রবিবার, ৩০ আগস্ট, ২০০৯

বাবা,আমার হাতটি আবার ধরো



মৌসুমী কাদের

একটি বৃত্তপথ শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মস্তিকে জিরো পয়েন্ট অঙ্ক কষে বসে আছে। কাঁধের ঝোলাটা বুকের মধ্যে কষে ধরে ভাবছি, বৃত্ত বরাবর একটা লম্বা হাটা দেবো। ইসা খাঁ রোড থেকে শুরু করে হাতের বা বরাবর জগন্নাথ হল, শহীদ মিনার, তারপর আরো বায়ে টি, এস, সি হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কলা ভবন। ডানে গেলে যেখানে তিনভাগ পথ বিয়োগ হতে পারে, তবে কেন বায়ে যাওয়া? যাবো কারন এইটুকু প্রলম্বিত পথে যেতে যেতে আমি বিশটি বইয়ের নাম মনে করবো। শহীদ মিনারের সামনে সবুজ কচিপাতা ঘাসে পা মেলে দিয়ে…কোন বইটি প্রিয় মানুষগুলোকে উপহার দেবো সেই কথা ভাববো। যখন আমি কলাভবন পৌছে যাবো তখন আমার বিশটি বইয়ের তালিকা নিতে বাবা আসবেন লাইব্রেরীতে। মধ্যবিত্তের ভারী কাঁচের চশমা খুলে একি সঙ্গে আমার এবং আমার তালিকায় তার মুখ, তাকিয়ে অনুমান করবার চেষ্টা করবে, মুল্যটা কত? প্রতি বছর একুশ এলেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তার এই এককালীন ১২০০ টাকা প্রাপ্তি। যার প্রতিটি পয়সা আমি গোগ্রাসে গিলেছি বছরের পর বছর, রাস্তার ধারে বসে কার্ল মার্ক্স, বিচ্ছিন্নতার তত্ব, সাম্যবাদ এবং পাশাপাশি কত কবিতা ও গান। বন্ধুর কাঁধে হাত রেখে ফিরেছি বাংলা একাডেমির মেলা থেকে, হাতে ধরা ডজন ডজন বই। বাবা কোনোদিন তা খুলে দেখেননি, জানতেও চাননি কি পড়ছি বা আদৌ পড়ছি কিনা। টাকা মেরে দিয়ে চানাচুর, ফুচকা…অথবা যাবতীয় উদ্ভ্রান্ত ও উদবাস্তু সময়ের কত অসহায় গান রচনা করেছি, সেকথা কোনদিন বাবাকে শোনানো হয়নি…… কত বিভ্রান্ত বলিরেখায় আকাঁ হয়েছে একেকটি প্রসারিত নদী, তাও বাবাকে দেখানো হয়নি……।
বাবা, আজ আমার হাতটি ধরো, এই সেই ছোট্ট হাত যা তুমি নেড়েচেড়ে বলতে, ‘ওমা, এত ছোট্ট হাতে তুই লিখবি কেমন করে?’ তুমি ঠিকই বলতে, জীবনের কথা আমার আর লেখা হয়না, একটু একটু করে ক্রমশ আমি বৃক্ষ হয়ে উঠছি, বিলম্বিত সময় ধরে আকাশের দিকে তাকিয়ে থেকে নতুন করে জন্মাতে ভুলে যাচ্ছি। কেন জানি মনে হয়, অন্তত একটি ভোরের সূর্যোদয় দেখবার জন্য হলেও আমার বেঁচে থাকা উচিত ছিল, তাহলে সকল ব্যর্থতার প্রায়শ্চিত্তে ফিরে যেতাম সেই একই বৃত্তপথে, যে পথ অবধারিত কিছু বালুকনা নিয়ে আমার জন্য অপেক্ষা করছে। সমুদ্রে যদি কখনও যেতেই হয়, আমি ঐ পথ ধরেই যাবো, জানি, এবারও তুমি কিছু বলবেনা। কিন্তু যাবার আগে প্রজন্মের হাতদুটো তোমায় উৎসর্গ করে যাই, যে হাত দিয়ে সে কবিতা লিখতে শুরু করেছে।একুশ লগ্নে এটুকুই তোমার আশীর্বাদ।
ত্বিষের কবিতার ক’টি লাইন বাবা তোমাকে দিলাম;
Memories Fade
Bonds Stay
Eyes of Sorrow
Day and Day
Reminiscence of the Forgotten
Chains that drag me down
Down to the depths of the sea
Until I open my eyes and believe
Believe that this is a dream

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন