শুক্রবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০০৯

তিনটি নতুন কবিতা








শেষ কথা
(ইরাকের নিপীড়িত জনসাধারণের প্রতি উৎসর্গীত)
...............................

কাহিনী
.....
আজ ভোরে রেডিওতে একটি ঘটনা শুনলাম/ বিবরণে ছিলো মানব মৈত্রীর বাণী/ মন দিয়ে শুনি... মনে ভাসে দৃশ্যাবলী:/
ইরাকের স্বপ্নধৌত এক সাধারণ জনপদ, /হঠাৎ শত্রু সেনাবাহিনীর পদভারে আতংকিত/ ত্রাস ভয় ভেংচি কাটে চারদিকে/ আক্রান্তরা ভীত / যারা আক্রমনকারী (মার্কিন সেনাবাহিনী) ভয়ে আজ শংকিত তারাও। / ভয় এমনই এক রোগ, মৃদু বাতাসের শো শা / শব্দে মার্কিন সৈন্যরা শোনে হিমালয় শৃঙ্গে ঝড়ের মাতম। ভয়ানক ঝড়ের পরেই/ যেন মৃত্যু খুবলে খাবে - দেহ মন/ সীমাহীন সূর্যাস্তের অন্ধকারে অপহৃত সমস্ত জীবন/

সন্ধ্যার আকাশে ডানা মেলে আছে অলিক সময়/ চারদিকে কার্‌ফিউ তখন। মার্কিন সৈন্যরা দেখে/ কারা যেন আসছে এগিয়ে/
আসছে দ্রুত ক্রমশই মুখোশধারী, কাঁধে কাঁধ/ ঘন দীর্ঘ এক অশেষ মিছিল/ অস্ত্র হাতে কি না, সন্ধ্যার অন্ধকারে দেখা মুস্কিল।/ মুখোশে আবৃত মুখ - মৃত্যুর মিছিলে / রাজপথে কাতারে কাতারে কারা ওরা ভীতিময়?/ সমরসাজে সজ্জিত সেনা সব ভয়ে ত্রস্ত্র/ অস্ত্রের উদরে জ্বলজ্বলে বুলেটের ফুলঝুরি/ বিস্ফারক হুকুমের অপেক্ষায় বাধ্য ভৃত্য - স্তদ্ধ /
সৈন্যদের মনের ভেতর ভয়ংকর ভড় /ছায়া অন্ধকারে আতংকের শত তলা জাদুঘর / সন্দিগ্ধ মার্কিন কমান্ডার, এর মাঝে হঠাৎ তার/ আদেশের দৃঢ় কন্ঠস্বর - "সিজ ফায়ার! সিজ ফায়ার!"/

স্বশস্ত্র বেবাক তরুন সৈন্যরা সব হতবাক/ ওরা ভাবে : আগন্তুক বেশে সমুখে নিশ্চিত যম - /এমন বিপদে তবু কেন হুকুমের মতিভ্রম!/ অগত্যা সৈন্যরা দ্রুত একসাথে নিরস্ত্র সকলে,/ মনে মনে যেন ওরা অবনত মৃত্যুর দুয়ারে/

সেদিন সন্ধ্যায়/ রাজপথে যারা বের হয়/ ইরাকের একদল প্রতিবাদী সাধু / প্রত্যেকে মুখোশ খুলে সৈন্যদের পাশ দিয়ে ধীরে/ নিজ পথে চলে গেলো হেটে। ঘৃনা বিবাদের পরিবর্তে /স্মিত হাসি শান্তিপ্রিয় সকলের মুখে/ (এভাবে সেদিন অকারণ রক্তপাত থেকে সত্যি/ রক্ষা পেয়েছিলো মানুষের বিবাদী স্বভাবে শ্রান্ত পৃথিবীর এক ফোটা মাটি।)










গীতিকা
......
অস্তিত্বের টানে নিজের জীবনে সব প্রাণ জয়ী হতে চায়।

বিস্ময়ের রঙধনু আকাশের তলে বসে তাই
শতরঙা প্রশ্ন আসে মনে - শত প্রশ্ন করে যাই:

আত্ম সমর্পনে শত্রু মিত্র সত্যি এক সাথে জয়ী হয়ে যায়?
যদি বাঘের সামনে হরিণ আর কোনো সাপের সামনে ইদুর?


জীবজগতের সত্য বেয়ে আজ মানুষের ধর্ম কতো দূর?

সূচালো শীতল তেজি সামুদ্রিক হাওয়ার দিকে
মুখ করে ডুবে যাই আরো এক গভীর বিস্ময়ে:
সমস্যার ছদ্মবেশে সমাধান হাটে পাশাপাশি?
প্রশ্নের সমুদ্রে ভাসি দিনরাত অদক্ষ সাতারু,
বৃক্ষের নিয়মে বিস্তারিত যাবতীয় চিন্তাগাথা
গহীন অন্তরে চিরদিন শত প্রশ্নের শেকড়,
জ্ঞানের সমুখে খুঁজে হয়রান প্রকৃত সত্যের ধ্রুবতারা -
দেখি তাসের ঘরের মতো ক্ষয়া - জ্ঞানের মাপক যতো !
অজানার অন্ধকারে তাই বুঝি দেখি রহস্যের পায়চারী ?
শাদা চোখে দেখি না কিছুই...
অনুমানে বলো কোন পথে তবে চলি ?

যতো প্রশ্ন ততো বেশী না-জানার ভয়, যতো উত্তর তারও ততো অজানা সংশয়,
সবকিছু এক পাশে রেখে তবু মন বলে আজ:
পৃথিবীতে যতো হৃদয় দুষণ, যুদ্ধ
ঈর্ষান্বিত নরনারী
আমাদের চারপাশে তার চেয়ে বহুগুন বেশী সহমর্মী।

মানুষের অনুভবে কত রঙ, কত আশা, স্বপ্ন
কত ভয়
কোনো অনুভব কোনো রঙ তবু শেষ কথা নয়।

বস্টন ২০০৪









সোয়ান লেক
.............

ভূমিকা
.......
যেতে পথে রাধা আন্‌মনে ভুলে গেছে তার জাপানি ছাতা।
নক্ষত্রের অগনিত প্রদীপ খচিত আদিগন্ত ধুসর তমস ঢাকা
রেশমী ঘোমটা - বাগানের দ্বারে দেখি পথভোলা সন্ধ্যা।

গীতিকা
....
বাগানে দু'জনে বসে আছি যেন বহু কাল - অনুজ্জ্বল
নক্ষত্রের মতো - পাশাপাশি নির্জনে নিঃশব্দে - হাতে হাত রেখে ।

সন্ধ্যার নিবিড় ছায়াচ্ছন্ন আধো অন্ধকারে
সোনালী জোনাকি - জ্বলে নিভে - লিখে যায়
অস্তিত্বের শত স্বর্ণবর্ণ পদাবলী।
সন্ধ্যার হৃদয়ে এতো এতো ছায়া দীর্ঘতর হয়
যাবতীয় ছায়া সব দীর্ঘ হতে হতে হয় গাঢ়
আধাঁর জমাট বেধে ছায়াসমাবৃত গাঢ় রাত্র।

নীলাভ সন্ধ্যার ক্ষীণালোকে দৃষ্টি মেলে চেয়ে আছে মহাকাল।
আকাশে চাঁদের নিরালোক পূর্ণকলা আগমন।
তাপহীন জ্যোৎস্নায় আপ্লুত রজনীগন্ধার অনুরণ দেখি;
সন্ধ্যার আড্ডায় বাতাসের উচ্ছ্বল অংশ গ্রহণ দেখে
গন্ধে গন্ধে সারা রাত দুলে গেছে শুভ্র গন্ধরাজ।

কামেনীর গন্ধে মাতালের মতো হৃদয়ের সুগন্ধে বিভোর -
নির্জনে দু'জনে বসে আছি - মুখোমুখি চোখে চোখ রেখে।

বহুযুগ পর আনত দৃষ্টিতে ছিল আমার একটি মৃদু হাসি
তোমার স্পর্শের আঙ্গুলে একটি মাত্র কথা - ভালোবাসি।








কালের তিলক
............
রাষ্ট্রের সীমানা বেধে আকাশকে পরাধিন করেছে যে প্রেম,
হৃদয়ের ডানা মেলে কিছুতেই যখন আর স্বস্তি হয়না,
স্বাধীন ইচ্ছায় পেশীপূর্ণ হাতের থাবা যখন - নিয়ন্ত্রন;
নিজের পতাকা গেড়ে যেন এক বনমানুষ হুংকার ছাড়ে;
বর্বর যুগের যে প্রেম মনকে এইভাবে চোরাপথে ধীরে
নিয়ে যায় ক্রমাগত জীবাশ্মের প্রাচীন সংস্কারে -


প্রতিশ্রুতিমুক্ত সম্পর্কের কোষে প্রোথিত জমাট অবিশ্বাস
আর অধুনিক জীবন দখলে রাখে যেই সাম্রাজ্যের প্রেত -
তার থেকে সরে গিয়ে - অপ্রেমের যতো বিস্ফারক ক্ষোভ,
তীব্র রোষ, প্রতিশোধ - ব্যর্থপ্রেমে যতো অপরাধবোধ,
সম্বালহীনের কন্ঠরোধ - সেই সব থেকে যতো দূরে থাকি -
সব স্বার্থপর মোহ থেকে হৃদয় আমার যতো মুক্তো রাখি
ফাগুনের শিওরে দাঁড়িয়ে চেয়ে থাকি যতোই মরু তৃষায়
স্পর্শের বাইরে রুমঝুম সুর সুদূর মেঘের আঙিনায়।


নীল নদ সিন্ধু গঙ্গা তীরে অচেনা কোন জনবসতি থেকে
ইভ যদি আজ বির্বতিত নতুন আদলে হাত ছানি দেয়,
সময়ের দুটি হাত বাড়িয়ে বুকের মাঝে যতো ডাকাডাকি,
মরিচিকা হয়ে বহু দূরে - প্রেমিক পুরুষ - তুমি স্বপ্নবাদী|
তোমার সাম্যের গান রোমান্টিক আবেশের মতো নিরালায়
আমার সমস্ত গাঢ় অনুভূতি ছুঁয়ে কেন পলকে শুকিয়ে যায় ?


হৃদয়ের গভীরতম রোমান্টিকতার নাম সমাজতন্ত্র ?
বুকের গভীর উষ্ণতায় যে শিশুর সুপ্ত স্বপ্ন মিশে থাকে,
প্রজাপতি পাখী আর শিশু - দৃষ্টি সরে গিয়ে থামে তার দিকে,
উল্টো হয়ে ঘুমিয়ে রয়েছে শিশু - বৃষ্টিভেজা ভোরে,
আমাদের হৃৎস্পন্দনে যে শিশু কেঁদে ওঠে ঘুমের ঘোরে
ভ্রুণের ভাষার মতো তার নামও বুঝি সমাজতন্ত্র !


আজকের আদমের মন - অনুরাগে যদি হয় স্নিগ্ধ চাঁদ
পৃথিবীর বুকে শুধু রূপা ঝরা শান্ত এক পূর্নিমার রাত!
ভালোবেসে আজকের আধুনিক ইভ - কেবল স্রোতের ঢল,
হয় যদি আদমের বুকে কোনো নদী - টলোমলো ঢেউজল!

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন