বুধবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০০৯

পতন ও প্রার্থনা : কাব্যগ্রন্থ





সুমন প্রবাহন






কেউ নই শূন্য মাতাল
.............
প্রশ্নহীন আমি, পকেটে অসংখ্য ছায়াপথ
চোখে চাঁদের আকাশ, পায়ে তপ্ত কাঁচের কণা, ধূলিস্তর
এখানে ডানা মেলেছে উঁচু-নিচু বধির প্রান্তর
এখানে ছিঁড়ে গেছে বাতাসের কণ্ঠনালী
দূরে_শিলাকঠিন পাহাড়
শুকনো সাগর
অনাহারী ঝর্ণা।


কলঙ্ক! তবু রাজটীকা
...............
ঐ যে পৃথিবী নীল গ্রহ আমার
সূর্য! দেখি তোমাকেও
কখনও কন্যা রাশিতে কখনও তুলা, বৃষ-মেষ-বৃশ্চিকে
দেখি গ্রহণের অক্টোপাসে, তবু
প্রশ্নহীন, পকেটে অসংখ্য ছায়াপথ

ভেসে যাই ছুটে ছুটে
যেন ধূমকেতু-আন্তঃনাক্ষত্রিক।
ক্রমপ্রসারমান ছায়াপথ থেকে
ছায়াপথে। বেড়াই। সাদা কিংবা কালোÑ
গুহা গহ্বরে,

সে আমার পর্যটন নয়- ধ্যান।
সাদা পাত্রে ধরা আত্মা আমার যেন সবুজ আপেল
ঝলসানো ব্লেডে কেটে দু’ভাগ
দ্বিধা থরোথরো, ভিতরে তবুও
হাজার বছর লাঠিতে ভর সলোমন
কমলা পিরানে প্রাচীন গাছের নিচে মুদ্রিত চোখেÑ
বিলীন হয়েছে, হবে
জন্মের পর নিরানব্বই ভাগ বীজ
টিকে আছে তার ওপারের একজন।


ভাবি, শূন্য হয়ে এক থেকে আজ অই সাত-
খণ্ড।
নিজেরই তৈরি যে নরক-ক্লোন, গ্যাসচেম্বার
হাইরাইজ কুঠুরিতে ফেরো
-ক্লান্ত ফাইল তুমি
তোমার গ্রাউন্ড ফ্লোরের নিচে খুঁজে পাই
ডাইনোসরের পা-পায়ের ছাপ
নিঃশ্বাস
শীৎকার
শিলাস্তরে কেঁপে ওঠা রণের দামামা।

রেডিওর দ্যুতি ছড়াতে ছড়াতে
এই যে ছুটছি, ছুটে যাচ্ছি আলোর গতিতে গোপন কোয়াসার।
আমাকে পাওনি- পেয়েছে নূরের কণা
অথচ এত অহং দাবানল!
পুড়ে যাচ্ছে মাইল মাইল জনমনভূমি
ধ্বসে পড়ছে পাহাড়, জনপদ

কোন খোঁজ ব্যর্থ নয়
চোখে রেখো অই ভস্ম
হে বোধি, বৃক্ষ আমার!
হে প্রকৃত রণ!
ফিরে আসবো সংকোচনে
পাটি গোটাতে গোটাতে ছায়াপথে পথে কালো গহ্বর নিয়ে হাতে
ঘূর্ণিপাকে উড়ে উড়ে যাবে বইয়ের খইয়ের পাতা।
তৈরি থেকো শেষ বারূদ-কাঠি
তৈরি থেকো হে বিরাট ধ্বস!


কয়েক মিনিটের সুখ
.............
সূর্য আমার পাশে এসে দাঁড়ালে
সূর্যকে আমি কিছুতেই বলতে পারিনি
শুধু নেমে দেখেছি ঘোর অন্ধকার
আর ভীষণ অচেনা হয়ে পড়ে মানুষ
যাবতীয় মানবতা
আমি পৃথিবীর সূর্য পেরিয়ে
আন্তর্জাতিক আকাশে
অবাক তাকিয়ে
সীমানা চিহ্নিত এই দিনে
রাহুল মনে পড়ে তোমায়
জাতীয় আকাশেরও অনেক
উপরের চিল ধরতে চেয়ে
নিজের ভালোবাসাকে মর্যাদা দিতে গিয়ে
কখন যে নিজেকেই বিসর্জন দিয়ে বসেছি-
নিজেই ভুলেছি।
মাটিরও অনেক উপরে আকাশ
আর যাবতীয় অলৌকিকতা
আর ওশো তুমি বলেছিলে
কখনও এমনও
কোনও মানুষে হয়
বোধিবৃক্ষের নিচে দাঁড়িয়ে
নিজেই জানে না তা
যখন আমি বুঝতে পারি
তাবৎ ধর্মগ্রন্থ
যখন আমি বুঝতে পারি
মাটির ঘ্রাণ মানুষের সীমানা
পড়তে পারি পাতা ও পতঙ্গ
তখন কে আমার পায়ে
পড়িয়ে দেয় এমন বিভ্রম
যদি সূর্য জড়িয়ে যায়
পৃথিবীর প্রভাব বলয়ে
কোনও অন্ত্যজ বিস্ফোরণে
তবে চাঁদ তোমাকে বলছি
তুমি তোমার অভিমান ফিরিয়ে নাও
আমি পিতার সম্পদে
ভর করতে যেয়ে
কখন হারিয়ে ফেলেছি
নিজেরই মেরুদণ্ড
আর ঈশ্বর তুমি কৃপা করো,
দরোজা খোলো
আমি নিজের পথেই দাঁড়াতে চাই
সম্মানের গালিচায়
বস্তুবাদী পৃথিবীর সাফল্য আমি জানি
জেনে যতটা অবাক
তারও চেয়ে গভীর বিস্ময়
ওই সূর্যের আলো
আর মোহাম্মদ ঠিকই জানতেন
এমনকি যীশুর ফেরা
আত্মার কোঠরে বিষ জমলে
তারা পেরোবেন স্বর্গীয় সীমানা
আমি পৃথিবীর শেষ দরবারে
খুঁজতে এসেছি-
এখন জীবিকার ঠুনকো অজুহাত
তবু সত্য
তবু সত্য ‘হোসনে কারও এন্তেজারি’
এখন দাঁড়াতে চেয়ে সুন্দরে
সামান্য ইশারায় টলে ওঠে মাটি
ভূগোলের খাতা খুলে
তবে কি দেখতে হবে
সীমানার আরও ওপারে
দাঁড়িয়ে রয়েছে কি
পৃথিবীর
কোন প্রান্তর
যেখানে
এখনও গাভী ঠিকঠাক
তৃণভোজে
ফিরে আসে
গোধূলি বেলা
শিশু থাকে মাতৃ জরায়ুতে
নিষ্পাপ বেদনা স্তন চুম্বনে।
গান হয়
ধর্মালয়ে ধার্মিক
এমন এক সম্ভাবনার ভিড়ে
আমি ছাড়তেও পারি
এগারো নম্বর বাস।


ভ্যানচালক
..........
এক অসীম উচ্চতায় বাস করে
জীবনের টুকরো টাকরা অংশ নিয়ে
বসে আছি এখানে
-এই পাড়ায়
আমি হেঁটেছি বহুদূর
শুধু এই দেহ নিয়ে
মস্তিষ্কের অসংখ্য আত্মার ভিড় ঠেলে;
তখনও ফেরি আসেনি
আমি অপেক্ষায়
ফিরে এসেছি ফের ডেরায়
পথে পথে মানুষের জিজ্ঞাসা
কে তুমি
নিরুত্তর
দেহের আসবাবে চেনে কেউ
কেউবা মনের আসবাবে
কোন আসবাব চাও তুমি ?
যদি দ্যাখো বহিরাবরণ
আমি নই অন্য কেউ
যদি দ্যাখো মনের পীড়ানে
আমিই সেখানে স্বয়ম্ভু
খোদার আসনে।

উঠোন, গোবর, গোয়ালঘর, টিনের চালাঘর,
মাছের পুকুর,দীর্ঘ শস্যক্ষেত
এবং কাক,
বুঝি কাকও অনুভব করে আমাকে
পাখিরা পাখিরা
শিশুগণ দেয় মন
নিজ নিজ পাঠে
দ্যাখো আমার পকেটটা হাতিয়ে
দ্যাখো কি আছে সেখানে
ইচ্ছে করলে তুমি আমার
লিঙ্গটাও হাতিয়ে দেখতে পারো
কেননা মানুষ তো নই আমি।

একদিন আমি পথে পড়ে থাকব
সূর্য উঠবে মাথার ওপর
সূর্যকে বলবো, ছায়া দাও
মেঘ এসে বিছিয়ে দেবে ছায়া
আমি হাঁটতে থাকব
নদী পাড়ে,পার্কে, গোরস্থানে,সেতুর উপরে
রাজপথে,পুকুরঘাটে
বাস কিংবা রেলস্টেশনে
যেখানে
তুমি কে ?
তুমি কে ?
তুমি কে ?
আমি সুমন
সুমন প্রবাহন
কবি।



নিখোঁজবিজ্ঞপ্তি
.........
বেতার:

“আশা নামের একটি যুবক হারিয়ে গ্যাছে
তার বয়স তেইশ
পরনে আকাশী জামা মেঘকালো প্যান্ট
তাহার গায়ের রঙ গাঢ়নীলে লাল
অমনোযোগী হৃদয়ে
খুরের গভীর চিকিৎসা,
তার এক চোখ লক্ষ্মীটেরা।”


সংবাদপত্র :

“আশা,
বাবা তুমি ফিরে এসো ঘরে
চিন্তিত মেধায় কেঁদে
তোমার মা আজ শয্যাশায়ী
তোমার বাবাকে ক্ষমা করো
ফিরে এসো ঘরে”


মাইকিং :

“একটি নিখোঁজ সংবাদ
একটি নিখোঁজ সংবাদ।
গতকাল ভোরমেশা রাতে
একজন বেয়ারিঙ যুবক হারিয়ে পালিয়েছে
যদি কেউ তার খোঁজ...যদি কেউ তার...যদি কেউ”...

বিশেষ দ্রষ্টব্য :
হায় আশা পালালে তুমিও
“করতলের ঘা যে চাতুর্যে ফাঁকি দেয় মশা”।



বারো অগ্রহায়ণ : ১৪১২
...............
(মিরাজ, তসলিম- ভালোবাসায়)

কুয়াশা ভেঙে চলে যায় ট্রেন
সন্ধ্যামুখর প্ল্যাটফর্ম
কাছে দূরে কিছু মানুষ
দু-এক কাপ চা
ঝিকঝাক, ঝিকঝাক, ট্রেন থামলে...

পুকুর পাড়ে শিশুঝাঁপ
নিয়ন আলোয় রেলবালিকা
দোলনচাঁপা ম্রিয়মাণ হয়ে ওঠে সন্ধ্যার রঙে
আলো-আঁধারিতে কিছু মানুষ দাঁড়িয়ে
হাতে সিগারেট
খুন হয় কিছু মানুষ ব্যাখ্যাতীত
হয়তো ভেতরে ভেতরে রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে
ঘটে যায় মিরাকল
এই সব সংবাদ জানে কিছু মানুষ
যারা জানে না দাঁড়িয়ে থাকে
দৃশ্য পরম্পরায়-
তালগাছের ডালে যে বাবুই বাসা
বাসার অভ্যন্তরে পাখি
সে কি জানে এসব নিখোঁজ সংবাদ
হয়তো তার চেয়ে নাগরিকেরাই
বেশি খোঁজ-খবর রাখে
শালিক তুমি সমাজ গড়ো
পালকের সমাজ
চর্র্যাপদ হয়ে আমি
এখানে এই যে বাঙালি

আমরা রিকশা ভালোবাসি-
রিকশার চিত্রকর- ভালোবাসি
আমি হয়তো যেতে পারতাম দুয়ারে দুয়ারে
হয়তো হতে পারতাম আরও কিছুটা ভবঘুরে

বীমা কোম্পানি আসে না আমার কাছে
পায়ের বীমা করাতাম
না হাঁটতে হাঁটতে পায়ের যতটুকু মূল্য বাড়ল
তা বুঝিয়ে দিতে।
ডাঃ মিলন আপনি আমাদের
গণতন্ত্রের খবর জানেন কি
নাকি টিএসসি মোড়ে বসে
ভাবছেন দেশবাসীর জন্যে
আর একবার জীবন দেয়া যায়
না কিংবা হ্যাঁ
আমি বরং পালিয়ে পালিয়ে
আমার নদীটার কাছে যাবো
তার হাতে তুলে দেব গন্ধরাজ
বলবো ভুল মানুষ আমি
তোমার জন্যে কিছু ভুল ভালোবাসা
নিয়ে এসেছি
যদি রেললাইন ধরে আরও
কিছুটা দূর এগোনো যেত
তাহলে হয়তো অদূরেই থাকত নিখিলপুর
লাইনম্যান সবুজ সিগন্যাল দিলে
নবগঠিত নীলগঞ্জে
আমরা যাবো, থাকবো
কেননা কাছেই সমুদ্র থাকে
সমুদ্রের বাতাসে মহুয়া মাতাল
ভেসে থাকা
পর্যটন কর্পোরেশন কি ভাবছেন
মাতালদের নিয়ে; নাইবা ভাবলাম
ভাবতে পারি
দীঘি নিয়ে, মাছ নিয়ে
জোনাকিরাও থাকতে পারে শালবনে

এবার হিম নামুক
কুয়াশা ভিড় করুক আমাদের দরোজায়
আমরা কুয়াশা মাঠের সিঁথি কেটে
হেঁটে যাবো আমাদের নিভৃত গ্রামে
সেখানে কুপি হাতে বসে আছে
- হয়তো কেউ
অথবা কেউ নয়-



আমার গ্রাম
.......
চলে গেছে আমার ছোট্ট গাঁয়ে
মাঠময় গাভির ওলান, উঠোন, হেঁসেল
ছোট নদী, মাছ- মাছরাঙা
ধ্যানে থাকে
পুকুর পাড়ে
বড়শির জলা
শস্যক্ষেত, কাস্তে হাতে কৃষক
এই পৌষে
কুয়াশার চাদর মেলেছে
আমার ছোট্ট গাঁয়ে
ফসল তুলছে বদলি কাজের লোক
মালিকের ঘরে
স্কুলে ঘন্টা পড়ল
দলে দলে স্কুলছুটি বালক-বালিকারা
ফেরে ঘরে
ঝাউয়ে জাল ফেলে মাছ আজ তুলব না
কাছি বেঁধে খেজুরে বাট আজ বসাবো না
আঙিনার নিকট বনে বনভোজন
তাও নয়
স্ব’মিল নয় রাইস মিল নয়
এমনকি শিশুরহাটে আজ আর যাবো না
বরং কিছুক্ষণ
বড়শি হাতে
ছোট নদী, খালে
কাটুক সময়
মাছদুপুর আজ নামুক
মহাকালের লগ্ন কুড়িয়ে।



চোখে যতদূর তদ্দুর সবুজ বৃত্ত মাঠ
......................
চোখে যতদূর তদ্দুর সবুজ বৃত্ত মাঠে
সূর্য তার রোদের ঝাঁপি তুলতে বিকেল করে
মাঠ জুড়ে টমেটোর ছোপ ছোপ লাল।
চোখ থেকে ধীরে চুন-সুরকী খসে খসে পড়ে।

দূরে কোথাও
পেট ফুলিয়ে গাভী ডেকে ওঠে
ছেলেদের ক্রিকেট কোলাহল।
মাঠচেরা রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে
গা থেকে নিঃসঙ্গতা ঝড়ে পড়ে
একখন্ড একাকীত্ব নিয়ে চুপ কান পেতে বসে থাকি

যেন বহুকাল হলো অনেক দুপুর
আমার পা চিরে শেকড় নামে
চামড়া ফেটে গজ গজ করে ডালপালা।

জানে না কেউ জানবে না
দাঁড়িয়ে রই হাজার বছর।
শুধু গুটিকয় শিশু চুপিচুপি রোজ
কানপাতে কান্ডের ধ্যানে
শোনে,
ধূলো উড়িয়ে ধেয়ে আসে হাজার ঘোড়ার খুড়।

কৃষ্ণপক্ষের আকাশ রাতে
গ্যালাক্সিটার প্রান্ত টেনে চাদর জড়াই
লোকে বলে, পাতা জুড়ে জোনাকির ঢল।

হেসে উঠলে
ঘুমের হা-এ
ঢুকে পড়ে ডজন দুই কৃষ্ণ গহ্বর

শীতল নামে
কন্ঠনালী বেয়ে।
আমার হজমের দাপট
প্রবাদিত হয় মাঠে মাঠে কৃষ্ণকুলে

জমা হয়
কুমার পাড়ার হাড়ির খুলিতে।



ঠেলে ধরি ঢেউয়ের দেয়াল
................
আকাশের নীলে হাত বাড়িয়ে আকাশ ছিঁড়ি
যেন কাগজ
তাতে অনাবৃত অংশে তারারাশি উঁকি দেয়।
ফসলের মাঠের প্রান্ত ধরে গুটিয়ে ফেলি -
যেন ধানের মাদুর।
বেরিয়ে পড়ে নাগালহীন নীল সমুদ্র
হুম্ করে ওঠে সমুদ্রসিংহ
ছুটে আসে ঢেউয়ের হাতি
পালে পালে।
ঘাড়ের রগ ফুলিয়ে ঠেলে ধরি ঢেউয়ের দেয়াল
দিক বদলাল তাই পৃথিবীর হাওয়া।


জেগে জেগে ছুটে বেড়ায় মেঘে মেঘে
.......................
শিয়রে জ্যোৎস্না রাত খোলা জানালায়
ব্যাঙের সমবেত বোলে ঝিঁ ঝিঁ রাত - ঘুমন্ত , গ্রামে
এখন নিশি রাতে
আমার কবি হারিকেনের চিকনি বেয়ে
গলে গলে ছড়িয়ে পড়ে
কিষানী বধুর কাঁকন-লেপা দুধেলা উঠানে।
তালগাছের পেছনে ঐ তো- ঐ নীল আকাশ
আর আকাশের পাড়ে একা চাঁদ জাগে
জেগে জেগে ছুটে বেড়ায়
মেঘে মেঘে
কি এক নেশায়
কি এক নেশায় এই দৃশ্য
চুপচাপ দেখে যায়
গোটা আকাশের নিচে ছড়িয়ে থাকা
বিঘা বিঘা চৈত্রের মাঠ
মাঠের ফাটল- কেটে নেয়া ফসলের
তার প্রান্তে, তারই প্রান্তে কি অপ্রান্তে
এক হঠাৎ গেওয়া বন।



চারিদিকে চৈত্রের চৌচির
..............
ভাঙনও ভেঙ্গে যাবে একদিন
বিশ্বাস মাত্র।
যদিও চারিদিকে চৈত্রের চৌচির
রক্তের কণিকায় কণিকায় বিশ্বাস হত্যার প্রেত নাচে।
প্রতি পলে পলে, প্রতিটি সত্য মহাজগতে প্রতিদিন ফলে।
ভ্রান্তি ভোগে যত আছে-
আধডোবা, আধবোজা, আধাবোধের সিকি আধুলি।
থাক এসব,
যেহেতু বললেই বোধ তার পূর্ণতা হারায়
মাঠে যাই বরং,
ক্ষেতের আল বেয়ে
হাটু জলে ছল ছল জল-শব্দে হেঁটে যাই
একটু জিরিয়ে নিই ক্ষেতের টঙে
স্টোভের ছাই আগুনে, ধরিয়ে নিই সোনালী বিড়ি।
শুয়ে, কান পাতি-
পাটাতনের নিচে শোল গজারের ঘাই
মাঠের বাতাস বুকের ঘ্রাণ নিয়ে উড়ে যায়
কিছু দীর্ঘশ্বাস গুঁজে দিই হাওয়ার খোঁপায়।
তাতে ধানের সবুজ চারাগুলো
দুলে দুলে সুর তোলে
ঘুমিয়ে পড়ি হেমন্তের আকাশের নিচে
শস্য জলের সবুজ পাহারায়।



বুকের বোতাম খুলে দিলেই মাছ ছিলো
......................
ভাবছি-
নৌকার দিন ভালো ছিলো
নৌকা নদীতে নির্ভর যাপনে।

বুকের বোতাম খুলে দিলেই মাছ ছিলো
চরে ধানক্ষেত পালংপুঁই
দিনভর নৌকা রোদে পুড়ে বপনমগ্ন
মন ঢেলে নদী ঢেঁকিতে
রাত এলে,নৌকা হাতে ছেড়ে নদীতে বেড়াতো।

নৌকা এখন মোটরগাড়ি
নদী উঠেছে রাস্তায়।

জ্যামে না পড়লে কথার অবসর হয় না
নদী ও নৌকার মতো কুল-কুল কথাতো নয়
বালু আর পাথরের ঘষ ঘষ কতক্ষণ।

রাতে গাড়ি গ্যারেজে আসে, থাকে কিনা জানি না
রাস্তা গ্যারেজকে ঘরে তোলে। পোশাক ছেড়ে বলে,
কোথায় কোথায় গাড়ি চালালে?
যায় দিন ভালো
আসে দিন কালো
রাস্তা লাবণ্য ঢালে বহুজাতিক কোম্পানির
পণ্য প্রপেলার, গাড়ি দৌড়ে দৌড়ে বড় জোর রানওয়ে।
রানওয়েতে কত বিমান ওঠে নামে!
তবু শখের বিমান উড়ে গেলে পর
হ্যাঙারে বসে গাড়ি ভাবে- যুগটা বিমানের।



শ্রমঘামে নিষ্পাপ বেদনা
...............
ইশারায় বসে আছি মৃত্যুপারে
এখানে শহর বেড়েছে লগ্নিকারকের হাতে
রাতে সোডিয়াম আলোর নিচে
ঘরফেরা গাড়ির ভিড়
মধ্যরাতে তাদের ডাকছে আয় আয়
আমরা হয়তো বন্দি হবো
আমরা হয়তো স্বাধীন হবো
হয়তো আমরা দেখব ভোরের সূর্য
একটা ক্ষুধার্ত কুকুর রাস্তায় হাঁটছে
-আমার মন্বন্তরের ব্যথা মনে হয়
এখানে কিছু ইঁদুর আছে
তার ডাকে পেঁচা আসে
এখানে শালিকেরা আসে, চড়–ই বসে
মাঝে মাঝে কোথাও মাছরাঙা
দোয়েল তো আমাদের জাতীয় পাখি
বুলবুলি কখনো সখনো
তবু কাছের দীঘিটা নষ্ট হয়ে গেলে
আমার মন খারাপ হয় !



নিকোটিনের আহ্বান
...............
পিঁপড়ে খেয়ে গেছে ঘাসফড়িং প্রজাপতি যত
এমনকি তেলাপোকা
আমি পিঁপড়েদের বলে দিয়েছি
আমার কাছে চক আছে
কিছু দৃশ্যের বিরল বাস্তবতার মুখোমুখি।

মানুষের চোখে মুখে প্রাণ নেই
এ মৃত্যুমুখো মানুষ দেখতে ভালোলাগে না
তেলাপোকা ডিম পাড়ে এমন দৃশ্যও চোখে পড়ে
সামনে ঘোরাফেরা করে প্রতিমুখ
বাবার গায়ে কাফনের গন্ধ
গান শুনতে পাই না
ঠিকমতো ;বোকাবাক্স

কাছে এক জলায় কিছু বক
আমি সন্দেহ করি
কাক ওড়ে সন্দেহ করি
চড়–ই ওড়ে সন্দেহ করি
শালিক ওড়ে সন্দেহ করি
এমনকি আকাশের চাঁদকেও সন্দেহের সাহস রাখি

জানলায় ফাঁক গলে যে রোদ
জ্যামিতি খেলে মেঝেতে
মোটা লেজের একটা টিকটিকি ভয় দেখায়
এখানে রহস্যময় দোকানগুলো খোলা আছে
তারা লোকে লোকে রহস্য বিক্রি করে
এখানে মানুষীরা, শিশুরা রহস্য শিখেছে বেশ
বসু আমাকে বলল কিছু, কিছু বলল বিনয়
যদি আমরা চলি একই পথে
যদি অভিজ্ঞতা হয় কাছাকাছি
তবে বেশি দূর নয় জলের রেখা
বৃষ্টি দেখে আর আশ্চর্য হবো না
শীত নামলেও না
বরং রোদ পোহানো বিস্ময়কর কিছুটা
জলত্যাগে শিশ্নের নালায় যে প্রবাহ
সেটা বিস্ময়কর।



পেন্সিল স্কেচ
........
একদিন আমার গায়ে আগুন ধরে যায়
কামনায়
লোমকূপ বেয়ে ঘাস গজিয়ে ওঠে
সমুদ্রগর্ভে নেমে পড়ি
ডলফিন ডলফিন
তোর শরীর ছুঁয়ে স্রোতে ভাসি
ওরা বললো, শিশুর মতো আদর করতো
পারিনি আমি
বরং কামনায় নিজের ভেতরে নিজে ঘুরে উঠি
আমি নই আমারই কেউ
ওর শরীর ছুঁয়ে স্তন বৃন্ত নাভি
যাবতীয় মন্থনে মন্থনে
খুব এক ঘুম শুয়ে পড়ি
এভাবে দিন কাটে
অপরাধী হতে আমিও জানি, হয়তো না
কিন্তু পা
আমার পা সরে না
এখন রাত্রি গাঁও-গেরাম ভরা কুয়াশায়
ওদিকে বউপাখি তুমি আর আসো না তো
তোমার হলুদবর্ণ ছুঁয়ে
কিছুটা রঙিন হয়ে উঠি
আমাদের এখানে যদি আসো
তোমাকে গলিপথে ঘুরিয়ে
কিছুটা অন্ধকার মেখে দেব
তোমার ঠোঁটে

আমরা বড় অন্ধকার
অর্থাৎ অন্ধকার ভালোবাসি
যদি দিনযাপনে আরও আরও ক্লান্তি আসে
যদি ঘুণপোকায় কেটে নেয়
আমাদের যাবতীয় আলোর দিন
তবে হয়তো সহসা খুলে পড়তেও পারে
আলোর দরজা
এইমতো দিনযাপনে
যদি অভ্যস্তই হয়ে পড়ি
তবে ভবিষ্যতের কথা নাই বা ভাবলাম
কিংবা ভাববো না কেন !
বরং খুব সকালে নয়
ভোরে উঠবো
চাদর মুড়ি দিয়ে কুয়াশায়
ভাঁপা পিঠা খাব
বরং কিছুটা পথ হেঁটে
একটা সিগারেট ধরাবো
মোড়ের দোকানে চা
রোদ উঠলে
চাদরের গায়ে সূর্য জড়াবো,
ফিরে
আমার বিছানায় শুয়ে থাকবে দীর্ঘঘুম।



রোদের গন্ধ
.........
ধরো আমি ঘর করলাম কিছুক্ষণ
হয়তো দাম্পত্য
কথা হলো ঝগড়া
যেসব যেসব কথা একান্ত
ভদ্রজনেরা কি বলবে জানিনা
এ সবই আমি সত্য বলে জেনে নিয়েছি
যদি আলাপ কোনোদিন না থামতো
কারো, কার কি ক্ষতি!
তবু আমি যত আলাপই করি
অর্থাৎ যে ভঙ্গিতে তোমার একান্ত হয়ে রই
মনে রেখো!
শিশুরা আমায় অলৌকিকভাবে রক্ষা করলো।

কখনও ঢুকে পড়ি এমন চোরাবালিতে
যে পথ করতে পারি না।
ভীষণ ক্লান্ত হই তখন
দীর্ঘশ্বাস এসো না কাছে-
তুমি গোপনভাবের বয়ঃসন্ধিতে ঝুলে থাকো
ভেতরে বেড়ে ওঠা নানা মানুষ নানা কথা
নানাভাবে বেড়ে ওঠে একই ঠিকানায়
কচুঘেচু যাই ভাবি
তবু ভাবনা সত্য।
নিজের কথার ফাঁকে নিজেই জড়াই-
নিজেকে ছাড়াই-
নিজেই হয়ে উঠি নিজের আপন শত্র“।
যা নই আমি তাই হয়ে উঠি-
যা আমি তাকে আর পাই না।
প্রত্যাশার মাঠে নিজেকে বাড়াই কমাই-
নিজেকে নিজের প্রস্থ ধরে টানি-
নিজেকে বার বার নিহত করে
কি যে সুখ পাও তুমি
মন আমার।
যদি আগলে রাখি নিজেকে
নিজেরই মতো-
ক্ষতি নেই-
আমার আর ভালোলাগে না
আজ জানালায়-
চড়–ইয়ের পালক খোঁটা
আর ছোট মাকড়শার জালে ভাসা
দুই দৃশ্যই উপস্থিত
এবং বিরক্ত হয়ে কলম টানি।



ইমাম
.....
(মাঝি, ইবন, রিপন, মুয়ীয, অভিজিৎ আমি এখনও বেঁচে আছি)

আর আসবেন তিনি; হাজারও মানুষের প্রত্যাশা এই
হাজারও মানুষ বৃষ্টিমুখী
অগ্রহায়ণের রোদে পোহাবেন শীত
মৃত মানুষদের কল্যাণ হোক
বলবেন তিনি।
ছড়িয়ে পড়বে আশীর্বাদ পিতার
যদি মেষপালন হয় আমাদের সংস্কৃতি
যদি ভাটিয়ালি হয় আমাদের গান
যদি লাঠিয়াল বাহিনী নেমে পড়ে
চরে চরে
তবে ধান কাটার মৌসুম আসুক
নবান্নের উৎসব আসুক পাড়ায় পাড়ায়
এ বছর কৃষকেরা পেয়ে যাবে ফসলের ন্যায্য মূল্য
এ বছর মজুদদারেরা মধ্যবিভেদের কথা ভাববেন
আমাদের শিল্পমূল্য কতটুকু
এ নিয়ে
সমালোচকেরা যাই ভাবুন
আমরা কিন্তু কবিতা লিখব

দেশে দেশে যুদ্ধ বাঁধে
আমরা কান রাখি রেডিওতে, টিভিতে
কতজন যোদ্ধা কিংবা সাধারণ
এ বছর
বোমার আঘাতে ছিন্নভিন্ন হলো
এ সংবাদ আমরা শুনি
চা খেতে খেতে।
আর তাকিয়ে থাকি প্রান্তরের কুয়াশায়

জেরুজালেমে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হলে
পৃথিবীতে শান্তি ফিরবে কিনা
এ নিয়ে আমি কোন কুতর্কে যাবো না
শুধু জানি
জেরুজালেমে ইতিহাস চিরকাল অশান্ত
যেন চিরকাল কান্না
সেই ঢেউ পৌঁছে যায় পৃথিবীর
-কানায় কানায়
হয়তো জেরুজালেম সে জন্যই কাঁদে, কাঁদাতে
আর যিশু
সাবমেরিনগুলো ঘোরে তোমার জন্য
মিগ কিংবা এফ-সিক্সটিন ওড়ে
তোমার জন্য
ব্যারাকে মিসাইলগুলো ঘুমোয় তোমার জন্য
সৈন্যরা প্রার্থনা করে যিশু তোমার জন্য
বনের বাঘেরা, মহিষেরা
এমনকি হরিণেরা তোমার জন্য
ওড়ে প্রজাপতি, বউপাখি, দোয়েল, ফিঙে
শাপলা ফোটে তোমার জন্য
যদি পাতা ঝরে পড়ে শীত এসে গেলে
যদি গাছগুলো ন্যাড়া হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে
হলুদ পাতা সমেত
তবে আমি হেঁটে যাব
সেই বিবর্ণ পাতার পথ ধরে।


মৃত্যুক্ষুধা
........
যাচ্ছে তারা যাত্রীদল; পশ্চিম অভিমুখে সওদাগর
দেশে দেশে বিক্রি তাদের।
-যাবো
আমরাও যাব ঠিক হয়তো বাণিজ্যে নয়
যেভাবে প্রাচীন প্রজ্ঞা দূরগামী হতো
চত্বরে দাঁড়িয়ে দেখি
কারখানা থেকে নেমে আসা যন্ত্রযান
তাদের অটো সিগ্ন্যাল।

সভ্যতা এগিয়েছে বেশ
হাওয়া চিরে মেঘ ছিঁড়ে যন্ত্রপাখি।

জানিনা এখন কোথায় দাঁড়াতেন রবীন্দ্রনাথ,
কিংবা আইজ্যাক নিউটন
তাদের চোখের বিস্ময়
আমার চোখে লাগে
আর আমি বেকুব চুপ।



যেন আমিই ছিলাম
............
কে যে কাকে খায়
-হায় !
পুঁজির বাজারে লোভাকুল লোকজন
ঋতুরাজ নিকটেই আছে
গুরু তোর চোখ কাঁপে
ঘাস ফুল নদী
কাদা মাখামাখি?
আমি তোর পায়ের কাছে
বসে থাকি
বসে আঁকি
এবং ধনিকের তালিকায়
ফিদেল ক্যাস্ত্রো এলে
আমি তার মর্ম উদ্ধারে থাকি !
ফাঁকি
ক্যামোফ্ল্যাশ
মিকাইল আমাকে
পাকড়াও করে
ভালোবাসে
রোদ বৃষ্টি ঝড়
কে আপন কে পর
বই আমার জীবন মাছের প্রাণ টক
দাবি না করলে
দাবি নিজেই এসে হাজির হয়
একদিন নবী মোস্তফায়।



ওড়ে, উড়ে যায়
............
শোন, দুঃখের ইত্যাদি থাক।

নাগালহীন নীলের দৃশ্যে
শান্তি-সন্ধি ওড়ে-উড়ে যায়-ফর্সা মেঘ
ভাবি না শিমুল।

ফ্রিজ হোক কাল এই শটে
থাকুক, থাক না দুঃখের ইত্যাদি আজ।



জমি যে জমিদার
............
প্রেম, তুমি বন্ধুত্ব মানো
যেখানে দাঁড়িয়ে লড়াই
একা মনে হয় না
আড্ডায় আজকাল চায়ের কাপ
জমে ওঠে
এবং ঋতুরাজ তুমি আষাঢ় হও
তুমি জানো বৃষ্টি ভূমিকার
কতটুকু মূল্য !
জেলেপাড়া এখন
পুকুরবন্দি
তাই চাষে
কিছুটা কলা থাকতেই পারে
উপর্যুপরি বৃষ্টিও নামতে পারে
ক্ষেতে ফসলাদি যদি ভিজেই ওঠে
তবে টুপটাপ শিশির
টিনের চাল
যে শ্রুতি জানে
আমাদের দালানকোঠা
তার খোঁজ জানে না
জামরুল বনে
সন্ধ্যা নামলে
সূর্যবনে চন্দ্রের
আধিপত্য নামে
তখন জোনাকি
ঝাউবনে
বিন্দু বিন্দু মশাল জ্বালে
তার রমণীয়তা
চোখের মুগ্ধতা
বাড়াতেই পারে
কিন্তু বাড়ন্ত দেয়ালে
জোনাকি কোণঠাসা হলে
আমরা গাছের সমাদর বাড়াব
আমরা আরও আরও ঋতুপ্রবণ হব
মেঘ আসলে বলব
‘ কানা মেঘারে’ !


আজ খুব শ্রাবণ হবে
..............
খুব শ্রাবণ হবে
আজ এ ঘরে আষাঢ় আসবে।
সারা গায়ে আষাঢ়-শ্রাবণ মেখে
হতে চাই বৃষ্টিপুত্র।

রাতে,
মেঘের পর্দা ছিঁড়ে
তুলে আনা হবে জমাট চাঁদ
পড়ে আছে আকাশের তলায়।
গলায় ঘুমের মালা পড়ে
একতারার তারে দূর গাঁয়ের মাটিপথ
মাটি আর মাঠের পথে দূর্বা কন্যার
বেণী-দোলানো গান গাই।
যেতে চাই, কিছু পাই বা না পাই
কেউ কি পায় কিছু!
তবু কেন পিছু টানে হীরের লাবণ্য
আজ খুব আষাঢ় হবো
মেঘে মেঘে বর্ষা হবো
হাতে হাতে ভিজব,একসাথে রাজপথে
গায়ে শুধু হাওয়ার বসন।
ফলের বোঁটায় গড়ালো বৃষ্টির পড়ন্ত জল
টুপ করে মুখে নেবো।
ঠোঁটের নৌকো বৈঠায় বৈঠায়
ঝপঝপ বইবে বাইবে।
শ্রান্ত বেলায় মুখ লুকাবো কুসুমের ডিমে
আজ খুব আষাঢ় হবো
মেঘে মেঘে বর্ষা হবো।



রোদে আসো মেয়ে
.............
রোদে আসো মেয়ে, রোদে বসো রোদে চাও
রোদের আকাশ রোদ নিয়ে তোমারই অপেক্ষায়
গন্ধম বৃক্ষের ছায়া উঠোনের পিঠে
রোদে না হোক ছায়ায় বসে যাও একটু সময়
রোদ আর ছায়া কিভাবে ঘুমায় তোমার আঁচলে।
চোখ খুলে রোদে, বড় সাধ তাই দেখি
রোদে আসো মেয়ে, পিঁড়ি নিয়ে
চোখ খোলো খোপা খোলো রোদ খোলো-
একবার দেখি।



রূপকথা
.........
রূপকথা রূপকথা রূপে রূপে রূপকথা
রূপের পাহারা তুমি আনত প্রতীক্ষা ।
বাঁকা হাসি বাঁকা শশি আমার খুশি
চলার মাদলে ভোলে সন্তের সাধনা
যাদুকরী খেলো তুমি , যাদুকরী খোলো
খোলো হাসি খোলো খুশি
খোলো চুল মূল থেকে তৃণমূল
আমি ভাবি ভুল- আর্যরাঙা ডাহুকের ।
দীক্ষা দাও সখী দীঘল চুলের
রূপে রূপে ভেসে যাই ভাটিয়ালী
দুলে উঠি ধানের মেধায়
যাবতীয় সাঁকোর সংলাপে
আমি সখী গহনবাউল যোগীর ভিটা
হাত রাখো এই হাটের মাটিগন্ধে
পৌঁছে দাও পীড়নে পীড়নে পিরিতি পৌরে
আবাদিত অলৌকিক
ঘুঘুচরে।



হাড়ে -পাঁজরে রূপকথা
...............
২.
পথে পথে পৃথিবীর যত পথ
দলে দলে মিশে গেছে ওই চোখের গহন শৈশবে
কোটি কোটি আলোকবর্ষ দূরে
ডানার বিস্তারে ভাসমান
অসংখ্য ছায়াপথ, সৌরলোক গ্রহাণুপুঞ্জে
ধাবমান যত সৌন্দর্যের ভিড়-নুলো ভিখারি
ওই চোখের সম্মোহনে।
ওই দৃষ্টি-পেশিল পাইথন গভীর সামুদ্রিক চাপে
শত শত মৃত্যুকে গেঁথে ফেলে।
ধমনী শিরায় কি এক জোয়ার-ভাটার তোড়ে উছলে দেয়
ধাঁধা লাগে
আর তাতে দিকে দিকে ভূমিষ্ঠ হই আমি।

৩.
থাকো কিংবা নাই থাকো তোমাকেই ছুঁয়ে থাকি
ছোঁয়া! কি এমন আণবিক খেয়া
যে আমায় লেজারের আঙরাঙ্গা করে তোলে
আর ভেঙে দেয় মন্ত্রে মন্ত্রে শৃঙ্খল নির্দেশ।

ভাবো কিংবা না ভাবো
তোমারই ভাবনায়...
ভাবনা এমন বুনো লতা-
পা থেকে পাকস্থলী ফুসফুস হৃদযন্ত্র জড়িয়ে
আমার নাক মুখ চামড়া ফেটে বেরিয়ে পড়ে তা

লতার ডাক নাম নীল অপরাজিতা।



৪.
তোমাকে সবাই চায় পায় বা না পায়
দেবীত্বে সংশয় নেই কোনখানে কোন
ধর্মগ্রন্থে স্পষ্ট ছিল তোমার আবির্ভাব
জাতিস্মর তাই জানি লুপ্তপ্রায় এই গুপ্ত কথা
দেখা দিলে-
নাট-মন্দিরের চাতালে দ্রাবিড় বৈষ্ণবী বেশে
আর তাতে গেয়ে ওঠে গায়কের দল
নয়া নৃত্য গানে।
রঙতুলি পায় চলার মাদল
কবিকুল সৌন্দর্যের মৌন অবতলে।
স্পর্শ রূপ গন্ধ পেয়ে উপাসককুল ভাবে, দেবী অনুকূলে
সংশয়ে ফের ভাবে, দেবী তবে কার!
পাঁজর ভাঙনে দেবী ভাবনা ভাঙে না!

৫.
ছিল সে পূর্ণকলায় কলাবতী কুন্দকন্যা
ষোড়শী নদীর ঘাটে উপচে পড়তো জলের জ্যোৎস্না
কাছে ডাকা পালকের নরম তান
আলাপে-ঢেউয়ে ঢেউয়ে দুধদাঁত
সে হাসির গরিমা শিশুর অধিকার
তার কৃষ্ণ চোখে আলাদীনের যাদু পড়েছিলাম
এমনই কিংবদন্তী যেন রূপের হাট

হাটে চিরকাল বেচাকেনা চিরকাল অন্ধকার
হাটে হাটে যত শ্যাম তার বেশি শকুন।
যজ্ঞে-পূজারীর ভিড়ে চিরকাল পুরোহিত
অথচ এ মানচিত্রে উপচানো পূজারী পুরোহিত
টলে ওঠে পৃথিবী আমার
অভিমানে কক্ষচ্যুত দূরে দূরে
ফের কার সাথে দেখা!
কোমল ডালপালায় বিষলক্ষ্যার ছুরির ছোবল
লতাপাতায় মৃত্যু মুখর বিষাদ।
টাইম মেশিন

বুকে বিষ নিয়ে
মুখে মিষ্টি আমার
আজ সারারাত
তোমাকে ভাবতে নিয়ে
বুকে জমে প্রাচীন বিষের
কোলাহল
সুতীব্র আগুনের হলাহল
শ্বেতপদ্ম
তোমাকে দেবার কিছুই নেই আমার
কিছু কষ্ট
কিছু সৌন্দর্যের ভিড়
কিছু রাজকীয় আহ্লাদ
আমার সৌন্দর্যের বলয়ে
তুমি সন্ত্রস্ত
চিত্রা হরিণ
যা দেব নেবে ?
যদি নাও
মনে বলব আমার হও!




শ্বেতপদ্ম
.......
শ্বেতপদ্ম তোমার চুলের বিভা
শ্বেতপদ্ম আগামীকাল
শ্বেতপদ্ম বুকে বিষ।
শ্বেতপদ্ম
তাকিয়ে থাকব
প্রান্তরে কুয়াশায়
শ্বেতপদ্ম
দাঁড়িয়ে
অপেক্ষায়
শ্বেতপদ্ম ভালোবাসা
শ্বেতপদ্ম নির্ঘুম
শ্বেতপদ্ম তোমার পা
শ্বেতপদ্ম জেনে যাক সারা গাঁ।



বন্ধুত্ব ও দূরত্ব
..........
ক’দিন দেখা হয়নি অথচ যেন বহুকাল...
বিকেল বারান্দায় বসে ভাবছি তোমার কথা
সামনের লেকের সিথানে পাশাপাশি দু’টি তালগাছ
দাঁড়িয়ে আছে
তাদের ছায়া জড়িয়ে আছে গোধূলি আলোর জলে
ভাবছি-
কেন যে গাছজন্ম হল না
একবার কাছাকাছি দাঁড়াতে পারলে
আর দূরত্বের ভয় থাকতো না।



আগুন ভাগ্য
...........
কুয়াশা যাপিত জ্যোৎস্নায়
সবুজের অন্ধকার পাহারা দু’পাশে।
সাথে ঝাঁকে ঝাঁকে বাতাসের আপ্যায়ন
মাঝখানে আমি পথ, পথে-
নিকোটিন আহ্বানে সিগারেট নিই
বারবার জ্বালাতে নিয়েও জ্বলছে না
ভাবছি-
দিয়াশলাইয়ের প্রথম কাঠিতে আগুন জ্বলে ক’জনার!




সানাই শয্যায় দূর শূন্যপার
...............
সানাই বাজছে।
আকাশে টানানো বাতি
মাটিতে ফুলশয্যা
নাকি ভুলশয্যা !
শয্যা, তুমি কে হতে চেয়েছিলে ?
আহা হতে চাওয়া- সে বুঝি দূর শূন্যপার
সেখানে পরীর রথে আমরা উড়েছি
বহুদূর আলোকবর্ষ
চাঁদ ছুটবে উঠোনময়
তুমি সূর্যপিতা-
আমার সুঠাম কৃষক
শুধু কথা নয়, ছিলো স্বপ্নপার।

যে জোনাকিঝাড় জ্বলেছিল
পাতা কি ডালে ডালে
প্রাচুর্য ব্লেডে চোখ ঝলসালে
হায় আমিই তার হত্যা হই !
নিস্তব্ধ মাঝরাতে
পাঁজরে পাঁজরভাঙা পাড়ভাঙা শব্দ
বুঝি সেই পাখির কান্না
আমার জীবন হয়ে ঝরে।



বউ কথা কও
...........
ঘুমিয়ে পড়েছে শহর; ঘুম নেই
রাত্রির বয়স বাড়ে
সাথে অস্থিরতা
রাতের মগ্নতায়
মোম গলে গলে পড়ে
টেবিলে অগোছালো বই
বইয়ের সাথে কথা কই
রাতে প্রতিযোগিতায় ভরে ওঠে এ্যাশট্রে
এ্যাশট্রে কথা কও
জ্বলে ওঠা মোম
কথা কও
রাত্রির সহবাসে
ঘন হয়ে নিভে যায়
নেভানো প্রদীপ!
বারান্দার রেলিংয়ের সাথে
লেপ্টে আছে অন্ধকার
অন্ধকার আমার বউ।



কলকিতে পোড়ে আত্মা আমার
..................
এই যে আমার সকালের রোদে
হাঁটতে হাঁটতে মেজাজটা গেল খিঁচে
এই যে শহরের পার্ক- সারি সারি গাছ আর রোদের ফাঁকে
বসে থাকা নিঃসঙ্গ বেঞ্চগণ
আর পড়ে থাকা চুপসানো লাল বেলুন
মনে হয় যেন হিজড়ার সস্তা প্রসাধন।

ওই যে হাইরাইজ কৌণিক আকাশে উড়াল পাক চিল
হাতে স্যুটকেস, কলারে টাই, চোখ হয়ে আছে ঘুড়ি
হয়তো ছেঁড়া ছালাটা বোঝে
তার বোধ ঝুলে বারোটা
হেসে ওঠে বারোটা কলায়।
তবুও আমি খিঁচে মেজাজে সারাটা বেলা- চারুকলা
নেমে যাই পাতালপুরীতে, শুয়ে থাকি
বসে পড়ি ‘বাড়ি নাই’- গান গাই।

আমাকে বুঝতে পারে ঘিরে থাকা গাছ দেবতারা
ঝুঁকে পড়ে বলে, মন খারাপ ?
ডাল ছেড়ে, ছিঁড়ে উড়ে গেছে
গোলকের অন্য পিঠে
‘নেই কেন সেই পাখি ?’

বসে আছে দেয়াল ঘেঁষে, কবরের পাশে
অথবা গাছের ছায়ায় গোল হয়ে
আর অনর্গল ধোঁয়া উড়ছে

কলকিতে পোড়ে আত্মা আমারÑ পুড়ুক তবে।



মা
...
সাদা বক ওড়ে সাত আকাশের বাঁকে
দুধ-ভাত
হোগলা পাতার মাদুরে
মা যদি ডাকে।


পাড়ভাঙা পাখি জাগে, একা
......................
লাল ঘোমটায় পালকি বেশে নেমেছিলে
দূর পতিগ্রামে
শঙ্কা-স্বপ্ন ঢেউ নিয়ে একদিন।
পতি, পুতুল-পাতিলে সইলে
কত কত ভিটা ভাঙন
অথচ আবাদি পুরুষ তোমার
দীর্ঘ-দূর বাণিজ্য ঘুরে বললো,
‘তোমার জন্য পলল চরের গল্প এনেছি’।
বললে, ‘এই ভালো- দুঃখ শেষে সুখ’।
এমনই ফাল্গুনে হায়-
নিয়তি কাঠি নাড়ে
অকালে ঝরে পাতা-পারুল!

আজও যাচ্ছো পালকিতে সাদা ঘোমটায়
মাটির চৌকাঠ পেরিয়ে-
পতি, পুতুল আর পাতিল দূরে ফেলে
নিষ্পাপ সৌন্দর্যে। নির্বাণে ?
দ্যাখো, কৃষ্ণ গহ্বরে
একা পাড়ভাঙা পাখি জাগে।



মণিহীন কাফন মানুষ
..............
ঘন সন্ধ্যায়-
প্রাচীন বাঁশঝাড়ের মাথায় হাজার কাকের ডাক ওড়ে
কা-কা-কা কী মৃত্যুঘন ডাক!
কে বাড়ি ফেরে!
ভাবি, আছে নাকি!
মাটি কোপানোর কাঁপানো-শব্দ আসে।

খাল পাড়ের মাটিপথে
ড্রেন ঘেঁষা অন্ধকার গলিতে
আসে-যায়, যায়-আসে মণিহীন সারি সারি কাফন মানুষ।

নদীতে পালহীন একা নৌকা, জাল পেতে
চিমনি বেয়ে নিবু নিবু হারিকেন বাতির
প্রতিবিম্ব ভাসে জলে, ঢেউয়ে।
পাল তুমি কোথায়!
আমাকে পাল তোলো পাল তোমার পালে।




ফিরে দেখা
.......
যেন অচেনা প্রদেশ
অচেনা প্রহর
বহুদূর থেকে বহুগামী আমি
ফিরে নিজ ঠিকানায়
চেয়ে দেখি পাখি নেই,বাড়ি নেই
পড়ে আছে ভিটে
ছবির দেশেও ঢুকে গেছি আমি
স্বজনেরা তাকায় আমার চোখে
খোঁজে আমাকে অর্থাৎ সুমনকে
সুমন তো নেই
বসে আছে সুমনের শবদেহ
চিনতে কি পাও আমায়
আমি! আমি! সুমন
তোমাদেরই ভাই-বোন
আমাকে পেয়ে বসেছে এমন নশ্বরতায়
নিজেকে ছাপিয়ে নিজেই হয়ে উঠি
নিজের স্বজন
কেউ নেই!
কেউ নেই তোমার
বন্ধু কোনো।
নিজেকে এই কথা জানিয়ে
চুপচাপ বসে থাকি বিছানায়।



১৯৪২ -এ লাভস্টোরি
..................
(তাসিন ইশমাম, লিখে রেখো বিলাপ আমার)

যখন মন খারাপ হয়-কেউ তার অর্থ বোঝে না
আমিই কি বুঝি নাকি
আমি বুঝি জলায় মাছের খেলা
যদি মন খারাপ বাক্যটা শোনার
কোন মানুষ না জোটে
নদীকে বলবো, দ্যাখো
কেমন একা আমি,
বলবো,কখনও বকুলের মালা গেঁথেছো

যে শব্দে ঘোর নামে
সেই ঘোরের টানে
ছুটে যাই লোকালয়ে
প্রপেলার ঘোরে; ঘোরে -ওড়ে
আমি তার উড়ালের পক্ষে
ডানায় রৌদ্রের সমাবেশ দেখি
সমাবেশে লাখো মানুষ অপেক্ষায়
কোন শুভ দিনের
আবার কেউ সাত’ই মার্চের মতো
আঙুল হেলিয়ে বলবে
মানুষের মুক্তির কথা
ভোর খুব নিকটে এসে গেলে
আমি দরোজা খুলে দেবো
এসো ভোর আমার দরোজায়
কুয়াশা ছেনে।
যে বিকেল হারিয়ে গেছে
যে সন্ধ্যা অস্তগামী
তার জন্য দুঃখ নয় কোনো
সত্যি এই মানুষ স্বভাবতই স্মৃতিকাতর
বুকের ভেতর স্মৃতিসম্বল।

এখনও ইচ্ছে করে
মায়ের জমিটার শিথানে দাঁড়িয়ে
বুক ভরে নিশ্বাস নেই
দেখি ফসলের দোলা
কাস্তে হাতে কৃষকের কর্মঠ চলাচল

পাহাড় কেমন আছে জানি না
দীর্ঘকাল দেখা হয় না
তাকে আমার ব্যাধি দেখিয়ে বলবো
আমি অসুস্থ।



পতন
...
ভূতগ্রস্থ মহাশূন্যে ঝাঁপিয়ে মেলেদি’ দু’হাত
শুনশান পতন নামে অস্তিত্বের চরাচরে
পতন ডানার এ ঝাঁপে হারিয়ে ফেলি সময়
বুকের ভিতর ওৎ পাতে সময়হীন মহাকাল
স্থানিকতা শূন্য এ যাত্রায়,
যা দেখি সেখানে চোখ নয়
যেখানে চোখ সেখানে দৃষ্টি নয়।
সমাধিস্থ আত্মার পর্দা ছিঁড়ে তাকালে,
পৃথিবী নামে
ঘরে কবরের দাগ
ঝোড়ো কাকের মড়ক সংসারে
কোথায় আমি!
জানি না, জানার নেই।

অন্ধকার রাতে নিজস্ব নক্ষত্রের পাহারায়
অনেক চেনা কবরের অচেনা অন্ধকারে
কংকালের গলা জড়িয়ে ধরি
মা, আমার গায়ে খুব জ্বর!



অলৌকিক বোধে বধির
.................
স্থবির হয়ে আছি আশ্চর্য জহুরি
অলৌকিক বোধে বধির
স্থির বৃত্তাকার আলো যে বোধবুদ্ধির অগম্য।
কেউ নেই একা একক মহাবিশ্বে
আপন গ্যালাক্সির অখ্যাত পাড়ায়।
এমন ভিখারি অর্থ করে না ধনী
বুদ্ধির বাঁকা হাটে হৃদয়ে ধারালো মন্দা
আর এমন ভাটিতে
শুকিয়ে যায় এমনকি নালা-ডোবা।

কেঁচো খুঁড়তে সাপ-এমন লোকসত্যে
যেন দুমড়ানো ঝোড়ো টিন।
তবু শিশু হাসতে খেলতে মুঠোয় নিতে জানে সাপের ফণা।
কোন মন্ত্র নেই, ওষুধ নেই, নেই কোন যাদু
কয়েক টুকরো আগুন কেমন নাচায় দেখো
গোটা কবরের সবুজ গোলক।



আওয়াজ
.........
উপুড় হয়ে কান পাতি পেতে রাখি
পৃথিবী গোলকে
মাটির পাঁজর চিরে ভেসে আসে ওঁম
ওঁম ফেটে বেরিয়ে পড়ে শিবের গোঙানি।
কে তুমি ধ্বংস সাজাও
কে তুমি মিথ্যে প্রহসনে!

শিকারি কার্তুজে ডাল থেকে খসে পড়ে
হলুদ পাখির আত্মা
বুঝি আত্মার বেদনা ভর করে।
উপত্যকা ঘিরে নামে মৃত্যুঢোঁড়া সাপ
কাফন ডানার চাদর মেলে দেয় প্রেতের শাসন
দাঁত খিঁচিয়ে ওঠে গুটিকয় রক্তচোষা বাদুর ভাম
ঝকমারি আলোর অশ্লীলতায়
চোখ ফেটে রক্ত বইতে থাকে
কে?
কেউ নও কারো নই!
নিজের ঘরে নিজেই কবর খুঁড়ি
শুয়ে পড়ি কবরের হা-এ
আমায় ঘিরে উৎসব নাচায় মৃত কংকালেরা
চোখে চোখ রেখে পায়ে আমিও নাচি
আর হঠাৎ বেরিয়ে পড়ি কবর ফেটে
দেখো নখ গজিয়েছে, দেখো দাঁত
কানামাছি ভোঁ ভোঁ যাতে পাবি তাকে ছোঁ
যে আমাকে ছোঁয় তাকে মৃত্যু ছোঁবে।




স্থবিরতা
........
এই বেলা আমি সহচরহীন
দীর্ঘ প্রলাপে
জেগে আছি স্থবির প্রান্তরে
মগজের কুয়াশায় ঘেমে
রাতের হুঙ্কারে বিপর্যস্ত বালক
খুঁজি কুহকের মর্যাদা
রাত্রি গভীর হলে অস্থিরতা মিলিয়ে
বাড়ে
যুগের জঙ্গমতা ছিঁড়ে
অস্থির নিয়তির খেলাচ্ছলে
দীর্ঘ প্রলাপে
ঢেউয়ে ঢেউয়ে
রাত্রির কুয়াশা ছেনে
সূর্যের প্রলেপে
রঙধনু আঁকবো বলে
এসেছি পৃথিবীতে
দীর্ঘ জাগরণে
আমার বিহ্বলতা
যে ভাষা হারিয়ে ফেলে
দ্বিধার স্তর
ভেঙ্গে রাতের যূথবদ্ধতায় আমি
শাড়ির সৌখিনতার
ভাঁজে যৌবনের অস্তরাগ
অথবা আমি
মাত্র যৌবনে
পা রেখে বলি
এসো নারী
মন্থনে মেতে উঠি
জনম জনম সাধনায়
এই যে মানব জন্ম
তার সুরটুকু মুছে ফেলতে
এখনও মন সয় না
আমি চাঁদের কাছে
সূর্যের কাছে
বিশ্বাসের জোয়াল পেয়েও
হারিয়ে ফেলেছি নিজের
ভুবন গড়ার স্বাধীনতা
হে প্রেম হে মাতৃছায়া
হে পিতা
আমি মাটির ঘ্রাণ শুঁকে শুঁকে
এ জমির বসত ভিটায়
প্রতœসম্বল হাতে নিয়ে
দাঁড়াবো পৃথিবীর
রাজ দরবারে
বলবো এই আমার দেশ
আর তার মাটিতে
দেখে ফসলের সুঘ্রান।



প্রাসঙ্গিক
........
পৃথিবী, ঠিক পৃথিবী নয়, মানুষ
ঠিক মানুষও নয় মানুষের প্রেতাত্মা
আঙ্গুল উঁচিয়ে আমায় শিখিয়েছে
পৃথিবীতে তোমার দিনযাপন
ফুরিয়ে এসেছে
এখানে বাংলাদেশে
এক আতঙ্কজনক উদ্ভট পরিস্থিতি
বাঙ্গালি এমন কালখন্ড কখনও
পেরিয়েছে বলে
আমার জানা নেই
আমরা কি তবে বিষাক্ত ইতিহাসের
ভিতর দিয়ে দিনযাপনে-
প্রতিদিন মাথায় নিচ্ছি বিষাক্ত ছোবল
ব্যক্তিতে মানুষের ব্যক্তিত্বের দ্বন্দ্ব
আমি নাকচ করেছিলাম
ভালবেসেছিলাম বিষাক্ত কিছু মানুষকে
তার বিষ আমার দেহের কানায় কানায়
নিউরনে নিউরনে
প্রতিদিন খেলা করে
যে জগতের বিভীষিকা দেখে
আমি আমার চোখ
ফিরিয়েছিলাম
মহাজগতের মনে

তারই কি এক প্রতিক্রিয়ায়
আমাকে প্রতিদিন বিষাক্ত করে চারপাশ
আর আমার বিষ,ও অক্ষর
তুমি প্রতিনিয়ত ধারণ করো
যেহেতু হে অক্ষর
তোমাকে সাজানো ছাড়া
আর কোন মূলধন নেই আমার
ফলে যন্ত্রণার নারকীয় মুহূর্ত
পেরিয়ে
আমি তোমার কাছেই ফিরেছি
এবং তোমাকেই বলেছি
আমার দীর্ঘ আর্তনাদ
এখন আমি আর কাউকেই
ঠিক চিনতে পারি না
না কোন আত্মীয়
না কোন স্বজন

তবে কি বাংলাদেশ
আমি ধরে নেবো
এই আমার বাস্তবতা
অথবা তোমার!



চলে যাবো দূর বলয়ে
.......................
মগ্নতার ভোর কেটে গেলে পর
আসে যে আগুন কিরিচ সকাল
তার ভয়ে ভীত নই আমি
ইতিহাসের রক্ত চিরে
আমি বসাবো একটা খুন
যে আমার রোদ বিকেলের
শান্তি কেড়ে নেয়
যে আমায় বিচ্ছিন্ন করে
ভাই থেকে বোন থেকে
এমনকি পিতা

দোযখের কসম
আমার কিরিচে অগ্নিময়
হবে কিছু মানুষের লাশ
আর আমি হাসতে হাসতে
পৃথিবীর
কাছে নিজেকে
খুনি প্রমান করে
বলবো গুডবাই পৃথিবী।




গঙ্গাঋদ্ধি থেকে বাংলাদেশ
...................
কারাগারে আমি
তবু গৃহমায়া ফেলে
যতটা সম্ভব আমি দেখে নিয়েছি
তোমাকে বাংলাদেশ
যেন পথে পথে বিভ্রান্ত তুমি
তোমার আছে অভিন্ন গ্রাম
নদী শহর বন্দর
তবু তোমার চিন্তার উৎসে
সে কোন ভাটা
যারই উজানে উজানে
তুমি এমন বিভ্রান্ত
গণতন্ত্র তুমি আমার
কাছে আর
জনগণের মুখচ্ছবি নও
তুমি গুটিকয় মানুষের আঙ্গুলের ইশারা
তুমি ওঠো বসো
নির্দেশে নির্দেশে
আমি এখনও তোমার
ভূগোল পাশে শিশু ছাত্র
যদি না নদী পায় অব্যাহতি
যদি স্রোতের প্রবাহে
ভরে না ওঠে
তোমার শস্যমাঠ
তবে বৃথাই আমার কবিজন্ম
বৃথা আমার যাবতীয় পাঠ
যদি না পৃথিবীর শীর্ষে
আমি না আঁকি তোমার
মানচিত্র
তবে আমার মানুষের যাবতীয়
যন্ত্রণা প্রবাহ
মিথ্যাই
মিথ্যা আমার শিল্প সংকল্প
তুমি আবার আমাকে
উজাড় করো
তোমার মাঠে মাঠে
তোমার ফসলের কান্তিতে
আমার জঠরের যাবতীয় ক্ষুধা
তোমাকে দু’চোখে পান করবো
এই বিভূতিতে।



রাত একটা পনেরো মিনিট
.................
ফাঁসির কাঠে ঝুঁকে রইলাম এবং নিঃশব্দে দীর্ঘ শ্বাস
প্রশ্বাস আমার পাকস্থলি ঘুরে আসে
মায়ের চুলের গন্ধ মনে আসে
শিশুদের কথা ভাবি কল্পনার
এত সুন্দর আমার শিশুরা আবারও জীবন পেতে ইচ্ছে হয়
মনে হয়
সুদীর্ঘ আদিম হতে এই যে মানবযাত্রা
এর শেষফল এই শিশু
যতনের হীরামণি !
বর্ষা জানালায় ভিড় করে স্মৃতিচারণে।
এখন কুয়াশায়-
চাদরমুড়ি ভাঁপা পিঠা
জেনারেল আমার মৃত্যুযন্ত্রণা বেশিক্ষণ স্থায়ী না হয়
জেনারেল দ্রুত; দ্রুত করো
আর আত্মায় ভর করে চলে যাবো
নিঃশব্দে অস্পৃশ্যালয়ে
ধ্র“বতারা দেখে
কখনও ডানে ভর করি কখনও বামে
আর আমি তো সূক্ষ্ম সুতোয় ভর করে
টলে টলে হাঁটি
ধীরে খুব ধীরে হাত সামলে নেই
উৎপল আমায় জানিয়েছে এমনই হয়
তবু আমি সমুদ্রপাড়ে দীর্ঘ প্রলাপে প্রলাপে ভাবি
শেষ নেই
জেনারেল এসব কথা হয়তো আপনি জানেন
আপনার উপস্থিতিতে আমি বলে উঠি, ইয়েস্ স্যার
এবং হাঁটি, বাম ডান... বাম...
এবং আমি ফাঁসি কাঠে
জেনারেল ফাঁসির কাঠে আমার দীর্ঘশ্বাস
আপনি মনে রাখবেন।
আমার ফায়ারবক্সটা খুঁজে পাচ্ছি না
জেনারেল সিগারেট
জেনারেল ম্যাচটা ধরুন
আমার হাতটা উড়ে গেছে।
জেনারেল মাথায় আমার নিকোটিনের আহ্বান
কে জানে জন্মঘোর পেয়েছে বুঝি
তবু ভালবাসি
হাত থেকে সিগারেট খসে পড়ে
জেনারেল আমি অজানায় কাঁপি
জেনারেল আমি অজানা
জেনারেল প্রধানমন্ত্রী আমার খবর রাখেন
জেনারেল বিরোধী দলীয় নেত্রী
খুব শাসিয়ে গেলেন আমাকে
জেনারেল তবু সিগারেটের অবশিষ্টাংশে
ঠিকই চুমুক দেব
হয়তো খাবো আর এক কাপ চা
হয়তো জোর করে বলবো, মামস্,
বলো না স্কুলে কি হলো ?
লাবিব, আসো আরও কিছুক্ষণ বালু-ট্রাক ভরি
জেনারেল আপনার হাতের স্পর্শে
জোনাকি পোকা নিভে গেল
জেনারেল আমি
কখনও চোখের জল
দেখাবো না কাউকে
বাঁশি বাজে খুব
বাঁশি বাজে খুব
আমি সুরের পাশে কাত হয়ে শুয়ে পড়ি
জেনারেল এমন হয়
আমাদের অর্থ্যাৎ কবিদের
আপনাদের হয় কিনা জানি না
এখনও রাত জাগা কতটুকু স্থির হবে
স্থির করতে পারিনি
এখনও ভোর কতটুকু হবে স্থির করতে পারিনি
প্রায়ই আমি কিছুই স্থির করতে পারি না
বুঝলেন জেনারেল
আমার হয়, আপনার মত জানাবেন
আপনার সাথে
দুপুরের খাবার খেতে খেতে
মাংসের পেশি খুব ধীরে ধীরে
চিবুতে চিবুতে আমরা
রাষ্ট্র-বিপ্লব নিয়ে ভাববো না হয়
ভাববো আফগানিস্থান অতীতে কিংবা
বর্তমানে কতটা স্বচ্ছল আছে
আর পিপাসা
রাত যত গভীর হয়
আমার কণ্ঠনালী বেয়ে নামে পিপাসা
পিপাসার পুত্র আমি
বাবার নাম আকাশ নীল
এসব কথা যদি রাষ্ট্র হয়ে যায়
খুব একটা ভাববো না আমি
বরং ভাববো
এ বছর বোমার আঘাতে কতজন মানুষ পঙ্গু হলো
ভাববো; হয়তো কিছুই ভাববো না
বিবশ হয়ে বসে দেখবো
চড়–ই বাঁধে বাসা
প্রান্তে আমার ঘরের
শালিকেরা উড়ে গেছে কবে বহুদূরে।



আমি আসছি
...........
আমি এমন বিকল অসুস্থ নিকট কারাগারে
ভাবছি প্রিয় বন্ধুদের সঙ্গহীনতায়
যারা জানে কোন এক নারী প্রিয়তার কথা
অথচ মুখ ফুটে বলি নি কখনো
তবু না বলা কথাও রাষ্ট্র হয়ে যায়
প্রসঙ্গ হয় আমার মৌনতা
যাকে কিছু চোখ ভাববে বোকামি
এ নিয়ে আমার কোন উদ্বেগ নেই
দ্বিতীয় যে নারী সেও নিরাপদ দূরত্বে
খোঁজ রাখার প্রয়োজন মনে করেনি
তৃতীয় ভাস্করের সুঠাম বন্ধনে
হয়তো ভালো আছে
আমি কারাগারে নিঃসঙ্গ একাকী
নারী তুমি সত্ত্বায় তবু যোজন যোজন দূরে।
মিথ্যা বলবো না আমি প্রেমেই পড়েছিলাম
যে প্রকরণে আমি প্রতিবার নিহত হই
রেনট্রির ছায়াবৃক্ষ পথ আমাকে সেভাবেই
বিমুখ করেছিল।
আমার প্রেমের পরিধিতে এক চুরনিও ছিল
ছিল মাদকাসক্ত।
নব জাগরণে যারা জেগেছিলো
তারা কী ভুলে গেছে আহবান
কবিতায় ঈর্ষা আমি প্রত্যাখ্যান করেছি
মেনেছি শূন্য অতিক্রম করবে
গত সহস্রাব্দ
প্রতিশ্রুতি দেবে
নতুন সহস্রাব্দ
আমরা সুন্দরের উপাসক
ঋণ গত শতাব্দীর
ফেলে আসা শতাব্দী তোমাকে ভালবাসি।
সীমানা
মারজুক রাসেল, ভালবাসি তোকে (আপনাকে)

উড়বো উড়বো বলে আমার
ওড়াই হয় না
জগতের বহু ভেলকি আমার চোখে
আমার চোখে হাজার মানুষ
ভিড় ঠেলে ভিড় ঠেলে
সেই করে জরায়ু প্রান্তর
থেকে আমার সীমা
আর আমি অসীমের সাথে
মিলবো বলে
আমার জঠরে এতো ক্ষুধা
তবু গুরু আমার আর ওড়া হয় না
নিজের ডানার প্রস্থ দেখে
যখন নিজেই বিহ্বল
তখনও আমার মুক্তি হয় না
আমি অনেক দুপুর পেরিয়ে
তোমার সিথানে
এবং আমি মৃত সূচকুমার।




রজনীগন্ধা
............
ভীরু আমি
অধ্যায়ে অধ্যায়ে পৃথিবীর পাঠশালা
সূক্ষ্মতা আজকাল বড় ভয় পাই
যে বন্ধনে আমি
অসীমের বাঁধনে
তার রূপ আমি
লোকালয়ে ভয়েই বলি না
আমার সসীম
অসীমের উচ্চতায়
ভয়াবহ কলরোলে
হঠাৎ ইউ টার্ন
নিচে এখন নিচে নামতে ভালোলাগে
দোকানপাট, দরোজা, দেয়াল
রাতের জলোচ্ছ্বাসিত মার্কেট
এবং নারী খুব প্রিয় বিষয় এখন
তবে আমি ভিয়েনায় আবারও গিয়েছিলাম
তোমার খোঁজ পাইনি
বন্ধু শেতপদ্ম
তবে ভিয়েনায় পথে পথে
তোমাকে খুঁজিনি
কিছুতেই
খুঁজেছি রাজধানীর রাজকীয়তা
ভিয়েনার লোকালয়
আমার কথা জানে ?
জানে ভীরু- আমি ?
তোমাদের ভিনদেশের
লৌহ কপাটের বাইরে অবাক হয়েই তাকিয়েছি
হে ভিয়েনাবাসী
চিরমানবের সাযুজ্য আমি জানি
তাই ভিন্ন কিছু কিছুতেই ভাবিনি।



বসুন্ধরা
....

ঘাম মিশে যায় পথে
পথে ঘাম
গাছগাছালিতে পাখির মুখরতা
দূরে মেঘের আকাশ চিলের ডানা
নগরযন্ত্রের ভারে নুয়ে পড়ে প্রকৃতি
সারাবেলা আলো-ছায়ার খেলা
বীজ বোনে প্রতিচ্ছায়া
আমি নিজের কবরের পাশে বসে থাকি আর দেখি
মার্বেল দুপুর। জাতি-উপজাতি ভেদ। ভেদে আমার মন নেই।
মাঠে ধূলোখেলা।
প্রিয়তমাসু তোমাকে লিখছি, আসব আমি
ডানপিটে এক বিকেল পেরিয়ে
যেখানে সূর্য করে মেঘের সাথে খেলা
বসে থাকি নির্জনে কোনও এক পাখিবেলায়।


কবি ও কল্পনা
..................
বিবর্ণ ইচ্ছেরা উড়ে যাওয়া গাংচিল
স্বপ্ন বন্ধনে আমি অলৌকিক শিকারি
ভাগাড়ে কাক ও কুকুরের লড়াই দেখি প্রতিদিন
আর পথে পথে ঘামের গন্ধ শ্রম ঐশ্বর্যে
খড়কুটো টেনে টেনে চড়–ইয়েরা বাসা বাঁধে
তবু আমার স্বপ্ন-ইচ্ছে বর্ণহীন হয় প্রতিক্ষণে
ওহো বিচ্ছিন্নতা !
আমাকে বিপুল ব্যাকুল করে তোলে
দূরে গাছ গাছালির ফাঁক গলে একফালি আকাশ
ওখানে মেঘ থাকে সারি সারি
জীবনকে বুঝতে না পারার কষ্ট
আমায় ছিঁড়েখুঁড়ে মারে
পোড়াদেশে পড়ে থাকি শবের আধারে।



পরিচয়
..........
যাইনি, পাব না বলে
তুমি নাই তবু থেমে থাকে না কিছু
রাত অন্ধকার
প্রভু ফিরছে নিজ বাড়িতে
বাইরের বারান্দার ঘোর
অন্তরালে যে থাকে
প্রকাশ হোক তার অভিনিবেশ
পথে পথে বিদেশি ভিড়
বিদেশি সোহাগ
নদী উতরালে গোলকানন্দে
বারান্দায় থেকো নয় জানালায়
আমি আসব তৈরি থেকো
বারুদ তার লোকালয় ছাড়ে না
দূর পণ্যের ভিড়ে
নারী-পুরুষ এক সাথে
মেলা হয়
চরকির আনন্দ
রঙের স্বাদ পাই
এই ভালো জাগতিক বন্দনা
ছবির বাজারে
আমি নাকি হাসির পাত্র ?
লেইস ফিতা লেইস
টুং টাং
দুপুরের ফাঁকা রাস্তা
দু’একজন মানুষ
বৈদ্যুতিক কাক
মালিকের বাসা
কেউ কথা রাখেনি
আমি রাখব
শিল্পপণ
আমার মন
দিঘীর ওপারে কুয়াশা
কুয়াশার অন্ধকার কৃষ্ণচূড়া
ডাল মেলে আকাশে
দূর শূন্যে
শূন্যপারে আমাদের জমি-জিরাত
ভাগ-বাটোয়ারা
ভোগ-দখল
আমি ভীরু আমি পলাতক
তোমরাও কাপড় মানো!
অবাক আমি
হাঁটতে হাঁটতে আমি
প্রেসিডেন্টের বাড়ির সামনে
ভাবি,এখানে তো আমার আসার কথা নয়।
তবু কি করে পৌঁছে গেলাম
দূতাবাস
আমার আবাস ?
চিঠি এলো
আজ বিকেলে
ভালো আছি ভালো থেকো
রাতের আয়নায়
বিব্রত, নাকাল আমি
নিজেকেই নিজে ভালোবাসি
যদি কেউ না বাসে।
গাড়ির গতিপথে
আমি হেঁটে যাই
এখন বৈশাখ
এখন পথে কৃষ্ণচূড়া ফুটে থাকে
জ্যোৎøায়
আমি উদোম শুয়ে থাকি
এখনও ভোর হলে
পাখিরা আমায় ডাকে
দূরাভাষ দূরে দূরে
তারও থেকে বহুদূরে
আমার মন থাকে
মনে মনে কত কথা
প্রাসাদোপম বাড়ি
আমি তোর কারুকাজ
ঝুলে থাকা টব
আঙুর বাগান
গোলাপ লতা
চুলের ফিতা
অগ্নিবালক আমি
তুমি নক্ষত্রকন্যা
কাল যাবো
দিঘীর শিথানে
রোদে পোড়ে মোমদেহ
জলের কলতানে
ভাসাব এবার গা
আমার বিভা।



অন্ধকার গলিপথে
.............
দিনে দিনে প্রতিরূপের হাত শক্ত
কী এক অন্ধ জোয়াল কাঁধে
চড়ে বেড়াই চরাচরে
দু’’’’চোখে স্বপ্নের সুরমা মেখে
রাতে, না কোনও বিরহ রাত নয়
শাহবাগের প্রেম
এখনও ছাড়তে পারিনি
শব্দ পেলেই মন উচাটন
প্রবল বোধের মুখে
অন্ধকার অন্ধকার রাত্রি পেরিয়ে
কিছুটা ভোরে
কুয়াশায় করাত চালিয়ে
কিছু মৌ পেরে আনি
শব্দ কুড়াই
নিকটে আষাঢ়ের রাত্রি
আমি তার
বৃষ্টি শব্দ ছেনে
কিছু সুর তৈরি করি
রাখি তার দমের খেয়াল
নায়িকার কথা মনে পড়ে
অনেক অনেক গাঢ় অন্ধকার
পেরিয়ে
কিছুটা স্বাচ্ছন্দ্যের রিকশাভ্রমণ
আর্কিটেক্ট
রেখায় রেখায় হেঁটে ভাবি
যেখানেই দাঁড়াই পৃথিবীর মূলত কেন্দ্রে
এবং গ্যালাক্সির অখ্যাত পাড়ায়
মস্তিষ্কের আত্মপ্রসাদে
বুনছি পাটি
ফিরে আসবো
রাতও যদি অনাস্থায় ভাবে
ভোর আর আসবে না
তবে আমি সূর্যকে
ছিপে বেঁধে তুলে আনবো
আমার গোলার্ধে
রাতের অভ্যন্তরে
স্রোত
যেন বা নদী বয়
শিরায় উপশিরায়
ড্রাকুলা।
কাল আমি মোম
পোড়াবো সূর্যদেহে।



সত্য
...
তাইতো ভাবো তোমরা সত্য নয়
তাদের ইশারা বুঝেছি আমি, শুনেছি
পানকৌড়ি উড়ে গেছে জলের ভেতর
সবজি ক্ষেতে ফুটেছে ফুল
আর মাছেরা পথে পথে বেয়েছে দাঁড়
পার করি সবাইকে পারাপারে
ভেবো না সংসার বিষাদের চার দেয়াল
ফিরে আসবো যে কোনও দিন
তোমাদের উৎসবে।



আমাদের পোশাক, কমরেড
.................
শৈবাল ঘরে অবিবাহিত জীবনযাপন
আর মেক-আপ কি আড়াল আনে
আমিও আড়ালের সন্ধানী
রেভুল্যূশন অ’র ডেথ
মৃত্যু যে দুঃখ আনে
ওরকম একটি দুঃখ
আমারও তৈরির ইচ্ছে
নির্লজ্জ গোপন প্রাণে।



বাস
....
বহুপথ আমি উদ্বিগ্ন প্রান্তরে
জীবনের অঢেল পিচ ঢালা পথে হেঁটেছি
গাভি গরু উঠোন দীর্ঘ শস্যক্ষেত
যেন মাইলস্টোনগুলো বিভ্রান্ত, এই বাংলাদেশে
ঘুমিয়ে পড়ি কাঠের বিছানায়
এই ওঠ্ ওঠ্
ভয় পাই আমি
এই যে আমি অথচ আমাকে জানে না
যেন বাংলার মানুষ
তোমার ঠিকানা কোথায়
নাম কি তোমার
বাবার নাম
খাও কি
একদিন সূর্য এসে পাশে দাঁড়ায় আমার
ছায়া দেয় আলো দেয়
হয়তো মানুষ চেনে না, চেনে সূর্য
সূর্যের দীর্ঘ ছায়া
অথচ নদীর কিনারায় ঢেউ ওঠে
জানতাম, জানতাম নদী
কচুরিপানাসহ তোমার চোরা স্রোত
টেনে নিয়ে যেত গভীর অতলে
কথাটা বিশ্বাস করি
মুখে হাই তুলে আমি
অসংখ্য আত্মা মুক্ত করি
মুক্ত করি তাদের বেদনা থেকে
এই যে মানুষ কথা বলে আমারই ভাষায়
অথচ কি পেয়েছি আমি
অসহ্য বেদনার উপহার ছাড়া
ভাষার অসহ্য নির্যাতন ছাড়া
ভালোবাসি তবু ভাষা
কেউ আমার হাত নিয়ে যায়
কেউ বা পা
কেউ মাথা, মাথার চুল
নখ, দাঁত, জিভ, চামড়া, রক্ত, কিডনি
নাড়িভুঁড়ি যত অন্ত্রনালি
একদিন আমি ভাবনাকে
মিলতে দেখি বস্তুর সাথে
হতভম্ব হয়ে পড়ি
বস্তু আর জীবের সংকেতে সংকেতে
বিপন্ন বোধ করি
এভাবে নিষ্ঠুর আর বিপন্ন মানুষ
কখনও দেখিনি
আমি হিন্দু কি মুসলিম সেই প্রশ্ন
আজ আমার কাছে প্রশ্ন নয়
মনে হয় মানুষ আমি
অনেক সংশয় বৃষ্টি আর ঝড়ে হেঁটে
এই সিদ্ধান্তে আমি স্থির




প্রত্ন সাম্রাজ্য
(তসলিমকে-যে আমার কবি, প্রথম পাঠক ও পাথর সমালোচক)
.....................................
ধানের অজস্রে ভীত গোলা
প্রতাপশালী মাছের নদী
আর গাভীর দুধে তটস্থ গোয়ালা
পরিব্রাজক ইবনে বতুতা, আল-বেরুণী কিংবা হিউয়েন সাং
পৃষ্ঠাজুড়ে সে রাজ্যের যশ প্রতিপত্তি।

অথচ প্রত্ন গবেষণা

খুঁড়তে খুঁড়তে জেঁকে বসে
অতিকায় নস্টালজিয়ার ভাইরাস
সিংহাসনের জীবাশ্মে মুকুট রাজসভা
মন্ত্রী আমত্যবর্গের কুর্নিশ ক্যানভাস
নূপুরের মমি অন্দরমহলের অন্তর চিরে
বিলাসব্যসনে সজ্জিত ত্রিভঙ্গী-রাজবালাদের
সুগন্ধি স্নিগ্ধ ছায়ায়
অথচ আজ মাকড়সার স্থিতি
শ্রূতিবধির নীরবতা
তুব পুনরুত্থান সাদা কাফন
রামায়ণ! রামায়ণ!
কবর ফেটে উঠে বসে কালের খড়গ্
বিচার হবে যত সীতাকাহন
হাজার মুদ্দারের পাশে বেজে ওঠে, বেঁচে ওঠে
ক্ষীণ কৃশকায় সত্যদ্রষ্টা কবিকণ্ঠ :
হয়তো এতো মহিমান্বিত অলঙ্কার
সে রাজ্যের ছিলো না
তুবও তো রাজ্য ছিল, রাজা।



একা
..........
একাকীত্ব বোধ তৈরির অনেক আগে থেকেই
আমি একা
একা দীঘি একা ঘাট
একা নদী একা পথ।
একা রাতে একা পথে
একা এক একা রথে
পৌঁছে যাই ঈশ্বরের গৃহে
আর কথায় কথায় জেনে যাই
ঈশ্বরের অসীম একাকীত্বও
আমার একাকীত্বের কাছে একা।



হে শূন্য
.........
সাধ করো হে শূন্য আমাকে
পথ চলতে।

এমন রাত-
গা ছমছম যেন গাঁয়ের পথ
তুব ধ্রূবতারা মেনে পথ চলি।
পথে পথে অন্ধকার জ্বলে ওঠে
অন্ধকারে থাকি অন্ধকার মাখি অন্ধকারে ঠাঁই
অন্ধকারে দেখি
থাকেন তিনি আলোকিত সাঁই
এ খেলায় বড় মজে উঠি, দারুণ পুলক
শান্তি চেয়ে আমি ধনুক প্রবণ।



গোধূলি দহন
.........
ছুঁয়ে দিলে
আর সহসা সোডিয়াম প্রহেলিকার পেট কেটে
ছড়িয়ে পড়ে দুধজ্যোৎস্না।

ঠাস-বুনোট এ শহর গলি-উপগলি
আজ রেখায়িত ছোট ছোট জ্যোৎøানদী
এখনও মিহি জ্যোৎস্নায় লেপটে যাচ্ছে
হঠাৎ বাতাস
জানালার শার্সি ছুঁয়ে
জ্যোৎস্নার মাদুরে দু’জন ছায়া গোধূলি দহনে
নিখোঁজ আমাকেই পাই
তাদের আত্মায়।



চন্দ্র ও সূর্য
........
কী এক অন্ধ যাদু টানে
নির্বিকার আমি
পৃথিবী বিমুখ
স্বার্থপরতার প্রিয় শিকার
শিকারি হতে চেয়ে
নিজেই শিকার

চন্দ্র ও সূর্য
পৃথিবীর শেষ বিচারে
দুঃখ শিকার সত্ত্বা
কঠিন প্রলোভন
বন্ধুগণ প্রিয় শিশুগণ
মৃত্যুযন্ত্রণায় যখন
হেলে পড়ি
ভাইয়ের পাশে
তখনও কবিতা প্রিয় আমার
মানুষ বলে কর্পোট্রনিক সুখ দুঃখ
বুদ্ধির প্রজোরে

যারা আজও প্রকৃষ্ট
তাদের সম্মুখে তুলেছি হাত
মুক্তি দাও
আমি প্রতিবন্ধী।



দোলনা
..........
কিছুতেই অন্যরকম হতো না
যদি বায়ে ভর করে হাঁটতাম
তবে ডানেও একই ফলাফল হতো
কিছুতেই অন্যরকম হতো না
অনিবার্য আমার পায়ে পায়ে হাঁটে।



মাটিলগ্ন রুগ্ন কুয়াশা
.............................
সাপের হাইয়ের মুখে ক্ষুধায় ক্ষুধায় ক্ষুধা-মন্দা ভীষণ
শোন ধ্যান, ডাকছি তোমাকে
লালার এসিডে পোড়া সাদা চামড়া
আমি হাঙরের পাকস্থলী থেকে
ডাকছি তোমাদের-
ডুঁকরে ওঠা হু-হু কান্নায় ঘুঘু দুপুরে
শুকনো পাতার পতনশীল অস্তিত্বে।
ডাকবাক্স খোলার সময় এসেছে
পাওনি কি আজো সেই চিঠি?
বছর হাজার আগে লেখা

সঙ্গমরত প্রণয়ের পৈথানে
অজড় আত্মা আমার পুড়েছে
এতোটা কাল
আজন্ম তৃষ্ণায়
জন্মেছি এই আজ
কোটি শুক্রাণু পিছনে ফেলে
শুভ্র দম্পতির প্রার্থনায়।
ইনকিউবেটর কেটে বেরিয়েই দেখি
ছোবল মেলেছে বাসুকী নাগের ফণা।
এই যে পাখির ডানায়
একদা ডাইনোসর
বন্ধু হও সখি!
ছুঁয়ে দাও!
কি বাঁশি বাজি দেখো বৃন্দাবনে
গোপিনী ধন্য তুমি রাধা
কামারের হাঁপরে জ্বলা
আঙরাঙা চুম্বনে
সাজাবো রাত
উষ্ণতায় ভোর ভুলে যাবে পৃথিবী।
এসো পৌষ-লেপ্টানো লেপ-রাতে
পায়ের নিচে পৃথিবী গোলক, ঠেলে দিয়ে
মেলে দেবো ডানা
দুই ছায়াপথে।
মাথায় পালক গোঁজা
আদিবাসী যুবার নৃত্যে
এসো ডানার পাহারায়।




আলাপ
-------
তোমাদের সাথে আমার দেখা
হবে লাও হে মাহফুজে
আমার অবিরল কন্ঠস্বরে
শুনতে পাবে আমায়
এ ভর্ৎসনা হবে
তোমাদের প্রতিবাদহীনতার
মজলুমের নিশ্চিত অরক্ষায়
তবু ভালবাসা প্রতিদিনের
বিশ্বাস রেখো যে কোন বিনষ্টের
বিরুদ্ধে আমি
বিরুদ্ধে আমি নির্যাতনের
যদি যুদ্ধ আসে
মনে রেখো
আমিও অংশ নেবো
যে কোন অন্যায়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধে
আর আমার জাতির সার্বভৌমত্বের
যে কোন হুমকিতে
আর তার দেহভূমিতে
আমি অভিযোগ করবো
তোমাদের বিরুদ্ধে।



হার্ড টক
.....
মুক্ত থাকতে যেয়ে আজ বন্দি
রাত জাগা পাখি
বিখ্যাত নন্দনে আমি চাই
আবারও জমি
নেত্রের লেখক
আজ বহুমুখী প্রতিভার সন্ধানে
পূবের বারান্দা কি
আজও আমাকে
মনে রাখে
মাঝি তোর অনেক গল্প
অবৈধ প্রেম
তবু দেবদাস আর দেখা হবে না!
কুমার নদী!
তোমার সাথে দেখা হলো না
আমি তখন বিভ্রান্ত পথে পথে জন সন্ত্রাসে
তবু তোমার তাতে কি আর যায় আসে
অথচ নক্ষত্র ছিলো
আমাদের আড্ডায়
কেমন আছে অমৃকাপুর
আমি তার মানবিক সাহায্যপুষ্ট
কোমরপুরের প্রতিভার খোঁজ জানা নেই
দেখা যেতে পারে
বাংলা সিনেমার
অশ্লীলতা
রেঁনেসাস নিয়ে কিছুই ভাবিনা আর
রেঁনেসাস গৃহবন্দি
কীর্তনখোলা নদীতে
আমাদের স্নান
-বৃথা নয়।
বৃথা নয়
কাঠবিড়ালি
পাহাড় কতটা ঝড় পেরিয়ে
তোমার কাছে পৌঁছেছিলাম
জানা হয়তো নেই তোমার
আমি হাওয়া হতে রঙধনুর
ডাক পাই
আগুন জ্বলে গ্যারেজের
শুয়ে থাকি টঙে
এখনও রোডে গল্প চলে
আমি অনুপস্থিত।
আমাকে মেলায় নিয়ে যেয়ো
নিয়ে যেয়ো মঞ্চে
আমি তোমাদের
ভালোবাসা চাই ঈর্ষা নয়
এমনকি ঘৃণা
চুলের অহংকার নয়
মুখশ্রীর সৌন্দর্য নয়
ধনী হতে চাই হৃদয়ের সৌন্দর্যে
এ পাড়ায় পাখিরা আমায় চেনে
তোমাদেরও
আমি তোমাদের জানাতে চেয়েছিলাম
সহজ সৌন্দর্যের ঐশ্বরিক গুন
তবু ভাই ও বন্ধু
বুকটানে আমাদের
যৌথতা কী করে
অস্বীকার করি।
কী করে অস্বীকার করি
আমার পতন
যত প্রার্থনা।



পতন ও প্রার্থনা
.........
যদি আমার উড়বার পক্ষে একজন
মানুষও না থাকে
যদি অবিশ্বাসের ছায়া দেখতে দেখতে
আমার বিশ্বাসের ভিত কেঁপে ওঠে
তবে আমি কার কাছে করবো অভিযোগ
মন আমার
লোকে লোকে হিংসার থাবা দেখে
আতঙ্কিত আমি
কার কাছে খুঁজবো
আশ্রয়ের প্রেরণা
লক্ষ রাতের প্রেরণা, কবিতা, প্রেয়সী আমার
আমার কাছ থেকে অনেক দূরে নারী
আমার কাছ থেকে অনেক দূরে সুরা
মগজের ঘুণপোকা
কুরে কুরে খায় আমার
মেধার ধার
আশা
ছেড়ো না আমাকে
পৃথিবীর যে ভ্রুণে জন্ম আমার
ফিরেছি তারই দিকে আবার
মানুষ তোমাকে দেবো
বলে রাঙা সন্ধ্যা
স্বপ্ন নির্মাণের
আমি কারিগর।
তারই অতলে লক্ষ যুগের
মুদ্রার শোক
বৃথা বন্ধন
আগুনে পুড়ছি আমি
যুগান্তের নির্মাণে
ভুলে ভুলে শোক ভুলে
আমি গেয়েছি প্রেরণার গান
স্বপ্নের নির্মাণ
বুকে যে ব্যথা
যে কথা
বলিনি কাউকে আমি
আমি শোক কুলের প্রাচীন কবি
যুগ্ম আধ্যাত্মিকতার নিপুণ কারিগর
অন্ধবিশ্বাস থেকে অবিশ্বাসে
ফের নিজেরই তৈরি
বিশ্বাসের দিকে তাকিয়ে
মহাজাগতিক সাফল্য আমি
পেয়েছি সত্যি
কিন্তু সে কথা শোনাবার
মানুষ জোটেনি
এখনও
কিংবা মানুষ আছে
দূরের মানুষ
কি লাভ হয় জানি না
এই অনর্গল আত্মরতিতে
তবু পৃথিবীর দিকে ছুঁড়বার
মতো আর কোন
ভাব আমার নেই
ফলে ক্রমশই সংকুচিত পৃথিবীর
জবুথুবু রাজা
নিকোটিনের দুর্ভিক্ষে
এতটা কাবু
ভিতরের মহাজগত হয়ে ওঠে
আরও আরও কোনঠাসা
ফলে মানুষ কী চাও যার বিনিময়ে
পাই কিছু স্বাচ্ছন্দ্যের স্বাদ
এই নাও কিছু অক্ষর সম্বল আমার
কিছু যাদুকরী ছবি
আর এক খন্ড কিতাব


পতন ও প্রার্থনা-২

১.
তবে তোমাকেই বলি যাবতীয় ব্যর্থ গান ব্যথার কথকতা
চোখের সামনে রাত্রি হয় ভোর যন্ত্রণাকাতর
যেখানে আমি তার সাথে দেখা হবে কবে ?
ভোর দাও প্রভু
দেখা দাও যাপনলিপিতে
যেখানে উত্থান যে কোনও পতিত পার্বণে
তোমারই আশায় দিন বয়ে যায়
ঝরাপালকে ঝরাপাতায়।

২.
তবে এসো তুমি
পেতেছি বুক হাত বাড়িয়ে
মিলন হোক কোনও ঊর্ধ্বলোকে
যেখানে শুনশান বাতাস কথা কয়
রোদ লুটিয়ে পড়ে পায়ে
ভুলিয়ে দাও জাগতিক যন্ত্রণা
প্রতিদিনের রক্তঘায়ে ছিটানো নুন।

৩.
পায়ে পায়ে বিভ্রম জ্বর
জ্বরে ঘোর কাটে না এমন দিনে
দিনগুলো উধাও হয় প্রলাপে প্রলাপে
প্রলাপে কাটে রাত
কাটে না সময়
সময় লিখে যায় নিজস্ব ইতিহাস
কথা কও
কইবো তোমায় নিজ বেদনাতপ্তরোদ
তুমি তো জানো যাবতীয়, তুমিই জানো
তবে কেন এ নিষ্ঠুর পাশাখেলা
অস্তিত্বের সবটুকু বেদনা দিলাম তোমায়
রহস্যময়তার এত ভার সইছে না যে আর, তুমিও
অংশ হও আমার যাতনার।

৪.
জানলার পর্দা পেরিয়ে চাঁদ উঠেছিল বারান্দায়
দালানের ভিড় ঠেলে উঁকি দিয়ে ডাকে, আয় আয়।

রাস্তায় প্রহরীর বাঁশি বাজছে
রাত অনেক ঘুম নেই চোখে
চারপাশে ক্ষমাহীন নীরবতা
এন্ড্রোমিডা, ঘুমিয়েছ
তোমার ঘুমদেশের চুলের পাশে দাঁড়িয়ে
বলি কিছু নীল ঘুম কিনে দাও।

৫.
মেঘরঙ সেজেছিল জল
জলে হাওড় ঢেউমাতাল
এমন বৃষ্টিরঙে মনে পড়ে তারে
মেঘরঙিন সাজে
এ বৃষ্টিবেলা যদিও দূরে
মনে পড়ে স্মৃতিপ্রান্তরে
তারে বসা ফিঙে আর চড়–ইয়ের ভিড়ে
অস্তগামী সূর্যের কমলা রঙ
ভিড়েছিল চোখের মনে।

আমি তো নেমেছি সখি জলে
তোমারে ভিজাব বলে
গোটা শহর মুখ গুঁজেছিল হাওয়ায়
হাওড় ঢেউ তুলেছিল শহরে
বন্ধু টেনো না রিকশার হুড
বৃষ্টিপরীর গানে ভিজুক আজ
পুরোটা শহর।

৬.
বলো কোথায় ফাঁকি
তুই যদি মন খারাপ করিস
কোথায় যাই
আজও আমি বুঝিনি মানুষকে
মানুষের অন্ত্যস্থ হৃদয়।

৭.
দূরে রেখে দূর থেকে তাকাই সত্ত্বায়
কোণে দূরত্বে উচ্চতায়।
হাত রাখি মেধায়, আত্মায়
মননেও হাতাই কিছুক্ষণ
একটা শিশু পড়ে থাকে ডাস্টবিনে
অক্টোপাস হাঁটে, জড়ায় ছাড়ে
অন্যহাতে শূন্যতা হাতড়ায়
অন্ধকারে যুবক খুব একা-
চোখে মুখে কালি মাখে
অদূরে প্রেম শুয়ে থাকে ডোমের সেলাইয়ে
স্ট্রেচারে তাকে নেবে না
কবর খুব নিকটজন।
বৃদ্ধ বলে আমাকেও আসতে হয়, তৈরি থেকো
সিংহ দেখি নির্জন ঋষিপায়ে নক্ষত্র মেপে হাঁটে
কোথাও বৃত্ত আর বহুভূজ দুই তারে যুক্ত থাকে।

৮.
নিজের ঘনিষ্ঠে মগ্নতা পুষে রাখি; পুষতেই হয়
অদূরে ভূমিধ্বস- ঝড়ে মারী ও বন্যায়।
বলি না, পর্দাগুলো ছেঁড়া দুমড়ানো বোঁচা থ্যাতা টান
তাকালে অগণিত আলোকবর্ষ হয়
বললে পৃথিবী ঘুরে আসে।
অনেক তরঙ্গ আর গুঞ্জন ভাসে- অকাজেই বেশি
গৌণই মুখ্য রাখে সবকাল
মহাকাল সংখ্যালঘু খুব নিঃসঙ্গে সুস্থ হয়।
আপন তরঙ্গ প্রস্থ না পেলে
ঘুঘু তুই ডাক দুপুর করে, আত্মার গভীর চালে
মাছরাঙা ধ্যানে থাকো নুয়ে পড়া পুকুর ডালে
চাঁদ ভাসলে ঠোঁটে নিয়ে উড়ে যাও অন্ধকার
ভোর জাগো সূর্যে।
সূর্য কি নিজটজন- প্রতিবেশি অন্তত
বাড়ি থেকে আট মিনিটের পথ
তবু সূর্যই আগুন লাগায় অগোচরে।
চন্দ্র কি আত্মার স্বজন
জোয়ার-ভাটা বাইরে নয়, ভেতরেও হয়।
কিছু কিছু অনিবার্য অথবা ঘনিষ্ঠ সত্য
এ বাক্যে স্বস্তি ও অস্বস্তি সমান্তরালে হাঁটে

অনুমান নির্ভুল নয়
অনুমান সত্য হয়।
দূরের পথিক তবু দিব্য অনুমানে পথ হাঁটে
পথের কি গন্তব্য হয় !
পথ তো বৃত্তাকার কালও তাই
শুধু পোশাক পাল্টায়।

৯.
জলের ঢেউ ঢেউয়ের জল উন্মাতাল
হাওড়ের ক্যানভাসে গোটা শহরের মুখচ্ছবি
ভেসে ওঠে ভেলার মতো
মেঘের রঙে জলে হাওড়ের খেলা
শহরটা হা করে গিলতে আসে
জলার রঙের খেলা
ফতুয়া পাল তোলে এমন বাতাসে
পাল তোলে ডানার উচ্ছ্বাস।

সেতুর ওপর আমরা ক’জন ডানা মেলে
গাঙচিল হয়ে উড়ি।
নোঙরে রাখা বালু-ট্রলার ভরে নেবো একদিন
এই এইখানে উপচে পড়া ঢেউয়ের স্বাধীনতা
নগর থেকে হাঁফ ছেড়ে নিতে আসি আপ্রাণ নিশ্বাস
নগরে থেকে জল ভালোবেসে বুকে নিতে বাঁচার বিশ্বাস।

১০.
কী এক সর্বভুক তেলাপোকার মতো অস্তিত্বের ক্ষীণতা
অস্থির নিয়তি যেন পিছু ছাড়ে না
কিছু দেখে শান্তি নেই
কিছু ছুঁয়ে শান্তি নেই
দাঁড়িয়ে বসে শুয়ে কোথাও শান্তি নেই
শান্তি পেয়েও যেন শান্তি নেই।
১১.
পথহারাকে পথে নাও
বালুচরে জ্যোৎস্নায় একা পথিকের ছায়া
ছায়া হেঁটে যায়।

কোথাও আগুন জ্বলে ওঠে
আগুনে পুড়ে যায় গোটা প্রান্তর
আসমানে উড়ে যায় কবুতর
শুভ্র ডানায় রোদ পড়ে
শেষ বিকেলের রোদ
রোদে আমাকে পৌঁছে নাও বৃষ্টিলোকে।

১২.
কখনও দরোজা বন্ধ, কখনও খোলা
কতকাল চলবে এ নিরন্তর খেলা।
নতুনেরা আসে, কিছু সময়
ফের ফিকে হয়ে যায়।

চেয়ে থাকি, শুধু দেখা অথবা ফিরে থাকা
তোমারই ইশারায় চলে মহালোক
পিঁপড়ে হতে পাখি।

১৩.
জেগে উঠি স্বপ্নভ্রুণে
ঘুম থেকে জাগরণে
যে আমায় আঘাতে রাখে
প্রত্যাঘাত সময় আনবে
যেমন রাতের অন্তরাল চিরে
ভূমিষ্ঠ হয় ভোর।
কেন কান পেতেছো জাল
ত্রিভূজ ভেসাল
কোন সে রাঙা সন্ধ্যা
তুলে আনতে।

যদি সত্য ভাবো মিথ্যে নয়।

১৪.
পথিক জানি পথে হাঁটি ক্লান্ত পায়ে
জীবন টানছে সুরে সুরে
যদিও মন মরছে ঘুরে ঘুরে
পথে নাও আমার বেপথু
প্রভু হে জানি না তুমি কে
খেলায় কে হারে কে জেতে
তার জন্য নেই কোনও হাহাকার
তোমার পক্ষে জানি প্রভু
ঘূর্ণিবায়ু আর কতকাল
এনে দাও ভোর স্থির সকাল।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন