সোমবার, ৩১ আগস্ট, ২০০৯

কবি শাহীন মোমতাজের কবিতা

শাহীন মোমতাজ



ট্রেন

ট্রেন, তার সব চাকা আর পাটাতন
কাঁপাতে কাঁপাতে এই পার হলো মদনমোহন।
ডিগ্রি কলেজের মাঠে রাত্রিবেলা পড়ে আছে হিম।
বাংলা পড়াতেন যিনি, কফিল মাস্টার,
তার দিন তো চলে না, চলে রেলগাড়ি, কুয়াশায়;
জীবনে প্রথম এই কুয়াশায় ট্রেন-চলাচল দেখে
আমি পুলকিত।

ডাকবাক্স

মধ্যরাতে জনসমাগম থেমে গেলে, একা একটি ডাকবাক্স
অধীর তৃষ্ণায় মুখ খুলে বসে থাকে।
আমি মাঝে মাঝে তার কাছে যাই,
তার লাল দেহে হাত রেখে অভিযোগ করি,
বলি, ‘আমার সকল পত্র তাঁর নামে
তাঁর জন্যে অপেক্ষায় ডাকঘর
খুলে বসে থাকি, তবু
অনীহায় অবিবেচনায় তিনি দূর থেকে রহস্য পাঠান।’
রহস্যে কাতর হই, দিকনির্দেশনাহীন হই,
তারপর একদিন সতৃষ্ণ ডাকবাক্স, তার পাশে ডাকবাক্স হই।

পেঁপেগাছ

কারা দিল সরল বৃক্ষের মতো ভঙ্গিমায় ভরিয়ে আমাকে?
এই বৃক্ষে চিররাত্রিদিন, যেন বা সকল বাক্য নিদ্রাকুসুমের মতো
ফুটে আছে।
এইরূপ ফুল ও সংবাদ নিয়ে পেঁপেগাছ।
যাদের যোগ্যতা নিয়ে রাত্রিভর এত আলোচনা,
অথচ কোকিল ছিল গাছে গাছে;
নিরুপম রুপা ও নারীর ভাগ্য জ্যামিতির প্রতিপাদ্য বলে মেনে নিই;
অলক্ষ্যে হাসেন তিনি, যিনি মোর দ্বিধাদ্বন্দ্বে সমতা রাখেন।
আমি রাখি ভূমিহীন, প্রতিমূর্তিহীন হয়ে যথেচ্ছ আচার
আমাদের জন্মগত প্রাণ, সবকিছু একদা গচ্ছিত ছিল পেঁপেবীজে-
এসব স্মরণে এলে বড় ভয়, হীনম্মন্যতার।

দেহতত্ত্ব

১.

এ দেহ মরীচিকা অত্র বিবাহের
প্রবাহে ঝরঝর
বর্ষা গান
গোধূলি প্রাপ্তির তাড়না বহমান
শঙ্খ বাজে কেন
ঘোষপাড়ায়
দুগ্ধফলবতী গাভী ও বৃক্ষের
চর্চা করি চলো
রৌদ্রে আজ
চিত্র অনুভূত জন্মতন্ত্রের
বিস্মরণে আর
মুগ্ধতায়।

২.

শারীরবিদ্যায় যারা এইমাত্র প্রবেশ করেছে
তারা জানে কোনো কিছু সংস্থিত নয়
কোনো কিছু সূক্ষ্ম শরীরে আর বিরাজ করে না।
এই কথা অধর্মসম্মত বলে ভীত নই।
ভীতির কারণ ছিল জলাশয়ে নীত।
এবার হেমন্তকালে সেই ব্যথা, জলাশয়,
স্নায়ুবিকলন দেখি আমাকে মুমূর্ষু আর
মুখাপেক্ষী করে রাখে পুনরায় হীনম্মন্যতার।


পাতা ও রাজকন্যা

গাছের পাতারা, দেখা গেল
মাঝে মাঝে নিজেদের মতো করে ঝরে।

একদিন পাতারা যেই একটু হলুদ হয়েছে কি,
অমনি বিড়াল দৌড়ে তার পুলিপিঠা নিয়ে পালিয়ে গেল অন্ধকারে;
রাজকন্যা তো মরেই ভূত ভয়ে আর বিস্ময়ে!

যে গ্রামে রাজকন্যা থাকে, তার তিন বর্গমাইলের মধ্যে পাতা ঝরে না।
তাই দেখে অন্য দেশের পুত্ররা বিবাহপ্রস্তাব নিয়ে আসে।

রাজকন্যা জানে যে এই সকল প্রস্তাবে কখনোই বিবাহ থাকে না।
শুধু বাগান বানানো দেখে দেখে তার নিয়মিত পুলক সঞ্চার।

এদিকে বিড়াল-অভিমুখী রাজ্যের যাবতীয় ভিক্ষা-উপজীবী,
সংক্ষেপে বর্ণনা করে গ্রামে গ্রামে পাতার মহিমা।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন