রবিবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০০৯

ওবায়েদ আকাশের সাতটি কবিতা





স্বপ্ন
........
আর আলস্য নামছে। শিশুসন্ধ্যা। ...অভিবাসী তৃণদের জন্য
ভয়ঙ্কর সু-সংবাদ হতে পারে তারও অগোচরে
তোমার প্রস্থানদৃশ্যে কে আমাকে শনাক্ত করেছে
নেহায়েত বজ্রাহত বলে
ছায়া দেখে ঘটে গেছে চন্দ্রিকাবিলাস
আজ রাতে এই চরাচরে
ঝিনুকবন্যার স্রোতে যে তোমাকে মায়াবহ্নি
সারা রূপে ঢেলে দিয়ে যায়, তাহার ব্যাকুল ধারা
অকারণ পরকীয়া পাঠ!

এইভাবে শুরু হয়েছিল শতচিহ্ন পোড়াঘর
সমুদ্র পেরিয়ে ভাসে
খরাগান... দীঘল শস্যের মাঠে
নির্বিচার কৃষিজীবী
মেতে ওঠে ব্যাপক বপনস্বপ্নে।


সম্পর্ক
........

তোমার-আমার সম্পর্ক ঘিরে
জনে জনে কত কথা ওঠে
যেভাবে বৃষ্টির দিনে উঠোনে-পালানে ওঠে
ডাঙর কৈ-মাছ
আর, তুমি-আমি এই কথা জানি
আজকাল, আমাদের সম্পর্কখানি-
চুপসানো বেলুনের মতো মুখথুবড়ে পড়ে থাকা
সাদাকালো প্রাচীন ইতিহাস


মেঘের গর্জন শুনে আমরা তো পড়ে গেছি
স্রোতশীলা হ্রদে-
এরপর, দেখা হলে কোনো চাঁদে-
আমিই কলঙ্ক আর তুমি তার আলো
অথবা তুমিই কলঙ্ক যদি
আমার তো সবকিছু কালো


আর ধরো, দেখা হলো কতশত প্রজন্মের পরে
আমাদের সম্পর্কখানি কালিঝুলি মুড়িয়ে তারা
জনে জনে বেড়াবে ঘুরে



জারুল, গোপনে গোপনে
....................
জারুল অভ্যস্ত আছে এই ঝড়-বাদলের পিঠে লিখে দিতে
নিজের ঠিকানা
সুরেশ্বর মাঝির কনিষ্ঠার বিবাহদিনে, উড়ে গেছে তার
মস্তকবিহীন শরীরের
আগুনে বিদগ্ধ ডানা

জারুল, ঘুম ভেঙে বসে আছে
আমাদের বিবাহিত জীবনের
ক্যাম্পাসের চারপাশ ঘিরে
গ্রহণের অন্ধকার নক্ষত্রগুলো
কেউ তাকে ফিরিয়ে দিয়েছে

কেউ তাকে ফেলে রেখে গেছে বিষণ্ন মেঘেদের কাছে
ভাড়াটে ঝড়ের তল্লাটে
অন্যায্যই ভেবে বসে আছে : গাণিতিক সম্বন্ধগুলো
পৃথিবীতে সুপ্রাচীন সভ্যতার ভেতর
চুরি হয়ে যায়
উড়ে যায় মাতৃদুগ্ধ - যে কোন বয়সী শিশুর
নাগাল এড়িয়ে
ঝুম ঝুম বৃষ্টিতে তাকে প্লাবনের মুগ্ধতা এসে তুলে নেয়

জারুল গোপনে গোপনে এতটুকু অভিমানী নয়



জনপ্রিয় হতে থাকি
.................
কদাচিৎ ভালো থেকে দেখি, ভালোদের জন্য একটি একটি বাড়ি... সাধ্যাতীত নারী... আর প্রথম প্রথম কাব্যগ্রন্থ মুদ্রণে পাঠিয়েছি।... চাঁদ উঠছে।... এখন আমি জোছনাদের জন্য কিছু একটা জন্ম কিংবা বিবাহ উৎসবে ভালোদের নেমন্তন্ন নিয়ে যাবো।... এই শহরের জোছনাদের জন্য কিছু একটা রফাটফা এখনো হলো না। পতিতালয় হলো ; নীল ছবি, পর্নো পত্রিকা থেকে নগ্নতার চিত্রমূল্যও খুব সস্তা এক সাবানের মূল্য।

এটা তো ভিক্ষুকের শহর।... আজকাল ভিক্ষুকবেশে ঘুরিফিরি বলে বাড়িওয়ালার মেয়ে দু’টো নিয়মিত ঘুমের পিল খেয়ে বাঁচে।... আমি এত যে বলি, ‘তুই আমার কন্যা হও না মেয়ে ?’ উরুর কাপড় তুলে যে মেয়েটি উনিশে এবার, ছবি আর বইয়ের স্তূপে ওয়াক ওয়াক বমি করে দেয়।... আমি তবু বলি, ‘আমার চিকিৎসক বাবা মাঝেমধ্যে বেড়াতে এসে প্রেমিক পুত্রের দেহে ফি সালের জ্ঞান ঢেলে যান।... মাকেও রেখে যান কাছে।’ হো হো হো... ব্যাপক মেঘের রাজ্যে কন্যাদ্বয় চশমা ও সূচ্যগ্র স্তন কাঁপিয়ে বলে, ‘আপনার জননী তো বিবাহিত মেয়ে ! আর এই কন্যারা ?’ আজকাল বিকেলের রিকশায় আমি নিশ্চিন্তে ভিক্ষুকবেশে ভালোদের বিরুদ্ধে বসবাস করি। ঘুরেঘেরে বাঁকাতেড়া পঙক্তি রচিত হয়। ক্রমাগত জনপ্রিয় হতে থাকি...


বৃষ্টি পড়ছে
...........
ঐদিকে, সীতাঘাট ধরে বৃষ্টি পড়ছে
শুল্কের বাজার পড়েছে, পদ্মায়
ভালো জন্মেছে ইলিশের পোনা

ধনেশের মেয়ের সম্বন্ধটি ভালোই ঘটেছে
পলকে রটেছে বাবা
মোটা ভাত মোটা কাপড় ক’জনার জোটে আর !

পরিশ্রমী গাভীগুলো বান উজাড় করে দুধ দেয়, প্রত্যুষায়
ভরে ওঠে কাঁচা সবজির ঝুড়ি - অলক্ষ্যে -
পাড়ার স্কুলঘরে ফি-বার্ষিক সম্মেলন হলো :
শিশুদের জন্য চাই প্রস্ফুটিত গোলাপের বাগান
স্বাস্থ্যকর খেলার সামগ্রী
দীর্ঘতম মাঠ

তোমার জন্য প্রবাহিত দ্বীপান্তরের হাওয়ায়
এ খবর পৌঁছে যাবে

একটি মাত্র ইলিশের বিনিময় হলে
মিটে যাবে সমস্ত পারাপারের দেনা


প্রাক বৈবাহিক
..............
একবার আমাকে একটি বিবাহ-উপযুক্ত মেয়ের হস্তাক্ষর পাঠিয়ে বলা
হলো, এই মেয়ে এতদিন জলেই বসবাস করেছেন ;
আর তার সাম্প্রতিক স্যাঁতসেঁতে প্রকাণ্ড শরীর রৌদ্রে শুকোতে দেয়া আছে।
তার হস্তাক্ষরে এই যে কোথাও মাত্রা পড়েছে বা পড়েনি,
আর এই যে যতিচিহ্নের কোথাও ভুল বা কোথাও সঠিক ব্যবহার -
এসব কিছুই নাকি মেয়েটির যথার্থ যোগ্যতা বা দোষগুণ যেটাই ধারণা করা হোক। মেয়েটির উচ্চতা আমাদের মাঠভর্তি জলের সমান, অর্থাৎ এটা আমার আন্দাজ করে নেয়ার কথা। যা হোক, আমি মায়ের কাছ থেকে পত্রমারফত এ সংবাদ জেনেই কিছু ব্যক্তিগত প্রশ্নপত্র তৈরি করেছি। আর ভাবছি, মীন রাজ্যের অধ্যয়ন পর্বে মেয়েটির দীর্ঘ বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে এসব প্রশ্ন খুব একটা কমন পড়ার কথা নয়। আর তাহলে এভাবে হস্তাক্ষর পাঠিয়ে এক জননীর কোনো অনাথ যুবকের এ মতো মন ভোলানোর কোনো মানেই হয় না। ভেবে দেখছি, আমার অপেক্ষার দিনগুলো কী উৎকণ্ঠার ! শীত কিংবা বর্ষাই আমার প্রিয় ঋতু হলেও ভাবছি, তাকে ভেজা জবুথবু নাকি শীতে কোঁকড়ানো দেখতেই বেশি আনন্দদায়ক হবে। আজ এই মুখর বর্ষণে ছাতা হাতে বৃষ্টি বাঁচিয়ে এমনতর ভাবনাগুলোই পোস্টাপিস অবধি পৌঁছে দিয়ে এলাম। আর তখনই আমার হঠাৎ মনে এলো - তাকে শেষ প্রশ্নটি করাই হয়নি যে, অবশিষ্ট জীবনে তিনি মীন ধর্মেই ফিরে যেতে আগ্রহী কিনা...



বাংলাদেশে একদিন ইংলিশ রোড নামকরণ হলো
...............................................
আমার নাম দাও শিবপোকা। শিবপোকা মানে, একটি নতুন পোকার নামকরণের ক্ষমতা।... তুমি করো দোয়েলের চাষ। দোয়েল কি পরিযায়ী নাম ? ইংলিশ রোডের কোলাব্যাঙগুলো সেবার বর্ষায় ছিলো সাদারঙ হয়ে। আমি জানি, এ প্রকার জলসাদা ব্যাঙ পৃথিবীতে কখনো ছিলো না। এমন ব্যাঙরঙ ধরে যখন ভোর হয়, আবার কৈবর্তপাড়ায় ভেঙে যায় রাজ্যের নিয়ম। কেমন আফিমগন্ধে বাজারের আঁশটের ভেতর আমি শিব শিব করে পোকা হয়ে উড়ি তোমার তালাশে।... তুমি করো দোয়েলের চাষ।... ভালো ছাইরঙ বোঝো।... মেটে কলসি, লাউয়ের খোঁড়লে কী গভীর সুর তুলে আনো। তোমাকে জানাই তাহলে, আমাদের ইংলিশ রোডের কোলাব্যাঙগুলো আমার জিহ্বার তল থেকে একদিন তুলে নিয়ে গেছে সমস্ত লালা। সেই থেকে সুরহারা হয়ে শীতল শস্যের মতো তোমাকে সযত্নে রাখি ঘরের নিভৃত কোণে। তুমি তো জানো, কতোটা বেসুরো হলে হাটের গুঞ্জন ওড়ে আকাশে বাতাসে

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন