রবিবার, ২৩ আগস্ট, ২০০৯
কবি হিন্দোল ভট্টাচার্য-র কবিতা
ভোরবেলার কবিতাগুচ্ছ এর নতুন কবিতা
.......................
লা দলচে ভিতা
.........
সন্ধ্যার ভিতর শুনি তার গল্প , বাতাসের গায়ে
অষ্টাদশ শতকের ঘাট, তার পুরাতনী কথা
ধূসর ক্রেনের ছায়া পড়ে
মন, যেন লক্ষকোটি বছরের দীর্ঘশ্বাস, নিজেকে বাজায়
ইঁটের রক্তের রং এই প্রাচীর, স্মৃতি আর স্বপ্নের ভিতর
কয়েকশো বছর চুপ করে আছে, হাইরাইজ বাড়ির মাথায়
আমাকে গড়িয়ে দেয়, নিচে নিচে, আহা
নি:শ্বাস লুকিয়ে শুরু হয় যে জীবন তার পাশে
মৃত্যুর মুহূর্তে তার স্মৃতির দস্তানা খুলে ফেলে
আমাকে গড়িয়ে দেয়, নিচে নিচে, আহা
চুপ করে থাকা ভাল, এই ডামাডোলের সংসা
ছটফটে আরশোলার অসহায়তার মত বাঁচি
বিষবৃক্ষ থেকে আজ মন্থনের দিনরাত শুরু
অন্য কোন পতাকার সতর্তীকরণের রং মেখে
বিপদ যেদিকে, তার অন্যদিকে শুরু হয় খেলা
হাতের উপরে হাত রাখে শীর্ণ ঠান্ডা প্রস্তাবনা
মেনে নিতে হয় চড়, এবং চাবুক
পোকাকাটা ইতিহাস বই থেকে যে গন্ধ, আমারই
তাকেই আশ্বাস দিই, এই দিন ফুরোবে একদিন
নি:শ্বাস বন্ধের চাপ, জ্বর, তবু দূরের সিঁড়িতে
উঠে যেতে হবে, এই মারণাস্ত্র-মুখর সন্ধ্যায়
কাঁচের ফুলদানি আর তার পেটে প্লাস্টিকের গাছ
আমাদের গৃহস্থালী, দশকর্মা দোকান
ক্রমশ পিছলে যায় পাশাপাশি সব কিছুই আজ
খরা ও দুর্ভিক্ষ নিয়ে, হাঁসফাঁস রোদ মাথায় তুলে নিচ্ছে
বিস্মৃতির অক্ষরপরিচয়হীন ঘুম
আমাকে গড়িয়ে দেয়, নিচে নিচে, আহা
মনে পড়ে রাত হলে ঐ আলপথের মাথায়
তোমার লন্ঠন ছিল এই বাংলাদেশে
পাখির ডানার শব্দ, আরতির গান
দূরে আলেয়ার আলো, ছায়ার ভিতর টানা ঘুম
শস্যের ভিতরে আমি শস্য হয়ে ছিলাম একদিন
এখন লুকিয়ে থাকি, যতদূর বলি বেঁচে নেই
লম্বা সিঁড়ি আকাশের দিকে রেখে
নিজে নেমে যাই
মন্থর আমার মাথা, মনে তার বুদ্ধি নেই কোনও
সন্তানের জন্য মন পিতা হয়ে যায়
সেই যে কুটির ছিল, তার পাশে দেখি
আমার সন্তান আজ আমার-ই দু:স্বপ্ন দেখে
বলছে ফিরে এসো
আহা আমি নিচে নামি, নামি নামি, তোমার-ই আঁচলে
একে তুমি মৃত্যু বলবে, বলো?
হয়তো
.....
যা কিছুই নুয়ে আছে, দীর্ঘ গাছ,অনিশ্চিত মুখ
যা কিছু কেবল-ই ব্যর্থ,চামড়া কুঁচকে ঝুলে আছে খুব
শোকগ্রস্ত শরীর যা কিছু, অথবা বুলেটবিদ্ধ দেহ
মন্থর টিকটিকির লাফ, জল যে জীবন নিয়ে গেছে
অথবা মাটির নিচে শুয়ে আছে যে অতীত, সব-ই
তোমার আমার গল্প, কয়েক জীবন ভেসে যাওয়া
একে তুমি ইতিহাস বলো?
একটি কবিতা
.........
সে ছিল যন্ত্রণারাত, সে ছিল আগুনমাখা হাসি
বৃষ্টির প্রথম স্পর্শ, মাটির নাভির গন্ধমাখা
কী নিপুণ আন্তরিক ডুব দিলে আমার ভিতর
ক্রমাগত ভুল বোঝা নিজেকেই , ব্যাকস্পেস মারা
আঙুল এ দিকে গেলে তীরচিহ্ন যায় অন্যদিকে
যেন এই বাক্স থেকে আর নেই বেরোনোর চাবি
এদিকে দেওয়াল আর ওদিকে অক্ষরমাত্র চেনা
কথা আর রংবেরং মুখ আসে মনিটর থেকে
স্নায়ু-চোখ-চামড়া থেকে স্বপ্নের ভিতরে ডুব দেয়
অকূল ঘুমের মধ্যে উঠে আসবে বলে সারাদিন
আঙুল কী-বোর্ডে রাখে মনিটর, শূন্য আর এক
এক আর শূন্যের মধ্যে সে কী রাত,বাইনারি মাথায়
বৃষ্টি নেই, জল নেই, চাষ বন্ধ আছে বহুদিন
এক আকাশ মানে আজ নীল স্ক্রীন, নেটওয়ার্কের
ভিতরে আলোকবর্ষে লিখে ফেলে সার্চ মেশিন চালু!
সে ছিল যন্ত্রণারাত, সে ছিল একবুক শূন্যতায়
আকাশের পাশাপাশি ঘুম পাড়ানো নিজের-ই আকাশ;
এখন নিজেকে খুঁজবো? অতীত-ও কি বাইনারির খেলা?
সার্চ করলে পাওয়া যাবে? বলতে পারো, আমার সার্ভার?
সমাধিক্ষেত্রের পাশে
...........
১।
ফাঁকা বাসনের মত ঝনঝন করছে মাথা
আর কোন সুর নেই
গান নেই
সাপের মুখ থেকে ফিরে এসে আবার সাপের মুখেই
সাঁতার কাটার এ জীবন -
তোমাকে চিনিনা
২।
যেন চলমান হাতল থেকে ছিটকে পড়ে গেছি
আমাকে নি:সঙ্গ রেখে চলে গেল
যে জীবন, তাকে আমি মিথ্যা ভাবি না
কাটাকুটি খেলা চলছে মানুষে মানুষে
তোমার আমার মধ্যে ধ্বকধ্বক করছে পুরোনো কবরখানা
ঘুম
৩।
একহাত বাড়ানো, আর অন্যহাতে লুকোনো ছুরির
বিষমুখগুলো আমি চিনেছি হয়তো
এ বছরও বৃষ্টি হলো না
আমার ফসলগুলো মাটির ভিতরে মিশে গেল
চুপিচুপি নিজেকে গুটোনো, ওঠো, উঠে আগুন পোহাও
৪।
আমি চিনতাম না তাকে, সেও আমাকে কখনো দেখেনি
তবু আমি তার শত্রু, সেও আমার মৃত্যু চায় রোজ
ঘড়ির কাঁটা লম্বা হতে হতে ক্রমশ ভোজালি
একচোখ মারা ভাষা আমার নয়, বুঝতেও পারি না
পিছলে যাওয়া এই মাটি,তার পায়ের চিহ্ন মিলিয়ে দেখেছে
আমারো পায়ের সঙ্গে খাপ খায় কিনা
কে যে সত্যি, তা এক রহস্য
আমি না আমার ঘাতক?
৫।
জলের গড়িয়ে পড়া বুঝি আমি, নিজেও গড়াই
শতাব্দী-সহস্রাব্দ নিয়ে আমার আর কিছুই বলার নেই
দশকর্মা ভান্ডার নিয়েও আমার আর ভাষা নেই কোনো
একেকটা রাস্তার উপর একেকটা রাস্তার কোলাকুলি
মাছের নি:সঙ্গ মৃত্যু, কয়েকটা টাকার গল্প নিয়ে
কেটে যাচ্ছে যা কিছু, তারো কিছু দু:খ আছে, বলার রয়েছে
আমরা তার জন্য কিছু অফিস টাইম ছাড়া কিছুই রাখিনি
৬।
যন্ত্রণা, শীর্ষনামে আমাকে বেঁধেছ
সারারাত ভেসে যাচ্ছে শীতকালের দিকে
টেবিলে নির্জনতার গান
থেমে গেছে তোমারো আঙুল
৭।
যেকোন দূরত্ব থেকে
এখন আমার স্বপ্ন তোমাকেও
অনুসরণ করে
আমিও তোমার চোখে দেখি
আমার দিকেই কেউ চোখ পেতে আছে
তোমাকে অনুসরণ ক্রমশ নিজেকে দেখা হয়ে যায়
যতদিন আছি
৮।
এই বিনিয়োগহীন সান্নিধ্য - পাথরের গায়ে গায়ে আজো লেগে আছে
ক্ষয়ে ক্ষয়ে গেছে ভোরবেলার হাসি , একবুক স্নান
পিছু ফিরে তাকানোর পরে যতদূর ম্লান হাসি লেগে থাকে
ততদূর-ই আমার সাধনা
কোটি বছরের ইতিহাস
স্মৃতি
....
দূরে কী তুমুল বাজনা বেজে উঠছে, শোনো আগন্তুক
যেখানে এসেছো বহুদিন পর, সেখানে তোমার
পুরনো সমাধি পড়ে আছে
খুঁড়তে যেওনা তুমি, নিজেকে না চিনতে পারা
অভিজ্ঞতা , অশ্রুর ভাষায়
ফাটলসদৃশ দাগ রেখে যায় পাথরের গায়ে
পুরনো সমাধির গায়ে ছমছমে বাগানের বালিকার হাতে
সেই পাথরের রং তখন অবাক
তখন কোথায় তুমি? হয়তো সমুদ্রচোখে খুব লবণাক্ত হয়ে আছো
এখন দূরের বাজনা শোনো তুমি, একা
যে বাজায়, সেই চুপ করে ছিল ,বহুদিন, দু:খ পায়ে পায়ে
এখন বারান্দা জুড়ে তার-ই কন্ঠ হয়ে আছে দ্যাখো
হয়তো
.........
যা কিছুই নুয়ে আছে, দীর্ঘ গাছ,অনিশ্চিত মুখ
যা কিছু কেবল-ই ব্যর্থ,চামড়া কুঁচকে ঝুলে আছে খুব
শোকগ্রস্ত শরীর যা কিছু, অথবা বুলেটবিদ্ধ দেহ
মন্থর টিকটিকির লাফ, জল যে জীবন নিয়ে গেছে
অথবা মাটির নিচে শুয়ে আছে যে অতীত, সব-ই
তোমার আমার গল্প, কয়েক জীবন ভেসে যাওয়া
একে তুমি ইতিহাস বলো?
লেবেলসমূহ:
কবিতা,
পশ্চিম বঙ্গের কবিতা,
হিন্দোল ভট্টাচার্য
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন