অভিজিৎ দাস
এ্যাম্বুলেন্স
..........
আমাদের মাঝে কে আছে এমন
একটি ব্যক্তিগত বেদনার নীল এ্যাম্বুলেন্স
সাথে নেই যার!
আমরা প্রত্যেকেই গোপনে বা প্রকাশ্যে
একটি গমগমে নিস্তব্ধ এ্যাম্বুলেন্স
সাথে নিয়ে ঘোরাফেরা করছি
মহাকাশগামী এক এ্যাম্বুলেন্স সাইরেন বাজিয়ে
প্রায়শই আবর্তিত হয় আমাদের ঘিরে
গতরাতে দেখি
মুমূর্ষু স্বপ্নদের নিয়ে গানের ক্লাশে যাচ্ছে
মৃত্যুর স্বরলিপি শিখতে
বেসুরো কণ্ঠে যে কিছু ইস্পাতের
ধ্বনিরাগ ছুঁড়ে দিয়েই খালাস!
আমি আমার দেহের গ্যারেজে ঐ ব্যক্তিগত বেদনার্ত নীল
এ্যাম্বুলেন্সটিকে রেখে পথে নেমেছি
আগামীকাল ওকে সঙ্গে নিয়ে যখন ঘুরতে বেড়োব
রঙ পাল্টে কৃষ্ণচূড়া বর্ণের এই লেলিহান এ্যাম্বুলেন্সটি
তখন ব্রহ্মাণ্ডের সকল মানবযানের পথে
জ্যামের কারণ হয়ে উঠবে
ভেতরে গুমরে চলা বিভৎস স্বপ্ন
যারা আপাত নিস্ফল
কুণ্ডুলি পাকিয়ে উঠবে
বিস্ফোরণের এক মুহূর্ত আগে
আমি আমার ব্যক্তিগত লাল এ্যাম্বুলেন্সের সাথে
একবার লিপ্ত হতে চাই সহবাসে
মৃত্যুদিন
......
কয়েক জোড়া ধূম গতরাতে আমার ঠোঁটে এসে বসল এবং
পান করিয়ে নিল নিজেদের। আমি এ দৃশ্যের কোন যৌথ ছবি রাখি নি
অথবা রাখতে চাই নি। অথচ যখন এক ভগ্নস্বাস্থ্য চোর এসে
আমার দরজায় কড়া নেড়ে তার অভিপ্রায় জানাল, আমি একে একে
সিন্দুকের মধ্যে সাজিয়ে রাখা আমার পূর্বপুরুষের প্রেতগুলো
তার হাতে তুলে দিলাম। সে তৃপ্তির চোখে একদলা আলো
ছুঁড়ে দিয়ে পাতালের দিকে উড়ে গেল - যেখানে তার নিবাস।
আসলে সে ছিল এক ছদ্মবেশী পাখি, যে খড়কুটো চুরি করে
ঘর তৈরি করে, আর আমার পূর্বপুরুষের প্রেতগুলো সব
খড়কুটো ছিল -এ কথা জানলাম আমি আমারও মৃত্যুর পরে।
আজ আমার মৃত্যুদিন; সবার ঘরে একটি করে শ্মশান জ্বলুক!
অস্থিরতা
......
সকল অস্থিরতাকে একটা বীজের মধ্যে পুরে দিয়ে
মাটিতে পুঁতে রাখলে কিছুকাল অপেক্ষার পরে
একটা বিতৃষ্ণার চারাগাছ গজিয়ে উঠতে পারে।
এমন একটা বিতৃষ্ণা বৃক্ষকে আমি পেলে পুষে
বড় করে তুলতে চেয়ে সবার অলক্ষ্যে
তার পরিচর্যা করে চলেছি
আমার অস্থিরতার বীজ যাতে ছদ্মবেশী কোন প্রেমের হাতে
অঙ্কুরেই বিনষ্ট না হয় - তার জন্য প্রহরায় রেখেছি
সদাসতর্ক সন্দেহ প্রবণতা
একটি সন্দেহ অপর সন্দেহের দিকে
তাক করে আছে ঈর্ষাকাতরতার বল্লম
কখন যে এ ওকে গেঁথে ফেলবে ধারালো মুগ্ধতায়!
আর নীরবতাহীন অন্তর্গত অস্থিরতার বীজ
তার খণ্ডিত অবয়ব নিয়ে আমাকেই ধাওয়া করবে...
হতে পারে বিতৃষ্ণার বৃক্ষ নিধনের দায়ে অভিযুক্ত
আমাকে তখন আশ্রয়ণ খুঁজে পেতে যেতে হবে বনভূমে
আমার অস্থিরতা বীজের গহীনে নৈরাশ্য নামের
রিনরিনে কান্নার শীতল একটা জলপ্রপাত
বয়ে চলে অনর্গল।
অভিজিত দাসের ১ম বইয়ের প্রচ্ছদঃ
প্রচ্ছদ করেছেন শাওন আকন্দ
কৃষ্ণোন্মুখ রাখালেরা
...........
মৃত্যু গড়াতে গড়াতে
গড়ায়ে নেমেছে কৃষ্ণবেলা
অনুভবে কবে-ধীরগতি!
তরুণ ভূতলে
চাপা অন্ধকার শিলীভূত নিভৃত যে পথে
আলিঙ্গনবিদ্ধ হয়ে প্রথম জাগ্রত
আমিও মেতেছি আহা আগুনের অবসানে!
প্রভাতের রোদগন্ধ গেঁথে নিয়ে চোখে
কী বিপুল আলো প্রীতি, চুম্বনের রীতি;
রোদমন্ত্র চোখে চোখে হয় যে ধ্বনিত!
মরিব না মরিব না করে
কণ্ঠ তুলে, খোলা
তোমাদের জানিয়েছি, আছে মনে?
প্রত্যক্ষ মৃত্যুর সুর
পাথর সমান বাজে
বেজে ওঠে ধূলিরক্তজলে
ও লোহিত রক্তকণা, ও বেদনা,
ফিরিব না বুঝি আর সেই দৃশ্যে
উচ্চারিত আয়ুহীন বিপন্নের ভারে
শিকড়ে- শিকারে
নিবিড় ডানায় ঢেকে বুক
গাজরের রক্তিম লালায়
মুখের নম্রতা আজ
করেছি তরলবিদ্ধ, প্রকাশ্য একাকী
তোমরাও গেয়েছো ঘরে-ঘরে
নিখিলের বধির মন্দিরে
রক্তের লবণাক্ত গান, এইবেলা;
মাঠে,পায়ের আঙ্গুলে রেখে ভর
দাঁড়িয়ে উর্ধ্বগামী- গলাটি উঁচিয়ে
ডেকেছে রাখাল;
চোখের অগ্রভাগে রোদের বিরুদ্ধে রাখা
আড়াআড়ি হাত।
তুমি যাও,
বনপথ কাঁপিয়ে কোথাও
একা, এঁকে
হামাগুড়ি মাখা রতিরেখা
সমুদ্রের পৃথক পাথরে
তারল্যমুখর মেঘস্বরে
ঢেউ গুনে-
তখন আকাশে ওড়ে বাষ্পময় নক্ষত্র, আগ্নেয়
যুবতীরা নীরবে দাঁড়ায়ে আঙিনায়
শীতল কলঙ্কের কথা মনে রেখে
দুই হাতে বেঁধে নিয়ে চুল
ভাবিছে গোপন দেবতারে - অগাধ উতলা
অনুতাপধ্বনি;
নামে- ওঠে দুগ্ধভাণ্ড, চন্দ্রমুখী বক্ষছিদ্রপথ
কোমল কিরণে নাক্ষত্রিক
রাশি রাশি শঙ্খ পরিণাম!
আর, আগুন ও জল
কে কার মত কতটুকু উষ্ণ ও তরল
ফলাফলে-
এই নিয়ে তর্ক ওঠে, তর্ক নামে
যাবতীয় খড়ে ও পাথরে, কয়লায়
তখনও ক্রমিক ঘূর্ণি ওড়াউড়ি
কঙ্কালের বক্ষ বক্রতায়
যেখানে যেদিন আমি অতি দীন
প্রখর ধারালো হয়ে নামি
স্ব-মিলের ব্লেডে,খণ্ডপ্রাণ
বৃক্ষনিদ্রা ভেঙে তুমি কতটুকু বিবর্তনে পৃথক হয়েছ?
মাঝখানে বিপ্লব রঙের যত বসন্ত পাতারা
ফুটে ফুটে আছে আগাগোড়া
আঠালো ঘিলুর গাব গাছে;
হাতপাখাগুলো দোলে, বৃক্ষদের ডানা অভিমান
বাতাসবিরুদ্ধ ক্রোধে ক্রমশ ছুটছে,
অভিমুখে একা এক মাঠে তালগাছ
কাণ্ড-পাতা-পাঁজর সমেত
ফিরে গেলে যে যার মাটিতে
হাড়ের গাঁথুনি ও শঙ্খশিকল
ক্ষয়ে ক্ষয়ে যায় বুঝি ভেঙে
বহুবার জীবনের যন্ত্রণার বিষে
ঘিলুশব্দ শুনে
প্রতিধ্বনি গেছে গুনে মানুষেরা,
চুপচাপ, হাতপাখা নেড়ে
কবিতা লিখেছে কিছু অবসরে-
পৌষ-ফাল্গুনে, আঙুলে আঙুলে ছন্দ গুনে
মৃত্যু-মেঘ-ছুরি আর পাখিদের গতিবিধি জেনে
চিতাগর্ত হয়েছে ভরাট মধ্যখানে
অগ্নিমুখে হৃৎপিণ্ডের অতর্কিত প্রেত অন্ধকারে
পায়ের বক্রতা নিয়ে
যখন দাঁড়ালে তুমি ঘাসের সবুজে খোলাবুক;
বাতাস ঢেলেছে বুঝি কুসুমের
তরঙ্গিত শীতল বেদনা
শৈশবের লজ্জা-খুশি-মহাকলরব
সমস্ত দৌড়ের ছাপ, মাঠেই হারানো মুখচ্ছবি,
ওড়াউড়ি-
নদীতীরবর্তী বটঝুরি; কৃষ্ণকাল
একত্রে ঢুকিয়ে দিয়ে বুকে
বাতাসেরা উড়ছে প্রবল বেগ ভরে চারিদিক
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন