শনিবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০০৯

সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল-এর কবিতা







মুদ্রাদোষ
..........
প্রেমে পরা মুদ্রা দোষ
পরছে সবাই সন্ধ্যা-সকাল
নন্দুলালই; নন্দ ঘোষ।

সতীর্থদের কি ঈর্ষা,
মনের অসুখ কে সারাবে
করবে কে হৃৎ চিকিৎসা?

দাড়ি কিংবা কমা নেই।
প্রেম খেলাপী ঋণের বোঝা
বুশারকদের ক্ষমা নেই।

শত লক্ষ মাহফুজার
ভালোবাসার ঘৃণা-গোলাপ
দ্বৈতনীতি সাপ, ওঁঝার।



২৫ শে বৈশাখ: ২২ শে শ্রাবণ
...................
উত্তরে বন্দনা করি সীমান্তের সূর্যোদয়ে
দূর দখিনে সূর্যাস্ত।

চন্দ্র-সূর্য গ্রহনক্ষেত্র আকাশ-বাতাস স্বাক্ষী...
আজ ২৫ শে বৈশাখ
কাল ২২ শে শ্রাবণ।

বাংলা বর্ণমালার কসম
২২ শ্রাবণে কোনো মৃত্যুদিবস নেই।



সারারাত রামায়ণের পর সেলফোনের বিজ্ঞাপন
...........................
নির্দলীয় নৌকায় চড়ে রিপোর্টার যখন
থই থই বন্যার বিবরণ উপস্থাপন করছিল
(নোট খাতায় ছিল বর্ষারাতের ঝিঝি সঙ্গীত)
তুমি তখন ঝর্ণার জলে বর্ষা নামাচ্ছিলে।

ক্যামেরার চোখে ভেজা ব্রা পাখি হয়ে
পানকৌড়ির মত উড়াল দিল দূরে, রোদ্দুরে।
এসব নিউজ, নাটক, সুড়সুড়ি কিছুই নয়
শেয়ার বাজারের সবজ্বি কাঁচকলা কিংবা করলাও না...



হত্যাকাণ্ড
.......
খোলা আকাশের নিচে আপেলের মত খণ্ডিত চাঁদ।
চন্দ্রগ্রহণের বাটিজলে কাটা জোছনার অস্থির কম্পন
সাদা রক্ত ঝরছে, ঝরে ভিজে যাচ্ছে মাট, মাটি, মন
আকাশেও রক্তদাগ। রক্তবরফ মাখা ছুরি পড়ে আছে!

দ্বি-খণ্ডিত জীবনের মত আলোকিত অপূর্ব চাঁদনি
নির্মল চাঁদের শরীর থেকে নিশুথি ফুলের কস্তুরী!
কে করেছে খুন! এই হত্যাকাণ্ডের কী কোনো প্রতিবাদ নেই!
হঠাৎ জেগে উঠে নভোমণ্ডল, হঠাৎ নক্ষত্রসমুহ
হিচককের পাখি হয়ে উঠে!


স্মৃতিসমগ্র
.........
কাকও কী নীলশাদা স্বপ্ন দেখে? কী স্বপ্ন বুনে দুই দু’গুনে...
স্টার বার্কস বা সেকেন্ড কাপে বসে কবে কফি খেয়েছিল
বৃষ্টি ভেজা বিকেল

কোকিল কী কোনোদিন কাকের গালফ্রেন্ড ছিল?
ছিল কী তাদের যৌথ পাপপূণ্যের পাসওয়ার্ড!

স্টার বার্কসে বসে থাকে আবদুল হক
আর আমি সেকেন্ড কাপে
মাঝখানে ম্যাকাঞ্জি
আমি অথবা আবদুল হক
কাকের ভূমিকায় দুই দু’গুনে কোকিল খুঁজি...
খুঁজতে থাকি বৃষ্টিভেজা স্নাতকোত্তর রোদেলা বিকেল।

এপিল ১৪, ২০০৯
টরন্টো, কানাডা।

যোগফল
.......
মৃত্যুবৃষ্টি আর সেক্সসুখ একই সূত্রপ্রথায় গ্রন্থিত-গাঁথা
বেদনার ভেতর আর আনন্দের ভেতর ভ্রমণ
প্রত্যেক মৃত্যু বিদ্যাই মূলতঃ ভেজা বিরহ-বিচ্ছেদ
দাহ এবং দাফনের মধ্যে বিন্দুমাত্র দূরত্ব নেই;
আছে শাদাপরীর সাথে দীর্ঘ স্বর্গযাত্রা; শেষসমাপ্তি।

প্রত্যেক নারীতেই একই তৃপ্তি মৃত্যুর মত, মন্ত্রের মত।

এপ্রিল ১৪, ২০০৯
টরন্টো, কানাডা


শত্রু
................
আমাদের অনেক শত্রু।
আরবের সেই কুট্নি-দুষ্ট বুড়ি, সেও আমাদের পথে পুতেছিল ঈর্ষ-কাটা
কাটা ফুটে আমি আহত হলে তুমিও মর্মাহত হয়ে
তথাকথিত দরদী নায়িকার মতো
আয়ূবের্দী দাঁতে তুলে দিলে যন্ত্রণার পেরেক।

আমাদের অনেক শত্রু।
সাপশত্রু তোমার পায়ে দিয়েছিল বিষচুমু-নীলজল
আর আমি সাপুড়ে হয়ে চুষে নিলাম বিষকাপালির রস
এভাবেই রচিত হয় প্রিন্টআউট।

আমাদের প্রয়োউপন্যাস পাঠ করে জাহানারা পারভিন
নক্সীকথার পূঁজি প্রজেক্টে সুইয়ের পায়ূপথে গাঁথে সুতো-শিশ্ন।

এপ্রিল ২৪, ২০০৯



আর্কিস্টাইল
.......
গাছটাকে ছাদ ফুটো করে উড়িয়ে দাও
কাঁচের কৌশলে রোদকে আমন্ত্রণ জানাও বৈঠকখানায়
কার্নিশে ঝুলিয়ে দাও বাবুইবাসা,
পাশাপাশি শারদীয় ভাদ্রআশ্বিন।

জানালার সৌজন্যে ধরে রাখো প্রতিবেশী কৃষ্ণচূড়া
অথবা সবুজ পাতা, একটু নীল, একটা নীলটুনি
কিংবা দূরের এক টুকরো দৃশ্যদানা।

আলোবাতাসের ফ্রি টিকিট। দাও ষড়ঋতুর ইমিগ্রেশন
ড্রেসিং টেবিলের আয়না প্রতিফলিত হোক
পাশের বাড়ির প্রজাপতি
দখিন ফাঁকাফ্রেমে বন্দি করো নান্দনিক ভিউ।

আকাশটাকে সিঁড়ি বিছিয়ে বিছানার পাশে নিয়ে এসো
গ্রামের বাড়ির পুকুরসহ উঠোন উঠিয়ে এনে সাজাও বারান্দায়।

ধন্যবাদ, স্থপতি রফিক আজম।

এপ্রিল ২০০৮
টরন্টো, কানাডা।



বর্ণ আছে, বর্ণমালা নেই
................
আদুরে শিশুদের সঙ্গে কথা হচ্ছিল- বেবী ল্যাঙ্গুয়েছে
রান্নাঘরে বিড়ালের ভাষায় ডাকছে বিড়াল
জানালার ফাঁকে বাতাস এবং বৃক্ষের কথোপথনে কাঁপছে পাতা
স্কুলমাঠে বডি ল্যাঙ্গুয়েসে মাতছে কিশোর ক্রিড়াবিদ
আর চ্যানেলে হঠাৎ সেক্স-ল্যাঙ্গুয়েসে মাতলো মডেল।

ভাষাগুলোর বর্ণিল বর্ণ আছে, বর্ণমালা নেই।

এপ্রিল ০৯, ২০০৮
টরন্টো, কানাডা।


ভাষাযুদ্ধ
.........

[শুধুমাত্র ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্র“য়ারিতেই নয়; বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ভাষা নিয়ে আন্দোলন-রক্তপাত হয়েছে এবং হচ্ছে। ১৯৬১ সালের ১৯শে মে আসামের শিলচরে শহীদ হয়েছেন অনেকেই। ১৯৭৬ সালের ১৬ জুন আফ্রিকার ট্রান্সভালের সোয়েটো শহরে বোয়ার সম্প্রদায়ের ‘আফ্রিকান্স’ ভাষার জন্য পুলিশের গুলি খেয়ে প্রাণ দিয়েছে ইউনিফর্ম পরা স্কুল ছাত্রী। এখনো কানাডার কুইবেকবাসী ‘ফ্রান্স ভাষা’র জন্য আন্দোলনরত। তারা ১৯৯৫ এর ১৩ অক্টোবর ‘হ্যাঁ / না’ (৪৯.০৯% বনাম ৫১.০১) ভোটে হেরে যান। অষ্ট্রেলিয়াতেও আদিবাসীরা তাদের পিতৃভূমির মাতৃভাষা নিয়ে লড়াই করছেন। এ সব ঐতিহাসিক স্মরণীয় ঘটনা নিয়েই রচিত ‘ভাষা যুদ্ধ’।]

ভাষা যুদ্ধের বন্ধুরা
রক্তজবার পাপড়িরা
ফেব্র“য়ারির স্মৃতি ছাপ!

সময়গুলো সহোদর
রক্তফুলে গ্রন্থিত
প্রাণের ভেতর উষ্ণতাপ!

আরেক একুশ; প্রাণ ঝরে
সেলাই করা মুখচ্ছবি,
ঊনিশে মে শিলচরে...

রক্তে ভেজা ‘আফ্রিকান্স’
ঘুমিয়ে পড়ে ‘সোয়েটা’,
ষোলই জুন ‘নীলচরে’॥

পরাজিত হা / না- তে
দাবি তবু দৃঢ়তা
অক্টোবরে কুইবেকে।

...এবং আরো ক্যাঙ্গারো
প্রতিবাদ আর রক্তদাগ
রক্ত-জবা ধুইবে কে?


অক্টোবর-ডিসেম্বর, ২০০৮
টরন্টো, কানাডা


সকালের মৃত্যু এবং পানসুপারি
..................
একটি সকালের মৃত্যু কাউকে কাঁদায়নি,
মাসির মতো শুধু কেঁদেছিল সন্ধ্যা।

বরিশাল থেকে ব্রাসেলস্ পর্যন্ত
ইস্টিমার যাবে না জেনেও
মাসি মা’র আশীর্বাদ ছিল
গোবরে গৌরবোজ্জ্বল হবে সূর্যফুল।

মৃত্যু আর আত্মহত্যার শীর্ষক সেমিনারের পর
বক্তারা পান-সুপারি খাবার জন্য
আসাদ চৌধুরীকে খুঁজতে থাকে।

আগস্ট ২০, ২০০৯


বিষ কিংবা ২০ টিসডেল

খোকন খোকন ডাক পাড়ি
খোকন গেলো কার বাড়ি? বাড়িতে নয়; আজিজ মার্কেটের খোকা এখন বিষ কিংবা বিশে
২০ টিসডেল প্লেসে। বাইশ অঙ্কে আমরা ৯-এ, ৬-এ, বাস করি। আমি পাই-
কেনেডির সূর্যোদয়, পাতালট্রেনের ছুটাছুটি আর খোকনের ভাগে কিপলিং-এর সূর্যাস্ত,
সিএন টাওয়ারের শীর্ষ শিশ্ন।

ভিক্টোরিয়া পার্কের আকাশ-বন্দর থেকে আমি দেখি রাতের শহরের অজস্র তারাবাতি,
কবিতায় জন্মবীজ আর
খোকাবাবু দেখেÑ খুকির ফ্রক, স্বল্পদৈর্ঘ স্বপ্নবীজ।

আমি আঁকি অপূর্ব অন্টারিও লেক, নীলাকাশ আর জলনীলের আলিঙ্গন, গলে পড়া চাঁদচিত্র,
অর্জিতার অর্কিজ স্কুল। খোকন আঁকে গলফ মাঠের মখমলে ছক ও সামারের সবুজ বরফ।

তারপর আমি আমরা ছাঁদে, কাঁদে খোকন। আমি হাসতে-হাসতে কাঁদতে থাকি;
খোকন কাঁদতে-কাঁদতে হাসতে থাকে
এই কান্নাহাসি আর হাসিকান্নার ফুটেজ কেউ কোনো দিন দেখবে না, জানবেও না,
আমাদের বুকের ভেতর অন্য আরেকটি ১৯৭১।

সেপ্টেম্বর ২৯, ২০০৮
টরন্টো, কানাডা।


বস্ত্রফুল
.......
নীল চাষের জন্য আমরা লাল হয়েছি,
আমাদের পূর্বপুরুষেরা হারিয়েছে আঙুল
মসলিনের জন্য অশ্লীলভাবে তারা কেটেছে গোলাপ!

মাটি মৃত্তিকার মতো মমতাময়ী
এখন ফুটছে অজস্র জুঁই-চামেলী-হাসনাহেনা
আমাদের চকড়িকাটা বোনেরা আবার কাজল রেখায়
সেই সূচ দিয়ে-
বর্গীবন্ধুদের জন্য বানাচ্ছে বস্ত্রফুল।

এপ্রিল ২৬, ২০০৯



আফসোস
......
আমি গিয়েছিলাম নদীর কাছে,
নদীও এসেছিল আমার কাছে
প্রাণের কাছাকাছি ফুটেছিল প্রাণফুল

প্রাণ ছুয়েঁছি,
আমার অতল হৃদয়ের উৎসমূল স্পর্শ করেছে নদীজল
অজস্র বছরের কত লেনদেন
তবু আমাদের দেখা হল না!

জলজ মাছ আমাকে চেনে; নদীর নামতা জানি
নদীও পাঠ করেছে আমার আকাশপর্ব।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন