মঙ্গলবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০০৯

কবি আবদুর রবের আরো কয়েকটি কবিতা


আবদুর রব


মুহূর্ত
......
দরোজা খোলার শব্দে চেতনা নিষ্ক্রিয়
মৃত্যুর মুহূর্ত এই বুঝি দু হাতে কপাট খুলে
ধরে ফেলে
ফিরে যেতে চাই পালাতে আকৃষ্ট হয় মন
বাকহীন তুমি মধ্যবর্তী।

তোমার দুচোখ নিস্তব্ধতা ভাঙে, হঠাৎ বাতাসে
যেভাবে বৃক্ষের ডালপালা কথা বলে। আমি
ভূমিষ্ঠ হলাম।

আমার পেছনে ছিল উদ্বেগ, সন্ত্রাস
অকুস্থলে তুমি দেবী লুসিনা!


রাত্রির আকাশ হাসে
............
ফল খায়, ফুল খায়, খায় মানুষের
সমস্ত বিশ্বাস।
অমেয় পিপাসা আর প্রতিটি মুখের
ক্ষুধা কেড়ে খেতে খেতে ঢুকে পড়ে
শ্যামনগরের অলোক ঘোষের ঘরে।

জানি না জানি না বলে যতোই চেঁচাক
তার ঘর থেকে শরতের রঙ খেয়ে
ঠোঁট চাটতে চাটতে কে যেন বেরিয়ে এলো।

জারুলতলায় শঙ্খলগ্ন দুটি সাপ
যেন দুটি অভিজ্ঞতা।
পরিত্যক্ত শিশুটিকে বুকে নিয়ে
বসে আছে চন্দ্রা, নাকি সংঘামিত্রা?
হয়তোবা পিতার ইচ্ছায়
বটের চারা নিয়ে যাবে সে সিংহলে।

এভাবে খেতে খেতে খেয়ে ফেললো মানুষ জনম
রাত্রির আকাশ হাসে তারায় তারায়।


ক্রুসেড
.......
আজকাল কেউ কারো জন্যে বসে থাকে না,
যে যার মতোন বেছে নেয় নিজস্ব ক্রুসেড
কে শত্রু কে মিত্র কার সাথে এ লড়াই?
পুনর্জন্মে আস্থা নেই, একাই প্রস্তুতি নেয়
একাই সম্পন্ন হয়
কর্মহীন কবি বৃথা ছন্দ মেলায়, তার
আকাঙ্ক্ষার কাচপাত্র থেকে ঝরে
মানুষের পুনর্মিলনের তৃষ্ণাজল।


খঞ্জ
...
নতুন পতাকা নিয়ে ছুটে যাচ্ছে
মৃত্যুভান ছেড়ে ছুটে যাচ্ছে অপসাম।
যে কোন জীবনে অভ্যস্ত মানুষেরা মরুবিছা,
কতো আর স্বপ্ন নিয়ে হবে সারিবদ্ধ;
তার চেয়ে যে যেদিকে পারে পালাক, পালাতে থাক।
অশ্বখুরে চূর্ণ-বিচূর্ণ বিশ্বাস নিয়ে কেউ কেউ তবু রয়ে যাবে, গায়ে জ্বর
খঞ্জ পথিকের বেশে।

ভুল আত্মা
........
প্রভু, এই দেখুন আমার উরুদেশ
এইখানে ছোরাবিদ্ধ করে
আমি কাল সারা রাত কাটিয়েছি
যন্ত্রণা গোপন করে।
আমার বিশ্বাস আপনার ভুল আত্মা
কোনো অনিষ্ট সাধনে
বদ্ধপরিকর

শয্যাসঙ্গী হলেও জানি না আপনার মানের খবর
নিষ্প্রয়োজন ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ
অতএব অঙ্গবিদ্ধ করে দেখলাম
এবার বলুন মনোবাঞ্ছা।

পর্সিয়ার কথা শুনে অশ্রুসিক্ত তবু সে ব্রুটাস
বিশ্বাসের লাশ অতিক্রম করে ভেঙেছে রেকর্ড।


নদী সিকস্তি
.......
সারা জীবনের মতো মুখ এঁটে থাকতে হবে
বোকা চাঁদ জ্যোৎস্না জলে দু চোখ ভাসাবে
এই এক টুকরো হাড় হয়তো প্রতিটি বাঘের গলায়
বিঁধে আছে।

অন্তরীক্ষ হতে উড়ে এসে যে সারসী তাকে
উদ্ধার করেছে সে তো শুধু নিত্য সাথী।
নদী সিকস্তির কথা কিছুই জানে না
বৃথা ঘর সাজায়, গোলাপ পরে চুলের খোঁপায়।

সে যেন তোমার
ধানশীষ কিশোর বালক
সারাপথ অনর্গল কথা বলে
কতো কি যে জানার রয়েছে তার!
তুমি তো দূরের আত্মা কিভাবে তোমাকে পাবো?
দিগনন্তে সায়াহ্ন, অন্ধকার ঘরবাড়ি
দুরাশা নয়নজুড়ে...।


নতুন উত্তাপ
.........
মার্কসবাদ কি জেফারসনের গণতন্ত্র?

বার্লিন প্রাচীর থেকে বের হয়ে লোকগুলো
এই কথা বলে,
লালতারা চিবোতে চিবোতে ঢুকে গেল
নিকটস্থ বেশ্যালয়ে।

বিশ্বাস ত্রিশঙ্কু হলে হালে পানি পায় না,
পালে বাতাস লাগে না
সব পাখসাট থেমে যায়
সত্য হয়ে ওঠে ‘আমি’ আর আমার ক্লীবত্ব,

নতুন উত্তাপ নিয়ে ওরা কোথায় চলেছে?


ঈর্ষা
...
জীবনের সব কাজ-কারবার প্রকাশ্যে কে করে?
কাপ্তান বন্ধুরা তাই খ্যাতির অমোঘ সূত্র করেছে গোপন
নিজেকে নগণ্য করে রয়েছি ওঁদের হাতে
সুলভ শপিং ব্যাগ।

কানামাছি আমি, মুগ্ধ নার্সিসাস ওঁরা
ওঁরা ভোঁ-ভোঁ সতত চালায় গুঞ্জরণ;
ওঁরা সব রেড-কাউ ওলান ঝাঁকিয়ে উঠে যায়;
কৌটার লেবেলে।

বাতাসেও ভূমি ক্ষয় হয় অথচ ওঁদের কোনো ক্ষয় নেই,
ওঁরা নগ্ন হয়ে
ছুটে যাচ্ছে
অমরতার দিকে।


কিনারা বিচ্ছিন্ন সাঁকো
.............
বহুদিন কিছু বাড়ি কিছু মুখ
অগম্য-অদেখা যায় নগরের অন্য প্রান্তে
যখন তখন সুখ সেখানে মজুদ ছিল
কে যেন কালের কাঁটা ছড়িয়ে রেখেছে
এই অধমের সেই পথে।

সেই বাড়ি আর সেই মুখগুলো
অস্পষ্ট অক্ষর
চোখ ও মনের ওপর ক্রমাগত চাপ সৃষ্টি করে
ক্যামিলিয়নের মতো ঠোঁট ছুড়ে গ্রাস করে
নিয়ে যেতে চায় নিজের ভেতরে।

আমার নিজস্ব বর্তমান কিছু বাধা বটে,
সেটা শেষ কথা নয়,
আছে কিছু ব্যথিত সম্পর্ক যেন কিনারা বিচ্ছিন্ন সাঁকো।

মস্তিষ্কের শিশুরা
.........
হায়! হায়! জলে পড়ে ডুবে যাচ্ছে নিষ্পাপ শিশুরা
তাদের আতঙ্ক চিৎকারে দাঁড়াতে পারি না।
ত্রাণে ব্যস্ত দেখি না কে-কারা ওপরে দাঁড়িয়ে
নির্বিকার ছুড়ে দিচ্ছে শিশু অনর্গল।

অভিশাপ দেব কাকে? সবাই আমার
ফুঁ দিয়ে ফিরিয়ে আনি নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস।

শুনেছি জলের কোলাহল চুঁইয়ে পড়া অর্থনীতি।
হিমালয় থেকে নামে তরল সমাজ।
ভুল স্বীকারের বাঁকে বসে ভাবে অর্থনীতিবিদ।
তারপর রব ওঠে ক্যালরি বাড়াও, মুখ খুলে দাও।
আমার কপাল পোড়া, মাথায় ঋণের বোঝা,
বোবা-কালা-অন্ধ আমি কখনো দেখি না
শিশুগুলো এইভাবে ছুঁড়ে দিচ্ছে কারা?



ইডিপাস
.......
কেন আমি চক্ষুষ্মান?
কেন আমি এ মাতার সম্মুখীন?
অরক্ষিত বুক
কোলে, কাঁখে মাথায় সন্তান
পরিণতি অতিক্রম করে হেঁটে যাচ্ছে সন্ধ্যা
তাকে দেখে ফেলি তবে কি আমিও ইডিপাস?


ঘণ্টাঘর
.......
নদীচরে জোয়ারের জলে ভাসে, সাদা চুল বৃদ্ধের মস্তক
স্টিমার বাজালো হুইসেল;
শৈশব সমাপ্ত করে
কিছু টাকি মাছ হাতে ওঠে এলো উলঙ্গ বালক দল।
চক্রবাঁক শেষ হতে না হতেই
প্রবল হাঁ করে থাকে ক্রেন,
শূন্যে ঝোলে সমূহ ত্রিকাল;
জোড়া জোড়া দুঃখ ভাসে অভিমুখ পানে।

সারবত্তা প্রতিবিম্বহীন,
বিস্তারিত সব কথা মনে থাকে না এখন,
ব্যাধির কাহিনী মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে,
জগৎ-সংসার ধূমায়িত;
সবার অলক্ষে বেড়ে ওঠে স্ত্রী-পুত্র চেতনা;
বারবার ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখি ওদের শরীর;
আঁতকে উঠি, বুকের ভেতর ঘণ্টাঘর...।

1 টি মন্তব্য:

  1. খেপা নাগর

    ওরে ও আমার খেপা নাগর
    তোর জন্য অমার মনটা পাগল।

    অন্ধার ঘরের বান্ধা জালে
    ভূইলা নাগর আইল ঘরে।

    জালের মধ্যে ধরা পড়ল কৈ মাছ
    নাগর আমার খারি খায় বারমাস।

    জালের সুতা টেনে ডাঙ্গায় তলি
    জাল ঝেড়ে কৈ মাছ বাছে।

    ডুলার মধ্যে যতন করে কৈ মাছ রাখে
    নদীর জলে নাগর আমার খেপলা জাল বায়।

    নাগর আমার কৈ মাছে প্রাণ
    গরম তৈলে প্রাণ যায় না আর।

    ওরে ও আমার খেপা পাগল
    দরত দেখিয়ে খাইলি ডাগর।

    জলে মাঝে দুলছে নাও
    ওরে আমার বৈঠা দিয়ে যা।

    হেইয়া রে হেইয়া রে হেইয়া রে
    মনটা আমার খেপাস নারে।

    মন মাজারে খামছি মারে
    ইছামতি নদী তোর বহনে।

    ও অমার দরদীয়া নাগর
    উতাল পাতাল করিস না এখন।

    উত্তরমুছুন