় ঢোকে না
ওরা অধীর হয়েছে উঁচু পাহাড়ের প্লাটফরমে শুয়ে থাকবে তাই
জাহাজের ভোঁ আসছে। সী-গালের ডানার শব্দে হাই
তুলে ঘুমজড়ানো চোখ বুঁজে শীলমাছ, ওরা
বাতাসে অশুভ গন্ধ খুঁজবে যেরকম গুপ্তচর খোঁজে



গালাপগাস
.......
প্রকৃতিপ্রদত্ত গবেষণাগার
কতো প্রজাতির ছোট পাখি! জীব-জানোয়ার!
বিষুবরেখার পশ্চিমে দূরবর্তী সমুদ্রের দেশে
বিজ্ঞানীবাহী জাহাজের বাঁশি অনুসন্ধিৎসার সুনীল হাওয়ায়
কেঁপে ওঠবার পর, জানো না তো, আড়ালে সেদিন
অস্তিত্বরহস্য উঠেছিল মুচকি হেসে!
আজ আবার ভেসে উঠেছে অতিকায় পাহাড়ী কাছিম
গালাপগাসে যাদের বাড়ি, তারা কি আজও ফলপাতা খায়?

ছোট ছোট ঘুঘু, এত ছোট পেঁচা!
আর কোথায় আছে ইগুয়ানা আমাদের জানা নেই
তাছাড়া অদ্ভুত ডানাহীন কালোহাঁস এতদিনে ফসিল নিশ্চয়!
মহাসমুদ্রের মাঝখানে অভয় চিড়িয়াপুর
তাতে শুধু লোকাল পশুপাখি অন্যত্র খুঁজেও পাবে না
এই লুকোনো সত্যের বীজ আন্তঃমহাদেশ বাতাসের বুকে চেপে
পৌঁছে গেছে মানুষের জিজ্ঞাসামুখর মনে!

গবেষণা শেষ। এখন বন্দরে ফিরে আসছে অভিজ্ঞ জলশকট
জলযানের চূড়ায় বিজয়পতাকা যেন অজস্র করতালি!
গালাপগাস : আগ্নেয় লাভার দ্বীপ
কী দীপ জ্বালিয়েছিল ডারুইনের মনে
তাঁর সৃষ্টিশীল দিনের শুরুতে; আজ অবসরে ভাবি।



ঘোড়ামাছ
.......
জানো সমুদ্রঘোড়া খাড়া হয়ে হাঁটে?
পেটের নিচে লেজ ঘাড়ের উপর মাথা, সাঁতার কাটে।
ঘোড়ামাছ আর মার্বেল ফিসের মাঝখানে স্থির জোড়াডুবুরি
মানবমৎস কিছুসময় জীবন রহস্যে ডুবে থাক--
আমি ভাববো, প্রকৃতিতে জলে ও স্থলে বিশ্বাস্য গতিতে ছুটে চ'লেছে
চেনা অচেনা বীজকণা। তারা একুশ শতকে জীববিজ্ঞান গবেষণা
দামী করে তুলবে সত্যিই। সমুদ্রঘোড়া মানববিস্ময়ের অনুমোদন পাক।

অনেকদিন আগে প্রবালপুর বাজারে অকথ্য ভাংচুর
ঘোড়ামাছ ঘাড় বাঁকিয়ে অনেকক্ষণ তাকিয়ে দেখেছে
ডগফিসের মাস্তানি। সেই থেকে জানি
ঘোড়ামাছের ঘাড় বাঁকা হ'য়ে থাকে।
তা থাক; প্রকৃতিতে বৈচিত্র্যের শেষ নেই। বেদনারও!
ঘোড়াগুলি দাঁড়িয়ে ঘুমায় কিন্তু সমুদ্রঘোড়া খাড়া পা'য়
ঊর্ধ্বমুখী সাঁতার কেটেছে,
মানুষের চেয়ে বেশি বিশ্বাসভঙ্গে দুঃখ আছে তারও!

জানো ঘোড়ামাছ উচ্চাকাঙ্ক্ষায় উপরে উঠছে
তখন হঠাৎ গ্যাসথলি ফেটে, অসহায়, তলিয়ে যেতে থাকে
সমুদ্রঘোড়া পানির পাতালে মৃত শামুকের মতো প'ড়ে থাকে
প'ড়ে থাকবে অন্ধকারে, ভারী অন্ধকারে
তার শেষ ঘুমের আলুলায়িত ভঙ্গি দেখে
চোখ মুছে চলে যাবে তারা মাছ!



রাজবাড়ীর পিছনে
..........
ভাঙা রাজবাড়ীর পিছনে ওঠা অত বড় চাঁদ
সন্ধ্যায় আমাদের সাথে সাথে যায়
রিকশায় আরেক দরদী ফুলের পাশে
ভাবুকের দুঃখবোধ ঘন হলো জঙ্গলের বাঁকে
দিঘির গন্ধমাখা চাঁদ বাম থুতনির তিলসহ
চূর্ণ চূর্ণ ভেঙে পড়ে মঠের চূড়ায়...
অগোছালো টেবিল, শোভাচিল আলমারির তাকে
জানালার প্রতিবেশী বকুল ছেড়েছে ক্লোরোফিল
নাতিশীতোষ্ণ রোদে ক্ষণমিলনের দীর্ঘশ্বাস
কাঁপায় চোখের দিঘিজল; আজ কে কাকে
মনে রাখে হিসাবনিকাশক্লান্ত হৃদয়ে?
ব্যর্থ স্বপ্নের ঘোরে প্রেমচাঁদ, মূক, দাঁড়িয়েই থাকে!

সে দাঁড়িয়ে থাকবে নতমাথা মরুভূমির কিনারে
বহুদিন পর অবসরভাবনায় হেঁটে যেতে যেতে
ভাঙা রাজবাড়ীর ছবি দেখে মনে হবে--
পুকুরঘেরা এক উঠোনের আলো, রূপচাঁদ
সুগন্ধী ঝোপ থেকে উঠে ডুবে গেছে অন্য কোনো
গ্রামের ডোবায়। আমি শুকনো হাসি হাসবো নীরবে।



গভীর শীলা উত্তোলন
.............
গভীর শীলা উত্তোলন খুব শক্ত কাজ
আমাদের যন্ত্রপাতি আমাদের কারিগরি দিক
এখনও অতটা সবল নয়
আমরা ভূ-গর্ভের সম্পদ নির্ভয় মনে
তুলতে পারি না অনেক সময়--
দেখা গেছে ময়লা স্বর্ণের খণ্ড নষ্ট হয়ে গেছে
অদ্ভুতরঙ কঠিন শীলার গায়ে আদি পৃথিবীর গন্ধ
আদিম নদীর গন্ধ শীলার শরীরে
আদি পোকামাকড়ের খনিজ গন্ধ!
দেখা যায় শীলা, প্রিয়তমা, কোমল গ্রাফাইট
পৌরুষের কাছে এসে ক্ষয় হয়, কঠিন শীলাক্ষয়...
কুসুমপুর গ্রামের দোআঁশ মাটি থেকে
গভীর শীলা উত্তোলন মোটেই সহজ কাজ নয়।

1 টি মন্তব্য:

  1. বালিকা পুতুল
    বালিকা পুতুল!তুমি কি যে চতুর?
    মায়া ভরা আঁখি নিলা ভরা পাপড়ি
    ঘুমাওনি বুঝি এখনও, সে তো আমি জানি
    বাহিরে দেখ মেঘলা মেঘলা আকাশ
    গুড়িগুড়ি বৃষ্টি, মন কাড়া তোমার সোপান
    ব্যাকুনিটা তোমার জন্য এখনও অপেক্ষামান।

    ভাবছটা কি শুনি? যতটুকু জানি!
    হাবু ডুবু খাচ্ছ বুঝি-চিন্তার রাজ্যে এখনও তুমি!
    হা হা হা ভাব, কিছু কথা বল!
    পাও না বুঝি কোন কুল কিনারা
    পাবে না! পাবে না! সেও আমি জানি।

    বালিকা! বালিকা পুতুল! সেও তো তুমি
    আমার একটা কথা শোন, রাগ করো না
    তুমি তো এখন আর খুব ছোট নয়
    হা হা হা লজ্জা পেয়েছ বুঝি?
    লাজ লজ্জা শরম সব সব ছাড়
    তোমাকে বলি শোন-মন দিয়ে শোন
    চোখের পাপড়ি খোল মনের দরজা আলগা করো।

    বালিকা পুতুল! বালিকা পুতুল!
    মনটা খারাপ করে দিলাম বুঝি
    ভালো লাগে নাই সেও আমি জানি
    চিন্তা ভাবনা থামাও!একটু তাকাও।
    খোলা খোলা দ্বার জানালাটা একটু সামলাও
    পর্দাটা করে রেখেছ কেন আড়াল?
    হা হা হা! হা হা হা! তুমি এখন কি করো
    বলা যাবে না বুঝি? সেটাও কি বুঝি তুমি তুমি?

    উত্তরমুছুন