সোমবার, ৩১ আগস্ট, ২০০৯

তুঁত

মুস্তফা আনোয়ার


(রচনাকাল: ১৯৭৯-১৯৮১)

লাশ
...
তেলচে-চটের ফাঁকে খসখসে চাঁদনি নড়ে মাকড়সার বুকের
ডিমে, চিকমিক করে মরা ডালের সরু হাড়, জটপাকানো
শিকড়, সেকস খোবলানো একটা সুরের ঝিঁঝি খুট খুট
করে কাটে ছমছমে আলজিভ তার কিৎকিতে ড্রেনের
ঢাকনি খুলে পুঁতে ফেলে কেউ কোনো লোক?

ভাঙা-পাঁচিল, ল্যাটরিন টপকে লোকটা চলে যাচ্ছে, পালাচ্ছে
তার মে-লোক ছেড়ে চিরতরে, মে-টি চুল ছিড়তে ছিড়তে ভাবল:
ইস্ লাশটা যদি এই নোংরা পেট চিরে লুকিয়ে রাখতে পারতাম।
লোকটা যদি চটে-ঘেরা আমার বিছনায় শুয়ে থাকতো
কালচে-রাতগুলোতে জন্তুর কাটাহাত দিয়ে আমার গলা জড়িয়ে
চিরকাল।


বিদায়
......
আলকাৎরার রাতে চিৎ হয়ে শুয়ে থাকব কবে, এমনি-দিনে,
বৃষ্টিতে, আ! সে ঘর-কাতর সিঁড়িপথ, অজগর লম্বা।
রাতের ময়লা গাছের ছায়া দিয়ে তৈরি করব গাদ্। কথা
দিচ্ছি, এক-দাগে ভুলে ভুলে যাবে চিরকাল, এক খাটে
শোওয়ার বোকামী, পাপ।

এতোদিন রসায়ন লেখাপড়া শিখলাম খামাখা, চল্লাম,
বিদায়। এখন কি করব আমি অভিশপ্ত পাপী আত্মা দিয়ে?
তুচ্ছ ছলাৎ ছলাৎ শব্দটাকে টিক-টিক করে কাটব, কাটা -
মাথার লকেট পরিয়ে দেব তোমার লিকলিকে সাপের ফণাতোলা
গলার মালায়। কাটামাথা নিয়ে তোমার জানলায় উঁকি
দেব রোজ চাঁদনি রাতে, চিনতে পারবে তো? হা-ভুলে
যাবে, ভুলে যাচ্ছো, ভুলে গেছ তুমি অনন্তকালের জন্য।
হা-হা, পৃথিবীর মাগীদের ভালোবাসাতে কী এতই মধুর
গাঢ়তা ছিল।


চুমু
..
কবরখানায় ঘুর-ঘুর করছিল, একটা জটপাকানো ছায়া-ডাল,
সিফিলিস রুগীনী শুয়ে আছেন, তাঁর চর্বি চটচট করছে
চেকনা ঘাসে, দাহ দাবানল, সমুদ্র সৈকত, একটা ব্যাথার চিল
ডাকছিল, ভূতে-পাওয়া বাজ খাওয়া পাতলা ঝাউগাছ ফাঁপা
কাঠগোড়া, ব্যাকগ্রাউন্ডের আগুনের তেলরং, যে আলোছায়ায়
পুতুল খেলছিল নিয়তি রাতদিন ভুলে। রাগী নখে
ডেকেছিলে তাকে কোনোদিন আত্মার কাছ ঘেঁষে?

করোটিতে কি চুমুর দাগ থাকবে চিরকাল, দাঁতহীন লোলজিভে
ঠোঁটের নুন? হতভাগা পর্নোর রাতগুলো?
ফণা তুলে সময় গুনছে ঘড়ির কাঁটা। পরমা বধ্যভূমিতে নিয়ে
যাচ্ছে তাঁকে, চোখ বাঁধা, (ঘন্টার ধ্বনি, হৈ-চৈ, ডাকাডাকি,
হৃৎপিণ্ডে ঘোড়ার ডাক, তড়পড়ানি) পৃথিবীর তালা খোঁড়া
হলো শুকনো ঘাস উপড়ে। এইই তবে নরক ছিল,
জিভের লালাক্ষরা চুমু?


ধূলোহাওয়া
.........
এক যে ছিলো পুরাতন হাওয়া
গিয়েছিলো সমুদ্রের সাথে কথা বলতে
খাদের নিচুতলায় চুল ছিঁড়তে-ছিঁড়তে
শুকনো পাতা হেলিয়ে-দুলিয়ে,
গোলপাতা, কুঁড়েঘর, - রইলো
কেরোসিন, কুপি, একতারা, আড্ডা
সবই রইলো চিরকাল পড়ে, পথপ্রান্তে।

আর এক যে ছিল কর্নেটবাদক, শুধু
শুকনো হাওয়াই খেতো সে!
পাতা কুড়োনি, ঘরনী তুমি কার?
পাতার ঝালর আর একটু ওঠাও না
চোখে কিছু ধুলো-টুলো দাও।


পথচাওয়া
.......
এসো, একপয়সার চোখে বাঁশপাতায় কেরোসিনের তেলরঙ
ছিটিয়ে, খসখসে ঘাড়ে ফড়িংকে চুমু খেতে দিও। বুনো
ধুতুরার নাচে, সমুদ্রের পোকার ঘোলা চাকনিতে আরশি
আত্মা এনে দিবে তুমি? নোনতা-হাড়ে দৌড়ে-দৌড়ে
আসবে ও তোমার বিজলি পা, হুড়কো খোলা মরচে পড়া
দরজায় থমকে দাঁড়িয়ে আবছা টোকা দেবে। পোষা
মাকড়সা ছাড়া এ-ঘরে আর কেউ নেই। এসো, যখন খুশি,
এতিম আমি থাকবো।

একলা বহুকাল, আকাশ গাছ দিগন্ত পোড়াবাড়ি দেখেছি
নতুন পাতার মুখ ধুলোয় থুবড়ে পড়া, নখে খোঁচানো
ছেঁড়া কানের পর্দা কি করে শুনবে তোমার গলায় বসানো
দা-এর কোপ।


একলাপথ
.........
তোমাকে দেখলেই শুধু
মরচে পড়া পেতলের তার বাজে,
পাতার কংকাল উঠে দাঁড়িয়ে - পাগলী হাওয়ায়
ভরা বৃষ্টির সিরিঞ্জ ফুটো করে শিরা।

তোমাকে দেখলেই ঝিঁ ঝিঁ বাজায় একতারা,
চাঁদের ছাতার নিচে, মুসকি হেসে, ফড়িং গল্প
ফাঁদে কাঁটাবনের : একলাপথের।

কাফকা
......
কাফকা, পোড়া মুরগীর চেরা পা খেলো,
তার হাতে উড়ছে মুখ মোছার মোষলড়াই,
আঙ্গুলের ফাঁকে দুখণ্ড চাঁদের এক চিলতে ঢেলা
মুখে দিতেই, হাততালি বেজে চলল,
অন-বিহীন পথের মোড়ে।

কাফকা হেঁটে-হেঁটে এলো, বসল বুকে,
কাদামাখা বুট খুলে উড়িয়ে দিল
আস্তাবলের গাড়ায়; চট্চটে মে-লোক নিয়ে
কয়লার মত শুয়ে রইল, খড়ে।


পরবাস
.......
সেদিন বেরিয়ে ছিলাম
বগলদাবা করে পোয়াতি
পেটউঁচু বোতল,
কাদামাখা প্যান্ট-জুতো;

কিন্তু সবচে মজার কথা
আফিমখোর পাখিটা
বাঁশ পাতার হাওয়ায়,
একই সুর ভাঁজে:

দরজায় দাঁড়িয়ে থাকে; খোঁড়ায়;
তড়পায় এ পরবাসে।


যৌবন
......
যদি যৌবন ফিরে পেতাম
হাড়ে খোদাই করা গয়না
ঝলমল
পরিয়ে দিতাম, শান দেওয়া
গলায় ঝিলিক দিত রূপ,
যদি যৌবন ফিরে পেতাম।

যদি যৌবন ফিরে পেতাম
লুট করে আনতাম সুখের মহাদেশ,
ঘোড়াশালে ঘোড়া, হাতি,
আকাশে সোনার খনি,
যদি যৌবন ফিরে পেতাম।

যদি যৌবন ফিরে পেতাম
অধরের কলসি থেকে
আঁজলা ভরে চুমু নিতাম,
যদি যৌবন ফিরে পেতাম।


মালঞ্চ
.....
তোমার মালঞ্চে আমি উটকো লোক
এসে গেছি,
পাতার ঝুনঝুনি কুড়িয়ে অর্কেষ্ট্রা বানিয়ে দেব, তোমার
ডালে ঝরে যায় পাতা, ঝরে যায়।

তোমার মালঞ্চে আমি বদলোক,
জমে গেছি
বালির খাদ পেরিয়ে, সমুদ্রের দৈত্য-দানো
এবার পা উঁচু করে পড়বো ঘুমিয়ে, তোমার
ডালে ঝরে যায় পাতা, ঝরে যায়।


চোখ
......
মানুষের চোখকে ভয় করতে শেখো
মানুষীর চোখকে ভয় করতে শেখো
শিশুদের চোখকে ভয় করতে শেখো।

মাকড়শার চোখকে ভয় করতে শেখো
টিকটিকির চোখকে ভয় করতে শেখো।

বাঁশবনের জোনাকির চোখ দেখে
চোখ বন্ধ করতে শেখো।


মৃত্যু
.....
(ফজল মওলার এপিটাফ)

কুছু চাঁদনি দিন, তুঁত পিবে
গরমা-গরম চোলাই
খাবে - নিশাদল গুঁড়া -
আপনি কেমন আছেন
ছোট-সাব?

তুঁত খাবে হামি
একটু - কুছু তামা দিন;
আমরা আনন্দ করিবে, আল্লা
ভালা করিবে, আপনার।

টাটকা তুঁত খাবে একমগ
নিশাদল পিতে পিতে
মারা যাবে
একদিন হামি এইখানে;

এক-গিলাস পিলা ডিয়ার,
হামারা পিয়ারা
ছোট-সাবজি;
একমগ তুঁত পিয়ে
মারা যাবে -
ইল্লাল্লা ফজল মওলা।


যুদ্ধ
...
হঠাৎ গুলির শব্দে
সিগনেচার বদলে যায় -
শুধু থাকে মুখ

ছোবড়া, ন্যাকড়া, ছাই,
ধুকপুক-কেরাসিন।

ঠিক আছে সবকিছু
কিচ্ছু বদলায় না।


নেশা
...
হাড়গোড়তো দিলাম
কাদামাখা জানোয়ারটাকে
খেতে - মাথাভরা বাবড়িচুল -
চোখ দুটোও।

যদি শেকড় বেরোয়,
পাতা আসে কোনোদিন -
দুই-হাড়ে মাথা গুঁজে ঝিমোচ্ছি
কী তখনও।


না
...
আমরা মাতৃভাষা বলি,
কেউ-কাউকে বুঝিনা।

আমরা একঘরে থাকি,
খাট-টুকরো।

চাঁদ টুকরো হোক, কী আসে?
নদী টুকরো হোক, কী আসে?

ভালোবাসা টুকরো টুকরো হোক -
পচা-চিঠি ডাকবাক্সে যাবে না।


বাঁচা
....
টপকে মরা বেড়ালটা,
মাড়িয়ে মাছের কানকা,
কর্নেটবাদককে লাথি মেরে

ম্যাকাবার নাচে পারদর্শিনী
মাকড়সার সংগে
থাকি, স্যাঁৎসেঁতে টিনে

কুপি জ্বলছে, পা তুলে
বুকে-চোখে, মদ গড়াচ্ছে।

মরা খুব খারাপ -
অমর কুকুর ভালো।

লোমওঠা বেড়ালটা শহীদ হতে পারতো,
কেউ মাছের কানকা চিবিয়ে বাঁচতে পারতো।

তা-ছাড়া কি?


ভালো সে বাসে যদি
............
ভালো সে বাসে যদি -
বালতি কৈ বালির?
এ জোয়ান মন্দ লাশ
লুকোবো কি করে।

ভালোবাসা জানলো না সে
বলে কারে?
কানের ভেতরে ঢেলা -
মাথায় ঘাম ওঠে।

ভালোবাসা সবাই চায় -
স্যাঁৎসেতে ঘর ও খড়।


ধুলোকাদা
.........
চোখে ধুলো শোকায় না
কত কাঁদলে তুমি -
শুকনো কাঠ শুধু কয়লা হয়;
ভাত সেদ্ধ করো তা দিয়ে।

ভাঙা নদীর স্রোত কাদায়
উথলে উঠলে তৈরী থেকো।
জানোই তো আমি লুচ্চা,
দুরের পথ
পাড়ি দেবো।


জাল
.........
নষ্ট হলে মন ও মাথা
আমাদের মনে রেখো,
যারা নষ্ট হয়েছি।

নষ্ট হওয়া কি মজার খেলা
রাতে তারা দেখা,
ভোরে চাঁদ

খড়কুটো এনে রাখি,
নাভির জাল বুনে
সংসার করি।


না, হ্যাঁ হয়না
..........
কোনোদিন যা দেখিনা
সে নরক আমি
কোনোদিন যা দেখব না,
সে বাগান তুমি?

রোজ দেখি যা,
ঝোপঝাড়, অলিগলিপথ,
এই ঘরকন্না, তুমি -
কোনোদিন দেখিনা।
সবকিছু অপরিচিত, কিচ্ছু চিনিনা।


নৌকো
.....
পথে-পাওয়া
তিনটে পয়সা
তিনটে নৌকো
আমরা ভাসিয়েছিলাম কাদায়।

চাঁদ ছিল
আকাশে
ছুরি-কাটা
ছায়া ফেলেছিল ডাল
পাখির বাসা ও চোখ।

সংগী সেই
পুরাতন কুকুর
ভেউ-ভেউ
কান্নাকাটি
হাউ-কাউ
লাফ-ঝাঁপ
দৌড়।

পথে-পাওয়া
তিনটে পয়সা
তিনটে নৌকো
আমরা ভাসিয়েছিলাম কাদায়।


বুড়োহাবড়া তুঁত
...........
তুঁতের তলায় থাকি,
আমার নাম মুস্তফা -
আমার চেহারাটা বড় বিশ্রী
গোলগাল কেমন যেন চ্যাপ্টা আলুর মতো
চোখ দুটো ইঁদুরের মতে কুৎকুতে, ছোট্ট ছোট্ট, লাল;
চেহারাটা মে-মে,
শুধু একটা শুকনো ডালের মতো শিশ্ন ঝুলে আছে,
আমার চুলগুলো ইঁদুরের ল্যাজের মতে নোংরা -
আমি তুঁত গাছের তলায় থাকি,
আমার নাম আনোয়ার,
অন্তরঙ্গরা ডাকে আনু -
আর এই আনু নামটার ওপরেই আমার যত ঘেন্না;
আয়নার সামনে দাঁড়ালেই নিজেকে ঘেন্না হয়;
কি করি - উপায় নেই;
কিছুতেই নিজের চেহারা ভালোবাসতে পারি না,
একটুও প্রেম হয় না।

আমার পূর্বপুরুষেরা হয়তো মেথর ছিল, ডোম ছিল;
আমার রক্তের মধ্যে মেথর মেথর গন্ধ রয়ে গেছে।

আমার ভীষণ ইচ্ছে করে মেথর পট্টিতে মদের দোকান দিই -
তুঁতের পাতা পিষে পিষে কষ বার করে
মদের সাথে মিশিয়ে দিই;
তাতে করে তেতো ও ঝাঁঝ দুটোই পাবে আমার খদ্দেরবৃন্দ;
ওদেরকে ঠকিয়ে বেশ দু-পয়সা বানাতে পারবো,
একটা ক্যামোফ্লেজ করতে পারবো
এটাই আমার লোভের একটা গুপ্ত সুড়ঙ্গপথ।

সুড়ঙ্গের ওপারে তুঁত গাছের পাতায় পাতায় গুটিপোকা ধরেছে,
হ্যাঁ, আমি এখানেই একটা মদের দোকান খুলবো
আর ডাকবো দুই রফিককে,
আয়, খেয়ে যা - একটু মদ খেয়ে যা, চেটে যা।

এই তুঁত গাছের তলায় আমি একটা মদের দোকান দেবো,
এই গাছের পাতার মতো আমার অনেক টাকা হবে,
আমি অনেক টাকা পাবো, আমি বড়লোক হবো;
টাকা হলেই আমি বড়লোক হবো, অভিজাত হবো -
শুধু আমার গদ্য-পদ্যর ব্যবসা জমে উঠলেই হয়।

আশা করছি তুঁত আমাকে বড়লোক করবে, সভ্য করবে;
আমার গায়ে যে মেথরের গন্ধ লেগে আছে, তা ঢেকে দেবে,
মানুষকে ঠকাতে এই তুঁত পাতা আমাকে সাহায্য করবে,
আমি আশা করি - আশা করি আমার মদের দোকান চলবে
যদি ঠিক মতো তুঁতের পাতা রসের জোগান দেয়
ঠিক মতো গাঢ়ো কষ ও গাদ বের করে দেয়,
তবে আমাকে আর পায় কে?
হে আল্লা, আমার মেথর পট্টির মদের দোকান জমে উঠুক।

শুধু তুমি যদি একটু সহায় হও
শুধু তুমি তোমার চাঁদ ও সুরুযকে বলে দাও
তোমার বৃষ্টিকে বলে দাও, তোমার কুয়াশাকে বলে দাও,
তোমার শিশিরকে বলে দাও, ওরা যেন আমার তুঁত গাছের পাতাগুলো
কষে কষে মোটা করে দেয়, দিনে দিনে।
আমার চেহারার ক্যামোফ্লেজ তো চাই একটি -
হে তুঁত আমাকে বাঁচাও,
আমাকে একটু মাস্তানি করতে দাও।
আমার এই ঘৃণ্যতম আলু আলু চোহারাকে
থেঁৎলে থেঁৎলে পাতা কর।

কিন্তু একি - হায় আল্লা একি করলে
হ্যাঙওভার ভাঙতে না ভাঙতেই
চোখ খুলতে না খুলতেই,
আমার সব তুঁতপাতা ঝরে গেছে;
আর আমি মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছি;
আমার ধুলো, আমার মাটি, আমার পাতা।

মেথর পাট্টিতে দোকান করার লোভ কেন হয়েছিল
বলতে পারো?

হে পাতাঝরা বুড়ো তুঁত গাছ
বলতে পারো?

বুড়োহাবড়া তুঁত গাছ বলতে পারো?
তোমার উত্তর শুধু ভেঙে পড়া শুকনো ডাল -
হা, বুড়োহাবড়া তুঁত।


জেমস জয়েস
...........
জয়েস কবিতা বেচে কিছু টাকা পেয়ে
সাদা মদের দোকানে গেল
এক পা ডুবিয়ে দিল পিপেতে
ঈশ্বরের দিকে অন্য পা।
শব্দের চামড়া, ছাল, নাড়িভুড়ি,
হাড়গোড়, খুলিতে আঁটানো জিভ,
ভাঙা হাঁটু, দু’তালা পাছায়
চৈতন্যের ছলাৎ ছলাৎ বীচি
বয়ে চলে নিরবধি।
দুজন ঈশ্বর। দু’জনের দিকে পা উঁচিয়ে
বৈপরিত্যে চল্লো অন্য কোথাও।
কোথায়?


১৯৫৪
.........
জেলখানা থেকে বেরিয়েই
আমি ধরেছিলাম চাঁদকে,
কষ্ট পেলে কি বেচারী খুব?
মনেই ছিলো না চুমু খেতে।

জীবন গিয়েছে চলে তিরিশ তিরিশ
বড্ড চেঁচিয়ে মেচিয়ে
ছিলো নুন, ভাতের দোকান,
বাংলা মদ, খুপরি, চট ও কেরোসিন।

চাঁদ ধরি, চুমু খাই,
বসি; কিন্তু
জেল ফেরৎ চুমুটি, যা আমারই ছিলো
একাধারে -
হলো না, আজো হলো না।
হবে না -।


প্রেমের কয়লা
...........
ভয় করে প্রেমের কয়লা যদি হীরকের খনি
কল্পনার হাঁস সব মাথার জ্যোৎস্না ঢেলে দেয়
ভয় করে যমজ গম্বুজে যদি হলুদ পাথর
যদি প্রেম দেখা দেয় মোমের করোটি হে চুম্বন

ভয় করে অচেনা ওষুধ যদি জিভেতে হঠাৎ
হৃদয় রাঙায় যদি আতসের বারুদের ফুল
ভয় করে সহসা প্রসন্ন মুখ তুলে চাও যদি
কুটিল ভ্রুকুটি মুছে প্রেমে পড় প্রথম দেখায়।

ভয় করে প্রেমের কয়লা যদি হঠাৎ তোমাকে
ভয়ে ভয়ে মদের দোকানে যাই তোমাকে ভুলতে
একা একা রাতের আঁধারে ঘুরি নিঃসঙ্গ মাতাল
চোখের তলায় যদি কয়লার খনি জ্বলে ওঠে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন