শনিবার, ২২ আগস্ট, ২০০৯

পাখিতীর্থদিনে


মাসুদ খানের কবিতা
...........
পাখিতীর্থদিনে


কুড়িগ্রাম
............

কোনোদিন আমি যাইনি কুড়িগ্রাম।

রাত গভীর হলে আমাদের এই প্রচলিত ভূপৃষ্ঠ থেকে
ঘুমন- কুড়িগ্রাম ধীরে ধীরে আলগা হয়ে যায়।
অগ্রাহ্য করে সকল মাধ্যকর্ষণ।
তারপর তার ছোট রাজ্যপাট নিয়ে উড়ে উড়ে
চলে যায় দূর শূন্যলোকে।

আমরা তখন দেখি বসে বসে আকাশ কত-না নীল
ছোট গ্রাম আরো ছোট হয়ে যায় আকাশের মুখে তিল।

অনেকক্ষণ একা-একা ভাসে নিখিল নভোভারতের রাজ্যে রাজ্যে।
দক্ষিণ আকাশে ওই যে একনিষ্ঠ তারাটি,
একসময় কুড়িগ্রাম তার পাশে গিয়ে চিহ্নিত করে তার অবস্থান।
তখন নতুন এই জ্যোতিষ্কের দেহ থেকে মৃদু-মৃদু লালবাষ্প-ঘ্রাণ ভেসে আসে।

সেই দেশে, কুড়িগ্রামে, ওরা মাছরাঙা আর পানকৌড়ি দুই বৈমাত্রেয় ভাই
কুড়িগ্রামের সব নদী শান্ত হয়ে এলে
দুই ভাই নদীবুকে বাসা বাঁধে
স্ত্রীপুত্রকন্যাসহ তারা কলহ করে।

নদী শান্ত হয়ে এলে
শাস্ত্রবাক্যে বাঁধা যত গৃহনারী
প্রাচীর ডিঙিয়ে এসে নদীকূলে করে ভিড়
প্রকাণ্ড স্ফটিকের মতো তারা সপ্রতিভ হয়।

হঠাৎ বয়নসূত্র ভুলে যাওয়া এক নিঃসঙ্গ বাবুই
ঝড়াহত বৃদ্ধ মাস্তুলে ব’সে
দুলতে দুলতে আসে ওই স্বচ্ছ ইস্পাত-পাতের নদীজলে।
কুড়িগ্রাম, আহা কুড়িগ্রাম!

পৃথিবীর যে জায়গাটিতে কুড়িগ্রাম থাকে
এখন সেখানে নিঃস্ব কালো গহ্বর।

কোনোদিন আমি যাইনি কুড়িগ্রাম।
আহা, এ-মরজীবন!
কোনোদিন যাওয়া হবে না কুড়িগ্রাম।


কন্যাসংহিতা
..............

১. নদীকূলে করি বাস.

কন্যা বারবার ঘুমিয়ে পড়ছে নদীতীরে
আজ সকাল থেকেই।
বারবার কেন ঘুমিয়ে পড়ছে?
যদিও নদীকূলেই বাস চিরদিন আমাদের,
একেবারে নদীতীরে নয়, একটু দূরে।
তবে কি জগতের সকল বিস্ময়ের শুরু হলো
এই ঘুমবিন্দু থেকে?

২. প্রাচ্যবচন.
.............

সকল উদ্বৃত্ত নিদ্রা আর আচ্ছন্নতা
পরিত্যাগ করে কন্যা একসময় গাত্রোত্থান করবে,
সকন্যা আমাদের উজ্জ্বল গৃহযাত্রা হবে-
সেই দুর্মর অভিলাষ ঘিরে এই সাধ্যসাধনা নিরন-র।

ওই যাঃ! কন্যা আবার ঘুমিয়ে গেল!
আর আমিও এই বসে পড়লাম লালধূলি নদীতীরে
কন্যাজাগরণ সাধনায়।

৩. প্রথম অধিকরণ-ঊর্মিকুমার ঘাট, ১ম বৈশাখ, ১৩৯৯ সাল.
..........................................................

কন্যা ঘুমিয়ে পড়ে নদীকূলে আজ ঊর্মিকুমার ঘাটে
আজ শুধু একটি বৃক্ষ নদীতীরে, একা আর হরীতকী।

৪. সাধ্যসাধনা.
................

আগুনে আকাশ আজ সারাদিন দোহন করেছে মৃত্তিকাকে।
বেলা পড়ে আসে
কত নিদ্রা যাও রে কন্যা...
গাত্রোত্থান করো
বাসকপাতা ধরে ধীরে উঠে এস।
রৌদ্রস্রোতে আহা রূপ ধুয়ে যায় নিরন্তর
চলো এইবেলা গৃহে যাই ফিরে।


৫. সাধ্যসাধনা.
................

তোমাকে বিধৃত করে থাকে
অশেষ-ছড়ানো দুপুরের ক্ষীরমাখানো হরীতকী বীজ
নিচে অকথ্য আন্দোলন,
ধীর চলমান তীব্র অকটেন, ম্যাঙ্গানিজ।
তবু
কত নিদ্রা যাও রে কন্যা...
জাগো, জাগো একটুখানি।

৬. পৌনঃপুনিক.
................
পুনশ্চ ঘুমিয়ে পড়ে কন্যা নদীকূলে, ঊর্মিকুমার ঘাটে।

৭. সাধ্যসাধনা.
..............

এইমাত্র শেষ দোহনপর্যায়।
ফেনা-উৎসবে, এখনই, উপচানো সার-সার গোলাকার মাটির বালতি।
বিশ্বের সব পাখি আজ ভিজে যাবে বালতিতে বালতিতে,
দণ্ডিত সারসসমেত (একেন পাদেন তিষ্ঠন্তম)-
চঞ্চু চঞ্চু থেকে ফেনা, সঙ্গে ধ্বনির তুঙ্গ মড্যুলেশন, ছিটাতে ছিটাতে।
দূর চক্রবালে ওই গোল দেয়ালে দেয়ালে
অযথাই জাগছে বৃষের পুরীষপিঠা
কোটি-কোটি গুটিবসন্তের আকারে
আচমকা, ঝলকে ঝলকে।
পালাই,
ছড়ানো সকল তৃষ্ণারেখা গুটিয়ে নিয়ে
চলো কন্যা পলিয়ে যাই এইবেলা নদীতীর থেকে।

৮. যখন ঘুমের ছায়া পড়ে নদীর ওপারে, ঘাসে.
.................................................

তোমার ঘুমের কাঁপা-কাঁপা ছায়া শুষে
স্ফীত হয় ওই বৃষের কুকুদ, নদীর ওপারে, ঘাসে।


পিঠাপুরাণ
...........

যে-উত্তাপ, শৈত্য আর জাদুর প্রভাবে
পোড়া পিঠাতেই উদ্গম অঙ্কুরের,
শুধুমাত্র রূপচিত্র বলে আটকে রেখেছ উপাখ্যান
ব্রোঞ্জ-মেহগনি কৌটার নিখিলে।

পিঠায় পিঠায় ভরে গেছে সব গাছ।
আজ, সে রাখাল, সেই অলস সৃজনকর্তা,
ছিটকে বেরিয়ে প্রকাশিত প্রথম নদীপথে ম্লেচ্ছভাষায়,
প্লাস্টিক ছেঁড়ার মতো শব্দ করে বায়ুতে বায়ুতে।

তার সব আফিম-কাম্যখ্যা দশা নিজেই খারিজ করে দিয়ে
মুচড়ে উঠে আসে সারা দেহে চূর্ণ-চূর্ণ অক্ষরসমেত,
প্রবাদপৃষ্ঠার।

একবার কালো, আরেকবার দিগম্বর
যথাক্রমে কালো ও দিগম্বর হয়ে
ওই দঁড়িয়েছে পিঠাবৃক্ষতলে প্রকাশ্য দিবালোকে।
স্ফারিত তার চক্ষু ত্রিভুবন
অসংখ্য ঝকঝকে ঝুলমান পিঠার প্রকাশে।

এতকাল পরে, আজ এই পরম জঙ্গম দিনে
পুনর্বিবেচনার জোর দাবি হেঁকে হেলেদুলে আসে
ওই নাঙ্গা কালো কামলিওয়ালা
আমাদের মন্থর ম্যাজিশিয়ান আহা আলস্য মধুরেণ...
পিঠাকীর্তি-পুরাণ ওই...

বিছানো কম্বলের ওপর দু-চারটি টুপটাপ পিঠাফল।

সমাবর্তন
..........

স্নাতক যাচ্ছে গুরুগৃহ থেকে ফিরে
সমাবর্তন আজ সমাবর্তন।
স্নাতক মিশবে ব্রহ্মপুত্র-জলে
ভাসাবে ব্রহ্মচর্য নদীর স্রোতে
সমাবর্তন আজ সমাবর্তন।

আবর্জনাই মানুষের শেষ উত্তর-অধিকার
ব্যাখ্যাবিহীন দাঁড়িয়ে রয়েছি যুগ-যুগ প্রাঙ্মুখ
পূর্ব দিকটি অধিক মৌল, অধিক অর্থবহ
দাঁড়িয়ে রয়েছি অনিঃশেষের প্রশ্নে আন্দোলিত।

স্নাতক যাচ্ছে গুরুগৃহ থেকে ফিরে।

সমপ্রসারিত উপবাস আর তৃষ্ণার কাচ ফেটে
গড়িয়ে পড়ছে ছাইরঙা স্রোত জলে
বহুবল্লভ যাবে আজ খুব দূরে
তার সাথে যাও, দক্ষিণে যাও, যেখানে ইচ্ছা খুশি
টান্টালাসের উত্তরসূরি তুমি।

স্নাতক যাচ্ছে গুরুগৃহ থেকে ফিরে।

জেব্রা আসবে ব্ল্যাক-আউটের রাতে
লাফাতে লাফাতে। কাকভোরে কাকাতুয়া।
পশম পিছলে ঝরবে তাদের তির্যক দস্যুতা।
উত্তল সন্ত্রাসে
বিরামচিহ্ন কাঁপতে কাঁপতে ঝুঁকে পড়ে যাবে খাদে।

স্নাতক যাচ্ছে গুরুগৃহ থেকে ফিরে।

ব্রহ্মপুত্রে ভাসে মৃতদেহ অনুজ্ঞাপত্রের।


ত্রিজ
.............................

মধ্যরাতে ভয়ে ভয়ে চোখ তুলে দেখি,
অসংখ্য প্রিজম ফুটে আছে পুনর্ভবা নদীপারে
আর ঠিক ডাঙায়, জলের সমতলে,
হাওয়ায় হাওয়ায় করতালি-
অবিশ্রাম বর্ষণের মধ্য দিয়ে
তুখোড় তরুণ আলোকের অধ্যাপনা ভেসে যায়।
ধীরে ধীরে বিবর্তিত হতে থাকে রং
এত রং, এত আলোবিচ্ছুরণ,
লোভাক্রান- ক্ষুদ্র মৎস্য আমি, তাই দেখে
সমস্ত স্মারক ভেঙে ভেঙে
ঘেষটে ঘেষটে উঠে এসেছি ডাঙায়।
জলের বিপুল ভরকন্দ্রে আলোড়ন ওঠে
সহস্র বছর ধরে জাল আর উত্তেজিত লেজের বিক্রিয়া
আঁশটে, কানকোয় বারংবার ঘর্ষবিদ্যুৎ জ্বলে উঠবার কাল
বিস্মরণ, অসম্ভব সাদা বিম্মরণ
জ্বলে শুধু গোলার্ধে গোলার্ধে !

ডাঙায় প্রথমে খসে গেল বাঁকা লেজের অহং
ধীরে ধীরে গুল্মীভূত হলো দেহ
কামারশালার গনগনে কান-লোহা, আগুনের ফুল আর ফুলকার অক্সিজেনে সখ্য হলো
আবহে আগুন লাগল
প্রেক্ষিতে প্লাবন।
সহসাই,
ভূমিগর্ভে কক্ষে কক্ষে ছটফট চৌকাঠ ভাঙার শব্দ
পিতা তার দুই বোবা কন্যা নিয়ে মার্চের দুপুর চিরে
সাঁই-সাঁই সোজা শুদ্রপাড়ার টিনের চাল ছুঁয়ে উড়ে যায়
মুহূর্তের মধ্যে ঝলসানো হবে লাস্যময়ী তরুণীর ঝাঁক
কঙ্কালের লোভে বসে বসে ওই ঝিমাচ্ছে
পৃথিবীর নিঃস্ব প্রাণিবিজ্ঞান।
দূরে উঁচু-নিচু উপত্যকা, খুব অস্পষ্ট গৃহগামী মানুষের রেখা
পাঠাগার থেকে চোখ মুছে ফেরে ব্যাধ
ধাতুবিষে বেঁকে বেঁকে ওঠে মুদ্রা
এলোমেলো এলোমেলো হন্যমান নীল উড়োহাঁসের চিৎকার
আজ কি ত্র্যহস্পর্শ?
এত ঝুঁকে ঝুঁকে হাঁটছে কেন চাঁদ ত্রিশূলবিদ্ধ?
শজারুরা ধাবমান হলো দু্রত

উচ্ছ্রিত কাঁটায় কাঁটায় আটকে থাকল
দীর্ঘ লাল তোয়ালের উচ্ছ্বাস।

নাকি পুনর্ভব হবো ওই পুনর্ভবা জলে?



ধূলিবিদ্যা
................

কোটিযুগ পরে মাত্র আজ অবহেলিত ধূলিবিদ্যার প্রথম পাঠ:

-স্বর্ণ ক্ষয়ে ক্ষয়ে কোথায় গিয়ে জমা হয় জানো?
তোমার শরীরের স্বর্ণ ও প্লাস্টিক?
-আকরে।
-আকর কোথায় তবে আজ?
-এই যে পূর্বাপর ধূলির প্রসার
এ-ই একমাত্র আকর-স্বর্ণের, প্লাস্টিকের।

ধূলি?
মৃত্তিকার কনিষ্ঠ উপজাত।
আবার, মৃত্তিকা?
মহাজাগতিক ধূলিরাশির শেষতম ঘনত্বজাতক।
তাই এমন কোনো পদার্থ নেই, যা বিরাজ করে না মাটিতে।
আর দ্যাখো, মৃত্তিকা বড় জীব-উদ্দীপক-
পাথরও, পুঁতে রাখলে, ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে।

আর এই ধূলিবৃন্দ, দূর থেকে গ্রেফতার করে আনে,
সঞ্চয়ে ছিল না যাহা এতকাল, সেই সুদূর সুর্মার ছাই আর
মেষের পশম।

একটি ক্ষুদ্র ধূলিলিপ্ত আয়তন এবং মদীয় অবস্থান:

বালিচূর্ণস্বর্ণরেণুভস্মকার্বনকর্দমকণাকুলহরিনের নিখিল মাখামাখি
দিয়ে রচিত এই ধূলির প্রেক্ষাপট-
তারই মধ্যে ক্ষুদ্র কালো বালিকণা,
নিহিত হয়ে থাকি শতক বছর।
বেগবতী রাজ্ঞী বক্ষ মাড়িয়ে মাড়িয়ে যায়
পদধূলি সংগ্রহ ক’রে।
দূরে কারা যেন দল বেঁধে মঞ্চ ভাঙছে
থেকে থেকে তার গুঞ্জন ভেসে আসে।
আমার চক্ষু দুটি আজ অঞ্জন ও দ্রব্যগ্রাসিত
ঝাপসা দৃষ্টিতে দেখি-
মঞ্চলিপ্ত এক মহামহিমের সর্বপাৎলুন ধরে টানছে
হিংস প্রজাকুল, এ-ই ধূলি-অভিমুখে।
আর এই ঋতু প্রজাদের অগ্রহায়ণের।

মাকড়, শস্যদানা, কাক আর কাকতাডুয়ার
চতুর্ভুজ দ্বন্দ্বের মধ্যে বিকশিত খরিপশস্যের প্রগতি-
আমার দক্ষিণে প্রবাহিত উজ্জ্বল বেগে
আমি কাত হয়ে দেখে যাই এতসব ইতিবৃত্ত।

ধূলিমগ্ন আছি, থাকি,
সম্ভবত এবছরও থাকতে হবে।


হন্যমান
......................

আমি আর কিছুটা মুহূর্ত ফিরে চাই
ভূপৃষ্ঠের যাবতীয় জলপাই করব খরিদ
বানরের সব খর রাত্রিগন্ধী থাবার কঙ্কাল।
সবগুলি মাত্রা থেকে ছিটকে ছিটকে পড়ে যাবে চন্দ্রবিন্দু
আর আমি অন্ধকার ঘাসে ঘাসে দ্রুত
দিগ্বিদিক চন্দ্রবিন্দু কুড়াতে থাকব।
ফ্লাড-লাইটের শীর্ষে শীর্ষে
বিশাল তরঙ্গ তুলে ছুটে যাবে আমার গালিচা
গন্তব্যে ঝুলন্ত পাঁচ অঙ্কের ম্যাজিক বর্গ-ওই
বর্গ ভেঙে ঢুকে যাব নিশিকান্ত অন্তঃপুরে। দুরে
স্ফুলিঙ্গ উঠবে।

আমি আর কিছুটা মুহূর্ত ফিরে চাই
ভূপৃষ্ঠের যাবতীয় জলপাই আর
সর্বক্ষমতার কেন্দ্রীভূত চূড়া
খুঁজে নেব হাতের মুঠোয়।


এই লাল অন্তিমে, এখন
সব তবে একসঙ্গে শুরু হয়ে যাবে!
তালুদেশে আরো একটি নতুন তর্জনী গজানোর ব্যথা
তা-ও এই মুহূর্তে, এখন!
প্রজ্জ্বলন- ক্রোধ নিয়ে এই-এইমাত্র আড়মোড়া ভেঙে
জেগে ওঠে ইন্দ্রিয়ের মাটির গোলেম
সহস্র বছর পরে, অশ্মীনিদ্রা শেষে-
এক বাহু ভাঙা, ঠাণ্ডা, গলনপ্রবণ,
বারবার জানু ভেঙে পারদ খিমচে ধরে ধরে তবু উঠে আসে
পারদস-ম্ভের চূড়াস্য চূড়ায়-আর কোনো উচ্চ নেই।
খুব নিচ থেকে ওঠে বুদ্বুদ-বুদ্বুদ কান্না
পিরানহা মাছের। মেরুনরঙা, প্রাচ্য।
সর্পবিষে চিড় ধরে ইতস্তত বনস্পতি বৃক্ষের বল্কলে।
আর এ-ই একমাত্র দৃশ্য
একমাত্র দ্রষ্টব্য এখন,
অন্যসব ভঙ্গুর ও গ্রীষ্ম।

সমস্ত কোষের ক্রিয়া ঠিক থেমে যাবার মুহূর্তে
লিবিডোর তাড়নায় আরো কিছু অগোছালো হবে।

বৈশ্যদের কাল
......................
ধীরে ধীরে এই ভূমিপৃষ্ঠে ফিরে এল বৈশ্যদের কাল।

সার্থবাহ নিয়ে আসে ঝলমলে বাসকপাতার কোলাহল
দুঃখ সেরে যায়, অসুখ সারে না।
প্রতিদিন লাল রং ভালোবেসে অনূঢ়া অনল
খেয়ে নেচে নেচে বেঁচে যায় ছেলে।
অসুখের ওই পার থেকে ছোটমাসি পুরো নাম ধরে ডাকে,
‘আয় দ্যাখ্, বৃক্ষেরা কর্তব্য করে না
কেবলি কলহ করে মেঘেদের সাথে।’
অমনি মাথাভর্তি ঝিলিমিলি হিলিয়াম নিয়ে
নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে
ওই উঁচু-উঁচু মেঘ থেকে তিনচক্রযানে চেপে
ছুটে আসে ছেলে।
বাতাসে বাতাসে ঘর্ষতড়িৎ জ্বলে ওঠে।
চকচকে নিকেলের মতো তারাবাজি পোড়ে।
তারপর একদিন ঘুমন্ত স্ত্রী আর পুত্র রেখে ঘন রাতে
নিরুদ্দেশে যায়
নিরঞ্জনা নদীকূল শুধু কাঁপে অকূল তৃষ্ণায়।

প্রকৃতি অলস ঢঙে এসে উপগত হলো ওই পুরুষের
পিঠের ওপর
কালচক্রে জন্ম নিলো জন্তু
অর্ধেক জলজ আর অর্ধ উর্ধ্বচারী প্রাণীর মতন।
রক্তচক্ষু,
শিরদাঁড়া কাঁটাঙ্কিত, অসম্ভব বর্ণাঢ্য যুগল ডানা
নিম্নাঙ্গে জলজ পিচ্ছিলতা, লেজ
মুখ দিয়ে অবিরল তেজ বের হয়ে ভাসালো ভূখণ্ড
কী যে কাণ্ড হলো!
ডাকো বৈদ্য। আহা, ডাকো না বুদ্ধকে।
সে তো বোধিপ্রাপ্ত, সে এসব জানে, তাকে ডাকো।
তারপর ধূলিঝড় হলো, হিমবাহ গেল শতযুগ,
ধীরে ধীরে এই ভূমিপৃষ্ঠে ফিরে এল বৈশ্যদের কাল।

ওইখানে হই-হই রই-রই পঞ্চকাণ্ড মেলা বসতো
হাজার বর্ষ আগে
আজ শুধু একজোড়া নিরিবিলি জলমগ্ন বৃক্ষ বাস করে।
দূরে ওই বৃক্ষমিথুনের থেকে, থেকে-থেকে মিথেন জ্বলে উঠলেই
ছেলেরা ও মেয়েরা একালে বলে ওঠে, ওই যে ভূতের আলো দেখা যায়

নীল-নীল আলো দেয় ছেলেটির শরীর, অশরীর।


উভলিঙ্গত্রয়
......................

পুংকেশের বহু বাহুস্থর
আঁকড়ে আছে গর্ভগহ্বর
প্রত্নতম গর্ভগুহাতলে
স্বয়ংক্রিয় লুসিফেরিন জ্বলে
বারংবার বস্ত্র দিই বটে
বস্ত্র ফেটে পরাগপাত ঘটে।

পক্ষ-লেজে শূন্যে উড়ে যায়
আকাশ থেকে জন্তু খুঁটে খায়।

পুঞ্জীভূত উভলিঙ্গত্রয়
ঈশ্বরের উপভগ্নীদের
ছিঁড়ছে টেনে ডানা, ডিম্বাশয়।
খিদের, এই উপভোগ খিদের।

সূর্যহারা বিষমাখানো ভোরে
তেজস্কর রশ্মিজতু ছোঁড়ে
আকাশধনু। মুখে রত্নতীর,
ক্ষেত্রে ঢোকে স্থুল যোদ্ধাগণ
আসছে ব্যেপে বহুশৃঙ্গ ভয়
পটভূমিতে বর্ণাবর্তন।

ভূপিঠ ভাসে ঋতুবিচ্ছুরণে
বায়ুস্তরে যত অম্লজান
নিচ্ছে শুষে লিঙ্গমূলত্রাণ
মনুষ্যেরা পালিয়ে বাঁচে বনে।

বিশ্ব পোড়ে মূর্খ ফার্নেসে
নামছে উভলিঙ্গ হেসে হেসে।


প্রতিষ্ঠান
........

এপ্রিলের সমান উঁচু ওই মনুমেন্ট
দুলে দুলে মাথা নাড়ে
গর্ভিণীর সান্ধ্য ইচ্ছার মতো, দূরে।

বীজায়ন প্রক্রিয়া, তারও পূর্বপার থেকে
জন্মদিন ভেঙেচুরে, দেহ তো হয়ইনি, দৌড়ে আসে সীমারেখা।
প্রকল্পের প্রভাবে জোরালো সোডিয়াম জ্বলে।

আলজিভ ভূতপূর্ব ঘনত্বে উঠে আসে
হিক্কায় ন্যক্কারে, রাত্রির।

ওই সটান প্রত্যালীঢ় ভঙ্গি তোর প্রধান নিষাদ,
জাফরান ওড়ে চূর্ণ-চূর্ণ রৌদ্রের সিলিকন।
মনুমেন্ট, তেজকমপ্র তোর চুলের ইতিবৃত্ত।

কোন বর্গে জন্ম তবে এই শুষ্ক নিষাদের?

অসংখ্য রেখা, কতো নীবিবন্ধ, জাহাজযন্ত্রণা...

প্রতিষ্ঠান উপচে উপচে পড়ে যায়
টুপটাপ জিরাফ ও যজ্ঞডুমুর।

উর্ধ্বগমনের দিন
...................

উপবাসে উপবাসে স্বচ্ছ হয়ে আসে এ শরীর
এখন এই কায়া, এই গৌর ট্রান্সপারেন্সি-
একে আমি আজ
কোথায় লুকিয়ে রেখে তবে যাই এই বনস্পতির বিরলে?

দ্রব্য। দ্রব্যপুঞ্জের এক নিখিল চুক্তিময়তার
কেন্দ্র-এলাকায় বসবাস।
লীন হয়ে কেবলই বিরাজ করে যাওয়া।

পুরাতন বস্তু থেকে উত্থিত সেই কবেকার
ব্রাত্য সংকেতেরা এতদিন পর আজ কেন ধেয়ে আসছে
তীব্র জ্বরকম্পন নিয়ে রেডিও তরঙ্গে-তরঙ্গে?

উপবাসে উপবাসে অনঙ্গ হয়ে আসে এ শরীর।

আজ উর্ধ্বগমনের দিন।
এই কায়া, এই নিঃসীম বিভ্রান্তি,
ছায়াসহ, কোথায় লুকিয়ে রেখে
তবে যাই উর্ধ্বগমনে?



একটি চিত্রিত হরিণের পেছনে
একটি চিত্রিত বাঘ ছুটছে
............................

বালি। লালা।
অকস্মাৎ নায়িকাচুর্ণের দিগ্বিদিক ঘ্রাণ।
ধর্ম ও বীর্যবাসনা প্রবল হলে জাগে টান।
টান থেকে গতি।
আন্ডারক্যারেজ গিয়ার ............. গতিবর্ণ-পপিফুল
গতিগন্ধ-পপিফুল, মদপিচ্ছিল মৎস্যকন্যা।

ক্রমে গিয়ার পরিবর্তন ............. গতিবর্ণ-টগবগে লাল
গতিগন্ধ-পোড়া রক্ত, তাম্রডিজেল।

চিত্রাবাঘের ঘ্রাণের ঝিল্লিপথে
পোড়া মবিলের ধোঁয়া এসে লাগে মৃগইঞ্জিন থেকে।
উত্তেজনায় চাপ গিয়ে লাগে চিত্রার ত্বরায়কে
আর তিরতির কাঁপা স্পিডোমিটারের কাঁটা।

ক্রমে অবিশ্বাস্য ত্বরণ ............. বর্ণ-উজ্জ্বল উল্কা।
গন্ধ-পটাশিয়াম সায়ানাইড।

ক্ষুধায় ধর্মলালায় যৌনে ও প্রেমে
হরিণ ও চিতার রূপচিত্রগতি অবিরল,
চকচকে যুগ্ম ট্রাজেক্টরি।
যেন এক বিস্তারিত অসিলোস্কোপ-
তাতে অসংখ্য ধাবমান হাফ-সাইন-ওয়েভের
দ্রুতদীর্ঘ সিরিজ।

আর
তিরতির কাঁপা উচ্চাভিলাষী কাঁটা।

লাল
.........

প্রভূত খনন শল্যক্রিয়া থেমে গেলে
অফুরন্ত শব্দ আর গর্জনের বায়ব-বুদ্বুদ
খনিজের রূপ ধরে উঠে আসে।
হরপ্পার কোষে খুব হাতুড়িগর্জন, হ্রেষা, সিংহের বৃংহণ
শাবল মোহর শিশু সিন্ধু সুরকি পাখি লেদ লায়ারের মিশ্রিত কূজন
আরো বহু শব্দ ছিল
সমস্ত শব্দরাশি ক্রমে কাষ্ঠীভূত হয়ে
তবে ওই সারি-সারি সাজানো বৃক্ষ।
প্রমাণিত হলো,
জীবের একটিমাত্র রক্তসঞ্চালন যন্ত্র ছিল
বিপরীতে দুটি রশ্মিচচ্ছুরণ যন্ত্র-
না থেকে উপায় ছিল না।

জনানি-কে বলে রাখি-
এইমাত্র দৃশ্যাবলি যথার্থই হল্য, হিন্দু ও বৈড়াল।

হৈমবালা ছোটভাই-কোলে মির্জাপুরে চলে যায়
মোরগশীর্ষের লগ্নে
গোধুমের দিনশেষে...দাঙ্গা...


প্রজাপতি
.........

প্রজাদের ঋতুরক্ত রেণুকায়
ভূগোল ভিজতে থাকে
সীমানাবিলাস ভণ্ডুল হয়ে যায়।
এহেন জননদিনে কোথায় রহিলে প্রজাপতি !

ট্রান্স-আকাশগাঙ্গেয় পথ
মাঝে মাঝে ছোট সিল্কি ব্রিজ-
তাতে চড়ে দোল খায় প্রজাপতি পুলহ পুলকে
পরম বৃদ্ধের মতো, মুখর মিথ্যালোকে
শুধু ঝুলমান ব্রিজ।

পিতা ডাকে কাকাতুয়া,
খোকা ডাকে তাতাতুয়া
তবু হায়, প্রজাপতি, ওই দূর মহাকাশে শুধু
জ্বলজ্বলে জ্বালানি-জংশন হয়ে থাকে।

পিরিচবাহনে তুমি
টিমটিমে লণ্ঠনে তুমি
কতদূর থেকে আসো বুদ্ধাসনে,
কচুরিপানার মতো দুইপাশে
মঘা, মেঘ, বুধ সরিয়ে সরিয়ে।
এসে পৌঁছতে পৌঁছতে হায়,
মাতাল বরাহকল্প শুরু হয়ে যায়
এই অঞ্চলে।

এ-যাত্রায়, পতি, শিখে যেয়ো পিপীলিকা-আহার
আর
বহিত্রচালনা, উত্তাল আকাশগঙ্গাপথে।

সূত্র
.......

আগুনকে খুঁজে খুঁজে উড়ে আসে দুর্বোধ্য ইন্ধন।
এদিকে কার্পাস তঁকে দেখিয়েছে তার সূত্র। সেই
সূত্র ধরে এতদূর অব্দি চলে এসেছে আগুন।
সুগঠিত হয় জলপোড়াগন্ধ, হলুদ-হলুদ।
অভিশাপ-অঙ্কিত লণ্ঠন দুলে দুলে চলে যায়
বহুদূর-যেন বহমান একপুঞ্জ বিনষ্ট অক্ষর।
অন্যদিকে আগুনকে খুঁজে ফেরে দুর্বোধ্য ইন্ধন
আগুনকে জমকালো দুর্বোধ্য ইন্ধন।


স্রোত
.........................................
১.
দুইদিন আগে আমাদের খামারের পাশ দিয়ে
সহসাই ঝলকে ঝলকে শক্তির স্রোত বয়ে গিয়েছিল
কত প্রাণী এসেছিল!
পাত্র-পাত্র শক্তি ধরে নিয়ে চলে গেল।

২.
মূর্ধা থেকে মূর্ধন্য-ণ কে ণণণণণণণণণণ ভঙ্গিতে ফেলে দেব
আগে পৌঁছাই আত্রাই।
আত্রাইয়ের পরেই লৌহ। লৌহ মানে লোহা।
লোহা আর গঙ্গাফড়িঙের মিলিত গর্জনসমবায়
কেউ বলছে, গর্জনকাঠ। নিরেট। দেখাই যাচ্ছে লেজ নেই।
মেধা আর মহিষের মধ্যে তৃতীয় কোনো ধারণা নেই
কিন্তু কেউ জানছে না, আসলে এ-দুয়ের মাঝখানেই কালীসন্ধ্যাবেলা
ওই নিস্তরঙ্গ গর্জনকাঠ শুয়ে থাকে। কুকুরকুণ্ডলী দিয়ে।

খামারে ও অঙ্গনে ঝুলছে গুচ্ছ-গুচ্ছ চিল ও তৃষ্ণা।
উদ্ভবের আদিতে ছিল ওই সুত্রহীন ভূবনচিল,
প্রগমনেও চিল,
চূড়ান্তে তৃষ্ণা।
আর এ-বছর জীবের মন নৈশ, বুদ্ধ, চতুষ্কোণ নৈশ
এবং ত্রিশ ডিগ্রি কোণে উৎক্ষিপ্ত মূর্ধন্য ণ-এর সঞ্চার পথের মতো জৈব।

৩.
বিশ্লেষণে যায় চলে এক বিশাল আদি নাস্তি
বিস্ফোরিত নাসি- ফেটে দুই ধরনের অস্তি:
ধন্ত এবং ঋন্ত।

৪.
স্থান ও কালের সংকর ধাতুর ধারণা দিয়ে প্রস্তুত গরিষ্ঠ চাকা
চাকা ঝিমাতে ঝিমাতে যায় শেষরাতে বহিস্থবাটীর ধার ঘেঁষে।
নিঃশব্দ। শুধু ওই চক্রবর্তী ইস্পাতের ক্ষণঝলক ঝরে প্রহরে প্রহরে
পাঠশালায়, খামারে ও অঙ্গনে।
বালকেরা ঝলক কুড়াতে চলে যায় পিছে পিছে বহুদূর।
সঙ্গে সঙ্গে বিশাল ডানায় অন্ধকার করে নেমে আসে
শতযুগ আগেকার ফাঁকি-দেওয়া গণিতের ক্লাশ।

৫.
শ্রীকৃষ্ণকে মাঝে মাঝে তাই লীলাকৃত্য ফেলে
উষাকাল থেকে
বিবিধ আমিষ ও অ্যামিনো অম্লের সামনে দাঁড়াতে হয়
নিষ্পলক, নিয়তিবাধিত।
দেখে যেতে হয়-
আমিষে এসিডে ঠিক কখন উন্মেষ, প্রথম স্পন্দনের।

৬.
ধীবর ও সালামান্ডার পর্ব.
এই ব্যাখ্যাবিবর্জিত মহামাঠে
অপরাহ্নে, প্যান্ডোরার বাক্সটি
কুড়িয়ে পেয়েছে ধীবর।

এদিকে সালামান্ডার কিছুতেই জল ছাড়ছে না
আঁকড়ে আছে সহ্যগুণে, উদ্ভব-
লগ্ন থেকে, নৈর্ঋতেও যায় না সে;
গুপ্তজলে আকর্ষণ রাখা আছে।
ধীবর পুঁতে রেখেছে ওই আকর্ষণ বহুদিন।

বিবিধ তৈজসপত্র বারংবার অরক্ষিত রেখে এই
ধীবর ধেয়ে যায় জলের দিকে, ধু-ধু।

ধীবর ডেকে যায় ক্রমশ তাম্রস্বরে, উঠে আয়
অগ্নিসহ, ডাঙায় উঠে আয়, অগ্নি, দিব্যাগ্নি আছে, দেব,
আছে বাক্সাবশেষ বটে।

৭.
প্রক্রিয়ার নাম বিকিরণ
রক্ত:
সারাদিন বিভিন্ন রং লুকানো-শেষে সন্ধ্যায়
লাল লুকাতে গিয়ে প্রাণান্ত। ব্যর্থ। লজ্জা।
তবু বিনীত বিশ্বস্ত পরিবহন।
বিপুল তরঙ্গদৈর্ঘ্য নিয়ে অন্তরালে কোলাহল।

সবজি:
ঝুড়িভর্তি উপচানো সবুজ উলের উচ্ছ্বাস
চারপাশে ক্রীড়মান ঢেউ ঢেউ রশ্মি-
মার্চ-মরীচিকা। দূর থেকে দেখা।
অকস্মাৎ দুম করে সমস্ত সবজি নিভে গেলে
পৃথিবীতে কালো মেয়ের উদ্ভব।
সমুদয় বর্ণ বর্ণভেদ শুষে শুষে
কালো হয়ে বসে থাকে কালো মেয়ে
রাংতাচ্ছট রাংচিতাবনের শীর্ষে শীর্ষে, পা মেলে, সর্ববর্ণশোষক।
কালো লালা, কালো মন্ত্রডিম্বলালা ছড়িয়ে দিয়েছে ব্যাপ্তে।

৮.
মেঘ, ঠোঁটে নিয়ে একখণ্ড সুদূর রেশম, নুড়ি,
যাও চলে অঞ্চলে ছড়িয়ে আলোড়ন।
মেঘ, ও বিশপ, যাও ধীর-ধীরতর
দ্রিপ-দ্রিপ
পার হয়ে ওই কৈলাশ, অলিম্পাস।

৯.
কায়মাসুদ
পৃথিবী-গ্রহ। সূর্য-নক্ষত্র। ছায়াপথ-গ্যালাক্সি।
অঙ্কহীন গ্যালাক্সিগতির বিন্যাস।
ঘোড়ার ইলাস্টিক জিনগদির মতো এই বিশ্ব-
এই এত যে গ্রহ উপগ্রহ নীহারিকা সুপারনোভা-
মাসুদ খান সত্তা নিয়ে অন্য দ্বিতীয় কোনো কবিপ্রাণী নেই।
থাকছেন না। যদিও-বা কোথাও জায়মান হতে যায়,
অমনি শুরু হয় সংকটের। অবশেষে টিকতে পারে না।

কিন্তু আড়ালের ঘটনা এই যে,
ঋণাত্মক বিশ্বে প্রতিমাসুদ থাকেন
ফ্লেকজিবল পাইপের মতো গলা।
আমার বিপরীতে কবিতা লিখে যাচ্ছেন।

১০.
পরিত্যক্ত এরিনায় নৈশ অধ্যায়
মৃত এই প্রেক্ষাক্ষেত্রে কারা আসে আবার সজীব?
ধৃতরাষ্ট্র! হাঃ, সেও এসেছে ! সে তো এখন পর্যন্ত জ্যান্ত, জীব।
জীব আর কতটা দীপনশক্তি ধরে রাখে এই ব্যাপ্ত
ক্লীব অন্ধকারে ? জাড্য থেকে দ্রুত মুক্ত হয়ে এস জড়, তুমিই পর্যাপ্ত
শক্তিশীল। অন্যথায় আজ খুব রক্তা-
-রক্তি হবে। উপরন্তু আসক্তি থেকেই যাবে যাক, অবিভাজ্যের প্রবক্তা।

প্রকাশ থাকে যে, লাশে জ্যান্ত আজ ইকেবানা, চূড়ান্ত বিন্যাস।
লাশ জ্যান্ত লাশ লাশ লাশ লাশ লাশ জ্যান্ত লাশ।
যতটুকু তাপ পেলে সোজা নির্বেদাঙ্কে পৌঁছা যায়, ঠিক
ততোটুকু দস্তা ছিল, তেতুলবৃক্ষও ছিল ঝুঁকে উপলব্ধির দক্ষিণ দিক।
তাপ আর তেতুলবৃক্ষ তো পৃথগন্ন নয়। নিঃসঙ্গ মৌমাছি তার ফরমিক বিষের
প্রতাপ হারায় জমজমাট কংগ্রেস থেকে ফিরে একা। তাহলে কিসের
অবতারণা এ? শেষ পর্যন্ত ব্রহ্মের এই অণ্ডটিতে ছোট ছিদ্র হবে, ছাইরং
ধারণা নির্গত হবে। অবিশ্রাম ধারণার স্রোত শুধু-গদ্যাকৃতি, লু, লিপ্ত এবং
স্থুল। শাস্ত্র খুঁড়ে তুলে আনা শেয়াকুল গাছ; ডালে গর্জমান লালমাংস
হুলো বিড়ালটি-নৈশ ডিজাইনে ঢোকানো শরীর দ্রুত তিন-তৃতীয়াংশ।
শাস্ত্রের সে পাশ দিয়ে বিপর্যয় বেঁকে দৌড়ে যায় সদ্যোছিন্নমুষ্ক ষাঁড়ের গতিতে
অস্ত্রের প্রাবল্যে, ঠিক বিপরীতে, ঝাঁক-ঝাঁক ফলে থাকে কার্পাস, সিঁড়িতে।

মিলে যাব, হেঁটে হেঁটে, সুদূর-উদ্দিষ্ট, আলোজ্বলা, কাপড়ের।
চিলেকোঠা থাকে, কালো পিপীলিকা থাকে অনেকের। অবিমৃষ্যকারীদের ?
কোনও রন্ধ্র নেই, পরিপাশে
শোনো, নকটার্ন ভেঙে ভেঙে যায় আজ এই অনর্থক বরেন্দ্র-উল্লাসে।

১১.
অতীতকে গোধূলি বানিয়ে, সঙ্গে নিয়ে, বৃষ্টি আসে
আর আচম্বিতে এক ঝলক ঝাপসা হাসিরেখা, পিতার,
বহুচূর্ণ।

১২.
দোলনের সবথেকে উঁচু অবস্থান থেকে সব
বর্তুল দেখায়। পোর্সেলিনে তৈরি মানুষ-মানুষী.
উদ্ভিদের মূলে বাঁধা জলযান। শান্ত জল। তবু
বোধ হয়, নিরুদ্দেশ এই পরিব্রাজন, অশান-।

১৩.
ছিটানো ভস্মের মতো পৃথিবীর সব জলে জলে
চূর্ণ নীহারিকা ঝরে। তা থেকে মাছের অঙ্কুরণ-
স্ফটিকের লেজ, বদ্ধপক্ষ, তবু জন্মভ্রামণিক।
ভ্রম, শুধু ভ্রমাত্মক এইসব দোলনসময়।

১৪.
দিগন্তের একেবারে কাছাকাছি একা একটি কুঁড়েঘর,
ডানে বামে আশেপাশে কোথাও কিচ্ছুটি নেই।
কারা থাকে, ঘরে!?


আপেল
...............

আপেল পেকে এস ক্রমে,
ধীরা ধরিত্রী ডাকে, আয় গর্ভকেন্দ্রে,
স্থান, কালাচাঁদ আমার।

ঢিলবন্দি ফল হাকাকার করে কেঁদে ওঠে।

আপেল পেকে আসে।
অতিগাগনিক মেঘ এসে ছায়া দেয়।
আপেলবাগানের মালিক ঝিমিয়ে ঝিমিয়ে
একসময় ঘুমিয়ে পড়ে।
অলক্ষ্যে ফল ঝড়ে পড়ে ধরিত্রীর ত্বকে।
অবশেষে। বিবিধ মাথুর শেষে। মাধ্যপ্রেমে।
লাফিয়ে বলে ওঠে, মেদিনী বিদায় দিউ,
পঁশিয়া লুকাউঁ কেন্দ্রে।

আপেলবাগানের মালিক এসব কিছুই জানে না।
শুধু কনিষ্ঠ ভ্রাতুষ্পুত্র...

টানেল
................................

পিঠের ওপর হেঁটে যায় কাঁচা জল
জলের প্রবাহে নতজানু গ্লেসিয়ার
চন্দ্রতাড়িত জাহাজের তলদেশ
খেয়েছে জলের উদ্ভিদ, শ্বেতসার।

তরলতা ধীরে ধীরে ঘন আয়তন
জমতে জমতে হয়ে যায় দুর্বহ
আকাশ ভেঙেছে মাধ্যাকর্ষে আজ
ত্বরণে, দ্রবণে ভার এত ! ভারসহ।

টানেল যে হলো বিকল্প মৃত্যুর
হারানো মানুষ টানেল লুকিয়ে ফেলে;
ঈশ্বর নেবে গণিতের আশ্রয়
সবাই ফিরেছে, ফেরেনি একটি ছেলে।

অরেঞ্জ নদীর তীরের মানুষদের
চামড়ার নিচে বেড়ে ওঠে মেলানিন
শিরাপুঞ্জের ডালে ডালে লাল দ্রোহ
ছিঁড়ে ফেলে তারা সভ্যতাকৌপীন।

টানেল জানে না এসব কাহিনি হাবা
বোঝে না সে গতি, রক্তের চলাচল
শুনছ টানেল, ভূতলপৃষ্ঠে জাগে
লুপ্ত মানুষ খুঁজবার কোলাহল।

মৃত্যুতে নয়, টানেল, ঢুকবে এক
স্মরণকালের বিব্রত মৌমাছি
আগুন অসুখ দুই হাতে সব খায়
পাঁক-থেকে-ওঠা ক্ষিপ্ত সব্যসাচী।

লব্ধ শ্রবণ ঢেকে দেয় বারবার
জন্তুর মতো উলঙ্গ সন্ন্যাসী
কাল থেকে আমি বিলুপ্ত হয়ে যাব
কাল থেকে আমি টানেলের অধিবাসী।


মানুষ
...............................

প্রাণিশূণ্য নদীচরে নির্বাসিত একটি বিড়াল।
কালো ও নিঃসঙ্গ।
(চুরি করে পাত্র ভেঙে দুধ আর মাছ খেয়ে ফেলে,
উপরন্তু ইঁদুরও ধরে কম,
তাই উত্ত্যক্ত প্রতিপালক
বস্তাবন্দি করে এনে ছেড়ে দিয়ে গেছে বালুচরে, আজ ভোরে।
বিড়াল বারবার লাফিয়ে লাফিয়ে উঠতে চেয়েছিল
প্রভুর প্রত্যাবর্তনকারী নৌকায়।)

পানির কিনার ধরে হাঁটে।
দু-একটি উচ্চিংড়ে, ব্যাঙ, লম্ফমান মাছ
কৌতূহলে আড়চোখে দ্যাখে-
এ-জমিনে নতুন মখলুকাতের আবির্ভাব ঘন চৈত্রদুপুরে।

পানির কিনার ধরে হাঁটে।
বামাবর্তে সমগ্র চরটি ঘুরে আসে।
একবার দাঁড়ায় উপদ্রুত মনীষীর মতো দৃষ্টি মেলে দূরে-
প্রসারিত পলিথিনের মতো টানা জল, মরুরং;
তীব্র ফড়িং-শিহরণসহ ভেসে ওঠে
পরপারে প্রবাহিত সবুজ সিরামিক ব্যান্ড, ঘনবসতির;
ছায়া
শিশু-ইঁদুরের মায়াকরুণ চাহনি
প্রভুর সর্বশেষ মুখভঙ্গি
নিরিবিলি উঞ্ছজীবিকার স্মৃতি।

খুব ম্রিয়মাণ হয়ে ধরা দেয় প্রভুর দূরনিয়ন্ত্রণী সংকেত-
এখন এতটা দূরে, প্রাক্তন।

মানুষ
............................

এই দৃশ্য আমি কোথায় ধরে রাখি-
সেই যে প্রথম প্রখর দুপুরে
অশ্বত্থবৃক্ষের নিচে
এক ক্লান্ত তস্কর বসেছিল
প্রায়-নষ্ট আপেল হাতে;
পেছনে সাপের ফণায়ন।


মানুষ
............................

ওষধি বংশের এক নিবিড় সন্তান
অঙ্গ কেটে মাটিতে পুঁতে দিলে তবে হয় বংশবিস্তর।
সময়, পক্ষান-রে, এক ভিন্ন তস্করের মুখোশ
তোমারই সমান্তরালে পথ চলে।
তোমার সংগ্রহ থেকে কত প্রত্ন, কত পীড়নপ্রণালী
যুগ যুগ চুরি হয়ে যায়।
কোন দিকে? যেইদিকে দ্বীপ ভেসে ওঠে।

অসংখ্য ভাসমান কালো বিড়াল-লোমের মতো
আজ ছেয়ে আসে পূর্ণগ্রাসের দিবস।
আমি দেখি।
তোমাদের এই বংশের কেউ নই,
না তস্করকুলের কেউ
শরীরে ঢেউ নেউলগন্ধের,
তবু উল্লিখিত দ্বীপাঞ্চল থেকে
একদিন ধৃত তস্করের পিছে পিছে
উদ্দেশ্যহীন আমিও তস্করবৎ ধীরে...

ধর্ম
........

দেহের জটিল গ্রন্থি থেকে সব প্রলম্ব শিকড়, অস্থানিক।
কাপ্তান গুলি ছোঁড়ে আর হাঙরের মাথা গুঁড়ো হয়ে যায়;
এলোমেলো এলোমেলো কাপ্তান গুলি ছোঁড়ে আর হাঙরের মাথা কর্পূর,
কর্পূরগন্ধ উড়ো-উড়ো ওই দূরে ঝকঝকে ভূমধ্যরোদে
আপেলবিকাশের কূলে কূলে।
পশ্চিমের নদী থেকে উড়ে আসে ভাঙাঝাঁক
হর্ষবর্ধন যৌনকবুতর।
পক্ষান্তরে খেজুরবাগান।
পেঁপেগাছের নিচে ছয়রঙা রাক্ষস
ছয়বার হারাকিরি খেলে সন্ধ্যায়।
নামে রাত
খেজুরপাতার ফাঁক গলে ঝিকিমিকি তথ্য ঝরে পড়ে ঐশী।
খুব ভোরে পুনরায় চিকিৎসাকেন্দ্র গুঁড়া করে দিয়ে
দিব্যডানাযোগে উড়ে আসে রোগা ছেলে।
রোগিনী দৌড়ে আসে ক্রোমাইটস্তর পার হয়ে
এই বিস্ফোরিত মহাবয়লাস্ত কণার ছুটন্ত পুচ্ছছায়ার নিচে নিচে
রোগিনী দৌড়ে আসে, এসেছিলো।

ওই অস্থানিক শিকড়পুঞ্জের মতো
আকাশ আকাশ থেকে দুল্যমান
একটিই ভার্টিক্যাল দৃশ্যসূত্র-
ইরম্মদ-ঝলকানো এক মরুপথ,
পথে অন্তহীন পালকিপ্রবাহ।

পালকিচূড়ায় চূড়ায় ওড়ে চিকিৎসাসদনের
চূর্ণ-চূর্ণ অ্যালুমিনিয়াম
এইসব ইতস্তত রোগারোগিনীর দিনে।



সিলিকন চিপ, যুধিষ্ঠিরের অগ্রবর্তী কুকুর এবং
দূর-ভবিষ্যতের একটি প্রস্থান ও বিস্তারপ্রসঙ্গ
..............................................

রে গড্ডল, চকচকে কুকুর কৃকলাশ,
চারদিক থেকে ঝড় করে ছুটে এস সংখ্যাহীন
হুলুস্থুল পাহাড়ি বাদ্যকুহেলির মতো।

সিলিকন চিপ, দূরে, সে-পাঞ্চলে, উত্তালকালো সাইপ্রেস বনে,
বালি-উপত্যকায়-কোথায় যে হারিয়ে এলে ধর্ম, বালিমূল্য তোমার!

বাইরে অশ্রান্ত কোলাহল, প্রগতির-
সর্বাঙ্গে বৃশ্চিকলাঞ্ছন,
তবু স্থির রেখে যুধি, সিলিকন চিপ, টিকে থেকো,
আমার এই হাজার বর্ষের পরমায়ু, কাকে দেব ?
যাও, তোমাকেই দিয়ে দিলাম নিঃশর্ত।

মর্মে প্যাঁচানো ওই স্পষ্ট লেজকুণ্ডল-কুকুরের সঙ্গে
চূড়ান- ঘর্ষ হবে সিলিকনের একদিন।

কুকুর
যুধিষ্ঠিরের অগ্রবর্তী কুকুর
তার ওই লেজতরঙ্গের অপূর্ব তৃতীয় হারমোনিক্স্ আহা!
তাই বেয়ে ক্রমে আমি মর্ত্য ছেড়ে ধীর ঊর্ধ্বে, ঊর্ধ্বলোকে...

ঠিক এক হাজার বর্ষ পরে
সার্বভৌম সিলিকনস্বরে
প্লাস্টিকের উদ্ভ্রান- বি-মেজর সুরে সুরে
সমগ্র নভোভারতের প্রান্তে প্রান্তে ঢেউ
দুগ্ধবিজড়িত কণ্ঠস্পন্দন।
কার!

পাখিতীর্থদিনে
.................................

আজ এই পাখিতীর্থদিনে
উন্মুক্ত জানালাদিবসে আহা, অশনবসনের ক্লেশ!
দাউ-দাউ দুর্ভিক্ষের সামনে হা-দাঁড়ানো হতভম্ব মিকাইল-
হাতে ভিক্ষামাপনযন্ত্র কম্পমান-মর্চেপড়া, অ্যানালগ;
তদুপরি খসড়া, ক্যালিব্রেশনহীন।

এ-অঞ্চলে এমনিতেই কষ্ট।
পূর্বা, খোঁড়া শৃগালিনী, ভর্ৎসনাচিহ্নিত লণ্ঠন
মুখে নিয়ে ধীরে সরে পড়ো ক্রমপূর্বদেশে দুপুররৌদ্রে,
অগ্রাহ্যজঙ্গলের সরু পথ দিয়ে যাওয়া
স্নিগ্ধ মিথ্যাবাদিনীর মতো।

প্রবল বনকিরণের মাঝে, ততক্ষণে,
তোমার সমগ্র শরীরে চিকচিক করতে থাক
মিহি মিথ্যা-মিথ্যা বালিপরাগ।
তোমার হ্রেষাকে, পূর্বা, অতিরঙিন গতিকে
কয়েকবারই অতিক্রম করে যাবে
এতসব হিজড়াদিনের ঝমঝম হিজড়ামুদ্রার
হ্রী ও ধীসকল।

দিগ্দিগন-র থেকে অখিল বুদ্ধিরাশি
এখন ধাবিত হোক ওই দূতের মসি-ষ্ক অভিমুখে।


ক্লাউন
..................

ঠায় ঝোলানো মুখটা যেন
খেজুরগাছে ভাণ্ড
ছাতিমগাছে দোদুল্যমান
কলাগাছের কাণ্ড।

চক্ষু দুটি চড়কগাছে
ঘাড় গিয়েছে বেঁকে
একটু-আধটু রস পড়ছে
বকযন্ত্র থেকে।

আগুন-কাঁখে আটটি দিকে
উলঙ্গ জিপসি
ন্যাংটা নরনারী দেখে
কাটল কি জিভ, ছি!

ছাতিমের ওই ছোট অপ্রতিভ শাখা
তার এত ক্যারিজ্মা! প্রজ্ঞায় বাঁকা!
লোভনের লোল চাকু লাল ফলে বেঁধা
শিশুর সামনে ঝোলে পুতুলের মেধা।

কেউ বলে, সে অলবড্ডে
হ্যাংলা বেশি। ভুল পদ্যে
মঞ্চে মাতে। এরই মধ্যে
নেপথ্যে সেই সুতাসুদ্ধে
টান।

সেই সাথে সেই নটমোড়ল
লাল হলুদ আর সাদা তরল
নাক মুখ কান গুহ্য দিয়ে
লাল-কালচে জিভ দেখিয়ে
ফ্রিজ।

ঝুলন্ত ওই দারুমূর্তি ছিল চক্রবালে
ঝুলতে ঝুলতে ঠেকল এসে হাবা গাছের ডালে।
মোচনের লাল লগ্ন এনে দেয় ঢেকে মা শচী
যুগলবন্দি একটি ফ্রেমে উভয় পত্রমোচী।

চন্দ্রের মন্থরা ছোট মেয়ে হাওয়া
অর্ধেক অধরা সে, অর্ধেক পাওয়া
অর্ধেক লুপ্ত সে ছিল গতকাল
তার দিকে ছুটে গেছে সারাটা সকাল।

দেহভর্তি মাখামাখি রাত্রি ও আগুন
জড়বুদ্ধ সিদ্ধপুরুষ সি'রচিত্রে ক্লাউন।



সিমেন্ট-আরসিসি
..............................

ক্যালসিয়াম, সুনন্দ রাজার পুত্র তুমি, গোবর্ধনগিরিতে ঘর।
ওটা ক্রৌঞ্চ-চ্যানেল-ওই চ্যানেলে বাতাস ও বাসনাবাহিত হয়ে
পাখি আসে। তুমি আসো স্বরচিত লালা বেয়ে,
গড়িয়ে গড়িয়ে, খড় ও ক্যাকটাস পার হয়ে।
কোটিকাল ধরে কত অন্বেষণ! আকর্ষণবশে।
অবশেষে রশ্মিতোয়া নদীর ধারে ভাঙা ঘাটে
দেখা কার্বনার সাথে। পড়শি অম্লজান, পড়শি মৃত্তিকা,
সঙ্গে অগ্নি-তাপাঙ্ক আহরণ।
তাহাদের প্রণয়ের রাঙা বটফল ওই ধূসর সিমেন্ট।

লৌহিনী ঘোরে ফেরে সূর্যরেখা ধ’রে
এক ফাঁকে সূর্যাস্ত গঠন করে নেয় গণ্ডদেশে
অতঃপর দেখা হলো সিমেন্ট সিলিকা জল পাথরের সাথে।

সিমেন্ট সিলিকা জল পাথর লৌহিনী
জন্ম-জন্ম ধরে বহুভুজ প্রণয়কল্প প্রভু
গূঢ় বন্ধন, পরস্পরে লীন হয়ে গিয়ে
পুনশ্চ রাঙা বটফল ওই বাকাবিল্লা সিমেন্ট-কংক্রিট।

চিম্বুক পাহাড়ের শানুতলে শতযুগ এইসব নীরব কোলাহল।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন