রবিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০০৯

কবি সৈয়দ আফসারের কবিতা

কথকথা
......
অবাধে হেঁটেছি আমি বালুর পাঁজর ঘেঁষে, বালুকাপথ তার সরুকথাগুলো উড়ে যেতে চায় বলে জানান দিচ্ছে হৃদপোড়াকথা ক্লান্তি আমি মায়ার আদলে ছুঁয়ে যাই বারি আর তোমার শরীর, বেদনার্ত রোদশিখায় পুড়ে যাবার ভয় থাকে, পুড়ে যায়, পোড়া দেহ-সামিয়ানা তবুও তো বালির পথ ধরে হেঁটে চলি ধুলোময়তা সাথে নিয়ে, শূন্যতা ঘিরে


কৌশল জেনে
...........
সৌন্দর্যের ইন্দ্রজাল বুনে নিরর্থক প্রহরগুলো আঁবুবাকু করে ধুলোর ভাঁজে প্রভাঁজে হয়তো শাদা জামার সরুপথ ধরে মৌন নিঃশ্বাস ছুঁড়ে দিতে পারো মাংস আর লোমের মোড়কে লোভচোখ নুয়ে যাওয়ার আগে দেখি তোমার ভ্রু-চোখ কাঁপছে বিস্ময় নিয়ে মুহূর্তগুলো আঁকা যেত জলের গায়ে কিন্তু জলের স্মৃতি যত গোপন রাখতে চাই দেখ কেমনে ধেয়ে আসছে সব বুকে আর আর হুকে ক্লান্ত হলে মুখাবয়ব ধুয়ে নিতে পার বৃষ্টির জল কিংবা নোনতা জলে তবুও তোমার চোখে খুঁজি আশা আর কিছু দিবসের আলো ছলে কৌশলে


মেহেদির রঙ
.........
বৃষ্টিতে ঝরে পড়ো, ভেঙে দাও দাগ
নির্বাক চোখে
স্বীকার করি স্বাভাবিকভাবে তুমি-
তুমি এত ঘুরে এসো আড়াআড়ি পথে
পথে যে রয়ে যায় সংশয়- নিস্পৃহ রীতি

নামবো কি জলে উড়ু হাওয়া বলুক
পাপড়ি ছিটানো হলো কার বিপরীতে, ফলে
বৃষ্টির দু’হাতে আজ দেখি মেহদির রঙ


বিবিধ
.....
ওইখানে গোটাও অভিপ্রায় যত
পাঠ করো দু-হাত নেড়ে... যতদিন মিশে-থাকা যায়
রোদের তীব্রতা গিলে

তুমি আর আসবে না-
ফিরবে না কভু একথা বলোনি যে আগে
তাই কতটা অপেক্ষা করতে পারে বলো বহমান স্রোত

মেঘে মেঘে এখনো ভাবনা জাগে তবু মনে পড়ে না
এত যে মিশে-থাকা কার জন্য অস্পষ্ট বেড়াজালে


স্বপ্নাহত
......
গতরাতে যে নারী স্বপ্নমাহে শরীরের
প্রতিটি অঙ্গ খুলে রেখেছিল প্রদীপের সামনে
বলেছিল যৌবনের ফুল ফোটাতে পারবে শুধু
হাতের আঁচে
সবকিছু ছিঁড়ে খুঁড়ে খাবে বাধা দেব না শুধু-
শুধু বুকের গিঁট খুলতে মানা, যদি পার
হাতড়ে ওঠো শরীরে- দেখবে কার জন্য অধরার বুকে
অসংখ্য বেদনা জমা; সে রাত্রে ধৈর্যচ্যুত হইনি-

স্বপ্ন ভেঙে থতোমতো দেহ, মুখটি চিনতে পারিনি
ভয়ে সে রাতে তোমাকে ছাড়া ঘুমোতে যাইনি


বিস্ময়
....
বাতাস কেঁপে উঠেছে ডালে উগ্র হাওয়া
একেলা দুহাত পেতেছি আকাশে তোমার শরীর
ফেটেছে পাতায়

এই মর্মে তোর শরীরে জড়াতে আসবে শীতজন্ম
শেমিজের আগে... কিংবা কাঁথায়

আকাশ ছোঁয়া যাবে না, তওবা-ছায়াকে জানাই
বুকের ভেতর লুকিয়ে রাখি বুক-
বুকে বুক ঘষালেই টের পাই

তোকে জড়িয়ে না থাকার বিকল্প শুধু বিস্ময়!


দ্বিধা বিষয়ক একটি
..............
মাগুড়ার পাড়ে দাঁড়ালে মনে পড়ে দুরন্ত
জোয়ারের বেলায় আমরাও মগ্ন হতে থাকি
গভীর স্রোতের টানে, স্মরণে আসে কেবল
বৃষ্টি আর প্রবহমাণ জলের কথা-
দৃশ্যাবলি যত গোপন ছিল সন্ধ্যাকাশে
বাহ্যিক নিয়মে কি রে জেনে ফেলেছে শীতের সকাল
জবান খুলে কিছু বলতে পারেনি তারা; নীরবে সয়েছে জ্বালা
আমি অনুভবে জেনেছি তাদের মিলনের গোপন স্পৃহা

২.
কষ্টকে পরিপাটি করি স্বপ্নময় যৌবন ধরে
দুঃখ যত স্খলন ঘটে জলবায়ুর গুণে
আমি তারও আগে দাঁড়িয়েছি একা মাগুড়ার পাড়ে
নদীর জলে ঘাই মেরে গড়াগড়ি করে আইড়
বোয়াল; শিং মাগুরের লেজে নাড়াচাড়া করে প্রাকৃতিক
লীলার ছলে আমি তাদের কবিতা শোনাই-
নদী আমার কৈশোর-যৌবনের বোবা শ্রোতা; নীরব সহযাত্রী

৩.
আর এখন উষ্ণতা জেনে নয় শীতের বিকেল এলে
উষ্ণ রোদে শরীর পোড়াই একাকী পুরোনো স্মৃতিগুলো
ফিরে পাবো বলে- কিন্তু কামাতুর ঢেউয়ের সাথে কখন যে
লাবণ্য হারিয়েছে দু’পাড়ে স্থির থাকা সবটুকু জল
ভাবি ভাঙাগড়ার সাথে ছুটছে ধুলোময় স্বপ্ন আর ফ্যাকাশে সময়
হয়তো অগোছালো রয়ে যাবে জীবনের অবশিষ্ট স্বাদ

৪.
সময়ের স্নেহ বেয়ে কখনো চলিনি তাই সূর্য সেজে
ধার এনেছি বিনিদ্র রাত আর পুরানো দিবসের স্মৃতি
অসংখ্য সন্তাপ
জন্মাবধি ছিল চাওয়া-পাওয়া আর দৃষ্টি-প্রভেদ
স্মরণে আসেনি কভু সাল-দিন-ক্ষণ রঙিন মায়া
এখন আমাকে ভাবতে শিখিয়েছে বৃষ্টিস্মৃতি
আঁকা কৈশোরের জলজ্ঞান নদী

৫.
এরই মাঝে কেটে গেছে; ঘটে গেছে সৃষ্টির কত রূপলীলা আর দৃশ্যপরিবর্তনের চাকা প্রাককথনে সেসব কথা ভাবতে গেলে মনে পড়ে ল্যাবরেটরির কথা; জীববিজ্ঞানের ব্যবহারিক পরীক্ষায় অনিচ্ছায় আমাকে ব্যবচ্ছেদ করতে হয়েছিল কুনোব্যাঙ আর রক্তজবা ফুল সে বিষয়ে প্রাজ্ঞতা জানতে তুমি আজো রয়ে গেলে গোধূলি ছায়ায়; দূরের মায়ায়- তাই নিজেকে ব্যবচ্ছেদ করতে শিখেছি খুব নিপুণভাবে আরো; আরো কিছু ব্যবচ্ছেদ করতে চেয়েছি খুবই গোপনে ব্যবচ্ছেদ হলে লিখা হবে বুকে জীবনের সংক্ষিপ্ত বয়ান

৬.
অনেক আগেই শুনেছি সহজনের কাছে কতই না পুঞ্জীভূত সুখের কেচ্ছা। স্পর্শ পেলে আর্দ্র আবেগে কীভাবে যেন লাজুক হয়ে যেত শামুকের ঠোঁট যেমনি রঙিন স্বপ্ন দেখে শিহরিত হয় যুবা রমণীরা; যৌবনের প্রথম প্রহরে অনিচ্ছায় হারিয়ে ফেলে রূপ-লাবণ্য সব চাওয়া-পাওয়া- কিছুই করার নেই ওদের জীবনের সব চাওয়া ভুলে গিয়ে জীবন সাজাতে চায় এখন শহরের নামিদামি গণিকা সেজে; কেউ কেউ লিখছে গোপন ডায়েরি হয়তো টুকে রাখছে দুর্বিষহ স্মৃতি হয়তো গণিকানামা

৭.
তাই মোমের সামনে দাঁড়ালে মনে পড়ে সেইসব মুখ
সর্বগ্রাসী জ্বালা
তবুও আগুনের আঁচে খাঁটি হয় স্বর্ণালংকার, শুধু খাঁটি
হয়নি তোর মনের কথা, যত আনাগোনা রহস্য
জমাট বাঁধা সব পথ ধরে তাই বারবার নিকটে এসেও
ছুঁতে পারিনি তোর বোবাঠোঁট- ‘দূরে দাঁড়ালে হারিয়ে ফেলি
বড় আদরে ফুটে ওঠা জ্যোৎস্নার মায়া

৮.
অবশেষে রেখায় না দাঁড়িয়ে সরল
সরল পথটুকু খুঁজে পাওয়া গেল
অভিপ্রায় যত ছিল বোতামের দৃশ্য দেখে
মুখটি আড়াল হয়ে গেল
তাই সময়ের নিয়মে একা বসে থাকি
মৌনতা নিতে তাতেও নানা রকম জলের
যদিচ্ছাটুকু গিলে ফেলে দেখি বহুজাতক
স্বভাবের লিপি

৯.
রমণীর চঞ্চলতায় দেখি দ্বিধাটুকু খেয়ে
ফেলেছে খণ্ড ত্রিখণ্ড দাঁতের ঝিলিক
এ রকম হয়তো শোনা যাবে- জানা যেত
ইচ্ছের বিপরীতে কাদের সমুদ্র জল পানে
দ্বিমত ছিল; তার বাস্তবতা মিলাতে পারেনি আজো
তবু গূঢ়লিপি পাঠে জন্ম নিয়েছে ক্রোধ
আর আমি ঢোকে- ঢোকে গিলে ফেলেছি
অবশিষ্ট সমুদ্রের লোনাজলটুকু

১০.
কীসের অপেক্ষায় আজও আগুনের আঁচে
শক্তপোক্ত কলমটিও বাঁকা হতে চায়?
যেমনি তৈলসিক্ত বাঁশটি আকরূপ ধরে
উপরে উঠতে চায় নির্বোধ বানর- তাই অনীহা
মেখে দৃষ্টিটুকু ফেলে যাও পথে আর আমি
সে পথ ধরে বারবার শিখতে গেছি সরল সমাধান আর
পাটিগণিতের রীতি

১১.
এমন ব্রজবুলিতে ফলবান যারা- ব্যঞ্জনা খুঁজিনি
কভু জাদুমন্ত্র চোখে; কেননা যদি কখনো অনিচ্ছায়
ভেঙে পড়ে আমাদের প্রণয়ের স্মৃতি আর শামুকের লাজুক
জলঠোঁটের কথা; তাই বেনামী জীবন নিয়ে ছায়াতে
বাঁধি ঘর স্বরলিপি জলে- দ্বিধাটুকু তোমার কাছাকাছি রেখে; মেখে


লক্ষ্য
......
কে যেন চলে গেল বেলা শেষে
বৃষ্টির মতো হঠাৎ ঘূর্ণিবাতাসে
আমাকে লক্ষ রাখছে ওই দুটি চোখ আশ্বাসে
মোহবন্ধনে; তার পাশে


পাখি ভাবনা
......
কী করে ছুঁয়ে দেখা যায় ভয়
তা জেনে অঙ্গগুলো মৃদু দুলে ওঠে
কে কাকে ছুল জানি না- বুঝলাম
হাতের সৌকর্যে
আমাকে ছুঁবে না কেউ; শরীর কেঁপে ওঠে

কীভাবে উড়তে শিখে পাখি- ছুটে যায় নীড়ে
আশাহত পাখিনী একা বসে কাঁদে দূরে


শীতনিদ্রা
......
কতটা ওজন জেনেছো তুমি বন্দরে এসে
কতটা শিখেছো ভালোবাসাবাসি অগোচরে
এলোমেলো ঘুরে
আমি তবে কেন যাব দূরে; শীতনিদ্রা ফেলে

তুমি বরং ফিরে এসো এই পথ ধরে
দেখবো কার উষ্ণতা নিয়ে জেগেছে শীতনিদ্রা
নগর-বন্দরে


আবছায়া
......
জলে ভাসে জল, চোখ হয় লীন
রহস্যে ঘিরে রাখো সব, স্থির থাকে মায়া
রাত্রি গভীর হলে ঘুরে আসে যে মুখ
সে কি তুমি?

দক্ষিণে সমুদ্রমহাল, উত্তরে আবছায়া...

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন