সোমবার, ৩১ আগস্ট, ২০০৯

কবি আলতাফ হোসেনের ৩টি কবিতা



আলতাফ হোসেন










কী ভাবে গোছাবে সব?
..............

একজন বলে যাচ্ছেন তাঁর মৃত স্বামীর কথা আর অন্যজন তাঁর
প্রবাসজীবনের। তুমি একবার শুনছ ওঁর কথা আর একবার শুনছ এঁর
গল্প, তারপর ফিরে ফিরে নিজেরও হংসধ্বনি আসছে ভেসে, আর
আবার ভুলতেও পারছ না মার্থা বলেছিল এই তো এমনই সব আর
তার আঙুলের ফাঁক দিয়ে বাদামের শেষ খোসাগুলি...

কীভাবে গোছাবে সব? একবার আগে আগে সব-আগেকারও আগে গুছিয়ে
গুছিয়ে সব তাক, সব আলমারি, ক্লিফটনবালি, ধলেশ্বরী সব ভরে রেখেছিলে...
যা হয় তা হল তারপর সব তুমি জানো,এ মহিলা ও মহিলা জানেন, ছেলে জানে
মেয়ে জানে, কী আশ্চর্য, আশ্চর্য? হ্যাঁ, আশ্চর্যই, তারপরও কেন এক কথা,
একই গান, একই সুর গলায় তুলছে ওরা

মাথা ফাটছে সশব্দে তোমার। তুমি হাসিমুখে উত্তরে ঘোরাচ্ছ চোখ, দক্ষিণে
অন্যবার...

(১৯৯৫)


গাইড মিলনায়তনে, সভায়
................

শুনব বলেই তো এসেছি
এই বিরাট হলঘরটায়
গিজগিজ করছে লোক
সবার মধ্যেই বিচ্ছেদ লুকানো
সবার মধ্যেই হাসি
প্রত্যেকের মধ্যে মৃত্যু
কোথাও নিশ্চয়ই মিল রয়েছে
তবুও সব ঘটনা নিশ্চয়ই আলাদা

ঘরের মধ্যে অনেকদিন থাকা হলো
বিছানায়
নিজের সঙ্গে
নিজের-অনেকের সঙ্গে
সেখানেও গিজগিজ করছিল লোক
বিচ্ছেদ ছিল চাপা-পড়া
হাসিও ছিল
অনেকগুলি মৃত্যু

মনে করেছি হলঘরটায়
সত্যিকারের উত্তাপ পাব
এখানকার ফ্যানের হাওয়া ততটা ঠাণ্ডা নয়

তাই তো পাচ্ছি
অনেক ফ্যানের হাওয়াতেও কেমন ঝরঝরে লাগছে
শীত-শীত করে উঠছে না

কিন্তু মঞ্চে যে একজনের পর একজন উঠে দাঁড়াচ্ছ
উঁচু টেবিলটার সামনে
মাইক্রোফোনের সামনে
কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে চলে যাচ্ছ
কিছুই তো বলছ না


এবার তা হলে শুরু করো -

(১৯৭৮)


ট্রেনের জানালা দিয়ে
................

ট্রেনের জানালা দিয়ে বাইরে তাকানোমাত্র ঈর্ষা হচ্ছে খুব
ফিরে যাচ্ছে শিমূল, সজনে, ডালে বসে-থাকা মাছরাঙা, দোয়েল
যত জোরে ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে নিয়ে যাচ্ছে গাড়ি আমাকে উত্তরে
দক্ষিণে ততই ক্ষিপ্র বেগে আর আহ্লাদে ছুটছে টিলা, নারিকেল

এখন বৈশাখ বুঝি, আমার তাতে কী, ওরা একে-অপরকে দিচ্ছে সঘন ইশারা
তারপর ফিরে যাচ্ছে, দূর দিগন্তও দেখি ধীরে হলেও ফিরছেন
সেখানে মেঘের বাক্স বর্ণময়, কাঁদিনিস্কি তুলিটুলি হাতে নিচ্ছেন
আমাকে একাকী, ক্রুদ্ধ যেতে দিয়ে ফিরতে-ফিরতে কী ছবি-যে আঁকবেন তাঁরা!

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন