রবিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০০৯

দুখী গণ্ডারনামা ০৩

হাঁটুপানির জলদস্যু
.............
ক্যাম্নেকী বুঝতে হলে পড়ুন দুখী গণ্ডারনামা ০১


পারমাণবিক বিস্ফোরণ ঘটলো। বিশাল মাশরুম চারদিক অন্ধকার করে বেড়ে উঠলো। চতুর্দিকে ছুটলো তাপের হল্কা, বিটা রশ্মি, গামা রশ্মি, ডেল্টা রশ্মি।

পৃথিবীর মানুষ ধ্বংসের আগে কয়েক সেকেণ্ড পার করলো মহত্ত্বের সাথে। প্রেমিক প্রেমিকাকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেলো, তারপর পুড়ে ছাই হয়ে ছড়িয়ে পড়লো চারদিকে। বাঘ চুমু খেলো হরিণকে, বেড়াল ইঁদুরকে, গরু গোয়ালাকে।

ভয় পেলো না কেবল দাঁতাল বাঁশখোর। কারণ সে জানে, তার গায়ের ছাল্চামড়াকে হার মানানোর শক্তি কোনো বিটা-গামা-ডেল্টা রশ্মির নাই। এ চামড়া তো হার মানায় ব্রন্টোসরাসকেও।

কিন্তু যদি গায়ের রং কালা হয়া যায়? দাঁতাল ঘুরে ফিরে আয়নায় নিজের দুধে আলতা গায়ের রং দেখে। নাহ, রিস্ক নেয়া যায় না। ত্বকের রং বাঁচানোর জন্য সে চট করে একটা ফ্রিজে ঢুকে পড়ে ইন্ডিয়ানা জোন্সের মতো। তার কিছুক্ষণের মধ্যেই তাপের হল্কা আর বিটা-গামা-ডেল্টা রশ্মির ঢেউ গ্রাস করে নেয় চারপাশ।

পৃথিবীর মৃত্যু ঘটে।

কিন্তু ওদিকে বাঁধে এক গেরো। ফ্রিজের দরজা আটকে যায়। ভেতরে আটকা পড়ে দাঁতাল বাঁশখোর। ঝুকঝুক করে চলতে থাকে ফ্রিজ, ভেতরে আটকা পড়ে জমে বরফ হয়ে যায় দাঁতাল বাঁশখোর।

এরপর কেটে যায় হাজার ব্ছর।

একদিন ল্যামডা সেন্টরাই নক্ষত্রমালার এক গ্রহ থেকে এসে হাজির হয় একদল পরোপকারী এলিয়েন। পৃথিবীর দশা দেখে দু:খে তাদের কানে জল চলে আসে। মূর্খ মানুষ হানাহানিতে মত্ত হয়ে কী দশাটাই করেছে গ্রহটার! তারা চটজলদি খবর দেয় তাদের ইনজিনিয়ারদের।

এলিয়েন মিস্ত্রিরা এসেই ঝাড়পোঁছ শুরু করে। নানা টেকনোলজি খাটিয়ে তারা যাবতীয় তেজস্ক্রিয়তা ঝেঁটিয়ে বিদায় করে। তারপর তাদের বীজ যাদুঘর থেকে খুঁজে খুঁজে সব গাছের বীজ ছড়ানো শুরু করে। একে একে ঘাস জন্মায়, বাঁশ জন্মায়, জন্মায় মহীরূহ। ফুল ফোটে, ফল ধরে, ওড়ে প্রজাপতি, বাদুড়, ডাকে পাখি, ব্যাং। মেঘ ডাকে, বৃষ্টি হয়, বাতাসে দোলে কৃষ্ণচূড়া ফুল।

এলিয়েনরা এক সংসদীয় উপদল পাঠায় পরিদর্শনে। তাদের নেতা এসে সব ঘুরে দেখে বলেন, বাহ বেশ! দারুণ! অহো!

হঠাৎ তাঁরা শোনেন, পাখির ডাক, ব্যাঙের ডাক, মেঘের ডাকের পাশাপাশি এক ক্ষীণ বদখদ ঝুকঝুক শব্দ।

তাঁরা এগিয়ে দেখেন, মাঠের মাঝে এক পোড়ো বাড়ি, তাতে এক ফ্রিজ। চলছে ঝুকঝুক করে।

তাঁরা এগিয়ে গিয়ে ফ্রিজের দরজা খুলে দেখেন, সেটার ভেতরে একটা ফ্রোজেন মুরগি, এক লিটার আইসক্রিম, আর বরফ জমাট এক অদ্ভুত জীব।

তৎক্ষণাৎ ডাক পড়ে বিজ্ঞানীদের। তারা এসে প্রথমে মুরগিটাকে চিমটা দিয়ে বা করে। তারপর সেটাকে গলায়। তারপর তার জিন পরীক্ষা করে তারা জানায়, এটা একটা মুরগি।

তারপর তারা আইসক্রিমটাকে চিমটা দিয়ে বা করে। তারপর সেটাকে গলায়। তারপর তার জিন পরীক্ষা করে তারা জানায়, এটা একটা আইসক্রিম।

এরপর তারা বরফজমা জীবটাকে চিমটা দিয়ে বা করে। তারপর সেটাকে গলায়। তারপর তার জিন পরীক্ষা করে বিজ্ঞানীদের মধ্যে ঝগড়া লেগে যায়। একদল বলে, এটা একটা গণ্ডার। একদল বলে, এটা ব্রন্টোসরাস। আরেকদল বলে, এটা বাঁশখোর।

সংসদীয় পরিদর্শক দল কড়া হুকুম দেয়, একে পুরোটা গলাও!

পুরোটা গলানোর পর পরিদর্শক দলের দলনেতা এসে জীবটাকে দেখে নাক সিঁটকান। এহ, এটা দেখতে এমন কেনু? কপাল নাই, ভুরু নাই, নাক নাই, ঠোঁট নাই, কেবল মুখে একটা বাঁশ গোঁজা! বাঁশ খেতে খেতেই ব্যাটা জমে গিয়েছিলো নাকি।

এক বিজ্ঞানী কানে কানে বলে, স্যার ভুল কর্ছেন স্যার! এটা ওর চেহারা নয়। আপনি উল্টোদিকটা দেখ্ছেন স্যার!

পরিদর্শক লজ্জা পেয়ে সোজা দিকটা দেখে নাক সিঁটকান। এহ, এর উল্টোদিকটাই তো চেহারার দিকটার চেয়ে ভালো ছিলো! যাই হোক, একে গরম করে কথা বলাও। জিজ্ঞেস করো ক্যাম্নেকী।

বিজ্ঞানীরা দাঁতালকে পুরোটা গলায়। তারপর তাকে জ্যান্ত করে।

দাঁতালের ঠোঁট কেঁপে ওঠে। সে চোখ মেলে, তারপর কাঁপা কাঁপা গলায় বলে, আমি কোথায়?

বিজ্ঞানীরা বলেন, তুমি দাঁতাল বাঁশখোর। তোমাকে আমরা একটা ফ্রিজের মধ্যে পেয়েছি। তোমার এই অবস্থা হোলো কেমন করে?

দাঁতাল ছলোছলো চোখে বলে, শুনবেন? শুনবেন আমার কাহিনী?

বিজ্ঞানী আর সংসদীয় পরিদর্শক দল বলেন, অবশ্যই শুনবো।

দাঁতালের চোখ জ্বলে ওঠে, সে উঠে বসে তর্জনী উঁচিয়ে দৃপ্ত গলায় বলে, "তাইলে শুনেন! ফ্যাসিবাদী নোয়া আমারে অন্যায়ভাবে তার নৌকা থিকা বাইর কইরা দিসে ...!"

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন