রবিবার, ৩০ আগস্ট, ২০০৯

যে ভাষা বজ্রের, যে ভাষা সরীসৃপের : নেটিভ আমেরিকান কবি জয় হার্জো’র কবিতায় আমেরিকার আত্মা দর্শন






তাপস গায়েন


“সমুদ্র গর্জন শুনি, আছড়ে পড়ে অতলান্তিক এবং
প্রশান্ত মহাসাগরের ঢেউ এবং কলম্বাসের অবতরণ দেখি পুনরায়-
উপর্যুপরি, বারবার।”

কবি জয় হার্জো’র কবিতায় ইতিহাস এক দুঃস্বপ্ন। এই দুঃস্বপ্নের নাম ক্রিস্টোফার কলম্বাস, যে নাম নেটিভ আমেরিকানদের চৈতন্যে এখনো ক্রিয়াশীল, ইতিহাসে যার পুনরাবৃত্তি আছে, এবং এ পুনরাবৃত্তি যেন দুঃস্বপ্ন ; সেই অর্থে ইতিহাস, দুঃস্বপ্ন, এবং পুনরাবৃত্তি বাহ্যত এক। এখানেই ঐতিহাসিক চেতনা হয়ে ওঠে আধিবিদ্যক এবং আধিবিদ্যক ধারণা হাত রাখে ঐতিহাসিক চেতনার কাঁধে। নোয়াম চমস্কি, ১৯৯৩ খ্রীষ্টাব্দে প্রকাশিত তাঁর গ্রন্থ, ইয়ার ৫০১-এ বয়ান দিচ্ছেন, “১৯৯২ খ্রীষ্টাব্দের ১১ই অক্টোবর পুরাতন বিশ্ব ব্যবস্থার ৫০০ বছরের ক্রান্তির কাল নির্দেশ করে, যা বিশ্ব ইতিহাসে কলাম্বিয়ান অথবা ভাস্কো দ্য গামা যুগ নামে অভিহিত হয়েছে।”১ অবশ্য এ অভিধা কার প্রাপ্য তা নির্ভর করছে ইতিহাস ভাষ্যকারের ওপর,
অর্থাৎ তিনি কোন বিশেষ আবিষ্কারককে/লুণ্ঠনকারীকে ইতিহাসের নায়ক হিসেবে দেখতে আগ্রহী। যাহোক, গত কয়েক শতাব্দী ধরে বিজয়ী এবং বিজিতের বিশ্বব্যাপী যে দ্বন্দ্ব, যা-কিনা পুরাতন বিশ্ব ব্যবস্থার মৌল বিষয়, ইতিহাসের চাকায় তারই বিবিধ প্রকাশ এবং বিভিন্ন নাম-উপনিবেশবাদ, সাম্রাজ্যবাদ, সামরিক সাম্রাজ্যবাদ, মিডিয়া সাম্রাজ্যবাদ, কর্পোরেট সাম্রাজ্যবাদ, কেন্দ্র বনাম প্রান্তিক, ইত্যাদি। সহজ অর্থে, এ হলো ইউরোপীয়ানদের পৃথিবী দখল। অ্যাডম স্মিথ জানাচ্ছেন, “...আমেরিকা আবিষ্কার এবং ইস্ট ইণ্ডিজে যাবার যাত্রাপথ পেয়ে যাওয়া মানব ইতিহাসের দু’টি মহাকীর্তি, দু’টি সবচে’ গুরুত্বপূর্ণ কাহিনী। এবং এ দুই মহাকীর্তি সঙ্ঘটনার মধ্য দিয়ে পৃথিবীর তাবৎ মানুষের ভবিষ্যৎ কীভাবে পরিবর্তিত হবে, তখন সে বিষয়ে ভবিষ্যৎ বাণী যে কোনো মানুষের প্রজ্ঞার বাইরের বিষয় ছিল।”১,২ তবে বিভ্রমহীন সৎ চোখ দিয়ে দেখলে, তখন কী ঘটছিল, প্রকৃত প্রস্তাবে এখন তা হয়ত বুঝে নেয়া অত শক্ত নয়। অ্যাডম স্মিথ অবশ্য অনেক আগেই জানিয়েছেন, “আমেরিকা আবিষ্কার...প্রকৃত অর্থেই ‘ইউরোপীয় রাষ্ট্র সমূহের’ জন্য অত্যন্ত জরুরি ছিল, যা কিনা ‘অবারিতভাবে উন্মুক্ত করেছিল এক নতুন, অনিঃশেষ বাজার’ যা সূচনা করেছিল ‘উৎপাদন শক্তি’, ‘রাজস্ব এবং সম্পদ’-এর অভূতপূর্ব বিস্তৃতি।”১,২ নতুন এই পৃথিবী আবিষ্কার দু’টি ব্যাপক ডেমোগ্রাফিক বিপর্যয় এনেছিল, বিশ্ব ইতিহাসে যা’ নজিরবিহীন। প্রথমত, পশ্চিম গোলার্ধে আদিবাসী মানুষদের প্রায় নিশ্চিহ্নকরণ এবং দ্বিতীয়ত, ক্রীতদাস প্রথার মধ্য দিয়ে আফ্রিকার কবর খনন। ইয়ার ৫০১ গ্রন্থের সাবটাইটেল, ‘দ্য কন্কোয়েস্ট কন্টিনিয়ুজ’, অর্থাৎ ‘বিজয়ের যাত্রা অব্যাহত।’ এই যাত্রার বিপরীতে যেখানে রয়ে গেছে বহু শতাব্দীব্যাপী অগুনতি মানুষের ধ্বংস, তাদের বাস্তুচ্যুতি এবং ক্রন্দন, তাদের বীরত্বগাথা এবং ভীরুতা, এবং পৃথিবীর সকল মানুষের সাথে মিলিত হবার গান, সেখানে উৎসারিত হয় ‘রেড ইণ্ডিয়ান’/‘আমেরিকান ইণ্ডিয়ান’/‘নেটিভ আমেরিকান’ কবি জয় হার্জো’র কবিতা “এখানে মৃতরা এখনও বিস্মৃত নয় (“উই মাস্ট কল্ এ মিটিং”/ইন ম্যাড লাভ অ্যাণ্ড ওয়ার)” এবং তাঁর প্রার্থনা “আমাদের ভালোবাসায় বিদ্ধ করো (“দ্য ক্রিয়েশন স্টোরি”/দ্য উম্যান হু ফেল ফ্রম দ্য স্কাই)।”

কবি জয় হার্জো’র কবিতায় এই ‘মৃত’ কারা এই প্রশ্ন এবং তার উত্তরের মধ্যে নিহিত আছে এই নিবন্ধের শুরুর জায়গাটি। এবং আলোচনার শেষে এসে আমরা বুঝতে চেষ্টা করব কেন কবি ভালোবাসায় বিদ্ধ হ’তে আগ্রহী। হার্জো’র কবিতার পূর্ণাঙ্গ আলোচনা এই নিবন্ধের বিষয় নয়, কিংবা নয় তাঁর কবিতার জগৎ-কিংবা তাঁর চিন্তার জগতের বিস্তৃত প্রেক্ষাপট নির্মাণ। বরং নিজের সুবিধার্থে, এই আলোচনাকে আমি একটি ‘উত্তর-ঔপনিবেশিক পুরাণ’ হিসেবে দেখতে চেষ্টা করেছি, যদিও জয় হার্জো এমন একটি আলোচনাকে প্রশ্রয় দিতেন কী না, জানি না। কারণ, নিজের চেতনার জগৎ সম্পর্কে বলতে গিয়ে কবি এক প্রবন্ধে লেখেন, “আমি ভ্রাম্যমাণ অনেক বিশ্বে,”৩ এবং সেই চিন্তাকে তিনি আরও বিস্তৃত করেন এক সাক্ষাৎকারে, “আমি জানি প্রতিদিন আমি ভ্রাম্যমাণতায় বিভিন্ন জগতে ঢুকে পড়ি এবং আবার বেরিয়ে আসি। কোন কোন জগৎ একে অপরের উপর প্রতিস্থাপিত হয় এবং কোনগুলি কখনোই হবে না, কিংবা অন্তত সঙ্গতিপূর্ণভাবে নয়।”৪ তিনি ‘বহু বিশ্ব’ সম্পর্কে তাঁর ভাবনাটি আরও বিস্তৃত করেন এভাবে :

আমি গভীরভাবে অনুভব করি যে সকল উৎস, যা আমাকে আমি করে তোলে, তাদের প্রতি আমার দায়বদ্ধতা আছে। দায়বদ্ধতা আছে আমার সকল পূর্বপুরুষ এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের প্রতি ; আমার নিজের দেশ, এবং যে ভূগোলে আমি গিয়েছি তার প্রতি, কারণ আমি তো তাই ; সকল কণ্ঠস্বরের প্রতি, সকল নারীর প্রতি, আমার তাবৎ গোত্রের প্রতি, সকল মানুষ, সব পৃথিবী, সব শুরুর এবং সব শেষের গণ্ডীর বাইরের প্রতি। আশ্চর্যরকমভাবে, এ বিষয়টি স্বাধীনভাবে আমাকে বিশ্বাস করতে শেখায় ; আমাকে কথা বলতে অনুপ্রাণিত করে, আমাকে আমার কণ্ঠস্বর দেয়, কারণ এ তো আমার দায়বদ্ধতা। ৫

জয় হার্জো কবির এই দায়বদ্ধতা সম্পর্কে সজাগ। কারণ, একজন সাবঅলটার্নকে অবশ্যই কথা বলতে হবে তাঁর মানুষের পক্ষে। তাঁর এই ভাষ্যকে নিতান্তই রাজনৈতিক মনে হতে পারে, কিন্তু সে অভিধায় তাঁর কোন আপত্তি নেই। রাজনীতি সম্পর্কে হার্জো’র দৃষ্টিভঙ্গি পরিষ্কার এবং তিনি বলেন, “পলিটিক্স ইজ এ গ্রেট মুভার, কারণ, রাজনীতি বিভিন্ন গোষ্ঠী এবং সংস্কৃতি প্রসঙ্গে আমাদের চৈতন্য এবং সজ্ঞানতাকে বদলে দেয়।”৬ একথা অবশ্যই মান্য যে, নিরঙ্কুশ পুঁজিবাদের সাম্প্রতিকতম স্তরে সাহিত্য-সংস্কৃতির আলোচনা রাজনৈতিক-অর্থনীতিকে বাদ দিয়ে এবং রাজনৈতিক-অর্থনীতির আলোচনা সাহিত্য-সংস্কৃতিকে বাদ দিয়ে প্রায়শই অপর্যাপ্ত থেকে যায়।”৭ এটি হলো তত্ত্বের বিবৃতির দিক। কিন্তু শুরুতেই যে ব্যাপারটি জেনে নেয়া দরকার সেটি হলো কোন্ সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের ভিতরে জয় হার্জো বেড়ে উঠেছেন।

নেটিভ আমেরিকান রেনেসাঁস, যার সূত্রপাত হয়েছিল ১৯৬০ খ্রীষ্টাব্দে স্কট মোমাদে, জেম্স্ ওয়ালেস্, এবং লেসলি সিল্কোর হাত ধরে, জয় হার্জো সেই সাহিত্যিক, সাংস্কৃতিক আন্দোলনের পরবর্তী প্রজন্মের অন্যতম প্রধান মুখপাত্র। বিষয় এবং আঙ্গিকের দিক থেকে এইসব নেটিভ আমেরিকান সাহিত্যিকদের সাহিত্যকর্ম অসামান্যভাবে নতুন এবং প্রাতিস্বিক। তাদের মাধ্যমে যে বৈচিত্র্যময় জগতের সৃষ্টি হয়েছে, যা এই ভূমি থেকে উদ্ভুত, যা সাদা মানুষের সাহিত্যকর্ম এবং সাহিত্যিক দৃষ্টিভঙ্গী থেকে সম্পূর্ণ পৃথক। জয় হার্জো’র বক্তব্য, “কবিতা নির্মাণের সাথে টিকে থাকার প্রসঙ্গটি সরাসরি যুক্ত। ব্যক্তিগত জীবনে, এটি আমাকে যেমন ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করেছে ; সমষ্টিগত অর্থে, আমার কবিতা আমার গোত্রের সপক্ষে সরব থাকার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ‘আমাদের নিশ্চুপতা আমাদেরকে রক্ষা করবে না’ (অদ্রে র্লোদ)।”৮ তাঁর কবিতার ওপর যাঁরা গভীরভাবে প্রভাব রেখেছেন তাঁরা হলেন : নেটিভ আমেরিকান কবি লেসলি সিল্কো, সীমন অর্টিজ ; আফ্রিকান-আমেরিকান কবি এবং লেখক জুন জর্ডান, অদ্রে র্লোদ, এবং এলিস ওয়াকার ; অন্যদের মধ্যে আছেন পাবলো নেরুদা এবং আমেরিকার মূলধারার কবি গলওয়ে কিনেল প্রমুখ। আমেরিকান ইণ্ডিয়ানদের বিভিন্ন গোত্রের জটিল এবং যন্ত্রণাময় অতীতের পুনর্নির্মাণ, সাদা মানুষের সভ্যতার সাথে প্রবল বিরোধ, নেটিভ ঐতিহ্যে মিশ্র রক্তের প্রবহমানতা, ইত্যাদি নিয়ে গত তিন দশক ধরে যে সাহিত্য ভাণ্ডার গড়ে উঠেছে, কবি জয় হার্জো সেই ঐতিহ্যের এক প্রধান রূপকার।

কবি জয় হার্জো’র জন্ম ওক্লাহোমার তুলসায়, ১৯৫১ খ্রীষ্টাব্দে। তিনি তাঁর কিশোরী মাতার সন্তান, যাঁর ধমনীতে চেরোকি এবং ফরাসি
রক্ত প্রবহমান, এবং ক্রীক পিতার, যিনি অসামান্য যোদ্ধা এবং বাগ্মীতার ঐতিহ্যবাহী পরিবার থেকে এসেছেন। এই মিশ্র রক্তের ঐতিহ্য নিয়ে বেড়ে উঠেছেন তিনি। মিশ্র ঐতিহ্য যেমন তাঁর মধ্যে ধ্বংসের প্রবণতা সৃষ্টি করেছে, আবার এর মধ্যেই তিনি নিজেকে ইতিহাসের ক্রিয়াশীল সত্তা হিসেবে দেখতে পেয়েছেন। তাঁর এই ক্রীক নাম ‘হার্জো’র অর্থ ‘তুমি এত সাহসী যে তুমি উন্মাদ’। এই উন্মাদনা এখন আর সম্মুখ যুদ্ধক্ষেত্রে নেই, তবে সৃষ্টিশীল এক উন্মাদনা তাঁর চৈতন্যে সর্বদা সক্রিয় এবং তাঁর কবিতায় লিপ্ত। এই অনুভূতি উঠে এসেছে সাম্প্রতিক এক সাক্ষাৎকারে, “অনেক প্রতিকূলতা এবং প্রায় আত্মহনন অবস্থার ভিতরে অনেক আগেই জেনেছি যে আমার মিশ্র রক্তে যে দ্বৈত সত্তা আছে, তার বিরোধ দিয়ে আমি কখনোই আমাকে ধ্বংস হতে দেবো না। ... জাতিগত এবং আত্মপ্রতিকৃতির বিভাজন অন্য একপ্রকার পদ্ধতি যার মাধ্যমে ঔপনিবেশিক শক্তি আমাদের ধ্বংস করে।”৯ এই উপলব্ধিতে পৌঁছতে তাকে দীর্ঘ পথ অতিক্রম করতে হয়েছে। কবি জয় হার্জো’র কবিতা আলোচনা মূখ্যত এই পথেরই আলোচনা, যে পথ দীর্ঘকালব্যাপী প্রতিকূলতায় এবং কষ্টে আকীর্ণ। অতি অল্প বয়সে তিনি মা হয়েছেন দু’সন্তানের, অর্থনৈতিক সমস্যা তাকে পীড়িত করেছে, বহু কষ্ট স্বীকার করেছেন। তিনি তাঁর প্রথম কবিতা লেখেন বাইশ বছর বয়সে, যখন তিনি ভর্তি হয়েছেন নিউ মেক্সিকো বিশ্ববিদ্যালয়ে, পরবর্তীতে বি.এ. ডিগ্রি নিয়েছেন, আরও পরে আইওয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ক্রিয়েটিভ রাইাটং-এ এম.ফ.এ. ডিগ্রি নিয়েছেন। তিনি এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার পেশায় নিয়োজিত। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাগত তথ্য নিতান্তই বস্তুগত ; তবে, তাঁর শৈশব, তাঁর কৈশোর, বিশেষ করে যে ভূগোলে তিনি বেড়ে উঠেছেন এবং যাদের সাথে বেড়ে উঠেছেন, তার প্রভাব বোধকরি আরও বেশি তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে তাঁর কবিতায় ঃ
আমার মনে হয়, এই জীবনে, আমি কেবলি গমনেচ্ছু, উড়ছি নিয়তই এই পৃথিবীর ওপর, যেখানে অনেকের বাস। আমি ইণ্ডিয়ান, একজন নারী, এবং ক্রীক নেশনের শিল্পী। আমার স্মৃতির রেখা ধূসর হয়ে আসে। অনতি দূরে আমি দেখি আমাকে, কিশোরী যে গাড়ি থেকে বেরিয়ে আসছে, যে তখনো মৃদু নেশাতুর, এবং হাত নাড়িয়ে বন্ধুদের বিদায় জানাচ্ছে। আমরা জেগে আছি সারারাত, গান গাইছি অন্ধকারে, এবং নক্ষত্রদের সংযোগ করছি ইণ্ডিয়ান শহর, আল্বাকারকির পশ্চিমে। (“দ্য সাইকলজি অব্ আর্থ অ্যাণ্ড স্কাই”/এ ম্যাপ টু দ্য নেক্সট্ ওয়ার্ল্ড)।

কবি জয় হার্জো’র ‘আমি’ হয়ে ওঠে অনন্ত স্তরের। প্রথমত, তাঁর শরীরে মিশ্র রক্তের ঐতিহ্য-ক্রীক, চেরোকি, আমেরিকান, আইরিশ, এবং ফরাসি। দ্বিতীয়ত, অধিকাংশ নেটিভ আমেরিকানদের মতো তাঁর শৈশব রিজার্ভেশনে কাটেনি, বরং তিনি বেড়ে উঠেছেন তুলসা শহরের উত্তরে এমন এক পরিবেশে, যেখানে নেটিভ আমেরিকানদের বিভিন্ন গোত্রের মানুষদের বাস : এর পাশাপাশি আছে সাদা এবং মিশ্র রক্তের ঐতিহ্যের মানুষ, অর্থাৎ এক কথায় অনেক গোত্র তথা গোষ্ঠীর বাস। পরবর্তীকালে তিনি হয়তো নিউ মেক্সিকোর আল্বাকারকিতে বাস করে থাকবেন, এমন সাক্ষ্য তাঁর কবিতায় আমারা ইতিমধ্যে দেখেছি। কবির পিসি, ল্যুই হার্জো বল-এর প্রভাব পড়েছে কবির উপর। হার্জো বল ছিলেন একজন তুলি শিল্পী এবং অসামান্য গল্প-কথক, যাঁর স্মৃতিতে শ্র“তির মাধ্যমে লিপিবদ্ধ রয়ে গেছে অ্যাণ্ড্রু জ্যাক্সনের সাথে মোনাহির রেডস্টিক যুদ্ধের অসামান্য বৃত্তান্ত, আলাবামা থেকে ওক্লাহোমা পর্যন্ত ক্রীক গোত্রের মানুষদের অশ্র“সিক্ত দীর্ঘ পথ পাড়ি দেবার অবর্ণনীয় কাহিনী। জয় হার্জো কবিতার মধ্যে গল্প বলার প্রবণতা যেমন অর্জন করেছেন একটি বিশেষ ট্রাইবাল প্রবণতা হিসেবে, একইভাবে তাঁর পিসি হার্জো বল্ হয়ত তাঁকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে থাকবেন। তৃতীয়ত, তাঁর শরীরে মিশ্র রক্তের প্রবাহ, তবু তিনি নিজেকে নেটিভ আমেরিকান ভাবতে বেশি স্বচ্ছন্দবোধ করেন, যদিও তিনি তাঁর গোত্রের ভাষা বলতে অভ্যস্ত হয়ে ওঠেননি, বরং ইংরেজি ভাষায় কথা বলেন এবং লেখেন। তিনি মনে করেন যে পিতৃ-ঐতিহ্য (ক্রীক) তাঁর সচেতনতায় অধিকাংশ সময়েই উপস্থিত। জয় হার্জো দ্রুতই শনাক্ত করেন, ‘ইংরেজি উপনিবেশবাদিদের ভাষা’ অর্থাৎ, ‘শত্র“র ভাষা’ এবং তিনি আরও মনে করেন, “ইংরেজি ভাষাটা খুবই পিতৃতান্ত্রিক এবং এই ভাষায় এমন কোন শব্দাবলি নেই যা’ ধ্বংসের কথা বলে।”১০ কিন্তু এই ভাষা তিনি পরিত্যাগ করেন না, বরং তাকে পুনর্নির্মাণ করেন। কবি জয় হার্জো’র ভাষায় ‘রিইন্ভেণ্টিং দি এনিমি’জ ল্যাঙ্গুয়েজ’, অর্থাৎ শত্র“র ভাষাকে পুনর্নির্মাণ কিংবা পুনরাবিষ্কারের মধ্য দিয়ে বোধকরি শত্র“র বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেন, “বজ্র আর বিদ্যুতে চিত্রিত আমি এক তীর/ খুঁজে ফিরি নাম শত্র“র/ নির্মাণ করেছে তীর তার নিজস্ব ভাষা/ যে ভাষা বজ্রের, যে ভাষা সরীসৃপের...(“উই মাস্ট কল্ এ মিটিং”/ ইন ম্যাড লাভ অ্যাণ্ড ওয়ার)।” গ্লোরিয়া বার্ড এবং অন্যান্যদের সহযোগিতায় ‘রিইনভেণ্টিং দি এনিমি’জ ল্যাঙ্গুয়েজ’ নামে একটি বই সঙ্কলন করেছেন ১৯৯৭ খ্রীষ্টাব্দে যেখানে সঙ্কলিত হয়েছে পৃথিবীর বিভিন্ন গোত্র এবং আদিবাসী লেখকদের লেখা, যাঁরা মূলত নারী, যদিও এই বইয়ের চিন্তার বীজ বপন হয়েছিল ১৯৮৬ খ্রীষ্টাব্দে, যখন ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার ভ্যাঙ্কুভারে আন্তর্জাতিক সভায় জড়ো হয়েছিল পৃথিবীব্যাপি আদিবাসী লেখক এবং সাহিত্যিক, যাঁদের মধ্যে আর্টিক সার্কেল থেকে প্রতিনিধি পর্যন্ত ছিল, এমনকী ছিল নরওয়ে থেকে ‘সামি’ জনপ্রতিনিধি, সাউথ প্যাসিফিক থেকে ‘মাওরি’ জনপ্রতিনিধি। কিন্তু কে এই শত্র“, যাদের বিরুদ্ধে কবি জয় হার্জো’র চেতনা সব সময়ই উচ্চকিত ? জয় হার্জো’র কবিতা থেকে তার সাক্ষ্য তুলে দেয়া যাক ঃ
... আমরা যেন অপহৃত, বস্তাবন্দী যেন সাদা মানুষের কাঁধে, যারা ভান করে পৃথিবী এবং আকাশ তাদের দখলে। ... আমরা পেয়েছি আমাদেরকে সভ্যতার কোন এক নিঃশেষ বিন্দুতে, যা বাজিকরের চাতুরির ব্যাগ থেকে নয় বহু দূরে...। (“এ পোস্টকলোনিয়াল টেল”/দ্য উম্যান হু ফেল্ ফ্রম দ্য স্কাই)


এই গদ্য-কবিতার শেষে কবি পাদটীকা সংযোজন করেছেন। পাদটীকা সংযোজনে দেখি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসক তথ্য :
.....................................................................
বিংশ শতাব্দীর অন্তিমকালে এদেশের ভৌগোলিক মানচিত্র আমাদের প্রিয়জনদের মৃতদেহে ভরে গেছে। কয়েক শতাব্দী আগে এ দেশের জনসংখ্যার একশ’ ভাগ ছিল নেটিভ মানুষ। আমরা এখন জনসংখ্যার দু’শ ভাগের একভাগ মাত্র। ইতিহাসে নৃশংসতা এই জনপদের প্রবলতর এক বিষয়।
কিন্তু এই মৃতদেহ কার ? এ যেন জয় হার্জো’র প্রিয়জনদের, যেন তাঁর আত্মীয়স্বজনদের ; বৃহৎ অর্থে, নেটিভ আমেরিকানদের, যাদের সাথে তিনি ঐতিহাসিকভাবে একাত্মবোধ করেন বেশি, যদিও তাঁর শরীরে মিশ্র রক্তের ধারা প্রবহমান। মানুষের শরীর যেন আরেক ভূগোল ; সম্ভবত সেখানেই তাঁর কবিতায় বহুমাত্রিক জগতের কোন কোন জগৎ একে অপরের উপর বিন্যস্ত হয়, প্রতিস্থাপিত হয়। ল্যাণ্ড, অর্থাৎ জমি, অর্থাৎ ভূগোল, অর্থাৎ ভৌগোলিক মানচিত্র তাঁর কবিতায় এক অনিবার্য বিষয়। জয় হার্জো’র বিভিন্ন কবিতার বইয়ে/কবিতায় এই বিষয়টি বৃত্তাকরে ঘুরেফিরে আসে ; তিনি ও সমগ্র নেটিভ আমেরিকান সেই অর্থে ‘বিদেশী’, উদ্বাস্তু’, ‘পলাতক’, ইত্যাদি :
...এবং আমাদের শত্রু, যারা আমাদের মাথায় বন্দুক ধরে আমাদের বাধ্য করেছে ওক্লাহোমা ত্যাগ করতে, সেই স্মৃতি আজও মানুষের চৈতন্যে প্রবল, অস্থির...। (“রিটার্নিং ফ্রম দি এনিমি”/ এ ম্যাপ টু দ্য নেক্সট ওয়ার্ল্ড)

এমন কী দু’বছর বয়সেই আমি জেনেছি যে আমরা পৃথক। এই পুণ্য ভূমিতে, আগন্তুকের চোখে দেখেছি, আমরা যেন বহিরাগত, যেন সীমা লঙ্ঘনকারী। রাষ্ট্র অতি শীঘ্রই চোরদের মহিমান্বিত করলো। প্রত্যেকেই যেন ইণ্ডিয়ান এবং যেন কেউ নয় ইণ্ডিয়ান। বিস্মৃতিই যেন সর্বোত্তম...। (“অটোবায়োগ্রাফি”/ ইন ম্যাড লাভ অ্যাণ্ড ওয়ার)
...হাঁটতে হাঁটতে আমি ফিরে গেছি আমার অ্যাপার্টমেণ্টের পশ্চাৎদিকে। আমরা সবাই, এই শহরের, কোথাও কোন এক পশ্চাৎভাগে বাস করেছি, এবং নিজেদেরকে ইণ্ডিয়ান সংজ্ঞায়িত করতে ব্যস্ত থেকেছি ব্যাপক উপনিবেশের কালে।...(“দ্য সাইকোলজি অব্ আর্থ অ্যাণ্ড স্কাই”/ এ ম্যাপ টু দ্য নেক্সট্ ওয়ার্ল্ড)

মানুষের বাস্তুচ্যুতি, আত্মপরিচয় নিয়ে সংশয় এক কঠিন মানসিক দৈন্যদশা, এক ভয়ঙ্কর আত্মবিচ্ছেদ। এ বিষয়টিকে ফ্রান্স ফ্যানন দেখেন এভাবে, “উপনিবেশিকতায় আবদ্ধ মানুষের কাছে সবচে’ মূল্যবান, সবচে’ বস্তুগত হলো তার জমি, কারণ, এই জমি তার জন্য নিয়ে আসে তার আহার, এবং সর্বোপরি তার মর্যাদা। (ফ্রান্স ফ্যানন, দ্য রেচেড অব্ দি আর্থ।”১১ ভূমির সাথে প্রান্তিক, অর্থাৎ ক্ষেত্রজ মানুষের সম্পর্কের যেমন একটি রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক দিক আছে, একইভাবে এই সম্পর্কের একটি আত্মিক দিকও রয়ে গেছে।

চৈতন্যে সময় এবং স্থান যেভাবে কাজ করে, তার ভিত্তিতে পৃথিবীর সাথে মানুষের যে আত্মিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে, তারই অন্য নাম আধ্যাত্মিকতা। ইউরোপীয়ানদের (অবশ্য ইদানিং সকল আধুনিক, অর্থাৎ যৌগিক মানুষ এবং একেশ্বরবাদীদের ক্ষেত্রে এ কথা প্রযোজ্য) চিন্তা কাঠামোয় এবং আধ্যাত্মিকতার সময় চেতনাকে অধিকৃত করে রাখে ; অন্যদিকে, আমেরিকান ইণ্ডিয়ানদের কাছে ভৌগোলিক অবস্থান, আরও সঠিক অর্থে তার জন্মভূমি তার সকল ভাবনার, সকল আধ্যাত্মিকতার মূল উৎস। “একেশ্বরবাদী ধর্মচিন্তা যতোটা না আত্মিক, তার থেকে অনেক বেশি পার্থিব, অনেক বেশি রাজনৈতিক,” এমনটি দাবি করেন ভাইন দেলোরিয়া তাঁর ‘গড ইজ রেড’১২ গ্রন্থে (পৃঃ ৬৬)। জয় হার্জো’র কবিতা স্থান কাঠামোর অধিবিদ্যায় পাঠ জরুরি হয়ে পড়ে, কারণ ভৌগোলিক মানচিত্রের পবিত্রতা এবং সেই ভূগোলে লিপ্ত থাকার বিষয়টি তাঁর কবিতার মৌল বিষয়। হার্জো’র ভাষায়, “এই ভূমি হলো কবিতা যা উৎসারিত গৈরিক মাটি এবং তপ্ত বালু থেকে, যা আমি কখনো লিখতে পারতাম না, যদি না এই কাগজ হয়ে উঠত আকাশের পবিত্র দলিল এবং কালি হয়ে না উঠত দূর দিগন্তে ধাবমান বন্য ঘোড়ার ভগ্ন সারি।”১৩ কারণ, ইণ্ডিয়ানদের কাছে সময়ের ধারাবাহিকতার ঘটনার পারস্পর্যের থেকে অনেক বেশি অর্থবহ তার পবিত্র ভূমি, হোক তা একটি নদী কিংবা একটি পাহাড়, অথবা একটি উপত্যকা। সেই ভূগোলের মানুষ একমাত্র প্রতিভূ নয়, বরং হরিণ, চিতাবাঘ, সরীসৃপ, ঘোড়া, অর্থাৎ প্রতিটি প্রাণের সাড়া মেলে এখানে এবং সেই স্পন্দনে পৃথিবী এখানে জাগ্রত। সেই জাগৃতির গান জয় হার্জো’র কবিতা জুড়ে।

বাইরে একটি হরিণ, তাকে আমি শুনতে পাই ; দৃশ্যাতীত তার কাচের কণ্ঠস্বর/ আমাকে ডাকে, জাগ্রত করে আমার হৃদয়, এবং আমাকে কাঁদায় এই ভঙ্গুর শহরে। (“ডীয়ার ঘোস্ট”/ ইন ম্যাড লাভ অ্যাণ্ড ওয়ার)

আছে স্বর্গের এক চিতাবাঘ যে পৃথিবীর প্রান্ত ছাড়িয়ে, তার পরিধি অতিক্রম করে উঁকি মারছে এই ভোরে। সে শুনতে পায় সূর্যের সাথে নক্ষত্রের আলাপ এবং দেখে চাঁদ তার ক্ষীণ অন্ধকার ধুয়ে নিচ্ছে প্রার্থনায় উজ্জীবিত পৃথিবীর এই জলে। তাবৎ পৃথিবী জুড়ে আছে সেই প্রাণ, যারা ঘুমাতে পারে না, আর যারা কখনোই উঠেনি জেগে। (“ইন্সমনিয়া অ্যাণ্ড দ্য সেভেন স্টেপ্স টু গ্রেস্”/ দ্য উম্যান হু ফেল্ ফ্রম দ্য স্কাই)
এই নারী ছিল এক রূপকথা, যে কিনা স্বপ্নের মধ্যে চলে গেছে। ...আর সেই হরিণ অভিশাপের গ্রন্থি পেরিয়ে যেন আমাদের খুঁজে ফিরছিল। ...তার পরনে ছিল না কোন বিবর্ণ লাল জামা, তার গোড়ালিতে ছিল না কোন ফিতে ; বরং সে ছিল এক হরিণ, যে এক তুষার শুভ্র সকালে আমাদের স্বপ্নে করেছে প্রবেশ, পাইন বৃক্ষে ছড়িয়ে দিয়েছে নিঃশ্বাসের কুয়াশা ... যার পূর্বপুরুষ কখনো ছেড়ে যায়নি এই ভূমি। “ডীয়ার ড্যান্সার”/ ইন ম্যাড লাভ অ্যাণ্ড ওয়ার)

জয় হার্জো’র কবিতায় উদ্ভাসিত সেই আধ্যাত্মিকতা যার উদ্ভব প্রাকৃতিক ঐশ্বর্যে প্রাণময় উত্তর আমেরিকায়, যে ভূখণ্ডের পূর্বে অতলান্তিক আর পশ্চিমে প্রশান্ত মহাসাগর। এই দুই মহাসাগরের মধ্যবর্তী মহাপ্রান্তরে, প্রিকলাম্বিয়ান যুগে, একমাত্র ইণ্ডিয়ান নেশনের প্রায় তিনশ’ গোত্রের বাস গত ত্রিশ হাজার বছর ধরে। সেই অখণ্ড সময়ে পাহাড়, নদী, সাগর, মরুভূমি, ইত্যাদি ভৌগোলিক পরিবেশের সাথে নেটিভ আমেরিকানদের গড়ে উঠেছে এক অদ্ভুত আত্মিক সম্পর্ক, যেখানে এই ভূখণ্ডের আদি মানুষ প্রতিটি বস্তুকে পেয়েছে তাদের কল্পনার অস্তিত্বে। পৃথিবী এবং নক্ষত্র, প্রতিটি প্রাণী এবং পাতাও এই ভূখণ্ডের আদি মানুষদের সাথে কল্পনা করেছে। যেহেতু “প্রতিটি প্রাণীর মতো কল্পনাও আকাক্সক্ষা করে প্রশংসার। গল্প আর গান সেই প্রশংসারই সাক্ষ্য” (এ পোসটকলোনিয়াল টেল”/ দ্য উম্যান হু ফেল্ ফ্রম দ্য স্কাই)। সেমেটিক ধর্ম-ভিত্তিক মনোকাঠামো নয়, যেখানে ঐশী গ্রন্থের অনুশাসন এবং নৈতিকতাই ধর্মের ভিত্তি, বরং সকল প্রাণের সাথে হৃদয়ের যে সম্পর্ক এবং যে সম্পর্কে কোন প্রাণ বাদ যায়নি, এমনই এক আধাত্মিকতা যা নেটিভ আমেরিকানদের, তাই মূর্ত হার্জো’র কবিতায়। নেটিভ আমেরিকানদের বিভিন্ন গোত্র একে অপরের আচার অনুষ্ঠানে পৃথক হয়েও গভীর এক আত্মিক সম্পর্কে আবদ্ধ, লীন, এবং তথাগত ; কারণ প্রতিটি বস্তুকে তাঁরা পেয়েছেন তাঁদের কল্পনার অস্তিত্বে। জয় হার্জো’র কবিতা ইতিহাসের রক্তাক্ত পথে যাত্রা শুরু করে সমগ্র মানবের মধ্যে এক ঐক্যের অন্বেষণ করে ফিরছে। এই সন্ধানের মধ্যেই ঘটেছে তাঁ চৈতন্যের ব্যাপ্তি, তাঁর কবিতার দীর্ঘ রূপান্তর।

রূপান্তর যা নিতান্তই একটি শব্দমাত্র নয়, বরং কীভাবে এই রূপান্তরের ভিতরে কবিতা কথা ক’য়ে ওঠে, ভাষার বিবর্তন যেখানে শব্দসমূহের অন্তর্গত ক্রোধকে পবির্তনের মধ্যে দিয়ে এবং তাকে না ভুলে গিয়ে ভিন্ন মাত্রায় নিয়ে যায়, সেখানেই জয় হার্জো স্মরণ করেন গান্ধীকে, “...আমাদের ক্রোধ নিয়ন্ত্রিত হয়ে পরিবর্তিত হ’তে পারে এমন এক শক্তিতে যা এই পৃথিবীকে করতে পারে গতিশীল, সঞ্চারমান।”১৪

নেটিভ আমেরিকানদের সংগ্রামের যে ধারাবাহিকতা আছে, তেমনি আছে বিশ্বের তাবৎ বস্তুজগতের মধ্যে সম্পর্ক, ঘটনাসমূহের বৃত্তাকারে আবর্তন, জীব এবং জড়ের ভিতরে অচ্ছেদ্য সম্পর্ক, এবং সর্বোপরি ব্যক্তিক এবং ব্যষ্টিক সম্পর্ক প্রবাহের যৌথ যাত্রা। কবি জয় হার্জো’র কবিতায় অতীত এবং বর্তমানের সার্বক্ষণিক মিথস্ক্রিয়া, মিথিক মোটিফের উপস্থিতি, এবং কবিতার গল্প হয়ে ওঠার প্রবণতা যেন আরও তীব্রভাবে তাঁকে বাঁধে নেটিভ ঐতিহ্যে, যেখান গল্প-পুরাণ প্রবাহিত এক প্রজন্ম থেকে পরবর্তী প্রজন্মে, যেখানে অতীত অখণ্ড সত্তায় এসে সাক্ষ্য রাখে বর্তমানের কাছে। অর্থাৎ, স্মৃতি শুধুমাত্র অতীতচারিতা নয়, যেখান থেকে পরিত্রাণের পথ নেই, বরং একটি গতিশীল প্রক্রিয়া যা সৃষ্টির মধ্য দিয়ে জন্ম দেয় নতুন পথের :
স্মৃতি, তাকে আমি যে অর্থে বুঝেছি তা হলো শব্দের প্রকৃতি যা বলে, অর্থাৎ অতীতচারিতা। কিন্তু একে আমি অন্য অর্থেও বুঝেছি। তাকে আমি নিতান্তই পিছন ফিরে তাকানো হিসেবে দেখি না, বরং দেখি ঘটমান বর্তমান হিসেবে, যা কিনা এখন ঘটছে, এবং দেখি ভবিষ্যৎ ঘটনা হিসেবে...১৫

ইউরোপীয় দর্শন এবং অধিবিদ্যায় ইতিহাস চেতনার মর্মশ্বাস, যা সময়কে একরৈখিকভাবে দেখতে অভ্যস্ত এবং যার সাথে প্রগতির ধারণা সম্পৃক্ত, তার সাথে নেটিভ আমেরিকানদের আত্মিকতার কোন সম্পর্ক নেই। কারণ তাদের চৈতন্যে ইতিহাস এবং ভৌগোলিক সীমারেখা নির্মাণ করে ‘পবিত্র ভূমি’ যার সাথে মিশে আছে অসংখ্য গল্প, দীর্ঘ যাত্রাপথ, পরিভ্রমণশীলতা, এবং প্রত্যাদেশ। নেটিভ আমেরিকানদের চেতনায় ইতিহাস কী তার সবচে শুদ্ধ উচ্চারণ বোধকরি চীফ সিয়াটোলের বক্তৃতায়, যখন তিনি ওয়াশিংটনে ‘মেডিসিন ক্রীক চুক্তি’ স্বাক্ষর করেন ১৮৫৪ খ্রীষ্টাব্দে। তিনি দেখেন তাঁর ‘ডুয়ামিশ’ গোত্র যুদ্ধে পরাজিত এবং তাঁর গোত্রের অন্ধকারাচ্ছন্ন ভবিষ্যত, কিন্তু এর মধ্যেই বিবৃত হয়েছে নেটিভ আমেরিকানদের ইতিহাস ধারণা এবং চীফ সিয়াটোলের আত্মার এবং ইতিহাসকে উপলব্ধির অসামান্যতা :

আমাদের অবশিষ্ট দিনগুলি আমরা কোথায় যাপন করি, সেটি মামুলি বিষয়। অবশ্য তাদের সংখ্যা অনেক নয়। আরও কিছু চন্দ্রমাস ; আরও কিছু শীতকাল। পরাক্রান্ত অতিথি সেবক, ভ্রাম্যমাণ ছিল যারা এই বিস্তৃত ভূগোলে, ছিল যাদের সুখের বসতি, প্রতিরক্ষা পেয়েছে যারা মহাপ্রাণ থেকে, উত্তরাধিকারে তাদের হয়ত কেউ থাকবে না যে তার বিলুপ্ত জনগোষ্ঠীর কবরে নিজের শোক এবং কান্না উৎসর্গ করতে পারে, যারা একদিন তোমাদের থেকে শক্তিশালী ছিল, তোমাদের থেকে আশান্বিত ছিল। কিন্তু আমি কেন আমার মানুষের অসময়ের দুর্ভাগ্য নিয়ে শোক করব ? সমুদ্র তরঙ্গের মতো গোত্র অনুসরণ করে গোত্রকে, জাতি অনুসরণ করে জাতিকে। প্রকৃতির এই তো বিন্যাস এবং শোক নিতান্তই অর্থহীন। তোমাদের বিলুপ্তির কাল হয়ত বহুদূরে, কিন্তু এ বিলুপ্তি অবশ্যম্ভাবী, এমন কী সাদা মানুষ-যাদের দেবতা তাদের সাথে হেঁটেছে, যেমন বন্ধু হাঁটে বন্ধুর সাথে-তারাও এই একই ভাগ্য থেকে মুক্ত নয়। শেষাবধি, আমরা হয়তো একে অপরের ভাই হয়ে উঠব। আমরা অপেক্ষায় থাকবো, আমরা দেখবো। (গড ইজ রেড, পৃঃ ১০১)

চীফ সিয়াটোলের বক্তৃতায় বোধকরি ইতিহাস ধারণার চেয়ে বেশি উচ্চকিত হয়ছে প্রকৃতি বিষয়ক ভাবনা, যে প্রকৃতি প্রাণময় এবং যার আবর্তন অনন্তকাল ধরে, যেখানে প্রগতির ধারণার চেয়ে অস্তিত্বের আকুতি অনেক বেশি প্রবল। এবং একই সাথে তাঁর বক্তৃতা নির্দেশ করে সমগ্র মানবের ঐক্য এবং তার অন্তিম পরিণতি। জয় হার্জো’র কবিতা সেই ঐতিহ্যেরই শব্দাকৃতি :
আমরা মানুষ হিসেবে সবাই জ্ঞান সৈকতে সমবেত। এক ঈশ্বর আমাদের সবাইকে এখানে সমবেত করেছেন, কারণ তিনি আত্মীয় চেয়েছিলেন।

......................................................................
আমরা গান গাই, যে গানের কোন শুরু নেই কিংবা যার কোন শেষ নেই, এমনই প্রতিশ্রুতি ছিল এই গানের।
......................................................................

আমরা প্রাণগ্রন্থি থেকে বিচ্ছিন্ন এইসব তন্তু জড়ো করি। এইসব তন্তু আমাদের ভালোবাসায় কম্পমান, যখন তাদেরকে আমাদের আত্মীয়দের নামে ডাকি এবং তাদের নিয়ে যাই আমাদের গৃহে, যা নির্মিত চারটি দিক দিয়ে এবং আমরা উৎসর্গ করি গানে...। (রেকন্সিলিয়েশন : এ প্রেয়ার/ দ্য উম্যান হু ফেল্ ফ্রম দ্য স্কাই)
গৃহ যখন উন্মুক্ত অবারিত পৃথিবীর দিকে, আত্মিকতা তখন সকল প্রাণের প্রতি। আজকের আমেরিকা, যা অভিবাসীদের দেশ হিসেবে পরিচিত, যেখানে সকল গোত্রের, সকল জাতির, সকল ধর্মের মানুষের বাস, সেই ঐশ্বর্যময় ভূগোলের রাজনৈতিক মালিকানা আজ অব্দি যদিও সাদা মানুষদের হাতে, তবে তার আত্মিক মালিকানা বোধকরি এখনও রয়ে গেছে রেড ইণ্ডিয়ানদের কাছে। উত্তর আমেরিকার ভৌগোলিক মানচিত্রে, জয় হার্জো সেই সর্বপ্রাণ, সকল আস্তিকতার, সকল আত্মিক সম্পর্কের অন্যতম প্রধান কবি।

..............................................................
[ কবি জয় হার্জো’র কবিতার ভূগোল দীর্ঘ, বিস্তৃত, এবং গভীর। এই নিবন্ধে চিন্তা যেভাবে বিন্যস্ত হয়েছে, তার সাথে পারস্পর্য রেখে এই নিবন্ধকারের করা কিছু অনুদিত কবিতা এখানে সন্নিবেশিত হলো অগ্রবীজ-এর পাঠকের জন্য। ]


এ পোস্টকলোনিয়াল টেল
..............
প্রতিদিন যেন সৃষ্টি কাহিনীর এক পুনরাভিনয়। আমরা বেরিয়ে আসি অসম্ভব এক ঘন বস্তু থেকে, স্বপ্নময় বস্তুর কম্পমান অতি উজ্জ্বল দীপ্তি থেকে।
এইতো প্রথম পৃখিবী এবং বোধকরি শেষ।

একদিন আমরা টেলিভিশনের জন্য আমাদেরকে নির্বাসন দিয়েছি। এ এমনই এক বাক্স, যা স্বপ্নদর্শীকে বিচ্ছিন্ন করে তার স্বপ্ন থেকে। আমরা যেন অপহৃত, বস্তাবন্দী যেন সাদা মানুষের কাঁধে, যারা ভান করে পৃথিবী এবং আকাশ তাদের দখলে। পৃথিবীর সকল মানুষ ছিল এই বস্তার ভিতরে। বস্তায় ছিদ্র না হওয়া অব্দি আমরা যুদ্ধ করেছি।

পতনের কালে জানিনি আমরা পড়ে যাচ্ছি। আমরা গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছিলাম কাজে অথবা শপিং মলে। শিশুরা বন্দুক হাতে শিখছিল অঙ্কে বিয়োগ, যদিও আপাত মনে হবে ক্লাসেই ছিল তারা।

আমরা পেয়েছি আমাদেরকে সভ্যতার কোন এক নিঃশেষ বিন্দুতে, যা বাজিকরের চাতুরির ব্যাগ থেকে নয় বহু দূরে।
প্রতিটি বস্তুকে পেয়েছি আমাদের কল্পনার অস্তিত্বে। পৃথিবী এবং নক্ষত্র, প্রতিটি প্রাণী এবং পাতা আমাদের সাথে কল্পনা করেছে।
প্রতিটি প্রাণীর মতো কল্পনাও আকাক্সক্ষা করে প্রশংসার। গল্প আর গান সেই প্রশংসার সাক্ষ্য।

বৈপরীত্যে কল্পনা আমাদেরকে উদ্ভাসিত করে, আমাদের সাথে কথা বলে, গান করে।
গল্প আর গান মানুষেরই মতো ; তারা ধ্বংসযোগ্য নয়, যখন তারা হাসিতে উদ্ভাসিত।
কোনো গল্প আর গান পতনের কিংবা বিপ্রতীপভাবে উড্ডয়নের পূর্ণমাত্রা প্রকাশিত করে না।
উদ্ভাসিত করে না উড্ডয়ন।
“এ পোস্টকলোনিয়াল টেল”/দ্য উম্যান হু ফেল ফ্রম দ্য স্কাই

অটোবায়োগ্রাফি
..............
বুটলেগারদের পাশের দরজায় আমরা বাস করতাম এবং আমরা ছিলাম ভাগ্যবান। ত্রাসের রাজত্ব ছিল বুটলেগারদের। আমরা ছিলাম অধিকৃত দেশের অপহৃত মানুষ। ‘ওক্লাহোমা’র অর্থ পরাজয়। কিন্তু এই পুণ্য ভূমির নিজস্ব পরিকল্পনা আছে, যা’ কিনা চুঁইয়ে পড়ে মাদকাসক্ত মানুষের আঙ্গুলের ফাঁক দিয়ে। কিছুই বিস্মৃতির নয়, যেন নিতান্তই পশ্চাতে ফেলে আসা।

গত সপ্তাহে প্রবহমান নদীর পাড়ে আমি হিকরি গাছকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছি। এই মাতৃভূমি উত্তরাধিকার হিসেবে সুবৃহৎ মল এবং হোটেলের অস্তিত্বকে স্বীকার করে না। গ্লাস কিংবা স্টিল দিয়ে স্বপ্ন তৈরি নয়, বরং হরিণের হৃৎপিণ্ড এবং ঘূর্ণায়মান চিতাবাঘের জ্বলন্ত চোখ নির্মাণ করে এই স্বপ্ন। এর অর্থ পুনরুদ্ধার হলো বুঝতে পারা-আলাবামায় অসংখ্য মৃত্যু, প্রপৌত্র/প্রপুত্রীর ধ্বংস, আর গল্পের দুর্ভিক্ষ। আমার মনে হয় না যে আমি এসব সহ্য করতে পারতাম। পারতেন না আমার পিতা, যিনি হয়েছেন হত এবং একজন যোদ্ধার প্রতিহিংসা নিয়ে তিনি তাঁর মৃত্যুকে খুঁজে ফিরেছেন। এসবই উজ্জীবিত আমাদের রক্তে।

এমনকী দু’বছর বয়সেই আমি জেনেছি যে আমরা পৃথক। এই পুণ্য ভূমিতে, আগন্তুকের চোখে দেখেছি, আমরা যেন বহিরাগত, যেন সীমা লঙ্ঘনকারী। রাষ্ট্র অতি শীঘ্রই চোরদের মহিমান্বিত করলো। প্রত্যেকেই ইণ্ডিয়ান আবার যেন কেউই ইণ্ডিয়ান নয়। বিস্মৃতিই যেন সর্বোত্তম, বরং দাবি করো একটি সাদা নক্ষত্র।

ইশ্বর মানুষ নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করলেন। তিনি প্রথম ব্যাচ চুল্লীতে রাখলেন নির্দিষ্ট সময়ের থেকে অনেক বেশি। তারা পুড়ে গেল। তারা হলো কালো মানুষ। ঈশ্বর দ্বিতীয় ব্যাচ রাখলেন নির্দিষ্ট সময়ের থেকে অনেক কম। তারা ঠিকমত পুড়লো না, নির্মাণ অসম্পূর্ণ থেকে গেল। এরাই হলো সাদা মানুষ। এর পরবর্তী ব্যাচ ঠিক উষ্ণতা পেল। আমরা হচ্ছি সেই মানুষ, যারা ইণ্ডিয়ান, নিতান্তই তোমার মতো।
এরই মধ্যে আমি হয়েছি দ্বিধান্বিত। পাঁচ বছর বয়সে, কিণ্ডারগার্টেনে, আমাকে পুঁতির মালা গাঁথতে দেয়া হয়েছে। সাত বছরে আমি শিখে গেছি কিভাবে চিকেন সাজতে হয় এবং খেলায় জিততে হয়। এবং চৌদ্দ বছর বয়সে আমি পান করতে শিখে গেছি। একুশে আমি আমাকে আবিষ্কার করেছি শহরের দক্ষিণ-পশ্চিমে, যখন আমার অতীত আমার কাছে ধরা দিল। তখন মধ্য রাত। আমরা বাসায় ফিরছিলাম এবং তাকে সেখানেই দেখি, সাইডওয়াকে, বরফের মাঝে, সে আছে কুণ্ডলীকৃত, এই সেই মানুষ যে এসেছে হেমেস্ থেকে। আমরা সকলেই প্রতারিত হয়েছি। সে তার লজ্জা শীতল, ডাউনি ব্ল্যাঙ্কেটে আবৃত করেছে ; আর আমরা লজ্জা ঢাকি আমাদের কবিতায়। আমরা তাঁকে বাসায় নিয়েছি। সে সারারাত ঠাণ্ডায় কেঁপেছে এবং বিক্ষুব্ধ ঝড়ের মতো কেঁদেছে। আর ভোরে সে যখন উঠেছে, সে ভুলে গেছে তার সবই। পরে আমি তাঁকে রাস্তায় দেখেছি, এখন আমার যে বয়স সেরকমই ছিল তাঁর। আমার লম্বা চুল ছিল কন্যার বিনুনীর মতো। এবং আমি তাঁর সাথে এমন শ্রদ্ধার সাথে কথা বলেছি যেন সে আমার পিতা ; এমনই ছিল সে শ্রদ্ধা, এমনই তীব্র অনুভব।

হেমেস্ থেকে সেই মানুষ, যে কিনা আমার পিতা, তাকে আমি হারিয়ে আজও বেঁচে আছি এবং আমার অনিশ্চিত দিনগুলিতে সেই বিধ্বস্ত সত্তাকে আমি খুঁজে ফিরেছি। আমি তাদেরকে বয়ে বেড়াই, যেভাবে এই শরীর একটি ড্রামের হৃৎপিণ্ডকে বয়ে বেড়ায়। গতকাল বৃষ্টি বয়ে গেছে পূর্ব থেকে আমার বাড়ির দিকে। একটি হামিংবার্ড কথা কয়ে উঠেছে। এই ছিল সঙ্গীতের আদি কর্টেক্সে অদৃশ্য স্মৃতির উজ্জ্বল খণ্ডাংশ। আমি জেনেছি যে এই হলো ক্ষমার মাস্কোগী সীজন, নতুন শস্যের সময়, সময় ঘূর্ণায়মান নৃত্যের।
“অটোবায়োগ্রাফি” / ইন ম্যাড লাভ এ্যাণ্ড ওয়ার

ডীয়ার ড্যান্সার
...........
এই মধ্য শীতে প্রায় প্রত্যেকেই ফিরে গেছে যে যার গন্তব্যে ; অপেক্ষায় আছে শুধু পানশালার মাতাল প্রেমিক। সেই রাত ছিল বছরের তীব্রতম শীতের। আমরাই আছি খোলা, অন্যসব পানশালা বন্ধ হয়ে গেছে। যখন সে এসেছে অবশ্যই আমরা সবাই লক্ষ্য করেছি তাকে। ধ্বংসাবশেষ আমরা ইণ্ডিয়ানদের। মাধুর্যের শেষ জেনেছি সেই নারীর ভিতরে। কেউ তাকে জানেনি, কিন্তু আগন্তুককে জেনেছি আমরা তার গোত্রের পরিচয়ে ; ‘হরিণ গোত্রে’র সাথে সম্পর্কিত তার পরিবার। এবং এই যদি সে হয়ে থাকে, তবে এই নারী সেই জনগোষ্ঠীর যারা গান শুনতে অভ্যস্ত পাইন বৃক্ষে, এবং সঙ্গীতকে বাঁধে যারা হৃদয়ের তারে।

নারীর ভিতরে যে নারী, নগ্ন যাকে নাচতে হবে অদ্ভুত এই পানশালায়, সে বাজিয়েছিল হরিণ-সঙ্গীত। হেনরি জ্যাক এই নারীকে দেখে ভেবেছিল যে ফিরে এসেছে ‘বাফেলো কাফ উম্যান’। এরই মধ্যে পানাহারে হেনরি অজ্ঞান হয়েছে এবং তার মাথা এখন টয়লেটে। সারারাত ধরে যে স্বপ্ন সে দেখেছে, এখন সে তার কিছুই মনের করতে পারছে না। পরদিন সকালে সে টাকা ধার করেছে, ফিরে গেছে বাড়ি, এবং ফিরিয়ে দিয়েছে আমাকে তার দেনা। আর এ পৃথিবীতে আছে এক অলৌকিক ঘটনা : কিছু মানুষের অন্তর্দৃষ্টি জাগে পুড়ে যাওয়া রুটির ভিতরে, কারও নারীর অবয়বে।

এই পানশালা শ্রান্ত যুদ্ধাহত সৈনিকের, শট্গানের, ছুরিতে বিক্ষত মানুষের, এবং বিষাক্ত সংস্কৃতির। আমরা শিখেছি বিয়ার পান করে বিভ্রান্ত দৃষ্টিতে না তাকাতে। খেলোয়াড়রা তাদের বিলিয়ার্ড লাঠির যাদুতে মগ্ন। হতাশার নাস্তিতে জিউক-বক্সে কেউ ঠুকেছে কোয়ার্টার। রিচার্ডের স্ত্রী ছুটে গেছে খুন করতে সেই নারীকে। আমরা তাকে রোধ করেছি, ছুরি এবং ডাইপার পিনে ভর্তি তার পকেট করেছি খালি, তাকে স্থির রাখতে তার জন্য কিনেছি দুই গ্লাস বিয়ার, আর রিচার্ড এরই মধ্যে সুন্দরীর জন্য কিনেছে পানীয় তরল।

কিভাবে আমি বলি ? এ ভাষায় কোন শব্দাবলি নেই, যা বাস্তব পৃথিবীর ধ্বংসের কথা বলে। আত্মমগ্ন আমি নিজের সাথে কথা বলি। পবিত্র টিলা আমার মগ্নতায় এসে ধরা পড়ে। কিন্তু আমি তাকে নিতে পরিনি এই বিবর্ণ এনভেলোপে। তাই আমি তাকাই দূরবর্তী নক্ষত্রের দেশে, হিমায়িত এই আকাশের পিছে, একমাত্র অর্থপূর্ণ প্রতিশ্রুতি।

আমার ভগ্নীপতি হোয়াইট মানুষদের সাথে ঘুরত, পার্ফেক্ট রেকর্ড নিয়ে আইনশাস্ত্রের উচ্চতর বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিল ; কিন্তু সে সবকিছু পরিত্যাগ করেছে। সে বলেছে তোমাদের আইন, তোমাদের ভাষা তোমাদেরই থাকুক। রাস্তায় হাতহাতি, মারামারির মাধ্যমে সে আইনের চর্চ্চা করেছে। (সে কিংবদন্তীর নারীর কাছে গেছে, চন্দ্রতুল্য যার মুখাবয়ব, যখন খেলোয়াড়রা জুড়েছে নতুন খেলা।) সে আমাদের কাছে অহঙ্কার করেছে, সেই নারীকে অলৌকিকতার কথা বলেছে এবং সেই নারী বিস্রস্ত, যখন রিচার্ড মানবিক।

কিন্তু তখনই আমরা শুনেছি পানশালায় তার প্রাতিস্বিক কণ্ঠস্বর : তোমার মতো মেয়ে এই পরিবেশে কি করছে ? আমরাও তো জানতে চাইছি যে আমরা সকলে এখানের মতো এই পরিবেশে কি করছি ?

তুমি হয়তো জানো যে সেই নারী নিতান্তই তাই শুনেছে যা সে শুনতে চেয়েছে। সবাই কি আমরা তাই করি না ? সেই নারী পানশালায় রিচার্ডের কেনা সেই বিশ্বাসঘাতকতার পানীয় গ্রহণ করেনি। তবে সে কি খুঁজে ফিরছিল ? আমরা সবাই কিছু না কিছু সন্ধান করে ফিরি। জিউক-বক্সে আমরা একটি সিকি ছুড়ে দিয়েছি। আমরা সবাই ক্ষীণ বাতাসে দাঁড়াতে এসে ঝুঁকি গ্রহণ করি। আমাদের উৎসব এসবের কিছুই পূর্ব-ঘোষণা করেনি। কিংবা আরো যেন বেশি কিছু আশা করেছিলাম আমরা।

আমাকে এসবই বলতে হচ্ছে সেই শিশুর জন্য, আছে যে শিশু এই নারীর ভিতরে আশার ক্ষীণ সল্তে জ্বালিয়ে আর সাঁতার কাটছে জাতিসমূহের স্তুতিতে। প্রশস্ত নয় এই বাড়ি, তবু কিন্তু শীতের স্বপ্ন আসে এবং আসে সেই হরিণ যে আঁকে আগন্তুকের স্বজনদের। ফিরে যাওয়া যেন তুষারাচ্ছাদিত জানালায় হরিণের নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস।

পরবর্তী নাচ যেন কেউ আশা করেনি। স্বর্গের সিঁড়ির জন্য বোধকরি সে চেয়ে নিয়েছিল একটি চেয়ার এবং নামাঙ্কিত এক টেবিলে দাঁড়িয়ে সে নাচছিল ঘরভর্তি পাদুকাবিহীন একদল শিশুর মাঝে।

আমাকে ত্যাগ করতে তুমি ভালো সময় বেছে নিয়েছ, লুসিল।
চলে গিয়েছ তুমি চারটি ক্ষুধার্ত সন্তান এবং ক্ষেতের শস্য নিয়ে।

এরপরই সে খুলে ফেলেছে তার পোশাক। ঝেড়ে ফেলেছে তার অবিশ্রস্ত স্মৃতি, এবং নেচেছে হৃদয়হীন প্রেমিকদের সামনে, যা কিনা হয়ে উঠেছিলাম আমরা সকলে।

এই নারী ছিল এক রূপকথা, যে কিনা স্বপ্নের মধ্যে চলে গেছে। ভোজের প্রতিশ্র“তি যে আসছে, সবাই আমরা এমনই ভাবছিলাম। আর সেই হরিণ অভিশাপেরে গ্রন্থি পেরিয়ে যেন আমাদের খুঁজে ফিরছিল। সে কোন সঙ ছিল না এবং আমরাও ছিলাম না ; কিন্তু আমরা শুধু দেখছিলাম।
গান হলো শেষ। এবং সেইসাথে গল্পের যবনিকা। আমি সেখানে ছিলাম না। কিন্তু তাকে আমি এইভাবে ভেবেছি ঃ তার পরনে ছিল না কোন বিবর্ণ লালা জামা, তার গোড়ালিতে ছিল না কোন ফিতে ; বরং সে ছিল এক হরিণ, যে এক তুষার ধবল সকালে আমাদের স্বপ্নে করেছে প্রবেশ, পাইন বৃক্ষে ছড়িয়ে দিয়েছে নিঃশ্বাসের কুয়াশা, আর তার শাবক ছিল যেন মাংসের এক আশীর্বাদ, যার পূর্বপুরুষ কখনো ছেড়ে যায়নি এই ভূমি।

“ডীয়ার ড্যান্সার”/ ইন ম্যাড লাভ অ্যাণ্ড ওয়ার

ডীয়ার ঘোস্ট
...........
এক.
বাইরে একটি হরিণ, তাকে আমি শুনতে পাই ; দৃশ্যাতীত তার কাচের কণ্ঠস্বর
আমাকে ডাকে, জাগ্রত করে আমার হৃদয়, এবং আমাকে কাঁদায় এই ভঙ্গুর শহরে।
ঋতু বদলে গেছে আরও একবার, কারা যেন ছিনতাই করেছে আমার শৈশব,
চুরি হয়ে গেছে যখন সিংহের স্বপ্ন পলাতক এইসব পুরাতন বাড়ি থেকে, যা আমার
পূর্বপুরুষেরা নির্মাণ করতো মাটি আর খড় দিয়ে, প্রশমিত করতে দহন উৎসের।
নক্ষত্রের কাঠামো ঘিরে রাখে কুয়াশাচ্ছন্ন এই পৃথিবী এবং তাকায় বাড়ির ছাদ ফুঁড়ে নির্ণিমেষ।
আর কোন পলায়ন নেই, এবং রহস্য এমনই ত্বক, যা কখনো ঠিক মানানসই নয়।
এই রাতে ভূতের ঘুরে বেড়ানোর, এবং এই ভূমি দুঃস্বপ্নের মতোই নামহীন, যা আমার
বাম হাতের মাংসপেশী মনে রাখে।

দুই.
আমি আবারও হয়েছি ব্যর্থ এবং অগ্নিকে নির্বাপিত হতে দিয়েছি। ভুল বুঝেছি আমি
এবং দেবদূতের কস্তুরিময় ডানায় ভর করে ছেড়েছি এই পৃথিবী। তোমার অগ্নি করেছে দগ্ধ
আমার ঠোঁট, কিন্তু সে ছিল মধুর, এক তিক্ত কবিতা। তোমার জন্য যে বাড়ি
ছেড়েছি আমি, সেই পরিত্যক্ত বাড়ির ভূমিতে তোমাকে আস্বাদে গ্রহণ করতে পারি,
যখন আমি এই ভূমিতে উবু হয়ে বসি। বীর এক গোত্রের নামে এই রাস্তা, বীরত্বগাথায় উৎকীর্ণ।
আমার শিরদাঁড়া থেকে যে আগুন নেমে আসে দেবতাদের প্রতি, যেখানে এক টুকরা কয়লা
সমবেত হয় আমার বোনের অগ্নিদাহ থেকে। এইভাবে আমার নাম উচ্চারিত
যেভাবে আমার মানুষেরা আবার ডেকেছে আমাকে। এই হরিণ শুধু জানে
আর ঘুরে বেড়ায় রাস্তায়-উদ্দেশ্যহীন, বিক্ষিপ্ত ; যে কখনো ভুলেনি এই গান।

তিন.
তোমরা কি বলো, এই নিয়ে আমার তেমন কোন ভাবনা নেই। তুমি চলে গেছ বলে
এই হরিণ কোন কল্পকাহিনী নয় যা দিয়ে আমি পূর্ণ করেছি আমার গৃহ। এই পৃথিবীতে
আরও অধিক কিছু আছে যা আমি তোমাকে বলেছি কিংবা বলি অন্য কাউকে।

“ডীয়ার ঘোস্ট” / ইন ম্যাড লাভ এ্যাণ্ড ওয়ার
.............................
দ্য সাইকলজি অব্ আর্থ অ্যাণ্ড স্কাই

ভোরের ঠিক আগে। বিক্ষুদ্ধ বাতাসের তীব্র ঝাঁকুনিতে সাড়া দেয় আম্র-বৃক্ষ। একটি মোরগ কর্কশ চিৎকারে ভোরের আলোকে স্বাগত জানায়। আমরা সতর্ক হয়ে উঠি এবং আমাদের সত্তা, বিপ্রতীপ গতিতে, রাত্রি এবং জাগ্রত নক্ষত্রের মধ্য দিয়ে সঞ্চারমান এক ভূগোলের মাঝে, যার নাম হনলুলু। বৃষ্টির বার্তা নিয়ে মেঘ শহরের উপর দিয়ে দ্রুত ধাবমান। শহরের জঞ্জাল তুলতে একটি ট্রাক বীপ শব্দ তুলে ব্যাক-আপ করছে। যতোই থাকুক না কেন রাত্রির উজ্জীবিত সংগ্রাম, যতোই দীর্ঘ হোক না কেন এই রাত, তবু ভোর আসে।
আমরা আদি গল্পের এক ভগ্নাংশ। এই গল্পে ভ্রাম্যমাণতা আছে বাতাস এবং সমুদ্র তরঙ্গের, আছে ভ্রাম্যমাণতা বীজ এবং বংশ পরম্পরায় জাতিসত্তাসমূহের।

আমার মনে হয়, এই জীবনে, আমি কেবলি গমনেচ্ছু, উড়ছি নিয়তই এই পৃথিবীর ওপর, যেখানে অনেকের বাস। আমি ইণ্ডিয়ান, একজন নারী, এবং ক্রীক নেশনের শিল্পী। আমার স্মৃতির রেখা ধূসর হয়ে আসে। অনতি দূরে আমি দেখি আমাকে, কিশোরী এক, যে গাড়ি থেকে বেরিয়ে আসছে, যে তখনো মৃদু নেশাতুর, এবং হাত নাড়িয়ে বন্ধুদের বিদায় জানাচ্ছে। আমরা জেগে আছি সারারাত, গান গাইছি অন্ধকারে, এবং নক্ষত্রদের সংযোগ করছি ইণ্ডিয়ান শহর, আল্বাকারকির পশ্চিমে।
“হৃদয়ের মধুর ভগিনী, নাচ শেষ হলে এক চোখ অন্ধ ফোর্ড গাড়িতে আমি তোমাকে আমার বাসায় নিয়ে যাব। ওয়ে-ইয়ো-হে-য়া হে-য়াহ্-হাহ্। হে-য়াহ্-হাহ্।”

সেই গান ক্লাসিক হয়ে উঠবে, এ ছিল এমনই এক নিশ্চিতি।

গাড়ির দরোজা বন্ধের প্রতিধ্বনি জাগে, জেগে ওঠে, এবং এসে ভীড় করে এখানে। আমি যখন ফিরে যাই সেই স্মৃতিতে, তখোন আমি শুনতে পাই সেই দরোজা বন্ধের ধ্বনি। এ যেন হলোগ্রাফিক একো, যেন ফিরে আসে বারবার নিজেরই কাছে। আমি চলে যাচ্ছি। আমি ফিরে আসছি।
হাঁটতে হাঁটতে আমি ফিরে গেছি আমার এ্যাপার্টমেণ্টের পশ্চাৎদিকে। এই শহরের আমরা সবাই কোথাও কোন এক পশ্চাৎভাগে বাস করেছি, এবং নিজেদেরকে ইণ্ডিয়ান সংজ্ঞায়িত করতে ব্যস্ত থেকেছি ব্যাপক উপনিবেশের কালে। এ ছিল আমাদের প্রাতিক্ষণিক কৌতুক ; গৃহ-অভ্যন্তরের কৌতুক। হঠাৎ পৃথিবী ঘনীভূত হয়ে আসত দরোজা বন্ধের মধ্যে, গাড়ি চলে গেলে তার সুমিষ্ট র্গর্গ আওয়াজের মধ্যে, চড়–ই পাখির শশব্যস্ত শব্দের মাঝে যে নিঃশব্দতা তার মাঝে, ঘুঘুর ওওহহিং শব্দের ভিতরে। আমি এখনও তার গন্ধ পাই। এ বেঁচে থাকার এমনই এক সজ্ঞানতা যেন সূর্যোদয়-সঙ্ঘটনের ক্ষুদ্র অংশ মাত্র। আমি প্রায়শই বাস করেছি সমন্বয়ের মুহূর্তের জন্য, যেখানে দিন আর রাত্রি এসে মেলে। এটি বড় কোন বিষয় ছিল না যে আমি জানতাম না কিভাবে আমি আমার টিউশান এবং বাসা ভাড়া জোগাড় করব, গ্রোসারি এবং বই কিনব, এবং শিশু রাখার টাকা জোগাড় করব। কীভাবে আমি আমার অতীত থেকে অর্থোদ্ধার করব, যা কেবলি উদ্যত হয়েছে আমাকে ধ্বংস করতে, যখন আমি দ্বিধান্বিত থেকেছি এই ভেবে পৃথিবীতে বাঁচার আমার কী অধিকার আছে। যে গান আমরা সারারাত ধরে গেয়েছি, তাই আমাকে পূর্ণ করেছে প্রতিজ্ঞায় এবং আশ্বাসে। এবং একটি জনপদ তার অস্তিত্বের গভীরে বুঝতে পেরেছে যে এই পৃথিবী ক্রেতা এবং বিক্রেতার মধ্যে চুক্তির থেকে অতিরিক্ত আরও কিছু।

এবং এই সকালে, যখন ভোর প্রতিভাত হচ্ছিল এবং আমি যখন বাসায় ফিরছিলাম, তখনই আমি জেনে গেছি যে সূর্যের প্রয়োজন আছে আমাদের, প্রয়োজন আছে আমার ছোট্ট বোনের যা’ সৃষ্টি হয় আমার ফুসফুস এবং হৃদযন্ত্রে রক্তের ঘূর্ণনের মধ্য দিয়ে। রক্তের এই প্রবাহের মধ্যে জন্ম হয়েছে আমার পুত্র এবং কন্যার। আমার জন্ম হয়েছে এমনই পিতা-মাতার মধ্য দিয়ে, যাঁরা তাঁদের কোর্টশিপের মাঝে প্রায়শই প্রত্যুষকে অভিবাদন জানিয়েছেন তাঁদের অসামান্য হৃদয়াবেগের মাঝে, যা ভালোবাসায় তাড়িত, এবং পরবর্তীতে যা ভগ্ন হৃদয়ে রূপান্তরিত হয়েছে।

আমার মা এবং বাবার বিবাহের পর, তাঁদের চার সন্তানের জন্মের পর, আমার পিতাকে প্রায়ই খুব প্রত্যুষে আসতে দেখেছি, যখন তাঁর বন্ধুরা তাঁকে গাড়ি থেকে নামিয়ে দিয়েছে, যখন তাঁর মুখ থেকে ধোয়া, বিয়ার, এবং বিচিত্র গন্ধ বেরিয়ে আসত। এবং আমি তাঁর কন্যা। চলার পথে আমাদের পদযাত্রা আমাদের কোথায় নিয়ে যাবে, তার কী বা বলার আছে ? এ কি ‘ডি-ন-এ’ স্ট্র্যাণ্ডের বাঁকের সাথে সম্পর্কিত, যা কিনা ভালোবাসার ইচ্ছা এবং উড্ডয়নের সাথে সংযুক্ত ? আমার পরিবার বেঁচে গেছে, এমনকী ক্রমাগত সমৃদ্ধির পথ দেখেছে, যা কিনা ইণ্ডিয়ানদের পরাজয় এবং অবলুপ্তি, এই জনশ্র“তির বিপরীতে কাজ করেছে।

আমার মেয়ের বাড়ি আল্বাকারকির ফার্স্ট ন্যাশনাল ব্যাঙ্কের সন্নিকটে, যা কিনা শহরের এক মাইলফলক, যাকে দেখতে পাই প্রত্যুষে, যখন আমি বিমান দিয়ে নামি। সে এখনও ঘুমে তার বাহুতে আবদ্ধ তার কনিষ্ঠ কন্যা। তার সবচে বড় মেয়েটি মুখ খুলে রেখে শুয়ে আছে আরও তিন সুন্দরীর পাশে, যারা সবাই আমার মেয়েকে ‘মা’ বলে ডাকে। আমার মেয়ে, যখন সে বড় হয়ে উঠছিল, আমার সকল প্রস্থানে গভীরভাবে আমাকে হারাতো। এমনকী এখনো যখন আমি আকাশে উড়ছি, আমি অনুভব করি তার হৃদয়ে রশির টান, যা কেবলি প্রশ্ন করে আমি আবার কখন ফিরে আসব। এ এমনই প্রত্যয় যে আমি তাকে তার স্মৃতির কোন এক বিন্দুতে ফেলে এসেছি যে আমি আর কখনই ফিরে যাইনি। আমি তাকে বলতে চাই যে আমি তাকে কখনই ফেলে যাব না, এবং এই কবিতা তার এবং তার কন্যাদের উদ্দেশ্যে, যেন গার্ডিয়ান এঞ্জেল।

“দ্য সাইকলজি অব্ আর্থ অ্যাণ্ড স্কাই” / এ ম্যাপ টু দ্য নেক্সট্ ওয়ার্ল্ড
..............................................
ইন্সম্নিয়া অ্যাণ্ড দ্য সেভেন স্টেপ্স্ টু গ্রেস্

আছে স্বর্গের এক চিতাবাঘ যে পৃথিবীর প্রান্ত ছাড়িয়ে, তার পরিধি অতিক্রম করে উঁকি মারছে এই ভোরে। সে শুনতে পায় সূর্যের সাথে নক্ষত্রের আলাপ এবং দেখে চাঁদ তার ক্ষীণ অন্ধকার ধুয়ে নিচ্ছে প্রার্থনায় উজ্জীবিত পৃথিবীর এই জলে। তাবৎ পৃথিবী জুড়ে আছে সেই প্রাণ, যারা ঘুমাতে পারে না, আর যারা কখনোই উঠেনি জেগে।

আমার নাতনি, মুখে দুধের আর্দ্রতা নিয়ে, ঘুমিয়ে আছে তার মায়ের বুকে। একটি মাছি ল্যাক্টোসের মাধুর্যের ভাবনায় বিভোর।
আার আছে তার পিতা, দুঃস্বপ্নের চাদরে মোড়া। পরিত্রাণের আশায় সে এগুচ্ছে থরোর লাল পাহাড়ের দিকে। মানুষেরা তাকে চিনতে পেরে তার উদ্দেশ্যে গান করে।


বিশৃঙ্খলার বাড়িতে তার মা’র আছে অনেক কাজ। সে এক প্রফেট, যে কিনা তরুণী মাতার ছদ্মবেশে চাকরি খুঁজে ফিরছে। সে আমার স্বপ্নের করিডোরে এসে দাঁড়ায় এবং আমরা বাড়িটিকে বাঁধি একসাথে।
চিতাবাঘ দেখে যখন মেঘ এসে মানুষ আর প্রাণীদের আত্মা সুন্দর বজ্রপাতে অংশগ্রহণের জন্য নিয়ে যায় ঊর্ধ্বমুখী স্বর্গে।
অন্য সকলে হরিণ আর কৃষ্ণসারমৃগদের অনুসরণ করে ঐকান্তিক সময়ে পৌঁছে যায় তাদের পূর্বপুরুষদের গ্রামে। সেখানে তাঁরা ভূট্টার সাথে বেরি মিশিয়ে রান্না করে, যা খাবার পরে তাঁদের ঠোঁট হয়ে ওঠে রক্তিম-বেগুনি, যখন জীবন-বৃক্ষ কেঁপে ওঠে সূর্যে।

এখন অক্টোবর, তবু সকালের আগে এই সময়কে শীত বলে মনে হয়। হলুদ নিয়নের আলোয় মরুভূমি সদৃশ এই শহরে আগন্তুকেরা খুঁজে ফিরছে তাদের বাড়ি।

কেউ কেউ পান করছে এবং আগন্তুকদের সাথে অন্তরঙ্গ হয়ে উঠছে। অন্যরা নাইট-শিফ্ট্ থেকে ফিরছে, নাতিশীতোষ্ণ কফিতে চুমুক দিচ্ছে, আর অন্ধকারের বিপ্রতীপ দিকে তাদের গিয়ার শিফ্ট্ করছে।
একজন নারী রেড লাইটে এসে দাঁড়ায়, একটি মলিন টেপ উল্টে দেয় ; বেজে ওঠে হুইস্পারী ব্লুজ, টেপের শেষ গানটি। আরও একদিন বাঁচবে বলে সে সিদ্ধান্ত নেয়।

নক্ষত্রেরা লক্ষ্য করে, যেমন করে অর্ধ-ঘুমন্ত ফুল, প্রিক্লি পিয়ার, এবং চায়নাবেরী বৃক্ষ শুষে নেয় জল মাটি থেকে, নিঃশেষে।
সে আলো ফেলে বাসায়, যেখানে তার শিশুরা নিদ্রায় এবং তারা হয়ত কখনো জানবে না যে সে বাসা ছেড়ে চলে গেছে। তাদের ভাগ্য এমনই এক বাঁক নিয়েছে যে দুঃস্বপ্নের এই দেশে, সূর্যের দিকে বলয়িত জ্ঞান রয়ে গেছে ধরা-ছোঁয়ার বাইরে।
এ এক মধুর শব্দ।

চিতাবাঘটি হাই তুলে এবং মাথা রাখে তার দুই থাবার মাঝে। সে চিতাবাঘের আবাস-গৃহের স্বপ্ন দেখে এবং ভাবে মাধুর্যের সাতটি পথকে।
“ইন্সম্নিয়া অ্যাণ্ড দ্য সেভেন স্টেপ্স্ টু গ্রেস্” / দ্য উম্যান হু ফেল ফ্রম দ্য স্কাই

রিটার্নিং ফ্রম দি এনিমি
..................
(পিতার উদ্দেশ্যে)
১.
আরম্ভের এখনই সময়। আমি এইসব জানি এবং স্মৃতির গ্রন্থিতে ভীষণ আতঙ্কিত হয়েছি, যখন আমার অন্ত্রে স্মৃতির গ্রন্থি আল্গা হয়ে আসে।
আমার পিছনে নদী বহমান এবং নদী জেটিকে জল দিয়ে নম্রতায় মাখে। বাতাস ঘাসে মৃদু আওয়াজ তুলে।
ইতিহাসের জাগৃতি যেন আমার পিছনে টানা এক রজ্জু। আমি আমার পিতা, আমার পুত্র, এবং আমার কন্যার সাথে গ্রথিত। আমরা আত্মীয় এক গভীর জলের।

এমনকি ভূতুড়ে কাঁকড়া, যা সন্তর্পণে সাদা নুড়ির ভিতরে হারিয়ে যায়, সেও এই ভার অগ্রাহ্য করতে পারে না। তার অস্থিসন্ধির খড়খড় শব্দ বিপরীতে প্রাতিস্বিক শব্দ তুলে।

এমনকি আমার পাশে আমারই এক বন্ধু এই বিপদসঙ্কুল যাত্রায় জ্ঞানের মসৃণতায় হুমড়ি খেয়ে পড়ে।
এবং আমাদের শত্র“, যারা আমাদের মাথায় বন্দুক ধরে আমাদের বাধ্য করেছে ওক্লাহোমা ত্যাগ করতে, আজও মানুষের মাথায় ঘোরাফেরা করে।
কিন্তু এই যখন আমরা একত্রিত হই প্রায়শ্চিত্ত করতে, আমি বাতাসে আমাদের আত্মীয়দের কণ্ঠস্বর শুনতে পাই। আমি আগুন বহন করে নিয়ে যাই জলের সমীপে।

এবং আমরা ক্রমাগত এই বিশ্বাস করে যাব যে আমরা রক্তের প্রবাহ অতিক্রম করে শত্র“ থেকে ফিরে আসার অনুষ্ঠান উদ্যাপন করব।

২.
সময়ের অস্থির দর্পণে, সকল ঘটনা কেঁপে ওঠে বিবিধ স্তরে।
প্রতিটি গাছ, ঘাসের প্রতিটি অভিক্ষেপ,
ছোট এবং বড়-জলের সকল অভিঘাত প্রকাশ করবে আদি গল্প।
আমরা উঠছি এবং কেবলি উঠছি, আর আমাদের সন্তানেরা
নিজেদের উষ্ণ রাখতে বসন্ত রোগের কম্বলে আচ্ছাদিত রাখে।
মাকড়সা আমাদের শিখায় কীভাবে শত্র“র জটিল অভিশাপ থেকে
বয়ন করতে হয় স্টিকি প্যাটার্ণ, যা আমাদের নিরাপদে নিয়ে যাবে ছায়াপথে।
আমাদেরকে ফেলে আসতে হয়েছে আমাদের বাড়ি-ঘর।
যেভাবে প্রগতি রয়ে গেছে আমাদের পশ্চাতে,
আমরা তোমাদের দেয় প্রগতি চাই না।
প্রগতির আরও অনেক প্রকার, এমনই বলে মাকড়সা, যে তার জাল
সর্বোচ্চ দামে বিক্রি করবে বলে তার ‘বিডার’ খুঁজছে না
বরং সে তার জাল বুনে চলছে এবং ভাবছে
এবং তার গল্পে আমাদের রাখছে।

“রিটার্নিং ফ্রম দি এনিমি” / এ ম্যাপ টু দ্য নেক্সট্ ওয়ার্ল্ড

উই মাস্ট কল এ মিটিং
................
আগুনে ধূমায়িত আমি এক ভঙ্গুর মৃৎপাত্র
নক্শা যেখানে আমারই দুঃস্বপ্ন
বজ্র আর বিদ্যুতে চিত্রিত আমি এক তীর
খুঁজে ফিরি নাম শত্র“র।

নির্মাণ করেছে তীর তার নিজস্ব ভাষা-
যে ভাষা বজ্রের, যে ভাষা সরীসৃপের, এবং
রাতের গভীরে করেছি সংলাপ শুরু আমাদের।
কাজ করি না আমি ; ভুলে যাই পানাহার।
সন্তানরা আমার ক্ষুধার্ত, এবং বাড়ির পিছনে
খাদ্যহীন গোয়ালে গবাদি পশু, এবং
আমি আঁকি গতিপথ নক্ষত্রের।
আমার পুর্বপুরুষ, যারা দূর অতীতের এবং অনতি দূরের,
ভর করে আমারই কাঁধে।
আমার প্রার্থনা পাখির পালকে স্বচ্ছ পাথরের,
বসবাস দেবতার কাছাকাছি যাদের।

এইসব হলুদ পাখি, যারা ধূমায়িত আগ্নেয়গিরির ওপর
চক্রাকারে ঘুরে, তাদের সংলাপে জেগে ওঠে গান
এই পাথরের।

পাখির পালক নিয়ে যায় এ প্রার্থনা ঊর্ধ্বে এবং দূরে
আমিও চেষ্টা করি উড়তে, কিন্তু পড়ে থাকি সিগ্ন্যালের ক্রসফায়ারে
আর আমার উদ্দীপনা পড়ে থাকে ধূলিময় এই পৃথিবীতে
হারিয়েছি পথ, তবু খুঁজে ফিরছি তোমাকেই
যে আমাকে নিয়ে যাবে জীবিত আর মৃতের
মাঝ দিয়ে ধাবমান এই ক্ষীণ পথ ধরে।
দুঃস্বপ্নের মৃৎপাত্রে তুমি এক কুণ্ডলিকৃত সাপ, এক স্বপ্নময় প্রাণ,
যে আমার মস্তিষ্কে সঞ্চরমাণ ; সামনে আর পিছে।
আমরা অবশ্যই ডাকব এক সভা।
ফিরিয়ে দাও আমার ভাষা,
তারই ভিতরে তৈরি করো আমার উন্মাদনার বাড়ি,
যেখানে মৃতরা এখনও বিস্মৃত নয়।

এবং বাড়ির ওপর দিয়ে সোপান বেয়ে উঠছে আকাশ,
এবং সূর্য,
এবং চন্দ্র,
এবং নক্ষত্র যা’ আমাদের পথ দেখায় প্রতিশ্র“তিময় স্বপ্নের।


“উই মাস্ট কল এ মিটিং” / ইন ম্যাড লাভ অ্যাণ্ড ওয়ার
..................................
টু হর্সেস

আমি ভেবেছি ‘সাংরে দে ক্রিস্তো’ পাহাড়ের মাঝ দিয়ে সূর্যের প্রকাশ
যথেষ্ট ছিল, এবং আমার শরীরের
সেই কস্তুরীময় গন্ধ,
যা দীর্ঘতর রাতে স্বপ্নের পরিশেষে
আমার কাছে প্রতিভাত হয়েছে।
আমি ভেবেছি বৈসাদৃশ্য এবং অদ্ভুত সব গ্রহ, যাদের সাথে কারও পরিচয় ছিল না
সেইসব গ্রহের মাঝে একমাত্র আমার নাচ আমাকে ধারণ করবে। অর্থাৎ
শেষাবধি, আমি ভ্রাম্যমাণতা শিখেছি
এবং সবচে পরিচিত কণ্ঠস্বরের বাইরের স্বরকে চিনতে পেরেছি।
কিন্তু বোধকরি হাজার বছরের স্বপ্নের মধ্য দিয়ে
তোমার জন্ম হয়েছে
যা কখনো আমি কল্পনায় আনতে পারিনি।
তুমি সম্ভবত
আরেক আকাশ ভেঙ্গে এসেছ এইখানে
কারণ
আমি তোমাকে আরও বহু লক্ষ মহাবিশ্বের অংশ ভেবেছি যা
কখনোই এই নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসে হ’তে পারত না।
আমি তোমাকে আমার মতোই ভ্রাম্যমাণ জানি
তোমার চোখেই নক্ষত্রের অজস্র কলোনি
এবং এইসব নক্ষত্র প্রদক্ষিণ করছে গ্রহ
এবং তোমার আঙ্গুল, চুলের সুমিষ্ট গন্ধ, এবং
তোমার মসৃণ, পেটানো পেট।
আমার হৃদয় নিয়ে গেছো তুমি
এবং এইসব সকাল, কারণ আমি এক অশ্ব, দ্রুত ধাবমান
ভাঙ্গা আকাশের দিকে, যেখানে অজস্র ভোর
ভেঙ্গে পড়ছে একই সাথে।
দিগন্তে দুইটি চাঁদ
এবং তোমার জন্য
আমি হয়েছি দিগি¦দিক।


“টু হর্সেস” / শী হ্যাড সাম হর্সেস
..........................
লেট সামার লিভিং

আমি জেগে উঠেছি এবং জ্বালিয়েছি আলো
তুমি স্বপ্নে ছিলে বিভোর
সাদা পাখিদের.
যারা শীতনিদ্রায়।
তোমার অবয়ব ঝুঁকে পড়েছিল আলোর প্রতি,
সূক্ষ্ম কোন এক কোণে।
এমন কী
ঘুমেও তুমি অনুভব করো দিক।
আলোর উজ্জ্বলতায় তোমার চোখ বন্ধ
কিন্তু সূর্যমুখী ফুলের মতো
তোমার নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস সূর্যের গভীরে।
(আলোর অনুভূতি যেন ভিন্ন কোরো স্পর্শ,
জল এবং হাওয়া যেমন জাগে ত্বকে।)
আমি এখন পোশাকে আচ্ছাদিত এবং আমি দেখি আমাকে হাঁটতে
তোমার থেকে দূরে
কোন এক বৃত্তের খণ্ডাংশে।
আমি দেখি যুদ্ধবর্ম দেয়ালে
গোলাকার এবং তার থেকে খসে পড়ছে পালক।
উত্তর দিকে সন্তরণশীল রাজহংস
দক্ষিণ দিকে যাত্রার প্রস্তুতি নিতে
নিজেদের ডানার পরিচর্যায় ব্যস্ত
এবং আমি তোমাকে শুনতে পাই
স্বপ্নের গভীরে, তোমার কণ্ঠস্বর পাখিদের মতো
যারা ঘরে ফিরবে বলে আলাপচারিতায় মগ্ন।
তুমি ঘুরাও তোমার মাথা
আমার চলে যাবার আগে আর একবার
নৌকার মতো তোমার শরীর আবর্তনশীল
ক্রান্তিবৃত্তে অদ্ভুত সাগরে।
তুমি পূর্বমুখী।
নক্ষত্রের কালে সূর্য শান্দিয়াসে এসে দাঁড়ায়।
এখন আরেক বছর,
আরেক সকাল।
তোমার গভীরে তাকে আমি ফিরে আসতে দেখি
এবং নিজস্ব গৃহে ফিরবে বলে উদ্যাপন করো অন্তিম এক গান।


“লেট সামার লীভিং” / শী হ্যাড সাম হর্সেস
..............................
দ্য ক্রিয়েশন স্টোরি

আমি নই ভীত ভালোবাসায় কিংবা
দ্যুতিময় তার উদ্ভাসে।

এই কথা কিংবা অন্য যে কোন কথা
সহজ নয়, যখন আমার নাড়িভুঁড়ি
জট পাকিয়ে ফেলে স্বর্গ আর
ত্রাসের ভিতরে।

আমি লজ্জিত, কারণ
আমার আয়ত্তে কোন শব্দ ছিল না,
যা আমার বন্ধুকে নিয়ে যেতে পারত
তার মৃত্যু থেকে নক্ষত্রের দিকে,
সঠিকভাবে।
কিংবা শব্দগুচ্ছ যা
খরা কিংবা বন্দুকের গুলি থেকে
আমার গোত্রের মানুষকে
নিরাপদে রাখতে পারত।

সেইসব নক্ষত্র, শব্দের মধ্যে যাদের উন্মেষ,
এখন ঘূর্ণায়মান এই বাড়ির ওপর,
যা তৈরি অস্থি এবং রক্ত দিয়ে।

ভয়ের পাথরে বিদ্ধ
এই বাড়ি, যা এখন
ভেঙ্গে পড়তে উদ্যত।

যদি এই শব্দগুচ্ছ কিছু করতে পারে,
তবে এই হোক উচ্চারণ,
নক্ষত্রে আশীর্বাদ প্রাপ্ত হোক এই বাড়ি।

ভালোবাসায় আমাদের বিদ্ধ করো, স্থিরীকৃত করো।

“দ্য ক্রিয়েশন স্টোরি” / দ্য উম্যান হু ফেল ফ্রম দ্য স্কাই

.

সূত্র :
1 .Noam Chomsky, Year 501: the conquest continues (Boston: South End Press, 1993) p. 3-5

2 Adam Smith, The Wealth of Nations (Chicago, 1976; first edition, 1976)

3. Joy Harjo, “Ordinary Spirit,” in I Tell You Now: Autobiographical Essays by Native American Writers, ed. Brian Swann and Arnold Krupat (Lincoln: University of Nebraska Press, 1987), p.266

4. Joy Harjo, interview, in Laura Coltelli, Winged Words: American Indian Writers Speak (Lincoln: University of Nebraska Press, 1990) p.60

5. Quoted in Song from This Earth on Turtle’s Back, ed. Joseph Bruchac (New York: Grenfield REview Press, 1983), p.92

6. Joy Harjo and Gloria Bird. Reinventing the Enemy’s Language, (New York: W. W. Norton & Company, 1997)

7. Azfar Hussain, “Joy Harjo and Her Poetics as Praxis”: A postcolonial Political Economy of the Body, Land, Labor, and Language”: Wicazo SA Review, Fall 2000

8. Laura Coltelli, “The Circular Dream,” in The Spiral of Memory; ed. Laura Coltelli (Michigan: The University of Michigan Press, 1996) p.63

9. Bill Aull et al. “The Spectrum of Other Languages,” in The Spiral Memory; ed. Laura Cortelli (Michigan: The University of Michigan Press, 1996) p.106

10. Joy Harjo, “Bio-Poetics Sketch,” Greenfield Review 9 (1981/1982): p.9
11. Frantz Fanon, The Wretched of the Earth (New York: Grove Weidenfeld, First Evergreen Edition, 1991)

12. Vine Deloria, God is Red: A Native View of Religion (Colorodo: Fulcrum Publishing, 2nd edition, 1994)

13 Joy Harjo in “Secrets from the Center of the World” Stephen Stroms Photographs following the part of In Mad Love and War (Urbino: Quattroventi Press, 1992)

14. Joseph Bruchac, “The Story of All Our Survial,” in The Spiral of Memory; ed. Laura Coltelli (Michigan: The University of Michigan Press, 1996) p.26

15. Ibid., p.24

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন